Sunday, December 5, 2021

অনুগদ্য || জ্ঞান || সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

 জ্ঞান



    গাছ ( বৃক্ষ) কি জানে না ভাবে তার শাখা প্রশাখা এত কেন? কেন এত? না ভাবে না। ভাবতে হয় না। সেইরূপ--
     জ্ঞান বৃক্ষ বাড়তে শুরু করলে তার শাখা প্রশাখাও তেমনি বৃদ্ধি পায় আপনা হতেই।
     উল্টো দিকে সুকর্মের প্রসারও এইভাবেই হয়।
       সেজন্যই তৃণের সাথে বৃক্ষের তফাৎ বা প্রভেদ।
        বৃক্ষ সর্বদা সহিষ্ণু। জ্ঞান বৃক্ষও হয় সহিষ্ণু। কিন্তু জ্ঞান হীন বৃক্ষ সহিষ্ণু হয় না। সে হয় খল, সুযোগসন্ধানী ও স্বদর্পী।
       অতিরিক্ত শিক্ষালাভে পন্ডিত হওয়া  যায়--
কিন্তু জ্ঞানী হওয়া যায় না। যদিও শিক্ষার প্রসার ও প্রয়োজন অবশ্যই আছে।
       সুমিষ্ট বা টক আমগাছের রূপ একই। কিন্তু ফল হয়  আলাদা আলাদা। সেইরূপ  শিক্ষিত ব্যক্তি মানেই জ্ঞানী ভাবা উচিত নয়। জ্ঞানী ব্যক্তি পন্ডিত নাও হতে পারেন। যদিও শিক্ষিত এবং জ্ঞানী ব্যক্তির রূপ এক ও অভিন্ন। শিক্ষাকে জড়ত্ব থেকে মুক্তি দিতেই জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান হীন শিক্ষা যেমন মূল্যহীন  তেমনি অশিক্ষারই নামান্তর মাত্র।  

গল্প || ক্ষয়ে গেছে শিকড় || রানা জামান

 ক্ষয়ে গেছে শিকড়


 



হাসিব দৌড়াচ্ছে উর্ধশ্বাসে। ওকে তাড়া করছে ওর অতীত ওর ভবিষ্যত-বর্তমান ওকে দিতে পারছে না স্থিতাবস্থা। স্কুলে কলেজে দৌড়ের গতি এমন থাকলে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অন্যকোনো ইভেন্টে না হলেও দৌড়ে হতে পারতো প্রথম!দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এলো এক পাহাড়ে।


পাহাড়ের কিনারে এসেও পেছনে তাকাবার সাহস পেলো না ও। নিচে পানি দেখে কোনো কিছু না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়লো।


নাকেমুখে পানির ঝাপটা খেয়ে ঘুম ভাংলো হাসিবের। মগ হাতে মা আয়েশা সামনে দাঁড়িয়ে। আয়েশা বললেন, দৈনিক কী স্বপ্ন দেখিস রে তুই? মনে হয় কারো সাথে মারামারি করিস!


হাসিব বিছানায় বসে দুই হাতে মুখমণ্ডলের পানি মুছে বললো, প্রত্যেকদিন একই স্বপ্ন দেখছি মা। কে যেনো আমাকে তাড়া করতে থাকে।ভয়ে পেছনে তাকাতেই সাহস পাই না মা! আমার কোনো দরবেশ কবিরাজের কাছে যাওয়া দরকার!


আয়েশা বললেন, তুই-ই বলতি তাবিজ কবজ দরবেশে বিশ্বাস ছিলো প্রাগৈতিহাসিক কালে। আধুনিক যুগে সাইন্স! এখন দরবেশের কাছে যেতে যাচ্ছিস কেনো?


আমার যে সমস্যা তা কোনো ডাক্তার ভালো করতে পারবে না।


সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাই?


সাইকিয়াট্রিস্ট মনের অস্থিরতা দূর করতে পারে, দুঃস্বপ্ন না মা!


ঠিক আছে! আমি আগে একজন সাচ্চা দরবেশের খোঁজ করি!


হাসিব ফের শুয়ে পড়লে আয়েশা বললেন, শুইলি কেনো? ঘুমালে ফের দুঃস্বপ্ন দেখবি। তার চেয়ে ভালো হবে বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে আয়। ইন দা মিন টাইম আমি দরবেশের খোঁজ করে রাখি।


তখন হাসিবের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। হাসিব জিন্সের প্যান্টের সামনের পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে অজানা নম্বর দেখে ওভাবেই ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। ওর মতো বেকার বন্ধুরা এসময় পার্টি অফিসে ক্যারম বা তাস খেলে থাকে। নির্বাচনের সময় পার্টি অফিস সরগরম থাকে; অন্য সময় এরা বানিয়ে রাখে ক্লাবঘর! পার্টি অফিসে আসা পর্যন্ত আর কোনো কল আসেনি। পার্টি অফিসে ঢোকার সাথে সাথে ম্যাসেজ টোন এলে মোবাইল ফোনটা বের করে ম্যাসেজটা পড়লো:


- এই কল ধরলে আপনার ভাগ্য ফিরে যেতে পারে!


ঠকবাজের যুগে এসব ম্যাসেজ বা কলের কোনো মূল্য নেই! যে দাম দিয়েছে, সে-ই ঠকেছে।


হাসিব ডানে-বায়ে মাথা নাড়তে থাকলে সাহেদ জিজ্ঞেস করলো, কিরে, তোর পাগল হতে আর কত কাল বাকি!


হাসিব বললো, বেশি দিন না!


ঠাট্টা রাখ! কী দেখে মাথা নাড়ছিস?


এই দ্যাখ।


বলে হাসিব মোবাইল ফোনটা বাড়িয়ে দিলো সাহেদের দিকে। ম্যাসেজটা পড়ে কিছুই বুঝতে না পেরে সাহেদ বললো,কিছুই বুঝলাম না!


তবে শোন্!


ঘটনা শুনে সাহেদ বললো, নম্বরটা নিয়ে গেলাম। আমি কথা বলবো।


হাসিব সাহেদকে মোবাইল ফোন নম্বরটা দিয়ে লেগে গেলো ক্যারম খেলায়। ওর সহযোগী রিফাত বললো, এতোদিন আমরা শুধু শুধু ক্যারম খেলে সময় নষ্ট করেছি। একটা টিপস ধরে খেললে কেমন হয় ফ্রেন্ডস?


রমেশ স্ট্রাইকারটা হাতে নিয়ে বললো, টিপস মানে?


টিপস মানে প্রতি বোর্ডে কুড়ি পঞ্চাশ ধরে যদি খেলি, তাহলে খেলাটা জমবে ভালো এবং চা'র খরচটাও উঠে যেতো।


অপর তিনজন তিন রকম মতামত দিতে থাকলো। তর্কাতর্কি শেষে দেখা গেলো তিনজন জুয়া খেলার পক্ষে; হাসিব বিপক্ষে। সেদিন ওদের মাঝে আর ক্যারম খেলা হলো না। চারজন বসে চা পান করছে। চারজনের মুখই থমথমে।


চা-দোকানদার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমাদের জীবন কি ক্যারাম খেইলাই যাইবো? বিয়া-শাদি করতে হইবো না? আর এর জন্য কামাই করা লাগবো!


রমেশ চা-দোকানির দিকে তাকালেও কিছু বললো না।


সাহেদ বললো, তোমার কাছে চাকরি আছে চাচা? দেও! তোমার চাকরিটা নিয়ে তোমার চার মেয়েকে আমরা বিয়ে করে ফেলি!


