Saturday, November 4, 2023

ফকির দাদু - অমিত কুমার রায় || Fakir Dadu - Amit Kumar Ray || অনুগল্প || Short story || Prose

 ফকির দাদু 

অমিত কুমার রায়



ভোর সাড়ে চারটেয় বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে রওনা দিয়েছিল সুদেষ্ণা তার স্বামীর সঙ্গে। সম্বিতের বাইক নদীর দুপারের কুয়াশা ঠেলে বাড়ির গন্তব্যে পৌছালো যখন তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। সুদেষ্ণা বাইকে করে যখন শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার মধ্যে সামান্য কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছিল সম্বিত। বাড়ির উঠোনে এসে সম্বিত সুদেষ্ণাকে জিজ্ঞেস করল--- অমন করে পিছনদিক থেকে কাঁকড়ার মতো জড়িয়ে ছিলে কেন, ব‍্যাপারটা কি বলবে।

সুদেষ্ণা ব‍্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে ঢকঢক করে হিমেল আবহে জল খাচ্ছিল!তারপর সম্বিতকে বললে, জামাকাপড় বাইরে ছেড়ে হাতমুখ পা ধুয়ে তবেই ঘরে ঢুকবে বুঝলে তারপর কথা বলব।

সম্বিত হাসতে হাসতে বলল ---আরে কবে আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে ড্রেস চেঞ্জ করেছি। সুদেষ্ণা হাফ ঝাঁঝে বলল ---- যা বলছি তাই করো। আমি বাইরের কলতলায় ড্রেস ছেড়ে এলেই তুমিও যাবে, একদম ঘরে ঢুকবে না। সম্বিত দ্বিরুক্তিমাত্র করল না। যথারীতি সম্বিত আর সুদেষ্ণা পোশাক বদল করে ঘরের ভেতরে গেল।

এবার তো বলো কি হয়েছিল তোমার সম্বিত বললে। সুদেষ্ণা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললে ---রথতলার স্নান পুকুর ঘাটে ফকির দাদুকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। সম্বিত অবাক হয়ে বলল--- তাতে হল কি!!

থাম, এই বলে সুদেষ্ণা বোন শুভমিতাকে ফোন লাগালো, মনে হয় এখনো ঘুমোচ্ছে। তিন বার পরে শুভমিতা ঘুম জড়ানো গলায় বললে ---পৌঁছেগেছিস তো? সুদেষ্ণা "হ‍‍্যাঁ" বলেই জিজ্ঞেস করল ফকির দাদু কেমন আছে রে?? ফোন স্পিকারে দেওয়াই ছিল, শুভমিতা বললে, আজতো ফকির দাদুর ঘাট! সম্বিত শুনতে পেয়ে বললে--- মারা গেছেন অথচ তুমি......

সুদেষ্ণা কথা কেড়ে বললে হ‍্যাঁ, আমি ভুল দেখিনি; স্পষ্ট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি লাঠি হাতে। চোখ দুটো যেন লাল নাইট বাল্ব! সন্দেহ ঠিক তখনই হয়েছিল। শুভমিতাকে ফোন রাখতে বললে সুদেষ্ণা। তাই তো তোমাকে তখন থেকেই কাঁকড়ার মতো আঁকড়ে ধরে ছিলাম!!

সম্বিত সব ঝেড়ে ফেলে বললে ---ধুত! তুমি কাকে দেখতে কাকে দেখেছো। ভূত আবার দেখা যায়?????

সুদেষ্ণা উষ্ণা হয়ে বললে-- যায় কিনা জানা নেই তবে আমি কোনো ভুল দেখিনি। 

হরেন দাস - কাহার মল্লিক || Haren Das - Kahar Mallik || অনুগল্প || Short story || Prose

      হরেন দাস

           কাহার মল্লিক



হরেন দাস একজন ডাহা মাতাল। মাতাল হলেও অত্যন্ত সরল মনের মানুষ। সে অন্ধকারকে খুব ভয় পায়। অন্ধকারে পড়লেই সে বিকট কান্না শুরু করে দেয়। সে নেশাবস্থায় থাকুক বা সাধারণ অবস্থায় থাকুক, অন্ধকারে তার খুব ভয় হয়। সে অন্ধকারে পড়ে অনেকবারই মূর্ছা গিয়েছে। তার একট বিশেষত হল, রাস্তায় চলাকালীন কোনও গাড়ির হর্ন বাজলে তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠে। হরেন হর্ন বাজানোকে ড্রাইভারদের চরম ঔদ্ধত্য ভাবে। তখন সে গাড়ির সম্মুখেই থাকে, মধ্য রাস্তা থেকে একটুও সরে দাঁড়ায় না। গাড়ি থামলে হরেন দাস বুক চাপড়ে বলে- “আমার নাম হরেন, আর কে রে আমার সামনে হরেন বাজাস। তোর সাহস তো কম নয়।” এই উদ্ভট কীর্তিকলাপের জন্য ড্রাইভারদের হাতে কত যে প্রহার খেয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। এই নিয়ে তার সহকর্মিরাও অনেকবার অনেক ঝামেলায় জড়িয়েছে, এমনকি দু-একদিনের জন্য জেল ভোগও করেছে।

                     হরেন দাস ছত্রিশগড়ে হরেক মালের ব্যবসা করে। সাইকেলে হরেক মাল ফেরি করে বেড়ায়। প্রতিবছরই হরেন দাসরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে রোজগারের উদ্দেশ্যে সুদূর ছত্রিশগড়ে পাড়ি দেয়। একদিন হরেন দাস মদ পান করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সাইকেল নিয়ে বের হয়। সাইকেল ভর্তি হরেক মাল তার। রাস্তার মাঝখানে সাইকেল চালাতে থাকে। গাড়ির হর্ন কানে গেলেও নিজ সাইডে যায় না। একটা পুলিশের গাড়ি হরেনের সাইকেলকে ওভার টেক করে এবং গাড়ি থামায়। পুলিশ জানতে পারে, সাইকেল চালক মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে। ছত্রিশগড়ী পুলিশ তাকে ধরে আর বলে, “দারু পিকার সড়কপে কিউ চল রহা হে?” তখন হরেন ভয়ডর না করে বলে, “মেরা নাম হরেন, মেরে সামনে কিউ হরেন দেতা হে?” তাদের বচসা চলাকালীন আরও দুটো সাইকেল হাজির হয়, তারাও ফেরিওয়ালা হরেনের সহকর্মী। তারা হরেনের জন্য পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি করে, কিন্তু পুলিশ তাদের কথা না শুনে হরেনকে ধরে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে জেলবন্দি হরেনে বিকট শব্দে কান্না শুরু করে দেয়। গোটা থানার পুলিশ বিরক্ত হয় এবং তাদের ঘুম হারাম হয়। পরের দিন তার দুজন সঙ্গীকে ডাকা হয় এবং তাদেরও জেলে রাখা হয়। জেলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। হরেন মোট তিনদিন জেল ভোগ করার পর ও পাছায় কয়েক ঘা খাওয়ার পর ছাড়া পায়।

Friday, November 3, 2023

বাবা বেঁচে আছেন - সুনির্মল বসু || Baba Beche achen - Sunirmol basu || অনুগল্প || Short story || Prose

 বাবা বেঁচে আছেন

      সুনির্মল বসু



কথাটা প্রথম কোথায় কার কাছে শুনেছিলেন, আজ আর মনে করতে পারেন না, অথচ, কথাটা মনে ধরেছিল তাঁর, সেই থেকে লেখালেখির শুরু। কথাটা ছিল, প্রকাশ কি ঔর।

মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কবিতা লিখতো লোকটা। তাঁর ডাইরি খাতা ভরে যেত অজস্র লেখায়। আকাশের রঙ, নদীর ঢেউয়ের জল তরঙ্গ, অরণ্য পাখির গান, বন শিরীষের মর্মর ধ্বনি , সমুদ্রের দূরাগত ধবনি, লোকটার লেখায় উঠে আসতো। সংসারের প্রতি ক্ষেত্রে পরাজিত লোকটা পাতার পর পাতা অজস্র লিখে যেত। সবাই বলতো, লিখে কি হয়। কেউ কেউ বলতো, আপনার লেখায় বাস্তবতার ছোঁয়া নেই।

একসময় লোকটার নিজের মনে হয়েছিল, সত্যি সত্যি লেখার জন্য তাঁর এই আত্মত্যাগের হয়তো কোনো মূল্য নেই। শুধু শুধু কালি কলমের অপব্যবহার। তবুও না লিখে উপায় ছিল না তাঁর, রক্তের মধ্যে সৃষ্টির নেশা জেগে থাকলে, বারবার লেখার টেবিলে ফিরে আসতে হয়, সেভাবেই প্রতিদিন সৃষ্টির নেশায় মগ্ন চৈতন্যে জেগে থেকেছেন তিনি।

সংসারে অভাব ছিল, দারিদ্র প্রতিদিন সকালে দরোজায় এসে দাঁড়াতো, টালমাটাল সংসার, প্রতিদিনের জীবনধারণের গ্লানি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতো, এসব আপনার জন্য নয়।

তাহলে লিখে লাভ কি, থেমে যাওয়াই ভালো।

গগনদা বলেছিলেন, লিখে যা, কে কি বলল, তাকাস না, মহাকালের জন্য রেখে যা, কাল একদিন বিচার করবে।

রাত জেগে তিনি লিখতেন, ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে তিনি লিখতেন। তাঁর মেয়ে লিপি তখন ছোট।

সে প্রায়ই অনেকের মুখে শুনতে পেত, সংসারের প্রতিক্ষেত্রে তাঁর বাবার ব্যর্থতার কথা।

আমাদের উনি তিনখান বাড়ি করেছেন, আপনি তো কিছুই করতে পারলেন না।

বাবার এই ব্যর্থতা ছোটবেলায় লিপিকে কষ্ট দিত। বাবা আজ নেই। তাঁর কবিতার বইগুলো রয়েছে।


 লিপি এখন কলেজে পড়ে। আজ তাঁর বাবার জন্মদিন। আজ নানা জায়গায় তাঁর বাবার স্মরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। লিপি আলমারি থেকে বাবার কবিতার বই বের করে পরম মমতায় কবিতা পড়ছে।

চিরকাল শুনে এসেছে, বাবা একজন সংসারের ক্ষেত্রে ব্যর্থ মানুষ। আজ বড় হয়েছে লিপি। কে বলেছে, তাঁর বাবা পরাজিত মানুষ।

কবিতার ছত্রে ছত্রে কত অনুভবের ঢেউ বয়ে গেছে,

কী আশ্চর্য মায়া জগতের সন্ধান রয়ে গেছে এই সব কবিতায়। কম কথা বলা তাঁর বাবাটা কী এক আশ্চর্য মায়া জগতের সন্ধান পেয়েছিলেন সেদিন, কেউ তা জানতো না।

লিপির চোখের জল ঝরে পড়ল বাবার কবিতা বইয়ের উপর। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছে, সারা জীবন তাঁর বাবা কিছু করতে পারেনি। আজ লিপি স্পষ্টতই অনুভব করতে পারছে, বাবা নেই বটে, অজস্র লেখার মধ্যে ,অনুভূতির আলোড়নের মধ্যে

তাঁর বাবা সেদিনের মতো আজও বড় বেশি করে বেঁচে আছেন।

লিপি বাবার লেখার টেবিলের উপরে রাখা বাবার প্রতিকৃতির দিকে চাইলো।

সেদিনের মতো বাবা যেন হেসে বললেন, মাগো, আমি কোথাও হারিয়ে যাই নি, হালকা উদাস হাওয়ার মতো আমি বারে বারে আসি, বারে বারে চলে যাই। আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকবো।

দশ টাকার নোট - পার্থ প্রতিম দাস || Dash takar Note - Partha protim Das || অনুগল্প || Short story || Prose

 দশ টাকার নোট

     পার্থ প্রতিম দাস



 একটা সময় ছিলো যখন মোবাইল ফোন ভারতে আসেনি। টেলিভিশনে কেবল ডিডি বাংলা দেখাতো। সেই সময় বিভিন্ন জেলা থেকে কোলকাতায় পড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েরা সবাই কফি হাউসে আড্ডা দিতো। 

        মেদিনীপুর থেকে পড়তে যাওয়া মৃদুল আর তার তিন বন্ধু মিলে বিকেলে কফি হাউসে এসে আড্ডা দিচ্ছে। গরম কফির ধোঁয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে প্রেম, সব বিষয়ে গসিপ করছে তারা। তাদের মধ্যে থেকে একজন, নাম তার বিধু, সে হঠাৎ করে জিগ্যেস করে, "কি রে চিন্ময়, তোর প্রেম কতদূর? "

        চিন্ময় ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "ব্রেকাপ হয়ে গেছে। বাদ দে। যে যাওয়ার সে আসে না। "

      মৃদুল তখন বলল, "যে আসার সে ঠিক আসবে। "

     চিন্ময় বলল, "কেমন করে সম্ভব? "

মৃদুল বলল, "এখন একটা ট্রেন্ড চলছে, টাকার নোটে নিজের নাম লিখে বাজারে ছেড়ে দিলে সেই নোট ফিরে আসছে। তাই বললাম।"

     বিধু কথাটা শুনে অবাক হলো। সে উৎসাহিত হয়ে মৃদুলকে বলল, "ঠিক আছে তুই কফির টাকাটা পেমেন্ট করার সময় একটা দশ টাকার নোটের উপর আমাদের চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে টিপস দিয়ে দে। "

        সেই মতন মৃদুল দশ টাকার নোটের উপর চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে দিলো। 

     তারপর চারজন ভালো রেজাল্ট করে কোলকাতা ছেড়ে সবাই আলাদা আলাদা জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে গেল। চিন্ময় এখন হাওড়া রেলওয়েজের টিটি। সবাই বেমালুম দশ টাকার নোটের কথা ভুলে গেছে। 

