Monday, June 3, 2024

A farmer's cow and calf - Md Mazharul Abedin || English poem || poem || Poetry

 A farmer's cow and calf 

Md Mazharul Abedin


The cow of the farmer is too obedient 

It has been feeding him her milk for about ten years.

She never complained

Never protested

Humble she remained

Though sometimes her son, the white calf remained half-fed.

The farmer called the cow’Bhutki’.

The farmer's sons needed money

For higher education.

The farmer's seven bighas of wheat burnt fully

Some people set fire.

The farmer said,” Bhutki, I shall take you to Sombari Hat”.

Bhutki stared at her master.

Tears dropped.

The farmer hid his eyes.

‘Sombari hat’ day came.

Her master said, “Bhutki, get up,”

Obedient as usual she began to walk

Her white son tied far in a poll

Began to cry repeatedly.

Bhutki once looked back while walking behind her master.

The farmer's wife comforted the calf

“Don't cry more my son,I am here with you.

রবীন্দ্রনাথ - অভিজিৎ দত্ত || Rabindranath - Avijit Dutta || Bengali poem || Kobita || বাংলা কবিতা || কবিতা || poetry || Bengali poetry

 রবীন্দ্রনাথ 

অভিজিৎ দত্ত 



রবীন্দ্রনাথ, তুমি সত্যিই ছিলে 

এক বিষ্ময়কর প্রতিভা 

গান,নাটক, লেখা,ছবি ও কবিতা

সবেতেই ছিল তোমার 

বিষ্ময়কর প্রতিভার ছোঁয়া।


তুমি ছিলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, দার্শনিক 

তুমি ভীষণ ভালোবাসতে প্রকৃতিকে 

চেয়েছিলে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য 

করে আমাদের গড়ে তুলতে। 


তুমি বুঝেছিলে নগর সভ‍্যতার 

ভয়াবহ পরিণামের কথা 

তাই তো বলেছিলে,দাও ফিরে সে অরণ্য 

লহ এ নগর।


তুমি ছিলে ভারত তথা এশিয়ার 

প্রথম নোবেল বিজেতা 

বিশ্বভারতী,শান্তিনিকেতন সহ

অনেক কিছুরই প্রতিষ্ঠাতা। 


তুমি আমাদের আশা ও ভরসা 

তোমার গান ও লেখা থেকেই পাই

জীবনে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

তাই পঁচিশে বৈশাখ তোমার জন্মদিনে

তোমাকে অন্তর থেকে জানাই

 আমার প্রণাম, ভক্তি ও শ্রদ্ধা।

দেখি প্রিয়া চলে গেছে - অমল কুমার ব্যানার্জী || Dekhi Priya chole geche - Amal Kumar Banerjee || Bengali poem || Kobita || বাংলা কবিতা || কবিতা || poetry || Bengali poetry

 দেখি প্রিয়া চলে গেছে 

       অমল কুমার ব্যানার্জী



আমার কাছে যখন তখন বায়না ধরে,

জীবন মরণ পণ করে সে হাতড়ে মরে।

যতো কাজের মাঝে নয়ন তারা টা যে,

এদিক ওদিক খুঁজে মরে মনের মানুষ টা কে।


আমি তখন আপন মনে, বসে নদীর বাঁকে,

ঢেউয়ের মাঝে খুঁজে মরি ওগো প্রিয়া তোকে।

ঢেউগুলি সব আছড়ে পড়ে নদীর তীরে,

পাইনি তারে ঢেউয়ের পাহাড় মাঝে। 


প্রিয়া আমার, প্রদীপ হাতে মোর সমাধি পরে,

আজও খুঁজে সকাল সাঁঝে হিয়ার মাঝে মোরে,

দাঁড়িয়ে আজও উদাস আমি অবাক চেয়ে দেখি,

হয়তো তুমি বসে আছো আমার অপেক্ষাতে।


আমি তখন উঠে এসে প্রিয়ার পানে চেয়ে,

দেখি প্রিয়া চলে গেছে প্রদীপ খানা রেখে। 

Tuesday, May 28, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৮ || part - 8 || Era Kara part 8 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা


 


গতস্য শোচনা নাস্তিঃ কিন্তু হিড়িম্ব মহারাজ কোন মতেই অসীম রায়ের অপমানের কথা ভুলতে পারলো না। সর্বদাই কানের মধ্যে বাজতে থাকলো। সর্বক্ষন মনে হচ্ছে বুকের বাম দিক টাতে একটা আলপিন যেন ফুটে আছে। একদিন ওর সাকরেদদের ডেকে পরিকল্পনা করলো, কি ভাবে নীলরতনকে ফাঁদে ফেলা যায়। একমাত্র পথ হলো স্কুলের হেডস্যারকে হাত করতে হবে। রাজনীতির প্রভাবে হেডস্যারকে সহজেই হাত করা সহজ হবে। তার চামচারা একমত। নেতাকে থাপ্পড় মারা মানে তাদের ও ল্যাজ কেটে দেওয়া। হঠাৎ হিড়িম্বর পোষাগুন্ডা গনশা এক সময় বলে উঠলো - টেন্সন নিওনা গুরু, তুমি বললে খালাস করে দেবো। হিড়িম্ব ও তার গোপাল বন্ধুরা মিলনদার দোকানে মাল ও কচি পাঁঠার মাংস খাচ্ছিল। হঠাৎ দাঁতের খাঁজে এক টুকরো হাড় আটকে যাওয়াতে মুখের ভেতরে পুরো কব্জিটা ঢুকিয়ে বের করতে করতে বললো


- পারবি খালাস করতে? গনশা বললো- পারবো গুরু পারবো, হুকুম করলে দেখবে কাজ হাসিল। হঠাৎ গনশা বিকট চিৎকার করে বললো, -এই জোগা, একটা ট্যাংরা নিয়ে আয় নেশাটা জমাতে হবে। এমন সময় হিড়িম্ব বললো- উঠে পড় গনশা, একটা নয়া চিজ খেয়ে আসি। বলা মাত্র ট্যাংরী না খেয়ে উঠে পড়লো। এবার আপনাদের কাছে দু লাইন বক্তব্য রাখছি, এই গনশা কে? কি তার পরিচয় যদি জানতে চান তাহলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে। এ ছেলেটি শিক্ষিত, মেধাবী ছাত্র ছিলো, এবং ভালো ক্যারেটে ম্যান ও ছিলো। কে এবং কেন তার জীবন নষ্ট করলো। পড়তে থাকুন জানতে পারবেন। তবে হিড়িম্ব হাজরার চরিত্র কিছু জেনেছেন, এখানো অনেক বাকী। নেতা হওয়ার জন্য ওর পাওয়ার এতো বেশী যে ওর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারো ক্ষমতা নেই, তার কারণ পূর্বেই প্রকাশ করেছি। তবে কোন যুবতী ওকে চটিপেটা করেছিলো। ঐ যুবতী ছিলো এক জন নার্স নাম আশালতা। ওতেও ব্যাটার লজ্জা শরম নেই। কি ভাবছেন ঐ চটি পেটার গপ্পো শুনবেন নাকি? আমি বুঝতে পারছি আপনাদের মন উত্তলা ঠিক আছে ঐ গপ্পো, আপনাদের শোনাব একটু ধৈর্য্য ধরুন। আশালতা শুধু চটি পেটা করেনি, নানা উপহার ও দিয়েছিলো। তাহলে শুরু করি কেমন? ঠিক আশ্বিনের কাছাকাছি হবে। গৌরবাবু রিটার্ড হয়ে অচীন পুরেই ডেরা বাঁধলেন পাততাড়ি গুছিয়ে। বাংলা দেশের মানুষ হলেও তিনি ভালো ও খাঁটি মানুষ। অনেক পূর্বে এখানে এসে মাষ্টারী যোগাড় করেছিলেন। সেই প্রাইমারী স্কুলে খুবই কম বেতন ছিলো। তাই তাঁর কামনা বাসনা থাকলেও তিনি বিয়ে করতে পারেন নি। তার ভয় ছিলো সংসারী হলে ঐ পয়সাতে সংসার চালাতে পারবেন না। সেই জন্য তিনি চাপা বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। বেশী বয়সেই তিনি জনক হলেন। একমাত্র মেয়ে কনিকাকে নিয়েই তার সংসার।- ভালো মন্দের মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায়। কনিকা যৌবনে পা দেবার পর অনেকেই ওর সাথে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিলো কিন্তু সকলকে ডিনাই করেছে। সে তার বাবার দীক্ষায় দিক্ষিত। কনিকা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। খুবই ভালো মেয়ে স্কুলে যখন পড়তো তখন পড়াছাড়া কিছু বুঝতো না বাবার বয়স হয়েছে, মা যামিনী দেবী, গৌর বাবুকে বিয়ে করে সুখীই হয়েছিলো কিন্তু কনিকা জন্ম নেবার কয়েক বৎসর পর তাঁকে এমন রোগে আক্রান্ত করলো যে কনিকার মাধ্যমিক পাশ করার পর ইহলোক ত্যাগ করলেন। কনিকা এবার একা সংসারের কাজ কর্ম বাগিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলো উচ্চমাধ্যমিকের পর আর কলেজে যাওয়া ইচ্ছে জাগেনি। কারন বাবার সেবা করার তার কর্তব্য।


হঠাৎ একদিন প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার স্বরুপ বাবুর সাথে কনিকার সাক্ষাৎ হলো ঘটনা চক্রে। তবে স্বরুপ বাবুকে প্রায়ই দেখতো হাটে বাজারে। এমনকি পাড়াতেও, ভোটার কার্ড, রেশনকার্ড সংশোধন ইত্যাদি কাজে। হাটের মধ্যে সম্মুখে চোখাচুখি হবে ভাবতে পারেননি উভয়েই। দৃষ্টিটা এমন প্রতিফলিত হয়ে ছিল যেন উভয়েই শুভ দৃষ্টি হচ্ছে। একটু পরে উভয়েই পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। স্বরুপ বাবু প্রথম কথা বলেছিলেন- আপনি গৌরবাবুর মেয়ে! কনিকা নম্র কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন- হ্যাঁ। কনিকা ওখানে আর দাঁড়ায় নি, সোজা বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিল। দিন কয়েক পর ধুমকেতুর মত স্বরুপ বাবু কনিকাদের দরজায় সামনে উদয় হলেন। কনিকার চক্ষু চরক গাছ। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, আপনি! হ্যাঁ আমি। বিশেষ দরকারে আপনার বাবার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলাম। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে সাক্ষাৎ করবো নতুবা একশো মিটার রেসে এখান থেকে পালিয়ে যাবো। কনিকা চোখ দুটোকে গোল মার্বেল করে বললো, আমার অনুমতি, ঠিক বুঝলাম না।


