Monday, October 18, 2021

লেখক ডাঃ হর্ষময় মণ্ডল -এর একটি গল্প

উচ্চাভিলাষ




ইন্সপেক্টর রজত কোনরকম মাথা না ঘামিয়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদারকে কল করে নিয়ে এসে সাথে নিয়ে পৌছে গেলেন যেখানে খুন হয়েছে সেখানে। দেখলেন দু'জনে, বিশাল বড় একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি, দুটি দামি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দেখলেই বোঝা যায় খুবই অর্থবান ফ্যামিলি ।সামনে একটা বড় লন। গেটকিপার গেট খুলে দিতেই গাড়ি নিয়ে রজতবাবু ঢুকলেন একেবারে দরজার কাছে। সবাইকে বলে দিয়েছিলেন বাড়ির সদস্যরা কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যান। গাড়ি দাঁড়াতেই বাড়ির বৈঠকখানার দরজায় এসে হাতজোড় করে একজন বয়স্ক লোক কাঁদতে কাঁদতে বললেন - আসুন! 

রজতবাবু খান চারেক পুলিশ আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তারা গার্ডে আছে, তাদের দেখতে না পেয়ে বললেন- ভিতরে যাওয়ার আগে বলুন লাশ কোথায় আর আমার পাঠানো পুলিশ কোথায়?

-- সব দেখাবো।

-- আপনার পরিচয় ?

বাড়ির সকলে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে তাই একে একে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললেন - আমার নাম ধনেমান কালুই , ইনি হলেন আমার স্ত্রী গীতা ,এই আমার ছোট ছেলে ধীমান ,এ হলো আমার মৃত ছেলের স্ত্রী রত্না ।মৃত ছেলের নাম বিমান ।আর এই দুটি আমার বাড়ির কাজের লোক এর নাম হরি মউল আর এর নাম সোনা মাল ।আসুন আমার সাথে।

কিছু দূর গিয়ে ধনেমান বললেন - আমি আর সামনে যেতে পারছিনা ।

ব্যাপারটা বুঝে রজতবাবু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন ।তারপর ভাস্করবাবুকে নিয়ে লাশের কাছে গেলেন।

চারজন পুলিশ দুরত্ব বজায় রেখে পাহারা দিচ্ছিল রজত বাবুকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফটোগ্রাফার সাথে ছিল সে চটপট বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ফটো তুলে চলেছে ।লাশ দেখা হয়ে গেল রজতবাবু ফিরে আসতে আসতে ভাস্কর বাবু কে বললেন - কি বুঝলেন ?

-- মার্ডার করেছে। কারন লাশটা দেওয়ালের কাছাকাছি পড়েছে। যদি আত্মহত্যা হতো তাহলে লাস্ট দূরে পড়তো ও মুখ থুবড়ে পড়ত।পেরাপিটে বসে ছিল সেই অবস্থায় কেউ ধাক্কা দিয়েছে আর দুর্ভাগ্য দেখুন চারদিকে সবুজ ঘাস ওইখানেই একটা ইঁট ছিল যেটাতে মাথাটা ঠোকা গেছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসুক তারপর বোঝা যাবে।

রজতবাবু ভাস্করবাবু ধনমানের ড্রইং রুমে এসে বাড়ির চারজনকে নিয়ে সোফায় বসলেন। কাজের লোক দুজন দাঁড়িয়ে আছে। 

ভাস্করবাবু বললেন - ধনেমানবাবু আপনার ছেলে বিমান কি ড্রিংক করতো?

ধনেমান চুপ দিয়ে থাকাতে প্রশ্নটা আবার বিমানের স্ত্রী রত্নাকে করলেন।

--- রত্না বলল - হ্যাঁ করতো।

-- আপনাদের বিয়ে কতদিন হয়েছে?

--- ছ' বছরেরও বেশি ।

-- বৈবাহিক সম্পর্ক কেমন ছিল?

--- ভালো।

--- গীতা বলল - খুব ভালো ছিল। নিজেদের কারখানা থেকে বাড়ি ফিরলে দুটিতে রুমে ঢুকে যেত আর বের হতো না। খাবার হরি বা সোনা রুমে দিয়ে আসতো।

-- ছ' বছরে তো এক দুটো বাচ্চার মা হওয়া উচিত ছিল! বাচ্চা নেননি কেন ?প্রশ্নটা রত্নাকে করলেন ভাস্করবাবু।

 সবাই এর তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।

--- রত্না বলল- এই নেবো সেই নেবো করে নেওয়া হয়নি।

-- ও । ধনেমানবাবু আপনার ছোট ছেলের কত বয়স হলো?

-- আজ্ঞে প্রায় ত্রিশ বছর হলো। দুভাই প্রায় পাঁচ বছরের ছোট বড়।

-- রজতবাবু বললেন - তাহলে তো বিয়ে দেওয়ার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দেন নি কেন? আপনার তো অর্থের কোনো অভাব নেই?

--- গীতা বললেন - করবো না বলছে। এখন বললে বলছে সামনের বছর, সামনের বছর বললে বলে আসছে বছর ।আমরা ওর যখন পঁচিশ বছর বয়স তখন থেকে বিয়ের কথা বলছি। -- তখন আপনার বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছলো? রজত বাবু জানতে চাইলেন।

--- গীতা বললেন - হ্যাঁ প্রায় বছর দুই হবে বড় ছেলে বিমানের বিয়ে হয়ে গেছে।

-- ভাস্করবাবু ধীমানকে বললেন - ধীমান বাবু বিয়ে করছেন না কেনো? না কোনো গালফ্রেন্ড আছে?

-- না না সেরকম কিছু নয় ।আমার বন্ধুরা কেউ বিয়ে করেনি তাই আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে সকলে হাসাহাসি করবে তার জন্য বিয়ে করছি না ।

-- আমি উল্টো বলছি একজন করলে দেখবেন সকলে বিয়ে করছে‌। একজনকে আগে শুরু করতে হবে। আর কথা না বাড়িয়ে ভাস্করবাবু বললেন - আপনাদের বেডরুম গুলো দেখতে চাই।

  রত্না ও ধিমান বললেন - চলুন।

-- যেতে যেতে ভাস্করবাবু বললেন -আপনাদের এত বড় বিজনেস কে সামলাতো?