      মহালয়ার দিন থেকে কোলকাতায় ঠাকুর দেখার জন্য রেলে ভীড় করে যাত্রীরা আসছে। চিন্ময় ও তার টিম দিন রাত যাত্রীদের টিকিট চেক করছে। যাদের টিকিট নাই তাদের কাছ থেকে ফাইন নিচ্ছে। চিন্ময় ফাইনের টাকা গুনতে গুনতে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা দশ টাকার নোটের উপর। এই তো সেই দশ টাকার নোট। চিন্ময়ের চোখে ভেসে উঠল সেই কফি হাউস, সেই দুরন্ত ছাত্র জীবন। 

      "স্যার আমার টিকিটটা দেখুন "কথাটা শুনে চিন্ময়ের সম্বিত এলো। তার এখন চিন্তার সময় নাই। তাই সে দশ টাকার নোটটা জামার বাম পাশের পকেটে স্বযতনে রেখে দিলো। 

সিগারেট - কাজল মণ্ডল || cigarate - কাজল মন্ডল || অনুগল্প || Short story || Prose

         সিগারেট

                  কাজল মণ্ডল

     


       আজ অফিসে অনেক কাজ জমে ছিল।সেই সব সেরে সুরে বেড়াতে বেড়াতে রাত ন'টা বেজে গেল।পাহাড়ী অঞ্চলে এটা বেশ রাতই।আশেপাশের দোকানের সব ঝাঁপ পড়ে গেছে।বন্ধ হয়ে গেছে সব বাড়ীর দরজা জানলাও।রাস্তা একদম শুনশান।কুয়াশার চাদরে মুড়ে গেছে সব।সঙ্গের সেলফোনটার টর্চ এদিক ওদিক মেরে দেখলাম।যদি কোনো গাড়ী টারী পাই আর কী।না-কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না।ঘন কুয়াশার কারণে ভালো দেখাও যাচ্ছে না।তাই গাড়ী-গাড়ী-বলে কয়েকবার হাঁকলাম।না কাউরির কোনো সাড়া টাড়া নেই।একেই পাহাড়ী মফঃসল অঞ্চল।তার ওপর শীতের রাত। গাড়ী না পাবারই কথা।

তাই আর দেরি না করে হাঁটতে শুরু করে দিলাম।এখান থেকে আমার কোয়াটার্স তাও কিমি দুই হবে।এমনিতে আমি হেঁটেই ফিরি।কিন্তু আজ এত রাতে এই নির্জন রাস্তায় একা একা হাঁটা।একটু কেমন কেমন লাগে আর কী।মেন রোডটা শেষ করে বাঁদিকের পায়ে চলা পথটা ধরতেই গন্ধটা নাকে এলো।সেই পোড়া সিগারেটের গন্ধটা।বিদেশি নামি ব্যান্ডের দামি সিগারেট।যেটা কেবল আমি রাণাদাকেই স্মার্টলি টানতে দেখছি।যখন রাণাদা লণ্ডন থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ী আসতো।তো সেই রাণাদা বছর দু'য়েক থেকে নিঃখোঁজ।পুলিশ দিয়ে,গোয়েন্দা দিয়ে কত তদন্ত করিয়েছেন জ্যাঠামণি।মানে রাণাদার বাবা ।কিন্তু এত দিন হয়ে গেল কিচ্ছুটি জানা যায় নি।

আরে!কে যাচ্ছে ও!মাথায় যেন একটা বড় হ্যাট।ঘন কুয়াশায় অস্পষ্ট।বুকটা ছ্যাত করে উঠলো ঐরকম হ্যাট তো রাণাদাও মাথায় দিত।তাহলে কী-----

এত শীতেও আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে দিয়েছে।আমি আরো জোরে জোরে হাঁটছি।

কে ও!আমাকে জানতেই হবে যে।ঐতো ও!আমার থেকে এখন হাত দশেক দুরে হবে।আর একটু জোরে যেতে পারলেই ধরে নেব ।আমি দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছি।যাঃ!ও বাম দিকে বাঁক নেওয়ায় সামনের পাহাড়টায় আড়াল হয়ে গেল।আমিও দৌড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাঁক নিলাম।কিন্তু একি!সামনে যে গভীর খাত।টর্চের আলোয় দেখছি।রাস্তাটা এখানেই শেষ।টর্চের আলো এপাশে ওপাশে ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি।কোনো জনপ্রাণী নেই।পোড়া সিগারেটের সেই বিশেষ গন্ধটা এখানে তীব্র।পায়ের কাছে লালচে-কী ওটা! টর্চের আলো ফেলে ভালো করে দেখি একটা পোড়া সিগারেট।পাথরের খাঁজে আটকিয়ে।যেটা থেকে এখনও একটু একটু ধোঁয়া উঠছে।

ছাতা - অনিন্দ্য পাল || Chata - Anindapal || অনুগল্প || Short story || Prose

 ছাতা 

অনিন্দ্য পাল 



তপন অটোটাতে উঠে বসলো। মিনিট দশেক আছে হাতে। সাত মিনিট লাগে এখান থেকে স্টেশন। হঠাৎ হাতটা খালি খালি লাগে তপনের। কী ছিল হাতে? ওহ্ ছাতাটা! এই জন্যই নেয় না, বুড়ি মা কে মনে মনে কুকথা বলে নেমে এল অটো থেকে। ওষুধের দোকানে ফেলে এসেছে নিশ্চয়ই। সেদিকে পা চালালো দ্রুত। ছাতাটা পেয়ে গেল, দোকানদার হেসে বলল, মিষ্টি পাওনা রইলো! তপন অটোর দিকে কয়েক পা বাড়িয়েছে মাত্র, হঠাৎ বিকট আওয়াজ! দ্যাখে, একটা ফুল পাঞ্জাব লরি আছড়ে পড়েছে অটোটার উপর। পিষে গেছে চালক আর এক সহযাত্রী। 

   কেমন একটা অস্বস্তি হয় তপনের। বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসতে চায়। মা, মাগো-- দ্বিতীয় বার জন্ম দিলে মা! কালো রঙের ছাতাটা বুকে জড়িয়ে ফুটপাতের উপরেই বসে পড়ল তপন।  

Algal Biofuel : a Viable Option or NOT - Saikat Das || Scientific Article || Article ||

  Algal Biofuel : a Viable Option or NOT

                  Saikat Das





  The awareness that fossil fuels are rapidly exhausting, may be accelerated the need for an alternative energy source that is renewable, cost effective, and eco-friendly . The condition has been impaired by global warming which has brought it home to all that there is an urge to reduce man’s carbon foot print and conservation of energy on the other hand. The unsteadiness in the regions from which the fossil fuels are obtained is the reason for worry. High prices may reject it in some economically weak countries so better alternative is required. In addition to algal biofuel , other option for alternative and renewable source of energy do exist and they include wind and solar energy. But, there is no exact replacement of current fossil fuels but in future there may be some better alternative like algal biofuels which may be an exact replacement for the purpose. The planktons and microalgae are preferred generally for production of lipids ,although macro algae or seaweeds are commercially valuable due to food ingredients making omega 3 fatty acids , bio-plastic , pharmaceuticals, chemical feedstock ,fertilizer but not for lipids .Biofuel is not at all new in the market there are some available plant bio resources from which biofuel has been extracted earlier such as palm-oil ,corn , soybeans , but Jatropha is biofuel yielding as well as feedstock plant so there comes the question whether we must use the edible plant or not for biofuel extraction.

Algae particularly the species for the production of lipid, is not opposing as a food stock. Biodiesel can be extracted from the biological sources which are renewable

Like animal fats and vegetable oils .The pure form of biodiesel is B100 and this can be used singly or in combination with petrodiesel at appropriate concentrations .The most appropriate answer for the question why microscopic algae is suitable for biofuel production is that microscopic alga like Botryococcus braunii ,Chlorella sp. and many other species which are utilized because of their high energy and growth rate and hence high oil yield . The algae can double the biomass and in some circumstances it may contain huge amount of triglycerides ,which is common in vegetable oil . The DOE (Department of Energy, US) has reported that algae can yield 30 times more energy per acre than land crops such as soybeans. In addition, to keep the environment clean and free from pollution, these algae feed on CO2 ,a waste product from fossil fuel combustion and a donor to global warming, to produce lipids for biodiesel fuels .This study is interesting and important for extracting and growing algal biomass for biodiesel recovery from it. The application of microscopic algae for biofuels production can also serve other drives. Some choices presently being considered are elimination of CO2, may reduce GHG emissions by fuel gases from industries by algal bio-fixation, reducing the carbon emission of a company or process while producing biodiesel .Treatment of wastewater by removal of Ammonium ion ,Nitrate ion ,and Phosphate ion , the growth of algal biomass is eased by making algae to grow by utilizing these contaminants of water as the nutrients for developing more algal biomass. After the extraction of oil, the biomass of algae can serve as a substrate for processing methane,ethanol,livestock feed, organic fertilizer due to a good value of nitrogen and phosphorus ratio or it can be burned for the energy generation too. According to the less requirements of nutrients and the continued development in tough environment the microalgae can be grown in the locations which are not appropriate for agriculture and it can be grown on wastewater instead of fresh water.

Algae fuel is among main candidate for renewable energy sources that are estimated to substitute the rapidly depleting sources of fossil fuel. The seaweeds or macroscopic alga, appropriate for other marketable values but not for making lipids .By consuming carbon dioxide, an useless product of fossil fuel burning and a source to global warming. Along with biodiesel fuel and lipid production algae keeps the environment clean and does not give out any toxic waste. For luxurious growth and plenty harvest the light, temperature range, depth of water and nutrient composition must be appropriate to support the exact algal species for being cultivated. The open pond and closed system are methods of algal culture .The open pond method is of low price than closed system photo bioreactor. For the best results in production, utilizing photo bioreactor as the interim to exchange one volume of liquid must be equal to the time to double the bulk of the algae. When algae matures, the harvesting is done using micro-screens, flocculation, centrifugation and froth flotation methods. Along with mechanical process certain chemical solvents can also be used for the extraction of oil from algal biomass. Algae is the best candidate among other biological resources for the extraction of oil due to high oil yield and that will be best in implementing it as biofuel after required technological modifications.




*Informations collected from:*


• A Report on Commercial Usage and Production of Algal Oil

• A Sober Look at Biofuels from Algae (Biodiesel Magazine)

• US National Renewable Energy Laboratory Publications

• Current Status and Potential for Algal Biofuels Production

• “Biodiesel from Algae”, Oilgae, [Online] 2013. Available: http://www.oilgae.com/algae/oil/biod/biod.html (Accessed: 31 October, 2013)



How blue is the Sapphire - Bhaskar Sinha || Short story || Prose || English Story

 How blue is the Sapphire


         Bhaskar Sinha




It was an arduous and over stretched journey, being the only son of a village usurer going to a reputed medical college to the capital city of the country. The closed and unswaying mind dazed with the enormous lights, sounds and extravaganza.


…And there were Naveen, the classmate who seldom went to the class, but reading novels and poetry most of the time in his cosy hostel bed. The whole world admired him with an awe. To get his trivial attention, Avi was ever than fervent. If any time he was searching for some bucks, he was more than eager to open his purse. If Naveen was picking one or two big notes, Avi was reaching for cloud nine.


Shelly, Byron, Keats, Dante, Vinci, Shakespeare, Voltaire, Ruanda, Michelangelo, Picasso, Oscar Wilde, Tolstoy, Mark Twain, Dostoevsky, Nabokov, Pasternak, Pablo Neruda, Chee Guevara, Mao, Mandela, drama, music, guitar and some many other first heard words from the mouth of Naveen captivated Avi. He wanted to be orbited around him, but Naveen used to spin on his own axis and had other planets in his sphere and numerous satellites surrounding him. To Naveen, Avi might be a silly comet at the most.


Avi’s Babuji had a writhing life and fought poverty with tooth and nail. Now people feared him not because he was asking for a huge interest on loans, or he had plenty of properties, but his self-styled obeyed hoodlums could do anything and everything just by the drop of his hat. Babuji very much wanted him to settle down in the village itself. Given chance, he started lecturing him on the rural development and the human welfare. When in particular there was no qualified doctor at the village, it should be Avi’s moral responsibility to treat the ill-nourished villagers. Avi understood the inner meanings of those lectures and responded diligently that rural development was the government duty and his agenda was the utilisation of his knowledge properly for the betterment of humankind, including himself. Babuji was shocked when Avi planned his post doc plan at the overseas. He tried his best to pull Avi back and he tried all his judgements to fly away.


Arcita could have stopped him. Her parents, Avi’s maternal aunt and uncle left for the heavenly abode while a trip to Uttrakhand. The ill-fated cab slipped and shattered into pieces from almost six thousand meters top down. It was an enigma that how an Oak branch pinned her tiny ruffle romper during that mighty fall and kept her hanging and alive. Babuji calmly acknowledged the brave police volunteer, Tiwariji’s super human hill climbing ability with a rope and reaching her by taking chance on his own life.


Arcita was like a fresh air in that dogmatic village atmosphere. Small talks, gossips, ponds, never ending melodramas, etc. etc. all were stifling, but Arcita was far away from those sully muck. Even they came pretty close during their teenage years while spending some lazy summer afternoons, but lastly the butter remained intact, not got clarified. May be Babuji’s strong village ethics in the back of his mind and Arcita’s virtuous innocence saved those days.


Arcita used to realise her life with songs and flowers. The village boys were too lesser taste for her, but in one summer break Naveen visited my village from nowhere and how Babuji whisked away both of them and got them hooked, still not very clear to Avi. Interestingly neither Naveen nor Arcita are in touch with him now. Avi even doubt that whether Babuji keeps a tab of any one of them. He sincerely and secretly hopes that she still loves her songs and butterflies like before as well as was talking gently with the Kash flowers in a windy autumn afternoon. Probably Naveen also still immersed himself into Wordsworth, Beatles, John Lennon, John Denver, Bob Dylan and other great’s works.