বুঝলেন না এই তো? ঠিক আছে আমি আপনাকে সারাংশ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমার নাটকে আমি হলাম নায়ক, আর আপনি হলেন নায়িকা। নায়িকা যদি নায়ককে বিয়ে করতে রাজী না থাকে তাহলে নাটক লেখার সার্থকতা কোথায়। অর্থাৎ আমার ইঙ্গিত বুঝতে পারছেন। কনিকা একটু অবাকই হলো, কারন স্বরুপ বাবু যে এই প্রস্তাব করবেন ভাবতেই পারে নি। যুবকটি বলেন কি! তার সাথে কোন আলাপ হলো না, প্রেম হলো না আলে, খালে, ডালে, পার্কে বসে দশ মিনিটের জন্য কোন দিনই প্রেম কাব্য রচনা হলো না, কোন প্রেমের ভাষাতে আলাপ হলো না, আপন গালে প্রেমের চুম্বন ও আঁকলো না আমি কে, কি আমার পরিচয় তাও জানলো না। তবুও বিয়ের কথা শুনে অন্তরটা যেন কল্ কল্ করে উঠলো। অবশ্য কনিকা ওর বাবার কথা ভেবে কোনদিন বিয়ের কথা ভাববার অবকাশ পাইনি। কারন তার বাবাকে কুহকে ফেলে কোন প্রকার বিয়ে করবে না। আর পরক্ষনেই ভাবতে থাকে বাবা চিরদিন বাঁচবে না। তাঁকে সংসারী হতে হবে। স্বরুপ বাবু মেধাবী ছেলে, ভদ্র ও নম্র ও চরিত্রের সার্টিফিকেট ও ভালো। ওর কথা শুনে প্রথমতঃ থতমত করছিলো, কিন্তু সেদিনের হাটের দৃশ্য মনে করতেই তার মনের মধ্যে প্রেমের বাসা বাঁধতে শুরু করেছিলো। প্রেম যে কি তা একটু একটু করে অনুভব করছে। কিন্তু- ওর সাথে আলাপ না হলেও স্বরুপ বাবুর চোদ্দ গোষ্টীর রামায়ন শুনিয়েছে কনিকার অত্যন্ত প্রিয় দিদি আশালতা। আশালতা দেবীর কাহিনী এখন বলবো না পরে জানতে পারবেন। যাইহোক স্বরুপের কন্ঠস্বরে কনিকার সম্বিৎ ফিরে এলো- কি ভাবছেন? তাহলে আমি বাড়ী ফিরে যাই?


-আমি কি তাই বললাম? কনিকা মৃদুস্বরে বললো।


- আপনি রাজী। কনিকা ঘাড় নাড়ে। স্বরুপ বাবু বললেন,


- আপনি আমার বায়োডাটা জানেন?


- কিছু কিছু জানি, আশাদির কাছে শুনেছি।


- তাহলে বাবার কাছে হাজির হই।


ভেতরে আসুন। পজেটিভ উত্তর পেয়ে স্বরুপ বাবুর মনে হলো দুইহাত তুলে চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো নাচতে, কিন্তু পারলো না মাষ্টার মশায় হয়ে এতটা উৎফুল্ল হওয়া উচিত নয়। এবার আপনারা ভেবে দেখুন তো, মানুষের মনের আশা যদি পূর্ণ হবার সম্ভাবনা হয় তাহলে মানুষের হৃদয় আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠে। প্রেমানন্দে, অনেক খানি আত্মসুখী হয়ে থাকে। আর মনো বাসনা যদি পূর্ণ না হয় তাহলে ভেতর থেকে কান্নাকে ঠেলে নিয়ে আসে। চোখ ফেটে জল ঝরতে থাকে, হৃদয় একে বারে খন্ড বিখন্ড হযে যায়। স্বরুপবাবু জীবনে নিরানন্দের বন্যার স্রোতে হৃদয় একে বারে বারে ধসে পড়েছিলো। এই আঘাতে যে কত কঠিন তা স্বরুপবাবু অনুভব করেছিলেন। ঘটনা কি ঘটেছিল একটু পরেই বুঝতে পারবেন বা জানতে পারবেন। তবে একথা স্বীকার করেন তো? "বিধির লিখন কে করে খন্ডন"। কনিকা তার জেঠুর মেয়ে। আপন জেঠুর মেয়ে। কি ভাবছেন আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকা গন? ভাবছেন এ আবার কি রকম লেখা। কি করবেন আমি দুষ্টু লেখক, নায়ক/নায়িকার মিলন ঘটাতে আমার কলম বিরুদ্ধাচারণ করে এই তো বলবেন না মশায়, আমি তা চাই না, যেটা সত্য তা আমার কলম লিখে, সত্য পথে এগিয়ে যেতে আমার কলম পিছপা হবে না। এক অদ্ভুত সাহস নিয়ে কাগজের উপর লিখতে শুরু করে। আমার কলমকে বীর যোদ্ধা বললে ভুল হবে না, আমার কলমকে বন্দুকের গুলি বলতে পারেন, আমার কলমকে তীক্ষন তীর বললেও ভুল হবে না।


তাহলে শুনুন ব্যাপারটা কি দাঁড়িয়েছে। কনিকার মত পেয়ে স্বরুপ বাবু গৌরবাবুর কাছে উপস্থিত হয়ে গৌর বাবুকে টুক করে প্রমান করে বললেন- আপনার কাছে এলাম স্যার। গৌরবাবু গুরু গম্ভীর লোক। প্রায় আশির কাছাকাছি বয়স। তরমুজের মতো মাথা। আধা কাঁচা ও পাকায় মাথা ভর্তি চুল। মধ্যিখানে পাক ধরেছে। নাকের ডগায় মোটা ফ্রেমের চশমা। গোঁফ খানিও মোটা। নজরুলের "সঞ্চিতা" পড়ছিলেন, স্বরুপ বাবু কণ্ঠস্বরে বই পাতা হতে চোখ সরিয়ে বললেন- কে? কোথা হতে আগমন। স্বরুপ বাবু নম্র কন্ঠে বললেন- পাশের গ্রাম ধরমপুর হতে। ঐ গ্রামের স্কুলে মাষ্টারী করি। গৌরবাবু একটু ট্যারাচে চোখে বললেন- প্রাইমারী স্কুলে?


হ্যাঁ স্যার।


কোন সাবজ্যাকট নিয়ে অর্নাস করেছো?


-অংকে। ভালো, ভালো, বসো। কনিকা কে একটা চেয়ার আনার জন্য বললেন। কনিকা একটা হাতল ভাঙ্গা চেয়ার এনে স্বরুপ বাবুকে বসতে বললো। একটা প্রাইমারী স্কুলের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের হাতল ভাঙ্গা চেয়ার! ও সব ভাবনা না ভেবে টুপ করে বসে পড়লেন। কিছুক্ষন নীরব। এমন সময় মুখ সরিয়ে বললেন, কি খাবে চা, না কফি? স্বরুপ বাবু আমতা আমতা করে বললেন,- আমার জন্য আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না। তবুও কনিকাকে কফি করতে বললেন। স্যার, আমি যে প্রস্তাব নিয়ে অপনার দরবারে এসেছি যদি বলার সুযোগ দিতেন তাহলে খুশী হতাম। তিনি বললেন- অবশ্যই বলো,


- আপনার মেয়ে কনিকাকে আমার ভারী পছন্দ। তাকে আমি বিবাহ করতে ইচ্ছুক, আপনার মতামত বলুন। গৌরবাবু বেশভারী গলায় বললেন, কনিকাকে পছন্দ হলো কি করে? তবে কি কনিকার সাথে প্রেম আদান প্রদান হয়েছে? হক্কচিয়ে স্বরুপ বাবু বললেন, না না ওসব কিছু নয়। আপনার মেয়েকে দেখে আমার ভারী পছন্দ হয়েছে। অবশ্য কনিকার সাথে কদাচিৎ কোন আলাপ, ও কোন কথাবার্তা হয়নি। একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছিলো কনিকা। গৌরবাবু কনিকার পানে কর্কশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বুঝতে পারলো বাবা ওকে দু-চার কথা জিজ্ঞেস করবে সুতরাং কনিকা হঠাৎ বলে উঠলো- না বাবা, এনার সাথে আমার আলাপ হয়নি, আর এই ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। গৌর বাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তাহলে তোমার বাড়ী ও জন্ম স্থান কোথায়? সংক্ষেপে উত্তর, ঢাকা জেলায় কনকপুরে। জন্ম এই স্থানে কনকপুরের নাম শুনতেই গৌরবাবু চমকে উঠলেন। এবার বইটা বন্ধ করে গভীর ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,-


কতদিন দেশ ছাড়া হয়েছো.


তা জানি না।

তোমার বাবার নাম কি?


- আমার বাবার নাম কিশোরীলাল বসাক। হঠাৎ গৌর বাবুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে তোমার ঠাকুরদার নাম জানো? এলো,


প্রেমেন্দ্র বসাক। গৌরবাবু পুনরায় বললেন,


তোমার মায়ের নাম কি ললিতা বসাক! তার মার নাম শুনে স্বরুপ বাবু চমকে উঠলেন, গৌরবাবু কি করে জানলেন তার মার নাম ললিতা বসাক। তবুও কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে বললেন, -আপনি কি করে আমার মার নাম জানলেন? গৌরবাবু স্তব্দ হয়ে গেলেন। কনিকা, স্বরুপ গভীর ভাবে আশ্চর্য্য হলেন। বারংবার নিজেদের মনকে নাড়া দিতে থাকলো। গৌরবাবু কি করে জানতে পারলেন। হঠাৎ দেখা গেল গৌরবাবুর চোখ দিয়ে টপ্স্টপ্ করে জল বেরুতে থাকলো কনিকা ধীরে ধীরে গৌরবাবুর কাছে এগিয়ে এসে বললো- বাবা তোমার চোখে জল। গৌরবাবু চোখ দুটো মুছে বললেন,


এ দুঃখের চোখের জল নয় মা। এ আমার আনন্দাশ্রু। হঠাৎ মুড পালটে বাবা স্বরুপ এবার বলতো, তোমার মা বেঁচে আছেন? বললেন,


হ্যাঁ আছেন। বাবা নেই। কিন্তু আপনি স্বরুপের কথাকে লুফে নিয়ে বললেন, বলবো, সব বলবো নইলে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি কয়েক বছর ধরে এবার সেই যন্ত্রনা হতে নিস্কৃতি পাবো। আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবারের লোক জন মারা গেছে, কেউ বেঁচে নেই। সেই ভয়ংকর রাত্রির কথা আজো মনে আছে। ঐ রাত্রির কথা কোন মতে ভুলতে পারিনি বাবা। দিনটা ছিল, হেমন্তের কোন এক রাত্রি। সবে মাত্র চাষীদের খামারে ধান উঠতে শুরু করেছে। প্রচন্ড ফসল ফলেছে মাঠে, সোনালী বর্নে মাঠ ভরে গেছে। চাষীদের মনে আনন্দের শেষ নেই। কি হিন্দু, কি মুসলিম। স্থানে স্থানে মৃদঙ্গের বাজনা বাজছে ঝুমুর, ভাটিয়ালী, ও গম্ভীরা গানের তালে তালে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা, খাটুনির পর সন্ধ্যের সময় গান/বাজনার আসর জমে উঠেছে। প্রতি মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার। কিছু লোক ভাঙ্গ, গাঁজা প্রভৃতি মাদকতায় ঝিমুচ্ছে। কেউ কেউ গানের সুরে সুর মিলিয়ে গান করার চেষ্টা করলে নেশার ঘোরে মানুষ গুলো নেতিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার হেমন্তের মৃদু, মন্দা বাতাসে শীতের আমেজ উপভোগ করছে। গৌরবাবু আপন বারান্দায় বসে কয়েক জন ছাত্র/ছাত্রী কে পড়াছিলেন। পাশের ঘরে অর্থাৎ ত্রিশ/চল্লিশ মিটার দুরে লুডো খেলছিলো। তখন টি.ভি ছিলো না। কখনো কখনো ছোট ভাই কিশোরীলাল ছোটতেই ললিতাকে হারিয়ে বিকট শব্দ করে তাকে রাগন্ধিত করছে। এমন করে ঘন্টা খানেক কেটে যাবার পর শতশত মানুষের বিকট চিৎকার, পালাও পালাও রব। হিন্দু ভায়েরা পালিয়ে যাও। নইলে ওরা মেরে ফেলবে। 