-- ধীমান বলল - দাদা একা হাতে সামলাতো।

-- তাহলে তো বিরাট প্রেশার পড়ে যাবে, রাতে ঘুম ছুটে যাবে‌!

-- হ্যাঁ দাদার তো হাই প্রেসার ছিলো। ঘুমের ওষুধ খেতো।

-- স্বভাবিক।

 ঘুরে ঘুরে দেখলেন বেডরুম গুলো, তারপর ছাদে গেলেন। সাথে ধীমান ও রত্নাও এসেছে। সবকিছু দেখে নিলেন,কিছু বললেন না।



 থানায় এসে রজতবাবুকে বললেন একজন মহিলা ও একজন কনস্টেবল কে সাধারণ বেশে

ধনেমানের বাড়ির উপর নজর রাখতে বলুন। কেবল ওদের গতিবিধির উপর যেন কড়া নজর রাখে ।ওরা কার সাথে কি কথা বলছে এইসব। আর দুজনের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছি ফোন ট্যাপ করুন ।যদিও লাভ কিছু হবেনা, ফোন সিম চেঞ্জ করে দেবে তাও।

জিজ্ঞাসা করলেন আজ রাত নাগাদ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিশ্চয় পেয়ে যাবো?

-- হ্যাঁ ।

--রিপোর্ট পাওয়ার পর ধনেমানের ঘরে যাবো।

-- ওকে।


পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে পাওয়া গেছে। বিমানের পেটে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে ।তাই কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ধনেমানের বাড়িতে ভাস্করবাবু রজতবাবু এসেছেন। জানতে পারলেন বিমান মদ খেত বাবা-মাও জানত । রত্না ঘুমিয়ে পড়লে একা একা ছাদে গিয়ে খেতো, কারণ রত্নার অ্যালকোহলের গন্ধে বমি পায়। মদ খেয়ে কি অবস্থা হয় বিমানের রত্না জানে না ।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুসারে ধরে নেওয়া হলো অত্যধিক অ্যালকোহল পান করার জন্য বেসামাল হয়ে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু ভাস্করবাবু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না কারণ চিৎ হয়ে পড়েছিল বিমান ও দেওয়ালের কাছাকাছি।



দিন সাতেকের জন্য অন্য একটা কেস সলভ করতে ভাস্করবাবু চলে গিয়েছিলেন ফিরে এসে শুনলেন ধনেমানের বাড়িতে কড়া নজর রাখার পরেও সন্দেহজনক কিছু পায়নি।

ভাস্করবাবু কারো ওপর ভরসা না করে নিজেই নজর রাখবেন ঠিক করলেন। কিন্তু কাউকে কিছুই বললেন না যে সে নিজে নজর রাখবে বরং বললেন নজরদারি যেমন চলছিল তেমনি চলুক। ভাস্করবাবু ফ্রেঞ্চকাট নকল দাড়ি পরলেন, মাথায় ঝাকড়া চুল পরলেন ,পাওয়ার চশমা, সাধারণ জামা প্যান্ট পরে ধনেমানের বাড়ি থেকে মেরেকেটে মিনিট দশেকের পথের দূরত্বে বাজারে নজর রাখলেন। ধনেমানের ঘরের দিকেই গেলেন না ।তিনদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরের দিন বাজারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন এমন সময় দেখলেন রত্না আসছে। একটা ফলের দোকানে এসে রত্না দাঁড়ালো। ফল কিনতে প্রচুর খদ্দের। বড় ফলের দোকান, তিনজন মিলে খদ্দের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। রত্না আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি হ্যান্ডসাম ছোকরা এল রত্নার কাছাকাছি দাঁড়ালো পনেরো মিনিট পর ছেলেটি কিছু না কিনেই চলে গেল ।রত্নাও চলে এলো। দেখে মনে হল ছেলেটি ফলের দাম জিজ্ঞেসও করেনি ।

ভাস্করবাবুর সন্দেহ হলো। ওরা চলে যেতেই কিছুক্ষণ পরে ফলের দোকানের দোকানদারকে এসে জিজ্ঞাসা করলেন - ভাই এখানে যে ম্যাডাম ফল কিনতে এসেছিলেন চলে গেলেন ?

-- হ্যাঁ। এইমাত্র গেলেন, ওই রত্না ম্যাডামের কথা বলছেন তো?

-- হ্যাঁ। আর ওই ছেলেটি?

-- কোন ছেলেটি?

-- রত্না ম্যাডামের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন?

-- উনিও চলে গেলেন?

-- ফল তো কিনলেন না?

-- না , মনে হলো রত্না ম্যাডামের সাথে দু'চারটে খুব নিচু স্বরে কথা বলছিলেন। মনে হলো পরিচিত। 

-- হতেই পারে। ছেলেটি কে চেনেন?.

-- চিনি না তবে আর একদিন দিন কয়েক আগে এসেছিলেন রত্না ম্যাডাম আসার পরে।

-- ও আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ।

ভাস্করবাবু চলে আসছিল। ও সাহেব ,সাহেব ডাক শুনে ঘুরে দেখলেন ফলের দোকানের পাশেই জুতো পালিশবালা ছেলেটি ডাকছে।

-- জিজ্ঞাসা করলেন - আমাকে ডাকছো ভাই?

-- হ্যাঁ সাহেব। আপনার এত সুন্দর চেহারা আর আপনার জুতোটা নোংরা দিন পালিশ করে দিই। দশ টাকা দেবেন।

 পালিশওয়ালার কাছে রাখা মাড়াটিতে বসে জুতো জোড়া খুলে দিলেন। ছেলেটি জুতো পালিশ করতে করতে বলল - সাহেব আপনি রত্না মেডাম আর ছেলেটার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন?

