Monday, February 27, 2023

আমি - সত্যেন্দ্রনাথ পাইন || কবিতা || Poetry || Poems

 আমি

  সত্যেন্দ্রনাথ পাইন



আমি দুমড়ে মুচড়ে ভক্ষণ করি

      অতীত ইতিহাস

জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারি

    জীবনের পরিহাস।

    সাগর থেকে শিক্ষা নিই

    কীভাবে আবার বাঁচবো

   ঢেউয়ের কাছে নতজানু হই

       কোথায় কখন নাচবো।

আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি

         মানুষ হতে শেখাও

লিখতে লিখতে জানতে পারি

        শুকতারাটা দেখাও।

চিতার আগুনে ঝলসে মারে

        অক্ষম বন্দনা

মানুষের মতো সহ্য করো

       সকল লাঞ্ছনা ।


পারিনি আজও নিজের করে

          নতুন বিষয় জানতে

    আয়না আমাকে শেখায় কতো

          নতুন পথে হাঁটতে।


আমি যেন পরিযায়ী পাখি

       উড়তে উড়তে ভাসি

চিন্তা গুলো হাতছানি দেয়

       শেখায় নতুন হাসি।

আমি আমার দুঃসহ ব্যথায়

      কাতর যখন ভাবি

মরিচঝাঁপি খুলে দেখি সেথায়

    গোছা গোছা পড়ে চাবি।।


আমি আমার বেডরুমে শুয়ে

       চক্ষু বুঁজে দেখি

কেউ কোনদিন আপন হয়না

      সবটাই শুধু মেকি।

অপমান লাঞ্ছনা সবই তোমার

           একান্ত তারা আপন

বাকি সব ধুলোয় মলিন

          করলে দিনযাপন।।


কী হবে সেটা কিছুতেই মানতে

          যদি না পারি

অক্ষম চালে কিস্তিমাত রাজা মন্ত্রী

          জায়গা ছাড়তে নারি।।


হে প্রভু, তোমার কাছে সবখানে যেন

       এইটুকু শিক্ষা পাই

সকলের কাছে মানুষ হতে  

     হাত পাততে নাই।।


  আজকে যারা আপন ভেবে তোমায়

           দিচ্ছে হাততালি

তারাই নামবে মাঠে ঘাটে পথে

     সব করে দেবে দেদার খালি।।

লম্বা জিভের গল্প - বিকাশ ভট্টাচার্য || কবিতা || Poetry || Poems

 লম্বা জিভের গল্প 

বিকাশ ভট্টাচার্য 


আগাছার মতো উপড়ে ফেললে উঠোন তো নয়

বয়সের রং গাঢ় সবুজ হয়নি তো

আদিগন্ত তৈরি হলো একমাত্রিক গল্পভুবন

নৈরাজ্যে ফসল তোলে ভুবনচষা দোসর

একলা ঘরে বায়বীয় গল্পে ডোবা চোখে

বর্ষা দ্যাখে মিঠাপুকুর বাঁশের সাঁকো থেকে

ওপারেতে তোমার বাড়ি উঠোন ছুঁয়ে জল

দু'পার জুড়ে সজল কথার তীব্র আলোড়ন 


আগাছার মতো উপড়ে ফেললে মুদ্রাদোষে

উঠোন তো নয়। গল্পটা তো লম্বা জিভের 

দূরত্ব - অঙ্কিতা মজুমদার || কবিতা || Poetry || Poems

 দূরত্ব

অঙ্কিতা মজুমদার



অতি দূর ঝাপসা সম্পর্করা -

দূরত্বে শ্বাস ফেলে।

দিন যাপনের গল্পে