Avi understood Babuji’s difficulty of a clear conversation with his own adult educated posterity. Inheritor should follow his footsteps- that was his yearning. Avi was nonchalant. Babuji even pretended health scares to bring Avi back several times. Sometimes Avi returned hurriedly stopping all the work. After some time Avi fathomed those melodramas and tried to reason with him calmly, but he would not listen. Poor Babuji never appreciated that Avi’s anchorage was now somewhere else.


Though how cruel it may be, but Babuji’s and his thought processes are quite divergent now and will never meet. Globe itself has turned into a village and it is of no use to remain confined in an isolated pond. Avi though respects Babuji and will continue to perform his duties towards him, but for sure, he would live his own life. Avi though becomes frustrated with these theatrics sometimes, currently takes a fervent resolution that he will continue to serve the humanity in his way. Probably that will be his way to pay a scant tribute to his beloved Bibhutibhusan, Apu, Ray, and Sarbajaya.

Love is precious - Mausumi Pramanik || Poem || English Poem || Poetry

 Love is precious

Mausumi Pramanik



I wish…If I would have escape from this crowded city,

You could not find me any more…What’s a pity!

Think for a while…I would have been the green bird,

Residing on the top of the palm tree,

You could only see, but could not touch me…as I should have been free.

If I would have been the crystal clear water of a river,

You can feel my coldness, but are unable to hold me ever,

Suppose…I am the wildly wind blowing over the green grasses,

You can take only deep breath…but can’t grasp me…

So it’s better to stay away not to rush like a bee…

Nothing will be achieved except the tremor between the crashes.

I wish…If I would have been lost from this cruel atmosphere,

You will miss me either…or my love…for sure…my dear.


Therefore…do you know what these moments actually show?


Love is more precious than life…don’t let it be go…

Thursday, November 2, 2023

জেনে শুনে বিষ করেছি পান - পাপিয়া চট্টোপাধ্যায় || Jene sune Bish korechi pan - Papiya Chottapadhy || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

 জেনে শুনে বিষ করেছি পান

     পাপিয়া চট্টোপাধ্যায়



দেবারাতি সঙ্গে প্রথম আলাপ, হোয়াটসঅ্যাপে। ফেসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে। প্রথম প্রথম তার কথাবার্তা চালচলন ভালোই লাগতো। অমন আলাপ তো লাখো গন্ডা মেয়েদের সঙ্গে হয়ে থাকে যাস্ট ক্যাজুয়ালি আলাপচারিতা। ইমোশনে সুড়সুড়ি দেওয়া ম্যাসেজ কার না ভালো লাগে? আসিফের ও লাগতো, ফার্স্ট ইয়ার কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে সদ্য এডমিশন নিয়েছে মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর কলেজে। হাজার হাজার ফ্রেন্ড দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে রাখতে হাঁপিয়ে উঠেছে আসিফ। টোয়েন্টি ফাস্ট জেনারেশন দের রিলেশনশিপ বোঝাতে হয় না। মায়ের বোন মাসি সে সম্পর্ক ভুলে পিসি বললেও একটা ছেলে একটা মেয়ে রিলেশন অনলি লাভ রিলেশনে সিপ সেটা তারা জন্মসূত্রে ই প্রাপ্ত করে নিয়ে আসে। ভাবতে অবাক লাগে যে এখন প্রেম করার জন্য কোন বয়স লাগে না ।অর্থাৎ কোন বয়সের মাপকাঠি নেই । ক্লাস ফাইভ সিক্স এর পড়ুয়ারা দিব্যি প্রেম করে বেড়াচ্ছে। আজকাল কার বাচ্চাগুলো সব হাইব্রিড বাচ্চা ফলমূল শাকসবজির মত। বাচ্চা নয় সবকটা এক একটা চৌবাচ্চা যেন, আসীফের লাইফে প্রেম গলি ধরে অনেক মেয়ে এলো গেলো কিন্তু এই দেবারতি মালটি শক্ত আঁটে গলা টিপে ধরেছে তার। যাকে বলে ছেলে ধরা মেয়েছেলে ।বেশ পোক্তা জালে ফাঁসিয়েছে। অনেক ঘাটের জল খেয়েছো,এখন প্রমিক বাবু জব্দ এক্কেবারে বাঘ বন্দি।ট্যাঁ পুঁ করার জায়গা নেই। উস্কে দিয়ে ফস্কে দেবে ওটি হবে না। বাবু ইনিয়ে বিনিয়ে,এঁদিয়ে পেঁদিয়ে ভালোবাসার গল্প বলে সেঁধিয়ে দিয়েছে ভেতরে। প্রেমের সাতকাহন শুনিয়ে শুনিয়ে মাথা টি চিবিয়েছে কষে। নাকি কান্না কেঁদেকেটে নাটক ড্রামা করে টরে এক্কেরে ঘাড়ে চেপে বসেছে। হূঁ হুঁ বাব্বা ঘুঘু দেখেছো ফাঁন্দ দেখো নি ।সে মেয়ে প্রতি মিনিটে গোটা চারেক সিগারেট ফুঁকে রাত্রে বিয়ার না খেলে চোখে ঘুম আসে না তার। সিগারেটের ভিতর গাঞ্জা সেবন ও বাদ যায় না। মানে যাকে বলে জুয়েল কন্যে প্রেমে ব্যাঘাত ঘটলে ই, বা বিরহে ঘনঘন হাতের ভেইন কেটে বিপদ কান্ড ঘটিয়ে বাসে সে মেয়ে‌। প্রেম করেছ বিয়ে করব না বললে গলা টিপে খুন করবো। তখন তো খুব ফুর্তি গায়ে গা লাগিয়ে পার্কে বসে চুটিয়ে প্রেম করেছ ডেটিং করেছ হোটেলে বেড শেয়ার করেছ। নিকো পার্কে বসে উষ্ণ আলিঙ্গনে ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছো। ফুরফুরে মেজাজে টোটো তে বসে গঙ্গার ঠাণ্ডা বাতাস খাচ্ছো। আর বউকে কি খাওয়াবো বললে তো চলবে না। সে কথা বলার সাহস ও নেই প্রেমিকের। প্রেমিকা হবু বরকে গলা টিপে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে হুমকি ও বলা যেতে পারে।কর্তীর ইচ্ছে ই কর্ম। আসিফের হবু স্ত্রী চায় না যে তাদের লাভ স্টোরি তে কোন তৃতীয় ব্যক্তি বা থার্ড পার্সেন কারো আবির্ভাব ঘটুক বাবা মা আত্মীয় অনাত্মীয় তাদের দুজনের সম্পর্কের মাঝখানে নট অ্যালাউড ।কেবল ইউ এন্ড আই ।তুমি এবং আমি ।কোন দরকার নেই পাড়া পোড়সী পিসি মাসী ,সব দুমুখো আত্মীয়দের গান্ডে পিন্ডে তিনদিন ধরে চারবেলা পেটপুজো করিয়ে।সব নাকি মানি ওয়েস্টেজ। শাশুড়ি মা জেনেশুনে মদো মাতাল গাঞ্জাড়ি বৌমা কে বরণডালা ঘুরিয়ে বরণ করে নিশ্চয় ঘরে তুলবেন না।মুসলমানের ছেলে হিন্দু র মেয়ে কে বিয়ে করবে। ছেলে র বাড়ি থেকে কোন আপত্তি নেই। ওরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় । মানে সংখ্যা য় কম । বিয়ে করে হিন্দু র মেয়ে টানতে পারলে সংখ্যা য় বাড়বে ‌ ।ওদের ধর্মে নাকি বলা আছে যত পারো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করো। এন্টনি পড়েছে মহাপাপ এতদিন প্রেম পর্ব চুটিয়ে চলছিল ভালোই। এবার সেই অতি কঠিন কাজ অতি কঠিন ক্ষণ বিয়ে করতে হবে করতেই হবে নইলে প্রেমিকার সাফ কথা হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করবে । নিজের গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়বে সিলিং ফ্যানের গলায়। নয়তো রেললাইনে বুক পেতে দেওয়া কেউ রদ করতে পারবে না। এর আগে ও বারকয়েক ঘুমের বড়ি গুঁজেছে মুখে। এমনকি হাতের শিরা কেটে ফটো তুলে রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করেছে ফেসবুক প্রোফাইলে সেন্ড করেছে আসিফকে ও । প্রেমিকাকে বিশ্বাস নেই কোন যাকে বলে ভালোবাসায় উন্মাদ ।প্রেম পাগলী ।মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরা হাতের শিরা কেটে লাইভ ভিডিও বহুবার করেছে। সেদিন ব্লেড দিয়ে খচাক্ করে হাতের শিরা কেটে ফেলল দেবারতি ।হুলুস্থুল পড়ে গেল লেডিস হোস্টেল তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা হল । হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হল দেবারতি কে। পুলিশ কেস। ভিডিও টিডিও দেখে টেখে বারকয়েক পুলিশ ও থ্রেটনীং দিয়েছে আসিফকে। সে অবশ্য বিয়ে করবে না সে কথা বলেনি কোনদিন বলার মত সাহস নেই শুধু সময় চেয়েছে করুণাময়ী প্রেমিকার কাছে বারবার বুঝিয়ে বলেছে দেখো আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । তাদের কতো আশা আমার উপর বল তো? অন্তত গ্রেজুয়েশন টা কমপ্লিট করতে দাও। দয়া করে রোজ রোজ কেলোর কীর্তি করোনা ।লোকে বলে প্রেম করলে শরীর মন ভালো থাকে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে ,আহ্লাদে আনন্দে গদগদ থাকে মন। এখন দেখছি প্রেম করে আসিফের পেছনে বাঁশ হয়েছে। প্রেমিকের গলায় প্রেমের ফাঁস পরিয়ে, প্রেমিকা গলায় ওড়নার ফাঁস পরছে দিনে পাঁচবার করে। ইমিডিয়েট রেজিস্ট্রি করতে হবে ইডিয়েট প্রেমিককে কোন কিউজ শুনতে রাজি নয় আধা উন্মাদ প্রেমিকা। আজকালের মেয়েগুলো ঐরকমই নিজের সাড়ে সর্বনাশ টা নিজেই টেনে নিয়ে আসে ।সমাজে নারী সুরক্ষার জন্য কত কিছুই তো হল কিন্তু নারী অরক্ষা উত্তরোত্তর বাড়ছে বই কমছে বলে তো সমীক্ষা বলছে না ।বর্তমান ইয়ং লেডি উশৃংখলতা কে স্বাধীনতা বলে মনে করে ।স্বেচ্ছাচারিতা কে স্বাবলম্বী বলে ধরে নেয়। ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়াবো যা খুশি তাই করব বড়দের তোয়াক্কা করবো না বাপ মা কে ব্যাকডেটেড ছাড়া বলবে না ।এটা ই আজকের নারী চরিত্র।জীবনে বড় হতে গেলে সসম্মানে বাঁচতে চাইলে জীবনদর্শীদের সৎ পরামর্শ যে কতটা দরকার সেটা আজকের প্রজন্ম মানতে নারাজ নিজেরা বিরাট আধুনিক সবজান্তা ভাব ।বাপের পয়সায় ফুটানি মেরে হাতে বিশাল সেলফোন তাতে দু-চার টি হোয়াটস অ্যাপ ফেসবুক টুইটার এসব নিয়ে নিজেদের বিশ্বসেরা জ্ঞানীগুণী বলে মনে করে শরীরে হাফ ইঞ্চি করে কাপড় জড়িয়ে আধাউলঙ্গ শরীর খেলিয়ে খেলিয়ে পুরুষের সেক্স এ সুরসুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সেযুগের রমনী কুল এমনটা হলে নরেন, নেতাজি দের জন্ম হোত না।এ যুগের মেয়েদের চরম দুর্দশার জন্য দায়ী কেবলমাত্র আলট্রা মডার্ন অল্প শিক্ষিত উৎশৃংখল মেয়েদের একাংশ এদের রাশ টেনে ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন তম দিন অপেক্ষা করে আছে। বলবেন এটা ফেমিনিজমের যুগ আরে মশাই রাখুন তো , এক পেট মদ গিলে, ঠোঁটে সিগারেট গুঁজে বাড়িতে না জানিয়ে হোটেল রেস্তোরায় গন্ডা গন্ডা পুরুষের সঙ্গে রাত কাটালেই ফেমিনিজম হয়না ।একের দোষে অন্যের মরণ । বলবেন ড্রেস নিয়ে সমালোচনা কেন ?যে যা খুশি পরতে পারে ।পুরুষেরা গামছা পরে বা জাঙ্গিয়া পরে ঘুরে বেড়াবে তার বেলা দোষ হয় না যত দোষ মেয়েদের বেলায় কেন?আরে বাবা পুরুষের তো আর ইজ্জত খোয়ানোর ভয় নেই তথাকথিত পুরুষ হচ্ছে পেতলের কলসী। আর রেপ হওয়ার ও আশঙ্কা নেই ।দেশেটার নাম ভারত বর্ষ এখানে মেয়েদের লজ্জা ই মেয়েদের আব্রু। এদেশের সংস্কার মেনে ই চলতে হয়‌ যস্মিন দেশে যদা চারং। কোথাও কি শুনেছেন পুরুষ ধর্ষন হয়েছে? ধর্ষিতা হয় নারী ।তাই নারী দের একটু সংযত তো থাকছেই হয়। বেআব্রু রমনী বড়ই দৃষ্টি কটু। মাপ করবেন আমি একজন নারী সর্বোপরি আরেক নারীর মা ও তাই নারী কুলের মঙ্গলকামনার্থে কথাগুলো বললাম। অপসংস্কৃতি গ্রাস করেছে সমাজকে। মেকি সংস্কৃতির আস্ফালনে উন্মত্ত নারীকুল। নিউ জেনারেশন বলছে একেই বলে বিশ্বায়নের যুগে। প্রেমে অশান্তি বেকারত্ব ফাস্ট্রেশন ডিপ্রেশন সবমিলিয়ে ইয়াং জেনারেশন নাস্তানাবুদ ।এসবের থেকে বাঁচার পথ একটাই নেশা । নেশায় ড়ুবে থাকা।একমাত্র পথ।ভেতরে ভেতরে ইয়ং জেনারেশন খোঁকলা হয়ে পড়েছে।এরা সকাল দেখেনি কোনদিন।রাতভর মোবাইল নিয়ে মস্তি তারপর সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুম। গাঁজা র ঘোরে উলটে্ থাকে।চন্দ্র সুর্য এদের দর্শন পায় না। প্রকৃত অর্থে এনারাই বঙ্কিমবাবুর , বাবু চরিত্র । সিগারেট গাঞ্জা মদ মেয়ে মানুষ একটার পর একটা প্যান্ট জামা চেঞ্জের মতো প্রেমিকা চেঞ্জ।প্রেম বিবাহের না আছে গ্যারেন্টি না ওয়ারেন্টি।চঞ্চল মস্তিষ্ক উন্মাদ যুবসমাজ আগামী যুগের ত্রাতা ।এরা নিজেরা নিজের ই ভার বইতে পারে না । সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পা টলমল করছে সবসময়।তাই দেশের ভার বৃদ্ধবাবা-মায়ের ভার সংসারের ভার এরা নিতে পারবে, এমন আশা এদের উপর না করাই যুক্তিযুক্ত। রক্তাক্ত প্রেমে নাস্তানাবুদ আসিফ কলেজ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে বাড়ি এখানেই সব শান্তি। সর্বসুখ বাবা মায়ের কোলে জ্বলন্ত হৃদপিণ্ডটা মার কোলে ফেলে দিয়েছে ।মনে শান্তি নেই আ্যবনরম্যাল বিহেভ। কখন কি বলছে না বলছে ,কি করছে না করছে ,কোন হুস নেই তার।বাড়িতে সব সময় যেন গভীর চিন্তায় ডুবে আছে ।প্রেমিকার সঙ্গে রাতভর তর্কাতর্কি বিনিদ্র রজনী যাপনে চোখের কোনে কালি পড়েছে।কখন ঠান্ডা লড়াই তো কখন খুনোখুনি। ফোনে ফোনে মারামারি চিৎকার চেঁচামেচি গলাবাজি। এদিকে বাবা-মায়ের অস্থির প্রাণ ছেলের জন্য অধীর হয়ে থাকে।*সবে ধ্বনী নীল মনি।এক মাত্র সন্তান আর স্বামী স্ত্রী ছোট্ট সুখের সংসার সুজাতার।কার যে কুনজর পড়েছে ঈশ্বর ই জানেন। ছেলে কে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। খাওয়া দাওয়াতে আগ্রহ নেই। চোখে ঘুম নেই ছেলের সারা টা রাত ধরে ফোনে বক্ বক্ । চোখের কোণে কালি পড়ে গেল বাছার আমার।মনে মনে চরম অশান্তি তে ভুগছে। তবু বাপ মা কে কিচ্ছু টি বলবে না মুখ ফুটে।সুদেব বাবু, আশীফের বাবা তিনি অত্যন্ত চিন্তান্বিত ছেলেকে নিয়ে গিন্নি কে খেঁচাতে থাকেন সবসময়,জানাতে আপত্তি টা কোথায়? প্রেমে টেমে পড়েছে মনে হয় তোমার ছেলে। হাতেই পারে।এ বয়সে প্রেম হবে না তো কি পালক বেরুবে।বাপ কে মোটা মুটি সমঝেই চলে সে। অতটা ফ্রাঙ্ক নয়।সুদেব বাবু ও টেঞ্জড্ ছেলের বিষয়ে। চিন্তা গ্রস্থ সুরে বললেন স্ত্রী কে ছেলের কাছে জানতে চাও কি প্রবলেম তার?সুধোও তাকে আমরা তো এখনো বেঁচে আছি।মরি নি তো। আমরা তো বাবা মা নাকি সমস্যা থাকলে জানতে অসুবিধে কোথায়?যা করছে করুক।বাধা নেই। ছেলে বড় হয়েছে করতেই পারে। তাতে অত টেনশনের কি হোল? বিয়ে করতে চাইলে বলুক সাধ্যমত খরচা পাতি করে সামান্য ধুমধামের সঙ্গে বিয়েটা দিয়ে দেব।দুকোটি টাকারও বিয়ে হয় আবার দু লক্ষ টাকার ও বিয়ে হয়।দু টাকার ও বিয়ে হয়।যার যেমন সাধ্য। বাবা সামান্য স্কুল মাষ্টার জীবন সম্বল বলতে যা রেখেছেন ছেলের সুখের জন্য তাও ঢালতে রাজি আছেন। ‌আমাদের সে ছাড়া আর কে বা আছে?যা কিছু সঞ্চয় সব তো তার ই জন্য।মানলুম আমি ছেলের কাছে অতটা ট্রান্সপারেন্স নই। তোমাকে তো সবকথা খুলে বলতে পারে সে।