-- ভাস্করবাবু হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো উত্তেজিত হয়ে বললেন - হ্যাঁ তুমি চেনো? এত উত্তেজিত ভাস্করবাবু খুব কম সময় হয়েছেন।

-- ম্যাডাম কে চিনি ও জানি ছেলেটার বাড়ি ঠিকানা জানিনা।

-- ভাস্করবাবু আবার হতাশ হলেন।একসাথে সব আলো নিভে গেলে যেমন হয় তেমন ।

-- কিন্তু একটা উপায় আছে সাহেব।

-- আছে বলো বলো আমার আশার আলো দেখতে পেলেন।

-- কাল এই সময়ে আসুন না হলে আমাকে কটা দিন সময় দিন । তবে দোকান বন্ধ রাখলে খেতে পাবো না। 

-- পাঁচশ টাকার নোট বের করে দিলেন ভাস্করবাবু বললেন - আরো দেবেন।

পরের দিন ঐ সময়েই গেলেন।

ছেলেটি বলল - এসেছেন সাহেব। তারপর একজন প্লাস্টিক কুড়ানিকে হাতের ইশারায় ডাকলো।মেয়েটি আসতেই ছেলেটি বলল- সাহেবকে ওই ছেলেটির ঘর দেখিয়ে দিয়ে আয়। ভাস্করবাবুকে নিয়ে মেয়েটি চলল। ভাস্করবাবু একটি দু'শ টাকার নোট মেয়েটিকে দিলেন।মেয়েটি খুব খুশি হলো। মিনিট দশেক হাঁটার পর মেয়েটি আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখালো ছেলেটির বাড়ি।

-- ভাস্করবাবু দেখলেন - একটি সাত তলা ফ্লাট। থার্ড ফ্লোরে থাকে। মেয়েটি কে বিদায় দিয়ে থানায় রজতবাবুকে ফোন করলেন ।কিছুক্ষণের মধ্যে রজতবাবু পুলিশ-সমেত পৌঁছালেন।

-- ভাস্করবাবু বললেন - আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন ।আমি বিশেষ করে ডাকলাম এই জন্য যে সিকিউরিটি আমাকে ঢুকতে দেবেনা।

 ভাস্করবাবু ছেলেটির বাড়ির দরজায় কলিং বেল টিপলেন মনে দ্বিধা নিয়ে। দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কেউ আছে না নেই , দরজার এমনি সিস্টেম।

দরজা খুললো ছেলেটি, বলল- কাকে চাই?

স্যার আমি হেলথ ইনসিওরেন্স ,গাড়ির ইন্সুরেন্স জীবন বীমা সবকিছুর এজেন্ট স্যার।

-- আপনি মিথ্যা বলছেন আপনার ব্যাগ নেই, কাগজপত্র নেই ইনসিওরেন্স করবেন?

-- হাসালেন স্যার !আপনার মত মানুষও যদি এই কথা বলেন?

-- মানে ?

-- মানে সাথে স্মার্ট মোবাইল আছে কি জন্য?

সবকিছু জেনে বলে দেব এক্ষুনি।আপনার যে পলিসিটা পছন্দ হবে তার সব কাজ অনলাইনে করে দেবো এখানে বসেই।

 -- ছেলেটিও হেসে বললো - ঠিকই বলেছেন, আসুন।

 -- আপনার শুভ নাম স্যার?

-- অয়ন গোস্বামী ।

-- ধন্যবাদ স্যার 

অনেক পলিসির কথা বললেন ভাস্করবাবু।

একটাও পছন্দ হচ্ছেনা। শেষে বললেন - স্যার এই এস বি আই এর হেলথ ইনসিওরেন্স রত্না ম্যাডামকে এইমাত্র করিয়ে এলাম ।

-- রত্না?

-- হ্যাঁ স্যার । উনিই তো আপনার ঠিকানা দিলেন

নইলে কেমন করে আপনার কাছে আসতাম বলুন? এভাবেই তো আমাদের কাস্টমার বাড়ে। আপনি আবার খুশি হয়ে অন্য কোন আত্মীয় বা বন্ধুর ঠিকানা দেবেন, সেখানে আমরা যাবো। এভাবেই চলে স্যার।

-- ঠিক আছে রত্না কে ফোন করে জেনে নিচ্ছি।

-- অবশ্যই স্যার।ম্যাডাম তো বললেন আমি বললে না করবে না। আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্ব। যদি টাকার অসুবিধা থাকে ম্যাডাম বললেন আমি দিয়ে দেবো। স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসে ম্যাডাম ।

--ছেলেটি হাসলো।

-- স্যার ম্যাডামকে বিয়ে করলে পারতেন। আমার বয়স হলো অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ম্যাডাম খুব কষ্ট পাচ্ছি মনে হল ও বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। নিজের ভালোবাসাকে হারানোর বেদনা ম্যাডামের চোখে মুখে ।

অয়ন কোনো জবাব না দিয়ে ব্যথিত হলো। ভাস্কর বাবু লক্ষ্য করলেন।

রত্না কে ফোন করলো --- ও প্রান্ত থেকে হ্যালো হ্যাঁ বল,----- না না আমি কোন ইনসিওরেন্স এজেন্টকে পাঠায়নি, ও দেখো ছদ্মবেশে কে !

ফোন রেখে অয়ন বললো -আপনি কে?

-- আমি প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদার।

-- ভাস্কর তালুকদার সর্বনাশ !

-- হ্যাঁ সর্বনাশ ।

-- অয়ন ভাস্করবাবুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে গেলো।

ভাস্কর বাবু সিঁড়ি ভাঙার শব্দ পাচ্ছেন। জানালা থেকে চেঁচিয়ে বললেন রজতবাবু অয়ন পালাচ্ছে ওকে ধরুন।



অয়ন, রত্না ও ধীমানকে থানায় ধরে আনা হয়েছে ভাস্করবাবু একটা সিগার ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে বললেন এই খেলাটা কেন খেললেন রত্না ম্যাডাম? বলুন কথা বলুন সবকিছু নিজের মুখে স্বীকার করুন নইলে সব ব্যবস্থা আছে।

রজতবাবুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে ।রজতবাবুর আরো প্রচুর কাজ আছে তাই ডাকলেন সূর্পনখা?

