Tuesday, March 19, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৪|| part - 4 || Era Kara part 4 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা


 


মিনিট কয়েকের মধ্যে ওঁরা সকলে অভিরামের আঙিনায় গিয়ে হাজির হলেন। মোদিনী বাবু সাঁড়া হাঁসের গলায় চিৎকার করে ডাকলেন- অভিরাম বাড়ীতে আছিস? অভিরাম বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে হুংকার দিয়ে বললে- এতো চিৎকার করার কি প্রয়োজন, বলুন কি চাইছেন? তিনি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ হয়ে বললেন, তোর মতো প্যাঁটার কাছে কি চাইতে আসবো রে বদমায়েসটা, তোর গালে এমন একটি চড় মারবো প্যান্টে পাঁচ বার পেচ্ছাপ করতে বাধ্য হবি। বিধবা ভাতা কি তোর পয়সা? কমলাদেবীর বিধবা ভাতা পাবার হান্ড্রেন পারসেন্ট হক আছে। চোখের সামনে দেখছিস, পাশে দাঁড়াতে শিখেছিস? যে মহানুভব ব্যাক্তিটি কমলাদেবীর বিধবাভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তাকে কলঙ্কিত করে কুকুর তাড়া করলি। শোন আমার কথা, যদি ষড়যন্ত্র করে কমলাদেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করার চেষ্টা করিস্ তাহলে মনে রাখবি সব কটা শুয়োরকে প্রকাশ্যে কুকুরের মতো গুলি করে মারবো। আমি ভারত মাতার সন্তান বহু কস্টে ভারতকে স্বাধীন করেছি। তোদের মত জানোয়ার নই আমাকে ভারত সরকার পিস্তল দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তোদের পার্টির আদর্শবান নেতা হিড়িম্ব অর্থাৎ হাড় হাঞ্জাকেবলবি এই মেদেনী সরকার

প্রকাশ্যে বলেছেন এই এলাকায় কোন মানুষের যে কেউ পার্টির লোক যদি ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে এই মেদিনী সরকার তাদের সব কটাকে মায়ের ভোগে পাঠিয়েদেবে। কথাটা মনে থাকে যেন। মেদিনী বাবু নিভারানীকে বললেন- তোমার কোন ভয়নেই মা। আমাদের দল সর্বদাই তোমার বা তোমার পরিবারের পাশে থাকবে।


এরপর হতে কোন রূপ ঝঞ্ঝা বিদ্ধস্ত এর মুখে পড়তে হয়নি। তবে যাই বলুন না, এরা লিপিতে বেহায়া শত অপমানে জর্জরিত হলেও নোংরামী করতে ছাড়ে না। হয়তো মেদিনী বাবুর এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে। অবশ্য প্রশাসন এদের ধারে পাশেই থাকে। তাই এরা ভাবে এদের বিশাল ক্ষমতা। এদের মলাটের নীচে প্রচুর নোংরা জমে আছে। ধীরে ধীরে পড়তে থাকুন আর মানবিকতার দিক দিয়ে কি করা


কর্তব্য মনকে জিজ্ঞেস করুন। শুধু হাড়হাঞ্জা নয়, বহু ব্যাক্তি দাদাগিরি করে, বেইমানী করে সমাজে কেউটে হয়ে বসে আছে।


অবশ্য হিড়িম্ব হাজরার গপ্পো শুরু করছি। ওকে সহজে ছাড়া যাবে না; ঐ সব অমানুষদের কত কাহিনী যে জমে আছে, একটু ধৈর্য্য ধরুন জানতে পারবেন। হাজরা বাবুর গপ্পো আরেক টা শুরু করা যাক।


বৈশাখ মাস্ প্রখর রোদের তাপে মানুষের জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠেছে। মাসের শেষ হতে চললো, না হোল কালবৈশাখী ঝড় ও কয়েক পশলা বৃষ্টি। বেলা সাড়ে তিনটা হবে হাজরা মশায় অটোতে বসে বারংবার তাগাদা করতে শুরু করলো- আরে ভাই একটু জোরে চালাও, নইলে গরমে শরীর ঝলসে যাচ্ছে। আসলে শরীর ওর ঝলসে যাচ্ছে না, মহুয়ার আকর্ষনে সে অতীষ্ট হয়েছে, ভেতরটা ওর টবগ টগ্‌ করছে কখন মহুয়ার কাছে পৌঁছুতে পারে এবং মহুয়ার মধুখাবার জন্য ভ্রমর হয়ে চিটিয়ে থাকতে পারে। মহুয়ার কাছে গেলে মহুয়া থর থর করে কাঁপতে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা ওকে অতীষ্ট করে তুলে। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়েই এই নরপশুটার কাছে আত্ম সমর্পণ করতে হয়েছে।


যথা সময়ে হাজির হলো ১০ নং অফিস কোয়াটারে, কলিং বেলটা বেজে উঠতেই মহুয়া চমকে উঠলেন। সে জানতে পেরেছে ঐ পশুটাই এসেছে। কপাট খোলতেই শোবার পালঙ্কে টান হয়ে শুয়ে পড়লো। একটু পর পাশ ফিরে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো- জানো মহুয়া তোমাকে কাছে পেয়ে আমার প্রানের উচ্ছ্বাস, প্রানের উদ্মাদনা কত গভীরে চলে গেছে আমি একজন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসারের বৌ এর পাশে শুয়ে প্রতিদিন কামনা চরিতার্থ করছি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো কবে তোমার পাশে শোব। সেইদিন আমার এসে গেছে। জানো মহুয়া, পিয়াসা আমাকে তৃপ্তি দিতে পারে

না। মহুয়া খুবই ভদ্র, এবং বনেদী বাড়ীর মেয়ে। কোন দিন অন্যায়কে প্রশয় দেয় নি। সর্বদাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছে। কিন্তু (একমাত্র) স্বামীর জন্য হিড়িম্ব হাজরার পাশে শুতে বাধ্য করেছে। কেন বাধ্য করেছে এ ঘটনা পাঠক/পাঠিকাদের কাছে এখন প্রকাশ করবো না। একটু ওয়েট করুন আপনাদের সামনে ঐ ঘটনা ছায়াছবির মত তুলে ধরবো। তার পূর্বে যে ঘটনা এখানে প্রকাশ করা জরুরী বা প্রযোজ্য সেটাই করছি।



Part - 5 || পর্ব - ৫


পর্ব -৩ || part -3

Monday, March 11, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৩ || part - 3 || Era Kara part 3 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা




।। দুই।।



নিভারানী সাতদিন পর বাড়ীতে এসে নবীন বাবুর সাথে দেখা করলো। নবীন বাবু বহু খোঁজা খুঁজির পর বিধবা ভাতার আবেদন পত্র যোগাড় করে, যত্ন করে ফিলাপ করে বি.ডি.ও সাহেব কে সই করিয়ে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিভারানীকে বললো, তিন মাস পর তোমাদের পোষ্ট অফিসে খোঁজ নেবে, আমি সব রকম ব্যবস্থা করলাম কোন ত্রুটি থাকলো না। নিভারানী তুমি এক কাজ করো, এই টাকা রাখো ভাগ্নে-ভাগ্নিদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিলাম। তুমি আমার বোন, ভবিষ্যতে দরকার পড়লে দেখা করবে। কোন দ্বিধা করবে না। নিভারানী বারংবার তাকে দাদার আসনে বসিয়ে প্রনাম করে বাড়ী মুখে রওনা হলো।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কখন যে পেরিয়ে গেল বুঝতে পারলো না। তিন মাস পরেই পোষ্ট অফিস থেকে নিভারানীর শাশুড়ীর নামে একটা পত্র এলো। তার বিধবা ভাতা অনুমোদন হয়েছে পরের মাস হতে তিনি ঐ ভাতা পাবেন। কেউ আপত্তি করতে পারবে না।

কিন্তু নবীন বাবুর জীবনে একটা বিশাল ঝড় এসে উপস্থিত হলো। পার্টির কতগুলো নেতা অর্থাৎ জানোয়াররা নবীন বাবুকে অফিসে ঢুকতে দিলো না। ঐ মানুষগুলো এতো নিষ্ঠুর যে নিভারানী ও নবীনবাবুকে কেন্দ্র করে এমন মিথ্যে গল্পটি তৈরী করলো যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অমানুষগুলো কোন দিন কোন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কি, উপকার বা সহযোগিতার মানে বুঝবে? তারা কি করলো জানেন? তারা প্রচার করলো নবীনবাবুর সাথে নিভারানীর অবৈধ্য সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে, প্রায়ই নিভারানীর বাড়ীতে যাতায়াত করে নবীন বাবু। তারপর বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই গল্পটি তৈরী করেছেন মহানুভব ব্যক্তি অভিরাম বাবু। ব্যেটা মিথ্যুক, শয়তান ও 'নরকের কীট তো বটেই। নবীন বাবু এতো ভালো মানুষ যে কোন দিন নিভারানী র বাড়ীতে পা রাখেন নি। অফিসের কোন লোকটা মিথ্যা তৈরী করা গল্পকে কেউ বিশ্বাস করে নি। কিন্তু ঐ জানোয়ারদের চাপে পড়ে তাকে বদলি নিতে হয়েছিলো।

এবার শুনুন ঘটনাটা কি। তিন মাস পর পোষ্ট অফিস থেকে বিধবা ভাতার পত্রটা এলো, তখন নিভারানী বাড়ীতে ছিল না। সে সাত দিন পর পর বাড়ীতে আসে। কমলাদেবীর হাতে পত্রটি পড়তেই সেই পত্রটি অভিরামের নিকট নিয়ে যায়। অভিরাম পত্রটি পড়ে বুঝতে পারে ব্যাপারটা কি। অভিরাম পত্রটা পড়ে কমলা দেবীকে মিথ্যে বলে ওটা বাজে কাগজ ওকে আর্বজনা স্তুপে ফেলে দেওয়া উচিত। সেই সময় নিভারানীর কথাটা মনে পড়ে, যদি কোন কাগজ পত্র বা চিঠিপত্র এলে নির্দিষ্ট জায়গায় যেন রাখা 
হয়। কোন রূপ যেন ফেলা ফেলি না হয়। হঠাৎ অভিরামের বাড়ী হতে আসার সময় বাটুল নামে একটি শিক্ষিত ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়, বাটুল তাদের পাড়ারই ছেলে। ওকে পত্রটা পড়তে দিলে জানতে পারে ওটা বাজে পত্র নয় কমলা দেবীর বিধবা ভাতা আগামী মাসে শুরু হবে। একথা শুনে কাগজ পত্রটি যত্ন সহকারে বাকসে রেখে দেয়। এদিকে অভিরাম তার চাচাতো, পিসতুতো, মামাতো পাটিভাইদের কানে তুলতেই নিবারণ গোপ বলে উঠলো, যে লোকটা এই মহান কাজটি করেছে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারন তোমরা তো কখনো ভালো কাজ করতে শিখলে না। সেই সময়ই দলপতি মহারাজ ইন্দ্র অর্থাৎ হিড়িম্ব, ডাকনাম হাড়াম্বা সশরীরে আর্বিভাব হলেন। ব্যাপারটা শুনে বিচার হলো আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত না নিয়ে যে কোন লোক যদি আমাদের মুকুটমনি হতে চায় তাহলে ভালো/মন্দ মানুষ বিবেচনা করে ছেঁটে দেবার ব্যবস্থা করবে। ঐ ভদ্রলোককে বিদায় করার ব্যবস্থা কর। এই অফিসে যেন তাকে না দেখতে পাওয়া যায়। নিভারানীর সাথে অবৈধ্য সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা রটিয়ে ওকে বদলির ব্যবস্থা কর। আর নিবারণ তোমাকে একটা কথা বলি আমাদের এই উঠতি যুবক দের বেশী জ্ঞান দিতে যেওনা। ওদের ব্রেনকে কাজে লাগাতে দাও। যাতে কমলাদেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করা যায় তার ব্যবস্থা আমি করবো। আমি চললাম আমার জরুরী মিটিং আছে। আমি ও চললাম অভিরাম বললো। প্রস্থান উদ্যত হতেই নিবারন গোপ বললেন- কাজটা ভালো করলে না অভিরাম এর ফল ভোগ করতেই হবে মনে রেখো।