পর্ব - ৭ || Part - 7



পর্ব - ৯ || Part - 9


Friday, May 3, 2024

এপ্রিল সংখ্যা ২০২৪ || April Sonkha 2024





সম্পাদকীয়:

নদীর বুকে নিজেকে জড়িয়ে নিন। বিকেলের পড়ন্ত রোদের বিকেলে দুদন্ড শান্তি নিন নদীর প্রান্তে। এ এক অমায়িক সুখ। হৃদয়ে প্রেমের সঞ্চার হোক‌। জানি সে প্রেম তাৎক্ষণিক। তবুও এই দুদন্ড শান্তি প্রত্যেক প্রহরের অক্লান্ত পরিশ্রম দূর করার এক নিবিড় প্রয়াস মাত্র।

পৃথিবীর বুক ফেটে বের হয়ে আসে লাভা, এই তপ্ত দুপুরের পরিশ্রম যেন ঐ গলিত লাভাকে স্পর্শ করেছে। তাই সুখের খোঁজে বের হোন। নদীর প্রান্তে শীতল বাতাস খুঁজে নিন। সঙ্গে নিন সাহিত্য চর্চার সমস্ত সামগ্রী। অন্তত নিজের মোবাইল সাথে রাখুন। প্রশান্তির আদলে শুরু করুন সাহিত্য চর্চা। লেখালেখির জগতে প্রবেশ করাতে শিখুন। ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন আপনার সুদৃঢ় প্রয়াসকে অবশ্যই কুর্নিশ জানাবে। আসলে বিনামূল্যে সাহিত্য চর্চায় প্রশান্তি আনতে পারে একমাত্র ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন। তাই নিজের মোবাইল এর স্পর্শে ঘেঁটে ফেলুন আপনার প্রিয় লেখক এর লেখা গুলো। নদীর প্রান্তে শীতল বাতাসের প্রশান্তি আর সাহিত্য চর্চার প্রশান্তিকে করে ফেলুন এককার।

ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন সর্বদা সকলের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই সাহিত্যে থাকুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন পড়তে থাকুন।
     

                                ধন্যবাদান্তে
                           সম্পাদকীয় বিভাগ 


__________________________________________________


এপ্রিল সংখ্যার সূচীপত্র - 


অনুগল্প : 

১) দর্পনা গঙ্গোপাধ্যায় ২) প্রদীপ সেনগুপ্ত ৩) পার্থপ্রতিম দাস ৪) নীল মিত্র ৫) অভিষেক ঘোষ ৬) চন্দন মিত্র ৭) প্রহ্লাদ কুমার প্রভাস। 


কবিতা :

১) ইলা সূত্রধর ২) সুশান্ত সেন ৩)আনন্দ গোপাল গড়াই ৪) নাসির ওয়াদেন ৫) অনুপম বিশ্বাস ৬) মুহা আকমল হোসেন ৭) নীলমাধব প্রামানিক ৮) অমিত কুমার সাহা ৯) তপন মাইতি ১০) পূর্বিতা পুরকায়স্থ ১১) গোবিন্দ মোদক ১২) গৌতম ঘোষ দস্তিদার ১৩) সমর আচার্য্য।


গল্প :

১) সিদ্ধার্থ সিংহ ২) শাশ্বত বোস।


প্রবন্ধ :

১) তন্ময় কবিরাজ ২) শংকর ব্রহ্ম।


______________________________________



স্বর্ণমণি - সিদ্ধার্থ সিংহ || Sawarna moni - Sidhartha singha || Story || Short Story || Bengali Story || Bengali Short Story || গল্প || ছোট গল্প || অনুগল্প

 স্বর্ণমণি

সিদ্ধার্থ সিংহ



বাগানবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে পা রাখতেই সৌম্য বুঝতে পারল, স্বর্ণমণিকে কত লোক ভালবাসত। না হলে এইটুকু সময়ের মধ্যে এত লোক এসে জড়ো হয়! গোটা বাড়ি জুড়ে থিকথিক করছে লোক। তার মধ্যে আশপাশের মেয়ে-বউই বেশি। ও যে সবাইকে চেনে বা ওকেও যে সবাই চেনে, তা নয়। তবে স্বর্ণমণিকে নিশ্চয়ই এরা সবাই চেনে।


ও তখন মেজদির বাড়িতে রাখী পরতে গেছে। জামাইবাবুর আনা মটন বিরিয়ানি খেতে খেতেই শুনল মেজদির ফোনে রিং হচ্ছে। মেজদির কথা শুনেই বুঝতে পারল মাধুকাকা ফোন করেছে।

মা মারা যাওয়ার পর তাদের এই অকৃতদার কাকাই তাদের বারুইপুরের বাগানবাড়িতে থাকেন। পঁচাত্তর পেরিয়ে গেলেও শরীর এখনও যথেষ্ট সুঠাম। কিন্তু তিনি ওখানে একা থাকবেন কী করে! রান্নাবান্না কে করে দেবে! তাই খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের সংসাররের যাবতীয় কাজকর্ম যে দু'হাতে একাই সামলাচ্ছে, সেই স্বর্ণমণিকেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওখানে।

খুব ছোটবেলায় বাপ-মা মরা পলাশীর এই মেয়েটিকে তার বৌদি এত অত্যাচার করত যে, সে একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতার ট্রেনে চেপে বসেছিল। সেই ট্রেনে ছিলেন সৌম্যর মা।

সে বহু যুগ আগের কথা। সৌম্য তখন ফাইভ কি সিক্সে পড়ে।

ওর মা উলটো দিকের সিটে মেয়েটিকে ও ভাবে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কোথায় যাবে?

ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা মেয়েটি কোনও রকমে বলেছিল, এই ট্রেনটা যেখানে যাবে সেখানে।

উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কোথায় থাকো?

ও বলেছিল, পলাশীতে।

--- তোমার নাম কি?

মেয়েটি বলেছিল, স্বর্ণ।

ওর মা জানতে চেয়েছিলেন, ওখানে কার কাছে যাবে?

মেয়েটির আমতা-আমতা করা দেখেই তিনি বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন, মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। দেখতে-শুনতে আদিবাসীদের মতো হলেও অল্প বয়স তো, চারিদিকে হাজার রকমের লোক ঘুরে বেড়ায়, কোথায় কখন কোন বিপদে পড়ে যাবে, তাই তাকে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে। ছেলেমেয়েদের বলেছিলেন, এটা হচ্ছে তোদের একটা মণি। যেমন মাসিমণি, পিসিমণি, ঠিক তেমনি এটাও একটা মণি। তোরা ওকে মণি বলেই ডাকবি, বুঝেছিস?

কেউ কেউ মণি বললেও সৌম্য যেহেতু একটু পাকা ছিল, তাই মণি নয়, স্বর্ণকে স্বর্ণমণি বলেই ডাকত। আর স্বর্ণও তাদের এত ভালবেসে ফেলেছিল যে, আসার ক'দিন পর থেকেই তাদের সংসারটাকে নিজের সংসার মনে করেই দু'হাতে সামলাত। 


সৌম্যরা সব ক'টা ভাইবোনই পশুপাখি খুব ভালবাসে। তাদের কলকাতার বাড়িতে কুকুর, বিড়াল, টিয়াপাখি, কাকাতুয়া, খরগোশের পাশাপাশি সৌম্যর ভাই দর্শন একটা ছোট্ট বাঁদরের বাচ্চা পুষতে শুরু করেছিল। আদর করে নাম রেখেছিল র‍্যাঞ্চো।

দেখতে দেখতে তার বয়সও সাত-আট বছর হয়ে গেল। এত দিন কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু কিছু দিন আগে তাদের এলাকায় যখন বনদফতর থেকে ঘনঘন হানা দিতে শুরু করল, যে দিন তাদের পাড়া থেকে একজনের পোষা বাজপাখিটাকে জোর করে নিয়ে গেল, তখন ভয় পেয়ে তার পর দিনই ভোররাতে একটা ছোট্ট ম্যাটাডর ভাড়া করে খাঁচাশুদ্ধু র‍্যাঞ্চোকে নিয়ে বারুইপুরের বাগানবাড়িতে রেখে এসেছিল দর্শন।

না, এ বাঁদর, মানে র‍্যাঞ্চো কলা খায় না। দই খায়। শশা খায়। লিচুর সময় লিচু, আঁশফল, সন্দেশ, কড়াইশুঁটি, পেয়ারা।

সে দিন নাকি ওকে কিছুতেই খাওয়ানো যায়নি। স্বর্ণকে মাধুকাকা বলেছিলেন, এই দুপুরবেলায় ও না খেয়ে থাকবে! যা, ওকে তা হলে দুটো রসগোল্লা খাইয়ে আয়।

র‍্যাঞ্চো যখন কলকাতায় ছিল, ছাড়াই থাকত। দর্শনের বুক জড়িয়ে কিংবা কাঁধে চড়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত। শুধু সৌম্যদের বাড়ির লোকেরাই নয়, ওকে ভালবাসত পাড়ার প্রায় সকলেই।

দর্শনের খুব ন্যাওটা ছিল ও। খানিকক্ষণ না দেখলেই দর্শন যে যে জায়গায় আড্ডা দিত, হুটহাট করে সে সব জায়গায় চলে যেত। 

একদিন খুব ভোরবেলায় পাঁচিল টপকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল।

ওদের পাড়ায় ছিল মাদার ডেয়ারির একটি দোকান। যাঁরা দুধ দিতে আসতেন তাঁরা সবাই র‍্যাঞ্চোকে চিনতেন। কিন্তু সে দিন এসেছিলেন একদম নতুন একজন লোক। তিনি দুধের পাউচ ভর্তি ট্রে-টা মাটিতে ঘষটাতে ঘষটাতে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘর্ষণের সেই বিচ্ছিরি আওয়াজ শুনে লোকটার দিকে তেড়ে গিয়েছিল র‍্যাঞ্চো।

বাঁদরটাকে ওই ভাবে তেড়ে আসতে দেখে লোকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। যদি কামড়ে দেয়! তাই আগের দিন রাস্তার ধারে খুলে রাখা প্যান্ডেলের একটা বাঁশ তুলে সজোরে মেরেছিল বাঁদরটাকে। একটা নয়, পর পর বেশ কয়েক ঘা।

সেই যে লোকটা ওকে মারল, সে তো ওকে মেরে চলে গেল। আর তার পর থেকে কোনও লোক দেখলেই হল, তাকে কামড়ানোর জন্য তেড়ে যেতে লাগল। বাধা দিতে গিয়ে কামড় খেল দর্শনও। কামড়ে দিল বেশ কয়েক জন পথচলতি মানুষকেও।

বাঁদর পোষার জন্য তখন প্রচুর কথা শুনতে হয়েছে দর্শনকে। পাশাপাশি দিতে হয়েছে তাদের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ। তখনই ঠিক করা হয়, আবার কখন কাকে কামড়ে দেবে, তখন হয়তো শুধু ভর্তুকি দিলেই হবে না, এই নিয়ে থানা-পুলিশও হবে, তার চে' বরং ওর জন্য একটা খাঁচার ব্যবস্থা করি।

তখন ওদের মাথাটা কাজ করেনি, একবারও মনে হয়নি আর কিছু দিন পরে সে যখন আরও বড় হবে, তখন এই খাঁচাটা ওর তুলনায় ছোট হয়ে যাবে। তাই বারুইপুরে নিয়ে আসার পরে একটা পুরো ঘরের সমান খাঁচা বানানো হয় র‍্যাঞ্চোর জন্য। যাতে সে হাত-পা ছড়িয়ে থাকতে পারে। তখনই ভাবনাচিন্তা করা হয়, খাঁচাটা যখন এত বড় করাই হচ্ছে, তখন একটা মেয়ে বাঁদর আনলে কেমন হয়!