সুপর্ণা নাম ওর। ফিগারের জন্য ও কাজকর্মের জন্য সবাই সূর্পনখা ডাকে, তাতে সুপর্ণা কিছু মনে করে না।

-- তড়িৎগতিতে সুপর্ণা এসে টুটিটা ধরে শূন্যে তুলে ধরল রত্নার। ফাঁসিকাঠে ফাঁসিতে ঝোলালে মানুষ মৃত্যুর আগে যেমন ছটফট করে তেমনি করে রত্না ছটফট করতে লাগলো। অল্প সময়ে রেখে ধপাস করে ফেলে দিলো বেঞ্চের উপর। কাসতে কাসতে বললো - বলছি আমি সব বলছি। 

আমার আর অয়নের ছোটবেলা থেকে প্রেম। আমরা বর্তমানে বিবাহিত ।আমার বাবা-মা মারা গেছে অয়নের ও তাই। কিন্তু আমার এক দাদা আছে সে কোথায় চলে গেছে জানিনা, অয়নের কোন ভাইবোন নেই। অতএব অয়নকে কে রেঁধে বেড়ে দেবে বা আমাকে কে আগলাবে, নিরাপত্তা দেবে ? দুজনেই বড় অসহায়।

আর পাড়া-প্রতিবেশী আমাদের দুজনের মেলামেশা বা এক ঘরে থাকা এটা সহ্য করতে পারছিল না। গ্রামের লোক এটা কিছুতেই মেনে নিতে চাইল না। তাই আমরা বিয়ে করতে বাধ্য হলাম। লেখাপড়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। গ্রামে কাজের সুযোগ কম কোন রকম দিনপাত হচ্ছিল ।তাই ঠিক করলাম সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে দুর্গাপুরে চলে যাবো। সেই মতো সব কিছু বিক্রি করে এখানে এসে ভাড়াবাড়িতে থাকলাম। দুজনে প্রাইভেট জব করে সুন্দর চলে যাচ্ছিল। আমি একটা নার্সিংহোমে রিসেপসনিস্টের কাজ করছিলাম। এখানে একদিন বিমান রুগী হয়ে এলো ।দিন সাতেক ভর্তি ছিলো। আমি জানতে পারলাম বিমান হিজড়া। কিন্তু বিশাল ধনী লোক, শিল্পপতি। আমার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল বাড়িতে এসে অয়ন কে বললাম - ওই লোকটাকে যদি বিয়ে করি তাহলে কেমন হয়? ও তো আমার কিছু করতে পারবে না আমি তোমারি থাকবো। ওকে কোনরকম রাস্তা থেকে হাঁটাতে পারলেই বিমানের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবো। আমরা শিল্পপতি হয়ে যাবো, শিল্পপতি। প্ল্যান মাফিক শেষ তিন দিন খুব খেয়াল রাখলাম ফোন নাম্বার দিলো। বিমানকে দেখলে বোঝার উপায় নেই ও হিজড়ে। প্রায় ছ ফুটের কাছাকাছি লম্বা, গৌরবর্ণ, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি কেবল লিঙ্গ নেই। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগলো। বিয়ে করলাম। প্রথম রাতে যখন জানতে পারলাম মানে জানি কিন্তু অভিনয় করলাম তখন বিমান বললো - একদম চুপ থাকবি আমার ঘরে সোনার পিঞ্জরে বন্দী হয়ে থাকবি, বেচাল দেখলে খতম করে দেবো। আমি আশা নিয়ে এসেছিলাম বিমানকে পথের থেকে সরাতে পারলেই হবে কিন্তু বিমানের যে ভাই আছে তা জানতে পারলাম বিমানকে বিয়ে করে বিমানের বাড়ি এসে। এক বছর বিয়ে হওয়া হয়ে গেল আমি বিবাহিতা পুরুষের সঙ্গ জানি ।তাই ধিমানকে প্রেম জালে ফাঁসালাম। এই কথাটা অয়ন জানেনা। দৈহিক সুখের জন্যই প্রেম, ভালোবাসি অয়নকেই। ভাবলাম যদি বিমানকে খুন করি তাহলে ধীমানকে হাতে রাখা জরুরি এবং সে হাতে থাকবে একমাত্র নারী শরীরের জন্য। বিমান রোজ রাতে প্রচুর মদ খেতো তারপর বেহুঁশ হয়ে ঘুম।সেই সুযোগে প্রতিরাত আমি আর ধীমান শারীরিক মিলন করতাম, আর গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট খেতাম কারণ প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে অয়ন মেনে নেবে না, বা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এইজন্য যে রাতে বিমান মরল সেই দিন আমি মদের সাথে ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছিলাম আর ধীমানকে বলেছিলাম আমার পিরিয়ড চলছে এসোনা। বিমানকে কোনরকম ছাদে নিয়ে গিয়ে কার্নিশে বসিয়ে দিলাম ।

--রজতবাবু বললেন - ভাস্করবাবু আপনি ঠিকই বলেছিলেন যে কেউ আত্মহত্যা করলে দূরে মুখ থুবরে পড়বে।

-- ভাস্করবাবু বললেন - আপনি বেঁচে গেলেন ধীমান। সেকেন্ড টার্গেট ছিলেন আপনি।মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন করব এইরকম দুশ্চরিত্রা,উচ্চাভিলাষী মহিলার ও অয়নের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। জানিনা আদালত ধীমানের জন্য কি শাস্তি বরাদ্দ করবেন।


                  

লেখক রোকেয়া ইসলাম -এর একটি গল্প

 জ্বর



 শেষরাতে প্রচন্ড শীতে ঘুম ভেঙে যায় রেহানা নাসিমের। গায়ের উপর পশমিনা কম্বল আছে তবুও এতো শীত। 

ওর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসছে। 

ওঠে কম্বলের উপর আরেকটা কাঁথা কম্বল দেবার ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই নেই। গায়ের কম্বলটা কান অবধি ঢেকে দিয়ে শুয়ে থাকে। 

