Wednesday, July 3, 2024

The Clown of the circus - Samir Kumar Dutta || English poem || poetry || poems

 The Clown of the circus

        Samir Kumar Dutta

             


The terrible thoughts are as stolid as the galloping horses ,

He has to go back to that matter of long ago

Along the path of his memories—

The flashes of lightning from the malicious look,

The black clouds of hard times in the sky of fate

Left a dark night broken down into tears,

Even the fire - flies too didn't extend hands to help

By kindling light in such dark night as black as pitch,

The spiritless thoughts were lost in the shade of mind,

The ill- fated mind had been continuing to carry on

The memory of victory over all grieves.


Forgetting dialogues coming onto the arena of life

The Clown had remained silent,

The clappings from the dark audience had given him dishonour .

Overindulging in imagination he always 

keeps

Only smiles on his face

As if he were Charlie Chaplin.

Though he has sufferings in his mind 

Still he keeps it in his smiling face very cautiously.

Paints his face with colours to make up a clown

Weeping while laughing and no more laughing

He urges the sense of sympathy,

And laughing while weeping and no more weeping

He consoles to cause to forget sorrow and suffering,

This is the tremendous activities of his life.

Yet, it is a life

It's a life as it's heart survives, has dignity

But remains dead.

After all, the clown has never  been treated with honour.

রাজা - সুশান্ত সেন || Raja - Susanta sen || Poetry || Bengali poetry || Kobita || কবিতা

 রাজা

সুশান্ত সেন 


রাজা ওয়াকিবহাল

রাজার কাছে অজ্ঞাত কিছু নেই

আপনি হাঁচলে রাজা জানতে পারেন,

হাসলেও।


কেবল আপনি যখন মনের দুঃখে কাঁদেন

তখন রাজা কিছু শুনতে পান না।

তখন দর্জির আনা 

নতুন গোলাপী জামাটা পরখ করার সময়।


মাপ মতো না হলেই

সাইজ করে দিতে হবে না !


রাজা বেশ ওয়াকিবহাল।




অলকানন্দার একদিন - গায়ত্রী ভট্টাচার্য্য || oloknondar ekdin - Gayatri Bhattacharya || Short Story || ছোট গল্প

  অলকানন্দার একদিন 

           গায়ত্রী ভট্টাচার্য্য 


অলকানন্দা পাশ ফিরতে গিয়ে চাদরটা টেনে নিল। শীত শীত করছিল,চাদরখানা গায়ে দিয়ে আরাম পেল।অগ্রহায়ণ মাসের শেষ,একটু একটু করে শীত জাঁকিয়ে বসছে।ভোরের দিকে ঘুম এনজয় করার মতো,শীতকালে তা আরও উপভোগ্য।


জানালার কাঁচ দিয়ে মিঠে রোদের ছোঁয়ায় অলকানন্দার ঘুম ভাঙ্গলো।

কিছুক্ষণ পর বাগানে এল অলকানন্দা,তার প্রিয় সাদা কাশ্মীরী কাজ করা শালটা গায়ে চাপিয়ে।এই শালটা তার সহকর্মীদের দেওয়া রিটায়ারমেন্টের উপহার,দেখতে ভীষণ সুন্দর। 

বাগানের একটা কোনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, যেখানে সেই গোলাপ গাছটা,যেটা তার একমাত্র মেয়ে জাহ্নবী লাগিয়েছিল,অলকানন্দার কোনো এক জন্মদিনে।গাছটা আদরে যত্নে খুব তাড়াতাড়িই বেড়ে উঠেছিল,কিন্তু এতদিনে একটাও ফুল ফোটেনি!অলকানন্দার বাগানের মালী কেবলই বলে,

“—মা ঠাকরুণ,এই গোলাপ গাছটায় কোনোদিন ফুল ফুটবে না,এ অন্য ধরণের গাছ,দিদিমনি যে কি গাছ বসিয়েছিল!এই গাছ আমি কেটে দিতে পারি, আপনি যদি অনুমতি করেন।”

অলকানন্দা বারণ করে।জাহ্নবী বহুদিন হলো দেশ ছাড়া,ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকে,মাঝে দু বার এসেছিল।

ঘুম থেকে উঠে রোজ একবার গোলাপ গাছটাকে স্পর্শ করে আত্মজাকে অনুভব করে, এই তার বহু বছরের অভ্যাস।

আজ ভীষনই আশ্চর্য হয়ে গেল, যখন দেখলো গাছটাতে একটা ফুল ফুটেছে!ফুল ফুটেছে,কি সুন্দর মেরুন লাল রঙের।কখন কুঁড়ি এসেছিল!সে খেয়াল করেনি তো!!গাছটার ভেতরের দিকে ফুলটা ফুটেছে,তাই কুঁড়ি আসাটা নজরে পড়েনি।কতদিন যে এমন একটি লাল গোলাপ ফোটার আশায় ছিল।আজকের এই বিশেষ দিনে অলকানন্দার মনটা খুশীতে ভরপুর হয়ে গেল।


প্রেসারটা বোধহয় গোলমাল করছে অলকানন্দার।প্রাতরাশ সেরে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল,ফেরার পথে ডাক্তারের কাছে যাবে।

ডাক্তারবাবু চেক আপ করে অলকানন্দাকে বললেন, 

“—ম্যাডাম,বয়স বাড়ছে, একা থাকেন, একটু সাবধানে থাকুন।“

অলকানন্দার বয়স এখন তেষট্টি,শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নিয়েছে প্রায় তিন বছর হলো। একাই থাকতে হয় তাকে।

ডাক্তারবাবুর চেম্বার থেকে বেরোতে যাবে,একজন বৃদ্ধা অলকানন্দার চেয়ে বয়সে বোধহয় অনেকটাই বড়,শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছেন,গায়ে না আছে কোনো চাদর অথবা সোয়েটার!কম্পাউন্ডার বাবুকে বললেন,

“—কি করি বাবা,ছেলেমেয়েরা এই বুড়ো মাকে দেখে না।“ 

অলকানন্দার চোখ অশ্রসিক্ত হয়ে গেল,একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার গায়ের কাশ্মীরী শালখানা বৃদ্ধার গায়ে চাপিয়ে দিল। বৃদ্ধার চোখেমুখে খুশী উপচে পড়লো,অলকানন্দার দিকে হাত তুলে বললেন, 

“—ভালো থেকো মা,ঈশ্বর তোমার সব কষ্ট দূর করুন।“ 

চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে রাস্তার বিপরীত দিকে চোখ পড়ে গেল তার,... আরে সৈকত না! সৈকত এখানে! দূর সে কেন হবে !! অলকানন্দার মনের ভুল।কোনোভাবেই সৈকতের এখানে থাকার কথা নয়!


 রান্নাটা জমিয়ে করল অলকানন্দা, যে পদগুলো তার পছন্দের,মিহি চালের ভাত,বেগুন ভর্তা,পুনকো শাক পোস্ত,ইলিশ ভাপা,ধোঁকার ডালনা। আজকের দিনটা তার পছন্দের রান্না দিয়ে সাজিয়ে সেলিব্রেট করতে ইচ্ছে করলো।মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছেগুলোকে দাম দিতে হয়,নিজেকে ভালোবাসতে হয়।

 খাওয়া দাওয়ার পর আবার বাগানে এলো অলকানন্দা।অগোচরে ফুটে ওঠা লাল গোলাপের আকর্ষণ তার মনকে উথালপাথাল করে দিচ্ছে, গোলাপটার দিকে তাকিয়ে বললো, 

“—কি দুষ্টু এতদিন পর আমার কাছে আসার সময় হলো!”

তার কথার জবাব দিল গোলাপটা,হাওয়ায় নিজেকে দুলিয়ে যেন অলকানন্দার সুরে সুর মেলালো।

ডাইনিং রুম থেকে তার স্মার্ট ফোনের রিং বেজে উঠলো। লাঞ্চের পর ফোনটা ডাইনিং টেবিলেই রেখে এসেছিল।এই পড়ন্ত দুপুরে কে আবার ফোন করলো! ভাবতে ভাবতে ডাইনিং হলে এসে মুঠোফোনটা হাতে নিল অলকানন্দা। 

জাহ্নবীর ফোন!সচরাচর সে ফোন করে না,মাঝে সাঝে মেসেজ পাঠিয়ে মায়ের খবর নেয়,ব্যাস দায়িত্ব শেষ।  

…..জাহ্নবী .... অনেক কষ্টে তাকে বড়ো করে তুলেছে অলকানন্দা। সে যখন মাত্র আট বছরের তখন তার বাবা সন্দীপন ছেড়ে চলে যায়। অলকানন্দা একাই মা এবং বাবার দায়িত্ব পালন করেছে।পড়াশোনায় জাহ্নবীর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ছিল,ছোট্ট থেকেই, সেদিক থেকে তার বাবার ধাত পেয়েছিল।সেই জাহ্নবী বড়ো হয়ে পি.এইচ. ডি. করতে গেল সুদূর বিদেশে, ক্যালিফোর্নিয়ায়।গবেষণা শেষ করে দেশে ফিরে অধ্যাপনা করবে এই ছিল জাহ্নবীর লক্ষ্য।কিন্তু সে দেশে আর ফিরে এলো না। তার গাইড স্যারকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেললো। স্যারের আন্ডারে গবেষণা করতে গিয়ে অনুভব করলো সে নাকি তার মধ্যবয়সী স্যারকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। সেই মার্কিন অধ্যাপক মার্কোস নাকি জাহ্নবীকে ভালোবাসার অর্থ বুঝিয়েছে,তার আগে জাহ্নবী ভালোবাসার প্রকৃত মানে বুঝতোই না!ফলস্বরূপ জাহ্নবীর চেয়ে বছর কুড়ি বড়ো মার্কোস আর প্রায় জাহ্নবীর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে এখন ভরপুর সংসারী।পুরো ব্যাপারটাই অলকানন্দার অজানা ছিল,বিয়ের পর জানিয়েছিল জাহ্নবী।দেশে ফিরে আসা অথবা মায়ের কাছে থাকা তার কাছে অবান্তর।

ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই ওপার থেকে জাহ্নবী বললো, 

“—হ্যাপি অ্যানিভার্সারি মা ।“ 


 হ্যাপি !! যে মানুষ,জাহ্নবীর বাবা প্রায় তিরিশ বছর আগে অলকানন্দাকে ধোঁকা দিয়ে তারই এক কলিগকে নিয়ে সুখের ঘর বেঁধেছিল। অলকানন্দার সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীনই ডাক্তার সন্দীপন চ্যাটার্জি অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিল,অলকানন্দা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। 

সেদিনটা ছিল তাদের দশ বছরের বিবাহবার্ষিকী,সন্দীপন ঘুম থেকে উঠে একটা প্লাটিনামে হীরে বসানো আংটি গিফ্ট করেছিল অলকানন্দাকে।বলেছিল তার চেম্বার থেকে ফিরতে দেরী হবে,অলকানন্দা যেন তার জন্য ওয়েট না করে। একটু বেশী রাত হয়ে যাওয়ায়,উৎকন্ঠায় অলকানন্দা ছুটে গিয়েছিল সন্দীপনের চেম্বারে।গিয়ে যা দেখে তাতে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। চেম্বারের ঠিক পাশের ঘরে সন্দীপন তার সঙ্গীনীর সঙ্গে ….।”

গোটা শরীর ঘৃণায় রি রি করে ওঠে। তার ভালোবাসার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা!পরে পরেই ডিভোর্স দিয়ে দেয় অলকানন্দা।সে এই কারণে সন্দীপনকে ঘৃণা করেনি যে,তাকে ছেড়ে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত ছিল, এই কারণে যে তার বিশ্বাস ও ভালোবাসার সঙ্গে প্রতারণা করেছিল।জীবনে এক নারীকে নিয়েই যে সন্তুষ্ট থাকতে হবে এমন কোনো মানে নেই। কিন্তু অলকানন্দার অগোচরে বেড়ে ওঠা সন্দীপনের এই অবৈধ সম্পর্ক মন থেকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে বেদনাদায়ক ছিল।

“—কেমন আছো সোনা?“ দীর্ঘক্ষণ নীরব থেকে অলকানন্দা বললো।

“—ভালো আছি মা,তোমাকে ফোন করে উঠতে পারি না,জানোই তো খুব ব্যস্ত থাকি,তাছাড়া আমার যখন সময় হয়,তোমাদের তখন মাঝ রাত। আজ তোমার আর বাপির অ্যানিভার্সারি তাই …।”

“—হ্যাঁ ঠিক বলেছো,তোমার আমার টাইম ম্যাচ করে না,আজ আমার কাছে বিশেষ দিন,আমাদের বিয়েটা আজকের দিনেই হয়েছিল কিনা,যদিও আজকের দিনেই চরম আঘাতটাও পেয়েছিলাম।যাকগে তোমরা কেমন আছো?”