নিভারানী সেবার পনের দিন পর বাড়ীতে এসে শাশুড়ীর কাছে অভিরামের কুকীর্ত্তির কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। কি করবে ভাবতে থাকে। তবুও স্থির করলো নবীনদার সাথে দেখা করবে। এক কাপ চা খেয়েই নবীন দার অফিসে উপস্থিত হলো। নবীনের সহকর্মী বিজয় বাবু ওর বদলি ও পার্টির শয়তানদের নোংরা ও কুকীর্ত্তির কথা সারাংশ করে প্রকাশ করলেন। ওরা এখনো চেষ্টা করছে যাতে কমলা দেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করতে পারে তবে এটা ঠিক কোন পার্টির নেতার ক্ষমতা নেই কমলা দেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করবে। অবশ্য নানান লাফড়া আসতে পারে। একটু চিন্তা করে বিজয় বাবু বললেন,- আপনি এক কাজ করুন নিভাদেবী, উত্তর পাড়ার মেদিনী সরকারের সাথে দেখা করুন। আপনি জিরো থেকে শেষ পর্যন্ত্য সে ঘটনা বলুন তাঁর কাছে প্রকাশ করুন। আমি একটা পত্র লিখে দিচ্ছি ওকে দেবেন। তিনি উত্তর পাড়ার চৈতালী ক্লাবের সম্পাদক। চৈতালী ক্লাবটা নিশ্চয় বের করতে পারবেন? নিন পত্রটা নিভারানীর হাতে দিলেন। মোটেই বিলম্ব করবেন না। আপনি উঠে পড়ুন। মনে রাখবেন ভদ্রলোক অতি সৎ এবং পরউপকারী। এই শয়তানদের মত নন।

নিভারানীর ওখান হতে চৈতালী ক্লাবে এসে হাজির হল। মেদিনী বাবু ক্লাবে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। বিপরীত পাশে চারটি ছেলে আপন মনে ছবি আঁকছিলো। নিভারানী ক্লাবের দরজার সামনে গিয়ে অনুমতি চাইলো ভেতরে যাবার জন্য। মেদিনী বাবু পেপার হতে মুখ তুলে বললেন কিছু বলছো? নিভারানী ছল্ ছল্ চোখে বললো- আপনি মেদিনী বাবু?

- হ্যাঁ আমি মেদিনী বাবু। নিভারানী বিজয়ের দেওয়া পত্রটা তাঁর হাতে দিলেন। মেদিনী বাবু পত্র হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলেন পত্রটা মাত্র এক লাইনে লেখা,

মাননীয়, এই মহিলার কথা মন দিয়ে শুনবেন, আপনি হবেন এর বিচার্য। প্রমানান্তে বিজয়। পত্রটা পড়ে বললেন,- তুমি বসো মা। তুমি জল খাবে? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তিনি পঁচা বলে ডাক দিতেই চারটি ছেলের মধ্যে উঠে এসে বললো- বলো জেঠু তোমার আদেশ কি। তিনি বললেন-আমার বাড়ীতে জলযোগের ব্যবস্থা করে নিয়ে এসো। পঁচা প্রস্থান করলো। এবার বল মা তোমার বক্তব্য। নিভারানী চোখের জলে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করলো। মেদিনী বাবু শুনার পর দাঁত গুলো কড়মড় করতে থাকলেন। ঘটনার সবকটা হিরোকে যেন চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। আর তর সইলো না, হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন,- বোদা, ফোল্লা, বকা চল্লো আমার সাথে ঐ নোংরা লোকটার চাঁদ বদন খানি দেখে আসি। তুমিও চলো অভিরামের বাড়ীটা আমাকে দেখিয়ে দেবে।



Tuesday, March 5, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ২ || part - 2 || Era Kara part 2 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 


    পর্ব - 2


দিনটা ঠিক মনে নেই, তবে অপরাহ্ন বেলা। নিভারানী এক বাসস্টান্ডে কোন এক শহরে কর্মের সন্ধানে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন ধরে সংসারে যে অশান্তি চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। অভাব তো লেগেই আছে। যে দিকে চক্ষু যাচ্ছে অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতে পচ্ছে না। চিন্তায় ঘুম নেই। সেই দিন বিষ্টা মোড়ল বলে বসলো - বৌমা কেউ তোমাকে সাথ দেবেন না। চারটি ছেলে মেয়ের মা হয়েছো কিন্তু যৌবনের ভাঁটা কমেনি। তুমি আমার দলে যোগ দাও মোটা রোজগার হবে প্রতিদিন। তবে কথা দিলাম আমি কারো কাছে মুখ খুলবো না। কাজটা তেমন শক্ত নয়, প্রতিরাত্রে বিভিন্ন মাকড়ার কাছে শোবে, এই আর কি। নিভারানীর কানে ঐ কথা যেতে তার মনে হয়েছিলো বিষ্টার দুগালে চপ্পল মারবে, কিন্তু পাড়ার প্রতিবেশী বলে কিছু না বলে সরে পড়েছিলো। সরে গেলেও বেশ কয়েকটা অশ্লীল খিস্তি নিভারানীর কর্নে প্রবেশ করেছিল। এই সব নানান কথা জটলা করে নিভারানীর মাথা যেন চরকীর মত ঘুরছিলো। হঠাৎ কার ডাকে যেন সম্বিত ফিরে পেলো। ভদ্রলোেক বললেন- আমি ডাকছি? আমায় চিনতে পারবে না। আমি নবীন দা, তোমার দাদা কিশোরের বন্ধু। তোমার নাম নিভা নয়? আমি তোমার গ্রামের আচার্য্য পাড়ার ছেলে। নিভারানী আমতা আমতা করতে থাকে। খুব নম্র কণ্ঠে বললো- আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। তা পারবে কেন? তোমার বিয়ের দিনে এবং ওর আগে কয়েকবার দেখেছি। হয়তো তুমি আমাকে দেখনি। কিশোর আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তোমার বিয়েতে তোমার দাদা কিশোর আমাকে আমন্ত্রন করেছিলো। আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু ছিলাম। একই সাথে স্কুল,ও কলেজের গন্ডী পেরিয়েছি। কিন্তু তোমাকে এই বেশে দেখবো আমি ভাবিনি। বিয়ের তের/চোদ্দ বৎসরের মধ্যে এই বেশ! কিরনের কি এমন অসুখ করেছিল? নিভারানীর চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। গোপনে চোখের জল মুছে বলে উঠলো- সবই ভাগ্যের পরিহাস নবীন দা। মনে হয় এই মরুময় জীবনে শীতল, বারির সন্ধান আর পাওায়া বে না। চার চারটি সন্তান/সন্ততিকে রেখে আমাকে অর্থেই জলে ভাসিয়ে দিল কিরন। কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো নিভারানী- আমার এখন এমন অবস্থা যে পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই। ছেলে মেয়েদের মুখ পানে তাকাতে পারিনা। এবার টাল সামলাতে না পেরে ভুঁকরে টুকরে কেঁদে উঠলো। গভীর চাপ দিয়ে যেন ভেতর থেকে কান্না বেরিয়ে এলো। নবীন বাবু তার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি অনুভব করলেন ভেতরে একটা কাল বৈশাখী ঝড় হু হু করে বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কেউ ঠিক থাকতে পারবে না। নবীন বাবু ওর বাপের বাড়ীর অবস্থা ভালো ভাবেই জানেন। ঐ জন্য বাপের বাড়ীর দিকে এগোতে পারেনি নিভারানী। শান্ত হবার পরে বললেন নবীন বাবু, তোমার শাশুড়ী কেমন আছেন। নিভারানী শান্ত স্বরে বললো কোন প্রকারে বেঁচে আছেন। কমলাদেবী পুত্র দ্বারা বেদনা সহ্য করতে পারেননি। পুত্রের মৃত্যুতে মেরুদন্ডটা ধনুকের মত বেঁকে গেছে। পুত্র শোকের যন্ত্রনা ও অভাবের তাড়নায় অন্ধ হতে চলেছেন। নিভারানী বেশ বড়ো সড়ো এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একটুখানি জিরিয়ে নিলো। সবই কপালের ফের নবীনদা। নবীনবাবু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বললো- কেন পাটীর লোকেরা তোমাদের মদত করে না! তোমরা দুঃস্থ, তোমরা উর্পাজনহীন, বিধবা ভাতা, বার্দ্ধক্য ভাতা এগুলোতো পেতে পারো? নিভারানী ঢোক গিলে বললো- সে পাটীতে দরদী লোকনেই নবীনদা। তাদের বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। আমাদের পরিবারের মধ্যে নেতা রয়েছে, তিনি সিদ্ধপিঠ মহাপুরুষের বানী আওড়ান। বারংবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। আমরা ভিক্ষে করি, দশজনের কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিই এটাই চায় তারা। নবীন বাবু বুঝতে পারলেন নিভারানীর ভাষায় কিসের ইঙ্গিত রয়েছে। হঠাৎ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে,- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? নিভারানী বললো,- দিয়াপুর চললাম অন্নের সন্ধানে। একজন প্রতিবেশী সন্ধান দিয়েছেন একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গিয়েছে দুটো বাচ্চাকে কে রেখে, তাদের দেখা শুনা বা পরিচর্চার ভার নিতে হবে। বিনিময়ে মাসিক বেতনদেবে, কতদেবে তা ঠিক হয় নি। নবীন বাবু বললেন- তুমি বাড়ী ফিরবে কবে?


তোমাদের মদত করে না! তোমরা দুঃস্থ, তোমরা উর্পাজনহীন, বিধবা ভাতা, বার্দ্ধক্য ভাতা এগুলোতো পেতে পারো? নিভারানী ঢোক গিলে বললো- সে পাটীতে দরদী লোকনেই নবীনদা। তাদের বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। আমাদের পরিবারের মধ্যে নেতা রয়েছে, তিনি সিদ্ধপিঠ মহাপুরুষের বানী আওড়ান। বারংবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। আমরা ভিক্ষে করি, দশজনের কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিই এটাই চায় তারা। নবীন বাবু বুঝতে পারলেন নিভারানীর ভাষায় কিসের ইঙ্গিত রয়েছে। হঠাৎ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে,- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? নিভারানী বললো,- দিয়াপুর চললাম অন্নের সন্ধানে। একজন প্রতিবেশী সন্ধান দিয়েছেন একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গিয়েছে দুটো বাচ্চাকে কে রেখে, তাদের দেখা শুনা বা পরিচর্চার ভার নিতে হবে। বিনিময়ে মাসিক বেতনদেবে, কতদেবে তা ঠিক হয় নি। নবীন বাবু বললেন- তুমি বাড়ী ফিরবে কবে?