চা-দোকানি না রেগে ঠাণ্ডা স্বরে বললো, ঠাট্টা করতাছো! জাইন্যা রাইক্খো তোমরা, আমার মাইয়াগো তোমাগো মতন বাদাইম্মা পোলাগো কাছে বিয়া দিমু না!


হাসিব শূন্য চায়ের কাপটা দোকানির হাতে দিয়ে বললো, সাধে কী আর এখানে এসে বসে থাকি চাচা। ডিগৃ পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছি না। ব্যবসা করতেও পুঁজিপাট্টা লাগে। তুমি রাগ করো না চাচা।


সেদিন হতে সাহেদ হয়ে গেলো লাপাত্তা। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেলো। হাসিব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।একদিন খুব সকালেও সাহেদের বাড়ি গিয়ে বন্ধুকে পেলো না হাসিব। সাহেদের বাবা জানালেন: খুব ভোরে উঠে চলে যায়, আর ফিরে রাত বারোটার পরে। কোথায় যায় কী করে কিচ্ছু বলে না!


সাতদিন পর সেই চা-স্টলে মোটরবাইকের বিকট শব্দে ওদের ক্যারম খেলায় বিঘ্ন হলে ওরা বাইরে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো। নতুন মোটরবাইক নিয়ে সাহেদ। ওর চোখে কালো সানগ্লাস।

হাসিব বেরিয়ে এলো প্রথমে। সাহেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,এতোদিন কোথায় ছিলি?

সাহেদ সানগ্লাসটা খুলে ফের পরে বললো, কাজ পেয়েছি! তোর ঐ মোবাইল ফোন নম্বরটা আমাকে কাজ দিয়েছে। আমার আর কোনো চিন্তা নাই। তুই বড় ভুল করলি মোবাইল ফোনটা এটেন্ড না করে!

কী কাজ?


এখন বলা যাবে না। তোদের ব্যাপারেও কথা হয়েছে।


আগে বল্ কে তোকে কাজ দিয়েছে! কে ও? কিসের ব্যবসা ওর?


সময় আসলে সব জানতে পারবি। আমি এখন গেলাম।


সাহেদ মোটরবাইক হাকিয়ে চলে যাবার পর বাকি তিনজন হাসিবকে ঘিরে ধরলো। হাসিব সবাইকে একে একে দেখে বললো, ওর পথে চললে তোমরাও ওর মতো বাইক চালাতে পারবে।


রমেশ বললো, কী করে ও?


সময় এলে বলবে। আমি বাড়ি গেলাম। তোরাও বাড়ি যেতে পারিস।


রাতে খাবার টেবিলে বাবার মুখোমুখি হলো হাসিব। বাবা বললেন, সাহেদ মোটরসাইকেল নিয়া ঘুরছে। মনে হয় ভালো কামাই করছে। কী করছে ও?


বিজনেস!

বিজনেসে এতো লাভ!


পাওয়ার পার্টির সাথে বিজনেসে অনেক লাভ! তোমকে কতবার বলেছি বাবা পাওয়ার পার্টির স্টুডেন্ট ইউনিটে যোগ দেই। কিন্তু তোমরা রাজি হলে না। দুই বছর হলো বেকার বসে আছি। শুধু ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। মন্ত্রী আমলা ধরলেও ঘুষ দিতে হবে।


বাবা বললেন, আমার মন পাল্টেছে। ঘুষের টাকা জোগাড় করার জন্য জমি বিক্রির ব্যবস্থা করো।


মা বললেন, জমি বিক্রি না করে আমার গয়না বিক্রি করে দাও! আমি এখন আর গয়না পরি না। ওগুলা ঘরেই পড়ে আছে।


খাওয়া শেষ হলে হাসিব হাত ধূয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ওর। ও হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো পুকুরপাড়ে। মাচায় বসে উদ্দেশ্যহীন তাকাচ্ছে এদিকওদিক। অনেকটা দূরে দক্ষিণপাড়ার জঙ্গলের পেছনে টর্চলাইটের আলো পড়তে দেখে উৎসুক হয়ে উঠলো। নিজেকে আড়ালে রেখে এগিয়ে গেলো সেদিকে। একদম কাছাকাছি গিয়ে টর্চের পেছনের লোকটাকে দেখে চমকে উঠলো হাসিব। সাহেদ! রাতের আঁধারে চুপিচুপি হাসিব কী করছে? ওর পেছনে আরো তিনজন লোক। সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র।


অনন্যোপায় হয়ে চারজন ভিড়ে গেলো সাহেদের দলে।


এক সপ্তাহ পরে হাসিব বাবার হাতে টাকা দিলে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, এতো টাকা কোথায় পেয়েছো হাসিব?


হাসিব বললো, ব্যবসা শুরু করেছি বাবা।


মা জিজ্ঞেস করলেন, কিসের ব্যবসা?


হাসিব বললো, এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট।


চাকরি খোঁজা বাদ দিয়া ব্যবসা শুরু করলি কেনো?


এতো টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিলে আমারও ঘুষ খেতে৷ হবে। এর চেয়ে ব্যবসা করা ভালো।

বাবা বললেন, যা ভালো বুঝো করো।


সেদিন হতে হাসিব আর ঐ দুঃস্বপ্ন দেখে না। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো অন্য জায়গায়, যা এখনো বলা হয়নি। সব যুবক-যুবতীর যেমন প্রেম থাকে, তেমন হাসিবেরও একটা প্রেম আছে। ওর প্রেমিকার নাম হাস্নুহেনা রাস্না। হাসিব ওকে রাস্না ডাকে। রাস্না বিয়ের চাপ দিচ্ছে।বাবা-মা অন্যত্র বিয়ে দেবার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।


এখন ওরা কথা বলছে হাসিবদের পুকুরপাড়ের মাচাটায় বসে। ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা পার হয়ে গেছে।

হাসিব রাস্নার একটা ডান ধরে রেখে বললো, আমি চাকরি না করলেও টাকা কামাই করছি এখন।

রাস্না বললো, চাকরির চেষ্টা করছো না কেনো?


এতোদিন ইন্টারভিউ দিয়েছি;কিন্তু বাবা ঘুষের টাকা না দেয়ায় চাকরি হয় নাই। এখন বাবা ঘুষের টাকা দিতে রাজি হয়েছে; কিন্তু আমার আর ইন্টারভিউ দিতে ইচ্ছে করছে না।


রাস্না নিজের হাত ছাড়িয়ে হাসিবের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, ব্যবসা করছো? কিসের ব্যবসা?


এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট।

কারঙ্কা গ্রামে থেকে কিসের এক্সপার্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা করছো তুমি?


স্মাগলিং, মানে চোরাচালান।


রাস্না আলগোছে হাসিবের হাতটা ছেড়ে দিয়ে মাচা থেকে নেমে একবারও পেছনে না তাকিয়ে হারিয়ে গেলো অন্ধকারে। হাসিব হাত বাড়িয়ে ওকে ডাকতে গিয়েও মুচকি হেসে ফিরিয়ে নিলো হাতটা।

কষ্টটা হজম করার প্রচেষ্টা হিসেবে হাসিব ধরে ফেললো বাংলা মদ। বাড়ির লোকদের বিশেষ করে মা-বাবাকে এড়িয়ে মদ্যপান করার জন্য গ্রামের নারায়ণ জমিদারের পোড়োবাড়িটাকে বেছে নিয়েছে। প্রচলিত আছে যে এই পোড়োবাড়িটা ভূতের গাড্ডাখানা হওয়ায় দিনের বেলায়ও এখানে কেউ আসে না। এক গভীর রাতে মদ খেয়ে পোড়োবাড়ি থেকে বের হয়ে হাসিব মুখোমুখি হয়ে গেলো সাহেদের।


সাহেদ হাতের পিস্তলটা নাচিয়ে বললো, তুই আজো বাংলা মদ খেয়েছিস? আগামীকাল থেকে তোকে আমি বিদেশি মদ এনে দেবো।


হাসিব জড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করলো, তুই কই যাচ্ছিস এতো রাতে?