“—ভীষণ ভালো,মার্কোস আমাকে চোখে হারায়, এখন দুজনে মিলেই গবেষণার কাজ করছি। আর বাচ্চারা আমার বন্ধু।”

“—তুমি ভালো আছো,এর চেয়ে আমার আর কি চাওয়ার থাকতে পারে।“

ফোন রেখে দিয়ে অলকানন্দা খুশী মনে স্বগতোক্তি করলো, 

“—নাই বা আসতে পারলো আমার কাছে,জাহ্নবী তার মনের মানুষের কাছে সুখে আছে, আনন্দে আছে এই ঢের। অলকানন্দা এর চেয়ে বেশি কিছু চায় না, তবে তাদের সম্পর্কের বিষয় অলকানন্দার কাছে গোপন রেখেছিল কেন আজও তার কাছে বোধগম্য নয়।


কলিং বেলটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমটা ভেঙে গেল অলকানন্দার,কখন বসে বসেই সোফায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল বুঝতে পারে নি।ধড়মড়িয়ে উঠে সদর দরজা খুলে দেখলো এক ক্যুরিয়ার বয়! 


পার্সেলটা খুলতেই ভারী অবাক হয়ে গেল, সন্দীপন পাঠিয়েছে….!আর ভেতরে একটা চিরকুট, তাতে লেখা …”নন্দা ক্ষমা কোরো, আমার পাঠানো উপহার গ্রহণ কোরো,প্লিজ প্লিজ।”

বসার ঘরে এসে আবার সোফায় বসলো অলকানন্দা, ঘুমটা সবে ধরেছিল,ভেঙে যাওয়ার কারণে আলসেমি ভাবটা ছিল।আনমনে প্যাকেটটা নাড়াচাড়া করছিল, কি আছে এখানে!এতোদিন পর কেনই বা সন্দীপন কিছু পাঠালো! এই কথা ভাবতে ভাবতে সৈকতের মুখটা ভেসে উঠলো অলকানন্দার। আজ সকাল থেকেই তার কথাটা কেবলই মনে চলে আসছে, …..সৈকত, একটা উথালপাথাল করা নাম অলকানন্দার জীবনে, তার কথা মনে এলে এক অনির্বচনীয় আনন্দে হৃদয় পূর্ণ হয়ে যায়, এই বয়সেও শরীরে শিহরণ জাগে।

খুব মনে পড়ছে,অলকানন্দা তখন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই , তাদের প্রতিষ্ঠানে জয়েন করেছিল বছর পঁয়ত্রিশের সৈকত। উদ্যমী টগবগে যুবক, সারাক্ষণই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। সেই সুবাদে অলকানন্দার সঙ্গে প্রচুর মিল।

একদিন লক্ষ্য করলো সৈকত অপলক দৃষ্টিতে অলকানন্দার দিকে চেয়ে রয়েছে! বারবার ঐ একই বিষয় তার নজরে পড়ছিল! অলকানন্দাও সৈকতের দৃষ্টিকে বোঝবার চেষ্টা করতে থাকলো,তারপর কখন যে অগোচরে সৈকতের মুগ্ধ দুই চোখের দৃষ্টিতে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছিল টেরই পায়নি ।


কিন্তু অলকানন্দার মনে হতো ,এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। তবুও হয়ে যায়,মনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সৈকতের উপস্থিতি অলকানন্দার মনকে আনন্দ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো।তার নিস্তরঙ্গ জীবনে সৈকত যেন পালতোলা নৌকা,সেই পাল তোলা নৌকায় করে মন ভেসে যেতে চায় দূরে,বহুদূরে।

“--আচ্ছা সৈকতেরও কি ঐরকম কিছু উপলব্ধি হয়!” নিজেকেই প্রশ্নগুলো করে।

 একদিন বর্ষার সন্ধ্যায় কাঁপিয়ে জ্বর এলো অলকানন্দার,বাড়ী ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল সেইজন্য বোধহয়।পরিণাম ক দিন তাকে প্রতিষ্ঠানে ছুটি নিতে হলো।দু দিন হয়ে গেলে সৈকত তাকে ফোন করে বলেছিল,

“—ম্যাডাম,আসছেন না কেন!”


আরেকবার এক অনভিপ্রেত কারণে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল অলকানন্দা,তার মনে হয়েছিল তার পাশে কেউ নেই। সেই সময় সৈকত সবার অলক্ষ্যে অলকানন্দার হাতে হাত রেখে বলেছিল,

“—আমি আছি তো।”

  বেশ কয়েক বছর পর সৈকত অনেক দূরে একটি শহরে চলে যায়,আস্তে আস্তে কালের নিয়মে উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ থাকে না।


সন্ধ্যা বেলায় চা নিয়ে বসতেই আবার কলিং বেল বেজে উঠল।এই সময় কে এল!অলকানন্দা দরজা খুলতেই বিস্মিত হয়ে গেল,সৈকত! 

“—আপনি!”

“—কেন আসতে নেই ম্যাডাম!!”

“—তা কেন, আসুন আসুন।”

কিছুক্ষণ পর দুজনের চা খাওয়া শেষ হলে সৈকত তার হাতের প্যাকেটটা খুলে একটা কাশ্মীরী শাল আস্তে আস্তে অলকানন্দার গায়ে জড়িয়ে দিল,শালটা দেখতে অনেকটা আগেরটার মতো!তাহলে অলকানন্দা সকালে ঠিকই দেখেছিল! 

কি জানি কি মনে হতে,অলকানন্দা তার দু হাত দিয়ে সৈকতের দুই গাল স্পর্শ করে বললো, 

“—কি দুষ্টু,এতদিন পর আমার কথা মনে পড়লো!”

মৃদু হেসে সৈকত বললো, 

“— আপনার কাছে অনেকবার আসতে চেষ্টা করেছি কিন্তু বাধ্যবাধকতার কারণে আসতে পারি নি, আজ সকালে আপনাকে দেখলাম,আপনি আগের মতোই আছেন,সেরকমই অপরূপা,যাঁর দুই চোখের অতলান্ত গভীরতা আমার হৃদয়কে উথালপাথাল করে দেয়। অগোচরে গড়ে ওঠা সম্পর্কের টানে এতদিন পর হলেও আমি এসেছি আপনার সঙ্গে দেখা করতে। এটাই হয়তো আমার আসার উপযুক্ত সময়।”

এক অপার প্রাপ্তিতে অলকানন্দার সারা হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠলো।


কত বছর পর এত সুখী হলো অলকানন্দা! আর কোনো দুঃখ নেই, নেই কোনোও ক্ষোভ।যদিও অনেক আগে থেকেই এই ক্ষতগুলোকে মন থেকে মুছে দিয়েছিল।তবুও আজ যেন ঈশ্বর দরাজ হস্তে অলকানন্দাকে খুশী দান করেছেন।সন্দীপনের পাঠানো পার্সেলে যে উপহার গুলি ছিল,তা ফেরত দিতে চাইলেও পারবে না।ছিল স্কুলের রি-ইউনিয়নে ব্যাচের বন্ধুদের সঙ্গে তোলা তাদের দুজনের একটি ছবি এবং অলকানন্দাকে লেখা সন্দীপনের প্রথম চিঠি।


অনেক ডাকাডাকি, অনেক চেষ্টার পর দরজা ভেঙ্গে অলকানন্দার প্রতিবেশীরা এবং কাজের মেয়ে দেখলো অলকানন্দা তার বিছানায় কাশ্মীরী শাল ঢাকা নিয়ে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে,বুকের কাছে দুই হাত দিয়ে ধরে রয়েছে একটি বাঁধানো ফোটোগ্রাফ আর একটি পুরানো চিঠি।

                    

                     -

পুনঃ মূষিক ভবঃ - পার্থ প্রতিম দাস || Puno musiko vobho - Partho protima das || অনুগল্প || short story

     পুনঃ মূষিক ভবঃ

                      পার্থ প্রতিম দাস 


 এস এস সি পরীক্ষার মাধ্যমে সন্দীপ ক্লার্কের চাকরী পায় আসানসোলে। খবরটা পেতেই সন্দীপের মা বাবা ভীষন খুশি হয়। গ্রামের বাড়ি বাড়ি মিস্টি দিয়ে আসে। সন্দীপের মা বাবা পরিকল্পনা করতে থাকে, কি ভাবে ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিবে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। 

     গ্রীষ্মের এক ভোরে সন্দীপের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য সন্দীপের মা বাবা তৈরী হচ্ছে। এমন সময় ফোন আসে। সন্দীপের বন্ধু কল করেছে। সন্দীপের বাবা কলটা রিসিভ করলো। সন্দীপের বন্ধু বলল, "হ্যালো কাকাবাবু, সন্দীপ এই মাত্র মন্দিরে বিয়ে করেছে।"

     কথাটা শুনে সন্দীপের বাবা তাড়াতাড়ি সন্দীপের মাকে ফোনটা দিয়ে বলল, "দেখো দেখো, খোকার কান্ড দেখো।"

    সন্দীপের মা ফোনটা ধরে আর সন্দীপের বাবা লোক লজ্জার কথা মনে করে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। সন্দীপের মা বলল, "হ্যালো, সন্দীপকে ফোনটা দে।"সন্দীপ ফোনটা ধরে মায়ের কথা না শুনে, অনেক কথা বলে গেল, "তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমরা তোমাদের ঘাড়ে বসে খেতে যাচ্ছি না। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে মন না চাইলে যোগাযোগ রাখতে হবে না।"

    সন্দীপ তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে দেয়। সন্দীপের মা হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠলো। জলভরা কন্ঠে বলতে থাকে, "ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করে যদি এই প্রতিফল পেতে হয়, তাহলে এমন ছেলেকে আমি কখনো পেটে ধরতাম না।"সন্দীপের বাবা নীরব হয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। 

    তারপর থেকে সন্দীপ তার মা বাবার খোঁজ নিতে আসে না। এক কানাকড়ি টাকাও দেয় না। করোনায় সন্দীপের বাবা ভীষন অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়। তখনো সন্দীপ খবর পেয়ে ও একবারের জন্য তার বাবাকে দেখতে আসেনি। 

     হঠাৎ SSC পরীক্ষার পুরো প্যানেল বাতিল করলো কোলকাতা হাইকোর্ট। তাতে সবার সাথে সন্দীপের চাকরী চলে গেল। 

     রাতে ভীষন গরমে সন্দীপের বাবা ঘুমাতে পারেনি। তাই ভোর ভোর দর্জা খুলে রাস্তার দিকে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। দেখে গেটের সামনে সন্দীপ আর তার বউ। সন্দীপের কোলে সন্দীপের একটা পুঁচকে ছেলে। আর পাশে দুটো বড় বড় সুটকেস। 


তেনারা তখনও ছিলেন - তপন তরফদার || Tenara tokhono chilen - Tapan Tarapdar || গল্প || Story || shorts story || ছোট গল্প

 তেনারা তখনও ছিলেন

              তপন তরফদার



অনেকেরই মনে হতে পারে হ্যাল্যুশন পার্টি সবে শুরু হয়েছে যাকে আধুনিক সভ্যতার ফল বলে মনে করেন। বিশেষ করে ম্যাককামি ম্যানর যিনি ভয়ের বাড়ি তৈরি করে ইদানিং বিখ্যাত হয়েছেন। ওই ভয়ের বাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো বাড়ির রন্ধে রন্ধে ভয় পাওয়নোর ব্যবস্থা করা আছে। মনে রাখতে হবে ওই বাড়িতে ঢুকতে গেলে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিতে হবে, প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সবদিক থেকে সুস্থ। এই বাড়িটা আমেরিকার টেনিসোতে। পৃথিবীর এখন হব থেকে ভয়ংকর ভয়ের বাড়ি বা ভুতুড়ে বাড়ি। তবে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় “তেনারা তখনও ছিলেন “।


        মানুষ ভয় পেলেও ওই পুরোনো আমল থেকেই ভুতের গল্পগুজব বলে, শোনে। মানুষ অভ্যাসের দাস এটা পুরানো কথা। এই যুগে আমরা ভাবতেই পারিনা বেশ কিছু মানুষ একজনের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ গোল গোল করে কান খাড়া করে ঘন্টার পর ঘন্টা শুনে যেত যা এখন বিস্ময়কর, অবিশ্বাস্য। বেশ কিছুকাল আগের কথা তখনকার দিনে গ্রামের বয়স্ক মাতব্বররা চন্ডীমন্ডপে গল্পের আসর বসাতো। সেই সময়ে আনন্দে অবসর কাটাবার সহজ সরল খরচা বিহীন মজলিস এই গল্পকথনের আসর। প্রায় সবাই ভিড় ক'রে উৎসুক হয়ে গল্প শুনতো। এই আসরে মাতব্বরি বজায় রাখতে মাতব্বররা ঘরে তৈরি বিভিন্ন পদের উপাদেয় খাবার। যেমন-চিচুয়া, ধূপি, ক্ষীর, পাকান, চাপড়া ইত্যাদি। তাল থেকে বড়া, ,তালরুটি ইত্যাদি বিতরণ করতো।