তখনই ঠিক হয়, এখন যেখানে খাঁচাটা আছে সেখানেই বড় খাঁচাটা রাখা হবে। কিন্তু একবার বড় খাঁচাটা তৈরি হয়ে গেলে সেটাকে টেনেহিঁচড়ে ওখানে নিয়ে যাওয়াটা খুব মুশকিল হবে। তাই র‍্যাঞ্চোর খাঁচাটাকে একটু দূরে সরিয়ে সেখানেই পাকাপাকি ভাবে তৈরি করা শুরু হয় বড় খাঁচাটি।

এত দিন যেখানে ছিল সেখান থেকে খাঁচাটি সরানোর জন্যই বুঝি সে খুব রেগে ছিল। তাই মাধুকাকা যখন বলল, যা, ওকে তা হলে দুটো রসগোল্লা খাইয়ে আয়।

সেটা খাওয়াতে গিয়েই এই বিপত্তি। স্বর্ণ যখন রসগোল্লা খাওয়ানোর জন্য খাঁচাটার সামনে গেল, দেখল, না-খাওয়ার জন্য খাঁচার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সে ছুটোছুটি করছে। মাঝেমাঝেই ওপরে উঠে রড ধরে বসে থাকছে। হাজার ডাকলেও নামছে না।

স্বর্ণ তখন ওকে খাওয়ানোর জন্য ঘুরে ঘুরে খাঁচার এ দিকে ও দিকে গিয়ে ওর মুখের সামনে রসগোল্লা ধরছে।

হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝট করে ওর হাতটা টেনে নিয়ে র‍্যাঞ্চো এমন মারণ কামড় কামড়ে ছিল যে, সেই যে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোনো শুরু হল, একটা গোটা কোলগেট পেস্ট দিয়েও সেই রক্ত বন্ধ করা গেল না। শেষে পাশের বাড়ির যে ভদ্রমহিলা সারা দিনে পঞ্চাশ বার পান সেজে খান, তাঁর কাছ থেকে একগাদা চুন এনে কোনও রকমে বন্ধ করা হয় রক্ত।

স্বর্ণকে যখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল, ও কিন্তু ডাক্তারকে একবারও বলেনি বাঁদর কামড়েছে। যাদের ভয়ে ওকে কলকাতা থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, জানাজানি হলে যদি সেই বন দফতরের লোকেরা এসে ওকে নিয়ে যায়, তখন? তাই স্বর্ণ বলেছিল, বঁড়শি গেঁথে গেছে।

ডাক্তার সেই হিসেবেই ট্রিটমেন্ট করেছিলেন। ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলেন। খাবার ট্যাবলেটও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁদর কামড়ালে যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, ওকে তো সেটা দেওয়া হয়নি। রাত থেকেই শুরু হয়েছিল যন্ত্রণা। কাটা পাঁঠার মতো দপাদাপি করেছে সারা রাত।

স্বর্ণর অবস্থা বেগতিক দেখে দর্শনকে বারবার ফোন করেছিল মাধুকাকা। দর্শনকে না পেয়ে বাধ্য হয়েই ফোন করেছিল মেজদিকে।

আজ রাখিপূর্ণিমা। নিশ্চয় ওরা দু'ভাই তাদের মেজদির বাড়িতে প্রতিবারের মতো রাখী পরতে যাবে। ওখানে যাওয়া মাত্রই দর্শন যাতে খবরটা পায়, সে জন্যই উনি ফোন করেছিলেন।


ফোন রেখেই সৌম্যর দিকে তাকিয়ে মেজদি বলেছিলেন, স্বর্ণর অবস্থা খুব খারাপ রে। গোটা শরীর নাকি বেঁকে গেছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ওর চিৎকারে আশপাশের লোকজন সব জড়ো হয়ে গেছে। দর্শনকে ফোনে পাচ্ছে না। ও তো এইমাত্র রাখী পরে গেল। ফোন কর তো, ফোন কর, ফোন কর। এক্ষুনি ফোন কর।

সৌম্য যখন শুনল স্বর্ণমণির শরীর বেঁকে গেছে, তার মানে ওর ধনুষ্টংকার হয়েছে। এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে না গেলে ওকে বাঁচানো মুশকিল। তাই খাওয়া থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দর্শনকে ফোন করল সৌম্য। কিন্তু ফোন বেজে গেল, বেজেই গেল। আবার। আবার। আবার। অনেক বার চেষ্টা করেও ওকে না পেয়ে ফোন করল মিঠুকে।

মিঠু দর্শনের ছেলে। সে বলল, হ্যাঁ, বাবাকে না পেয়ে দাদু আমাকে ফোন করেছিল। আমিও বাবাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু পাইনি। তাই আমি একটা বন্ধুর বাইকে করে এক্ষুনি বারুইপুরে যাচ্ছি।

সত্যিই খুব খারাপ অবস্থা স্বর্ণর।। আর ভাবতে পারল না সৌম্য। সেই কোন ছোটবেলা থেকে সে তাদের সংসারটা সামলাচ্ছে। আজ তার এই অবস্থা! ফোন করল বড়দিকে--- শুনেছিস? স্বর্ণমণির কি হয়েছে?

--- কী হয়েছে?‍ দিদি জিজ্ঞেস করতেই ও বলল, মাধুকাকা যা বলল, তাতে ও বাঁচবে কি না সন্দেহ আছে।

সৌম্যদের বাড়ির উলটো দিকেই থাকে সৌম্যর ছোটবোন। বারান্দার গ্রিলের ও পারে দেখতে পেয়ে তাকে বলল, স্বর্ণমণি বোধহয় আর বাঁচবে না রে!


খানিক পরেই ফোন করল মিঠুকে। তার বন্ধু এত জোরে বাইক চালিয়ে নিয়ে গেছে যে, পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই কসবা থেকে বারুইপুরে পৌঁছে গেছে।

সৌম্য জিজ্ঞেস করল, স্বর্ণমণি এখন কেমন আছে? মিঠু একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নেই।

সৌম্য এই ভয়টাই পাচ্ছিল। ও যে কেন প্রথমেই ডাক্তারকে বলল না বাঁদর কামড়েছে, তা হলে তো ঠিকঠাক ইঞ্জেকশনটা পড়ত। এ ভাবে অঘোরে প্রাণ দিতে হত না। এই দুঃসংবাদ ও কাউকে বলবে কী করে! কিন্তু এ সংবাদ তো চেপে রাখারও নয়। জানাজানি হবেই। তাই মেজদিকে ফোন করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, মেজদি, স্বর্ণ আর নেই রে...

--- কী বলছিস? আঁতকে উঠল মেজদি।


ফোন করল বড়দিকে। বড়দি স্তম্ভিত। সে কী রে! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। এই তো শেতলা পুজোর সময় যখন বারুইপুর থেকে আসছি, জোর করে একগাদা গোটা ফল আমার ব্যাগের মধ্যে ভরে দিল। বলল, নিয়া যান। পরে খাইতে পারবেন। এখানে তো খাওনের লোক নাই। পইরা থাইকা থাইকা নষ্ট হইব। তুই কখন খবর পেলি?

--- এই তো একটু আগে। মিঠু বলল।

--- আমি ভাবতে পারছি না রে, মেয়েটার কী হল!আমার হাত-পা কেমন কাঁপছে। এ কী খবর শোনালি তুই...


ফোন করল ছোটবোনকে। সে বলল, আমাদের তো ওখানে যাওয়া দরকার। কী করে যাই বল তো! বডি কি বাড়িতেই আছে, না হাসপাতালে?

--- আমি এখনও ঠিক পুরোটা জানি না।

--- না, ওখানে তো মাধুকাকা ছাড়া কেউ নেই। সবাই তো এ দিকেই থাকে। সবাই মিলে দল বেঁধে যেতে গেলে কখন গিয়ে পৌঁছব কোনও ঠিক নেই। এতটা পথ... যেতেও তো সময় লাগবে। তার চেয়ে বরং ওর বডিটা যদি এখানে আনা যায়, দ্যাখ না... তা হলে শেষ চোখের দেখাটা একবার দেখতে পাই।


বারুইপুরে দাহ করার জায়গা বলতে ওই একটাই। জোড়া মন্দির। তা হলে কি ও মাধুকাকাকে ফোন করে একবার বলবে, আমাদের ফ্যামিলির যারা মারা যায় তাদের সবাইকে তো কেওড়াতলাতেই দাহ করা হয়, ও তো আমাদের পরিবারেরই একজন। ওকে এখানে দাহ করলে হয় না?

কিন্তু না, বেশ কয়েক বার ফোন করেও মাধুকাকাকে না পেয়ে ও সোজা রওনা হয়ে গিয়েছিল বারুইপুরে। যে তাদের জন্য সারাটা জীবন দিয়েছে, শেষকৃত্যে তার পাশে না থাকলে হয়! লোকে কী বলবে!


বাগানবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে পা রাখতেই সৌম্য বুঝতে পাড়ল, স্বর্ণমণিকে কত লোক ভালবাসত।

বাড়ির উঠোন জুড়ে এদিকে-সেদিকে জটলা। ওকে দেখেই সবাই সরে গিয়ে জায়গা ছেড়ে দিল।

ও ঘরে ঢুকেই একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। দেখল, মাধুকাকা খাটের উপরে বসে আছেন। আর তার ঠিক উলটো দিকের সোফায় স্বর্ণমণি। ওকে দেখেই স্বর্ণ বলল, আপনে?

--- তুই?