একটা লিভিং ডল ডেলিভারি দিতে যাচ্ছি।


লিভিং ডলটা কে?


তোর এক কালের প্রেমিকা হাস্নুহেনা ওরফে রাস্না।


কী বলছিস তুই! এটা হতে দেবো না সাহেদ!


মাল উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। সামনেই এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে।


হাসিব সাহেদের পথরোধ করে বললো, মানুষ বিশেষ করে মেয়ে মানুষ পাচার করতে দেবো না আমি!

কিভাবে ঠেকাবি তুই আমাকে? গুলি করবি?


প্রয়োজনে তাই করবো!


একটা মেয়ে যে তোকে ছ্যাকা দিয়েছে ওর জন্য আমার সাথে শত্রুতা করবি।


ও বলে কথা না, কোনো মেয়ে মানুষ পাচার করতে আমি দেবো না!


দু'জনের হাতে পিস্তল। হাসিব সাহেদের এবং সাহেদ হাসিবের কপালের দিকে তাক করে রেখেছে।

দু'জনের পিস্তল থেকে একসাথে গুলি বের হবে কি? আগে পরে বের হলে কে আগে মারা যাবে? হাসিব আগে মারা গেলে রাস্নার জীবনে শনি শুরু। আর সাহেদ আগে মারা গেলে রাস্নার মান-সম্মান রক্ষা পেয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রাস্না কি স্মাগলার হাসিবকে ফের কাছে টেনে নেবে?

গল্প || লাথি || উম্মেসা খাতুন

 লাথি

                          


                       ।।এক।।

"কী গো দাদি, কী করছ?"

"বিড়ি বাঁধছি। আয়, বোস।"

জরিনার এটা নিজের দাদি নয়, তার নিজের দাদি নেই। অনেক দিন আগে স্তন ক‍্যানসারে মারা গেছে। জরিনার এটা পাড়া দাদি। নাম নূর বিবি।

জ‍রিনা বসল গিয়ে," কেমন আছো?"

"ভালো আছি। তুই ভালো আছিস?"

"হ‍্যাঁ দাদি, ভালো আছি।"

"ভালো তো থাকবিই। তোদের যে এখন ভালো থাকবারই বয়স। তা হ‍্যাঁ রে জরিনা, শুনলাম, তোর বলে বিয়ে লাগছে, কাল বলে তোকে দেখতে লোক আসবে। তা সত্যি নাকি?"

" হ‍্যাঁ দাদি, সত্যি।"

" তা এখনই বিয়ে করে ফেলবি? কলেজে পড়বি না?"

"কলেজে পড়ার শখ তো ছিল। কিন্তু মা আর না পড়ালে কী করে পড়ব?"

"তোর মা'র কথা তুই শুনবি কেন? তোর মা

পড়াশোনার মূল্য কী বোঝে?"

"তাই বললে হয়? মা'র অবস্থার কথাও তো দেখতে হবে। মা'র উপর জুলুম করে শুধু পড়লে তো হবে না। বাপ বেঁচে থাকলে সে কথা আলাদা ছিল। তাছাড়া মা'র এখন হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে আমি থাকব কোথায়? কে দেখবে আমায়? সব দিক ভেবে দেখে তাই বিয়ে করতে রাজি হলাম। না হলে এখন বিয়ে করব কেন?"

"কেন, আমরা ছিলাম না? আমরা তোকে দেখতাম, আমরা তোর বিয়ে দিতাম। আমরা বুঝি তোর কেউ না!"

"কেউ হবে না কেন? আমি কি একবারও বলেছি যে, তোমরা আমার কেউ না?"

"মুখে না বললে কী হবে? সেটা দেখে তো বোঝা যায়। যাইহোক, কোন দেশে বিয়ে লাগছে?"

"গ্রামের নাম রূপখালি।"

"সেটা আবার কোন দিকে?"

"অনেক দূর, বর্ডারের ধারে।"

"অত দূরে বিয়ে করবি? বিয়ের পরে তোকে যদি মেরে দেয় বা বাংলাদেশে পাচার করে দেয় তখন কী করবি? অত দূরে কেউ বিয়ে করে?"

"লাগলো তো কী করব?"

"কে লাগালো?"

"সম্পর্কে আমার খালুজি হয়।"

"হুঁ, বুঝেছি। নিশ্চয়ই তোর ওই খালুজির মনে কোন বদ মতলব আছে, নিশ্চয়ই তোর ওই খালুজি বড় একটা ধান্দাবাজ লোক আছে।"

"না না, আমার খালুজি খুব ভালো মানুষ। পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ে, ধার্মিক মানুষ। কোন বদ মতলব তার মনে আছে বলে আমার মনে হয় না, আর ধান্দাবাজ তো মোটেই না।"

"ভালো মানুষের মধ্যেই যে খারাপ মানুষ বাস করে রে!"

"সে করতে পারে। কিন্তু আমার খালুজির মধ্যে করে না। ছোট থেকে দেখছি তো।"

"না করলেই ভালো। তা ছেলে কী করে?"

"কী করবে? চাষির ছেলে। মাঠে চাষ কাজ করে।"

"তার মানে ছেলে মাঠে খাটা?"

"হ‍্যাঁ, তাছাড়া আমরা আবার চাকরি করা ছেলে পাবো নাকি? কোন দিনই পাবো না।"

"না পাওয়ার কী আছে! ধৈর্য ধরলে পেতেও পারিস।"

"পাবো না, মরা পর্যন্ত ধৈর্য ধরলেও না। তার কারণ, যুগটা এখন অন্য যুগ চলছে। টাকা যার দাম তার।"

"ছেলে দেখতে কেমন? ফর্সা হবে তো?"

"খুব একটা ফর্সা হবে না। সে না হোক, ওতে কোন অসুবিধা নেই। আমি তো ফর্সা আছি।"

"কী বললি! ছেলে ফর্সা হবে না? তোর মতো মেয়ে শেষে একটা মাঠে খাটা কালো কুচ্ছিত রাখাল ছেলেকে বিয়ে করবি? ছি:! ছি:! ছি!"

"তুমি যতটা কালো বলছ, অতটা কালো হবে না।"

" তুই দেখেছিস?"

"না, শুনেছি।"

"দেখিস নি তো বলছিস যে তাহলে?"

"আমার সেই ঘটক খালুজির মুখে শুনেছি, খালুজি বলেছে।"

"তার মানে আমি যা বলেছি তার থেকে আরও কালো হবে ধর। কারণ, ঘটকরা কোন দিন সত্যি কথা বলে না। তোকে ওরকম বলেছে তাই। আমি বলছি, ও ছেলেকে তুই বিয়ে করিস না, জরিনা। কালো ছেলেকে তুই বিয়ে করে জীবনে সুখী হতে পারবি না। কারণ, কালো ছেলেদের ব‍্যবহার খুব একটা ভালো হয় না। তারা খুব মারকুটে হয়। আর খুব কিপটে হয়। তোকে কোন দিন কিছু কিনে দিবে না, খুব কষ্টে রাখবে, আর ধরে ধরে মারবে। মার খেতে পারবি তো? যাইহোক, টাকা পয়সা লাগছে না নাকি?"