           সেদিনটা ছিল লক্ষ্মী পুজোর পরের দিন। আকাশের চাঁদ একেবারেই রুপোর থালার মতো। চাঁদের জ্যোৎস্না, চারিদিকে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছে। আজকে গল্প বলতে পাশের ফুলিয়া গ্রাম থেকে একজন আসবে। সে নাকি খুব ভালো গল্প বলে সবাইকে বুঁদ করে রাখে। খবরটা গ্রামে চাওড় হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামে একটা হইচই পড়ে যায়। সন্ধ্যা সবে হয়েছে লোকজন আসতে শুরু করেছে। সব থেকে বড় বিস্ময়কর ব্যপার বড়দের হাত ধ'রে কয়েকজন কিশোর ছেলেরাও এসেছে। সবার বসার জায়গা করা হয়েছে। মোড়ল সাহেব নিজে তদারকি করছেন। আজকের বিশেষ অনুষ্ঠানে সবাই যাতে মোড়লের নজরে আসে মড়োলগিরি বজায় রাখতে নিজেই মুড়ির সাথে তালশাঁস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। চন্ডীমন্ডপটা একবার ঘুরে দেখে গেলেন, সব ঠিকঠাক আছে । এই বিশেষ অনুষ্ঠানে এই গ্রামের দুজন ও গল্প বলবে। যার ফলে সবাই ধরে নিয়েছে বকলমে এটি একটি প্রতিযোগিতা হবে। যার জন্য এত আয়োজন সেই আসেনি। দর্শকদের মধ্যে একটা ফিস ফিসানি ও বেটা ভয় পেয়ে আসেনি। মোড়ল বেশ বিনীত গলায় বললেন, ফুলিয়া গ্রামের পাঁচকড়ি পায়ড়া আসলেই শুরু হবে আজকের আসর।

        অবশেষে উপস্থিত হল পাঁচকড়ি। মাথায় জটা, শনের মতো দাড়ি গোপ মেয়েদের চুলের বিনুনির মতো কায়দা করে বিনুনী করা একজন লোক। বয়স আনুমানিক কত হবে বোঝা যাচ্ছে না। লম্বাটে গড়ন। ওকে দেখেই সকলের মনে একটা অন্যরকম অনুভূতি হল। সবাই ব্যাকুল হয়ে পড়লো তাঁর মুখ থেকে গল্প শোনার জন্য। কিন্তু এখনই নয়। কারণ আজকের আসরের কেন্দ্রবিন্দু ওই পাঁচকড়ি পায়ড়া ওর গল্প আগে হয়ে গেলে আসরটা আর জমবে না। সবাই তাই এখানকার লোকেরাই প্রথমে গল্প বলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ফিসফাস শুরু হল। তারপর কথা বলাবলি।

শ্রোতাদের গল্পমুখী করতেই পারলেন না। গল্প শেষ করার আগেই তাঁকে আসর গোটাতে হলো।


             পরের জনের জন্য মোড়ল অনেক ভালো ভালো কথা বলে এর গল্প শুনতে বলল। গ্রামের দ্বিতীয় জন শুরু করলেন গল্প। এবার মানুষ হইচই করছে না। গল্প বলিয়ে ভাবলেন মানুষ মনযোগ সহকারে শুনছে। কিন্তু না। এই গল্প আসলে ও আগেই এখানেই বলেছে। রাতও একটু হয়েছে। এক এক করে শ্রোতারা ঘুমিয়ে পড়ছিল। তাই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল আসরে। মোড়ল ব্যাপার টা বুঝতে পেরে গল্প বলিয়ের হাত চেপে ধ'রে ঈশারায় বন্ধ করার ইঙ্গিত দিলেন। মোড়লের ইশারা না মানলে পড়ে বিপদে পড়তে হবে বুঝেই ও তাড়াহুড়ো ক'রে,”আমার গল্প ফুড়ালো, নটে গাছটি মুড়ালো” বলে শেষ করল।


 


মোড়ল এবার পাঁচকড়ি পয়ড়াকে সাবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে বললেন, আমার গ্রামের বসবাসকারিগন, আপনারা মন দিয়ে উনার গল্প শুনে যেন আমাদের গ্রামের সুনাম বজায় রাখবেন সবাই।


           পাঁচকড়ি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের গল্পগুজব করে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে ও বুঝে গেছে কিভাবে শুরু করতে হয়। কিভাবে কি কথা বললে লোকের আগ্রহ হবে তা রপ্ত করেছে। এখন ভয়পাওয়নার গল্প অর্থাৎ ভূত বা অশরীর গল্প সবাই শুনতে চায়।


    জটায় হাত বুলিয়ে ঝুলন্ত শনের দড়ির মতো দাড়িগুলোতে বিনুনীর মতো পাকাতে পাকাতে বলল,,' আপনারা কি জানন, আপনাদের গ্রামের আদি কথা? মোড়োল মশাই আপনি জানেন। মোড়ল ঘাবড়ে যায়। কি বললে ভালো হয় ভেবে পায়না। পাঁচকড়ি নিজেই বলে আমার দাদুর দাদুর নাম ছিল এককড়ি, তার ছেলের নাম দুকড়ি এই ভাবে কড়ি বাড়তে বাড়তে আমি পাঁচকড়ি । আমাদের প্রথম পুরুষ এককড়ি এই অঞ্চলের অনেক গ্রামের জন্মগত নাড়ি নক্ষত্র জানতেন। এই ইতিহাস আমারই বংশপরস্পরায় জানি এবং সবাইকে জানাতে চাই। সবাই মন দিয়ে শুনুন।একটা কথা, যারা ঘুমোতে চান দয়া করে বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। যারা ভয় পান তারা এই গল্প না শুনে বাড়ি চলে যান। মোক্ষম এই কথা শুনে যারা ঢুলুঢুলু করছিল তারা চোখে একটু ভাপ দিয়ে সজাগ হয়ে বসলো। আর সকলের সামনে ভীতু কেউই হতে চায়না তাই সবাই বসেই থাকলো গল্প শোনার জন্য।


            পাঁচকড়ি গলার স্বরটা জোরালো করে বলতে শুরু করলো, -এই গ্রামে একটি মাত্র পাড়া ছিল। বাকি সব রাস্তার দু-ধারে বন জঙ্গল। দিন দুপুরে খেঁকশিয়াল, হায়না চ'রে বেড়াত। সুযোগ পেলেই গরুর বাচ্চা, ছাগল মুরগি খেয়ে ফেলত। রাত্রি বেলায় বাড়ত দৌরাত্ম্য। মা'য়ের কোল থেকে শিশুকেও ছিনিয়ে নিত। গ্রামের মাঝখানে যেখানে এখন স্কুল , ওইখানেই পাশাপাশি ছিল দুটি গাছ। একটা আশ্যওড়া আর একটা বেলগাছ। দুটো গাছই চোখে পড়ার মতো। আশেপাশে বাড়ি ঘর তেমন ছিল না। তার কিছুটা দুরে সদ্য দু-একটি চালাঘর সবে গজিয়ে উঠেছে।। চালাঘরের লোকেরা দেখেছে আশওড়া গাছে পেত্নী আর বেলগাছে ব্রম্ভদত্যি বাস করতো। পেত্নি ভাব করতে চাইলেও ব্রহ্মদৈত্য বলতো বেজাতের মেয়ের সঙ্গে কখনোই ঘর বাঁধবোনা। পেত্নি মনের দুঃখে ওই বেলগাছের ডালেই গলায় দড়ি দিয়ে আবার মরে ছিল। আশেপাশের লোকেরা লাশটি দেখেছিল।


             শ্রোতাদের গা শিউরে উঠল। কথা বন্ধ সবার। কেউ কেউ তো দরদর করে ঘামছিল। ভয় পেয়েছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা। সবাই ভীতু বলবে হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেছে তাও কেওই নড়াচড়া করছেনা। 

      

         পাঁচকড়ি বুঝে গেল তার কথা লোকে গিলছে এবার ফিসফিস স্বরে ভৌতিক গলায় বলতে লাগলো একটা ঘটনা বলি যেটা আপনারা মনে রাখবেন। 

Mitra, Where are you? - Bhaskar Sinha || English Story || English short story

 Mitra, Where are you?

        Bhaskar Sinha



I never thought I'd fall in love again. Most say that after a heartbreak, but I wasn't heartbroken, cynical, or even sad. I was simply someone who had once felt a love so profound that when I lost it, I believed it was irreplaceable. But life is long, and now, at 22, I feel stirrings of something deep and unfamiliar.


I've always been level-headed, nearly acing my courses, presentable in appearance, serious about my life and career. My friends joked about puppy love, but how could I ignore her charm? Her grace, her cheer, the lively conversations held through her expressive eyes captivated me since childhood. Her presence was fluid, her aura luminous—she was my dream girl, my goddess, the star that lit up my youthful sky. The twinkle in her eyes mesmerized me; her smile left me speechless, hypnotized as if by a magician’s spell.


Reflecting on it all, it seemed as though a higher power had effortlessly assembled the pieces of our story. With my eyes closed, memories would play: there I was, on a balcony in the summer air, drawn irresistibly to her.


Our college days felt predestined—after classes, we were pulled together as if by a magnetic coil activated. Our relationship was more than platonic; it was a mingling of mind and body, pure and profound. She adored my poetry and songs, and I, her eloquent speeches. Hours would pass as I absorbed her words, each one a pearl. She was also an exceptional painter, and I, her willing muse, began my photography using her as my model.


Life in her parents’ outbuilding stood still; only love seemed permanent, all else secondary. She was madly in love with me. On a stormy day, a dry leaf blew into the bedroom before the windows shut. She picked it up and wrote that the impending rain beckoned us to the forest. There, amid Lord Shiva and Goddess Parvati adorned with forest flowers, the fragrance of wet earth and the slick forest floor beneath us, we were wild, the world around us fading away. All that existed were we, like Adam and Eve, seeking unity. I whispered,


"For God’s sake, hold your tongue, and let me love…"


Then came that eventful night, her cousin unexpectedly staying in the boys’ hostel guest room, igniting a night of turmoil—fire and butter, as my mother would say. The aftermath saw me in a fervent rush to explain, to make sense of the chaos. But despite efforts to sever ties, love found a way back, and all past messages, those fragmented letters and poems, drifted away on the low tides of Kalisayar Lake.


The day I proposed wasn't poetic but raw and real, by a canal as the waters rushed to the sea. Her response was cautious, yet her determination to seek her mother’s counsel echoed my own resolve to not let her go unanswered. I'll never forget our first meaningful, passionate kiss—it was breathtaking.


Yet, running a family required more than passion; compromise was key. As expectations mounted, so did our egos, clashing until I saw my teary-eyed mother and knew something had to give. Then, as Tito arrived and we adopted Riya, the impacts of our struggles on young minds became apparent. Eventually, the realization dawned that we couldn't continue under one roof.


Enter Mitra, like a gentle rain after a harsh summer. Her presence revived my spirit; I began singing again, my life filled with music, drama, and performances. She whispered,


"See you make your way through the crowd and say hello... Little did I know that you are Romeo."


Love, I've learned, isn't planned. It's destiny, perhaps. Mitra had her past struggles—Anrytyo, a constant torment in her life. Yet, when he learned of us, his malice peaked. I encouraged her to break free, and together, we began anew. She not only reignited my creative passions but helped stitch together a sweet home from what remained.


Divorce, however, is messy, especially in India. The courts, the media—it's overwhelming. Yet, through mutual understanding and endless legal meetings, we finalized it. I returned, elated, ready for our future.


But when I arrived, no one was home. Raka, Jan, Mitra—all were gone, unreachable. No trace of them remains, and I am still searching... W

here are you, Mitra?