কিছু সুখ কুড়িয়ে নেওয়া বিকাল,

আবার - ব্যথা হয়েও ঝরে।

পাড়ের খোঁজে পারাপার বিচ্ছিন্ন।

একই আকাশের নিচে,

একই বাতাসের স্পর্শ গায়ে মেখে,

চিরতরে বিলীন।

অন্তঃপুরের কক্ষে

বেমানান হিসেবে জর্জরিত।

বাঁধ ভাঙা জলোচ্ছ্বাসে

উপচে পড়ে অতি গভীরতা।

ছিন্ন খঞ্জনার মত নৃত্যে অবসান,

রঙ বাহারে বিবর্ণ রঙ ঢালা।।

বিষাদকুয়াশা - ইন্দ্রাণী পাল || কবিতা || Poetry || Poems

 বিষাদকুয়াশা 

 ইন্দ্রাণী পাল 



আকাশে ফুটে ওঠে ধনিষ্ঠা

 টানটান ছিলায় কালপুরুষ ; আমার বাবার মুখ

 এখানে নক্ষত্রে মিশে আছে


 কলঙ্কিনী চাঁদ নেমে যায়

 অতলস্পর্শী কুয়া----হিমশীতল অন্ধকার

 টলটলে মুখ ভাসে----বিষাদ কুয়াশা

কথা দিলাম - গোপাল চন্দ্র মণ্ডল || কবিতা || Poetry || Poems

 কথা দিলাম

— গোপাল চন্দ্র মণ্ডল


আবার যদি দেখা হয় পড়ন্ত বৃষ্টির বিকেলে

ভিজব সারাদিন তোমার নুপুরের তালে তালে

তখন হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাবে কানের পাশ দিয়ে

তোমার আধভেজা কালো চুলগুলো

বিছিয়ে যাবে গণ্ডদেশের সমান্তরালে

আমি আদরমাখা হাত দিয়ে একটা একটা করে চুল সরিয়ে দেব

তখন দৃষ্টি অন্যদিকে থাকবে না

কেবলই তোমার মায়াবী চোখের দিকে

না, পলক ফেলব না সেদিন

তোমার লাজুক দৃষ্টির মাঝে নিজেকে সঁপে দেব

তুমি এড়িয়ে যেতে চাইলেও পার পাবে না


আবার যদি দেখা হয় শান্ত নদীর ঘাটে

উরন্ত প্রজাপতি ধরে এনে বিছিয়ে দেব তোমার গায়ে

তোমার মুখের এক কোণে

হাসির ঝলক দেখব বলে

তোমার শোনা সেই প্রিয় গানটি বারবার শোনাব

আর আমার লেখা গানে

চেনা সুর ভরিয়ে দেবে তুমি


আবার যদি দেখা হয় রাতের অন্ধকারে

ভয় পেয়ে তুমি ছুটে আসবে বুকে

নিস্তব্ধতা বেড়ে যাবে, আর তোমার দীর্ঘশ্বাস

দুই হাত দিয়ে তোমার মুখটা দেখার বৃথা চেষ্টা

কেবল ভরসা ও সাহসের চুম্বন এঁকে দেব

তোমার উষ্ণ কপালের এক কোণে

মোরগ ও শেয়াল - বিজন বেপারী || কবিতা || Poetry || Poems

 মোরগ ও শেয়াল

বিজন বেপারী


মোরগ মশায় ফন্দি করে

ধরবে আজি শেয়াল,

চুপিচুপি জাল পেতেছে

রাখে অতি খেয়াল।


সঙ্গী তাহার হাতি গাধা

পাহারা দেয় দূরে,

হাতি নাকি শেয়ালকে ভাই

তুলে নেবে শূরে।


একদিন খুব সকাল বেলা

আসে শেয়াল চুপে,

একটা মোরগ নিয়ে খাবে

আশা বড় বুকে।


যেই না শেয়াল লাফ দিয়েছে

আটকা পরে জালে,

হাতি গাধা দৌড়ে এসে

পরে গিয়ে খালে।


মোরগেরা ঝাঁপিয়ে পরে

শেয়াল মামার ঘাড়ে,