হাড় কাঁপিয়ে জ্বরটা এলোই শেষ অবধি। 

রেহানা আর্লি রাইজার তবে 

শীতের সকালে ঘুম ভাঙে না রেহেনার । রোদ ডানা মেলে দেয় ডাঙায় তবেই জেগে ওঠে। 

আজ একেবারেই ওঠতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু নিম্নচাপ কঠিনভাবে চেপে ধরেছে। এই বয়সে যদি বিছানা ভিজিয়ে দেয় তবে বেজ্জতির শেষ থাকবে না। 

বাথরুম থেকে একবারে ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই ক্ষিদেটাও চনমনিয়ে জানান দেয়। 


বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে বিছানা ঝেড়ে টানটান করা আছে। 

রেহেনার এই এক দোষ। ভোরে আগের রাতের চিহ্ন দেখতে চায় না। 

বাসি ঘর ঝাড়ু না দিয়ে কোন কাজ শুরু করবে না। জানালা দরজা খুলে রোদটুকু ঘরে এনে ছড়িয়ে দিতেই স্বস্তি । 

জানালার পরদার কুঁচি ধরে ধরে ক্লিব দিয়ে আঁটকিয়ে রাখা। থাই রঙিন কাঁচ দিনেরবেলার রঙ বৈচিত্র্য ধরা দেয় ঘরের ভেতর। রাতের রঙ আঁটকে রাখে পরদায়। 

বেশকিছু পুরানো নিয়মকে ধরে রেখেছে সংসারে। তাতে কোন ক্ষতি হয়নি। বরঞ্চ।ভালটাই পায় সংসারে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সকাল থেকেই শুরু হয়। 

এগুলো সুসংস্কার। এগুলো যতটা পারা যায় ততোটা আঁকড়ে থাকতে হবে। 

দিনের খা খা রোদেও চোখ খুলতে পারছে না আজ রেহানা। সমস্ত শরীর ব্যাথায় কাতর হয়ে আছে। 

ঘোর জ্বর ওর শরীরে পাকাপোক্ত আসন নিতেই ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। এইসময় জ্বর মানেই তো অতিমারি করোনা। প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে মৃত্যু। 

মৃত্যুকে ভয় পেয়ে লাভ নেই। মৃত্যু অনিবার্য সত্য সেটা আজ হোক কাল হোক আসবেই। 

মৃত্যু পরম বন্ধুর মতো হোক।" মরন তুহুঁ মম শ্যাম সমান "। 

মৃত্যু হোক নিরবে নিভৃতে ঘুমের মধ্য দিয়ে। অথবা মৃতুর সময় ঘিরে থাকুক প্রিয়জন। ও দেখে যাক জীবনের রক্ত মুখে তুলে যাদের লালন পালন করেছে যাদের মঙ্গল কামনায় দিনরাতের বেশিরভাগ সময় ব্যায় করেছে তারা ওর বিয়োগ ব্যাথায় কাতর। তাদের বেদনা বিধুর মুখ দেখেই পাড়ি দিক পরপারে। 

করোনা মানে তো কেউ চাইলেও কাছে আসতে পারবে না। একাকী এক ঘরে রোগ কষ্টের সময় যাপন করতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসার দুরবস্থার কথা তো অজানা নয়। 

লাসের মুখটাও তো কেউ দেখতে পারে না। 

ভেতরে ভেতরে শিউরে ওঠে।

মৃতদেহকে কতটা অপমান করা যায়!! 

 না না করোনা নয়!! প্রবল শত্রুকেও করোনায় মৃত্যু নয়!! 

এমন ঠান্ডা জ্বর বছরে একবার আধবার হয়। এটা কি তেমনই নাকি করোনার করাল গ্রাস? 

বুকের ভেতরটা তেষ্টায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। মাথার ভেতরের অসহ্য যন্ত্রণা। ভয় সবমিলিয়ে খুব অসহায় সময় রেহেনার এখন। 

মনে পড়ছে মায়ের কথা। এমন জ্বর হলে মা ঠান্ডা পানিতে মাথা ধুয়ে গা মুছিয়ে পাউডার মেখে দিতে যাকে ফুলেল সৌরভে রোগাভোগা শরীরের মনটা উৎফুল্লু থাকে। তাতেও অর্ধেক রোগ দূরে সরে যায়। 

রবিনসন্স বার্লি লেবু লবন দিয়ে চুমুকে চুমুকে খেতে দিতো। দুধ সাবুও চলতো কখনো কখনো। আবার পাটায় একটা আস্ত হলুদ পিষে সরষের তেল মেখে গরমাগরম ভাত মেখে খাওয়া হতো। বাটি ভর্তি আনারস খেতেও ভাল লাগতো। 

রেহেনার পছন্দ ছিল জাম্বুরার লাল লাল কোয়া ছাড়ানো লবন আর টালা শুকনো মরিচের গুড়ো ছড়িয়ে প্লেট ভরে সামনে দিলে চামচে করে একটু একটু মুখে পুরে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খাওয়া। 

সিবাজলের সাদা ট্যাবলেট খেয়েই জ্বর পাগার পার। 

কতদিন হলো মা নেই পৃথিবীতে। মায়ের মত ছোট খালাও রেহেনার জ্বর হলে এমনি আদর করতো। 

রেহেনার মনে হচ্ছে ওর জ্বরের উত্তাপে ফেটে যাবার উপক্রম কপালটার উপর মায়াময় শীতল হাতের স্পর্শ পড়ুক। একবার মায়ের হাতের স্পর্শ পড়ুক। 

গরম চোখের উপর শীতল স্পর্শের জন্য আকুল হয়ে ওঠে রেহানা। 

-আর একটু আর একটু মাথাটা উঁচু করে ধর। আর একটু। 

অনেকক্ষণ পর মাথায় জলস্পর্শ পড়ছে। গরম চোখের পাতায় শীতল পরশে বেশ আরামদায়ক লাগছে। 

চোখ খুলে দেখতে পায় পুত্রবধূ আফরোজা আর বড় নাতী দীপ্র ওর মাথায় পানি ঢেলে জ্বর নামিয়ে এনেছে। শরীর মুছিয়ে সমস্ত শরীরে পাউডার মাখিয়ে দিচ্ছে। 