রাজ্যে নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ || WB ICDS Supervisor Recruitment 2024 || সুপারভাইজার ও হেলপার নতুন নিয়োগ






রাজ্যে নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ || WB ICDS Supervisor Recruitment 2024 || সুপারভাইজার ও হেলপার নতুন নিয়োগ 


রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক icds তথা অঙ্গনওয়াড়ি পদে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। সুপারভাইজার ও হেলপার পদে কর্মী নিয়োগ হবে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।




পদের নাম : ১) অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার ২) অঙ্গনওয়াড়ি হেল্পার



মোট শূন্যপদ – মোট ১৩ হাজার শূন্য পদ রয়েছে । যা নিয়োগ করা হবে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে ।


বয়স সীমা : এই পদে আবেদন কারী প্রার্থীদের অবশ্যই ১৮ থেকে ৪২ বছরের বয়সের মধ্যে হতে হবে। এছাড়াও SC,ST,OBC,PWD প্রার্থীরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছাড় পাবেন। 


যোগ্যতা : হেলপার পদের জন্য ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে থাকলেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন । সুপারভাইজার পদের জন্য স্বীকৃত কলেজ প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে।



বেতনক্রম : এখানে বিভিন্ন পদের জন্য বিভিন্ন বেতন রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেতনক্রম রয়েছে। 



আবেদন পদ্ধতি : ১) এখানে আবেদন করতে হলে সর্বপ্রথম চাকরি প্রার্থীদের সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। শুধুমাত্র অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে সর্বপ্রথম প্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট করে নিতে হবে। তারপর আবেদন করতে হবে।



নিয়োগ প্রক্রিয়া : প্রথমে হবে লিখিত পরীক্ষা। চাকরির প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন করে সরাসরি ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। এর পর মেরিট লিস্ট বের করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।




বিঃ দ্রঃ - এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি খুব শীঘ্রই সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ প্রকাশিত হবে।



অফিসিয়াল ওয়েবসাইট -


Click here 🔴

Sunday, June 30, 2024

রাজ্যের নতুন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ 2824 || Data Entry Operator Recruitment 2024 || WB Data entry Operator Recruitment 2024 || Data entry Operator Recruitment || Data entry Jobs 2024

 



রাজ্যের নতুন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ 2824 || Data Entry Operator Recruitment 2024 || WB Data entry Operator Recruitment 2024 || Data entry Operator Recruitment 


রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক পোস্ট অফিসে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। মাধ্যমিক পাস যোগ্যতায় পোস্ট অফিসে গ্রুপ সি পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।




নিয়োগকারী সংস্থা: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ জেলা লেভেলে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এর অধীনে এই নিয়োগটি হবে।


পদ – ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (DEO)


শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে কোনো স্বীকৃত স্কুল বোর্ড কিংবা সংস্থা থেকে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাশ,তবে এটি বিজ্ঞান শাখার ওপর।


সঙ্গে থাকতে হবে কম্পিউটার কাজের দক্ষতা এবং টাইপিং এর দক্ষতা ।



প্রার্থীর বয়সসীমা: আবেদনকারীর বয়স হতে হবে 18-28 বছরের মধ্যে।



মাসিক বেতন: এই পদে চাকরি প্রার্থীর শুরুতে মাসিক বেতন 18,000/- টাকা ।


নিয়োগ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা কিংবা টাইপ টেস্ট, একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, এক্সপেরিয়েন্স এবং ইন্টারভিউ ইত্যাদির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে।


আবেদন পদ্ধতি: শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নীচে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হল।


1. নীচে দেওয়া নোটিফিকেশন লিংক থেকে নিয়োগের আবেদনপত্র অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন ফরম্যাট সংগ্রহ করুন। ওখানে আরো ও বিস্তৃত আলোচনা করা আছে।


2. নিজের সম্পূর্ণ ডিটেইলস তথা নাম, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল, , বয়স, জেন্ডার, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে সম্পূর্ণ ফর্মটি পূরণ করুন।


3. পাসপোর্ট সাইজের একটি রঙিন ফটো যোগ করুন এবং ফর্মের নিচে ডানদিকে নিজের সিগনেচার করবেন।


4. ফর্মের সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট এর জেরক্স এবং সেই ডকুমেন্টস গুলোতে অবশ্যই সেল্ফ আটেস্টেট করে দেবে।


5. আবেদন পত্র সহ এই ডকুমেন্টস গুলো একসাথে যুক্ত করে একটি খামের ভেতর ভরে তা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে পোস্ট অফিস বা কুরিয়ার করে। আপনি নিজে গিয়েও জমা করে আসতে পারেন।



আবেদনের সময়সীমা: প্রতিটা চাকরি প্রার্থী আগামী 05/07/2024 তারিখের পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পারবেন। অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আপনার আবেদন পত্র নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছাতে হবে। তাই বন্ধুরা দেরি না করে আজই আবেদন করে ফেলুন।



ইন্টারভিউ তারিখ : আগামী 10/07/2024 তারিখে অর্থাৎ আগামী জুন মাসের 10 তারিখে বুধবার বেলা 11 টাই ইন্টারভিউ শুরু হবে। তাই বন্ধুরা সবাই প্রস্তুত হয়ে নাও। খুব তাড়াতাড়ি এই নিয়োগ টি সম্পন্ন হবে।



নোটিফিকেশন লিংক -

Download notification



Official website -


Click here 🔴


Friday, June 28, 2024

পোস্ট অফিসে মাধ্যমিক পাশে নতুন কর্মী নিয়োগ || Post Office Recruitment 2024 || Post Office Group C Recruitment 2024 ||। Gds Requirements 2024 || গ্রামীণ ডাক সেবক নিয়োগ ২০২৪


 


পোস্ট অফিসে মাধ্যমিক পাশে নতুন কর্মী নিয়োগ || Post Office Recruitment 2024 || Post Office Group C Recruitment 2024 



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক পোস্ট অফিসে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। মাধ্যমিক পাস যোগ্যতায় পোস্ট অফিসে গ্রুপ সি পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।


পদের নাম : নতুন স্টাফ এবং গাড়ি চালক তথা ড্রাইভার (অর্ডিনারি গ্রেড) সহ বিভিন্ন পদে কর্মী নেওয়া হবে। 



বয়স সীমা : আগ্রহী আবেদন কারীর বয়স হবে সর্বোচ্চ ৫৬ বছরের মধ্যে । তবেই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।



বেতন : বিভিন্ন পদে বিভিন্ন রকম বেতন উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পোস্ট অফিসে সরকারি সুযোগ-সুবিধা মত প্রতি মাসে বেতন প্রদান করা হবে। 



শিক্ষাগত যোগ্যতা : ন্যূনতম মাধ্যমিক পাশ যোগ্যতা থাকলেই ড্রাইভার পদে আবেদন করার সুযোগ পাবেন তবে এর পাশাপাশি প্রার্থীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।


আবেদন পদ্ধতি : সম্পূর্ণ অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নীচে দেওয়া নোটিফিকেশন লিংক থেকে সর্বপ্রথম বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করে নেবেন । ঐ বিজ্ঞপ্তি নিচে আবেদন পত্রটি রয়েছে। আবেদন পত্রটি সঠিকভাবে ফিলাপ করে তার সঙ্গে যাবতীয় ডকুমেন্টস কে যুক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্দিষ্ট ঠিকানায় মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।


আবেদনের শেষ তারিখ – আগামী ৩১ শে জুলাই ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ।


বিঃ দ্রঃ - নিয়োগ পদ্ধতি ও অন্যান্য বিবরণ নোটিশে পেয়ে যাবেন।



নোটিফিকেশন লিংক - 


Download Notification

Wednesday, June 26, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৯ || part - 9 || Era Kara part 9 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 



হঠাৎ পশ্চিম পাড়ার পানু ঠাকুর দৌড়ে গৌরবাবুর বারান্দায় এসে শ্বাস নিতে শুরু করলেন। বললেন, পালিয়ে চলো মাষ্টার পালিয়ে চলো। মাষ্টার মশায় থতমত খেয়ে বলে উঠলেন- একি বলছো পানু? কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে পালিয়ে যেতে বলছো?


কোন কথা বলার সময় নেই। ছোট ভাই, বৌমাকে কিছু বলার পূর্বে বাড়ী হতে পঞ্চাশ হাত দুরে পরপর তিনটি বোমার বিকট আওয়াজ। গৌরবাবু ছাত্র/ছাত্রীদের পাশের ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ীর উঠানে পর পর চার/পাঁচটি বোমার আওয়াজ। গৌরবাবু, কিশোরী লাল বলে ডাক দিতেই পানু ঠাকুর গৌরবাবুর মুখখানি দাবা দিয়ে বললেন- পালিয়ে চলো মাষ্টার আর উপায় নেই। মাষ্টার মশায় কে টেনে হিঁচড়ে রাতের অন্ধকারে বনজংগল ভেদ করে দূর্গম রাস্তা অতিক্রম করে কোন এক ষ্টেশনে বিশ্রাম নিয়ে রাত্রেই ট্রেনে চড়ে প্রায় ৫৫০/৫৬০ কিলোমিটার দুরে একটা ছোট্ট গ্রামে উপস্থিত হলো। গৌর বাবুর মনে সেই চিন্তা ছোট ভাই, বৌমা কেমন আছে, ওরা কি বেঁচে আছে! বার বার মনকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পাচ্ছে না। কে দেবে উত্তর। কেন এমন হলো, সরাসরি কাকেই বা জিজ্ঞেস করবেন। পানুঠাকুর ওর অস্থিরতা দেখে বললেন- এই যুদ্ধ থামবেন না মাষ্টার। এই যুদ্ধ বেড়েই চলবে। হিন্দু মুসলিমের লড়াই। কিছু হিন্দু ওদেরকে উসকানী দিয়ে হিন্দুদের মধ্যে কিছু লোক নিজেদের আখের গুছোনোর জন্য এই লড়াই লাগিয়েছে। হিন্দুদের মধ্যে মীর জাফর তো কম নেই? এই যুদ্ধ লেগেই থাকবে। গৌর বাবুর মনে শান্তি নেই। ছোট ভাই বৌমা তবে কি বোমার আঘাতে মারা পড়লো! গৌরবাবুর চোখ দুটো ছল্ ছল্ করে উঠলো। পানুঠাকুর গৌরবাবুকে বুঝিয়ে বললেন- এছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর ছিলো না। মৃত্যু ছাড়া কোন পথ ছিলো না। এর পরে বীভৎস রূপ নেবে। হাজার হাজার মানুষ মারা পড়বে। এ পরিকল্পিত সন্ত্রাস। গৌরবাবু অনেক পরে শান্ত হলেন। চিরদিনের মত তাদেরকে পরিত্যাগ করতে হলো। ক্ষানিক পর বললেন, কিশোরীলাল আমার ছোট ভাই। ললিতা আমার ছোট ভাই এর বৌ। আমি ভেবেছিলাম ওরা আমার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। এসো বাবা আমার কাছে এসো। স্বরুপকে বুকে জড়িয়ে ধরে টপ্স্টপ্ করে চোখের জল ফেলতে থাকলেন। তার বংশের শেষ প্রদীপকে আঁকড়ে ধরে ঈশ্বরকে সহস্রাধিক ধনবাদ দিলেন। ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বললেন হে ঈশ্বর তুমি আছো। যথা সময়ে মানুষের জমে থাকা বেদনা যন্ত্রনা মালিন করে দাও। কনিকা এ তোর দাদা। স্বরুপবাবুর পাশা খেলা উলটে গেলেও তার জেঠু মনিকে কাছে পেয়ে কম আনন্দিত হলেন না। ঈশ্বর মানুষকে কখন কি ভাবে মিলন করে দেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। আপন জেঠু মনিকে ফিরে পাবে কখনো কি ভাবতে পেরেছিলো! কিশোরীলাল বাবু তার জেঠুমনির জন্য গোপনে কাঁদতেন। জেঠুমনির জন্য তাঁর হৃদয়কে কতখানি যে ক্ষত বিক্ষত করেছিলেন স্বরুপ তা জানতেন। অনেক দিন ঐ শোকে স্তব্ধ হয়েছিলেন। ভালো ভাবে কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে ঘুমের অবস্থায় দাদা বলে চিৎকার করে উঠতেন। স্বরুপের মা তার বাবাকে বার বার বলেছেন দাদা নিশ্চয় বেঁচে আছেন। কিন্তু কিশোরী বাবু তা বিশ্বাস করতেন না। গৌরবাবু ছিলেন কিশোরী বাবুর প্রান। ভাতৃ বিচ্ছেদে কতখানি যে আঘাত পেয়েছেন তা গৌরীবাবু এবং কিশোরীবাবু উভয়েই সহ্য করতে পারেন নি। সেই জন্যই কিশোরীবাবু কম বয়সে মারা গেছেন। গৌরবাবু বললেন স্বরুপকে তোমার মা কেমন আছেন? স্বরুপ বাবু বললেন মা ভালো আছেন। একদিন মাকে নিয়ে আসবো। আপনার খবর পেয়ে মা কতখানি যে খুশি হবেন তা ঈশ্বর জানেন। গৌরবাবু অন্য প্রসঙ্গ তুললেন না। স্বরুপ বাবু তখনকার মতো বিদায় নিলেন।


_____________________________________


পর্ব ১০ পড়তে -

Click here 🔴



পর্ব ৮ পড়তে -

click here 🔴

Monday, June 3, 2024

May Sonkha 2024 || মে সংখ্যা ২০২৪






 প্রাচীন কালের সাক্ষ্য বহন করে চলা মাতৃভাষার শ্রমিকের নির্মিত সৃষ্টিকার্যের কাছে আজও অনেক নব শ্রমিক অর্বাচীন। যে ভাষা মানুষকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শেখায়, প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে শেখায় সেই ভাষা দিয়ে শব্দচয়ন করা উচিৎ - এটা সমাজের স্বার্থে খুব মূল্যবান সিদ্ধান্ত। আসলে সত্যের প্রকাশ সমাজের কালো অন্ধকারকে সব সময় দূর করে। এই সিদ্ধান্ত গুলো মেনে চলে সাহিত্য ও সত্যের আঁধারে চলবে। এটা আসল ধর্ম। এটা বাস্তবতা।


সৃষ্টিকর্তা যে জ্ঞান আপনাকে প্রদান করেছে তা আপনাকে সত্যের পথে ছড়িয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আপনার জ্ঞানের মহিমা নষ্ট হবে। সাহিত্যকে ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করুন। সাহিত্য আপনাকে দ্বিগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবে। এই পথটি সুগম করব আমরা অর্থাৎ আপনাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন। আমাদের সাথে থাকুন, সাহিত্যের সাথে থাকুন। ভালোবাসুন আমাদের ওয়েবসাইট ম্যাগাজিনকে। ভালো থাকবেন সবসময়।



                                       ধন্যবাদান্তে 

                                 সম্পাদকীয় বিভাগ 


______________________________________________


কবিতা : 

অমল কুমার ব্যানার্জী, অভিজিৎ দত্ত 


English poem : 

Md Mazharul Abedin, Anjali Denandee, Samir Kumar Dutta



ছোট গল্প ও অনুগল্প: 

জিনিয়া কর, প্রদীপ সেনগুপ্ত, রানা জামান, অমিত কুমার রায়, তপন তরফদার, দেবাংশু সরকার

ব্যাচেলার্স পার্টি - দেবাংশু সরকার || Bachelor party - Devanshu sarkar || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

              ব্যাচেলার্স পার্টি

                      দেবাংশু সরকার



                            এক

      - "আমার নাম রিমি। আমি ফার্স্ট সেমিস্টারের ছাত্রী। তুমিও কি নিউ কামার?"