- মনে হয় সাত দিন পর। কিন্তু আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন কেন? নবীন বাবুর উত্তর, তোমাদের বি.ডি.ও তে সাত মাস হলো জয়েন করেছি। বাড়ীতে এসেই আমার অফিসে যাবে, আমার নামে খোঁজ করলে যে কেউ আমার অফিস রুম দেখিয়ে দেবে। তবে তোমার শাশুড়ীর ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড জেরক্স করে সঙ্গে রাখবে। তোমার শাশুড়ীর হয় বিধবা ভাতা নতুবা বার্দ্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করবই। নিভারানী কাতর কণ্ঠে বললো- তাহলে খুবই উপকার হয় নবীনদা। - তুমি চিন্তা করোনা যে কোন ব্যবস্থা হবেই। আর অপেক্ষা করা যাবে না, বাস এসে গেছে। তুমি অফিসে এসো কিন্তু। নবীনবাবু বাসে উঠলেন। নিভারানী ওর গমন পানে তাকিয়ে রইলো। আপন মনে বলতে থাকলো ঈশ্বর আছেন।




_______________________________________


🔴 পর্ব - ১ || Part - 1


🔴পর্ব - ৩ || part - 3

Saturday, March 2, 2024

ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ২০২৩ || February Sonkha 2023


 


যে পাখিগুলো যাযাবর তাদের যেতে দাও। মুক্তির আকাঙ্ক্ষা সবার আছে। ওরা যাযাবর। ঠিক আছে, কিন্তু ওরা সঙ্গীহীন নয়। ওরা নিজের প্রজাতির কাছে গাঢ়। ওরা ভাসতে জানে, ওরা ভাসাতে জানে তবে একসাথে।


তুমি সুদূর নীলনদ থেকে যে প্রেমের হীরা কুড়িয়ে এনেছিলে তার প্রেমের অন্তরালে মোহগ্রস্ত হয়ে সে অচিন পাখি তোমাকে আদর না দিয়ে যাযাবর হয়ে গেছে। তার চাতক প্রাণা দৃষ্টি তোমাকে বেআকুল করে দেবে, যখন তুমি ঘুরতে ঘুরতে হাঁপিয়ে যাবে তখন তুমিও আবার সঙ্গহীন যাযাবর। এবার একটু বিশ্রাম তোমাকে শিক্ষা দেবে। তুমি এবার আঁকড়ে ধরবে সাহিত্যকে, ক্ষতি নেই। তোমার অপেক্ষাতেই সাহিত্য আছে। তুমি ওকে আদর করো, একটু পড়ে নাও, কোলে তুলে গ্রাস করো। দেখবে তুমি ক্ষণিকের শান্তি পেয়েছো। ঐ ক্ষণিকের শান্তি নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবে ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন। তাই ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ম্যাগাজিনকে সাদরে গ্রহণ করুন। সাহিত্যে থাকুন। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।


                                ধন্যবাদান্তে

    ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা সম্পাদকীয় বিভাগ 

Journey with Kayes in an Arab land - Bhaskar Sinha || English Story || English Short Story || Story

 Journey with Kayes in an Arab land


                Bhaskar Sinha


 


My journey with Kayes began almost by chance. I was quite naive then, finding myself in the desert kingdom of Abu Dhabi. It was over two decades ago when I joined an EPC contracting firm, working for the Oil and Gas industries. None of my family members or relatives had ever worked in this part of the world. A few had chosen to cross the 'Kalapani' and settle in the well-known lands of opportunity. Back then, I had no close friends in that scorching, arid land. My limited knowledge about the Arab world was gleaned from friends of friends and a few travelogues, leaving me only minimally informed.


The most challenging aspect nowadays is the impracticality of traveling by camel from one place to another. Camels are primarily found in camel farms, where they are trained to race, earning trophies and rewards for their owners. Alternatively, they are used in desert safaris for the amusement of tourists and children. Thus, the only viable option for traveling long distances is by car. Thankfully, gasoline is relatively inexpensive, almost as cheap as water. However, obtaining a driving license can be an incredibly costly and time-consuming endeavor for certain nationalities. While drivers from some privileged, developed nations can easily exchange their licenses, others, including us, must undergo training, written tests, and multiple road tests. It can take months, and sometimes-even years, to finally obtain a license.


During my initial stay in the Arab world, owning a car was not an option for me. When my job required traveling about 300 km one way early in the morning, I became somewhat concerned. That is when I met Kayes, who sat next to me in the office. He was a bald, cheerful fellow, known for his love of smoking and chatting, especially with the women. Comfortable in jeans and t-shirts, he had an easy-going manner, even when using the restroom. His local colleagues would sometimes mock him behind his back, but he seemed aware of it and unaffected.


My inability to speak Arabic meant that English was my sole means of communication with colleagues. In the Gulf region, English was widely used, not just in the southeast but also in the far southeast and the far north. It served as a lingua franca among the working class, likely because many in managerial and mid-management roles came from English-speaking countries. Local and other Arab nationals, however, would switch to Arabic in each other's presence, often disregarding non-Arabic speakers. Kayes proudly told me he had traveled to Bombay (I corrected him that it was now Mumbai) to learn English. However, probably not a college graduate, Kayes spoke English quite fluently. I later discovered that his written English, however, was not as proficient.


It was only my second or third day on the job, and the thought of asking Kayes to accompany me to Jebel Dhanna from Abu Dhabi made me incredibly hesitant. To my surprise, Kayes was not only willing but also seemed eager to take me along. He appeared to understand the challenges newcomers faced during those initial days, when Arabs would jokingly refer to us as ‘meskiins’. Kayes had a particular fondness for American cars, believing they were best suited to withstand the desert climate. He and his friends typically sold their cars after using them for a maximum of five years.


The sun had not yet risen, although it usually appears early in this region. It was still lingering in the early morning twilight. Kayes was finishing his last few puffs of a cigarette.


“Get in, ‘muhandis’,” Kayes called out to me warmly.


I noticed a Starbucks coffee cup with a lid next to him likely picked up from a gas station kiosk on his way. Climbing into the luxurious car, I braced myself for a long journey, unaware of just how unusual the experience would be!


The car sped along at its maximum velocity, accompanied by a few other vehicles moving just as fast. The streetlights, still casting a golden hue, were in their final moments of a stately display, almost reluctantly making way for the actual golden globe of the sun.


"No worries, we will have breakfast on the way," Kayes said calmly, sipping his coffee.


The most peculiar aspect of this journey was how it began—with the word 'God'. Someone in Kayes's acquaintance had recently passed away. From what I knew of Kayes, he was typically very social in such situations, often gathering people to pay their respects.


"Rest in peace for your..." I began, not actually knowing the deceased's relation to Kayes.


"It was okay; he didn't suffer much," Kayes replied.


"I hope he will be in heaven," I said.


"Do you really believe in heaven? It is all bogus! When a man dies, that's the end!" Kayes responded sharply.


I looked at him intently. He was not joking. I was familiar with his occasional coarse jokes, but this was definitely not one of those.


I remembered our first meeting vividly. Kayes had vividly described how men could become 'real kings' by indulging in three 'naughty' activities, each ending with 'ing'...


Yet, this same man surprised me when he asked who the greatest man of all time was. I offered a range of illustrious names from North Atlantic, Western, Chinese, and even modern Indian figures. He completely took me by surprise by naming Ramakrishna. His view oddly mirrored that of our IAS Study Forum Director and History professor in Delhi. Kayes, having not pursued much education beyond school, had acquired some soft skills along with English during his time in Mumbai. It was common knowledge that Persians were enterprising, as evidenced by figures like JRD and Ratan Naval Tata and other prominent Mumbaikars. Nevertheless, the idea of a common Iranian traveling to Mumbai (formerly Bombay) to learn English and then settling in the UAE was extraordinary to me.


...and that journey began with the word 'God'...


"Don’t you believe in God? The Almighty?" I asked when he scoffed at the notion of an existing heaven.



"Religion is like opium. People who seek billions, both in terms of money and followers, manage all religions. There might be a supreme power; otherwise, the order and balance of the universe would be in chaos," Kayes opined.


"Listen, Moorthy," Kayes called out (he was the only colleague who preferred to call me by my surname. Everyone else found it easier to use my first name, Sundara, despite its challenging pronunciation. On the other hand, perhaps they thought calling me 'Moorthy' was somehow irreverent..


"Men, particularly, are extremely ingenious and possess fertile imaginations. Given the opportunity, they have invented. They have invented everything, necessary or not, not just in science and technology, but in psychology, philosophy, and even religion," Kayes continued.


I was taken aback, reminded of an old debate where an intellectual friend had declared emphatically, "...and men created God!"


"Why do I consider Ramakrishna the greatest man on earth? Because he realized that, all paths lead to the same Almighty. The intermediaries created edicts, rituals, and all that gibberish. To reach the Almighty, a pure heart is all that’s needed," Kayes asserted. "Look at the commonalities in all religious texts. Almost all of them advocate for devotion, adherence to truth, and caring for humanity."


"Kayes, believe me, I come from Ramakrishna's land, and I never imagined how his enlightened teachings impacted other parts of the world. And yes," I interjected, "you are absolutely right."


"These are just my thoughts, my analyses. Our Prophet heard the word 'Iqra' – read or proclaim!" Kayes replied. "So, I thought, why not?"


Feeling the need to lighten the mood, I decided to tease him a bit; the discussion had become quite intense. "Isn’t talking about this 'haram'?"


"Habibi, let's take a break," Kayes suggested. "We still have a long way to go; let's stretch our legs."


The sun had already started to pour its heart out, focusing intensely on this part of the world. Stepping outside subjected the skin to a burning sensation. Secretly, I wished we could call the restaurant staff to deliver packed sandwiches and tea to the car, a tactic many other travelers seemed to be using. Even the delivery boys appeared busy catering to this demand, likely attracted by the prospect of good tips. Kayes, however, preferred to step out for his cigar at the 'designated smoking area' and liked to choose his breakfast after surveying all the options. I had no choice but to leave the comfort of the air-conditioned interior for the sweltering outside.


Through our several trips to Jebel Dhanna, I have to know Kayes better. He was outwardly jovial but always maintained an unspoken barrier between us. I never felt compelled to cross that boundary. Once, he candidly shared a story about proposing marriage to a wealthy Indian widow and how he was politely rejected. It seemed he never sought advice or approval for his actions or stories.


Returning from vacation, I was shocked to learn that Kayes had just lost his wife. Knowing how heartbroken and devastated he must be, I could not resist the urge to visit his place to offer my condolences, despite anticipating a house full of mourners.


As expected, I found Kayes surrounded by a multitude of relatives. He noticed me among the crowd.