আমার এই লেখা টি মৌলিক এবং অপ্রকাশিত। 

পরিচিতি,নাম পাপিয়া চট্টোপাধ্যায়। পিতার নাম,রবিলোচন মুখোপাধ্যায়।মাতার নাম, মেনকা মুখোপাধ্যায়। জন্মস্থান বাঁকুড়া জেলার পাবড়া গ্রামে। পুরুলিয়া জেলার চয়েন পুর গ্রামের গৃহবধূ।লেখার প্রতি প্রেমে লেখালেখি তে মনোনিবেশ। 

প্রবাহঝড়ের রাত্রিনাচন - মনোজ মন্ডল || Prabhao Jhararer Ratrinachon - Monoj Mondal || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

  প্রবাহঝড়ের রাত্রিনাচন

                  মনোজ মন্ডল


খরপ্রবাহ বৈশাখের দুপুর, রাস্তা দিয়ে গাড়ি মাইক বাজিয়ে আসে আবার মাইক বাজিয়ে চলে যায় ; কে কোন দলের মন্ত্রশক্তি নিয়ে আসছে তা শুনেই বোঝা যায়। এই গাঁয়ে থাকেন ভূদেববাবু মহাশয় ,তার ভালো নাম ভূপতিচন্দ্র মন্ডল ,একালের ছেলে কিনা তাই বাপের দেওয়া অতবড় নাম রাখতে নারাজ । বাপ তার কোম্পানিতে ট্যাক্স লয় ,এ গাঁয়ে চক্কতী বাড়ি আর তারাই একমাত্র শিক্ষিত লোক বাকি সব চাষাভুষা মানুষ , এমনও লোক আছে যারা দিনানি দিন খায়। ভূদেব এর পিতা পশুপতিচন্দ্র মন্ডল এই গ্রামকে ভীষণ ভালোবসেন তাইতো বাপ ও ব্যাটার মধ্যে মাঝে মাঝে লেগে যায় কোন্দল । 


এই গ্রামের মানুষদের মধ্যে একটা অভিশাপমুক্ত ফল কাজ করে ! তারা ধর্মে নয় কর্মে বিশ্বাসী , নিজ ধর্ম নিয়ে উভয় সমাজের মানুষ মিলেমিশে তিহার পালন করে যেটা ভূদেবকে খুবই প্রভাবিত করে । ভূদেব সেই জন্যই তার পদবী কোথাও ব্যাবহার করেন না , সে একটা কথাতেই বিশ্বাসী "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"তাইতো গ্রামের মানুষজনও ভূদেবকে খুব ভালবাসত।ভূদেব ও এ গাঁয়ের মোল্লা সাহেবের ছেলে বোবা লতিফ দুজন খুব মিশুকে বন্ধু ছিল । মোল্লা সাহেব এ গ্রামের সৎমানুষ ছিলেন ,কোনোদিন কারো দুটাকা মেরে খাইনি,তাদের পরিবারকে খুব সম্মানের চোখে দেখতেন পাড়ার মানুষজন ,খুব শ্রদ্ধা করতেন মোল্লা সাহেবকে । সেই জন্যই তো পাড়ার প্রাইমারি স্কুলের চাবি মাষ্টারমশাইরা বিশ্বাস করে মোল্লা সাহেবদের বাড়িতে রাখতো,গত বিশ বছর থেকে তার বাড়িতে ছবি রেখে আসছে কোনোদিন দুটো আলু পর্যন্ত চুরি হয়নি চাল ডাল তো দূরের কথা। লতিফ ছিল মুক্কসুক্ক ছেলে কিন্তু দিমাগ তার তেজ চলত। ভূদেব আজকাল কাজবাজ জোগাড় করতে না পারায় বাড়িতেই বসে লেখালেখি করে আর সেই লেখা লতিফকে শোনায় এবং লতিফও তার লেখা শুনে সহানুভূতি যোগায়। 


এই মরশুমে বিভিন্ন বাড়ি থেকে মাংস ভোজনের নেমন্তন্ন আসে ,বেশ আদর করে পিঠে হাত বুলিয়ে খাওয়ানো হয় , কেউ বাড়ির উঠানে ,কেউ ছাদে ,কেউবা বনে ,কেউবা খেলার ফিল্ড এ ,সবাই ভালোবেসে খাওয়াতে চায় , মোল্লা সাহেবের বাড়িতে নেমন্তন্ন আসে ভরে ভরে , লতিফরা যায় নেমন্তন্ন খেয়ে আসে ,এই মরশুমে গরীব মানুষদের- যারা দিনানি দিন খাটে তাদের একটু হলেও খুব উপকার হয় কিন্তু ভূদেবরা অন্যের বাড়িতে রাতবিরাতে আহার থেকে দূরে থাকে । গায়ের রতন ক্ষ্যাপা রোজ একবার করে ভূদেব কে বলে - কিরে ভূদেব্যা কাইল রাইতে পংখোজদের বাড়ি খেতে জাইসনাই? উত্তরে ভূদেব বলে - গিয়েছি তো দেখাসনাই? তারপর তড়িঘড়ি ভূদেব সেখান থেকে কেটে পড়ে । এভাবেই দিন যায় রাত যায়, চলে আসে বনভোজনের অন্তিমপর্ব এর পর আর খাওয়ার পাবেনা কেউ।


সময়টা ছিল বৈশাখের রাত। আকাশটা সারাদিন ধরেই মেঘলা । মেঘলা দিন থাকলেও ঝড়বৃষ্টির কোনো খবর ছিলনা , ভূদেব রাতের বেলা লেখালেখি শেষ করে ঘুমাতে যাবে এমন সময় বিদ্যুৎ প্রস্থান করলো । বিদ্যুৎ এর কথাটা না বলে আর পারলাম না ,তবে বলি শুনুন ,ছোটবেলা থেকেই ঝড় আসার আগে এই কথাটা ভাবাই ঝড়বৃষ্টি আসার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায় কেনো ? এরকম পরিস্থিতি কলকাতার মত বড় শহরকে পোহাতে না হলেও গ্রামগঞ্জে এইরকম পরিস্থিতি নিত্যই লক্ষ্য করা যায় ; বিদ্যুৎ যাওয়ার ক্ষণেক পরেই ইন্দ্রবিদ্যুৎ এর আলোয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দুটো , জানলার দিকে মুখটা বাড়াতেই দেখি সে কোনো ছোটখাটো ঝড় নয় , এক ভয়ানক দৃশ্য ,সেই মুহূর্তের জন্য মনে হল এমন ঝড় হয়তো এর আগে কোনদিন চোখে পড়েনি, মুহূর্তের মধ্যে শুরু হলো ঝাঁই ঝাঁই - সাই সাই আওয়াজ ,বিদ্যুতের শিখা ও গর গর - ঘর ঘর আওয়াজ, যেনো আকাশ - পাতাল ভেদ করে বেরিয়ে আসছে মানুষখেকো বজ্রপাত ! মনে হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে সব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে তলিয়ে যাবে মাটিতে, বোধ হয় স্বয়ং ইন্দ্রদেব পৃথিবীর মানুষের আচরণের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে তার বজ্রবাণ চালাচ্ছেন ,যেন সেই বাণে পৃথিবীর উপর স্থাপিত সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করতে চান ,এভাবেই চললো সারারাতের নরকীয় ধ্বংসলীলা ,এভাবেই কখন ঘুমে লিপ্ত হয়ে এল আমার দুই চোখ বুঝতে পারিনি ।


সকালে মায়ের কান্না শুনে ভূদেবের ঘুম ভেঙে গেলো, মাকে বাইরে কাঁদতে কাঁদতে বেরোতে দেখে ভূদেব বাইরে বেড়িয়ে দেখে অতবড় ডালভরা সজনে গাছটা ভেঙে পড়েছে কালকের ঝড়ের তান্ডবে! সে ভাবে মায়ের সাধের লালন করা ছুটির গাছটা শেষ হয়ে গেলো । ছুটির গাছ পার করে আরেকটু দূরে চোখটা যেতেই দেখে লতিফদের ঘর ভির করেছে পাড়াসুদ্ধ মানুষজন সে ভাবে তাদের বাড়ির ডালপাত ভেঙে আসা আম গাছটা বোধহয় ঝড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে । গিয়ে ভিড় সরিয়ে দেখতে যাবে কি তার মাথায় হাত! স্তব্ধ ভাবে দাড়িয়ে রইল ভূদেব ,নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ভূদেব । এ আমি কি দেখছি ! একি সত্যি লতিফ ?