      - "হ্যাঁ। আমার নাম সুদীপা। আমারও আজ কলেজে প্রথম দিন। কলেজে এসে আমার কোনো পুরানো বন্ধুকে দেখতে পাচ্ছি না। যারা আমার সঙ্গে স্কুলে পড়তো, মনে হয় তাদের কেউ এই কলেজে ভর্তি হয় নি।"


      - "আমারও একই সমস্যা। চেনা শোনা কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালোই হলো। আর একা মনে হবে না। আমার বাংলা অনার্স। তোমার সাবজেক্ট কি?"


       - "আমারও বাংলা অনার্স।"


      - "বাঃ খুব ভালো। আমরা তাহলে একসঙ্গে ক্লাসে গিয়ে পাশাপাশি বসবো। তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাওতো।"


      - "তোমার নাম্বারটা বলো, কল করছি।"


      - "ওফ, এই 'তুমি' 'তুমি' আর নিতে পারছি না! বিয়ের পর তোর হাজব্যান্ভকে যত খুশি 'ওগো', 'হ্যাঁগো', 'তুমিগো' বলিস। আমাকে ছাড়। দয়া করে তুমি ছেড়ে তুইতে নেমে আয়।" হেসে ওঠে দুজনেই। 


       রিমি, সুদীপা দুজনেই এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। দুজনেরই স্কুলের কোনো বন্ধু এই কলেজে ভর্তি না হওয়াতে প্রথম দিন কিছুক্ষণের জন্য একাকীত্ব বোধ করলেও, অচিরেই নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজে নেয় তারা।


      সুদীপার তুলনায় রিমি কিছুটা ছটফটে, চঞ্চল। কিছুটা প্রগলভ। সারাক্ষণ সে কিচির মিচির করেই চলেছে। কোনো কথা সে চেপে রাখতে পারে না। অন্য দিকে সুদীপা বেশ চাপা স্বভাবের। মুখ দেখে বোঝা যায় না তার মনে কি আছে। বন্ধুদের সঙ্গে হেসে কথা বললেও, মনের দরজা পুরোপুরি খুলে দেয় না। দুজনের মধ্যে কিছুটা অমিল থাকলেও, খুব তাড়াতাড়ি তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিনত হয়। কলকাতার দুই প্রান্তে দুই বন্ধুর বাড়ি। বেহালা থেকে কলেজে আসতে সুদীপার মাঝে মাঝে দেরি হলেও, দমদম থেকে রিমি যথা সময়ে পৌঁছে যায়। কখনো কিছুটা আগে পৌছে কলেজের সামনের বাস স্ট্যান্ডে সে অপেক্ষা করে সুদীপার জন্য। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে রিমি লক্ষ্য করে সুদীপা বাস থেকে নেমে, বাসের দিকে হাত নাড়ে। কার উদ্দেশ্যে সুদীপা হাত নাড়ে? রিমি জানতে চাইলে সুদীপা এড়িয়ে যায়। আবার কখনো কলেজ ছুটির পর দুই বন্ধু যখন কলেজের গেট থেকে বের হয়, রিমির মনে হয় কেউ যেন অপেক্ষা করছিল, তাদের দেখতে পেয়েই গা ঢাকা দিল! রিমি বারে বারে সুদীপার কাছে জানতে চায়। সুদীপা হেসে উড়িয়ে দেয়, বলে রিমির চোখের ভুল। রিমি কথা বাড়ায় না। কিন্তু অবাক হয়ে ভাবে, বারে বারে তার এক ভুল হচ্ছে!


      এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস, এসে যায় দুর্গা পুজো। পুজোর ছুটির জন্য কলেজ বন্ধ হয়। সুদীপারা পুজোর কয়েক দিনের জন্য মেদিনীপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে যায়। বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো। এই চারটে দিন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয় স্বজনরা এসে জড়ো হয় পৈতৃক ভিটেতে। বছরের এই কয়েকটা দিন দেখা হওয়া আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মহানন্দে পুজোয় মেতে ওঠে সুদীপা।


      রিমিও পুজোর কয়েকটা দিন কাটাবে কলকাতার বাইরে। সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে পুরী যাচ্ছে পুজোর দিনগুলো ছুটি কাটাতে। যথা সময়ে রিমিরা পৌছে গেছে হাওড়া স্টেশনে। তেইশ নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন এসে গেছে। প্লাটফর্ম জুড়ে বেশ ভিড়। নিজেদের কামরা খুঁজে ট্রেনে উঠলো রিমিরা। রিমির মা রাতের খাবার বের করছেন ব্যাগ থেকে। রিমি লক্ষ্য করছে বিপরীত দিকের সিটে বসা এক মাঝবয়সী মহিলা হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।


     - "রমা চিনতে পারছিস?"


      ঘুরে তাকান রমা, অর্থাৎ রিমির মা। কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে চিনতে। তার পরেই উচ্চসিত হয়ে ওঠেন।


      - "অপর্ণা! কতদিন পরে দেখা! স্কুলে পড়তে পড়তে তোর বাবা তোর বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ে করে সেই যে দিল্লি চলে গেলি, তারপর আর পাত্তা নেই!"


      - "হ্যাঁ, প্রায় সাতাশ বছর পর তোর সঙ্গে দেখা। আমার হাজব্যান্ড দিল্লিতে চাকরি করে। কিন্তু আমার ছেলে অনীক দুবছর হলো কলকাতায় চাকরি পেয়েছে। মামার বাড়িতে থাকে। আর আমি এখন শাটল কক্ হয়ে একবার দিল্লি একবার কলকাতা করছি। পুজোর ছুটিতে সোমনাথ, মানে আমার হাজব্যান্ড কলকাতায় এসেছে। অনীকের নতুন চাকরি। একদম ছুটি পায় না, অনেক দিন একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই চার দিনের জন্য দুরে কোথাও না গিয়ে পুরী যাচ্ছি।"


      সোমনাথ, অনীকের সঙ্গে অপর্ণা পরিচয় করিয়ে দেন রমার পরিবারের সদস্য রিমি এবং রিমির বাবা অরূপের সঙ্গে।


      সামান্য লেট করে প্রায় এগারোটা নাগাদ ছাড়লো পুরী এক্সপ্রেস। রাতের খাবার ব্যাগে পড়ে আছে। রমা আর অপর্ণা জমিয়ে গল্প করছেন। সাতাশ বছরের জমে থাকা কথা যেন এক নিঃশ্বাসে বেরিয়ে আসতে চাইছে দুজনের মুখ থেকে। পাশে বসা সোমনাথও জমিয়ে নিয়েছেন অরূপের সঙ্গে, বাংলা দিল্লির দুর্গাপুজো থেকে রাজনীতি সব কিছুই উঠে আসছে তাদের আলোচনায়। অনীক আর রিমি অবশ্য চুপচাপ নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। অনীক মাঝে মাঝে আড় চোখে রিমিকে দেখছে। রিমিও সেটা টের পেয়েছে। ব্যাপারটা সে উপভোগ করছে।


      পুর্ণ গতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। দিনের আলো ফুটতে এখনও কিছুটা দেরি আছে। রাতে ঠিকঠাক ঘুম না হলেও, ভোরের দিকে অনেকেই ঘুমোচ্ছে। রিমির চোখে ঘুম নেই। সে নিজের জায়গা থেকে নেমে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অনীকের চোখেও ঘুম নেই। তবে সে তার জায়গাতেই শুয়ে আছে।


      চাওয়ালাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। একজন চাওয়ালা রিমিকে জিজ্ঞাসা করলো, "মেম সাহেব চা খাবেন?" উত্তর রিমি "না" বললো।


      নিজের জায়গা থেকে অনীক ফোড়ন কাটলো, "দাদা আপনি জানেন না, মেম সাহেবরা সকালে চা খায় না। হুইস্কি খায়। আপনি এই নেটিভ আদমিকে চা দিন। ঠিক আছে আপনি দু কাপ চা দিন। মেম সাহেব না হয় হুইস্কি মনে করে খেয়ে নেবে।"


      মৃদু হাসি খেলে যায় রিমির মুখে। সে বলে, "আমি মোটেই মেম সাহেব নই। হুইস্কিও খাই না। সবাই ঘুমোচ্ছে। একা চা খেতে ভালো লাগে না। তুমি খেলে আমিও খাবো।"


      রাতে হালকা বৃষ্টির পর চকচকে রোদ উঠেছে। থিকথিকে ভিড় পুরী স্টেশন জুড়ে। ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ট্যুরিস্টরা বেরিয়ে আসছে স্টেশন থেকে। চলছে অটো, ম্যাজিক গাড়ির ড্রাইভারদের সঙ্গে দরাদরি। স্বর্গদ্বারের কাছে দুটো হোটেল বুক করে রেখেছে দুটো পরিবার। দুটো হোটেলের মধ্যে দুরত্ব খুব বেশি নয়। দরাদরি করে একটা বড় ম্যাজিক গাড়িতে উঠলো দুই পরিবার।


      রাতে ট্রেনে ভালো ঘুম হয়নি তাই হোটেলে ঢুকেই অপর্ণা, সোমনাথ বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অনীক টিভি চালিয়ে পছন্দের চ্যানেল খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে রমা, অরূপেরও চোখ জুড়িয়ে আসে। হোটেলের ঘরে বোর হতে থাকা রিমি ফোন করে অনীককে, "কি করছো?"


      - "বাবা মা ঘুমোচ্ছে। আমার এখন কিছু করার নেই, তাই টিভি চালিয়ে উড়িয়া ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি।"


      - "আমারও একই অবস্থা। বাবা মা নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘুরতে এসে মানুষ যে কি করে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করে বুঝতে পারি না! আমি এখন বের হবো। সমুদ্র দেখবো। তুমি আসবে?"


      - "ঠিক আছে যাচ্ছি। তুমি চৈতন্য দেবের সামনে দাঁড়াও।"


      হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে রিমি। চড়া রোদ উঠেছে। চৈতন্য দেবের মুর্তির সামনে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। সে একটু সরে এসে একটা কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অনীকও চলে আসে। কিন্তু রিমিকে দেখতে পায় না। এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে সে রিমিকে ফোন করে, "মেম সাহেব তুমি কোথায়? বেরিয়ে পড়েছো, নাকি এখনো হোটেলে সাজুগুজু করছো?" 


      - "পেছন দিকে তাকাও, আমাকে দেখতে পাবে।"


      ঘুরে তাকায় অনীক। রিমিকে দেখে হাত নাড়ে। এগিয়ে যায় রিমির দিকে।


      - "নেটিভ আদমি, তুমি কি ছাতা এনেছো? খুব চড়া রোদ উঠেছে। খালি মাথায় হাঁটা যাবে না"


      - "নাতো, ছাতা আনিনি। রোদে আমার কোনো অসুবিধে হবে না। কিন্তু তুমি এভাবে হাঁটতে পারবে না।"


      - "এখনো ট্রলি খোলা হয়নি। ছাতা ট্রলিতে আছে। তাই আনা হয়নি।"


      - "ডোন্ট ওরি মেম সাহেব। ঐ দেখো তোমার সমস্যার সমাধান।"


      রিমি দেখে একটা কম বয়সী ছেলে বেতের টুপি বিক্রি করছে। অনীক দুটো টুপি কিনে একটা নিজে পরে, অন্যটা রিমির মাথায় পরিয়ে দেয়।


      - "কাম অন নেটিভ আদমি। চলো আমরা বালির ওপর দিয়ে হাঁটি।"


      রাস্তা পেরিয়ে দুজনে নেমে পড়ে বেলাভুমিতে। হাজারো মানুষের ভিড় বেলাভুমি জুড়ে। বিরাট বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বেলাভুমিতে। মানুষ সমুদ্রের জলে ভিজছে। মানুষ হাসছে, মজা করছে। আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে তাদের মনে। বলতে গেলে অশান্ত সমুদ্রের উন্মাদনাকে চেটে পুটে খাচ্ছে।


      - "অনীক, দেখো কত লোক সমুদ্রে স্নান করছে, মজা করছে। চলো না আমরাও স্নান করি।"


      - "এতো সকালে ভিজতে ইচ্ছা করছে না। তাছাড়া তোয়ালে আনা হয়নি। আর একটু বেলা হলে স্নান করতে আসবো।"


      - "ঠিক আছে স্নান না করো, চলো অন্তত সমুদ্রের জলে পা ভেজাই"


      রিনি অনীক পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে। হাতে হাত ধরে তারা দাঁড়িয়ে আছে। লোনা জল এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুর থেকে সাদা মুকুট পরা ছোটো ছোটো ঢেউগুলো বিশালাকার ধারণ করে আছড়ে পড়ছে বালির ওপরে। জলের সঙ্গে সরে যাচ্ছে পায়ের তলার বালি। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে যেতে রিমি জাপটে ধরেছে অনীককে। অনীক শক্ত হাতে ধরে আছে রিমিকে। দুজনে দুজনের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ। হয়তো দুজনেই উপভোগ করছে এই ঘনিষ্ঠতা।


      - "অনীক আমার পায়ের তলার বালি সরে যাচ্ছে। আমি পড়ে যাবো।"


      - "কেন পড়ে যাবে? আমিতো তোমাকে ধরে আছি। ভরসা নেই আমার ওপর?"