"Please take care, my dear friend," I said softly, holding his hand. "I hope you will overcome this loss. Have fait

h."


"I can handle everything," murmured a fatigued Kayes, "except these middlemen!"




হাইব্রিড জ্ঞান - পার্থ প্রতিম দাস || Highbrid Gan - Partho protim Das || short story || অনুগল্প || Mini story || গল্প || story

   হাইব্রিড জ্ঞান

      পার্থ প্রতিম দাস 



 গ্রামে একজন ডাক্তার থাকে। যে সে ডাক্তার না। একেবারে বিলেত ফেরত ডাক্তার। তাই আশেপাশে তার বিরাট নাম ডাক। কারুর কিছু অসুখ করলে সবাই বিলাত ফেরত ডাক্তার গৌরবের সরনাপন্ন হয়। 

      কালি পুজোর পরের দিন। ঘনার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই ঘনা ছুটে যায় গৌরব ডাক্তারের কাছে। গৌরব পরীক্ষা করলো। 

      ঘনা জিগ্যেস করলো, "ডাক্তারবাবু, আমার কি হয়েছে?"

       গৌরব বলল, "কিছু না, পরিবেশ দূষণের ফল। সরকারী ভাবে পটাখা ফাটানো বন্ধ থাকলেও চারপাশে কালি পূজায় যে ভাবে পটাখা ফাটাচ্ছে। তা দেখে মনে হচ্ছে, তারা তাদের বাপের বিয়েতে আনন্দ করছে। ভাবনার কিছু নেই। ঔষধটা নিয়ম করে খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

      ঘনা মুর্খ মানুষ। তাই অতশত বুঝে না। ডাক্তারবাবু যখন বলেছে, নিশ্চয় ঠিক কথা বলেছে।

     ঘনা ঔষধ খেয়ে ভালই ছিল। কিন্তু পয়লা জানুয়ারির রাত থেকে আবার শ্বাস কষ্ট শুরু হলো। তখন অগত্যা আবার ছুটল গৌরব ডাক্তারের কাছে। 

      গৌরব সব পরীক্ষা করে দেখলো। তখন ঘনা বলল, "ছেলেদেরকে পটাখা ফাটাতে বারন করেছিলাম। কিন্তু কেউ শুনলো না। মনে হয় পটাখার ধোঁয়া এবারেও শরীরে ঢুকতে এত কষ্ট শুরু হয়েছে।"

      গৌরব কথাটা শুনে বেশ গম্ভীর হয়ে প্রেকসিপসন লিখতে লিখতে বলল, "তুমি সব জানো? তুমি ডাক্তার না আমি ডাক্তার? নতুন বছরে পটাখা ফাটালে ভালো। পরিবেশ সুদ্ধ হয়ে যায়। বিদেশের মানুষ তাই পয়লা জানুয়ারিতে পটাখা ফাটাচ্ছে। আমাদের ও সেই মহৎ কাজে সামিল হওয়া উচিত।"


লাভার্স পার্ক - দেবাংশু সরকার || Lovers park - Debanshu sarkar || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short story ||

         লাভার্স পার্ক

            দেবাংশু সরকার





       বছর পাঁচেক আগে পার্কটা তৈরী হয়েছিল। স্থানীয় বিধায়ক নিজের বিধায়ক ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে পার্কটা তৈরী করে দিয়েছিলেন। তিনিই পার্কটার নামকরণ করেছিলেন 'সবুজ পার্ক'। অবশ্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই স্থানীয় মানুষজন দাবি করে আসছিল যে পাড়ার বাচ্চাদের খেলার জন্য একটা খেলার মাঠ বা পার্ক তৈরী করা হোক। কিছুদুরে একটা খেলার মাঠ আছে। সেখানে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা হয়। পাড়ার বাচ্চাদের পক্ষে অতদুরে খেলতে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাড়ন্ত বাচ্চাদের খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি খুবই প্রয়োজন। পড়াশোনার সাথে খেলাধুলার ঠিকঠাক সুযোগ পেলে তবেই বাচ্চারা শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে সম্পুর্ণ ভাবে বেড়ে ওঠে। সেইজন্য দিনের পর দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে একটা পার্ক বা খেলার মাঠের দাবি উঠতে থাকে।


      স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন বিধায়ক। তাদের অনুরোধ রাখেন। ভেবে দেখেন বেশ বড় আর জনবহুল পাড়া। প্রচুর মানুষের বাস। মানে প্রচুর ভোটার। এদের অনুরোধ রাখলে ভোট বাক্সে তার ফল পাওয়া যাবে। পরবর্তী ভোটের ঠিক এক বছর আগে তিনি পার্কটা তৈরী করেন। বেশ বড় পার্ক তৈরী করা হয়েছে। পার্কের সামনে একটা সুন্দর গেট বানানো হয়েছে। পার্কের ভেতর দোলনা এবং অন্যান্য খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্ক জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটা কংক্রিটের তৈরী বেঞ্চ। গেটের সামনেও দুটো বেঞ্চ বসানো হয়েছে। পার্কের ভেতরে বেশ কিছু গাছ বসানো হয়েছে। বিধায়ক অনেক ভেবেচিন্তেই এত বড় পার্ক তৈরী করেছেন। তিনি ভেবেছেন যে কেবল শিশুদের কথা অর্থাৎ ভবিষ্যতের নাগরিকদের কথা অর্থাৎ ভবিষ্যতের ভোটারদের কথা ভাবলে চলবে না। বর্তমান নাগরিকদের কথা অর্থাৎ বর্তমান ভোটারদের কথাও ভাবতে হবে। তরুণ তরুণী, যুবক যুবতীদের কথাও ভাবতে হবে।


      সবুজ পার্কের উদ্বোধন করলেন স্বয়ং বিধায়ক। বক্তৃতা দিতে উঠে বেশ কিছুক্ষণ নিজের দলের গুনকীর্তন করার পর একটু থামলেন, দম নিলেন। তারপর ঘোষণা করলেন, "এত বড় পার্ক কেবল শিশুদের জন্য নয়। শিশুরাতো আসবেই, সেইজন্য এত দোলনা এবং অন্যান্য খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও যে কেউ এই পার্কে আসতে পারবে। একা আসতে পারবে, বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে আসতে পারবে। পার্কে বসে গল্প গুজব করতে পারবে। বিশ্রাম নিতে পারবে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের জন্য সবুজ পার্কের অবারিত দ্বার।"


      কিছুদিনের মধ্যেই সবুজ পার্কের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। প্রত্যেক দিন বিকালে বাচ্চাদের ভিড় হতে লাগলো। তারা দোলনায় চড়ে, ঢেঁকিতে চড়ে, অন্যান্য খেলার মজা নেয়। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু তারপরেও পার্কের গেট বন্ধ হয় না। বাচ্চারা ছাড়াও ভিড় করে আসতে থাকে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। বিশেষ করে, সন্ধ্যা হতে না হতেই চ্যাংড়া চেংড়ি থুড়ি যুবক যুবতীদের ভিড় চোখে পড়ে। তারপর হা হা হি হি হো হো কত রকমের হাসি গান ভেসে আসতে থাকে পার্ক থেকে।


      এপাড়া ওপাড়া বেপাড়া থেকে ছেলে মেয়েরা সন্ধ্যার পর হাত ধরাধরি করে আসে। কি সুন্দর কচি কচি আদুরে আদুরে মুখ সব! দেখলে মন ভরে যায়। বেশ রাত অবধি প্রেম পর্ব চলে এখানে। অবশ্য এই প্রেমাঙ্গনে শুধু যে প্রেম ভালোবাসা চলে তা নয়। অনেকের রুজি রুটি জড়িয়ে আছে এই প্রেমাঙ্গনে। প্রেমিক প্রেমিকাদের কুহুতানের সঙ্গে বাদামওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা, ঘটিগরমওয়ালাদের হ্রেষাধ্বনি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। যত দিন যায় তত জোড়ায় জোড়ায় ভিড় বাড়তে থাকে। এখন আর সন্ধ্যার পর নয়। দুপুর থেকেই রোমিও জুলিয়েটদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। তাদের চাপে বাচ্চারা কোনঠাসা হতে হতে পার্কে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।


      এতদিনে সবাই জেনে গেছে, বুঝে গেছে এই পার্কটা আর বাচ্চাদের খেলার জন্য নয়। এটা এখন প্রেমের পীঠস্থান। পার্কটাকে সবাই এখন 'লাভার্স পার্ক' বলে।


      ইদানিং আবার গবুকে লাভার্স পার্কে দেখা যাচ্ছে। গবু এই পাড়ারই ছেলে। দুবছর আগে বি.এ পাশ করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজারের মধ্যে বাবার সোনার দোকান। অতয়েব চিন্তার কিছু নেই। বেলা দশটার সময়ে ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে বাবার দোকানে যায়। তিনটে অবধি দোকানে থাকে। তারপর একদম ফ্রি। যাকে বলে মুক্ত বিহঙ্গ। প্রত্যেক দিন বিকালে গবু লাভার্স পার্কে হাজির হয় তার নতুন কালেকশন অর্থাৎ নতুন প্রেমিকা লিপিকে নিয়ে। পার্কটা অবশ্য গবুর কাছে নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন জনকে নিয়ে এসেছে এই পার্কে, প্রেমগ্রন্থ পাঠ করার জন্য। গবুর প্রেম বড়ই ক্ষণস্থায়ী। খুব বেশিদিন টেকে না। নিয়মিত বদল হতে থাকে তার প্রেমিকার মুখ। কিন্ত তার প্রেম করার গন্তব্য একই থাকে, লাভার্স পার্ক। বলতে গেলে লাভার্স পার্কের বেশ পুরানো কাস্টোমার গবু।


      লিপিদের বাড়ি অবশ্য এ পাড়াতে নয়। বেশ কিছুটা দুরে। লিপির বাবার বদলীর চাকরি। দিল্লীতে থাকেন। লিপির মা আর লিপি নিজেদের বাড়িতেই থাকে।


      এমনই এক বিকেলে গবু লিপির হাত ধরে পার্কের দিকে চলেছে। দুজনে দুজনের হাত শক্ত করে ধরে বেশ জোরে দোলাতে দোলাতে চলেছে। দুজনেরই বেশ হাসি হাসি মুখ। মনে স্বর্গ সুখ। খুব জোরে নয়। একটু দুলকি চালে হাঁটছে দুজনে। গবু, লিপি দুজনেই বেশ লম্বা। সকলের নজরে পড়ছে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় পার্কের কাছে এসে পড়েছে। হঠাৎই মুখোমুখি দেখা হারু কাকার সঙ্গে। হারু কাকা গবুর বাবার ছোটবেলার বন্ধু। চাকুরিজীবি মানুষ। অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর গবুর বাবার দোকানে এসে গল্প গুজব করেন। গবুর বাবা যখন কোনো দরকারে দোকান ছেড়ে কোথাও যান, তখন হারু কাকার ওপর দোকানের দায়িত্ব দিয়ে যান। গবুর বাবা যথেষ্ট ভরসা এবং নির্ভর করেন হারু কাকার ওপর।


      গবু লিপিকে রাস্তায় ঘনিষ্ঠভাবে দেখেও না দেখার ভান করে মুখ ঘুরিয়ে নিলেও, সন্ধ্যার পর গবুর বাবার দোকানে গিয়ে যথারীতি রং চড়িয়ে গবুর বাবার কাছে সব কিছু বর্ননা করলেন হারু কাকা। শুনে একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন গবুর বাবা। রাগে গর্জন করতে করতে বললেন, "কি বলছো হারু! আমার ছেলে রাস্তা ঘাটে মেয়ে বন্ধু নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! তারমানে এরমধ্যে 'লভ' করতে শিখেছে! দোকানে না বসে 'লভ' হচ্ছে রাস্তা ঘাটে! দেখাচ্ছি মজা। কাল একটা হেস্তনেস্ত করবো। কাল ওর একদিন কি আমার একদিন!"