লতিফের লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে ,পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রক্তের স্রোত ,শুধু তার একার না, তার পুরো পরিবারের , সেই রক্তে অধিকারের ভির বসিয়েছে বিভিন্ন অঙ্গের পিঁপড়েরা ,তার দিদির নগ্ন দেহ পড়ে আছে উঠানের পাশে বুঝলাম তার ওপর পাশবিক অত্যাচার কম হয়নি, মা গিয়ে একটা কাপড় জড়িয়ে কান্নায় জ্ঞান হারানোর অবস্থা ,আমি থ হয়ে দাড়িয়ে রয়েছি , কান্নায় ভেতর আমার ফেঁটে যাচ্ছে ,হায়রে বোবা লতিফ কাল রাত্রে যদি তোর গলায় ভগবান একটু আওয়াজ দিত, তুই ডেকেছিস অনেক কিন্তু শোনার জন্য সে কান ভগবান আমাদের কাউকেই দেয়নি , তোর বাবা নিশ্চয় খুব চেঁচিয়ে ছিল রে ভূদেব আই পশুপতি বাঁচা আমাদের , তাইতো তার গলায় ছুরি টা এখনও লেগে আছে রে ,

শেষ প্রচেষ্টা করেছে মোল্লা সাহেব স্কুলের চাবি সুরক্ষিত রাখার কিন্তু পারেনি কেড়ে নিয়ে গেছে দুষ্কৃতিরা । ভূদেব এর মাথায় সেদিন একটায় কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল "এই আমাদের দেশ , স্বাধীন হয়েছি আমরা , আপন অধিকারেই তার শেষ "


                                               

এক অবিশ্বাস্য ভ্রমণ কাহিনী - শ্রাবনী আচার্য্য || Eek Obisassho vromon Kahini - Shrabani Acharya || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

এক অবিশ্বাস্য ভ্রমণ কাহিনী

          শ্রাবনী আচার্য্য



সাল টা ছিল ২০১৬।আমি হরিয়ানায় বি.এড এ পাঠরত ছিলাম।পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেই শুনলাম বাবা মা আমাকে না জানিয়েই পুরী বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।শুনে খুব খুশিই হলাম,কারণ আমি ভূগোলের ছাত্রী,বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে।তার ওপর বেড়ানোটা যদি পরিবারের সাথে হয়,তাহলে তো একদম সোনায় সোহাগা।যাইহোক,যথারীতি লক্ষী পুজোর পরের দিন আমরা পুরী যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।বাসে উঠেই দেখি প্রায়৬০জন মতো রয়েছেন।সবাই বাবার পরিচিত,কেনকি বাবা ডাক্তার।তাই বাবার খাতিরে,ওনার মেয়ে এবং স্ত্রী হিসেবে আমার আর মায়ের সাথেও ওনাদের আলাপ হয়ে গেল।রাত ১০ তার সময় বাস ছাড়লো রামনগর থেকে।

পরেরদিন ভোরবেলা আমরা নন্দনকানন এ পৌঁছলাম এবং ওখানে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখলাম।বিকেলে আমরা পুরী পৌঁছলাম।যেহেতু আমরা ট্রাভেলার দের সাথে গেছি তাই পুরীতে থাকার জন্য আমাদের ২দিন বরাদ্দ ছিল।তারপর কোনারকের সূর্য মন্দির,খন্ড গিরি,ধবলগিরি,ভুবনেশ্বর এর লিঙ্গেস্বর মন্দির -এসব ঘোরার পর এবার আমাদের বাড়ি ফেরার পালা।৬দিন পর আমরা যখন ওড়িশা দিয়ে বাড়ি ফিরছি তখন বিকেল ৫টা বাজে।ওই রাস্তায় নাকি তারিনী মায়ের মন্দির পড়ে।বাসের সবাই বলছিলেন তারিনী মা নাকি খুব জাগ্রত,ওখানে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরবেন।অগত্যা বাসের ড্রাইভার কাকু ওই মন্দিরের পাশে গাড়ি দাঁড় করালেন।আমরা সবাই নেমে একে একে মন্দিরের দিকে রওনা দিচ্ছি।মন্দিরে ঢোকার মুখেই কয়েকজন ১৫-১৬বছরের ছেলে পুজোর ডালা সাজিয়ে বিক্রি করছে।একটা লাল ওড়না,একটা গোটা নারকেল,আর কিছু ফুল,বেলপাতা ও সিঁদুর ছিল ওই ডালা গুলোতে।যথারীতি আমরা একটা ডালা কিনে পুজো দেয়ার জন্য মন্দিরের মধ্যে ঢুকলাম।মন্দিরের ভেতরে ঢুকে দেখি,মন্দিরটা বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে।একটা ঘরের মাঝে তারিনী মায়ের মূর্তি রয়েছে,আর মায়ের চারদিকে প্রায় ১০ইঞ্চি দূরত্বে গোল করে পুরোহিতরা বসে রয়েছেন।আমরা একজন পুরোহিত কে পুজোর ডালা ধরিয়ে দিতেই উনি লাল ওড়নাটা নারকেল এর গায়ে বেঁধে দিলেন,তারপর নারকেল টাকে ফাটিয়ে তার জল টা তারিনী মায়ের গায়ে ছিটিয়ে দিলেন,আর ফুল বেলপাতা ও ওড়না জড়ানো নারকেল এর টুকরো মায়ের কাছে নিবেদন করলেন মায়ের দিকে ছুড়ে ছুঁড়ে।এরকম পুজো দেখে খুব অদ্ভুত লাগলো আমার।৫মিনিটের মধ্যে পুজোও শেষ হয়ে গেল।তারপর মন্দিরের ভেতরটা আর একটু ভালো করে ঘুরে নিয়ে, মাকে প্রণাম করে বাইরে বেরিয়ে এলাম।মন্দিরের বাইরে এসে দেখি ফুলের ডালা বিক্রেতা ছেলেটার সাথে আমাদের বাসের ড্রাইভার কাকুর কোনও কিছু নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে,আর একটু এগিয়ে এসে শুনলাম যে-বাসের ড্রাইভার কাকুএকজন মুসলিম ধর্মের মানুষ। তাই ওকে পূজার জন্য ডালা নিতে বললে কাকুটি রেগে ওর পরিচয় দিয়ে বলেন-আমি তো মুসলিম, কি করে তোমাদের মন্দিরে পূজো দেব?তুমি ডালা রেখে দাও ভাই, আমি পূজো দেব না।আমরা কিছু না বলেই চলে এলাম এবং যথারীতি বাসে উঠে নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসলাম।সবাই না এলে তো বাস ছাড়বে না,তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম চিপস খেতে খেতে।২০-২৫মিনিটের মধ্যে সবাই বাসের মধ্যে চলে ও এলেন।এবার বাস ছাড়ার পালা,আর কোথাও নামবার নেই, সোজা বাড়ি যাব। হালকা ঠান্ডাও পড়ছে, সন্ধ্যে হয়ে এলো।আমরা সবাই এসে গেছি,ড্রাইভার কাকুও এসে গেছেন, কিন্ত বাস ছাড়ছে না কেন?সবাই পেছনের সিট থেকে বলছেন-কি হল গাড়ী ছাড়ুন,সবাই এসে গেছে তো,আর কেউ বাকি নেই তো।কিন্ত গাড়ি ছাড়ছে না দেখে বাবা উঠে গেলেন ড্রাইভার কাকুর কাছে। কি হয়েছে, গাড়ি ছাড়ছেন না কেন জিজ্ঞেস করতেই ড্রাইভার কাকু বাবাকে বললেন- জঙ্গল এলাকা,জায়গাটা ভাল নয়,আমি তো আপনাদের নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছি।কিন্ত বাস টা যে কেন স্টার্ট নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না।এটা শুনেই তো আমাদের মাথায় যেন বাজ পড়ল।এই অচেনা অজানা জায়গায় কী এই বাসের মধ্যেই সারারাত থাকতে হবে নাকি?বাসটা আর খারাপ হওয়ার জায়গা পেলো না?এই জঙ্গলের মধ্যেই তাকে খারাপ হতে হলো?এখন কি হবে?আমরা বাড়ি যাব কি করে?ধারে কাছে কোনও দোকান ও নেই যে কোনো মেকানিক কে ডেকে গাড়িটা সারিযে নেওয়া যায়।বাসের মধ্যে অনেক বয়স্ক মানুষ ও ছিলেন, তারা প্রায় হই হটোগোল ফেলে দিলেন চারদিকে।আবার কিছু কুসংস্কার মাখা কথাও শোনা গেল,যেমন-কেউ হয়তো অপবিত্র ছিল?বা কেউ কোনও দোষ ত্রুটি করে ফেলেছে?তাই তারিনী মা রেগে গিয়ে গাড়ি খারাপ করে দিয়েছেন। এইসব শুনে আমার প্রথমে হাসিই পাচ্ছিল। তারপর এই হাসিটাই মিলিয়ে গেল যখন ব্যাপার টা আরও গুরুতর হয়ে উঠল। ড্রাইভার কাকু তখন পাশেই একটা ছেলেকে ডেকে বললেন-পাশাপাশি কোন মেকানিক আছে কিনা খবর দিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারবে?আমরা খুব বিপদে পড়েছি।তখন ছেলেটি বলল আছেন একজন,১০-১৫মিনিট লাগবে,আমি ডেকে নিয়ে আসছি।যথারীতি ২০মিনিট বাদে একজন মেকানিক কাকু এলেন। উনি অনেকক্ষন দেখার পর বললেন-কই বাসে তো আমি কোনও সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না,বাস স্টার্ট নিচ্ছে না কেন?স্টার্ট না নেওয়ার তো কোনও কারণ নেই। উনি প্রায় ৩০মিনিট ধরে চেষ্টা করলন,কিন্ত কোনও ফল পাওয়া গেল না।তখন ওই মেকানিক কাকু হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, দাঁড়ান আমি আমার মালিক কে ডাকছি,যদি পারেন তো উনিই পারবেন,তা না হলে আর কিছু করার নেই। উনি ওনার মালিক কে ফোন করার প্রায় ২৫মিনিট পর ওনার মালিক এলেন।উনিও প্রায় ৩০মিনিট ধরে চেষ্টা করলেন, বললেন- না,বাসে কোনও সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না।বাস স্টার্ট নিচ্ছে না কেন বুঝে উঠতে পারছি না।তারপর উনি হঠাৎই বললেন ড্রাইভার কাকুকে- যে আপনাদের কোনও ভুল ত্রুটি হয় নি তো?সবাই মায়ের পূজো দিয়েছিলেন?মা কিন্ত খুব জাগ্রত, রেগে গেলে কাউকে ছাড়েন না।আমি তো খুব অবাক হয়ে গেলাম ওনার কথা শুনে,ভাবলাম ড্রাইভার কাকু তো পুজো দেয়নি,তাই কি মা রেগে গেছেন?তখন দেখি হঠাৎ করে ড্রাইভার কাকুর চোখে জল,উনি বলেন আমি মুসলিম, তাই আমি ফুলের ডালা কিনে মায়ের পুজো দিতে চাইনি।তাই কি মা আমার ওপর রাগ করলেন?তখন মালিক মেকানিক কাকু বললেন- আমাদের তারিনী মা,সবার মা।উনি জাতপাত মানেন না,সবাই ওনার সন্তান। আপনি শিগগির যান,স্নান করে ফুলের ডালা নিয়ে মায়ের পুজো দিয়ে আসুন।দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।অগত্যা ড্রাইভার কাকু ছুটে গিয়ে পাশেই একটা নদীতে ডুব দিয়ে একটা ফুলের ডালা কিনে মন্দিরে ঢোকার ৫মিনিটের মধ্যেই মালিক মেকানিক কাকু গাড়ি স্টার্ট দিতেই, বাস সঙ্গে সঙ্গেই স্টার্ট নিল।তখন বাসের সবাই অবাক। আমার তো গায়ে প্রায় কাঁটা দিয়ে উঠল।তারপর যথারীতি আমরা তারিনী মা কে স্মরণ করে ৭'৩০মিনিটে বাসে রওনা দিলাম। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা আমি জীবনে ভুলতে পারবো না।আমরা অনেকে বিশ্বাস ই করি না ভগবান আছেন বলে।কিন্ত সেদিন বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম যে-না,ভগবান আছেন ই।আর যে জাতপাত নিয়ে সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদ, তারিনী মা আমাদের চোখের সামনে থেকে সেই ভেদাভেদ দূর করে দিলেন।তিনি জানালেন যে- "সবাই এক,সবার রক্ত এক,সবার একটাই পরিচয়-সবাই মানুষ। "

বিনির সৌর খোঁজ - মনোরঞ্জন ঘোষাল || Binir Soura kojh - Monoronjon Ghosal || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

 বিনির সৌর খোঁজ

      মনোরঞ্জন ঘোষাল



ডোমস শুধু আমাকে মেরে ফেলার প্লান করেছিল এমনটা নয়। সে আমার গবেষণাকে অসম্মান করেছে। তাই আমার গবেষণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন‍্য জেদ খানিকটা সে আমার বাড়িয়েই দিয়েছে। তার মত গবেষকদের মুখে ঝামা ঘসে দিতে আমি আবার আমার গবেষণা ভীত্তিক খোঁজ শুরু করলাম। আগে তো চাঁদের দিকে তাকিয়ে জীবের দর্শন পেয়ে ছিলাম। সেই কথা বিজ্ঞানী মহলে জানিয়ে দিয়েছি। এবারে সূর্যের দিকে একবার নজর দেব বলে মনে করছি। প্রখর আলোর জন‍্য তার দিকে তো তাকানো যায় না। তার জন‍্য এক বিশেষ ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