চামচে করে থাই স্যূপ খাইয়ে ঔষধ দিয়ে দেয়। 

দুধ সাবুর আধুনিক সংস্করণ থাই স্যুপ। 

রেহেনা শুয়ে পড়ে। মাথার কাছে পিরিচ থাকে ছোট ছোট লবন মাখানো আদার টুকরো। 

না করোনা নয় সাধারণ ফ্লু। হাফ ছেড়ে বাঁচে রেহেনা। 

মনে হয় মাঝেমাঝে এমন নিরাপদ জ্বর হলে শরীর নতুন হয়। অতীতও কাছে আসে।  

মা ছোট খালা নতুন রুপে।

চোখ ভিজে ওঠে রেহানার। 

মনের ভেতর রেহানা এবাদতের হাত তোলে সৃষ্টিকর্তার দরবারে-

"সৃষ্টিকর্তা করোনার ভয়ংকর রুপ দূর করে দাও। মানুসের জন্য সহনীয় কর। 

করোনাকে মানুষের করায়াত্ত কর প্রভু। 

আর্তের দোয়া কবুল কর। বিশ্বের জন্য করোনাকে সহনীয় কর।"

কবি কমল মন্ডল -এর একটি কবিতা

 আন্তরিকতা 

       


তোমার আগমনের অপেক্ষায় অস্থির আমার জগৎ 

স্বপ্ন বুনতে থাকে আনন্দ 

তোমার আলোর গান শুনবো বলে ---

এতো সকালের অস্থিরতা 

এতো সময়ের অপেক্ষা 

এতো আনন্দ জমিয়ে রেখেছি কাশফুলে। 

আগুনের পরশমণি ছঁয়ে

তোমার আগমনি সূচনা করুক 

এক নতুন শতাব্দীর। 

এতো হিংসা নয়, এতো রক্ত নয়, নয় এতো হৃদয়হীনতা

আগামীর নূতন আলোর ফুটে উঠুক 

তোমার হৃদয়, তোমার আকাশ...

কবি ইব্রাহিম সেখ -এর একটি কবিতা

 দাও স্নেহাশিস



চারিদিকে ঘনিয়েছে ঘোর অন্ধকার

প্রজ্জ্বলিত দিবাকর খুঁজি দিনেরাতে,

যেখানেই প্রেম খুঁজি দেখি বন্ধদ্বার

মানবতা কেঁদে ফিরে বিবর্ণ প্রভাতে!


হৃদয়ের অভ্যন্তরে জ্বলছে আগুন

ডুবেছি সাগর জলে দারুণ দহনে,

নিদারুণ তাপে পুড়ে বসন্ত ফাগুন

উপশম হবে সে'কি শাশ্বত মরণে!


এতটুকু আলো চাই, এক ফালি চাঁদ

শিশিরের মুক্ত কণা চাই ফুলদল,

ভেঙেচুরে মিশে যাক বিভেদের বাঁধ

সকলের খাদ্য হোক নানাবিধ ফল।


স্নেহাশিস দাও প্রভু অভাগার শিরে

ডুবে যেন যাই না-গো নয়নের নীরে!