      পরের দিন বিকেল হতে না হতেই গবুর বাবা বেরিয়ে পড়লেন। সোজা হাজির হলেন পার্কের সামনে। একটা সিমেন্টের বেঞ্চে বসে চারিদিকে নজর রাখতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই গবু হাজির হলো লিপির হাত ধরে। দুর থেকেই গবু দেখতে পেল তার বাবাকে। ভুত দেখার মত চমকে উঠে গবু লিপিকে বললো, "ওরে লিপি, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। পালা পালা, যেদিকে পারিস পালা, কেটে পড় এখান থেকে।"


      - "কেন, কি হলো আবার?"


      - "ঐ দ্যাখ গেটের মুখে আমার বাবা বসে আছে। নির্ঘাত হারু কাকা পিন মেরেছে।"


      লিপি গেটের দিকে তাকালো। গবুর বাবাকে দেখলো। ততক্ষণে গবু গা ঢাকা দিয়েছে। লিপিও তাকে খুঁজে পেল না। এরপর গবু বা লিপিকে আর কোনোদিন পার্কের আসে পাশে দেখা যায়নি।


      গবুর বাবা বেঞ্চে বসে দেখছেন জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতীরা হাত ধরাধরি করে পার্কে ঢুকছে। একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে গবুর বাবার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, "গোলাপি চুড়িদার পরা একটা লম্বা মেয়েকে এদিক দিয়ে যেতে দেখেছেন?"


      - "না তো।"


      - "আমার মেয়ে লিপি। কলেজে পড়ে। শুনলাম একটা বাজে ছেলের পাল্লায় পড়ে রোজ বিকালে এদিকে আসে। সত্যি কিনা দেখতে এসেছি। দেখতে পেলে ঠাস ঠাস করে চড়াবো।"


      - "আমার সরল সাদাসিধে ভালো ছেলেটাও শুনলাম একটা বাজে মেয়ের পাল্লায় পড়েছে। আমার বন্ধু কাল ওদের এদিকে আসতে দেখেছে। আমি ওদের ধরার জন্য এখানে বসে আছি। দেখতে পেলে পিঠের ছাল তুলে দেবো।"


      - "এখান থেকে চারিদিকে নজর রাখা যায়। আপনার পাশে বসবো?"


      - "হ্যাঁ হ্যাঁ বসুন।"


      - "এই পার্কটার ভেঙে দেওয়া উচিৎ।"


     - "এই পার্কটার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাচ্ছে।"


      - "বাচ্চাদের জন্য এই পার্কটা তৈরী হয়েছিল। আর আজ একটা বাচ্চাকেও এই পার্কে দেখতে পাবেন না। এখন কেবল বখে যাওয়া ছেলে মেয়েরা এই পার্কে আসে।"


      - "এইসব পার্ক, ক্লাব যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। আমি স্থানীয় পুরসভায় অভিযোগ জানাবো।"


      - "আমিও খবরের কাগজে এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখবো।"


      গবুর বাবা আর লিপির মা প্রত্যেক দিন পার্কে আসেন। লক্ষ্য রাখেন তাদের ছেলে মেয়েরা পার্কে আসছে কিনা। পার্কে আসা যুবক যুবতীদের দেখে গবুর বাবা রাগত স্বরে বলেন, "দেখেছেন এদের লাজলজ্জা বলে কিছু নেই। আমরা দুজন বয়স্ক মানুষ বসে আছি, ওদের খেয়াল নেই! কিরকম মুখের সামনে দিয়ে হ্যা হ্যা করতে করতে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত সব মুখের ভাষা! আমাদের সময়ে একে অপরকে 'হ্যাঁগো", 'ওগো', 'শুনছোগো' বলে ডাকতো। কি মিষ্টি লাগতো শুনতে। আর এরা একে অপরকে কি বলে ডাকছে শুনুন - 'জানু', 'ঝুনু', 'চুনুমুনু'। কি অদ্ভুত ভাষা! বাপের জন্মে শুনিনি।"


      - "এদের মুখের ভাষা শুনলে কানে আঙুল দিতে হয়।" উত্তর দেন লিপির মা।


      মানুষ অভ্যাসের দাস। গবু, লিপি আর পার্কে না এলেও, গবুর বাবা, লিপির মা রোজ বিকালে পার্কে আসেন। গল্প, গুজব, হাসি, গানে কখন বিকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত গড়িয়ে যায় কারো হুঁশ থাকে না।


      এমনই এক সন্ধ্যায় লিপির মা আকাশের দিকে তাকিয়ে উচ্ছসিত হয়ে বলে ওঠেন, "কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো পার্কটাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।"


      - "পূর্ণিমার চাঁদ দেখলে আমার ডিভাইন কাপলের কথা মনে পড়ে। যমুনা তীরের বাঁশি নূপুরের যুগলবন্দির কথা মনে পড়ে।"


      কথা বলতে বলতে গান গেয়ে ওঠেন গবুর বাবা, 


      - "তাই বলি কোনো বাঁশি 

         সুর খুঁজে পেতো কি,

        কারো নূপুর না থাকলে?"


      গলা মেলান লিপির মা,


      - "কোনোদিন বলাকারা

         অত দুরে যেত কি,

        ঐ আকাশ না ডাকলে?"


      জোৎস্না মাখা সন্ধ্যায় গানে, গল্পে মেতে ওঠেন দুই মধ্য বয়স্ক নরনারী। সন্ধ্যার পর একরাশ খুশি নিয়ে বাড়ি ফেরেন দুজনে। এভাবেই কেটে যায় দিন। কাটতে থাকে মাস। লাভার্স পার্কের নব্য যুগলদের মাঝে আলাদা করে চোখে পড়ে গবুর বাবা আর লিপির মাকে।


      এরমধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে গবুর বাবার মধ্যে। আগে স্থানীয় দর্জির দোকান থেকে তৈরী করা ঢলঢলে প্যান্টুল পরতেন। এখন তার বদলে পরেন স্কিন টাইট জিন্স। সেইসঙ্গে মানানসই রং বেরঙের টি-শার্ট। পায়ে দেন রঙিন বাহারি স্পোর্টস স্যু। কোনোদিন গোঁফ দাড়ি না রাখলেও, গবুর বাবার দুকানের দুপাশে মোটা ঝুলফি শোভা পেত। এখন সেগুলো উধাও হয়ে গেছে। তার বদলে ঠোঁটের নিচে দেখা যাচ্ছে হালকা দাড়ির ছোপ। মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুব প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করেন না। এখন তার দুচোখের নিত্য সঙ্গী রে ব্যান। পুরানো দিনের অ্যাংলো সুইস অদৃশ্য হয়ে গেছে গবুর বাবার বাঁ হাতের মণিবন্ধ থেকে। তার জায়গা নিয়েছে হাল ফ্যাশনের স্মার্ট ওয়াচ। মাঝে মাঝে লিপি অবাক হয়ে আবিষ্কার করে তার লিপস্টিক, আই লাইনার এবং অন্যান্য সাজের জিনিষগুলো যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে!


      দু দিন হলো লিপির মা পার্কে আসছেন না। গবুর বাবার একা একা, ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ম্যাসেজ করলেন, "কি হলো জানু, দু দিন ধরে দেখা দিচ্ছো না? তোমার দিবানাকে ভুলে গেলে?"


      কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যাসেজের উত্তর এলো, "কি করবো চুনুমুনু। দুদিন ধরে জ্বরে ভুগছি। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছি না। আমার জ্বর হয়েছে বলে লিপিও বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তাই ফোন করতে পারছি না। কাল পরশু পার্কে যেতে পারবো না। আগামী সপ্তাহ থেকে ঠিক যাবো। রাগ কোরো না লক্ষীটি।" 


                         

ইসরায়েলের কবি এলি ইলিয়াহু - শংকর ব্রহ্ম || Israyal er kobi eli iliyahoo - Sankar Brhama || Article || প্রবন্ধ || Essay || নিবন্ধ

ইসরায়েলের কবি এলি ইলিয়াহু

            শংকর ব্রহ্ম

 





                              এলি ইলিয়াহু ১৯৬৯ সালে তেল আবিবে জন্মগ্রহণ করেন। ভিভিয়ান ইডেন ওয়াশিংটন, ডিসিতে বড় হয়েছেন, বর্তমানে তিনি জেরুজালেমে থাকেন। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি করেছে । হিব্রু এবং ফরাসি থেকে কবিতার বই ও গদ্যের অসংখ্য অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একাডেমিক এবং নন-একাডেমিক উভয় ক্ষেত্রেই ইংরেজি অনুবাদ শিখিয়েছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত Haaretz ইংরেজি সংস্করণের কবিতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন কপি-সম্পাদক (Copy-editor) হিসাবে "হারেৎজ" সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন এবং তারপর নিজের কবিতা ছাড়া সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় লিখতে থাকেন। তাঁর প্রথম কবিতার সংকলন: "আমি এবং একটি দেবদূত নয়" (হেলিকন, ২০০৮ সালে) প্রকাশিত হয়। এই বইটির জন্য তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। "ইহুদি" কবিতার জন্য ২০১৩ সালে মাতানেল পুরস্কার, ২০১৪ সালে "লেভি এশকোল" প্রধানমন্ত্রীর কবিতা পুরস্কার পান। তাঁর কবিতা ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, জার্মান এবং তুর্কি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।



                    তিনি ইহুদি দর্শন এবং হিব্রু সাহিত্য অধ্যয়ন করেছেন। তাঁর কবিতায়, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রামগুলি তাদের পিছনের 'বড় ধারণা'কে নির্দেশ করে, এবং ইলিয়াহু শব্দ থেকে শুরু করে দৃশ্যমান এবং যা লুকিয়ে আছে তার মধ্যে টানটান হয়ে চলেছেন...