আজকে শেয়াল ভেজা বেড়াল

মোরগেরা মারে।


কোনোমতে জানটা নিয়ে

পালিয়ে শেয়াল বাঁচে,

তওবা করে আর কোনদিন

যাবেনা মোরগ পাছে।

কবি ও কুয়াশা - দেবাশিস তেওয়ারী || কবিতা || Poetry || Poems

 কবি ও কুয়াশা 


দেবাশিস তেওয়ারী 



নগরে নগরে লাগে ঘোর

মাথা থেকে চাপ নেমে যায়

জীবনে আসেনি কোনও ভোর

যার দরজা খোলাও অন্যায়


অচলায়তন মনে চলে

ব্রেকফাস্ট নতুন খবর

হৃদয়ে পাথরভার গলে

জীবন দেখেনি আজও ভোর


কুয়াশার পথ ধুলোমাখা

সবুজ ঘাসের ডাঁই মেখে

এসে দেখি তুষে জ্বলছে আখা

একজটা দেবের কথা লেখে


আর লেখে ভোরের আমানি

কবির দু'চোখ জুড়ে ঘোর

বৃষ্টি ও মেঘের কানাকানি

বদলে দিল সদাহাস্য ভোর


কীভাবে জমাট বাঁধবে মনে

পাথুরে পথের বাঁকেবাঁকে

একটা ঘোর আসুক অঙ্কনে

একটা ঘোর লিখবে কুয়াশাকে

প্রত্যয় - আবদুস সালাম || কবিতা || Poetry || Poems

 প্রত্যয়

আবদুস সালাম


বিষন্ন সময়ের ডায়েরিতে লেখা দিন যাপনের বিরহ গাথা

ধূসর পৃথিবী

রঙিন চশমায় দেখি আশাবাদের পরলৌকিক দীর্ঘশ্বাস

  সীমাহীন মুহূর্ত নিষিক্ত হয় সম্ভবের অ্যালবামে


হৃদয়ের শূন্যতায় ছড়িয়ে পড়ে করুন হাহাকার

পথের বাঁকে গুঁজে দিলাম ঠিকানাহীন ছায়া

পর্যটন ভাবনা খুঁজতে থাকে ভাষা


ইচ্ছেরা গুমরে মরে

পাওয়া না পাওয়ার আয়োজনে বিচলিত হয় উৎশৃংখল শহর

বেজে উঠে নিঃসঙ্গ প্রেমের বাঁশি

এভাবেই স্বপ্নেরা মরে যায় রোজ


কবরডাঙ্গায় কারা যেন টাঙিয়ে দিয়েছে জীবনের বিজ্ঞাপন

ধ্রষ্ট পৃথিবীর মিথ্যাবাদী উচ্চারণ কিনে নেয় প্রেম

জীবনের কিনারায় দাঁড়িয়ে কবর ডাঙ্গার মঞ্চে ছোট শিশুরা গাইছে

" সোনা রোদের গান

আমার সবুজ পাতার গান "---

আকাশের ক্যানভাসে সাদাকালো ছবি - অসিত কুমার পাল || কবিতা || Poetry || Poems

 আকাশের ক্যানভাসে সাদাকালো ছবি

       অসিত কুমার পাল



আমি ছবি আঁকতে চাই

সাদা ক্যানভাসে

জলরং দিয়ে আঁকা

 সাদা কালো ছবি ।


তাতে তারাভরা আকাশ থাকবে

মেঘ থেকে ঝরেপড়া বৃষ্টি থাকবে

পাহাড় থেকে নামা ঝর্ণা থাকবে

আকাশ ছোঁয়া। পাইন গাছও থাকবে ।


আর থাকবে একটা ছুটন্ত ঘোড়া

গোটা কয়েক উড়ন্ত ভিনদেশী পাখি

ফুলের উপরে বসা কালো ভ্রমর

আর ধোঁয়া ছাড়া একটা রেলগাড়ি ।


 মানুষ না থাকলে চলবে না , তাই

 লাঠি হাতে একটা বুড়ি থাকবে

 কয়েকটা খালিগায়ে বাচ্চা থাকবে

অবাকচোখে তাকানো কিশোরী থাকবে ।


 কিন্তু একসঙ্গে এতকিছু ধরবে

এতবড় মাপের ক্যানভাস কোথায় পাব ?