কবি ক্ষুদিরাম নস্কর -এর একটি কবিতা

 গাছ




গাছ,একটা বড় গুঁড়ির গাছ---

ডালপালা মেলছে সে মাথার উপর,

শত আঘাতেও যার 

সহ্যের সীমা লঙ্ঘিত হয়না।


পরিশ্রমের ঘাম মুছে 

হাসি দেখতে চায় সবার মুখে 

দৈনের দায় নিয়ে নিজের মাথায় 

বয়ে চলে বছরের পর বছর।


যার আঁখিতে অশ্রু নেই 

মনে বাসনা নেই 

কেবল কর্তব্য পৌঁছে দেয় 

ফুল-ফল পাতায় পাতায়

কবি সৌমেন কর্মকার -এর একটি কবিতা

 হোতাই একটি চরিত্র




নাদুস নুদুস লম্বা চেহারা তার

সক্কলে ভাবে তারে হদ্দ বোকা,

মফফসল জুড়ে মস্ত নাম ডাক 

লোকে বলে উকিলবাবুর খোকা।


মুখে ক্যাবলা ক্যাবলা অঙ্গভঙ্গী

হাঁটলে পরে আগে আগে চলে পেট,

স্কুল বা যেকোনো দরকারি কাজে

সময় থাকতেও করে হামেশাই লেট।


খেয়ে দেয়ে যখন ঘুমোতে যায়

কেটে গেছে তখন আধা রাতটা,

ভোরবেলাতে তো ওঠেনাতো সে

ঘুম ভাঙে সকালে ঠিক আটটা।


সবুজ শাক সবজি কিবা ফল

ধুর ধুর ও সবেতে তার অনীহা,

মাছ মাংস ডিম চর্বি মুখরোচক

পাতে পেলেই বলে আহা আহা।


ঠাকুমা বাবা মা বলে বলে হয়রান

বিকেলে যায় নাকো মাঠে খেলতে

আলসেমি ও কুরেমিতে ফুরায় দিন

সারাক্ষণ বসে রয় মোবাইল হাতে,


আঁকাআঁকিতে ঝোঁক বেশ প্রখর

পড়াশোনাতেও আছে ভারী দম,

বোঝে শুনে লেখে খুব,পড়েও খুব

তবুও রেজাল্টে নম্বর পায় কম।


গ্রামে কি শহরেতে বেড়াতে গেলে

তার সনে যায়না তো পথচলা।

গল্প আর হাসাহাসি তে সে মশগুল

রাস্তা ঘাটে হয়ে যায় মন ভোলা।


প্রেমের কথা আর বিয়ের ফোরণ

বলোনা কেউ কোনোদিন খবরদার,

প্রথমে শুনে মুচকি হাসবে বটে

পরে উগ্র রূপে মাথা হবে লাল তার।


এমনি তে সে বড্ড সৎ শিষ্ট ভদ্র ছেলে

শরীরে পৈতে শিরায় বয় বামনের রক্ত,

পরিবারের সব্বাই আঁকা গান ছাড়াও

সে যে অন্ধ ভবমোচনী কালীমার ভক্ত।


দেখতে দেখতে এলো গেলো কত বছর

একে একে স্কুল জীবন শেষ হলো হায়,

ছোটোবেলার দুষ্টুমি বড়বেলার অভিজ্ঞতা

কাটিয়ে এখন কলেজে যাবে হোতাই।

কবি উদয়ন চক্রবর্তী -এর একটি কবিতা

 বাষ্প হবার অপেক্ষা




নিজেকে নিজের ছায়ার সাথে 

মিলিয়ে চিনতে না পারা একটা ব্যর্থতা।

একটু একটু করে ধ্বংস করতে হয় জীবন 

তারপর ধ্বংসযজ্ঞ সমাপ্ত হলে একটা

গল্প কিংবা উপন্যাস পরে থাকে মৃতদেহ হয়ে।

রক্তের তপ্ত অহংকার আর বিন্দু বিন্দু ঘাম 

দিয়ে একটা সাজানো ব্যক্তিগত খেলা চলে,

সময়ের সাথে পলিমাটি জমে চরা পরে সে

চরাচরের জায়গায় জায়গায়। হেঁটে যায় স্মৃতি লব্ধ জীবন। কর্পূরের মত মিলিয়ে যায়

সমস্ত আর্তি রিরংশা

পরে থাকে পুড়ে যাওয়া হাউইের খোল

শেষ উষ্ণতা বুকে। রয়ে যাওয়া জীবন অনুকম্পা চায় বাষ্প হবার অপেক্ষায়।

কবি শ্যামল চক্রবর্ত্তী -এর একটি কবিতা

 করোনা তফাৎ খাঁটি বলে মরে


                  


করোনা তফাৎ খাঁটি বলে মরে।

হিন্দু-মুসলিম সবাই খাঁটি ওরে।

কেমন করে বলবে মরে,

খুলে দেখ ইতিহাসটা রে।

জটিল তত্ব আছে তারে ভরে।

হ্যাঁ ওরে বলো বাঙালি মরে।

জড়িয়ে আছে তারে সংস্কৃতি।

পরিধান কেন আচার-আচরণে।

ভাঙে ঘুম বাঙালির ব্রিটানিয়া বিস্কুট।

চুমুক চায়ে আরামকেদারায়।

বাসি হয়না ঐতো খবর আনন্দবাজার।

কেনো, গরম ভাতে ঘি ঐতো মনে পড়ে।

বলব কেন বিরিয়ানি, সুক্ত প্পোস্ত আছে তাতে।

জুড়ে আছে কত স্মৃতি ঐইতো সংস্কৃতি।

বাঙালির উৎসব আছে এক উৎসব,

পিঠে পুলি বলি কেন দুর্গা উৎসব।

মজার হুল্লোড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ।

নতুন পোশাকে মাতোয়ারা শৈশব ।

মজে মন বিহ্বলতায়, জাগে মন উৎসবে।

পৌড়ের মন যেন শৈশবে ওই হাসে।

পৌষে এলো পাটালী গঞ্জে গন্ধে মম করে।

মিষ্টি স্বাদে খেজুর রসে, শীতের আমেজ প্রাণভরে।

কথ্য ভাষা বাংলা বলে সহজ নাকি বাংলা বলা।

পরিধানে বাঙালিয়ানা পাঞ্জাবি ধুতি টা।

বারো মাসে তেরো পার্বণ সংস্কৃতি শেষ হবে না কখনো।


কবি ঋদেনদিক মিত্রো -এর একটি কবিতা

 গ্রামের বর্ষা  

  


ঝির ঝির ঝির ঝির,  

     টিপ টপ টিপ টপ,   

বর্ষা কেমন হচ্ছে দেখো --  

    পাড়ার মতির দোকান থেকে 

     আনো গরম চপ,   


চপের সাথে মুড়ি,  

      পাশে রেডিও খোলা,      

দেখবো চেয়ে যাচ্ছে ভ'রে   

       পুকুর,, মাঠ ও জলা,   


কাদা হচ্ছে, আরো হবে,  

       সহজ হয়ে আর যাবে না চলা,  


উঁচু দাওয়ায় মাদুর পেতে 

         বালিশ থুয়ে কথায় মেতে ---

          গল্পে বসে আড্ডা দেবো,  

      পারলে আনো দু চারিটা 

           ঘরের গাছের পাকা কলা,  


এতো বর্ষা, ডুবছে সবই, 

          আর যাবে না চলা!  


নিবিড় হাওয়ায় ঠান্ডা খানিক,  

   হঠাৎ প্রতিবেশী মানিক --- 

      একটু ভিজে এসে বলে -- 

        মা পাঠালো ডেকচি ভ'রে পিঠে,  

        বর্ষা কালে লাগবে ভালো,  

         আচ্ছা দাদা, বন্যা নাকি হবে শুনি, 

           কিন্তু --- কোন দিকে? 

           আচ্ছা, এখন ডেকচি রাখো, 

           পরে এসে নিয়ে যাবো, 

              এখন খেও পিঠে! 


সন্ধ্যে এলো পরে-পরে,  

    গ্রামের আলো জ্বলে,  

বাড়ি ফেরার তাগাদাতে ---

     যে যার মতন অন্ধকারে চলে,  


শিশুরা সব পড়তে বসে  

    মন বসে না পড়ায়,      

বর্ষার ছাট মাঝে-মাঝে   

    বইয়ের পাতা ভরায়,  


ভালোই হলো -- শিশুর মনটা  

     ভাবে --- বর্ষা দেখে --  

আনমনে সে একটু পড়ে, 

     আবার একটু লেখে,  


কল্পনাতে আশা করে -- 

   আগামীকাল পড়া হবেনা 

      আমার ইস্কুলেতে   

        বর্ষা এলে ছেপে,  


গুরুজনের নেই তাগাদা --- 

      পড়িস ভালো করে,    

বর্ষা নিয়ে হচ্ছে কথা --- 

       রেডিওটাকে ধরে,  


সংবাদ, গান, যাত্রাপালা  

      রেডিওটা-তে শোনা,   

এর সাথে টিভি কম্পিউটার -- 

      হয় কি গো তুলনা?  