এলি ইলিয়াহু সম্পর্কে, মতি কিকায়ন লিখেছেন -


                   'আমার মনে হয় আমি শব্দে আচ্ছন্ন', কবি এলি এলিয়াহু কয়েক বছর আগে আমেরিকান সাক্ষাৎকারকারী রাচেল গেলম্যান এবং কার্লি জয় মিলারকে বলেছিলেন, কবিদের মধ্যে প্রায় সর্বজনীন অনুভূতির প্রতিধ্বনি। ‘আমার ভালো লাগে ছন্দ, শব্দে অক্ষরের ক্রম। আমি বিভিন্ন প্রসঙ্গে একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ নিয়ে আচ্ছন্ন। আমি আত্মা এবং শরীরের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে চিন্তা করতে বেশ কিছু সময় ব্যয় হয় ; আমি মনে করি আমার কবিতায় এর প্রতিফলন ঘটেছে।



                    ইলিয়াহু ইসরায়েলি দৈনিক পত্রিকা হারেৎজের একজন সম্পাদক, যেখানে তিনি ইসরায়েলি এবং বিদেশী সাহিত্য সম্পর্কে নিয়মিত লেখেন। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক, তিনি ইহুদি দর্শন এবং হিব্রু সাহিত্যে মেজর করেছেন, তিনি আলমা কলেজে সম্পাদনা এবং অনুবাদ অধ্যয়ন করেছেন এবং অভিজ্ঞ 'হেলিকন স্কুল অফ পোয়েট্রি'-তে লেখার কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি দৈনিক হা-আরেৎজে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।



                  তরুণ মিজরাহিম, অথবা আরব বা মুসলিম দেশগুলিতে শিকড়যুক্ত ইহুদি - অভিবাসীদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের লেখা কবিতা নিয়ে আগ্রহ এবং সক্রিয়তা আজকাল ইসরায়েলে উচ্চ পর্যায়ে পোঁছেছে। ইলিয়াহুর একটি কবিতা যা এই অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত, 'মাটির নীচে', বলে, 'এবং আমি কীভাবে এটিকে সাহায্য করতে পারি যদি আমার জন্য / অপারেশন সফল হয় এবং বাগদাদ / মারা যায় এবং যা বাকি থাকে / সঙ্গীত। . . ' (কবি দ্বারা অনুবাদ)।



              আদিয়া মেন্ডেলসন মাওজের মতে, তার ইসরায়েলের মাল্টিকালচারালিজম বইতে, কবিতাটি ২০১২ সালে জনসাধারণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল যখন এটি একটি ইসরায়েলি হাই স্কুল ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছিল। কবির বিড়ম্বনা স্পষ্টতই ছাত্রদের উপর গিয়ে পড়েছিল। তারা কবিতায় উপস্থাপিত 'পরিচয় সংকট শনাক্ত করতে' ব্যর্থ হয়েছে, সম্ভবত, বইটি পরামর্শ দেয়, কারণ তারা ইসরায়েলি বহুসংস্কৃতির শিকড়ের সাথে এতটাই অভ্যস্ত ছিল যে তারা কোনও সমস্যা অনুভব করতে পারেনি কিংবা বিপরীতভাবে, কারণ 'এই তরুণ প্রজন্ম এত শক্তভাবে আবদ্ধ। ইসরায়েলি আধিপত্যের কাছে অন্ধ যারা তাদের কাছে ভিন্ন'।


                বিভিন্ন পটভূমির অনেক কবির মতো, ইলিয়াহু বলেছেন, ‘আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিলাম তখন আমি কবিতা লিখতে শুরু করি। আমি প্রথম থেকেই বইয়ের শব্দের প্রতি মুগ্ধ ছিলাম এবং যখন আমার লেখার ক্ষমতা ছিল, তখন আমি শব্দ এবং বাক্য গঠনের দ্বারা সৃষ্ট সংগীতের জাদুটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটা অনুভব করতে আমার অনেক সময় লেগেছে যে আমার ব্যক্তিগত কাব্যিক ভাষা আছে এবং আমি এর মাধ্যমে আমার জীবন সম্পর্কে কথা বলতে পারি এবং অন্য কবিদের অনুকরণ না করে।



             ইলিয়াহু ধর্মনিরপেক্ষ, হিব্রু বাইবেল ও আধুনিক হিব্রু কবিদের সূত্র ছাড়াও একজন মহান সাহিত্যিক । তিনি বলেন, 'আমি ইংরেজি কবিতা পড়ি। এলিয়ট, ইয়েটস, টেড হিউজ, বিলি কলিন্স, কার্ল স্যান্ডবার্গ এবং সর্বোপরি ওয়াল্ট হুইটম্যান। আমি হিব্রু ভাষায় অনূদিত বিদেশী কবিতাও পড়েছি। আমাদের ইস্রায়েলে পোলিশ কবিতার দুর্দান্ত অনুবাদক রয়েছে। আমি Szymborska এবং Milosz পছন্দ করি। তাদের প্রভাব আমার উপর রয়েছে।



                   তিনি যে নির্দিষ্ট জায়গায় থাকেন সে সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, 'ইসরায়েল একটি অত্যন্ত চাপপূর্ণ, জনাকীর্ণ, সহিংস এবং কোলাহলপূর্ণ দেশ। . . আমি মনে করি আমার কবিতার অংশ এই পটভূমির বিরুদ্ধে ব্যক্তির সংগ্রামের একটি দলিল। আমিও একটা শহরে বাস করি... এর বিল্ডিং, রাস্তা, ফুটপাত, সিঁড়ি, জানালা। . . রূপক এবং চিত্রের একটি প্রধান উৎস।



                      [ এলি ইলিয়াহুর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন - রাচেল গেলম্যান এবং কার্লি জয় মিলার ]


                         


কবিতা ছাড়া আর কীসে আপনার সময় কাটে?



               আমি Haaretz ডেইলি নিউজপেপারে একজন সম্পাদক এবং সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিষয়ে লেখক হিসেবে কাজ করি। তাই প্রতিদিন আমি সম্পাদকীয় বোর্ডে থাকি। আমার একটি মেয়ে আছে, তার বয়স চার বছর, এবং আমি যতটা সম্ভব তার সাথে থাকার চেষ্টা করি।



আপনি কখন কবিতা লেখা শুরু করেন এবং কেন?



              আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন কবিতা লিখতে শুরু করি। আমি প্রথম থেকেই বইয়ের শব্দের প্রতি মুগ্ধ ছিলাম এবং তখন আমার লেখার ক্ষমতা ছিল, এবং তখন আমি শব্দ এবং বাক্য গঠনের দ্বারা সৃষ্ট সংগীতের জাদুটি আয়ত্ব করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটা অনুভব করতে আমার অনেক সময় লেগেছে যে, আমার ব্যক্তিগত কাব্যিক ভাষা আছে, ফলে অন্য কবিদের অনুকরণ না করেও আমি তার মাধ্যমে আমার জীবন সম্পর্কে কথা বলতে পারি। 



আপনার আবেগগুলি কী এবং কীভাবে সেগুলি আপনার লেখায় বেরিয়ে আসে?



                   আমি মনে করি আমি শব্দে আচ্ছন্ন। আমি ছন্দ পছন্দ করি, শব্দে অক্ষরের ক্রম অনুভব করি। আমি বিভিন্ন প্রসঙ্গে একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ নিয়ে আচ্ছন্ন। আমি আত্মা এবং শরীরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার সম্পর্কে চিন্তা করতে বেশ কিছু সময় ব্যয় করি, আমি মনে করি আমার কবিতায় এর প্রতিফলন ঘটেছে।



আপনার কবিতায় কিসের টান থাকে? কি লিখতে শুরু করার জন্য আপনি রাতে জেগেছেন?



                    আমি মনে করি যে শিল্প সাধনা সাধারণভাবে চিন্তার উপর ভিত্তি করে হয়। আমি যা লিখি তা সবই দুই বা ততোধিক জিনিস বা অনুভূতি বা চিন্তার মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে সৃষ্ট, এবং কবিতা হলো সেই জায়গা যেখানে আপনি এই সমস্ত বিরোধী অনুভূতিগুলিকে কিছু আদেশ দিতে পারেন। আমি আরও মনে করি যে কবিতার মূল টান হল সৌন্দর্য এবং সত্যের মধ্যে, আর নান্দনিকতা এবং সততার মধ্যে থাকা। কিন্তু যা আমাকে রাত জেগে লিখতে বাধ্য করে তা সাধারণতঃ একটি ধারণা বা চিন্তা নয়, বরং আমার মনের মধ্যে উপস্থিত শব্দের সংমিশ্রণ সৃষ্ট কোন জিনিষ যা প্রকাশের দাবি করে থাকে।



ইস্রায়েলে বসবাস আপনার কবিতাকে কীভাবে সজাগ সচেতন করে এবং গঠন করে?



                      এটি একটি খুব জটিল প্রশ্ন, প্রায় এই দেশের মতোই জটিল। একজন ইসরায়েলি ব্যক্তির প্রধান রূপকারের অভিজ্ঞতা হল সামরিক পরিষেবা, বিশেষ করে দখলকৃত অঞ্চলগুলিতে সেবা করা।


                        আমার কিছু কবিতা আছে যা সরাসরি এই অভিজ্ঞতার সাথে মোকাবিলা করে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, আমি মনে করি ইসরায়েল একটি অত্যন্ত চাপ-বহুল, ভিড়-আক্রান্ত, সহিংস এবং কোলাহলপূর্ণ দেশ। আর এটাই আমার কবিতার প্রেক্ষাপট। আমি মনে করি আমার কবিতার অংশ এই পটভূমির বিরুদ্ধে ব্যক্তির সংগ্রামের একটি দলিল। আমিও একটি শহরে বাস করি, এবং সেই শহরটি যার দালানকোঠা, রাস্তা, ফুটপাত, সিঁড়ি, জানালা, আমার কবিতার পটভূমি দৃশ্য এবং রূপক ও চিত্রের প্রধান উৎস।



কারা আপনার কবিতায় প্রভাবিত করেছে? আপনি কাদের বই বারবার পড়েন?



                         প্রথমত বাইবেল আছে। এই বইটি আমি বারবার পড়েছি। এটার মধ্যে মহান কবিতা আছে, সম্ভবত হিব্রু ভাষায় লেখা সেরা কবিতা। এবং তারপর, অনেক কবি আছেন যারা আমাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ আমাকে তাদের কবিতার বিষয় দ্বারা প্রভাবিত করেছে, কেউ তাদের নির্দিষ্ট এবং অনন্য শব্দভান্ডার দ্বারা এবং অন্যরা তাদের কবিতার সঙ্গীত দ্বারা প্রভাবিত করেছে। যদি কিছু নাম তালিকাভুক্ত করতে হয় - আমির গিলবোয়া, অ্যাভোট ইয়েশুরন, নাথান জাচ, বিয়ালিক, অল্টারম্যান, ডালিয়া রাবিকোভিচ, ইতজাক লাওর এবং অন্যান্য। আমি ইংরেজি কবিতাও পড়ি। আমি এলিয়ট, ইয়েটস, টেড হিউজ, বিলি কলিন্স, কার্ল স্যান্ডবার্গ এবং সর্বোপরি ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা খুব পছন্দ করি। অনুবাদ কবিতাও পড়েছি। আমাদের ইস্রায়েলে পোলিশ কবিতার দুর্দান্ত অনুবাদক রয়েছে। আমি a এবং Milosz এর কবিতা পছন্দ করি। আমার কবিতায় তাদের একটা বড় প্রভাব পড়েছে।



আপনার কাব্যিক নান্দনিকতাকে, আপনি কী বলবেন?



