Sunday, October 31, 2021

কবি কাজী রিয়াজউদ্দিন আহমেদ -এর একটি কবিতা

 মুক্তি 




বন্ধু এবার পাপ পথ ছেড়ে 

          এসো সৎপথে ফিরে,

পৃথিবীটা দেখ ধ্বংসের পথে 

           চলিয়াছে ধীরে ধীরে!

মানব জীবন অশরীরি আজ

           পরিশ্রান্ত সবে,

ভোরের আকাশে রক্ত-কুয়াশা 

             ঝরে পড়ে এই ভবে।

তাই বলি সখা আর না অসৎ,

              সৎপথে এসো হাঁটি -

ভেঙে দেব মোরা রাহাজানি-খুন

                সন্ত্রাস যত ঘাঁটি।

পরের বিপদে ঝাঁপাইয়া পড়ি'

                 আসান করিব তারে,

শান্তি নামুক চরাচর ব‍্যপি 

                  সকলের দ্বারে দ্বারে!


মুছে দেব সবে ধরণী হইতে

                  লাল রক্তের দাগ,

খুন-ধর্ষণ ঠগ-দুর্নীতি

                  ভাগরে এবার ভাগ।

কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা

 অর্ধসমাপ্ত শক্তি



পুরোনো জীর্ণ সংসার ফেলে হারিয়ে গেলে গৌরী পাজামার দেশে,

ক্ষতি হয়ে গেল একটা জীবন,

তবুও বলেছিলাম দাও, কিছু দিয়ে যাও।

বাঁচিয়ে রাখার জন্যই তো কিছু দিয়ে যেতে চেয়েছিলে।

প্রস্ফুটিত রজনী গন্ধার আবেশে কেটেছে কত দিনরাত,

কিশোর বেলার ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি, বিজয়া দশমীর বিসর্জনের বিষাদের সুর একাত্ব হয়ে মিশে গেছে ঘরের আনাচে কানাচে।

এ বয়সে কোন উৎসবেই যেন কিছু নেই এর ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মধ্যরাতে শক্ত পাথর ভাঙা ছেলেটি তাঁর সর্বস্ব বিকিয়ে দিয়ে সমাধিতে শুতে এসেছে আজ।

এইটুকু জীবনে অর্ধসমমাপ্ত গভীর সুখ আর কত পোড়াবে!

বৃষ্টি এলে ক্ষুরের ঝড়ের মত দাগ লেগে থাকে নিজস্ব ফুলের জঞ্জালে।

জুঁই মাধবীর দিকে তাকিয়ে বলি প্রেম দাও প্রেম দাও,একাকিত্বের জনতার ভীড় থেকে একটু প্রেম এনে দাও।

আমি দেখতে পাই -

ফিরে যাওয়ার উৎস দেখে মানুষ ভয় পেয়েছে।

চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলাম গভীর দুঃখের মাঝে কোন সুখ লুকিয়ে আছে?

নির্ভয়ে চেয়ে থেকে বলেছিলাম ,

আজ তবে থাক,আবার আসছো কবে?

কিসের এত কাজ ,কেন এত দূরে দূরে থাকা?

বলেছিলে ধান কোটা শেষ হলে,

নেমে আসা অন্ধকারের মাঝে একটি কবিতা টাঙাতে হবে।

তখনই সকলকে বলবো আমায় এবার নিয়ে চলো।

আমি চিৎকার করে বলবো

আমাকে জাগাও, আমাকে জাগাও।

আমি দেখতে চাই কে বেশি সুন্দর?

এভাবেই উন্মাদনার কীর্তনগুলো শেষ হয়ে যাবে একদিন,

এভাবেই শেষ হয়ে যায় অর্ধসমাপ্ত গল্পগুলো।

কবি রাজা দেবরায় -এর একটি কবিতা

 চলুন ভাবতে শিখি



ভোগবাদের দুনিয়ায়

কেউ ভাবতে পারছে না,

ভাবতে শিখছেও না।

ভাবাটা কেমন যেন ব্রাত্য!