"তো লাগছে না? টাকা ছাড়া আজকাল বিয়ে আছে নাকি? পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ লাগছে। বাপের তো কিছু ছিল না, ভিটামাটি টুকু ছাড়া। মা তার বাপের বাড়ি পাঁচ কাঠা জমি পেয়েছিল ওটা বেচে এনে টাকা দেবে।"

টাকা লাগার কথা শুনে নূর বিবি চমকে উঠল," কী বললি, পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগছে! তা হ‍্যাঁ রে, টাকা দিয়ে কালো ছেলেকে বিয়ে করবি কেন? টাকা যদি দিতেই হয় তো একটা ভালো ছেলেকে দিবি।"

"কী করব বলো, সবই হল কপাল! কপালে যদি কালো ছেলে লেখা থাকে ভালো ছেলে পাবো কোথায়?"

"ছাড় তোর কপাল!" নূর বিবি জরিনার কথা উড়িয়ে দিল," আমার কথা শুনে ও ছেলেকে তুই বিয়ে করিস না। ফর্সা ছেলে বিয়ে কর।"

"করব তো পাবো কোথায়? তোমার হাতে আছে নাকি?"

"নেই তো এমনি বলছি? আমার হাতে খুব সুন্দর একটা ফর্সা ছেলে আছে। দেখলে তোর মাথা ঘুরে যাবে, অমনি পছন্দ হয়ে যাবে, তোর সাথে দারুণ মানাবে, রোজগারও করে ভালো। তোর কোন জিনিসের অভাব রাখবে না। পাকা বাড়ি। বাড়িতেই পায়খানা, বাথরুম। তোকে মাঠে পায়খানা ফিরতে যেতে হবে না। নিজস্ব মোটরসাইকেলও আছে। মোটরসাইকেলে চেপে দু' জনে হলে সিনেমা দেখতে চলে যাবি। আ-হা, কী সুখ! বয়স থাকলে আমিই বিয়ে করতাম।"

জরিনা বলল," ছবি আছে?"

"থাকবে না আবার? ঘরে বাক্সের ভিতর ভরা আছে। বের করে এনে তোকে দেখাচ্ছি, বোস।" নূর বিবি ছবিটা এনে দেখাল," নে, দ‍্যাখ!"

জরিনা ছবিটা দেখল। পরনে নীল জিন্স প‍্যান্ট, গায়ে রঙিন টি-শার্ট আর চোখে রোদ চশমা। দেখতে দেখতে নূর বিবির দিকে একবার তাকাল।

নূর বিবি বলল," কী রে, সুন্দর না?"

মুচকি হাসল জরিনা," হ‍্যাঁ, খুব সুন্দর।"

নূর বিবি তখন ছবিটা জরিনার হাত থেকে নিয়ে বলল," এই ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে লাগাব, করবি তো?"

"লাগাও, করব। কিন্তু টাকা চাইলে দিতে পারব না। আগেই বলা ভালো।"

"তোর কোন টাকা লাগবে না। টাকা ছাড়াই তোকে বিয়ে করবে।"

"তোমাকে বলেছে?"

"না বললে জানব কী করে? কালকেই তো আমার বাড়ি এসেছিল। এসে একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলল। কোন টাকা পয়সা লাগবে না বলল। শুধু মেয়েটা তার ভালো হলেই হল। গরিবের মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই। তাই বলছি, তুই ওই কালো ছেলেকে বাদ দিয়ে রাকিবকে বিয়ে কর। আরে, সুন্দর স্বামীর কাছে থাকা আর বেহেশতে থাকা দুটোই এক জিনিস, বুঝলি? এক বেলা খেতে না পেলেও শান্তি। রাকিব কে চিনতে পারলি তো?"

"কে?"

"যার ছবি দেখলি সে। আমার বাপের দেশে বাড়ি। থাম, রাকিবকে এক কল ফোন করি, কথা বল।"

"না, ফোন করোনা, আমি কথা বলব না।"

নূর বিবি শুনল না," কথা বলবি তো কী হবে?" ফোন লাগিয়ে দিল।

"হ‍্যালো!" ফোন রিসিভ হল।

"কে, রাকিব?"

"হ‍্যাঁ, বলো।"

"বলছি, তুই একটা ভালো মেয়ে দেখতে বলেছিলি না! আমি একটা ভালো মেয়ে দেখেছি। মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর। কোন খুঁত নেই। আমাদের নিজেদের মধ‍্যে। ব‍্যবহারও খুব ভালো। যাকে বলে অমায়িক মেয়ে। তুই বিয়ে করলে জীবনে খুব সুখী হবি, শান্তি পাবি। সে এখন আমার কাছেই বসে আছে, কথা বল।" নূর বিবি জরিনার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল," নে জরিনা, ধর, কথা বল।"

জরিনা ফোনটা ধরল," হ‍্যালো!"

"কে, জরিনা?"

"হ‍্যাঁ, কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? আমি তো আপনাকে আমার নাম বলিনি।"

"এক্ষুনি নূর বিবি বলল না!"

"ও, আচ্ছা।"

রাকিব তখন বলল," তোমার নামটা খুব সুন্দর, জরিনা! আমি তোমাকেই বিয়ে করব, শুধু তোমাকেই, আর কাউকে না।"

জরিনা বলল," মিথ্যা কথা বলছেন! আপনারা হলেন বড়লোক মানুষ, আমি হলাম গরিবের মেয়ে।আমাকে বিয়ে করেন?"

"কেন, আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?"

"না।"

"ঠিক আছে, তুমি ওখানেই দাঁড়াও; আমি এক্ষুনি চলে আসছি। আর হ‍্যাঁ, ফোনটা তুমি নূর বিবিকে একটু দাও। তার সাথে জরুরি দুটো কথা আছে, সেরে নিই।"

জরিনা ফোনটা নূর বিবিকে দিল," নাও গো দাদি, তোমার সাথে কথা বলবে।"

নূর বিবি ফোনটা নিল," কী, বল।"

"তুমি জরিনাকে এক্ষুনি এক কাপ চায়ের সাথে ট‍্যাবলেটটা গুলে খাইয়ে দাও। দিয়ে তোমার কাছে বসিয়ে রাখো, আমি এক্ষুনি চলে আসছি।"

"ঠিক আছে, আয়।"

ফোনটা রেখে দিয়ে নূর বিবি জরিনাকে বলল," রাকিব আসছে, তুই ততক্ষণ একটু বোস। আমি ঘর থেকে তোর জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনি।"

"আচ্ছা, যাও।"

নূর বিবি চা বানিয়ে আনল। জরিনা সেই চা খেতে খেতে বলল," চা খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না দাদি, চায়ে কী দিয়েছ? মন বলছে, চা ফেলে দিই।"

"চায়ে আবার কী দিব? কিছু দিইনি তো।"

"তাহলে চা খেতে ভালো লাগছে না কেন?"

"কী জানি! আমি তো ভালো করেই বানালাম। যাইহোক, ভালো মন্দ যা লাগছে খেয়ে নে! খেলেই কাজ দিবে।"

নূর বিবির কথায় জরিনা চা আর ফেলতে পারল না, খেয়েই নিল। নূর বিবি তাকে বুঝতেই দিল না যে, চায়ের সঙ্গে সে এক রকম একটা ট‍্যাবলেট গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিয়েছে। যা খেলে মেয়েদের শরীরে ও মনে অকস্মাৎ কামক্ষুধা জেগে ওঠে। যে কোন পুরুষই তার সঙ্গে তখন অনায়াসে মিলিত হতে পারে। তাই, চায়ের স্বাদ তাকে বিস্বাদ লেগেছে।

                            ।।দুই।।

সাদা রংয়ের একটা আর টি আর মোটরবাইকে চেপে রাকিব চলে এল। ছবিতে আগে দেখা ছিল বলে জরিনা তাকে দেখেই চিনতে পারল। সত্যিই তো সে দারুণ ফর্সা ছেলে একটা। যাকে বলে ভেরি স্মার্ট বয়!