      - "আমাকে এভাবে চিরকাল ধরে রাখবেতো অনীক? বলো ছেড়ে দেবে নাতো?"


      - "আমিতো ধরে রাখতে চাই। তুমি আমার হাত ছেড়ে চলে যাবে নাতো মেম সাহেব?"


      - "একবার যখন ধরেছি, আর ছাড়বো না এ হাত।"


      ওরা সমুদ্র দেখছে। অপলক দৃষ্টিতে সমুদ্র দেখছে। বিভোর হয়ে সমুদ্র দেখছে। দেখতে দেখতে একাত্ম হয়ে যাচ্ছে। হয়তো মনের ভেলায় চড়ে ভেসে চলেছে অকুল সাগরে।


      কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে কারো খেয়াল নেই। এক সময়ে অনীক বলে ওঠে, "এবার হোটেলে ফিরতে হবে মেম সাহেব। এতক্ষণে বাবা মায়ের হয়তো ঘুম ভেঙে গেছে।"


      হাত ধরাধরি করে বেলাভুমি ছেড়ে রাস্তা পার হয়ে দুজনে এসে দাঁড়িয়েছে চৈতন্য দেবের মুর্তির সামনে। এখান থেকে দুজনের রাস্তা দুদিকে চলে গেছে। এবারে হাত ছাড়ার পালা। অনীকের হাত ছেড়ে আবার আঁকড়ে ধরে রিমি। অবাক হয়ে অনীক প্রশ্ন করে, "কি হলো মেম সাহেব, আবার ধরলে কেন?"


      - "ছাড়তে ইচ্ছা করছে নাতো।"


      - "ঠিক আছে এখনতো ছাড়ো। ঘন্টা খানেক পরে আবার ম্যানেজ করে চলে আসবো।"


      শ্রী মন্দিরে পুজো দেওয়া, সকালে বিকালে সমুদ্র তীরে রুটিন ভিজিট, টুকটাক কেনাকাটা, চোখের পলকে কেটে যায় দিনগুলো। এবার ফেরার পালা। আজ রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরবে রিমিরা। আগামীকাল অনীকরা। দুপুরে খাওয়ার পর রিমি ভাবে আরতো মাত্র কয়েক ঘন্টা তারা পুরীতে আছে, তাই বিছানায় শুয়ে না থেকে আর একবার সমুদ্র দেখে আসবে। হোটেল থেকে একা বেরিয়ে পড়ে রিমি। একবার ভাবে অনীককে ডাকবে। আবার ভাবে এইতো ঘন্টা দুয়েক ধরে দুজনে সমুদ্রের হাওয়া খেলো। হয়তো খাওয়া সেরে অনীক এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। তাই অনীককে না ডেকে সে একাই চলে যায় সমুদ্রের ধারে।


      সমুদ্রের এক অন্য রূপ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় রিমির। আগে সে কালচে ঘোলাটে বা হালকা নীল রঙের সমুদ্র দেখেছে। আজকে সমুদ্রের রঙ ঘন নীল। কখনো সেই রঙ বদলে ঘন সবুজে পরিনত হচ্ছে। সত্যিই কি সমুদ্রের রঙ পরিবর্তিত হচ্ছে? নাকি চোখ ভুল? আর অপেক্ষা করে না রিমি। তড়িঘড়ি ফোন করে অনীককে ডেকে নেয়।


      - "দেখো অনীক দেখো, চোখ ভরে দেখো সমুদ্রের এই অপরূপ সৌন্দর্যকে।"


      - "দেখছি রিমি দেখছি। সমুদ্রের এই রূপ, এই রঙ শুধু দেখছি না সাজিয়ে রাখছি মনের মনিকোঠায় চিরকালের স্মৃতি হিসেবে। কি অপূর্ব উপহার তুমি আমাকে দিলে! সমুদ্রের ঘন নীল, ঘন সবুজ রঙ দিয়ে তুমি আমাকে, আমার মনকে,আমার চিত্তকে চির রঙিন করে দিলে। বিনিময়ে তোমাকে আমি কি দেবো রিমি? সমুদ্রের এই শোভার অনুরূপ কিছুই যে নেই আমার কাছে! আমি যে নিঃস্ব।" কথা বলতে বলতে অনীক হাঁটু গেড়ে বালিতে বসে পড়ে বলতে থাকে, " না রিমি আছে। অন্তত একটা শব্দ আছে আমার কাছে। সেটা এই সমুদ্রের থেকে বড়, এই সমুদ্রের থেকে গভীর, এই সমুদ্রের থেকে মহোময়। কথা থামিয়ে সে বালিতে আঙুল দিয়ে লেখে - 'ভালোবাসি'।


      একটা ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায় সেই লেখা। আঁতকে ওঠে রিমি। সে বলে, "আমাদের ভালোবাসা এভাবে ধুয়ে মুছে যাবেনাতো অনীক?"


      - "বালিতে লেখা ধুয়ে মুছে যেতে পারে। কিন্তু আমিতো কেবল বালিতে লিখিনি। লিখেছি তোমার আমার মনের মাঝে। কোনো ঢেউয়ের ক্ষমতা নেই সেই লেখাকে মুছে দেবে।"



                              দুই 



      একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে কলকাতায় ফিরে রিমি ফোন করে সুদীপাকে, "কোথায় আছিস?"


      - "মেদিনীপুরের বাড়িতে। লক্ষ্মী পুজোর পরে ফিরবো।"


      - "তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। ফোনে বলা যাবে না।"


      - "ঠিক আছে। বাড়ি ফিরি। পড়তে গিয়ে কথা হবে।"


      - " প্রথম দিন তাড়াতাড়ি আসবি। অনেক কথা আছে। ইন্টারেস্টিং কথা।"


      পুজোর পর প্রাইভেট টিউশনের প্রথম দিন নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই স্যারের বাড়ি পৌছে যায় রিমি। কিছুক্ষণের মধ্যে সুদীপাও চলে আসে।


      - "বল, তোদের পুরী ট্যুর কেমন হলো? আর কি যেন বলছিলি ইন্টারেস্টিং কথা। বল কি বলবি?"


      - "পুরীতে গিয়ে একটা কান্ড করেছি।"


      - "কি কান্ড?"


      - "পুরীতে গিয়ে একটা মাল তুলেছি। দিশি মাল নয়। একেবারে দিল্লিকা লাড্ডু।"


      - "এই আগে মুখের ভাষা ঠিক কর, তারপর আমার সঙ্গে কথা বলবি।"


      - "আরে পুরো কথা শোন। পুরীর ট্রেনে মায়ের এক পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা। আগে দিল্লিতে থাকতো, এখন কলকাতায় থাকে। তার ছেলে অনীককে লটকেছি। দিশি মাল হলে চিন্তা ছিল না। দিল্লির মাল, তাই বুঝতে পারছি না সত্যিই দিবানা নাকি খেলোয়াড়। এব্যাপারে তোকে একটু হেল্প করতে হবে। মানে অনীককে বাজিয়ে দেখতে হবে।"


      - "না না, ওসব বাজাতে টাজাতে পারবো না।"


      - "না, বললেতো শুনবো না। একমাত্র তুই পারবি অনীককে বাজাতে। তুই আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী। কি সুন্দর ফর্সা রঙ, টানাটানা চোখ, গোলাপি ঠোঁট! আমারই মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তোকে নিয়ে শুয়ে পড়ি। তাহলে তোকে দেখলে ছেলেদের কি অবস্থা হয় ভাবতো?"


      - "এই ফোটতো এখান থেকে। কত শখ, আমাকে নিয়ে শোবে! কি করবি আমাকে নিয়ে শুয়ে? পারবি আমাকে প্রেগনেন্ট করতে? তোর কাছে আছে সেইসব যন্ত্রপাতি?"


      - "প্রেগনেন্ট করতে না পারি, তোর ফর্সা গালে, গোলাপি ঠোঁটে কয়েকটা চুমুতো খেতে পারি।"


      - "আর চুমু খেতে হবে না। বল তোর জন্য কি করতে হবে?"


      - "যা বললাম, অনীককে বাজিয়ে দেখতে হবে।"


      - "বাজিয়ে দেখতে হবে! কেন অনীক কি তবলা?"


      - "তবলা নয়, অনীক হচ্ছে শ্রীখোল। দেখলেই বুঝতে পারবি ওর মধ্যে একটা কেষ্টো কেষ্টো ভাব আছে। তবে ওকি রাধিকা রমন কেষ্টো নাকি গোপিনী পরিবেষ্ঠিত কেষ্টো সেটা বুঝতে পারছি না!"  


      - "যদি গোপিনী পরিবেষ্টিত কেষ্টো হয়। মানে খেলোয়াড় হয় তখন কি করবি?"


      - "এখনো অতকিছু ভাবিনি। যা হবে দেখা যাবে।"


      কথামত কাজ শুরু করে দেয় সুদীপা। রিমি একদিন অনীকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় সুদীপার। অনীককে দেখে আপাত শান্ত, মৃদুভাষী সুদীপার মুখে যেন খই ফোটে। অনর্গল কথা বলে যেতে থাকে সে অনীকের সঙ্গে। কথাবার্তায় চৌখস অনীকও তাল মেলায়। মাঝে মাঝে সন্ধ্যার সময়ে সুদীপার ফোন আসে অনীকের কাছে। দেখা করার বা কোনো রেস্টুরেন্টে সময় কাটানোর আব্দার। এড়াতে পারে না। অনীক এড়াতে পারে না সুন্দরী সুদীপার আকর্ষণ। কাজের দিনগুলো সন্ধ্যার পর সামান্য সময়ের জন্য দেখা হলেও রবিবার প্রায় সারাদিন সুদীপাকে নিয়ে অনীক উড়ে বেড়ায়। সুদীপাকে সময় দিতে গিয়ে অনেক সময় অনীক রিমির ডাকে সাড়া দিতে পারে না। হয়তো অনিচ্ছাতেই সে অবহেলা করে রিমিকে। রিমি অনুযোগ করলে অনীক বলে, "তোমার বন্ধুর ডাকে সাড়া না দিলে তুমি যদি রাগ করো সেই ভয়ে সুদীপার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি না। তাছাড়া সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। সেই মুখ যদি নারীর হয়..."।


      ক্রমশ যেন সুদীপার সঙ্গে অনীকের ঘনিষ্ঠতা বাড়াবাড়িতে পরিনত হতে থাকে। রিমির কপালে ভাঁজ পড়ে। ব্যাপারটা কোন দিকে যাচ্ছে সে বুঝতে পারে না। একদিন সুদীপার কাছে সে প্রকৃত ব্যাপারটা জানতে চায়। উত্তরে সুদীপা বলে, "অনীক এতটাই কিউট, এতটাই রোমান্টিক যে ওর ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি না। কিছুতেই অনীককে এড়িয়ে যেতে পারি না। কি করবো বল? আমিওতো মানুষ। আমার মধ্যেওতো কামনা বাসনা আছে। তাছাড়া তুইতো আমাকে ওর সঙ্গে মিশতে দিয়েছিলি। এখন ব্যাপারটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অনীককে না দেখে আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। আমাকে ক্ষমা কর রিমি।"