এদিকে মাইক্রোস্কোপিক দূরবিক্ষন যন্ত্রটি এখন আমার কাছে একটা মস্ত বড় হাতিয়ার। যেমনটি ছিল গ‍্যালিলিয়ের। তবে এটি গ‍্যালিলিওর টেলিস্কোপের থেকে অনেক উন্নত। আসলে আমি এটিতে অত‍্যাধুনিক প্রযুক্তি ব‍্যবহার করেছি। আমি এক বিশেষ প্রকার লেন্স ব‍্যবহার করেছি এই যন্ত্রে। যেটি সাধারণ লেন্সের কার্যকারিতা বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই পদ্ধতি টিও আমার নিজস্ব।


এক বিশেষ সংকর লেন্স। লেন্সের কাঁচের সঙ্গে বিশেষ ধাতুর একটা শতকরা ভাগ মিশ্রিত করলে তার স্বচ্ছতার কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানে কাঁচটি ঘোলাটে হয়ে যায় না। সেই কাঁচ দিয়ে লেন্স তৈরী করলে লেন্সের বিস্ফারিত করার ক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আসলে ঐ অপদ্রব‍্যটি অর্থাৎ যেটিকে এক সামান‍্য ভাগে গলিত কাঁচে লেন্স তৈরীর সময় মেশানো হল। সেটি স্বাভাবিক কাঁচের তুলনায় অনেকটা ক্ষমতা শালী হয়ে ওঠে। সেই অপদ্রব‍্য মিশ্রিত কাঁচ দ্বারা গঠিত লেন্সের মধ‍্যে আলোর প্রতিসরণ ঘটলে তার চ‍্যুতি কোনকে বাড়িয়ে দেয় বেশ অনেকটা পরিমানে। বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমি এই সত‍্যটি উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছি। সেই বিশেষ ভাবে তৈরী লেন্স আমি আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপে ব‍্যবহার করে অসাধারণ ফল পাচ্ছি। 


এতদিন ওই দিয়ে আমার সৌর গবেষণাকে যাচাই করার কথা মনে আসে নি। সেটিকে গাণিতিক ভাবে আমি তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠা করেছি। পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা হয় নি। আজ ডোমসের ওখান থেকে প্রত‍্যাবর্তন করার এক বৎসর কাল অতিবাহিত হল। সকালে আমার হাত ঘড়িটি আমাকে স্বরণ করিয়ে দিল। আমার এই ঘড়িটি এমন স্মরনীয় ঘটনা গুলিকে ওর স্মৃতিতে ধরে রাখে। আর সময় মত আমাকে মনে করিয়ে দেয়। মোবাইল ফোনেও ঐ কাজ করা যায় তবে মোবাইলের ক্ষতিকর বিকিরণের জন‍্য আমি ওটির ব‍্যবহার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি। বদলে একটি অন‍্য যন্ত্র তৈরী করায় মনযোগ দেবো বলে মনে করে আছি। 


ডোমসের ওখানে আমি ষোলোই আগস্ট গিয়ে ছিলাম। আর ফিরেছি তেইশে আগস্ট। আজও সেই তেইশে আগস্ট। 


আজ তেইশে আগস্ট ২০১৩ সকাল দশটা। আমার অদৃশ‍্য কাঁচ ঘরটায় সৌর খোঁজে মন নিবেশ করব বলে মন স্থির করে নিলাম। সকলের দৃষ্টিকে আড়াল করে আমি আমার সাধের ল‍্যাবে প্রবেশ করলাম। সেখানে এখন অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ক দিনের জন‍্য আমাকে টেবিলে সৌর দর্শনের যন্ত্রপাতি সব সাজিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতের কাছেই সাজিয়ে রাখতে হবে। নইলে সময় মত সব জিনিস পত্র দরকারে পাওয়া যাবে না। আমার স্টেচিং চেয়ারের পাশে যন্ত্রপাতি সজ্জিত করতে শুরু করলাম। মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রটিকে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করলাম। যাতে সেটি সূর্যের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান ভাবে একই কৌনিক মাণের হারে আপনা থেকেই সরতে থাকবে। আমি তো আর সারাটা রাত আর দিন ধরে সব সময় সেই অনুবিক্ষনিক দূরবিন যন্ত্রের কাছে বসে থাকব না। মাঝে মাঝে অন‍্য কাজে সেখান থেকে সরে যেতে হতে পারে। তাই তার পর্যবেক্ষণের ছবি সে আপনা থেকেই তুলে রাখবে। আমার খোঁজের যাতে কোন রকম আসুবিধা না হয় তার পাকা পোক্ত ব‍্যবস্থা বলতে পার। এই সব জিনিস পত্র যথাযথ ভাবে সাজাতে বিকেল হয়ে গেল। সূর্য তখন দিগন্ত রেখার কাছে পৌঁছায় নি। একটি বার যন্ত্রের নলে চোখ ঠেকিয়ে তাকালাম সেই হেলে পড়া সূর্যের দিকে। ভাল দেখতে পেলাম না। লাল রঙের বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ‍্যের আলোক রশ্মি গুলি আকাশে ছেয়ে দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করে তুলছে। বুঝলাম তার প্রতিরোধের ব‍্যবস্থা করতে হবে। এই নিয়ে এক সময় মনযোগ দিয়ে ছিলাম। তখন এর প্রতিকার করার জন‍্য এক বিশেষ কোটেড চশমা তৈরী করে ছিলাম। আজ তার কথা মনে পড়ে গেল। সেই তৈরী করা স্পেশাল কোটেড চশমার কথা। যেটি চোখে পরে থাকলে চোখে আছড়ে পড়া উজ্জ্বল বেগ বান আলোক রশ্মিকে বাধা দেয়। ফলে চোখকে অযথা আলোর ঝাপটা সহ‍্য করতে হয় না। ঐ নীতি প্রয়োগ করলাম আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রের উপরের লেন্সে। একটি লেয়ার সেই স্পেশাল কোট লাগিয়ে দিলাম তার ওপরে। ফলে অযথা অযাচিত আলোর ঝলকানি আর লেন্সের ভেতর দিয়ে যন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারল না। তাতে আমার দেখাতে কোন বাধা সৃষ্টি হল না। ফলে আমি আরামে বিনা বাধায় সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। সেই জন‍্য আমার আলোক বিশ্লেষণটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ল।  


আলোক বিশ্লেষণ হল এক বিশেষ কৌশল। যেখানে আলোক রশ্মি গুলিকে পছন্দ মত ভাবে আলাদা করে নেওয়া যায়। আলোক রশ্মি যে কণিকার প্রবাহ তা আমরা জানি। সেই কণিকার নাম নিউটন দিয়েছিলেন ফোটন। তিনিতো আলোর কণিকা তত্ত্বের উদ্ভাবক। প্রমাণ করেছিলেন আলোকের কণিকা ধর্ম। তিনি আলো যে কণিকা সেটি বললেও সে কণিকারা যে আকার ও ভরে ভিন্ন হতে পারে তা বলেন নি। তিনি বলেছিলেন আলোর কণিকা গুলি ধর্মে অভিন্ন। 


এই কথা সত‍্য নয়। আইন্সটাইন তার সমীকরণে সেই কথা স্পষ্ট দেখিয়েছেন। তা ছাড়া সনাতনী বলবিদ‍্যার ধারণাকে বিশ্লেষণ করলেই তা জানতে পারা যায়। সাধারণ আলো আর এক্স লশ্মির কথা ভেবে দেখ? সাধারণ আলোকের তুলনায় এক্স রশ্মির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তা হলেই বোঝ? হয় এক্স রশ্মির কণিকা গুলোর গতিবেগ সাধারণ আলোর কণার তুলনায় বেশি। নতুবা এক্স রশ্মির কণিকা গুলো সাধারণ আলোক কণিকার তুলনায় আকারে অনেকটা ছোট। তবে সম্প্রতি প‍্যারিস-জার্মানিরর এল এইচ সির গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে আলোর থেকে বেশি গতি সম্পন্ন কণিকা আছে। সত‍্যেন বসুর নামে সেই কণিকা কে বোসন বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেকে অবশ‍্য ঈশ্বর কণা বলে সেই ক্ষুদ্রতর কণাকে অভিহিত করছেন। ওই ক্ষুদ্রতর না ওর থেকেও ছোট ক্ষুদ্রতম কণিকার কথা আমি অনেক আগেই বলে ছিলাম। তার নাম দিয়েছিলাম একক কণিকা বা ইউনিট পার্টিকল। এটিও আমার এক অমোঘ ধারণা। আমার বস্তুবাদ তত্ত্বে এর উল্লেখ আছে। 


আসলে বস্তু ছাড়া যে বস্তুর সৃষ্টি হতে পারে না সেটাকেই বলা হয়েছে সেখানে। তার সঙ্গে ইউক্লিডের জ‍্যামিতির ধারণা কে জুড়ে দিয়েছি মাত্র। শক্তি আর বস্তু আদতে এক জিনিস। বস্তুর এক বিশেষ অবস্থা হল শক্তি। বস্তুকে যেমন শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। তেমন শক্তিকে বস্তুতে রূপান্তর করা যায়। আমার ল‍্যাবে আমি তা করে দেখেছি। একটা আলোক রশ্মি থেকে ভারি কণার বস্তু গঠন করেছি। আলোক রশ্মি তো একটি কণা না। অজস্র কণার একটা স্রোত। কোয়ান্টামের ধারণায় এক ঝাঁক কণিকার সমাবেশ বলতে পার। এখন থাক সে কথা।


নানা বর্ণের আলোক রশ্মি আসলে নানা প্রকারের কণিকার প্রবাহ। নিউটনই আলোক রশ্মিকে প্রীজমের মধ‍্যে দিয়ে পাঠিয়ে আলাদা করে দেখিয়ে ছিলেন। চুম্বক ঐ নানা বর্ণের আলোক রশ্মির ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই যেমন লাল বর্ণের আলোক রশ্মি চুম্বক দ্বারা বেশি আকর্ষিত হয়। কারণটা খুবই সাধারণ। এতে লোহার কণা থাকে তাই। এই ভাবে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে আলোর কণা গুলিকে আলাদা করে দিয়ে আমি আমার পছন্দ মত আলোক রশ্মি টিকে কাজের জন‍্য বেছে নেবার পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। একেই আলোক বিশ্লেষণ বলে থাকি। 


সন্ধ্যা হবার কিছুটা আগে যখন সূর্য অনেকটা দূরে সরে গেছে। তার থেকে নির্গত আলো বেঁকে তেরছা হয়ে ধেয়ে আসছে আমার কাছে। সে আলোর বেগ অনেক কমে গেছে। ঠিক তখনই কিছুটা আলো আমি ধরে নিলাম আমার আলোর ফাঁদ যন্ত্রে। এটি আমার তৈরী এক বিশেষ যন্ত্র। যেটিতে আলো ধরে রাখা যায়।


সকলেই জানে আলো প্রতিফলিত হয়। এবং দর্পণে তা অনেকটাই বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। কতগুলো দর্পণকে বিশেষ কোনে স্থাপন করে তাতে আলো ফেললে। সেই আলো যদি সর্বদা এই সকল দর্পণের মধ‍্যে প্রতিফলিত হতে থাকে। তো সে আর কখনো প্রকৃতিতে মুক্ত হতে পারে না। তৈরী ঐ যন্ত্রে আটকা পড়ে থাকবে অনন্ত কাল। প্রয়োজন মত তুমি কোন একটি দর্পণকে সরিয়ে আলোকে ফাঁদ মুক্ত করে ব‍্যবহার করতে পারবে। আমি তাই করি। প্রয়োজন হলে আলো ধরে রাখি আর প্রয়োজনে সেই আলোকে কাজে ব‍্যবহার করে থাকি। আজ


দিন শেষ হবার আগে আমি কিছুটা আলো তাই ধরে নিলাম আমার আলোক ফাঁদ যন্ত্রে। এবার রাত ঘনিয়ে এল। আমি আমার অদৃশ্য কাঁচ ঘরেই সময় কাটিয়ে চলেছি। যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্র সাজিয়ে নজর দিয়ে বসে আছি। অদৃশ‍্য কাঁচ ঘর এমন কিছুই না। আলোর প্রতিফলন ধর্মকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা। 


বস্তু থেকে আলো বেরিয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে আমরা সেই বস্ত টিকে দেখতে পাই। সেই আলো বস্তুর নিজের দহনের আলো হতে পারে আর হতে পারে অন‍্য কোন উৎসের আলো। যা তার গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ছোটে চলেছে । যখন বস্তু আলো প্রতিফলন করে এবং সেই আলো কারো চোখে ফিরে না আসে। তবে সেই বস্ত টিকে আর দেখা যাবে না। আমার কাঁচ ঘরের সূক্ষ্ম কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে আলো আনায়াসে ভেতরে চলে আসতে পারে প্রতিসৃত হয়ে। যৎ সামান‍্য যা কাঁচের দেয়ালে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয় তা চোখে মালুম হয় না। আর ঐ প্রতিসৃত আলোক রশ্মি গুলিকে দর্পন দ্বারা বিশেষ কোনে প্রতি ফলিত করে একত্রিত করে এক বিশেষ কোনে মহাকাশে মুক্ত করে দিয়ে থাকি। ফলে আসে পাশের কেউ আমার ল‍্যাব দেখতে পায় না। উপর থেকে দেখলে আগুনের গোলা বলে মনে হয় । তাই ভয় পেয়ে উড়ন্ত কোন কিছুই এখানে উপর দিয়ে যায় না। সন্দেহের বসে অনেকে সে দৃশ‍্য দেখার পর খোঁজ করতে এসেছিল কিন্তু নীচে এসে দেখলে তারা কিছুই খুঁজে পায় নি। তবে আমার যন্ত্রটি পেলে তারা খুঁজে পাবে। আমি বাহিরে কোথাও গেলে এটিকে সঙ্গে নিয়ে যাই। নইলে আমি নেজেই আর ল‍্যাব খুঁজে পাব না। এটি এক প্রকার ডিটেক্টর। ল‍্যাবের মধ‍্যে থাকা এক বিশেষ যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাইরে থেকে এর অবস্থান জানতে সাহায‍্য করে। অবস্থান সূচিত হবার পর আমি কম্পাসে দিক নির্ণয় করে ল‍্যাবের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে ঢোকার পর সব কিছু দৃশ‍্যমান হয়ে পড়ে। এটি তৈরীর মেকানিজম আমি লিখছি না। তাহলে সকলে বানিয়ে আমার ল‍্যাব খুঁজে বের করবে। আমি বড় বিরক্ত বোধ করব। 