                            আমি মনে করি কবিতা হচ্ছে সৌন্দর্য, প্রজ্ঞা ও সঙ্গীতের সমন্বয়। আমি আমার কবিতায় এগুলো একত্রিত করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি একজন কবির কেবল শব্দের অর্থের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়, বরং এর ছন্দ, সঙ্গীত, এটি নিয়ে আসা সংসর্গের প্রতি এবং এটি অনুসরণ করা অন্যান্য শব্দের সাথে এর সংযোগের দিকেও মনোযোগ করা উচিত। সর্বোপরি, কবিতার অভ্যন্তরীণ সংগীত থাকতে হবে, যদিও কবিতাটি কাঠামোগতভাবে লেখা না হয়।



হিব্রু ভাষা সম্পর্কে আপনি কি ভালবাসেন?



                                 আমি পছন্দ করি যে হিব্রুগুলির একটি প্রাচীন পটভূমি রয়েছে এবং সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের হিব্রু শব্দ রয়েছে। আমি এই সত্যটি উপলব্ধি করি যে হিব্রুতে, বিভিন্ন শব্দ পারস্পরিক শিকড় থেকে আসে। একজন অনুভব করে যে বিশ্বের জিনিসগুলির মধ্যে সর্বদা একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। হিব্রুতেও অল্প কথায় অনেক কিছু বলার সুযোগ আছে। বাইবেল এটি সবচেয়ে স্বতন্ত্র উপায়ে কাজ করে।



আপনি কি হিব্রু ভাষায় কোন কাজ অনুবাদ করেন?



                                  হ্যাঁ সব সময় আমি এটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নই, তবে একবার আমি একটি কবিতা আবিষ্কার করি যা আমি এত পছন্দ করি যে আমি এটি হিব্রুতেও পড়তে চাই, তাই আমি প্রথমে নিজের জন্য অনুবাদ করি। এটি একটি কবিতা হতে হবে যা আমি মনে করি হিব্রুতেও দাঁড়াতে পারে। কিছু কবিতা আছে যেগুলো আমি খুব পছন্দ করি, কিন্তু আমি অনুভব করি যে তাদের বেশিরভাগ শক্তি এবং সৌন্দর্য অনুবাদে হারিয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত, আমি এলিয়টের "দ্য লাভ সং অফ জে. আলফ্রেড প্রুফ্রক" এবং বিলি কলিন্স, ওয়াল্ট হুইটম্যান এবং ফিলিপ লারকিনের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছি।



আমরা আপনার অনুবাদ করা কবিতাগুলিতে পরিবার এবং আপনার গার্হস্থ্য জীবনের থিমগুলি লক্ষ্য করেছি—এই বিষয়গুলি কি আপনার কাজে প্রায়ই আসে?


                                  হ্যাঁ. আমার কবিতার শুরু থেকে, আমি আমার জীবন এবং আমার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলতে সক্ষম হওয়ার জন্য সঠিক কাব্যিকতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, কারণ, আমার জন্য, এটি আধুনিক কবিতা এবং গদ্য বা দর্শনের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য। 



রাচেল গেলম্যান এবং কার্লি জয় মিলার বলেন -

                    হ্যাঁ দর্শনে, আপনি একটি বড় ধারণা দিয়ে শুরু করেন এবং তারপরে ব্যক্তির কাছে যান এবং আধুনিক কবিতায় আপনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বড় ধারণার দিকে যান। আমি পৃষ্ঠের জিনিস এবং নীচে থাকা জিনিসগুলির মধ্যে, যা প্রকাশিত এবং যা লুকানো রয়েছে তার মধ্যে ব্যবধান নিয়ে আমিও মুগ্ধ। যে জায়গাটি এই ব্যবধানটি সবচেয়ে বেশি প্রসারিত তা পরিবারের মধ্যে, কারণ এটি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ স্থান এবং এখনও, পৃষ্ঠের নীচে অনেক কিছু ঘটছে।



এলি ইলিয়াহুর কিছু কবিতার অনুবাদ


—-----------------------------------------------------



(এলি ইলিয়াহুর কবিতা অনুবাদ করেছেন - রাচেল গেলম্যান এবং কার্লি জয় মিলার)



ইজকর



দিন আসবে, এবং এই যুদ্ধ


এছাড়াও শেখার একটি অধ্যায় হবে,


স্কুলছাত্রীরা তারিখ, নাম মুখস্থ করবে


যুদ্ধ, যুদ্ধবাজ, রাষ্ট্র


কিছু উদাস মেয়ে হৃদয় আঁকা হবে


তার নোটবুকে, একটি ছেলে হাসবে,


কেউ ক্ষমা চাইতে হবে।


কালো টেবিলের পাশে,


একজন শিক্ষক ছাত্রকে তিরস্কার করবেন


যারা নম্বর ভুলে গেছে হতাহতের



ফরক্লোজার



দুপুরে দরজায় টোকা পড়ল (সম্পত্তি কর আদায় সংক্রান্ত শহরের সাথে একটি ভুল বোঝাবুঝি),


বন্দুক নিয়ে এসেছিল, ফর্ম বের করেছে,


বর্গক্ষেত্রে বর্গক্ষেত্র, তারা বলল।


অতঃপর, জমাকৃত ঋণ, সুদ,


বিলম্বে তারা তাকের উপর বই দেখেছিল,


সোফায়, টেবিলে। লম্বা একজন জিজ্ঞেস করল


আমি কি পিএইচডি করতাম?


 না, আমি বললাম,


কবি সে টেবিলে আমার বই দেখেছে,


এটি খুলুন এবং জোরে জোরে পড়ুন: 


"বিশ্ব ফিরে আসছে একটি বিশাল সাপের চামড়ার মতো।" 


তিনি বলেন, পৃথিবী সুন্দর পুনঃপ্রাপ্তি ফিরে সত্যি সুন্দর. তারা একমত


সমান অর্থ প্রদানে ঋণ বিভক্ত করা. বইগুলি,


 তারা এক লাইনের পূর্বাভাস দিয়ে চলে গেল।



(এলি ইলিয়াহুর কবিতা -


ভিভিয়ান ইডেন হিব্রু থেকে অনুবাদ করেছেন)


 


আঁকা পাখি


 


আমি সেই বৃদ্ধকে মারধর করিনি যার রক্তে তার সাদা শার্টে দাগ লেগেছে


এবং মসজিদের ছাদে ইট ধরে থাকা লোকটিকে আমি গুলি করিনি।


ট্যাঙ্কের পেটে আমি পড়ি "দ্যা পেইন্টেড বার্ড" এবং তাতে গার্ড পোস্টে আমি কবিতা লিখেছিলাম (শুধু মৃত্যু, আমি জানতাম, লাইন থেকে মুক্তি দেয়।)



কিন্তু রাতে আমার কম্বলের ভয়ানক লজ্জা, আমার আত্মা আবদ্ধ ছিল অপরাধবোধের বিস্ফোরণে, 


এবং ভয় একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরের মতো কাতরাচ্ছে। এটা ভালো


অন্তত প্রেম ছিল, অর্থাৎ তেল আবিবকে ফোন করার এবং শোনার জন্য একটি মেয়ে


তার ভিতরে হাসছে, 


একটি শিশুর মতো যে জানে না যে সে মরণশীল।


সামলে মেয়েটি সৈনিকের কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করছে


আমি কিছুই নিশ্চিত করতে পারি না


অস্বাভাবিক ঘটছে, কিছুই না




অদ্ভুত



আচ্ছা, ভেড়ারা পাহাড়ের ধারে বিরাম চিহ্ন দেয়


এবং একটি আরব রাখাল, একটি বাজপাখি


উপরে শান্ত এবং সব শান্ত


ক্যানভাসে তেলের মতো।


আমি কি বলব, বেতার মেয়ে,


আমি ছাড়া এখানে কিছুই অদ্ভুত নয়।




গোল্ডফিশ


 


সে তার পেটে ভেসে উঠল। পাঁচ-ছয়টা ছেলে তাকে মাছের স্কুলের মতো চক্কর দিচ্ছে, রুটির টুকরোর জন্য। ক্লাস ট্রিপ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপ্তি। জীবন প্রশস্ত, নীল এবং গভীর। তাদের মাথার উপর একমাত্র ছাদ পরিষ্কার আকাশ এবং গ্রীষ্মের সূর্যের ছুরি তাদের মাংসে লেগে আছে। তাদের বেশিরভাগের জন্য, এটিই তাদের একে অপরের সাথে শেষদেখা হবে। আগামীকাল গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হবে, তার পরে তারা শহরের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। একদিন এই ক্লাস হবে দূরের, ঝাপসা স্মৃতি। মুখগুলো ঝাপসা, নামগুলো মিশে গেছে, কাজগুলো স্বপ্নের সাথে আর স্বপ্নগুলো কাজের সাথে মিশে গেছে। জিনিসগুলি আত্মার গভীরে ডুবে যাবে। সে একটি ঝাঁঝালো মেয়ে, বিশেষ করে সুন্দর নয়। কিন্তু তারা সৌন্দর্য বা সত্যের সন্ধান করছে না। এখন না. তারা চামড়ার সুখের জন্য আকুল, মাংসের নগ্নতার জন্য ক্ষুধার্ত। তার মুখ জলে ডুবে আছে। মাঝে মাঝে সে শ্বাস নিতে মাথা তুলছে। নিঃশ্বাসগুলি সূচের মতো তীক্ষ্ণ এবং সূক্ষ্ম। সৈকত চিৎকারের দূরত্বের মধ্যে। তারা তার হাত এবং পা ধরে আছে এবং সে তার পেটে ভাসছে। তারা পানির নিচে তাদের হাত পৌঁছাতে পারে এবং তাকে স্পর্শ করতে পারে। তার স্তন, তার পেট, তার উরু অনুভব করে। 


তারা উচ্চস্বরে হাসছে। একজন জানে না অন্যজন কি করছে। জলের মধ্যেই সব লুকিয়ে আছে। সে জানত না কে তাকে ছুঁয়েছে এবং কে অস্বস্তি বোধ করেছে। সে কি চায় তারা তাকে স্পর্শ করুক? তারা বেদনাদায়ক তরুণ। তাদের মধ্যে লাজুকদের জন্য, এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। দরিদ্র যারা সোনালি মাছের উপর সুযোগ পেয়েছে। সাগর তাদের একটা সুযোগ দিয়েছে। সম্ভবত এই প্রথম তারা একটি মেয়ের শরীর, উদীয়মান স্তন, তার মাংসের কোমলতা স্পর্শ করতে পারে। শিরায় রক্তের উত্তেজনা অনুভব করে তারা হাসে। জমি তো দূরের কথা। শিক্ষকরা তো দূরের কথা। বাবা-মা আরও দূরে। তাদের ত্বকে রোদ ফুটছে। সে নিঃশব্দে ভাসছে, যেন তার সাথে এর কিছুই করার নেই। তারা একে অপরকে তাকে স্পর্শ করার জন্য প্ররোচিত করে। তাদের একজন এটা করছেন? জল অন্ধকার ও ঘোলাটে। কোন কিছুই তাদের স্পর্শ থেকে বিরত রাখে। সে নিঃশব্দে ভাসছে। হয়তো সে ভাববে এটা ভালোবাসা। সে হাসছে নাকি কাঁদছে? জল বিভ্রান্তিকর। বাতাস প্রতারক। ঢেউ কড়া নাড়ছে আর আদর করছে। ছেলেদের মধ্যে একজনের হঠাৎ মাথা ঘোরে এবং সে দল থেকে ফিরে আসে। এটা আমার হয়?