অতএব রাকিবের দিকে তাকিয়ে জরিনা ফিক করে হাসল। তার ওই হাসি দেখেই রাকিব বুঝতে পারল যে, এই মেয়েটাই হল জরিনা। সে তখন জরিনাকে বলল," আমি বলেছিলাম না, আমি আসব? এলাম? আসলে আমি মুখে যা বলি কাজেও তাই করি। কোন বাচাল প্রেমিকের মতো আমি নই।"

জরিনা এবার মিষ্টি করে হাসল।

রাকিব তার ওই হাসি দেখে বলল," খুব মিষ্টি তোমার হাসি, জ‍রিনা!" তারপর নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল," কই গো, ঘরে বসতে টসতে জায়গা দেবে না নাকি? বাইরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?"

নূর বিবি তাদের বসার জন্য একটা ঘরের দরজা খুলে দিল। ভিতরে একটা চৌকি আর দুটো বালিশ ছাড়া আর কিছু নেই। নিচে পা ঝুলিয়ে চৌকির উপর তারা বসল। 

রাকিব বলল," আমি যে তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি এবার সেটা বিশ্বাস হল তো?"

লজ্জাবনত মস্তকে জ‍রিনা বলল," হল।"

রাকিব তখন জরিনার চিবুক ধরে বলল," তুমি খুবই সুন্দরী জরিনা, তুমি খুবই সুন্দরী। তাই, আমি তোমাকেই বিয়ে করব। হ‍্যাঁ,

জরিনা।" বলতে বলতে রাকিব জরিনার মাথার চুল নাড়তে শুরু করল," তোমার মাথার চুলও খুব সুন্দর!" তারপর নাকে শুঁকে ঘ্রাণ নিয়ে বলল," আ:, কী সুন্দর সেন্ট! চুলে কী মেখেছ?"

মৃদু হেসে বলল জরিনা," কী মাখব? কিছু মাখি নি।"

রাকিব এবার হাতটি ধরে হাতের আঙুল গুলো নাড়লো," তোমার হাতের আঙুল গুলোও খুব সুন্দর!" ও জরিনার ঠোঁটে হাত দিল," তোমার ঠোঁটও দারুণ সুন্দর!"

জরিনা কিছু বলল না। সে চুপ করে থাকল ও চৌকির উপর শুয়ে গেল। তার চুপ করে থাকা আর চৌকির উপর শুয়ে যাওয়া দেখে রাকিব বুঝল যে, ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে রাকিব আর দেরি করল না। তক্ষুনি তার মনের নেশা মেটাতে উদ্ধত হল।....


এরপর সন্ধ্যার আঁধার যখন ঘনিয়ে এল রাকিব বলল," তোমার সঙ্গে আমার যখন শারীরিক সম্পর্ক ঘটেই গেল জরিনা, তখন আমি তোমাকে আর রেখে যাবো না, আমি তোমাকে নিয়েই যাবো এবং বিয়ে করব। তুমি কী বলছ, বলো।"

"আমি কী বলব?"

"তাহলে আমার সঙ্গে এক্ষুনি তুমি চলো!"

"চলো।" মনের মানুষের সঙ্গে 'তুমি' করে কথা বলতে হয়। জরিনা তাই, এখন থেকে 'তুমি' করে কথা বলতে শুরু করল।

জানলা দিয়ে মুখ বের করে রাকিব তখন নূর বিবির উদ্দেশ্যে বলল," কই গো, আছো নাকি?"

নূর বিবি অমনি জানলায় চলে এল," আছি।"

"তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।"

নূর বিবি দরজা খুলে দিল।

রাকিব বাইরে বেরিয়ে এল।

নূর বিবি জিজ্ঞেস করল," কী হল, বল।"

রাকিব বলল," আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাচ্ছি, জরিনার মা যদি খুব খোঁজাখুঁজি করে তুমি তাকে বুঝিয়ে দিও।"

"অ নিয়ে তোরা কোন চিন্তা করিস না, আমি ঠিক বুঝিয়ে দিব।"

"ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি তাহলে! আর হ‍্যাঁ, এই টাকাটা তুমি রাখো, মিষ্টি কিনে খেও।"


রাকিবের টাকা পেয়ে নূর বিবি খুব খুশি হল। রাকিবের সঙ্গে তার যে এটাই চুক্তি হয়েছিল। একটা মেয়ে ঠিক করে দিতে পারলে রাকিব তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিবে। যত মেয়ে ঠিক করে দিবে তত পাঁচ হাজার টাকা দিবে। জরিনাকে দিয়ে নূর বিবি সেটা আজ প্রথম বউনি করল।

                          ।।তিন।।

রাকিবের গাড়ি ঝড়ের বেগে ছুটে চলল। ফলে জরিনার মাথার চুল, বুকের ওড়না বাতাসে সব এলোমেলো হয়ে গেল আর তার চোখ দিয়ে জল ঝরল। এর জন্য জরিনা রাকিবকে বলল," গাড়ি আস্তে চালাও।"

মাথায় হেলমেট পরা রাকিব জরিনার কথা ঠিকঠাক শুনতে পেল কি পেল না সে কোন উত্তর করল না।

খানিক বাদে জরিনা ফের বলল," গাড়ি আস্তে চালাও।" এবার সে জোরে এবং রাকিবের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল।

রাকিব বলল," এখন কি গাড়ি আস্তে চালানোর জো আছে? ধ‍রা পড়ে গেলে তুমি ও আমি দু' জনেই ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো। তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে?"

" হ‍্যাঁ, অসুবিধা হচ্ছে।"

"কী অসুবিধা হচ্ছে?"

"ছিটকে পড়ে যাবো বলে ভয় করছে, আর বাতাসের ঝাপটায় চোখ দিয়ে জল ঝরছে।"

"ও, এই অসুবিধা হচ্ছে?"

"হ‍্যাঁ।"

"ঠিক আছে, তুমি এক কাজ করো তাহলে, আমাকে ভালো করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসো। তাহলে আর কোন অসুবিধা হবে না।"

রাকিবের কথা মতো জরিনা তাই করল, রাকিবকে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসল।

রাকিব তখন জরিনাকে নিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে দু' ঘণ্টার মধ্যে শহরে পৌঁছে গেল এবং শহরের একটা পাঁচতলা হোটেলে গিয়ে উঠল। উঠে হোটেলের একটা রুমে বসে রাকিব তাকে বলল," তুমি এখানে একটু বসো জরিনা, আমি একটু আসছি।"

জরিনা জিজ্ঞেস করল," কোথায় যাবে?"

"একটু বাইরে যাবো।"

জরিনা তখন বলল," আমি একা বসতে পারব না। একা বসতে আমার খুব ভয় করবে। আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।"

সাহস দেওয়ার জন্য রাকিব তখন বলল," ভয় কী! কোন ভয় নেই। আমি তো আবার ফিরে আসছি।"

"না, তাও আমার খুব ভয় করবে। কেউ এসে যদি আমাকে চেপে ধরে আমি তখন কী করব? এখানে আমি কাকে চিনি?"

রাকিব ফের সাহস দিল," বললাম তো, কোন ভয় নেই। এখানকার মানুষ সবাই খুব ভালো। কেউ তোমাকে কিচ্ছুটি শুধিয়ে দেখবে না বা তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না।"

জরিনা বলল," তুমি বাইরে কোথায় যাবে?"

"সিগারেট শেষ হয়ে গেছে, সিগারেট আনতে যাবো।"

"আজ অমনি থাকো না, সিগারেট আজ খেতে হবে না। একটা রাত সিগারেট না খেলে কী হবে?"