--- এই তো ডাক্তার দেখাইয়া আইলাম।

--- ডাক্তার দেখিয়ে! বলেই, ওর মনে পড়ে গেল মিঠুই তো তাকে বলেছিল, ও নেই। তার মানে? তাই সৌম্য জিজ্ঞেস করল, মিঠু কোথায়?

মাধুকাকা বললেন, এই তো ছিল, এখানে তো টাওয়ার পাওয়া যায় না... ফোন করার জন্য মনে হয় বাইরে গেছে, দ্যাখ না... উঠোনে গিয়ে দ্যাখ, ওখানে আছে মনে হয়।

মাধুকাকা এই ভাবে কখনও ওর সঙ্গে কথা বলে না। তার মানে স্বর্ণমণিকে নিয়ে উনি খুব টেনশনে ছিলেন। সেই রেশ এখনও কাটেনি। তার ওপর কে যে রটিয়েছে, ও মারা গেছে... সেই নিয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে আছেন।

ঘর থেকে বেরিয়ে সৌম্য দেখল, উঠোনের ও দিকে পায়চারি করতে করতে কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে মিঠু। ও সঙ্গে সঙ্গে মিঠুর কাছে গিয়ে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বলল, তুই আমাকে কী বলেছিলি?

জেঠুর কথা বলার এই টোন সে চেনে। তাই ফোনের ও প্রান্তে যে আছে তাকে বলল, এই, একটু পরে ফোন করছি... বলেই লাইনটা কেটে দিয়ে জেঠুকে বলল, কী বলেছি?

--- তুই যে বললি স্বর্ণমণি নেই!

--- ছিল না তো... ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। আমি এসে দেখলাম নেই। তাই তুমি জিজ্ঞেস করতেই বললাম, নেই। কেন, কী হয়েছে?

--- ও তো ঠিকই আছে দেখছি।

--- হ্যাঁ, ডাক্তার দেখিয়ে এল তো...

--- না, মাধুকাকা যে মেজদিকে বলল, ওর শরীর বেঁকে গেছে!

--- তাই নাকি? বেঁকে গেছে বলেছে? তা হলে যাও দাদুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। ঘরে আছে তো।

সৌম্যরও মনে হল এটা জিজ্ঞেস করা দরকার। তাই ঘরে গিয়ে মাধুকাকাকে ও জিজ্ঞেস করল, আপনি মেজদিকে ফোন করে বলেছিলেন ও বেঁকে গেছে... কোথায়? ও তো দিব্যি আছে।

--- বেঁকে গেছে? কে বলল? আমি তো ওকে বললাম পেকে গেছে। বাঁদরটা যেখানে কামড়েছিল সেই জায়গাটা পেকে গেছে।

তার মানে মেজদি 'পেকে'টাকে 'বেঁকে' শুনেছিল। আর বেঁকে গেছে শুনেই তার মনে হয়েছিল নিশ্চয়ই ধনুষ্টংকার হয়ে গেছে। আর ধনুষ্টংকার মানেই... তার ওপরে মিঠু যখন বলল নেই, তখন তার মনে হয়েছিল 'নেই' মানে, স্বর্ণ আর বেঁচে নেই। আর বেঁচে নেই ভেবেই, সে নিজেই সবাইকে ফোন করতে শুরু করেছিল।

সামান্য ভুল শোনা, আর সেই শোনার ত্তপরে ভিত্তি করে অনেক কিছু ভেবে নেওয়ার জন্যই এই বিপত্তি!

যাক বাবা, যতই ভুল বোঝাবুঝি হোক, ও তো বেঁচে আছে, থুড়ি ভাল আছে, সেটাই অনেক। এ বার আবার তাকে একের পর এক ফোন করতে হবে। মেজদিকে, বড়দিকে এবং ছোটবোনকে। বলতে হবে। গুছিয়ে বলতে হবে। এমন ভাবে বলতে হবে, সেটা নিয়ে যাতে আর কোনও ভুল বোঝাবুঝি না হয়। কিন্তু কী বলবে সে! কী!


-----------------------------------


বৈশালী পাড়ার প্রতিমারা - শাশ্বত বোস || Baishali parar protima ra - Saswata Bose || Story || Short Story || Bengali Story || Bengali Short Story || গল্প || ছোট গল্প || অনুগল্প

বৈশালী পাড়ার প্রতিমারা

     শাশ্বত বোস



মফস্বলের ঝিম ধরা বিকেলের চলন্তিকা রোদ, প্রিজম তর্জনীর বর্ণালী ছাড়িয়ে, রাহুরেখা বেয়ে তির্যক ভাবে আলো আঁধারির মায়াজাল বুনেছে পাড়াটায়| আদুর গায়ের ছায়া শরীর আর গলনাঙ্কে ফুটতে চাওয়া তেঁতুল বিচির আঠার রং, যেন কুলহারী বেদব্যাসের স্বমেহ পিন্ডদানের আবহে, খড় –মাটি-রোদ-বৃষ্টির গল্প বলে চলেছে নিরন্তর| গলিটার গা বেয়ে তখন উদলা কাঠামো, নিটোল স্তন আর উর্বীমুখি নিতম্বের সারি| এটা স্থানীয় “কুমোরপাড়া”| আশেপাশের প্রায় তিন চারটে ছোটোখাটো শহরের মাঝে, প্রান্তিক, ক্লেদাক্ত, কস্তুরীয়, ম্রিয়মান প্লবতার নামাবলী গায়ে জড়িয়ে, রক্তাভ ঈশানে, এখানে এক শ্রেণীর মনুষ্যসম জীব, খড়কুটো দিয়ে কাঠামো বাঁধে, সেই বৈরী নগ্নতার গায়ে মাটি চাপায়, বানায় “প্রতিমা”| শাড়ি-গহনা-ডাকের সাজের আড়ালে, নিজের শিল্পসত্তার ফ্যালাসিকে কবর দিয়ে, মূর্তি বিক্রির মৈত্রী চুক্তিতে সায় দিয়ে, দূরে দাঁড়িয়ে যন্ত্রনার সুরহারীর ছেঁড়া তারে, আগমনীর সুর তোলে, আর অনাড়ম্বর সম্যক দৃষ্টির স্থিতিস্থাপকতায় অনুভব করে, সেই প্রতিমার পৃথু দেহজুড়ে লেপন হতে চলেছে, নির্জিত প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনশ্বর অসিয়তনামা| আমাদের গল্পটা শুরু হয় এই পাড়াটারই কোনো এক মৃৎশিল্পীর গোলা থেকে| অশীতিপর ভূতবৈরল্য আকাশের শরীরের উপর দাঁড়িয়ে, স্বয়ম্বরী সন্তাপের মেটাফিজিক্যাল অঙ্ক কষে, ঠাকুর বানায় “মধু কুমোর”, প্রতিমার মুখ গড়ে, চোখ আঁকে নিজে হাতে| হতে পারে সেটা আগত আশ্বিনের আগের বর্ষার কোনো এক সর্বাশী বিকেল কিংবা ওই একই দিনের শুরুর বিবসন ভোরের কাল| সময়ের তফাৎ খোঁজা নিরর্থক| কারণ কাহিনীটার শুরু কিংবা শেষ, আবাহন কিংবা বিসর্জন, যাবতীয় গল্পগুলো সবই আবহমান|


“এবারে ওই দাঁবাল পার্টি এখনও এলুনি, মধুদা? বরাত দেবেনি এইবার?” একতাল এঁটেল মাটিকে দুহাতে চটকাতে চটকাতে, নিজের বুনো চট ধরা চুলগুলোকে চোখের উপর থেকে সরিয়ে প্রশ্ন করে “হাঁদুল”|


মধু কুমোর কথাগুলোয় বিশেষ আমল করে না| তাঁর ধ্রুপদী হাত তখন অস্তিত্ব-শুণ্যবাদের পদাবলী রচনায় ব্যস্ত পিশাচসজ্জার এই ঈশ্বরনগরীতে|


আগের কথার উত্তর না পেয়ে হাঁদুল আবার প্রশ্ন ছোঁড়ে, “ও পাড়ার মাটি কবে লিবে বলবেক, আগে থেকে| আমি একবারেই যাবক, সবাইলে লিয়ে এসে দিবোক|”


মধু হালকা সুরেলা গলায় ফিনফিনে পর্দায় উত্তর দেয় এবার, “লাগিবে নি|"


কথাটা শুনে চমকে ওঠে হেঁদো, “লাগিবে নি কি গো?”


মধু কুমোর আবার হাতের ছাঁচগুলোতে মাটি মাখাতে ব্যস্ত| সবে ঠাকুরের খড় বাঁধা হয়েছে এবার| অন্যবার এতদিনে একমেটে হয়ে যায়| এবার বয়সের প্যাঁচটা বেশ একটু বাগিয়েই ধরেছে তাকে|


মুখ তুলে, ঘাড়খানা বামেতর বেঁকিয়ে, হাঁদুল মধুর দিকে ফিরে, ঝাঁঝালো হয়ে ওঠে, “লাগবেনি কি গো? ভীমরতি ধরসে নাকি? ছিষ্টি ছাড়া হইলা নাকি বুড়ো!”| মধু কথাটা শুনে ঋষভ ভঙ্গিতে তাকায় হেঁদোর দিকে| তার অমিত্রাক্ষর চোখ দুটো, নির্বাক শূণ্যতায় তাকায় হেঁদোর খোলা পিঠে| সেই নিস্পলক দৃষ্টির দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে না থেকে, হেঁদো আবার নিজের কাজ করতে থাকে| রিক্ত, বস্তুবাদী বিরক্তিতে এবার সে বলে ওঠে “তোমায় যে কয়েছিলাম, আমার মজুরী বাড়াইতে, কি হইলো?” এই পহায় আমি আর কাজ করবুনি, পত্যেকে বাড়ায়েছে একেনে|”


প্রতিমা তৈরীর কাজে এক বিশেষ শ্রেণীর জোগাড়ের লোকের দরকার হয়, সৃষ্টির আদিকাল থেকেই| গঙ্গা থেকে কাঠামো তুলে আনে, স্থানীয় হিন্দুস্তানী পট্টির ছেলেপুলেরা| সেই অস্থিসার কশেরুকার উপর, মাটির প্রলেপ মাখানো চলে| একমেটের জন্য ক্ষেতের আঠালো এঁটেল মাটির জোগান দেওয়া থেকে শুরু করে, সেই মাটি তুশ দিয়ে মেখে, মৃৎশিল্পীর হাতের কাছে ধরা কিংবা এঁটেল আর বালি মাটি মিশিয়ে মুখের ছাঁচে ফেলে, মুখ বানিয়ে দেওয়া, দোঁমেটের জন্য গঙ্গা থেকে বালি মাটি তুলে আনা, দোমেটের পর প্রতিমার গা ফাটলে, এঁটেল মাটিকে জল দিয়ে গলিয়ে পাতলা করে, ন্যাকড়া দিয়ে সেই ফাটলের গায়ে মেরে দেওয়া, এঁটেল মাটিতে মেশানোর জন্য দা দিয়ে পাট কুচিয়ে দেওয়া, এসবই এপাড়ায় বেশ অনেকবছর ধরে একসাথে বেশ কিছু গোলায়, অনুমেয় গুলজারী ধারায় করে আসছে এই হাঁদুল| এই করেই ওর পেট চলে| সারা বছর এই কুমোরপট্টির বিভিন্ন ঘরে, ওর দিন কাটে| কাজের পরিবর্তে মজুরী আর দুবেলা খাওয়া, এই হল ওর রোজনামচার ঋণাত্মক সোপান| রাতে মধুর সাথে সস্তার মদ আর নিকোটিনে চুবোনো নির্কষ সন্তুষ্টি, কাব্যিক গূঢ়তার দিগম্বরী স্পর্ধায় হাঁদুল ভাবতে শুরু করে, সেও “শিল্পী”| 