বাচ্চারা কোথায় গেছে


 


এখন সবাই জানতে চায় শিশুরা কোথায় গেল। তারা বলে


তাদের হাসপাতাল থেকে অপহরণ করা হয়। অন্যান্য দাবি করুন যে এটি কখনও ঘটেনি।  


এটা শুধু কথার কথা



যারা তাদের মন হারিয়েছে। সেটি একটি একটি বিশৃঙ্খল সময় ছিল,


যে জিনিসগুলি তখন নথিভুক্ত ছিল না।


 যা মানুষ খুঁজে পায়নি


তাদের নিজের হাত এবং পা (তাদের ছেলে বা মেয়ের চেয়ে অনেক কম)।



কিন্তু আমার দাদী আমাকে বলেছিলেন যে তার একটি বাচ্চা হবে যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।



তিনি প্রতিদিন তাকে দেখতে ভ্রমণ করতেন


তারা তাকে শুধু বলেছিল যে সে চলে গেছে, অর্থাৎ রাতে সে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। 


আর এখন সবাই জানতে চায় কোথায় গেল শিশুরা? কেউ কেউ বলে যে এটি কখনও ঘটেনি। শিশুদের কেউ ছিল না অর্থাৎ, তারা ছিল এবং তারপর তারা ছিল না। এবং আমি জানি মৃতেরা উঠবে না, নিখোঁজরা ফিরে আসবে না,


এবং আমি আমার দাদীর কথায় কিছু যোগ করতে চাই না,


কিন্তু সমস্ত সমুদ্র যদি কালি হয়, এবং সমস্ত গাছ কলম হয়,


আমি শেষ পর্যন্ত তার দুঃখের ঘটনা লিখতে পারিনি।



[ এলি ইলিয়াহুর আরও পাঁচটি কবিতা ]


(মার্সেলা সুলাক হিব্রু থেকে অনুবাদ করেছেন।)



প্রথম জিনিস



সকালে চোখ খুলি,


প্রথম জিনিস,


আমি আমার শরীর খুঁজছি পরতে.



আমি যেখানে রেখেছিলাম সেখানেই শুয়ে আছে


রাতে, ভাঁজকরা



এটা বছর ধরে এই মতো হয়েছে।


আমি সবসময় এটা খুঁজে এবং আমি সবসময়


আতঙ্কিত



 মিশন


আর আমার মা আমাকে দিয়েছেন


একটি দীর্ঘ তালিকা,



তার হাতের লেখা,


কাগজের ছাঁটে।


আমার মিশনে উত্তেজিত,



শিশু নবী,



আশার একটি শিশু, একটি দড়ির উপর একটি শিশু,


আমি সহজ ভবিষ্যতে যাত্রা শুরু


বেষ্টকের উপর পদক্ষেপ


আমার শৈশবের পথ।


আমার মাথার উপরে


সূর্য একটি দৈত্য ঘড়ির মত লাগছে


পৃথিবীর দেয়ালে।



 প্রকৃতিতে কবিতা



আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি ডানা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।


সৌন্দর্য মানে হলো


সুবিধার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



*


একটা পিঁপড়া ইতস্তত করছে


যেন তার


কারণ নিঃশেষিত ছিল।



*


একটি তিলের ঢিবি


আমাকে মনে করিয়ে দেয়


দৃষ্টির আড়ালে পুরো জীবন আছে।



*


এখানেও গাছের ছায়ায়


অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করা


ঘাসের মধ্যে একটি সাপের মতো সন্তরণ।



*


আমি এখানকার নই


আমার নিশ্চিততার উদাহরণ, সংক্ষিপ্ত


সামান্য


সিঁড়ির মধ্যে।



সামলে



সৈনিক মেয়ের স্থবির কণ্ঠ


আমাকে নিশ্চিত করতে বলে


যা সাধারণের বাইরে কিছুই নয়


চলছে, অদ্ভুত কিছু না।



আচ্ছা, ভেড়ারা পাহাড়ের লাইনে বিরাম চিহ্ন দেয়,


একজন আরব রাখাল, একটি বাজপাখি


মাথার উপর ছোঁ দিলো, 


এবং সব এখনও আছে ক্যানভাসে তেলের মতো।



আমি কি বলব, বেতার মেয়ে,


আমি ছাড়া এখানে কিছুই অদ্ভুত নয়।



 জিদ



তার হাতের রুক্ষতা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল


গাছগুলোকে টেবিলে পরিণত করা থেকে


সারা দিন ব্যাপী. রুপালি চুল চকচক করছে


উজ্জ্বল চাঁদ তার মুখের উপরে।



তার শরীর বৈদ্যুতিক করাতের উপর বাঁকানো


মনে রাখার জন্য জোর করছি


তার জন্য কিন্তু বেশিরভাগই


আমি আমার নিজের জন্য জোর করছি।



কবিতাটি


খোলের মতো


সৈকতে ধুয়ে,


যা ঘটবে তা ইঙ্গিত করার কিছুই নেই


গভীরতায়,


 


কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে একবার


কেউ শস্য থেকে এটি তুলতে বালি বেঁকে উঠবে


এবং যখন তারা এটি তাদের হাতে নেবে


তাদের চোখ গভীর হবে; একটি নীরব চিন্তা


এক মুহূর্ত ভেসে উঠবে, ঘুমন্তাবস্থা


সমস্ত জেলেদের জালের মাধ্যমে।



(কেভিন হাওয়ার্থ দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে নীচের কবিতাগুলি)



ক্রসরোড



সমস্ত শীতকালে আমি একটি কবিতা লিখিনি, এবং আমার মনে ছিল না


এমনকি একটি স্বপ্ন যা আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। একটা ঘর ছেড়েছি


এবং একটি স্ত্রী, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, এবং আমার প্রয়োজন সবকিছু


আমি এক বা অন্য রাস্তা ধরে ফেলে দেওয়া জিনিষ পেয়েছি : 


বিছানা, টেবিল, তাক, রেফ্রিজারেটর। 


বলা সম্ভব যে এটি একটি আশ্চর্য, 


ফেরেশতাদের একটি কাজ, 


যেমন আমি দাঁড়িয়েছিলাম


একটি মোড়ে এটি সম্পর্কে চিন্তা না করাও সম্ভব


অতিরিক্ত।


আমি কিছু জানতে পারি না


জীবনের প্রশ্ন সম্পর্কে, বা আমি কি পেয়েছি এবং কতটা অনুমান করতে পেরেছি


আমি হেরে গেছি. কিন্তু সেই সব শীতে আমি একটা কবিতা লিখিনি,


এবং আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তার একটিও মনে নেই।



 সহজ জিনিস



কোন সহজ জিনিস নেই - জলপাই শাখা থেকে


মুগুর তৈরি করবেন না।


এখানে কোন সহজ জিনিস এসব - 


ফেলে দেওয়া পাথর থেকে একটি প্রাচীর নির্মাণ করবেন না। আরামের কোন স্পষ্টতা নেই। কোথায় বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে একটু ধুলার ঢিবি,


এবং আমরা ধুলো থেকে এসেছি, যেমন তারা বলে। এটা কোন সহজ জিনিস না


অন্যের জুতা পায়ে হাঁটতে।


কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি


সত্যিই মনে রাখবে: ভেড়া, মসজিদটি ভাল।



[হিব্রু থেকে অনুবাদ - কেভিন হাওয়ার্থ দ্বারা]


                 


            এলি ইলিয়াহু দ্বারা লিখিত একটি কবিতা


(২১শে মার্চ, ২০২২).



(মার্সেলা সুলাক দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে।)



শিশুদের কাছে চিঠিপত্র



আমি অনুলিপিকারী কাছে লিখছি,


যারা ভয়ে একে অপরের সাথে ফিসফিস করে,


যারা তাদের ভালোবাসাকে টেবিলে আঁচড়ে ফেলে।


দেরিতে আসা লোকদের কাছে। 


যারা তাকাচ্ছে তাদের কাছে


জানালা দিয়ে যারা ভুলে যায় তাদের জন্য


তাদের নোটবুক। 


যারা তাদের আসনে ঘুমিয়ে পড়ে তাদের জন্য।


যারা উত্তর জানেন না তাদের জন্য।


তার জন্য যে সে যা লিখেছে তা মুছে ফেলে।


যারা সবসময় শেষে বসে থাকে তাদের জন্য।


তার জন্য যে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় এবং চলে যায়।



[হিব্রু থেকে অনুবাদ]



                এলি ইলিয়াহুর "আমাদের দায়িত্বের লাইনে"


(১১ই জুন, ২০২১ সালে লেখা).



এলি ইলিয়াহু



আমাদের দায়িত্বের লাইনে



আমরা অনেক বা কম ছিলাম না,


কিংবা আমরা নায়ক ছিলাম না।


আমরা যেখানে মানচিত্র বলেছে সেখানে গিয়েছিলাম।


যাকে বাঁধতে হয়েছে তাকেই বেঁধে ফেললাম


আমাদের কর্তব্য লাইনে।


আমরা অনেক বা কম ছিলাম না,


কিংবা আমরা নায়ক ছিলাম না।


যাকে পাহারা দিতে হবে তাকে পাহারা দিয়েছি।


সবসময় উপরে কেউ ছিল,


সবসময় এমন কেউ ছিল যে জানত আমাদের কি করতে হবে।


আমরা বিপ্লবের জন্য তৈরি করিনি।


আমাদের যথেষ্ট সমস্যা ছিল


আমাদের নিজস্ব


 


[মার্সেলা সুলাক হিব্রু থেকে অনুবাদ করেছেন


— ২০২১ সালে]



                 মার্সেলা সুলাক "একদিন গাজার সাথে যুদ্ধের সময়, আমার বন্ধু অ্যাড্রিয়ানা এক্স. জ্যাকবস তার ফেসবুক পৃষ্ঠায় এলি এলিয়াহুর কবিতা 'আন্ডারগ্রাউন্ড' পোস্ট করেছিলেন। আমি এটি বারবার পড়েছি, শতাব্দীর গৌরব এবং ক্ষতি, আনন্দ এবং বেদনার দ্বারা বিধ্বস্ত এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের মতো স্তরিত আখ্যানগুলি - এটি কয়েকটি লাইনে ঘনীভূত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আমি ইলিয়াহুর মানবতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, এবং আমি জানতাম যে আমি তাকে অনুবাদ করতে চাই। আমি অনুভব করেছি যে এটি আমাকে একজন দয়ালু এবং আরও চিন্তাশীল ব্যক্তি করে তুলবে। এবং লোকেদের তাকে পড়ার অনুমতি দেওয়া বিশ্বকে একটি দয়ালু এবং আরও মানবিক বিশ্বে পরিণত করতে পারে।" 


        এলি ইলিয়াহুর প্রকাশনাগুলির মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য চিঠিপত্র (Am Oved, ২০১৮ সাল), Ir veh-beh-helot [শহর এবং ভয়] (Am Oved, ২০১১ সাল), এবং Ani veh lo malakh [I, and not an angel] (Helicon, ২০০৮ সাল)  


            তিনি তর