রাকিব বলল," তোমার কি মাথা টাথা কিছু খারাপ হয়েছে, সিগারেট না খেলে থাকা যায়? খাবার না খেয়ে থাকতে পারব, কিন্তু সিগারেট না খেয়ে থাকতে পারব না।"

এরপর জরিনা যখন কোন ভাবেই তাকে আটকাতে পারল না তখন অত্যন্ত ভীতা হয়ে বলল,"যাচ্ছ যাও, খুব তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু!"

"যাবো আর আসব।" রাকিব বেরিয়ে চলে গেল।

                           ।।চার।।

ঘণ্টা খানেক হতে চলল তবু রাকিব ফিরে এল না। একলা ঘরে রাকিবের জন্য জরিনার তখন খুব ভয় করতে লাগল। তার কাছে কোন ফোন টোনও নেই যে, এক কল ফোন করে দেখবে। যদি রাকিব না আসে? কোন পরপুরুষ এসে যদি তাকে এখন... নানাবিধ কথা ভাবতে ভাবতে জরিনার কণ্ঠতালু ভয়ে শুকিয়ে গেল। আর সে বারবার ঢোঁক গিলল।

ঠিক এই সময় একজন লোক এসে ঘরে ঢুকল," কী করছ, সুন্দরী?"

ভয়ে জরিনা চমকে উঠল," কে আপনি!"

"বলব বলব, অত ব‍্যস্ত হচ্ছ কেন? আগে দরজাটা তো বন্ধ করতে দাও।"

জরিনা চিৎকার করে উঠল," না, দরজা বন্ধ করবেন না, দরজা বন্ধ করবেন না বলছি।"

জরিনার কথা সে শুনল না। দরজা বন্ধ করেই দিল," কী বলছ, এবার বলো।"

"আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? দরজা খুলে দিন, দরজা খুলে দিন বলছি! না হলে আমার রাকিব এসে আমাকে পাবে না।"

"তোমার রাকিব আর আসবে না, সুন্দরী।"

জরিনা অত্যন্ত ভীতা বনে গিয়ে এবার পিছনের দেওয়ালের দিকে সরে গেল," আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন? বেরিয়ে যান বলছি, বেরিয়ে যান।"

হাসতে হাসতে সেই লোক তখন বলল," আমি হলাম এই হোটেলের মালিক। সুতরাং, তুমি বেরিয়ে যেতে বললেই তো আমি বেরিয়ে যাবো না।"

দৃপ্ত কণ্ঠে জরিনা সেই লোককে তখন বলল," আপনি হোটেলের মালিক হতেই পারেন, তাই বলে একলা একটা মেয়ের ঘরে আপনি ঢুকতে পারেন না। এটা অন‍্যায়। আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান। রাকিব আসুক তখন যা বলার ওকে বলবেন। আমার সঙ্গে আপনার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি এখন আসতে পারেন।"

সেই লোক বলল,"রাকিবের সঙ্গে আমার সব প্রয়োজন মিটে গেছে। প্রয়োজন এখন আমার তোমার সঙ্গে।"

"আমার সঙ্গে!"

"হ‍্যাঁ, তোমার সঙ্গে।"

"আমার সঙ্গে আপনার কী প্রয়োজন?"

"অত দূরে থাকলে বলব কী করে? কাছে এসো তবে তো বলব।"

"না, আপনি বেরিয়ে যান বলছি, না হলে রাকিব এলে তাকে বলে দিয়ে আপনাকে-----"

সেই লোক হাসল শুনে," তুমি এখনও রাকিবের কথা ভাবছ? রাকিব আর আসবে না বললাম না?"

"কে বলল, আসবে না?"

"আমি বলছি, আসবে না।"

"আপনি বললেই হল নাকি? কেন আসবে না?"

"রাকিব চলে গেছে।"

"চলে গেছে!"

"হ‍্যাঁ, চলে গেছে।"

"কোথায় চলে গেছে?"

"রাকিব বাড়ি চলে গেছে।"

" না, এ হতে পারে না, আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ, রাকিব আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাকে ভালোবাসি। আর আপনি বললেই হল না? রাকিব বাইরে সিগারেট আনতে গিয়েছে। হয়তো দোকানে ভিড় আছে বলে তার আসতে দেরি হচ্ছে। পেয়ে গেলেই ঠিক চলে আসবে। রাকিব কথা দিয়েছে, সে আমাকে বিয়ে করবে।"

জরিনার কথার উত্তরে সেই লোক তখন বলল," তুমি হলে পাড়া গাঁয়ের অতি সাধারণ একটা মেয়ে। তাই, তুমি বুঝতে পারো নি। রাকিব তোমাকে আমার কাছে বেচে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে। সে আর ফিরে আসবে না।"

"কী!"

"হ‍্যাঁ।"

"না, আপনার কথা আমি বিশ্বাস করি না। আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন, আপনি আমার মন ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। রাকিব আমাকে বেচতে পারে না।"

"আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলছি না, জরিনা। আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি। হ‍্যাঁ, জরিনা।"

সেই লোকের মুখে নিজের নাম শুনে জরিনা অবাক হল," এ কী! আপনি আমার নাম জানলেন কী করে?"

সেই লোক বলল," টাকা নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার সময় রাকিব আমাকে বলে গেছে। জানো তো, মেয়েছেলে কেনাবেচার আমি ব‍্যবসা করি। তোমাকে রাকিব বিয়ে করবে বলে টোপ দিয়ে এখানে নিয়ে এসে আমার কাছে বেচে দিয়েছে। তোমরা মেয়েরা হলে সব বোকা। তাই, তোমরা ছেলেদের প্রেমের প্রলোভনে খুব সহজেই পড়ে যাও। আর তার সঙ্গে বেরিয়ে চলে আসতে দ্বিধা করোনা, তার সম্পর্কে একবার ভেবেও দেখো না, সে কেমন ছেলে, কী করে।"

"আমি ঠিক বুঝতে পারি নি তাকে, আমি ঠিক চিনতে পারি নি।"

"আমি রাকিবের মুখে সব শুনেছি, তুমি তো তাকে চেনা বা বোঝার কোন চেষ্টাই করো নি। রাকিবের সুন্দর চেহারা দেখেই তুমি ভুলে গিয়েছিলে। ভেবেছিলে, রাকিবের মতো সুন্দর ছেলে তুমি আর জীবনে পাবে না। জানো তো, রাকিব তার ওই সুন্দর চেহারা দিয়েই তোমাদের মতো মেয়েদের খুব সহজে শিকার করতে পারে। তোমাকে ধরলে রাকিবের পঞ্চাশের উপর মেয়ে বিক্রি করা হবে আমার কাছে। তারা সব তোমার মতো গরিব ঘরের সাধারণ মেয়ে। সব গ্রামে তার একটা করে মেয়ে ঠিক করা আছে। তারাই রাকিবকে মেয়ে ধরে দেয়। রাকিবের কাছ থেকে তারা কমিশন পায়। মেয়ে প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে।"

জরিনার অমনি নূর বিবির কথা মনে পড়ল। তার এই দাদিই তাকে সেরেছে। সুতরাং সে ভাবল, এখান থেকে যদি সে কোন দিন বেরোতে পারে তাহলে সে ওই নূর বিবির বিরুদ্ধে সালিশ ডাকবে, তাকে শাস্তি দিবে। দিতেই হবে। না হলে সে যে আরও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করবে। তার সর্বনাশের হাত থেকে গ্রামের সাধারণ মেয়েদের বাঁচাতে হবে। বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে। ও সে নিজে একটা সংগঠন গড়ে তুলবে। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মেয়েদের নিয়ে। সেই সংগঠনের কাজ হবে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, মেয়েদের সতর্ক করা। ভুল পথে ভুল করেও যাতে কোনও মেয়ের পা না পড়ে, ভালোবাসার শিকার মেয়েরা যাতে না হয়।...