এই গলিটার শেষে, যেখানে অন্ধকার চুঁইয়ে নামছে, পোড়ো বাড়ির গায়ের, নোনা ধরা দেওয়ালের খসে পরা পলেস্তারার মতো, সেইখানটাতে শর্বরীর শরীর হাতড়ে পাওয়া যায়, কিছু নির্বস্ত্র শরীর| অবাধ পৃথু দেহ জুড়ে যেন তন্দ্রাতুর অশ্লীলতার ছাপ, চোখগুলো জুড়ে অমোঘ নেশা, আর কিছু সবুজ হলুদ শাড়ি-চুমকি-অভ্র| এই গলিতে ভদ্র লোক যায় না| শুধু এই রাস্তার শেষে কসাইয়ের দোকান, আর সেই দোকানের মতো এই গলিতেও দরজায় দরজায় মাংস বিক্রি হয় অবাধে| খদ্দের এসে হাত বাড়ায় বুক, পেটে, ঠোঁটে| দরদাম করে সবশেষে কিনে নিয়ে চলে যায়, এ ঘর থেকে ও ঘরে| পুরো খুললে পাঁচশো, আঁচল সরালে তিনশো, ঘন্টা প্রতি হরেক রকম রেট চলে এখানে| বলার অপেক্ষা রাখে না এটাই “বেশ্যা পাড়া”| পাশাপাশি দুটো পাড়া জুড়ে প্রতিমা আর পতিতা দাঁড়িয়ে থাকে পাশাপাশি| পাড়ার মোড়ের কালীমন্দিরটায়, অম্বুবাচিতে প্রতিমার মুখ ঢাকা হয়| পোয়াতি বর্ষার অবাধ ধারায় বেশ্যারাও রজঃস্বলা হয়| ভয়, লজ্জা আর প্রার্থনার ঐতিহাসিক সন্ত্রাস চলে এই কদিন| হেঁদো ও এই বেশ্যা পট্টির ফসল, তবু সেই প্রেষিত, কলুষ, ইমারতি জন্মস্রাবের স্মৃতিকে, নিজের একমাত্র পরিচয় না করে, বেশ্যা পাড়ার দালাল বৃত্তি ছেড়ে এই কুমোর পাড়ায় জোগাড়ের কাজ নিয়েছে হেঁদো| এই জন্যই হয়তো বৈবস্বত নগরে বোকা দের অনিবার্য্য জন্ম হয়, বুদ্ধি মত্তার ক্লীবতার স্বার্থে|


তবু হেঁদো দিনে একবার ছুতোনাতায় ঘুরে আসে ও পাড়া থেকে| পুরোনো আধভাঙা সব বাড়ি, অশুচি দেওয়াল ,বায়ুভুক উঠোন, যেন সারা শরীরে সেপ্টিসেমিক রক্ত আর কামব্যবসার ভেজা শীৎকারে ডুবে যাওয়া, অন্তঃসত্ত্বা অঘোরকামিনীর অনুসর্গ টেনে বাঁচতে চাওয়া, প্রসেনিয়ামের সজল এপিটোম| কোনটা একতলা, ব্রাত্যজনের দরজা ঠেলে, এঁটো উঠোনের আঁশটে গন্ধটা গায়ে মেখে, হয়তো বাঁ পাশে একটা লম্বচ্ছেদী সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়| ক্রাফ্টেড মেঘের গা থেকে চুঁইয়ে পরা নিমমাজনের এঁটো থুতুর মতো, মরা উপন্যাসিকের নালবেষ্টিত ঘরগুলো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মৃত প্রিয়ম্বদার এরোটিক যৌনতার মহাকাব্য হয়ে| ঘরের এককোণে একটা তক্তপোষ, আরেক কোণে হয়ত একটা জল খাবার কুঁজো, সাথে উপুড় করা গ্লাস| ঘরের দেওয়ালের কুলুঙ্গিতে, পর্দা ঢাকা ঠাকুরের ছবি যেন লিপি ধর্মঘট টানে, পতিতার রোমান্টিক শ্রাবণী সঙ্গমে| এই ঘরেরই আরেক কোণে, নীরব চারুকলার সাক্ষী হয়ে ঝুলতে থাকা একটা মাদুর, পরকীয়ার তত্ত্ব বোনে| তার ঠিক পাশটাতেই, মেঝেতে ইট দিয়ে ঘেরা ছোট একটা জায়গার ভেতর, একটা নর্দমা, পাশে মগ আর বালতি| ওটাই গণিকার সঙ্গমের পর যোনিপথ সাফ করার জায়গা| বাড়িগুলোর সামনে মহাকাব্যিক দরজা কিংবা রোয়াকে শোভা পায় অপর্ণা, অর্চিতা, মৌসুমী, শোভনার দল| এইরকমই কোনো এক ঘরে জন্মেছিলো হেঁদো| আবঝা আবঝা এখনো মনে পড়ে তার| ঘরে লোক ঢুকিয়ে ওর মা ওকে বাইরে বার করে দিতো| ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ও শুনতে পেত মায়ের গোঙানি আর খদ্দেরের অবিরাম খিস্তিখেউড়| এক এক দিন অনেক রাতে ওকে কাছে টেনে নিতো ওর মা| আধো ঘুমের মাঝেও ও টের পেত ওর মায়ের নিঃশব্দ কান্নার উপস্থিতি| আর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা পরিশ্রমী ঘাম, অভিশাপের চুমু ছুঁড়ে দিতো ওর কপালে| সময়ের স্রোতে বদ্ধ ডাস্টবিনে জমা প্লাস্টিক আর আবর্জনার মতো পচতে থাকে সে সব, হেঁদোর অন্তরালে| একদিন বাইরে থেকে খেলে ফিরে, হেঁদো দেখলো ওদের ঘরের সামনে অনেক ভিড়| ছোট্ট দু হাতে একে ওকে সরিয়ে, ঘরের ভেতর বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে, একটা সজোরে ঝটকা খেল হেঁদো| বিশাল চর্বির একটা থলি যেন ওকে চেপে ধরল সজোরে| গদার মতো দুটো হাত দিয়ে ওর ছোট্ট শরীরটা, নিজের পৃথুলা শরীরে চেপে ধরেছিলো “নমীমাসি”| হেঁদোর মা টা মরে গেলো, কোন কাস্টমার নাকি কাজ করার সময় বেশি চড়ে গিয়ে, গলা টিপে মেরে ফেলেছিলো ওর মাকে| তারপর থেকে নমীমাসির কাছেই থাকতো হেঁদো, পাড়ার মেয়েদের ফাইফরমাশ খাটতো| মাঝে মাঝে মাঝরাতে জোরালো হাসি কিংবা কান্নার শব্দে, ঘুম ভেঙে যেত ওর| তখন দেখতো ষণ্ডামার্কা একটা লোক, খদ্দের নিয়ে এসে ঢোকাচ্ছে অন্য মেয়েদের ঘরে| আগে এই লোকটাকে ও দেখেছিলো, ওর মায়ের ঘরে লোক নিয়ে আসতে| লোকটাকে আড়ালে খুব ভয় পেত হেঁদো| ওকে দেখলেই লোকটা যেন আরো ষণ্ডাপনা দেখাতো, চোখ পাকিয়ে তেড়ে আসতো মাঝে মাঝে,মারধরও করতো| একদিন আর থাকতে না পেরে, একটা আধলা তুলে লোকটাকে ছুঁড়ে মেরেছিল হেঁদো| পাশের ঘরের বিন্নি, হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যায় নিজের ঘরে| মাথায় হাত বুলিয়ে, পাইরিয়ার ক্ষত চিহ্ন শোভিত দাঁত গুলোয় অষ্টকি হাসি তুলে বলে, "অমন করে না মানা, ওটা কে জানিস? তোর বাপ্"| তারপর থেকে একটা মনোক্রমী ভয়, মাথা থেকে নেমে, চোখ, নাক পেঁচিয়ে গলা টিপতে আসতো হেঁদোর| দেহজ পাপ, শুকিয়ে আসা আসঞ্জক আর ক্রমে বন্ধ হয়ে আসা নিঃশ্বাসের শ্রেণীবদ্ধ বিন্যাসে এক ঋণাত্মক উপলব্ধি জাগছিল তার ভেতর, এই অপার বিশ্বে সে অবাঞ্ছিত, তাঁকে কেউ চায় না| একদিন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো ও, আর ফেরেনি, গিয়ে জুটেছিল এ পাড়ার “মধু কুমোরে” র কাছে| বৌ, ছেলে মেয়ে নিয়ে মধুর তখন ভরা সংসার| সরকার থেকে পুরস্কারও জুটেছে তার শিল্পকর্মের জন্য| বড় বড় খবরের কাগজের লোক, তখন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে "মধুসূদন পাল শিল্পালয়" এর সামনে|


“মধু খুড়োটার কিছু ভীমরতি হইছেক, দুগ্গা ঠাকুর গড়তে মাগীবাড়ির মাটি লাগব নি?”, জৈবিকতার শ্রাবণী মেঘের জংঘা বেয়ে নেমে আসা, একটা ধ্রুপদী নৈরাশ্য গ্রাস করে হেঁদোকে| তবে বছর কয়েক আগে, নিজের স্ত্রীর অকালমৃত্যুর পর থেকে, সত্যিই বদলে গিয়েছে মধু| জীবনের সব উচ্ছাস কেড়ে নিয়েছে, পৈশাচিক সন্তাপের দহন| সে এখন কাঁপা কাঁপা হাতে ঠাকুর গড়ে না, যেন দার্শনিক অঙ্ক কষে লিখে রাখে দপ্তরী ঔপন্যাসিকার শেষটুকু| ছেলেটাকে আর্ট কলেজে পড়িয়েছিলো, অল্প বয়সে বাপের মদের নেশা গিলে খেয়েছে ছেলেটাকেও| সে এখন দুগ্গার বাঁ পাশে লক্ষ্মী আর ডান পাশে সরস্বতী গড়ে, পৃথিবীর অভিকর্ষকে অগ্রাহ্য করতে চায়| সত্যি পাগলামো আর খামখেয়ালিপনা এদের রক্তে|