মস্তিষ্ক বলে যে কিছু আছে

ভুলেই যাচ্ছি আমরা।

একগাদা তথ্য ও পণ্য,

এটাকেই শুধু করছি গণ্য।

কিভাবে ভাবতে হয়,

কেনো ভাবতে হয়,

কী ভাবতে হয়,

সেটাই তো শিখিনি মোরা।

কিন্তু ভাবতে যে হবে!

টিকে থাকতে হলে,

দাপিয়ে বেড়াতে হলে,

সম্মান পেতে হলে,

ভাবতে যে হবেই।

চলুন ভাবতে শিখি!

কবি অরবিন্দ সরকার -এর একটি কবিতা

 নাথুলা পাশ

          


সিকিম চীন সীমান্ত অনেক উচ্চতা,

অক্সিজেন অপ্রতুল শ্বাসকষ্ট হবে,

অতীতের সিল্ক রোড তিব্বতের মাথা,

দখলে চীনাবাহিনী দেশ বন্দি ভবে।


অতন্দ্র প্রহরী সেনা তুষারে আবৃতা,

দেশমাতৃকার সেবা চালান নীরবে,

হিমালয়ের চূড়ায় শান্তির বারতা,

অখণ্ডতা রক্ষাকারী জাতির গৌরবে।


আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় একতা,

তিব্বতের জনপথ হারিয়েছে যবে,

বৌদ্ধ লামা ভিক্ষুগন অহিংসার ত্রাতা,

দেশটাই লোপ হলো যুদ্ধ জারি রবে।


নাথুলাপাশ বিশ্বাস সৌভাতৃত্ব জ্ঞানে,

ভারত ও সমকক্ষ পৃথিবী তা জানে।

কবি সোনালী মীর -এর একটি কবিতা

 তুমি কি কোন কবি নাকি চাষি



ওই হাতে ক্ষুরধার লাঙল নিয়েছ তুলে,

সাদা মাটিতে অক্ষর করেছ বপন রোদে জলে:

কতবার চষে গেছ আমাদের মন

গভীর থেকে গভীরে চিন্তার খনন

কতদিন ঊষর মাঠের বুকে

দু হাত আকাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়েছ সুখে-

তুমি কি কোন কবি নাকি চাষি

ঠোঁটে লেগে আছে শষ্য রাশি রাশি

বুকের ভেতর থেকে উৎসারিত কলমের কালি

বয়ে গেছে শিরায় শিরায়।শরীরের ধুলোবালি 

হীরের দ‍্যুতিতে শব্দ হয়ে পড়ছে ঝরে

মাটির 'পরে ঘাসের 'পরে।

একলা মেঠো গাছের নীচে ভাবাক্রান্ত উদাসী

কবি সৌমেন কর্মকার -এর একটি কবিতা

 শোক



চুপ হও,

দেখছোনা স্তব্ধ এখানে প্রাণ—

একলহমার জন্য হারিয়ে গেছে হাসি নীহারিকার গহীনে,

কান্নার গর্জন শ্রুতি—

ধরণীর কুঞ্জবন হতে ওই গগন চুম্বী পর্যন্ত,

বাঁধভাঙা অশ্রুর ধারা সবার চোখে।

ধূপের গন্ধ বয় তবুও,

বিষাদের সুর।

চেয়ারের ওপর রাখা একখানা ছবি,

ফুলের মালা জড়ানো—

ঘুমোচ্ছে সে,

আজ তার নির্বাক শ্রোতা হওয়ার দিন।

সাদা চাদরে ঢাকা দেহ'টার—

ওপর কত কারোর মায়া ছিল,ভালোবাসা ছিল।

চমকপ্রদ এক অট্টালিকা-রাশি রাশি ধন-সম্পত্তি ভরা,

স্ত্রী-আর দুই সন্তান—

দেখে মনে হয়েছিলো কি পরিমান সে সুখময়—

আসলে সুখ ছিলোই না তার কপালে,

একুল—অকূল খুঁজে খুঁজে আজ তার এই পরিণাম,

কাঠের বিছানা তৈরি—

শেষবারের মত একটিবার নাম ধরে ডাকা,

ক্লান্ত হয়ে শোবে সেই মৃত পুরুষটি—

প্রকৃতির মুখ দেখো চেয়ে করুন নীরবের ভূমিকায়,

মুক্তির দণ্ড ছোঁয়ালো,

অগ্নিষ্পর্শ তার চোখে মুখে,

সেই মুহূর্তেই;

দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা।

মৌনাবৃত চিৎকার—

জ্ঞানশূন্য! বোঝে না কেউ,

বুক জুড়ে পৃথিবীর চূড়ান্ত শান্তির তারল্য—

বিনিময়ে হবে একমুঠো নিষ্কলঙ্কিত ছাইয়ের গুড়ো,

ইতি হলো সেই ছোট্ট জীবন টার,

না! ভুল বললাম;

ছিনিয়ে নেওয়া-লুণ্ঠিত-অনতিক্রমনীয়—

সাক্ষী রইলো ঠাঁই নিত্যপ্রবাহ গঙ্গার বেহদ্দ সৈকত।

তবুও রয়ে গেলো নিরুত্তাপ সে,

যাকে নিয়ে এতকিছু দুঃখ-এতকিছু শোক।

কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

 সত্বা



তোমার হতশ্রী রূপ আমাকে আর আকর্ষণ করে না

মৃত্তিকার লোহিত স্তরের নীচে জমে গেছে সাদা দুধেল স্তর।

মন মাতানো সুগন্ধি এখন আর ভালো লাগে না,

কাক-বকেরা কেড়ে নিয়েছে তোমার ভেতরের সত্বাকে,

পুতুল নাচের ইতিহাসের সাক্ষী তুমি।

শুধু হৃদয়ে স্মৃতিপটে লেখা আছে তোমার কদর্যরূপ।

কবি কমল মন্ডল -এর একটি কবিতা

 আবেগি শব্দরা

       


তোমার চোখের দিকে তাকালে

বুকের আঁচল নামতে থাকে পুরনো স্মৃতিতে

আমি হেরে যায় নীরবে 

তোমার চোখের দিকে তাকালে।

শরৎ তোমায় আমার মুখোমুখি আনায় অঞ্জলি 

দুটো হলুদ রঙের পাখি আসে ফিরে যায় নীরবে 

মরা পুকুরে উঠতে থাকে ঢেউ 

তোমার চোখের দিকে তাকালে।

প্রেম সে কি জানি না,বুঝলেনা তুমিও

সাত রং তোমায় সাজাক ---

আলো দিক ভোরে তোমার স্বপ্নের ধানসিঁড়ি----

আমার আবেগ, সে তো কবিতার পঙক্তি জুড়ে!