এরপর জরিনা সেই লোকের কাছে মুক্তি চাইল,"....আপনি আমায় মুক্তি দিন!"

জরিনার আবেদন মঞ্জুর হল না।

                          ।।পাঁচ।।

রাত্রে জরিনার মা সাইমা বিবি জরিনার খোঁজে বের হল। পাশের বাড়ি গুলো সব দেখল। ও আরও অনেক লোককে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু জরিনার খোঁজ কেউ দিতে পারল না। জরিনাকে কেউ দেখেনি বলল। জরিনার জন্য তার মনটা তখন খুব হা-হুতাশ করল এবং এক সময় তার নূর বিবির কথা মনে পড়ল। জরিনা তার কাছে মাঝে মাঝে যায় এবং বসে। সব বাড়ি গেলেও তার নূর বিবির বাড়ি যাওয়া হয়নি। তার কাছে গেলে জরিনার খোঁজ খবর পাওয়া যেতে পারে। সে তখন নূর বিবির বাড়ি গেল," চাচি, তোমার কাছে আমার জরিনা আসেনি?"

"কই, না তো।" নূর বিবি বলল," তুমি এসেছ ভালো করেছ, না হলে তোমার কাছে আমাকেই যেতে হতো। তোমার জরিনা আমাকে ফোন করেছিল। খবরটা জানানোর জন্য।"

সাইমা বিবি চমকে উঠল," ফোন করেছিল!"

"হ‍্যাঁ, ফোন করেছিল।"

"কখন?"

"তা ঘণ্টা খানেক হল।"

"কিন্তু জরিনার তো ফোন নেই। তাহলে সে ফোন করল কীভাবে?"

"কার ফোন থেকে করেছিল তা তো বলতে পারব না। আমার নম্বর ও জানে। তাই, আমার ফোনে ফোন করেছিল।"

"করে কী বলল?"

"তোমাকে খোঁজাখুঁজি আর চিন্তা করতে নিষেধ করল।"

"কেন, কোথায় আছে বলল?"

"সে সব কথা কিছু বলল না। জিজ্ঞেস করলাম তাও না। তবে একটা কথা বলল, কাল বলে ওকে দেখতে লোক আসবে, ছেলে বলে দেখতে কালো।‌ কালো ছেলেকে ও বিয়ে করবে না। তাই, কোথাকার একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।"

"কী বললে, তুমি!"

"হ‍্যাঁ, ফোনে আমাকে তো সে রকমই বলল।"

সাইমা বিবি নিজেকে তখন আর ধরে রাখতে পারল না। তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল," জরিনা, ও জরিনা, এ তুই কী করলি মা...এ তুই কী করলি...জরিনা...."

নূর বিবি তাকে কাঁদতে বারণ করল," কেঁদো না, বরং আল্লার কাছে হাত তুলে দোয়া করো। যাতে তোমার জরিনা ভালো থাকে এবং সুখে থাকে।"

নূর বিবির কথা মতো সাইমা বিবি তাই করল। কান্না বন্ধ করে জরিনার জন্য আল্লার কাছে হাত তুলে দোয়া করল," আল্লা, ও আল্লা, আমার জরিনাকে তুমি সুখে রেখো, আমার জরিনাকে তুমি ভালো রেখো, আমার জরিনাকে তুমি শান্তিতে রেখো, আমার জরিনাকে তুমি....আল্লা...."

                            ।।ছয়।।

তিন বছর বাদে জরিনা ফিরে এল। হোটেলের এক সিকিউরিটির সঙ্গে হাত করে পালিয়ে এল। এসে সব কথা তার মাকে খুলে বলল। দুই মা মেয়ে মিলে গলা ধরে তখন খুব কাঁদল। তারপর নূর বিবির বিরুদ্ধে সালিশ ডাকল। সালিশে প্রচুর লোকের সামনে জরিনা তার বক্তব্য পেশ করল। সবাই তার বক্তব্য শুনল। ও পরে নূর বিবিকে উঠে দাঁড়াতে বলল।

নূর বিবি উঠে দাঁড়ালো।

"জরিনা যা বলল সব কি সত্যি?"

"না, বিলকুল মিথ্যা।"

"না, ও মিথ্যা কথা বলছে। ওর কথা আপনারা কেউ শুনবেন না, কেউ বিশ্বাস করবেন না।" জরিনা উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল।

কিন্তু সালিশের মধ্যেকার একজন লোক বলল," তুই-ই যে সত্যি, তার কি কোন প্রমাণ আছে?"

জরিনা বলল," আছে।"

"কী প্রমাণ আছে?"

"রাকিব যে হোটেলে আমাকে বিক্রি করেছিল ওই হোটেলই হল তার প্রমাণ।"

নূর বিবি তখন বলতে লাগল," আপনারা ওর কথা কী শুনছেন? ও হল একটা চরিত্রহীনা মেয়ে। তিন বছর ও হোটেলে ছিল। ওর জাত ধর্ম বলে কিছু নেই। সব চলে গেছে। আপনারা ওকে ধরে মারুন! মারুন ওকে। না হলে আমাদের গ্রামের বদনাম হবে, দুর্নাম হবে, আমাদের উপর খোদার গজব নাযিল হবে।"

তারপরই সালিশের কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে জরিনাকে মারতে শুরু করল। আর অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে লাগল," শালি, নিজে একটা খানকি মেয়ে হয়ে...শালি..." আর কিছু লোক চুপ করে থাকল। তারা জরিনাকে মারতেও বলল না আবার মারতে বারণও করল না।

ভদ্র সালিশের এ রূপ ব‍্যবহারে জরিনার মা স্তম্ভিতা হয়ে গেল। এ কী! এর প্রতিবাদের সে কোন ভাষা খুঁজে পেল না। ফলে দম দম করে সে খালি লাথি মারল মাটিতে, দম দম করে সে খালি...

নূর বিবির মতো মানুষেরা এভাবেই বেঁচে যায় চিরকাল আর মার খায় জরিনারা। এটা আমাদের লজ্জা। হ‍্যাঁ, লজ্জাই।

অনুগল্প || একটা প্রেম || অমিত পাল

 একটা প্রেম

                     


'রফিক কেমন আছো?' শুনে পিছন ফিরতেই রফিক দেখল কমলা দাঁড়িয়ে৷ বাজারের মধ্যে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেখা হল দুজনের ৷ কমলার সিঁথিতে সিন্দূর৷


  'ভালো আছি', তুমি?


'ভালো আছি' ৷ এখনো কি এই ব্যবসায় করছ রফিক?


'হ্যাঁ কমলা', তবে বেশ ভালো আছি একা থেকে৷


রফিক একজন দর্জি জেনে এবং অন্য ধর্মের মানুষ বলে কমলার বাড়ির লোক এই সম্পর্কের অবসান পাঁচ বছর আগেই করে দিয়েছে৷


'বিয়ে করলে না কেন?' কমলা বলে উঠল৷


'আমি শুধু তোমায় ভালো বাসি৷' অন্য কাউকে বিয়ে করলেও ভালো বাসতে পারতাম না৷


রফিকের মুখে এই কথা শুনে কমলার চোখ বেয়ে জল বের হল৷ একটু খোলা মনে কাঁদল কমলা৷ আবার অদৃশ্য হয়ে গেল ভীড়ের মধ্যে৷

অনুগল্প || যাচ্চলে || সিদ্ধার্থ সিংহ

 যাচ্চলে




রেস্টুরেন্টের এ টেবিলে ও টেবিলে প্রেমিকদের মুখোমুখি বসেছিল বিভিন্ন মেয়েরা। একটি ছেলে মোবাইলে বেশ জোরে জোরেই বলতে বলতে ঢুকল, তোর প্রেমিকাকে তো দেখছি এখানে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে বসে আছে...

