লেখিকা উম্মেসা খাতুন -এর একটি গল্প

 মৌনালির মনে দুঃখ


                     


স্বর্গীয়া ননীবালা দেবী অমিতের মা। তিনি কাঙালদের খুব ভালোবাসতেন। নিজে না খেয়ে কাঙালদের খাওয়াতেন।

তাঁর আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে অমিত তাই একটা কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছে। প্রায় শ' খানেক কাঙাল ভোজ খেতে এসেছে। তাদের সাথে তাদের ছোট ছোট বাচ্চারাও এসেছে।

অমিত নিজ হাতে তাদের খাওয়াচ্ছে। আর মৌনালি গেটের কাছে একটা টুলে বসে রেজগি পয়সা বিতরণ করছে।

হ‍্যাঁ, খাওয়াতে খাওয়াতে অমিত একটা বাচ্চার খাওয়া দেখে আশ্চর্য হল। বাচ্চাটার গায়ে কোন কাপড় নেই। পরনে শুধু ছেঁড়া একটা হাফ প‍্যান্ট রয়েছে।

বাচ্চাটা কী সুন্দর করে খাচ্ছে! কেউ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে না। বা খাওয়ার জন্য কেউ সাধাসাধি করছে না। আপন ইচ্ছায় সে নিজ হাতে কত সুন্দর করে খাচ্ছে, ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত মেখে----

অথচ এই বাচ্চাটার মতন অমিতের নিজের একটা বাচ্চা রয়েছে। সে এখন ঘুমাচ্ছে।

ফ্রিজে তার জন্য কত রকমের খাবার রাখা রয়েছে। তার যখন যেটা ইচ্ছা করবে সেটা সে খাবে বলে। কিন্তু সে সব সে কিছুই খায় না। ভাত তরকারি তো মুখেই করে না। যদিওবা করে ওই দু-একবার। তারপর খুব ঝাল বলে অমনি জল চায়। পরে আর একবারও মুখে করে না। ওকে কি আর খাবার খাওয়া বলে? তাও আবার খাওয়ানোর সময় মোবাইল, খেলনা, পাখি ও আরও কত রকমের কত জিনিস দেখানোর পর। না হলে যে সেটুকুও খাবে না।

খাবার খায় না বলে ডাক্তার দেখানোও কামাই নেই। এই তো সেদিনই পাঁচশো টাকা ভিজিটের একটা ডাক্তার দেখিয়ে আনল। ডাক্তার দেড় হাজার টাকার ওষুধ দিয়েছে। সব ওষুধ খাওয়াচ্ছে তবু কোন কাজ হচ্ছে না, ভালো করে খাবার খাচ্ছে না। আর এই বাচ্চাটা?

রাত্রে অমিত মৌনালিকে কথাটা যেই বলে অমনি তার কান্না চলে আসে। ঠাকুর তাদের বাচ্চাটাকে যদি ভালো করে খাবার খাওয়া ধরাত!

হায়! মৌনালির মনে কী দুঃখ!

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র