যদিও রাতে সূর্য আলো দেওয়া বন্ধ করে দেয় না। মনে করলে আমি স‍্যাটেলাইটের দ্বারা প্রতিফলিত আলোকে গ্রহণ করে কাজে লাগাতে পারি। অনেকে একটা কথা ঠিক বুঝতে পারে না। যে আকাশে সূর্যের আলো ছড়িয়ে থাকলেও আকাশ রাতে কালো থাকে কেন? আসলে আলো প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে না আসলে আমরা উৎস বা প্রতিফলককে দেখতে পাবো না। কারণ আলোক রশ্মিকে চোখে দেখা যায় না। তাই আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলোক রশ্মিগুলো কোথাও প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে আসে না। তাই কিছুই দেখা যায় না। সে যাক।


রাতে আলোর ফাঁদে থেকে আলো নিয়ে একটা আলাদা যন্ত্রে একটু নাড়াচাড়া করলাম। কোন লাভ হল না। কারণ তার সূর্যের সঙ্গে সংযোগ সূর্য থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই তার চলার পথ আর সূর্য পর্যন্ত বিস্তৃত নেই। সেই আলো সূর্যকে প্রত‍্যক্ষ করাতে পারছে না। এবার আর প্রতিফলিত আলোকে উৎস খোঁজায় ব্রতি হলাম না। জানি সে কাজ ভষ্মে ঘি ঢালার মত হবে। আগুনও জ্বলবে না আর ঘি টুকুও নষ্ট হবে।


পরের দিন সকাল হলেই আবার বসে পড়লাম টেবিলে সৌর খোঁজের কাজে। একেবারে সকাল এখনো সৌর কিরণ এখানে এসে পড়ে নি। দেখি বড় একটি মেচলার মত সূর্য সবে উঠে আসছে উপরের দিকে। যেন মনে হয় জ্বলন্ত কয়লা। একেবারে টক টকে লাল হয়ে জ্বলছে। দেখে মনে হয় না সেটি পৃথিবীর থেকে বড়। ধীরে ধীরে তাকে কাছে টেনে এনে বড় করতে থাকলাম। ক্রমে বড় হচ্ছে একটা ঘরের মত বড় হয়ে গেল। আরো বড় করতে লাগলাম। এবার একটা গোটা গ্রামের মত হয়ে পড়ল। তখন তাতে সৌর কলঙ্ক খুঁজতে শুরু করলাম। কিচ্ছু পাওয়া গেল না। তাকে আরো বড় করতে করতে একেবারে হাতের কাছে ছুঁয়ে ফেলার মত কাছে নিয়ে চলে এলাম। এবার তার দেহে আমাদের ঘরের মত এতটুকু জায়গা দেখতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতটাই বড় করা হয়ে গেছে তার দেহটি। ভেবে দেখলাম তাহলে তো গোটা গ্রামের মত একটা অংশ স্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বহু সময় লেগে যাবে! সম্পূর্ণ তার দেহের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ করতে সারাটা জীবন লেগে যাবে! তাই তার আকার কিছুটা ছোট করে নিলাম। ছোট করতেই এক অদ্ভূত দৃশ‍্য নজরে পড়ল! 


দেখলাম একটা আগ্নেয়গিরি! তার জ্বলা মুখ দিয়ে অগ্নুৎপাৎ হচ্ছে। কোন লাভার নির্গমন হচ্ছে না। বড় বড় জালার মত আগুনের গোলা নির্গত হয়ে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। কয়েকটা তো আমাকে লক্ষ‍্যঃ করে ছুটে এল! আমি ভয় পেয়ে গেলাম! দেখলাম সেগুলি ঠিক যেন আমার মাথার উপর এসে আছড়ে পড়ছে। আমি জানি ওতে আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আমার ল‍্যাবের চারিদিকে অদৃশ‍্য লেজার শিল্ড প্রোটেকশন চালু করে রেখেছি। বড় ধুমকেতু এসে আছড়ে পড়লেও কিছু হবে না। তবে সূর্য এসে আছড়ে পড়লে কী হবে বলতে পারবো না। হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে সেটি যে হবার না তা আমি ভাল মত জানি। আর আমি তো কেবল আমার কথা ভাবি না। পার্থিব সকল জীব জগতের কথা আমাকে ভাবতে হয়। ঐ আগুনের ছুটে আসা গোলা আমার কোন ক্ষতি না করলেও পার্থিব বাকি সব কিছুর ক্ষতি করছে। মনে মনে তাই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ল‍্যব থেকে বাহিরে বেরিয়ে এলাম দেখার জন‍্য। এই কথা ভেবে যে ঐ ধেয়ে আসা আগুনের গোলা গুলো আসে পাশের পরিবেশের কতটা ক্ষতি করছে। বাহিরে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে গেলাম! কোথায় সেই ছুটে আসা আগুনের গোলা? কোথাও কিচ্ছু তো নেই! পরিবেশের এতটুকু ক্ষতি তো কোথাও হয় নি! চারি পাশে গাছ পালা জীব জন্তু সব কিছুই বহাল তবিয়তে রয়েছে। 


বরং রৌদ্রে ঝলমল করে গাছেরা যেন খিল খিলিয়ে হাসছে। দিঘির জল হালকা সেই রোদে তাথৈ তাথৈ নৃত‍্য করছে। পানকৌড়ী মনের আনন্দে টুপ টুপ করে জলে ডুব দিচ্ছে। প্রকৃতিতে মহা সমারোহ। এতটুকু বিমুর্ষতার চিহ্ন কোথাও চোখে পড়ল না।


মনে সনন্দেহ হল! তবে কী আমি যন্ত্রে ভুল দেখলাম! আমার যন্ত্র কী সঠিক দিশা দেখাতে পারছে না?মনটা ভাবনায় ভরে গেল। সমস‍্যাটি কী খুঁজে নেবার চেষ্টা করলাম। অনেকক্ষণ ভেবে একটা আন্দাজ করলাম তবে একবার পরখ না করে একেবারে নিশ্চিত হলাম না। 


আবার গিয়ে বসলাম ল‍্যাবের ভেতরে আমার চেয়ারে। এবারে মন টাকে শান্ত করে চেয়ে দেখলাম সূর্যের দিকে তাক করে থাকা টেলিস্কোপের মুখে লাগানো স্ক্রীন টার উপর। প্রত‍্যক্ষ করলাম আবার সেই দৃশ‍্য। ঝাঁকে ঝাঁকে সেই ভাবেই আগুনের গোলাগুলো সূর্যের দেহের আগ্নের গিরির জ্বালা মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে আমার দিকে। যেন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র! তখনও ঠিক ভাবে আমার মাথায় আসছিল না কেন এমন দেখতে পাচ্ছি? অনেক ভাবনা চিন্তার পর বুঝতে পারলাম আসল সত‍্য টিকে! প্রত‍্যক্ষ করলাম কোয়ান্টাম তত্ত্ব! শক্তির কণা গুলো দল বেঁধে নির্গত হয় উৎস থেকে। আর এ তো সেই ঘটনা। এগুলো আলোর কণা ফোটন। আমার ম‍্যাগনিফাইং গ্লাসে সেই অতিব সূক্ষ্ম ফোটন কণা গুলিকে এত বিশাল আকারে দেখাচ্ছে। তাই আলোর কণার নিক্ষেপকে গোলা বর্ষণ বলে মনে হচ্ছে। আমার যন্ত্রে এতটাই বর্ধিত করা সম্ভব হয়েছে যে আলোর ঐ তীব্র গতিও ক‍্যামেরায় ধীর গতি সম্পন্ন মনে হচ্ছে। সিনেমার পর্দায় যেমন স্লো মোশনে ছবি দেখা যায়। এখানে তেমন সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলা আলোক কণাদের একটি সিধারণ কণার মত গতি শীল দেখাচ্ছে। কী আশ্চর্য! এমনটাও হতে পারে? তাহলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে যে ইলেকট্রন গুলো প্রচণ্ড গতিতে ঘুরে বেড়ায় তাকেও তো একটি স্বাভাবিক গতিতে কেন্দ্রকের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকা কণার মত দেখাবে? পরমাণু পর্যবেক্ষণের একটা খুব ভাল দিক উন্মোচন হল আমার কাছে এই গবেষণা করতে গিয়ে। সেই নিয়ে আর এক সময় কাজে বসা যাবে। এই অভাবনীয় দৃশ‍্য সচক্ষে দেখে


একবার মনে হয়েছিল এই দৃশ‍্য আমি বৈজ্ঞানিক সমাজকে প্রত‍্যক্ষ দর্শন করাব। কিন্তু সেটি যে সম্ভব না। আমার এই ল‍্যাবরেটরী আর যন্ত্রের সেটাপ ছাড়া এই দুর্লভ দৃশ‍্য দেখা অসম্ভব। সেটি যে দ্বিতীয় কোথাও সেট করা যাবে না। আর আমার ল‍্যাবের সন্ধানও কাউকে দেওয়া যাবে না। একটা প্রমাণ স্বরূপ এই লেখাটি রাখলাম। তাতে যে যা বোঝে বুঝুক। অসত‍্য বলে মনে করে করুক। তবে কেউ কেউ সত‍্য বলে মনেও তো করতে পারে? তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি আমার এই উক্তি যথার্থ সত‍্য এবং সচক্ষে দেখা বর্ণনা। এটিকে বিশ্বাস করে গবেষণায় লেগে থাকলে সাফল‍্য আসবেই।


এবার মনে এল আলোর কণা গুলো অগ্নুৎপাতের মত নির্গত হচ্ছে ঠিকই। তাবে তা সূর্যের দেহের সমগ্র তল থেকে নির্গত হচ্ছে না। তার দেহের কোথাও কোথাও টর্চ জ্বেলে রাখার মত এমন আগুনের গোলা বের করার আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আর বাকি বেশির ভাগ অংশটাই ফাঁকা। আমাদের পৃথিবীর মাটির মত। সমগ্র পৃথিবীর বুকে কয়েকটা মাত্র আগ্নেয় গিরি আছে তাও আবার সব গুলি জ্বলন্ত নয়। বেশির ভাগ দেহ তলই ফাঁকা। তবে আমাদে দেহ তলের মত এতটা ফাঁকা নয় সূর্যের দেহ তল। তবে সমগ্র তল যেমন আগুনের গোলা বলে মনে হয়। সূর্যের সেই দেহ তল তেমনটি না। সেখানে পাহাড় পর্বত ঘর বাড়ি সব রয়েছে। বড় বড় গর্তও রয়েছে চাঁদের মত। যেখানে কোন আগ্নেয় গিরি নেই তাই আলো জ্বলে না। বাহিরে কোথাও থেকে আলো পৌঁছে গেলেও সে আলো আর ফিরে আসে না কোথাও। তাই কালো হয়েই থাকে সব সময়। এই কালো অংশ গুলো হল সৌর কলঙ্ক।আমরা এগুলো খুব একটা দেখতে পাই না। কারণ সৌর ঝড় আর সূর্যের আবর্তণ গতির জন‍্য। 


সূর্যের দেহে ঝড় বয়ে চলেছে প্রবল বেগে সর্বক্ষণ। সে ঝড় আলোর কণা গুলিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তার দেহে সর্বত্র। তাই সে দিকে তাকালে ও সব আর দেখা যায় না। শুধু জ্বলছে সারা দেহ বলে মনে হয়। যদিও এর জন‍্য বহুলাংশে দায়ী তার আবর্তণ গতি। পৃথিবীর মত সূর্যও তার নিজের অক্ষের চারিদিকে পোঁ পোঁ করে ঘুরছে। এতটাই তার বেগ যে মুহুর্তের মধ‍্যে আগ্নেয় গিরির জ্বলা মুখ আবার ঘুরে আসছে চোখের সামনে এক পাক ঘুরে। তাই সব সময় ঐ জ্বলা মুখই আমাদের চোখে ধরা দেয়। অনেকটা চরকা বাজি মত ঘটনা বলে মনে করতে পার। চরকার মুখে আগুন জ্বেলে দিলে সে বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে। দেখে মনে হয় তার দেহের সর্বত্র দিয়েই আগুন জ্বলছে যেন। আদৌ তাই কি জ্বলে? এমন ঘোরার গতি আমাদের মনে করতে বাধ‍্য করায় তার এমন সর্ব দেহ জ্বলমান অবস্থার কথা। 