তবু আজও, এই মাঝ বয়সে পৌঁছেও দিনে একবার না একবার ও পাড়া থেকে ঘুরে আসে হেঁদো| বয়ঃসন্ধির কোনো এক নান্দনিক বিকেলের, অস্থির মেঘের তছরূপী ছায়াপথ বেয়ে, প্রেম এসেছিলো ওর জীবনে| যদিও এ পাড়ায় প্রেম আসে না, খোলা পথে আসতে গিয়ে, কুলোটা দময়ন্তীদের লাল ব্লাউজের ফাঁকে খাঁড়া আপিনে অদুগ্ধতার আশ্লেষে ধাক্কা খেয়ে পালিয়ে যায় চোরাপথে| তবুও হেঁদোর এই মাধুর্য্যহীন, অমানুষের জীবনে, ভালো লাগা এসেছিলো, এই বেবশ্যা পাড়াতেই, নিয়মমাফিক দেহস্রাবের বীর্যে পোয়াতি হওয়া, শুঁয়োপোকার মতো|   


কদিন ধরেই হেঁদো এ পাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছে, চার নম্বর বাড়ির দরজার সামনে একটা ফর্সা পানা নতুন মেয়ে, গায়ে ব্লাউজ আর সেমিজ চড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে| কিন্তু মেয়েটা আর চার পাঁচটা মেয়ের চাইতে কোথায় যেন আলাদা| ঋতিচূর্ণতার ত্রাসে নত সূর্য্যাস্তের মতো অসম্ভব শান্ত দুটো চোখ, এক ঢাল আলু থালু চুল, তাতে রঙিন ফিতে দেয় না, কিন্তু চুলে একটা অদ্ভুত জেল্লা আছে| মেয়েটার মুখটা কি অসম্ভব মায়াময়| এ মুখ হেঁদো আগে কোথাও দেখেছে, হয়তো মধুর গড়া লক্ষ্মীঠাকুরের মতনই মুখের গড়ন| তাই মেয়েটাকে হেঁদোর এতো চেনা লাগে| মেয়েটা একএকদিন এক এক রঙের ব্লাউজ আর সেমিজ পরে| এখনকার মেয়েগুলোর মত জিন্স আর টপ ও পরে না, আবার নিজে থেকে কাউকে ডাকেও না| রাস্তা দিয়ে লোক গেলে "এই যে হিরো শোনো, যাবে?” বলে সিটি মারে না| এমনকি পড়তি গতরের মাগীদের মত হাত ধরে টানাটানিও করে না, চুল্লুর পাউচটা কেটে মুখে পুরে, দরজার সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে, ঠোঁটে সিগারেটে অঙ্গার আত্তীকরণের ধোঁয়া তুলে, জটলাও করে না| খদ্দের এসে সামনে দাঁড়ালে, চুপচাপ নিয়ে ঘরে ঢোকে| হাতে করে টাকাটা এনে মাসির হাতে দিয়ে দেয়| পাড়াটাকে ভালো করেই চেনে হেঁদো, এই বাড়িটাতেই ওরা থাকতো| এদিকটা এখন অনেক বদলে গেছে, পুরোনো অনেক লাইন বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাটও উঠেছে| এলাকায় যারা পোড় খাওয়া ক্রিমিনাল, পলিটিকাল লিডারদের ডান হাত, বাঁ হাত, বেনামে তারা ফ্ল্যাটগুলোকে কিনে ধান্দা চালাচ্ছে| তবু এই দরজাটা হেঁদোর ভীষণ চেনা, এই জায়গাটাতেই ওর মা দাঁড়াতো| হাঁ করে মেয়েটাকে দেখতে থাকে হেঁদো| এ দৃষ্টিতে কামরসের দেহি উপসর্গ নেই, বরং মেয়েটির এই অমলিন সুন্দর দেহাবয়ব, এই বৃষ্টিমেদুর অন্ধকারে, প্লেটোনিক উষ্ণতায়, হেঁদোর শরীরে এঁকে দিতে চায় সমাবেশী মনন-শূলানির পদাবলী| মেয়েটাও নিস্পলক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে হেঁদোকে| হঠাৎ বাঁ পাশে একটা ছোট্ট ধাক্কা খায় হেঁদো, সাথে হাতের চুরির ঠুনঠুন শব্দ শুনতে পায়| চোখ ফিরিয়ে সে দেখে, নধর শরীর দুলিয়ে, সারা গায়ে মূর্ছনার হিল্লোল তুলে, হেঁটে যায় পাড়ার ঝুম্পা বৌদি| ভদ্র কাপড়ের আঁচলটা আলতো করে গুটিয়ে কাঁধে জড়ো করা| ঠোঁটের কামিনীঘন কামুক লাল রং, চোখের উরোগামী উনুন আঁচ আর সুডৌল আপিনের সমকোণের আবেদন, হেঁদোর শরীর অববাহিকায় ঢেউ তোলে, ওর মনে অজ্ঞেয় কাম জাগে|


 


মিসেস দুলারী ব্যানার্জী, আসলে দুলারী পাসোয়ান, এ পাড়ায় সবাই চেনে ঝুম্পা বৌদি নামে| সেই কোন কালে বিহারি জুট মিলের লেবারের ঘর ছেড়ে, মেয়ে কোলে করে, জুটমিলেরই কেরানী “নিমুবাবু”র হাত ধরে, এ পাড়ার কোণের ঘরটাতে এসে উঠেছিল| তাঁর স্বামী পালিয়েছিলো এক ছিনালের সাথে| মরদবিহীন যুবতী শরীর, সাথে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের অভাব, সব থেকে বেশি দুলারীর উঠতি যৌবনের অতলস্পর্শী কস্তুরী, উন্নিদ্র পৃথিবীর যে কোনো পিপাসী পুরুষমন, হয়তো নিমেষে এই নষ্ট শরীরী গুহ্যতায় মজে যেতে বাধ্য|


বিগত যৌবনা বারবনিতার মতো পাংশু, পলেস্তরা খসা, লাইনবাড়িগুলোর কোণের একটা ঘরে, মা মেয়েতে থাকতো দুলারী| জুটমিল বন্ধ হওয়াতে নিমু বাবু, বাইরে সেলস এর চাকরি নিলেন| প্রথম দিকে, ন মাসে-ছ মাসে বাড়ি এলেও, ইদানিং এ বাড়িতে তাকে আর কেউ দেখতে পায় না| যদিও মাসের মাঝখানে, অনলাইনে দুলারীর একাউন্ট এ টাকা এসে যায় ঠিকই| হয়তো বা সে মৃত মাছের, আঁশ না ছাড়ানো, চৈতন্যবাদী টগরবোষ্টমী আর অক্ষৌহিনী নীল শৃগালের, কোমল স্বরযন্ত্রের সান্দ্র মেদুরতায় বোনা, নির্মোক এক প্রায়শ্চিত্তের আখ্যান| দুলারীর মেয়ে “পিউ”, ভালো নাম “অস্মিতা ব্যানার্জী”| নিমুবাবুর পদবীটাই মেয়ের স্কুল কলেজে ব্যবহার করেছে দুলারী, নরম তরুনাস্থি কিংবা অস্থিসন্ধি আড়াল করার জন্য, সাদা চামড়ার একটা পিতৃপরিচয় এর লোভে| বয়সের নরম সমানুপাত বেয়ে, যৌবন খেলা শুরু করেছে পিউ এর শরীর জুড়ে, ঠিক যেন যৌবনের দুলারী| অস্থিসার সেই লাইনবাড়ির, অর্ধেকের বেশিটাই আজ আর নেই, ভেঙে ফ্ল্যাট উঠেছে| ছোট খুপরির মতো নিরক্ষীয় প্রকোষ্ঠগুলোর অধিকাংশটাই, বেনামে কিনে নিয়েছে পলিটিক্যাল পার্টির লিডার কিংবা তাঁদের চেলাচামুন্ডারা| সেগুলোতে এখন দিনে রাতে, দিব্যি শরীর ব্যবসা চলে| একটা ফ্ল্যাট ঝুম্পারাও পেয়েছে| সবটাই অবশ্য লোকাল M.L.A “টেঁপা দা” আর তার রাইট হ্যান্ড “মদনা”র কল্যাণে| ঝুম্পা বৌদিতে মজে না, এমন মরদ এখনও জন্মায়নি এই দেবীপুরে| পিউ এর এখন ক্লাস টুয়েলভ, কমার্স নিয়ে পড়ছে এখানকার মালতী হাইস্কুলে| সকাল বিকেল শাড়ি পরে স্কুলে যাওয়ার পথে, তার শরীরটা হাঁ করে গেলে মোড়ের মাথার মদনারা| পিউ এর সেটা বেশ লাগে, সাধ হয় কিশোরী দেহের খোলস ছেড়ে আদিম, অসভ্য এক নারী হতে| মদনা দা যদি হাতটা ধরে, একবার ওর বাইকে তুলে নেয়, বেশ হয়| ওর সব বন্ধু, কল্পনা, মৌসুমী, স্বেতা, সোমা, সবাই তো মদনাদার সাথে খেপে খেপে ঘুরেছে|


এইজায়গাটাতে থাকতে আর মন চায় না ঝুম্পার| মেয়েটা বড় হচ্ছে, নতুন করে আবার ঘর পাততে ইচ্ছে হয় ওর| পিউ কে ছেড়ে ঝুম্পার হাত ধরবে না মদনা কিংবা কেউটে| হাজারহোক এরা এন্টি সোশ্যাল, এই বয়সে নতুন করে অনিশ্চিত জীবনের দগদগে পোড়া ঘা চায় না দুলারী| পিছনের জীবনের ঝলসানো কালবেলা, এখনও ওর স্মৃতিতে টাটকা| পিউকে একাউন্টেন্সি পড়াতে, একটা বছর চব্বিশের ছেলে আসে ওদের ফ্ল্যাটে| ফর্সা, সুন্দরপানা চেহারা, নাম “সুমন”| কয়েকদিন হলো ছেলেটা MBA পাস করে ক্যাম্পাসিংয়ে একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে| সেদিন সন্ধ্যেবেলা পিউ বাড়ি ছিল না, হাতকাটা শিফন নাইটিটা পরে জলখাবার দিতে যাবার ছুতোয়, সুমনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল দুলারী| ঊষর কবিতায়, শব্দপোকার আখরে ফুঁটে থাকা, প্রান্তিক যতিচিহ্নের তীব্র আশ্লেষে, নিজের ঈষৎ চর্বিল শরীর, গতযৌবনা আপীন কিংবা মাংসল সুউচ্চ নিতম্ব, সমন্বয়ী বর্ষামঙ্গলে ভেজা দেহানলের উত্তাপটুকু, পুরো চেপে ধরেছিলো ওর গায়ে| হাইবারনেশনের পাঁচিল টপকে সুমনের শ্বাস প্রশ্বাস কি একটুও গভীর হয়নি? ফেনিল সাগরের জৈবিক নিয়মানুবর্তীতায় কি উদ্যাপিত হয়নি ওর পৌরুষ?