রাত বাড়তে আসছে কানে  

     ঝিঁঝি পোকার ডাক,   

ডাকছে আবার কোথাও ব্যাং -- 

    উঠছে জমে রাত,  


কেউ বললো, কেন এলো 

    বিদ্যুৎ এই গ্রামে,   

কেন হলো ঢালাই রাস্তা --- 

     কে যে এসব আনে?  


তবুও আজো বেঁচে আছে  

     গ্রামের টুকু ছোঁয়া,   

দুদিন পরে থাকবে না তা-ও 

     সবই গেলো খোয়া,   


গ্রামের যে সেই পুরানো পথ  

     ছিল মাটি কাদা,   

দাওয়ায় এসে চাঁদ পড়তো -- 

     সামনে খড়ের গাদা,  


ঘরের ফোকোরেতে ঢুকে  

     পাখি করতো বাসা,   

সেই গ্রাম আজ যায় হারিয়ে,  

     নেইতো লাঙ্গল, চাষা,  


কেউ বললো, থিয়েটার যুগ  

     শেষ হয়েছে কবে,    

এসব কথা এই বরষায়  

     আসছে অনুভবে,  


বলতে-বলতে বর্ষা থামে  

     তবুও দু চার ফোঁটা --- 

পড়ছে তো বেশ মাঝে-মাঝে --- 

     হালকা হচ্ছে কথা,  


এর মধ্যেই হয়ে গেলো --- 

     কত আলোচনা!  

দেশ বিদেশের কথা এবং  

     মামলা মোকদ্দমা,  


এসব নিয়েই বর্ষা ও গ্রাম,  

     আলো আঁধার ছবি,    

বুঝবে যখন এর রূপ রস --- 

     হয়েই যাবে কবি! 


কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

 কামহীন ভালোবাসা 



হৃদয়ে একটু আঘাত পেলেই

পরমান্ন হয়ে যায় পান্তা ভাত

উচ্ছিষ্ট স্তুপে জমা হয় সেই পরমান্ন।

আতর মাখা সুন্দরী মেয়েরা পরমান্ন পছন্দ করে না,

শুধু ভালোবাসে চাইনিজ ফুড আর বিদেশী রকমারী।


অধিক লোভে মুখ ফিরিয়ে রাখে পরমান্ন থেকেও,

শুধু মায়াবী রঙের ঝাপসা আলোয় ধাঁধা করে দুচোখ।

স্বর্গীয় সুখের লালসায় ঘৃণা করে কামহীন ভালোবাসাকেও

শুধু এক চিলতে ইন্দ্রপ্রস্থ দেখে লোভে পড়ে যায় সে।

হয়তোবা জানে না পরমান্নেই লুকিয়ে আছে মাতৃভূমির অম্লান স্মৃতি।

কবি কাজী রিয়াজউদ্দিন আহমেদ -এর একটি কবিতা

 প্রশ্ন



পাশের বাড়ির খুকু আমায়,বড়ই ভালো বাসে,

মাঝে, মাঝে, কথায় কথায় সে   

যে মুছ্কি হাসে।

প্রশ্ন করে বলতো চাচু, রক্ত কেন লাল?

বলতো দেখি, পাকলে পরে খসে কেন তাল? 

মানুষ কেন দু-পায়ে চলে, চারপা কেন গরুর?

ঘোড়া কেন ছুটতে থাকে, হাতির কেন শুড়?

গাই গরুতে দুধ দেয় কেন? ষাঁড়ের কেন নাই? 

মানুষ কত কথা বলে,পশু বলেনায়?

চারের পরে পাঁচ কেন?ছয় হলে কি হয়?

দশের আগে আট না হয়ে,হয় যে কেন নয়?

আপেল কেন নিচে পড়ে? রাতে কেন উঠে চাঁদ?

বর্ষাকালে ভাঙে কেন নদীর মস্ত বাঁধ? 

আমি বলি থাক, থাক,থাক কথা কে আর শোনে,

সব উত্তর দেব আমি শুয়ে রাতে ফোনে।

কবি জয়তী দেওঘরিয়া -এর একটি কবিতা

 বলে গেল না

                    


নিত্য দিনের মতোই 

বেরিয়েছিল ছেলেটা

কিন্তু আর ফিরল না!

একটা ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ 

সব ওলোট-পালোট করেদিল।

হয়তো সে সাবধানেই ছিল

নয়তো ছিল বেশ কিছুটা বেপরোয়া।

কোনোটাই অসম্ভব নয়।

সহযাত্রী আজ পাঞ্জা লড়ছে

মৃত্যুর সঙ্গে।

কানাঘুষো চলছে

একে অপরের সতর্কতায়।

কোন্ টা গুজব,কোন্ টা সত্যি

যাচাই এর সময় নাই।

সন্তানহারা জননীর 

আর্ত চিৎকারে

বিদীর্ণ হয় আকাশ-পাতাল। 

একসময় স্তিমিত হয়

আর্তবেদনার রোল,

অস্ফুট স্বরে শ্রুত হয়---

বলে গেল না!

কবি চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী -এর একটি কবিতা

 কালোমাছি বাছতে সাহস করিনি



একটি আমন্ত্রণ-পত্র ভোরের নরম আলোর মতো

আমার মুখ-মণ্ডল ছোঁয়

জীবনের প্রথম প্রেম পত্রটি হাতে পেলে নিজেকে

ঝর্ণার মতো গড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে।


আপনার নামের পাশে আমার কবিতাটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হবে, জেনে

কৃষ্ণ দর্শনে রাধিকার মতো পরম সুখে নেচে উঠে

আমার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।


শুধু জানিয়েছিলাম,উদর; অনুনয় বোঝে না

তাই ভয়ে ভাতের চালের কোন দিন কালোমাছি বাছতে সাহস করিনি।


মোড়-উন্মোচন হলো

সুজনের কাছ থেকে পত্রিকা চেয়ে চোখ রাখি

দেখি আমার কবিতা ছাপা হয়নি।


এমন আত্মতৃপ্তির খুশি,এর আগে

আমার উঠোনে কোন দিন সানাই বাজায়নি।