ভাবছি মাথার উপরে থাকা আকাশটাকে ই 

আমার ছবির ক্যানভাস বানিয়ে নেব ।

জিভ - গোবিন্দ মোদক || কবিতা || Poetry || Poems

 জিভ 


গোবিন্দ মোদক



আবারও বলছি ধর্মাবতার —


আমার আস্তিনে কোনও ছোরা লুকানো নেই


লুকানো নেই রক্তপিপাসু কোনও অস্ত্র 


আমি কোনও ল্যাবরেটরি থেকে 


সংগ্রহ করে আনিনি কোনও সেঁকো বিষের ভাণ্ডার 


অথবা নিশ্চিত মৃত্যুর কোনও পরোয়ানা


আমি লিখিনি হেমলক বিষয়ক কোনও কবিতা 


কিংবা কোনও ক্ষুদিরামের অন্তর্দহন 


নাথুরাম গডসে-কে সমর্থন করে 


কোনও খোলা চিঠিও আমি লিখিনি ধর্মাবতার 


আমি কোনও রণক্ষেত্র প্রত্যক্ষ করিনি 


আমি কোনও নির্ভয়া-কে ধর্ষণ করিনি 


কোনও ছ’বছরের শিশুযোনী ছিন্নভিন্ন করতেও 


আমাকে দেখা যায়নি 


আমি বা আমার পূর্বপুরুষ 


বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গেও এতটুকুও জড়িত নয় 


প্রকাশ্য রাস্তায় মদ্যপান করে 


কোনওরকম বেলাল্লাপনাও আমি করিনি


মাননীয় ধর্মাবতার —


তবে কোন অপরাধে আমাকে ….



কি বলছেন? চোপ! আরেকটি কথা বললে


আমার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলা হবে? 


তবে তাই হোক ধর্মাবতার! 


যে জিভ কোনও সত্য কথা বলতে পারবে না


তা রেখে আমার কোনও লাভ নেই!

প্রেম ভালোবাসার বিচ্ছেদ - তন্ময় সাহা || কবিতা || Poetry || Poems

    প্রেম ভালোবাসার বিচ্ছেদ

             তন্ময় সাহা


খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন, 

হারিয়ে গেছে প্রেম। 

বাসি খাবার সতেজ রাখতে 

যেমন ফ্রিজে তুলে রাখা হয়। 

তেমনই ভালোবাসাটাও আজ 

তুলে রাখা রয়েছে কাঠগড়ায়। 

কোনো সুরঙ্গ নেই, পথটাও বন্ধ 

বিল্ডিংয়ের ঠাসাঠাসিতে। 

প্রেম আর আসবে না। 

এবার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন― 

আদালতের রায়ে ফাঁসি ভালোবাসার।

এটি মধ্যবয়স্কা কবিতা - তৈমুর খান || কবিতা || Poetry || Poems

এটি মধ্যবয়স্কা কবিতা 


তৈমুর খান





একটি মধ্যবয়স্কা কবিতা প্রেমের গুঞ্জনের কাছে


 কান পেতে আছে



 চারিদিকে উত্তাল হইহল্লা


 ব্রিজ ভেঙে গেছে বিচ্ছিন্ন শহরে


 বন্দরে বন্দরে নিভে গেছে আলো


 রাতের শেষ ট্রাম চলে গেছে



 এই রাস্তা তবুও বিমোহিনী


 অন্ধকারে শুয়ে আছে সমস্ত পোশাক খুলে


 কাকে ডাকে রোজ? কাকে চায়?


 ধূসর সম্পর্কের কাছে যৌবনের লেনদেন


 অন্ধকার হয়ে গেলে


 স্মৃতির সরণি বেয়ে ভেসে গেছে স্বপ্নের লাশ



 গুঞ্জন কেন তবে আসে?


 আঙুলে জাদু নেই আর


 বহুদূর ঝাপসা রাস্তায় পড়ে আছে ডাক


 মরচে ধরা জ্যোৎস্নাও বিপন্ন জগৎ



স্বপ্নের বাগানে মালি একাই চাষ করে - বরুণ মণ্ডল || কবিতা || Poetry || Poems

 স্বপ্নের বাগানে মালি একাই চাষ করে

   বরুণ মণ্ডল 


গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে

নৌকার সময় যাপন গন্তব্যের দিকে।

এপার থেকে ওপারে ঠোক্কর খায়।

প্রতিটা ঘাটেই ভিড়তে চায়।


নিকট ঘাটে নোঙরও গাড়তে চায়।


জমে থাকা অতীত খোলসা করবে,

অজানা ভবিষ্যতে সাহচর্য নেবে।

আবেগের আদান-প্রদান হবে!


বহু ঘাটের জল খেয়েছে সে।

জানা আছে কোন ঘাটে কুমিরের বাস।

কোন ঘাটে অগভীরতার পঙ্কিল জল।


হাল আজ হকিকত মানতে বাধ্য।

মিথ্যে দাঁড় বওয়া আর গুন টানা।


ইচ্ছে ডানায় ভর করে 

কুঁজোও চায় চিৎ হয়ে শুতে!