      অনীক বলছে সুদীপা ডাকে, সুদীপা বলছে অনীক ডাকে! তাহলে কে কাকে ডাকে বুঝতে পারে না রিমি। তবে এটুকু বুঝতে পারছে যে দুজনের কাছেই সে ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। তবে কি সে অনীককে চিনতে পারেনি! এত হাসি, এত কথা, মন দেওয়া নেওয়া সবই কি অনীকের কাছে কেবল সময় কাটানোর একটা খেলা ছিল? খেলার ছলে মানুষ মানুষকে এতবড় আঘাত দিতে পারে? আর সুদীপা? রিমি ভাবতে থাকে বন্ধুবেশী এতবড় বেইমান বোধহয় এর আগে কেউ আসেনি এই পৃথিবীতে। সুদীপার মুখ দেখতেও আর ইচ্ছা করে না রিমির। কিন্তু কলেজে দেখা হয়ে যায়। রিমির দিকে তাকিয়ে নির্লজ্জের মত হাসে সুদীপা। অসহ্য লাগে রিমির। কলেজও প্রায় শেষের দিকে। আর কয়েক মাস পরে সিক্সথ সেমিস্টারের পরীক্ষা। তাই কলেজে না এসে পারে না রিমি। ভাবে এই কটা মাস যেন কিছুতেই কাটছে না! প্রেমিক এবং সহপাঠী তথা বন্ধুকে হারিয়ে ক্রমশ যেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে রিমি। নিঃসঙ্গ রিমির জীবনকে গ্রাস করে শূণ্যতা। হারিয়ে ফেলা অনেক কিছুর স্মৃতিকে সঙ্গী করে দিন কাটতে থাকে রিমির। সে কলেজে যায়, পড়তে যায়। পড়াশোনায় ডুবে যেতে চায়। পড়াশোনার মাধ্যমে সে অনেক কিছুকে ভোলার চেষ্টা করে। এভাবেই একটা একটা করে দিন কাটতে থাকে।


      আর মাত্র কয়েকটা দিন কলেজে আসতে হবে। তারপর পরীক্ষা। পরীক্ষার পর আর সহপাঠীদের মুখ দেখতে হবে না। তারপর রিমি অন্যভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেবে। আস্তে আস্তে সে ভুলে যাবে অনীককে। অনীককে ভুলে যাবে! সত্যিই কি রিমি পারবে অনীককে ভুলে যেতে? সেটা কি সম্ভব? কি করে সে ভুলে যাবে বেলাভুমিতে কাটানো সেই মুহুর্তগুলো? সব সময়ে সে শুনতে পায় সমুদ্রের গর্জন। মানস চক্ষে দেখতে পায় উত্তাল জলরাশি। হাত ধরাধরি করে অনীকের সঙ্গে বেলাভুমিতে হেঁটে বেড়ানো। পায়ের তলা থেকে বালি সরে যাওয়াতে পড়ে যেতে যেতে অনীককে ধরে ফেলা। পড়ে যেতে যেতে অনীকের দৃঢ় বাহু বন্ধনে নিশ্চিত আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। সব স্মৃতি যেন রিমিকে ঘিরে রাখে। কিন্তু অনীকের বন্ধন যে এত পলকা, এত ভঙ্গুর সেটা ভাবতেও পারে না রিমি। কেন অনীক তার জীবনে এলো? আর কেনই বা হারিয়ে গেল? ভাবতে থাকে রিমি। ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়!


      - "দিদি ভাড়াটা দিন।"


      কন্ডাক্টরের ডাকে সম্বিত ফিরে আসে রিমির। একটা একশো টাকার নোট কন্ডাক্টরকে দিয়ে বলে, "একটা দশ।"


      - "খুচরো দিন দিদি। সবাই একশোর নোট দিলে অত খুচরো কোথায় পাবো?"


      - "রোজই দশ টাকার নোট দিই। আজ নেই কি করবো?"


      - "আমিই বা কি করবো? কোথা থেকে এত খুচরো আনবো?"


      ক্রমশ বচসা বাড়তে থাকে। রিমির হয়ে অনেকেই গলা ফাটাতে থাকে। বাস দাঁড়িয়ে যায়। এমন সময়ে এগিয়ে আসে সরোজ। সেও একজন ঐ বাসের সহযাত্রী। সে কন্ডাক্টরের দিকে একটা দশ টাকার নোট এগিয়ে দেয়। রিমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সরোজ টিকিটটা কাটে।


      একটু অপ্রস্তুত হয়ে রিমি বলে, "আপনি আমার হয়ে টিকিট কাটলেন!"


      - "এতে অসুবিধার কি আছে?"


      - "না, আমি ভাবছি...।"


      - "অত ভাবার কিছু নেই। আমি এই পথেই যাতায়াত করি। যখন আপনার কাছে খুচরো থাকবে ফেরত দিয়ে দেবেন।"


      - "কিন্তু আপনাকে পাবো কোথায়? ঠিক আছে আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন।"


      মোবাইল নম্বর দিয়ে সরোজ বলে, "মাত্র পঁচিশ টাকা দিয়ে মেট্রোর টিকিট কেটে আমার অফিসে এসে আমার দশ টাকা ফেরত দিয়ে আবার মাত্র পঁচিশ টাকা দিয়ে মেট্রোর টিকিট কেটে ফিরে যাবেন।" হেসে ওঠে রিমি।


      রিমি মাঝে মাঝে ফোন করে সরোজকে। বাসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বারে বারে ধন্যবাদ জানায়। কখনো কখনো দেখা করে দুজনে। ছুটির দিনে বিভিন্ন কাফে, রেস্টুরেন্টে সরোজের সঙ্গে রিমিকে দেখা যায়।


      পৃথিবীতে কোনো শূণ্যস্থান চিরকাল শূণ্য থাকে না। কালের নিয়মে সব শূণ্যই একদিন পুর্ণ হয়ে যায়। রিমির জীবনকে গ্রাস করা শূণ্যকে ধিরে ধিরে পুরণ করে দিতে থাকে সরোজ। সরোজের সারল্য, সরোজের অনাবিল হাসি যেন চুম্বকের মত আকর্ষণ করে রিমিকে। কেবল ছুটির দিনে নয়, প্রত্যেক দিন সন্ধ্যার পর দুজনকে এক সাথে দেখা যেতে থাকে। আর ছুটির দিনগুলোতে দুজনে যেন মুক্ত বিহঙ্গ। কোনোদিন গঙ্গার ধারের বিভিন্ন পার্কে, কোনোদিন কিছুটা দুরে বালিগঞ্জের লেকে বসে দুজনকে বাদামের খোসা ছাড়াতে দেখা যায়। দুজনেই মন খুলে কথা বলে দুজনের কাছে। হয় ভাব বিনিময়।


      - "রিমি আমাকে তুমি ঠিক কোন চোখে দেখো? মানে তোমার মনের ঠিক কোন জায়গাতে আমি আছি?"


      - "এই মুহূর্তে তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার ওপর আমি অনেকখানি ডিপেন্ডেন্ট। তোমার সঙ্গ, তোমার সান্নিধ্য আমার বেঁচে থাকার রসদ।"


      - "শুধু এইটুকু! এর বেশি কি কিছু ভাবা যায় না?"


      - "না সরোজ, এর বেশি আমি ভাবতে পারি না। আমার পায়ে যে অদৃশ্য বেড়ি পরানো আছে। আমি যে অনীককে ভালোবেসেছিলাম। আমি যে অনীককে ভালোবাসি। অনীক যদিও আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি। আমাকে খেলার পুতুল ভেবেছিলো। কিন্তু আমি যে অনীককে সত্যিই ভালোবাসি। অন্তর দিয়ে ভালোবাসি। হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। আর সত্যিকারের ভালোবাসাতো জীবনে একবারই আসে সরোজ। তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু। তোমার স্থান আমার মনের মনিকোঠায়। সেই জায়গাটা শুধুমাত্র তোমার জন্য। সেখানে তুমি একচ্ছত্র সম্রাট।"


      - "ঠিক আছে রিমি, তুমি আর আমি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসাবে আছি, থাকবো।"


      কাটতে থাকে দিন, কেটে যায় মাস। সরোজকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে যেন জীবনে পরিপূর্ণতা আসে রিমির। এমনই একদিন সরোজ রিমিকে বলে, " মা খুব চাপ দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য। পাত্রী ঠিক হয়েছে। আমার বন্ধুরা ধরেছে ব্যাচেলার্স পার্টি দিতে হবে। তুমি সেই পার্টিতে থাকবেতো?"


      - "আবার আমাকে কেন? আমাকে বাদ দাও?"


      - "তোমাকে বাদ দিলে পার্টিটাই বাদ দেবো।"


      - "না না পার্টি বাদ দেবে কেন? আমাকে বাদ দিতে বলছি তার কারণ পার্টি মানে রাতের ব্যাপার। বেশি রাত অবধি আমি বাড়ির বাইরে থাকি না।"


      - "ঠিক আছে রাতে নয় তোমার অনারে আমি দিনের বেলাতে পার্টি দেবো। তাহলে আপত্তি নেইতো?"


      রাজি হয় রিমি। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গাতে রিমি পৌছে যায়। রিমিকে আসতে দেখে কে যেন ঘরের ভেতর থেকে বলে ওঠে, "এসো, লায়লা এসো। তোমার মজনু যে তোমার জন্য সকাল থেকে হাপিত্যেস করে বসে আছে।"


      ভেতরে ঢুকে সুদীপাকে দেখে রিমি সরোজকে প্রশ্ন করে, "এই মেয়েটা এখানে কি করছে?"


      তোতলাতে তোতলাতে সরোজ বলে, "এখানে... মানে... সুদীপা... মানে... ওর সঙ্গেইতো আমার বিয়ে হবে।"


      - "টানা চার বছর লাইন মারার পর।" ফোড়ন কাটে সুদীপা।


      - "মানে? কি বলছিস? কটাকে লটকে রেখেছিস?"একরাশ বিরক্তির সঙ্গে প্রশ্ন করে রিমি।


      - "রিমি বেশি বড় বড় কথা বলিস না। তুই পারমিশন দিয়েছিলি তাই তোর মালের সঙ্গে লাইন মেরেছি। কিন্তু তুই কার পারমিশনে আমার মালকে নিয়ে টানাটানি করছিস? ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস। আবার বড় বড় কথা! ঠিক আছে এখন ওসব কথা ছাড়। পরিস্কার করে বল আমার মালের সব যন্ত্রপাতি ঠিক আছে? নাকি এই কমাসে সরোজের কলকব্জা ঢিলে করে দিয়েছিস?" 


      - "সুদীপা ভুল বলেনি। রিমির সঙ্গে ভাব জমাতে আমাকে কম মেহনত করতে হয়নি! দিনের পর দিন বাসে উঠেছি আর নেমেছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। তারপর একদিন বাস কন্ডাক্টর সুযোগ করে দিল রিমির সঙ্গে ভাব জমানোর। দৌড়দৌড়ি করতে করতে সত্যিই আমার সব কলকব্জা ঢিলে হয়ে গেছে।" বলে ওঠে সরোজ।


      সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে রিমির। কিছুই বুঝতে পারছে না সে।


      - "আসতে পারি।" দরজা থেকে উঁকি মারে অনীক। অনীককে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রিমি।


      ঘরে ঢুকে অনীক বলতে শুরু করে, "একজন আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ভালোই হয়েছে। মুখটা আমার দিক থেকে অন্য দিকে ঘুরে গেল মানে কানটা আমার দিকে এলো। সেই কান এখন আমার কথা স্পষ্ট শুনতে পাবে। আমি স্রেফ দুটো কথা বলবো। কলেজের প্রথম দিনগুলোতে রিমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতো সুদীপা বাস থেকে নেমে কাকে যেন হাত নাড়তো। কলেজের ছুটির পর কে যেন ওদের দেখে লুকিয়ে পড়তো! সে আর কেউ নয়, সে হচ্ছে সুদীপার দিবানা এই সরোজ কুমার। তারপর রিমি যখন একজনকে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করলো আমার অ্যাসিড টেস্ট করবে বলে। সেই গুপ্তচর প্রথম দিনই হাসতে হাসতে আমাকে সব বলে দিলো। তারপর আমি আর সুদীপা মিলে পাল্টা ছক বাজি শুরু করলাম। ব্যস কয়েক দিনের মধ্যেই রিমি মেম সাহেব ক্লিন বোল্ড। কথা বলতে বলতে অনীক গান গেয়ে ওঠেন,


      "কফোঁটা চোখের জল

       ফেলেছো যে তুমি

       ভালোবাসবে ..."।    


      - "এই যাতো এখান থেকে। আমার বয়ে গেছে তোর জন্য চোখের জল ফেলতে।" অনীকের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রিমি।


      - "বলছো, চোখের জল ফেলোনি? কিন্তু চোখের কোলেতো কালি পড়ে গেছে! কি আর করবে মেম সাহেব, দিল্লির লাড্ডু খেয়েছো, একটুতো পস্তাতে হবে!"


      - "কেন? কেন পস্তাবো?"


      - "কেন পস্তাবে? সত্যিইতো, কেন পস্তাবে?"