 


মধু কুমোর ঠাকুর গড়ে, একমেটে শেষ করে দোমেটে করার প্রস্তুতি নেয়| ফাঁকে অসুর আর দেবীমুখ তৈরী করে পাশাপাশি নির্বাণি ছাঁচে, দপ্তরী হিসেবী আঙ্গুল চালায় প্রতিমার কটিদেশ, নিতম্ব কিংবা বক্ষদেশ জুড়ে| স্থূল থেকে স্থূলতর হয় দেবীকুলের বক্ষ বিভাজিকা, মধুর নিপুণ হাতের টানে| নাগাড়ে বালি মাটি আর এঁটেল মাটি মিশিয়ে চটকে দেয় হেঁদো| দুপুরে খেতে বসে, খাওয়ায় মন থাকে না মধুর| পোষা বেড়ালটা এসে, পাতে মুখ দেয়| পাতটুকু চেটেপুটে শেষ করে গিয়ে, শুয়ে পড়ে প্রতিমার কাঠামোর নীচে| মধুর মন পরে থাকে ঠাকুরে, এখনও কত কাজ বাকি! ঠাকুর গড়া, ঠিক জীবন গড়ার মতো| দুপুরে মনে হয় সামনের রাতটাই বুঝি শেষ| তারপর পোয়াতি যামিনীর জঠর চিরে, প্রত্যয়ী ভোর হয়| আবারও একটা দিনের শুরু| সিংহের কেশর, মহিষাসুরের পেশী, দেবীর স্তন, সব মিলেমিশে জমা হয় বৈতরণীর কূলে|


সেদিন সন্ধ্যে থেকে মদটা একটু বেশি খাচ্ছিলো মধু| হেঁদোটা বার বার বলছিলো, "আরে খেওনি মধুদা, রাত জাগতি হবেক, কাল তো মহালয়া, ঠাকুরের চোখ দেবেনি?” মধু কান দেয়নি ওসবে| ও জানে শুধু আজকের রাতটা, ব্যস তার পরেই গভীর ঘুমের ঘোরে, শস্যের মঞ্জুরি বেয়ে ঢুকে পরবে, আবেগ পোকার ডানা| আর কোনো নির্জিত যন্ত্রনা কিংবা পাতাবাহার পারবে না মধুর রাতের ঘুম ভাঙাতে| ভোর রাতে চোখ আঁকবে মধু, দেবীর ত্রিনয়ন, ঈষৎ অনল আভার সাথে কৌমুদী আবেশ মাখানো থাকবে সেই চোখে| মধু পাল রাষ্ট্রের সম্মান পেয়েছিল দেবীর চোখ এঁকে| সেই চোখ আবার আঁকতে হবে তাকে| আশাবরী রাগে খাম্বাজ মিশে যাবে| তারপর আহিরভৈরবীতে অনুষ্টুপ ছন্দে বিষণ্ণ ভোর, মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ এনে দেবে| টলতে টলতে, নিজের গোলায় ঢুকে যায় মধু| বাইরের চৌকিতে আজ আধজাগা থাকবে হেঁদো| হাতের তুলিটা রঙের তুবড়িতে ডুবিয়ে গভীর শ্বাস নেয় মধু| এবার সেই অমৃতক্ষণের প্রতিক্ষা| আজ বিকেল থেকেই লাইনের ওপারের মুসলমান পাড়ায় ঝামেলা বেঁধেছে| দফায় দফায় লোকাল থানা থেকে ভ্যান দৌড়োচ্ছে সেদিকে| রাত বাড়লে গন্ডগোল বাড়তে পারে| অমাবস্যার গুমোট অন্ধকারে, বাইরের ল্যাম্পপোস্টের নরম আলোয়, বৃষ্টি ভেজা আধপোড়া রাস্তার ম্যানহোলে, দৌর্মনস্যতার জালবুনে নিঃসাড় গলনাঙ্কে, সাবধানী কান পাতে হেঁদো| মাথার কাছে রেডিওটা আঁকড়ে নেয়| আর কিছুক্ষন, মধু ঠাকুরের চোখ দেবে মহালয়ার ভোরে| মৃদঙ্গ ভৈরবী রাগে, উদাত্ত কণ্ঠে চন্ডীপাঠের আবহে, পাড়াটার অসাড় দেহে জেগে উঠবে, অনুচিন্তক মননশীলতা|


 


খুব ভোরবেলা, চারমাত্রিক নির্লিপ্ত বাতাসে, ভগ্নাংকের পূর্ণজন্মে, ঘুম ভাঙে পাশাপাশি দুটো পাড়ার| দূরের একান্নবর্তী কোঠাগুলোর রংচটা দেওয়ালে, এসে ধাক্কা খায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের "নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমৌ নমঃ", সাথে ত্রিদিবি সংলাপে, কারুবাসনার ছবি আঁকে, ইসলামী অনিন্দ্য আজান| রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙে, দিনের শুরুয়াতি পাখির আলাপে| কুমারপাড়ায় মধু কুমোরের গোলার সামনে, ভিড়টা জমাট বাঁধে| বাইরের খাটিয়ায় তখন গোলাপের জীবাশ্মের মতো পরে আছে হেঁদোর থ্যাঁতলানো দেহটা| প্রচন্ড আক্রোশে গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়েছে যেন কারা! গোলার দরজাটা সজোরে ভেঙে দিয়ে গেছে কেউ| ভিতরের প্রায় সম্পূর্ণতার কোঠায় পৌঁছানো মূর্তিগুলো, আসুরিক উন্মাদনায় দুরমুশ করেছে| পাশবিক যৌন উল্লাসে, প্রতিমার পরণের কাপড় করেছে ছিন্নভিন্ন| বিবস্ত্র, বিকৃত মুখ মূর্তিগুলো যেন নির্লিপ্ত দেহভৃত অবয়ব, ভগ্ন বাহুদ্বয় সম্মুখে বিস্তৃত করে, নিজেদের বিপন্নতার কথা ব্যক্ত করে চলেছে নিরন্তর| একটু দূরে মাটিতে উপুড় হয়ে পরে রয়েছে মধুর নিথর দেহ| মাথার পিছনে গভীর আঘাতের চিহ্ন| প্লাজমিক শোণিতধারা ক্ষীণ রাস্তা বেয়ে, গিয়ে মিশেছে দূরে উল্টানো রঙের বাটিতে, যেন রক্ত আর রঙের অব্যয় হোলিখেলা| ঠিক পাশটাতে পরে আছে, একটি দেবীমূর্তির খন্ড মস্তক দেশ| দেখে বোঝা যায়, কাল সারারাত ধরে এই নির্দিষ্ট মূর্তিটির মুখাবয়ব, রঙের পরতে, নিপুণ তুলির চক্ষুদানে, পরিপূর্ণ করেছে মধু| তার ঠিক পাশটাতে পড়ে রয়েছে, একটি অষ্টাদশী কিশোরীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি| হয়তো বা শিল্পী মনের, নৈসর্গিক সংবেদ আর কুদরতী অতীন্দ্রিয় প্রবৃদ্ধতায়, একেই ফুটিয়ে তুলছিল মধু| গোলার সামনে জটলা থেকে কেউ আর ভিতরে ঢোকার সাহস করে না| শুধু ভেসে আসে ফিসফাস শব্দ "ওই ও পাড়ার মালগুলারই কীর্তি, ক্ষারটো এইভাবে মিটাইলেক! আশেপাশের গোলাগুলার দরজা গুলান খুলতে পারেকলাই, মধুদার গোলার দরজাটো দরমা বেড়ার, কতবার কয়েছিলুম সারাইতে, সারাইলেনি| এবার লাও|


-ওই ছবিটা কার গো? আহা কি সুন্দরপনা মুখখানা!


-আরে ওইটাই ত মধুদার সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটা গো, ওর শোকেই তো মধুদার এমন পাগলপানা দশা!”


বেলা গাঢ় হতে একটা পুলিশভ্যান ঢোকে পাড়াটায়| তবে সকলের প্রত্যাশামতো, সেটা মধুর গোলার সামনে না থেমে, সোজা চলে যায় গলির শেষপ্রান্তে, ৪ নম্বর লাইনবাড়িতে| বাড়ির সামনে তখন মেয়েদের ভিড়| স্থূল চর্বির বাতুলতায়, শরীরে দোল তুলে, পৃথুলা “মাসী” এগিয়ে এসে থানার আইসি কে নিয়ে যায় কোণের ঘরে| সে ঘরে তখন রক্তারক্তি কান্ড! কাল রাতে এ পাড়ার দালাল, “বিষ্টু”, দুটো ষণ্ডা মার্কা লোককে, জোর করে ঢুকিয়েছিল পাড়ার নতুন, সেই সুন্দর মুখের মেয়েটির ঘরে| মেয়েটি নরম গলায় আপত্তি করেছিল, কেউ শোনেনি| রাত বাড়লে লোকদুটো মদের ঘোরে চড়াও হয় মেয়েটির উপর, জোর করে যৌন লালসা পরিতৃপ্ত করতে চায়| মেয়েটি সহ্য করে প্রথমে, এ লাইনে এটাই তো তাদের জৈবিক নিয়ম| এইরকম প্রতিরাতের শেষেই তো, প্রেমহীন অভাবী ভোরে তারা গান গেয়ে ওঠে, ঠিক যেন আলোর নীড়ে শিস দেওয়া হামিং বার্ড| কিন্তু কালরাতে অত্যাচার চরমে উঠেছিল, আঁচড়ানো কামড়ানোর সাথে চলে বিবস্ত্র করে মারধর| একটা লোক তো ধারালো ছুরি বার করে, মেয়েটার শরীরটাকে ক্ষতবিক্ষত করতে চাইছিল| আর চুপ থাকেনি মেয়েটা, হাত থেকে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে বসিয়ে দেয় একটার গলায়, অন্যটা দ্বিগুণ হিংস্রতায় এগিয়ে এলে সজোরে ছুরিটা বসিয়ে দেয় তার শিশ্নাগ্রে| ফিনকি দেওয়া রক্ত ছিটকে এসে লাগে মেয়েটির সীমন্তপথে| গ্রহণের জোয়ার ভাঁটায়, রোহিণী ভাদ্রপদদের বুক শুকিয়ে, কোমল বিটপীসম শরীরটায় যেন দৈবী রজঃসঞ্চার হয়|


লেডি কনস্টেবলরা, মেয়েটির দুহাতে হাতকড়া পরিয়ে, ধীরে ধীরে প্রিজন ভ্যানে তোলে| মেয়েটির মুখ জুড়ে, তখনও নির্বিকার মৃতবৎসা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে লেগে রয়েছে, শুকনো রক্তের দাগ| ভ্যানটা কুমোর পাড়া হয়ে, মধুর গোলার সামনে দিয়ে, মিলিয়ে যায় গলির শুরুর চোরাপথে|


ভিড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা, ঝুম্পা বৌদির দিকে, চোখ যায়নি কারও| আলুথালু চুল, গায়ে নাইটির উপর ওড়না জড়ানো চোখে, ভীত মাতৃত্বের স্বতঃপ্রবৃত্ত সন্তাপ| সকালে মেয়ে পিউয়ের ঘরে, টেবিলের উপর রাখা, চিঠিতে লেখা ছিল "মা আমরা চললাম, তুমি ভালো থেকো| আমি আর সুমন ভালো থাকবো, আমাদের খোঁজ করো না|"


বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালীর, চিকুরী শরীর জুড়ে তখন, অনসূয়া ঢাকের শব্দ|