তাই সূর্যের সারা গায়ে আগুন জ্বলছে বলে দেখালেও আদৌ তার সারা গায়ে আগুন জ্বলছে না। তার দেহের বিস্তৃত জায়গা রয়েছে ফাঁকা পড়ে। সেখানে বাস করে সৌর মানব। আমাদের থেকে দীর্ঘাকায় ও সোনার মত তাদের গায়ের রং। সোনা রদ্দুরের দেশে বাস করে বলে হয়তো এমনটা হয়েছে। পরিবেশের প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে একটা ব‍্যাপার আছে। আমরা অনেকেই জানি। যেখানে এক এক ইন্ডাস্ট্রি অঞ্চলে ঐ ইন্ডাস্ট্রির জন‍্য বিশেষ পরিবেশ গড়ে ওঠে। সেই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবার জন‍্য জীব দেহে নানা রকম পরিবর্তন ঘটে থাকে। একেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে। সূর্যের বাসিন্দাদের ঐ রকম সোনালী গড়ন হয়েছে সোনালী রদ্দুরের জন‍্য। আর দেহের আকার বড় হবার কারণ ওদের আবর্তন গতি। যেমন আমাদের বিষুব রেখার বা তার আসে পাশের অঞ্চলে থাকা লোক গুলোর আকার বেশ বড়। ততার পর অক্ষাংশ কমার কারণে আকার কমতে থাকে। অক্ষাংশ কমতে থাকলে তার আবর্তন গতিবেগ ও কম হয়। তাই বাহিরের দিকে ছিটকে যাবার বেগও কম হয়। অর্থাৎ কেন্দ্রাতিগ বল মানুষের লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠার পক্ষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বল যত বেশি হবে তত তাকে খাঁটো করে দেবে। এটিকে অভিকর্ষ বলা হয়। অভিকর্ষের টান কাটিয়ে মানুষ কে বড় হতে হয়। মেরু দেশে মানুষের ওপর অভিকর্ষ টান বেশি তাই তারা লম্বা বেশি হতে পারে না। তাই বলে ঐ একটি কারণ শুধু লম্বা হবার জন‍্য দায়ী তা বলা যাবে না। অনেক কারণের মধ‍্যে এটিও একটি কারণ। না হলে গোর্খা জাতিদের বেঁটে হবার কারণ আর গাণিতিক হিসাব নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। কারণ ঐ একই অক্ষাংশে পাহাড়ের মাথায় আর ঠিক সেই পাহাড়ের নীচের মানুষদের আকারের উল্টো পরিণতি ঘটবে কেন? সেখানে তো পাহাড়ের ওপরে বসবাসকারী গোর্খাদের লম্বা আর নীচে বসবাসকারী দের বেঁটে হবার কথা। এখানে আর একটা যে সত‍্য লুকিয়ে আছে তা বলে রাখি। তাহল অস্বাভাবিকতা। মানুষের ভর অনুযায়ী পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল তার জন‍্য বরাদ্দ আছে। সেই অঞ্চলের নীচের দিকে বা ওপরের দিকে বাস করলে তার শরীর একটা অস্বভাবিকতা অনুভব করে। ফলে সে স্বাভাবিক ছন্দে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। তখন তার সমস্ত চরিত্রে বৈশিষ্ট্যগত নানা পার্থক‍্য গড়ে ওঠে যেটি তাকে ঐ পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায‍্য করে। এখন থাক ও কথা। কী আশ্চর্য! সূর্যের দেশে মানুষ!


সেখানে মানুষ দেখে উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। আরো ভাল করে খোঁজ করতে থাকলাম সেখানের মাটি। কী আশ্চর্য! তাল তাল সোনায় পাহাড় তৈরী করে রেখেছে সেখানে! আমরা একটু সোনার টুকরোর জন‍্য হাপিত্তেষ করে মরছি।আর সেখানের লোকে সোনা পা দিয়ে মাড়াচ্ছে। সোনার ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সোনার বাড়ি তৈরী করে তাতে বাস করছে। আরো একটু লেন্সটি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দেখলাম সাদা কিসের যেন পাহাড় রয়েছে মনে হল। প্রথমে মনে হয়ে ছিল অভ্র। তার পরক্ষণেই বুঝলাম সেটি অভ্র না। সে তো হালকা ধাতু। তার তো ওখানে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর কথা। তবে এটি কী? প্লাটিনাম নয় তো?



আলোর দ‍্যুতি পরীক্ষা করে দেখলাম যে ঠিক তাই। যা মনে ভেবেছিলাম!সেটি প্লাটিনামের পাহাড়। ওরে বাবা! এত বড় প্লাটিনামের পাহাড়! এ মুলুকে থাকলে না হয় এক ধামা নিয়ে ঘরে রেখে দিতাম। এখানে তো ওটি সহজে পাওয়া যায় না তাই বেশ দামি ধাতু। তার পর নজর পড়ল এক ঝকঝকে গাছের ওপর। ঠিক যেমন বড় দিনে আমাদের এখানে গাছকে সাজিয়ে বানানো হয় তেমন ঝকছে কিন্তু কোথায় বাতি লাগানো তা দেখতে পাচ্ছি না। বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তবে বুঝলাম যে সেটি কোন সাজানো গাছ নয়। ওটি ওখানের স্বাভাবিক গাছ। আমাদের যেমন সবুজ পাতার গাছ হয় ওখানে তেমনই গাছ তবে তার পাতা সবুজ না। রোদের মত সোনালী। 


সাধারণ টেলিস্কোপে এ সব কিছুই দেখা যায় না। ওরা তো দৃষ্টিকে আলোক বলয় ছাড়িয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে পারে না। তাই ও সব টেলিস্কোপে সূর্যকে জ্বলন্ত আগুনের গোলা বলে মনে হয়। আলোক বলয় তেমন বিশেষ কিছু নয়। অপেক্ষা কৃত ভারি আলোর কণা গুলো দেহ থেকে নির্গত হয়ে বেশি দূর পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে না। কিছুটা দূরে গিয়ে তারা একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থান করে সূর্যের মূল দেহকে বেষ্টন করে আবর্তন করতে থাকে। ঠিক যেমন শনির বলয়। শনির বলয় তো ঘন ধুলি কণার স্তর। যেটি তার দেহের চারি পাশে বলয়ের মত ঘুরতে থাকে। নানা ভরের ছোট ছোট কণা সেখানে ভীড় করে এমন বলয় গঠন করেছে। সূর্যের দেহের চারি পাশেও তেমন ভারি আলোর কণার স্তর ঘুরে বেড়িয়ে আলোক বলয় গঠন করে। সূর্যের দেহ থেকে নির্গত সূক্ষ্ম আলোর কণা গুলোই প্রচন্ড গতিতে ঐ আলোক বলয় ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসে। সেই সূক্ষ্ম রশ্মিকে অনুসরণ করা সাধারণ টেলিস্কোপের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এমন কি হাবল টেলিস্কোপেও তাকে ধরতে পারবে না। যদি পারতো তো ওদেরকে পদ্ধতি বলে দিয়ে তা প্রত‍্যক্ষ দর্শন করাতাম। 


অনেকে বলে থাকেন সূর্যের দেহে এত উত্তাপ ওখানে জীবন থাকা সম্ভব না। তাই গাছ পালা মানুষ এ সব কিচ্ছু নেই। তারা যে এত বোকার মত কথা বলে তা বলে বোঝাতে পারবো না। আগেই তো বললাম যে সূর্যের দেহে সর্বত্র আগুন জ্বলছে না। তাই যেখানে আগুন জ্বলছে না সেখানে জীব থাকতে পারে এবং আছে তা আমি প্রত‍্যক্ষ করলাম। আগুন তো অল্প কিছু জায়গাতে জ্বলছে। সেই আগুন ঝড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেহের অন‍্যত্র। তাই সূর্যের সমগ্র দেহ জুড়ে আগুন জ্বলছে বলে মনে হয়। সেখানের উত্তাপ যতটা মনে করা হয় ঠিক ততটা নয়। তবে আমাদের এখানের থেকে সেখানের উত্তাপ অনেক বেশি। তাই বলে ঠিক ততটাও না যতটা আমরা অনুমান করি অসহ‍্য বলে। আমরা তো জানি আগুনের কাছে পাশাপাশি যতটা হাত নিয়ে যাওয়া যায় উপর থেকে ততটা কাছে হাত নিয়ে যাওয়া যায় না। ঘূর্ণনে অপ কেন্দ্রিক বলের কারণে ঐ ফোটন কণা গুলি ঘূর্ণন কেন্দ্রের বিপরীতে ছুটে চলে যায়। তাই উপরের দিকে হাত বেশি কাছে আনা যায় না। ঐ কণারা তাদের চলার পথে বাধা পছন্দ করে না। যদি কোন বাধা চলার পথে পড়ে তবে তাকে হয় বিদ্ধ করে ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। নতুবা সে নিজে তার গায়ে ধাক্কা মেরে প্রতিফলিত হয়ে অন‍্য দিকে চলে যায়। আরো একটা কথা বলতেই হয়। যে মরুতে বা মেরুতে জীবেরা বসবাস করতে পারবে বলে আমরা কখনো ভেবেছিলাম! না তো? অথচ সেখানে জীব রয়েছে। মরুতে বিষাক্ত বালি বোড়া সাপ। কাঁকড়া বিছে ইত‍্যাদিরা উষ্ণ বালির ভেতরে বেশ আরামেই থেকে যাচ্ছে। আর মেরুর প্রচন্ড ঠান্ডায় ক্রায়োজেনিক্স ছত্রাক আর শৈবাল তো রয়েইছে। সঙ্গে মানুষও রয়েছে। এস্কিমো। কেউ ভেবেছিল এ সব কথা! তবে এরা সকলে ঠিক আমাদের মত না। শিতের দেশের পাখি পেঙ্গুইন কে যেমন গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে তার মত ব‍্যবস্থা নিয়েই নিয়ে যেতে হবে। তেমনই অস্ট্রিচ এমু এদেরকে বরফের দেশে নিয়ে যেতে গেলে তাদের তার মত পরিবেশ গড়ে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ শিতের পাখিকে গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে শিতের পরিবেশ তৈরী করে সেখানে রাখতে হবে। আর গরমের পাখিকে শিতের দেশে নিয়ে গেলে তাকে গরমের বাঁসা বানিয়ে সেখানে রাখতে হবে। ঐ দুই পরিবেশের পাখি দুটি তাদের পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারলেও বিপরীত পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বলে গরমের পাখি কী মনে করতে পারে যে শীতের দেশে কোন পাখি বাস করতে পারে না? ওদের ক্ষেত্রেও তাই। সূর্যের দেশের জীবেরা তারা তাদের পরিবেশে বসবাস করায় অভ‍্যস্থ জীব থাকে। তারা গরম সহ‍্য করতে পারে। আবার আমরা অপেক্ষা কৃত ঠান্ডার ভূখণ্ডে বাস করি ওদের মত গরমে থাকতে পারবো না। তাই বলে ওখানে জীব থাকতে পারে না বলে আমাদের মনে করাটা কল্পনা। এটিকে বৈজ্ঞানিক সত‍্য বলে মেনে নেওয়া যাবে না। তবে বিজ্ঞান তো না দেখে সহজে বিশ্বাস করবে না। আমি দেখেছি ফলে সেটিই প্রমাণ এই কথা কেউ মেনে নেবে না। তাদেরকে হাতে নাতে দেখিয়ে দিয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে আমার কথা সত‍্য। সেটি যে করা সম্ভব না তা আমি আগেই স্বীকার করেছি। তাই আমার এই নিজের সচক্ষে দেখা ও তার সম্পর্কে লেখা বিবরণ সকলে বিশ্বাস করতে চাইবে না। সে যাই হোক ওরা বিশ্বাস না করে করুক তাই বলে আমার চোখের দেখা সত‍্য তো আর মিথ‍্যা হয়ে যাবে না। আরো একটু মনযোগ দিয়ে সূর্যের দেহ তল পর্যবেক্ষণ করছি। নানান দৃশ‍্যের মাঝে


এ বার আরো একটা অদ্ভূত দৃশ‍্য দেখতে পেলাম। সেই দৃশ‍্য আমাকে কেবল অবাক করে দিল না বরং এক বিশেষ ভাবনার মধ‍্যে ঠেলে দিল। আমি ঠিক নাস্তিক না হলেও আস্তিক বলতে পারবো না। অর্থাৎ আমি ধর্মকে তেমন অবিশ্বাস না করলেও তেমন বিশ্বাস করি তা বলা যায় না। তাই এই দৃশ‍্য দেখে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম! তবে কী পুরাণ কাহিনী সব সত‍্য! তবে কী দেবতা আর অসুরেরা এখনো জীবিত? এখনো কী তাদের মধ‍্যে ঘটে চলেছে মহা সগ্রাম! এমন কথা মাথার মধ‍্যে ভীড় জমাতে থাকছে। যখন দেখলাম সেখানে রয়েছে দু প্রকার মানুষ! কাল আর সাদা যেটি সোনালী দেখায়।


এক দল কালো যারা দল বেঁধে থাকে ঐ অন্ধকার ময় কালো গহ্বরে। আর এক দল সোনালী মানুষ যারা থাকে আলোর দিকে জড়ো হয়ে। এখন বুঝতে পারলাম তাই আলো এত উজ্বল আর অন্ধকার এতটা কালো।


তাকিয়ে আছি ঐ দিকে। দেখি ঘন কালো অন্ধকারে ভিতর থেকে বিশাল দৈত্যাকার কিম্ভূত কিমাকার সব মানুষ বেরিয়ে আসছে। হাতে তাদের অস্ত্র। তারা এগিয়ে চলেছে আলোর দিকে। সেই আলোর দিকেও চলছে তোড়জোড়। আলো আর আঁধারের দুটি দল। তারা পরস্পরের শত্রু। দিন আর রাতের মত। অসুর আর দেবতাদের মত। এখনি বোধহয় বেধে যাবে যুদ্ধ যা অনন্ত কালের আলো আঁধারের বিরোধ। কেন? কিসের জন‍্য যুদ্ধ তা জানি না। বোধহয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। একে অপরকে পরাস্ত্র করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সে জগতে। তাই আঁধার আলোকে গ্রাস করতে চায় সর্বদা। আর আলো অন্ধকারকে প্রতি হত করে চলেছে সর্বদা। একজন হল ধ্বংসের প্রতীক। আর অন‍্য জন সৃষ্টির। আমি অহিংস। হিংসাকে পছন্দ করি না আর প্রশ্রয় দিই না। তাই আমার ওই যুদ্ধ দেখার আর আগ্রহ থাকলো না। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম টেলিস্কোপ থেকে।