      - "কারণ ভালোবাসে।" আবার ফোড়ন কাটে সুদীপা।"

আন্তরিক - তপন তরফদার || Antarik - Tapan Tarapdar || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

আন্তরিক

 তপন তরফদার


আন্তরিকতার কোন সঙ্গা হয়না। আন্তরিকতা কখন কার সঙ্গে গড়ে ওঠে তার কোন ব্যাকরণ এখনো অজানা। তবে এটা সবাই জানে দুপক্ষের মধ্য এক অদৃশ্য সেতু আতন্তরের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনই আন্তরিকতার মূল শিকড়। এই শিকড়কে দেখা যায়না অথচ উপলব্ধি করা যায়। যেমন শেষ শ্রাবণের বৃষ্টি থামলে সোনালি রোদ এক অনাবিল আনন্দে সবার মনকে রাঙিয়ে এক আন্তরিকতার প্রলেপ অন্তরে গেঁথে দেয়। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ যেমন মনে অনুরণন তোলে - বৃষ্টির শব্দ থেমে গেলেও একটা নিঃশব্দের স্বর্গীয় পরিবেশ আন্তরিকভাবে মনে গেঁথে যায়।


বার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ হয় আন্তরিকতার সাথে সেই সময় যদি বাড়িতে নতুন


অতিথি আসার আওয়াজ আঁতুরঘর থেকে ভেসে আসে।


              রতন লাফিয়ে কাদাখোঁচা উঠানে নেমে পড়ে আঁতুরঘরের বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাইমা রাধার উদ্দেশ্যে বলে কী হয়েছে? রাধা এক সোহাগ মেশানো আন্তরিক রসালো গলায় বলে - রতন রসগোল্লা আনা, আমার জন্য গরদের শাড়ী নিয়ে আয় - তোর ছেলে হয়েছে।


        মুহূর্তে রতনের বুকের ছাতি দীর্ঘ হয়ে যায়। মুখে লটারি পাওয়ার হাসি।


বসন্তপুরের পঞ্চায়েত অফিস, নলিনীবালা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তেমাথা রাস্তার প্রথম বাড়িটা রতনদের। রতনের ভিটে দুটো রাস্তা পেয়েছে। রতনের পিছনে মদনের ভিটে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে এই


দুই তেলি পরিবার আন্তরিকতার সঙ্গে এক হয়েই থাকে। কয়েক বছর আগে রতন, মদনের বাবা এক সঙ্গে


গঙ্গাসাগরে নৌকাডুবিতে মারা গেছে। রতন, মদনের বিয়ে প্রায় একই সময় হলেও


মদনের দুই ছেলে এক মেয়ে হয়ে গেছে। রতনের কিছুই হয়নি - গ্রামে রটেছে রতনের


বউ পুষ্প বাঁজা। মদন-মদনের বউ হরিমতি মনে মনে খুব খুশি ছিল - ওদের কোন


বাচ্চাকাচ্চা না হলে - ওই ভিটেটার স্বত্ব মদনের ছেলেরাই ভোগ করবে। বড়


রাস্তার ধারে স্কুলে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার রাস্তা। রাস্তা ঢালাই হয়ে


গেলেই লোক চলাচল বেড়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে নলিনীবালা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক


হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই তেমাথায় রতনের


জমিতে যদি ‘ভ্যারাইটি স্টোর্স’ খোলা যায়, ভালই জমে যাবে। এ টু জেড সব


পাওয়া যাবে। সব আশায় ছাই ফেলে দিল নবজাতক! মদনের বউ হরিমতি বলে - কোন


বেটা টের পাবে না - আমি সব ঠিক করে দেবো।


 


        ছেলের নাম রাখলো মঙ্গল। অন্নপ্রাশনে হরিমতি কোমর বেঁধে রান্না করে দিল।


মঙ্গলের মুখে ঠুসে দিল পঞ্চব্যাঞ্জন। অন্নপ্রাশনে বাচ্চাকে পেট পুরে খাওয়াতে হয়। মঙ্গল বিকালেই কেমন নেতিয়ে পড়ল। ওরা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শম্ভুর কাছে নিয়ে যায়। শম্ভু ডাক্তার মনে করে সমস্ত রোগের উৎস পেট। পেট যদি পরিস্কার থাকে - বিশেষ করে বাচ্চাদের স্ফূর্তি ভালই থাকবে। শম্ভু ডাক্তার মঙ্গলের পেট -সাফার ওষূধ দিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বাহ্ন্যি করার পর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল মঙ্গল। মঙ্গলের হাসিশুনতে পেয়ে মদন হরিমতিকে বলল -কি গো, সবতো ঠিকই আছে। হরিমতি বলে – মনে হয় ধুতরোটা কম পরেছিল।


                মঙ্গল ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। স্কুলের পিওন ব্রজকিশোরের বউ সরমা, মেয়ে ময়না সময় পেলেই পুষ্পর সাথে আন্তরিকতার সঙ্গেই গল্প করতে আসে। ময়না-মঙ্গল খেলনাপাতি খেলে। মঙ্গল হয় বর, ময়না হয় বউ। ময়না পাকা গিন্নির মতো বলে - তুমি চান করে এসো, আমার ভাত রান্না হয়ে গেছে – তোমাকে খেতে দেবো।


          মঙ্গলের দশ বছরের জন্মদিন খুব আন্তরিকভাবে পালন করা হচ্ছে। হরিমতি পায়েস এনেছে মঙ্গলের জন্য। এখন মঙ্গলকে হাতে করে খাওয়াতে হয়না। লাউ-চিংড়ি খেয়ে উঃ আঃ করতে থাকে মঙ্গল। পুষ্প মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে - লঙ্কা খেয়ে ফেলেছিস, পায়েস মুখে দে। ঝাল কমে যাবে। মঙ্গল পায়েস মুখে দেয়। জিভে কেমন যেন ঠেকে। কিছু বলে না - হয়তঃ ঝালের জন্য পায়েসটার স্বাদ এমন তিতকুটে লাগছে।


             বিকাল থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা - বমি করতে যায় অথচ বমি হয় না। যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে থাকে।শম্ভু ডাক্তার এবারও আন্তরিকতার সঙ্গে পেট পরিষ্কারের ওষুধই দিল - কিন্তু কোন কাজ হল না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো ঘি রঙের থুথুর সঙ্গে নিলচে ছোপ। শম্ভু ডাক্তার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখেই বলে, এখুনি একে বড় হা্সপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি ভাল বুঝছি না।


     যমে মানুষে টানাটানি। বেঁচে গেছে মঙ্গল কিন্তু বাঁদিকের হাত পা কেমন বেঁকে গেছে। বাঁদিকের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে লালা পরে।কথা বলতে গেলে চোখে মুখে অসহ্য যন্ত্রণার ছবি ফুটে ওঠে। হরিমতি আপশোষ করে বলে - কলকের বিষ মেরে ফেলতে পারল না। রতন একেবারে ভেঙে পড়ল। সুস্থ ছেলেটার এ কি হল?


     তাপ দেওয়া তাসার মত গুমগুম করে বেজে যায় রতনের মন। বেশ কিছু বছর পরেও রতন


মনে করে নিশ্চয় কোন পাপ করেছিল - তাই এই সাজা। সব কিছু ভুলে থাকার জন্য আদিবাসী পাড়ায় যাতায়াত শুরু করল। এখন আদিবাসীদের ডেরায় হাঁড়িয়ার সঙ্গে চোলাই ও চালু হয়ে গেছে। মদনও লুকিয়ে লুকিয়ে ধেনোমদের বোতল রতনকে এনে দেয়। সজনে ফুলের এক বিশেষ গন্ধ থাকে, যারা জানে তাদের নাকে ধাক্কা মারে। এই ধেনোর এক আন্তরিকতার বিশেষ মহিমা আছে যা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মতো -সবাই জেনে যায় রতন “নেশা করে”। মদনের এনে দেওয়া ধেনো খেয়ে রতনের বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতেস থাকে। বুক চেপে শুয়ে পড়তেই পুষ্প তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। এই হাওয়া কোন কাজে লাগেনা। রতন অকালেই উবে যায়।


           ওদিকে ব্রজকিশোর মারা গেল। শম্ভু ডাক্তার রোগটা যে ‘ডেঙ্গু’, ধরতেই পারেনি। ময়নার মা সরমা, স্কুল সীমানায় একপ্রান্তে নির্জন ডোবার ধারে বাঁশ বাগানের পাশে টিনের চালার মাটির ঘরে যেখানে থাকে, সেখানে রাতের অন্ধকারে দরজায় টোকা পড়তে লাগল। রাত হলেই মা-মেয়ে দুজনেই সিঁটিয়ে থাকে, বুঝতে পারে ওরা পঞ্চায়েতের লোক।


      ওদিকে মদন - হরিমতি নিজেদের আকাঙ্খা পূরণ করতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। পুষ্পকে পাখি পড়ানোর মতো সব সময় বলতে তাকে ছেলের চিকিৎসার জন্য, তোমাদের সংসার চালানোর জন্য ভিটেটা বিক্রি করে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাও। মামার বাড়িতে ন্যালাখ্যাপা ছেলে অনেক সাহায্য পাবে।


      পুষ্প নিজের শ্বশুর বাড়ির ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। মদনরা বুঝতে পারে


চালটা ঠিক ধোপে টিকল না। হাল ছাড়ার পাত্র নয় মদনরা। কিছুদিন বাদে আন্তরিকতার সঙ্গেই বলে - বউদি তোমরা তো মাত্র দুজন, এতবড় জায়গা নিয়ে কি করবে। তোমার ছেলেকে দিয়ে তো কিছু হবেনা। আমি তোমাকে ভিটের এক দিকে ঘর করে দেবো। জমির জন্য টাকাও দেব। পুষ্প বুঝতে পারে বাঘের থাবার সামনে পড়েছে। দুর্বলের সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনা। এখন রাজনীতির ঝান্ডা না ধরলে বাঁচা যাবে না। মদন পঞ্চায়েতের দলের লোক হয়ে গেছে। পুষ্প কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে অসহায়, ফুলের মতো ফুটে আছে। সবাই তাকে দখল করতে তৎপর। মুখ নীচু করে বলে - ঠাকুরপো তুমি যা ভাল বোঝো, করো।


       ব্রজকিশোর নিজে ভাল লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিল। মেয়েরা নতুন কিছু সাহসী কাজ, প্রতিভা ও আন্তরিকতার জোরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি মেয়েকে দিত। উৎসাহ দিয়ে বলতো - জানিসতো মা, এক মেয়ে এভারেষ্ট জয় করেছে। ময়না বলে, জানি অনেক মেয়েই পাহাড়ে উঠেছে। ব্রজকিশোর বলে, এ মেয়ে অরুণিমা সিনহা একপায়ে ভর করে উঠেছে। ময়না বলে, আন্তরিকতার সঙ্গে মনের জোরই আসল জোর।


      ছিপছিপে শ্যামাঙ্গী প্রতিমার মতো মুখ ও চুল ময়নার। তার শরীরে ক্লান্তি নেই, চনমনে চিতল হরিণী। গাঁইয়া মুখ হলেও মুখে বালি সরানো ফল্গু নদীর মতো ঝকঝকে লাবন্য। বুদ্ধিতে খনার থেকে কিছু কম নয়। ময়না আন্তরিকতার সঙ্গেই প্রথমেই চায় স্কুলের জায়গাটা ছাড়তে। ঝুপসি গাব, মহানীম গাছের মাঝে ফাঁকা জমিতে রাতের অন্ধকারে ভুতের নাচের আসর বসে - তারাই রাত্রে দরজায় আওয়াজ তোলে। রুখে দাঁড়ালে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পালায়। এইভাবে আর কতদিন চলবে।


      মঙ্গলের বাড়িতে যায় সরমা, ময়নার খোঁজখবর নিতে। সুখ-দুঃখের গল্প করতে। পুষ্পকে আশ্বাস দেয় - চিন্তা করবেন না আন্তরিকতার সঙ্গেই বলে মাসিমা, মঙ্গল ভাল হয়ে যাবে। পুষ্পর মুখে শুকনো হাসি। সে দিনের সূর্য মঙ্গলদের বকুল গাছের পাতায় শেষ আলোর চুম্বন দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। এই সময়েই মদন এসে বলে - বৌদি তোমাদের দলিলটা দাও। কালই রেজিস্ট্রি করব, তোমাকে নিয়ে যাব - ওখানেই সব টাকা দিয়ে দেবো। ময়না বলে ওঠে - না “মা”- আপনি দলিল দেবেন না। আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটে আমরাই আন্তরিকতার সঙ্গে রক্ষা করব। মদন রেগে গিয়ে বলে - সেদিনের ছুঁড়ি, আমার সাথে রসিকতা হচ্ছে। ময়নার পাথরে খোদাই করা চোখ মুখ আরো দৃঢ় করে বলে - আমরা অসহায়রা এক হয়েই নিজেদেরই আন্তরিকভাবে সহায় হব। আমার বাবা মারা গেছে – ওই শকুনরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। অসহায় বিধবার ভিটে হায়নারা খাবে, তা হবেনা। আমি মঙ্গলকে বিয়ে করে সব সামলে নেব। মঙ্গলকে নিয়ে সিধে ময়না কালীতলায় চলে আসে। পূজারির কাছ থেকে সিঁদুর চেয়ে নিয়ে মঙ্গলকে বলে পড়িয়ে দিতে। মঙ্গলের চোখে মুখে যুদ্ধ জয়ের ছবি। একটুও হাত কাঁপে না। বুদ্ধপূর্ণিমার আলো, সমগ্র জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। ময়না মঙ্গলকে নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিয়ে গাইতে থাকে - ও রজনীগন্ধা তোমার ..........। বেচারা মদন, হরিমতিরা


ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দুই বিধবা পরস্পরের হাত ধরে আন্তরিকতার সঙ্গে শরীরের ইশারায়


বুঝিয়ে দেয় আমরাও পারি জয়ী হতে পারি।