কবি সুমন্ত রবিদাস -এর একটি কবিতা

 স্রষ্টা




স্রষ্টার প্রধান সঙ্গী কল্পনা

কল্পনার সাহায্যে স্রষ্টা দেন সার্বজনীন রূপ

সৃষ্টি হয়ে ওঠে সার্থক

হয়ে ওঠে চিরন্তন।

তবে তার মধ্যে থাকে কিছু বাস্তবতা

বাস্তব থেকে অবাস্তবে যাওয়াই সৃষ্টি

অ্যারিস্টটল বলেছেন যাকে বস্তুসত্য আর কাব্যসত্য।

স্রষ্টা মনেই থাকবে কল্পনা,

আর থাকবে মনের ভাবনা শক্তি

মনের ভাবগুলো উঠবে সৃষ্টিতে ফুটিয়ে

যা আসবে বাস্তব জগৎ থেকে মনে

মনের ভাবগুলো ভাষায় ব্যক্ত হবে

সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।

কল্পনার আশ্রয়েই স্রষ্টা গড়ে

তার সৃষ্টির কাঠামো,

বাস্তব থেকে অবাস্তবে যাওয়াই সৃষ্টি

সৃষ্টিতেই হয় স্রষ্টার প্রকাশ।

কবি সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক -এর একটি কবিতা

 রমণীয়




ইচ্ছের ওপর ভরসাহীন নড়বড়ে মগজগুলো

সার সার হাঁটে আর হাঁটে কার্ণিস ঘেঁষে,

তাদের মুখে ও চোখে ইন্দ্রিয়ের পাঁচ-পাঁচটি খোপে

তুমুল বিষম বিষমতর সোরগোল-

দ্বিধাহীন চলনবলন স্থির তসবির হয়ে নিয়ত দোলে

সমাজের পথে পথে পরিক্রমণে।

নিভাঁজ নিস্পন্দ দোটানায় একা একা পাখী আমার

খুঁটে খুঁটে খায় শক্ত চরম বায়ু,

কখনো ধুলোয় কখনো আকাশে কখনো সলিলে

স্থিরতা খুঁজি তীব্র তীব্রতম রমণে।

কবি রানা জামান -এর একটি কবিতা

 রণ পা


 


একটা রণ পা থাকলে চাঁদে যাওয়া যেতো

এবং মোক্ষম এন্টিবায়োটিকে রোগমুক্তি

ডিমে তা থাকলেও সবসময় ফুটে না জাতক

রসের হাড়িতে ডুবে পান করে কুচক্রিরা পরিস্রুত জল

ঘুষের টাকায় সেলাই করে টিকটিকির ঠোঁট

ঢোলের তাণ্ডবে গর্ভপাত হলেও আনাড়ি চিকিৎসক

সভাপতি পদে আসীন পদোন্নতির ঢামাঢোলে

ড্রয়িংরুমে তাসের খেলায় বেখেয়ালি

সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির

দিন যায় কারো হেলাফেলায় কারো বা

সাধনায় সিদ্ধি লাভের আশায়।

কবি আবদুস সালাম -এর একটি কবিতা

 অন‍্য চিত্র

 


প্রতিটি সকাল যেন অন্য সকাল

ভারতের প্রতিটি কোষে জেগে উঠছে হাহাকার

শুনছি নিঃসঙ্গ চেতনার ক্রন্দন ধ্বনি


কান পাতলেই শুনি বিবিবাচ্চাদের সম্মিলিত জিজ্ঞাসা

বাজারে লেগেছে আগুন

অদ্ভুত রহস্যময়তা ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে


লাল, হলুদ, সবুজের কচকচানি

ঝরে পড়ছে অভিভাবকহীন সময়ের বিষন্নতা

বিপ্লবের আঙিনা ধুয়ে দিচ্ছে কীটনাশকে

মুখ থুবড়ে পড়ছে সকালের অস্তিত্ব

জীবাণু মুক্ত করার অঙ্গীকার

অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে নিহত চাঁদ


নিবেদন গুলো ঢেউ তুলছে সভ‍্যতাল নদীতে

পাড়ায় পাড়ায় পাল‌ তুলছে দুর্বিষহ বিষাদ

স্বপ্নের খনি থেকে তুলে আনছি সাদা ভাত সাদা কাফন

মৃত্যু সুবাসে ভরে উঠছে ভারতের মানচিত্র

কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা

 নীতিহীন আবেগ 

 


মানসিক কিছু কষ্ট ভোগায় আমাকে 

শূন্য থেকে কে যেন বলে--এ তোমার পূর্বজন্মের কর্মফল ।

পূর্বজন্ম !সে আবার কি !সে কি হয় !

তবে ,আমিই বা জানিনা কেন !

কেন এত দুঃখ-ভোগ্য সময় !


আমি তো কাউকে দু:খ চাইনি দিতে

বিনিময়ে আমিও চাই না দু:খ নিতে

তবুও নীলের ডোবানো স্বচ্ছাকাশে 

কেন ভীড় করে এতো চাপ-চাপ কালো মেঘ !


পূর্বজন্ম আমি বিশ্বাস করি না--

এই জন্মে পেয়েছি শুধু শূন্য পাত্র আর

নীতিহীন আবেগ ।