তার কথা শেষ হল কি হল না, দেখা গেল, যে মেয়েগুলো ওই ছেলেদের সঙ্গে বসেছিল, তারা যে যেভাবে পারল পড়ি কি মড়ি করে সোজা রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেল।

এই দৃশ্য দেখে ছেলেটি শুধু বলল, যাচ্চলে!

গল্প || মনোজের সংসারে দুর্গা ঠাকুরের আশীর্বাদ || আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

 মনোজের সংসারে দুর্গা ঠাকুরের আশীর্বাদ


                

                               এক

   বাড়ি থেকে বেরোলেই পুলিশ তাকে ধরে আচ্ছা করে পেটাচ্ছে।ভয়ে বাড়ি থেকে কেউ বেরোতে পারছেনা।ফলে গরিব মানুষ গুলোর হয়েছে যত বিপদ।বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায় মানুষ।শরীর যাদের সম্পদ।অর্থাৎ না খাটলে যারা খেতে পায়না। মনোজ হল সেরকমই একজন মানুষ।গ্রামে বহু গরিব মানুষ আছে কিন্তু তার মতো গরিব কেউ নেই।কেননা,তাদের অন্তত নিজস্ব ভিটামাটি-টুকু আছে;হয়তো দশ বিঘা জমি নেই,ব‍্যাঙ্কে হয়তো দশ লাখ টাকা নেই,কিন্তু মাথার উপর প্রত‍্যেকের ছাদ আছে। মনোজের যে সেটুকুও নেই।গ্রামের বাইরে মাঠের ধারে সরকারের খাস জমির উপর তালপাতার একটা ছোট্ট কুঁড়ে করে সেখানে বাস করে।আকাশে মেঘ দেখলে ভয়ে তার জান শুকিয়ে যায়।যদি নিষ্ঠুর মেঘ,ঝড় কিছু একটা করে বসে।

   প্রকৃতির নিয়মে মনোজের চার সন্তান। মনোজের মতো ভূমিহীন মানুষের চার সন্তান হওয়া মানে বর্তমানে সেটা একটা সামাজিক অপরাধের মধ্যেই পড়ে।যদিও বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে মনোজকে অতগুলো বাচ্চা নিতে হয়েছে।কিন্তু মানুষ তো সেটা বুঝবে না।মানুষ বলবে,ওটা একটা সামাজিক অপরাধ।

                               দুই

   মনোজের প্রথম সন্তান একটা কন্যা সন্তান হলে তার স্ত্রী শুকতারার একটা পুত্র সন্তানের শখ হয়।স্ত্রীর শখ মেটাতে গিয়ে মনোজকে আবার বাচ্চা নিতে হয়।কিন্তু সেটা পুত্র সন্তান না হয়ে আবার একটা কন‍্যা সন্তান হয়। মনোজ তখন মনস্থির করে যে,আর কোনো সন্তান নয়।স্ত্রীর শখ হলেও আর নয়।কেননা, গরিবের সংসার।গরিবের সংসারে দুটোই বেশি।এরপর তিনটে হলে খুব বেশি হয়ে যাবে।লোকেও নিন্দা করবে।তাছাড়া অধিক সন্তান নিয়ে মানুষ করাটাও আজকাল খুব কষ্টের।আচ্ছা আচ্ছা বড়লোক যারা তারাই তো একটা-দুটোর বেশি বাচ্চা নিচ্ছে না। তাহলে সে নিতে যাবে কোন দুঃখে!না,সেও আর নেবেনা।নিয়ে বাড়িতে শুধু ছেলের পাল করে রাখলে তো হবেনা।তাদের মানুষ করতে হবে,সঠিকভাবে খেতে পরতে দিতে হবে,লেখাপড়া শেখাতে হবে।তবেই তো সন্তান বড় হয়ে বাবার নাম করবে।আর তখনই হবে সন্তান নেওয়ার সার্থকতা।তাছাড়া কোনো সার্থকতা নেই।

    কিন্তু শুকতারা শোনেনা সেসব কথা।সে আবার বাচ্চা নিতে চায়।আর মনোজ চায়না। এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। শুকতারা তার বাপের বাড়ি চলে যায়।নিজ হাতে রান্না করে খেতে মনোজের তখন খুব কষ্ট হয়।ফলে শুকতারাকে সে আনতে যায়। কিন্তু শুকতারা আসতে চায়না।সে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেয় যে,আবার বাচ্চা নিলে তবেই সে আসবে,নচেৎ আসবে না।

   বাধ্য হয়ে মনোজকে তখন বলতেই হয়,"আবার বাচ্চা নেবো,চল।"

   শুকতারা এবার মনোজের সঙ্গে বাড়ি চলে আসে।কিন্তু নিয়তির কী খেলা!সেটাও একটা কন্যা সন্তান হয়।এরপর চার বারের বেলায় বাচ্চা নেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে আবার গণ্ডগোল হয়।শুকতারা আবার বাপের বাড়ি চলে যায়।মনোজ তাকে আবার ধরে আনে। এবার তাদের একটা পুত্র সন্তান হয়। শুকতারার তো একটা পুত্র সন্তানেরই শখ ছিল।তার শখ পূরণ হয়।এরপর তারা আর কোনো বাচ্চা নেয়না।নেয়না তো নেয়না। দিদিমণিদের দেওয়া কন্ডোম আর বড়ি ব‍্যবহার করে তা বন্ধ করে রেখেছে।

                             তিন

   পেশায় মনোজ ভ‍্যান চালক।ভ‍্যান চালিয়ে তার সংসার চলে।স্ত্রী-সন্তানদের প্রতিপালন করে।হঠাৎ লকডাউন শুরু হওয়ায় সে এখন ভীষণ বিপদে পড়ে গেছে।এক টাকা রোজগার নেই।ভ‍্যানটা নিয়ে কোথাও যে বেরোবে সে উপায়ও নেই।পুলিশ গ্রামের দিকেও চলে আসছে এবং এসে যদি বাড়ির বাইরে কাউকে দেখছে তো তার আর রক্ষে নেই।এমতাবস্থায় বাইরে বেরোনো যে সমীচীন নয় মনোজ সেটা বেশ ভালো করেই জানে।বেরিয়ে যে কাজ হবেনা সেটাও জানে।তবু মনোজের মন মানল না।ভ‍্যানটা নিয়ে সে একদিন বেরিয়েই পড়ল।

                              চার

   ভ‍্যান নিয়ে মোড়ে গিয়ে সে যেই দাঁড়িয়েছে অমনি একটা পুলিশের গাড়ি চলে এল।গাড়ি থেকে দুটো পুলিশ নামলো।পুলিশ দুটোকে নামতে দেখে মনোজ দৌড়ে পালাতে লাগল। না হলে তাকে যদি এসে খপ করে ধরে ফেলে!

   পুলিশ দুটোও তার পিছু ধাওয়া করল,"এই দাঁড়া বলছি,দাঁড়া বলছি,দাঁড়া বলছি এখনও....।"

   কিন্তু মনোজ দাঁড়ালো না।দৌড়াতে দৌড়াতে সে মাঠে নেমে পড়ল।পুলিশ দুটো তখন দাঁড়িয়ে গেল।মাঠে নামলো না।রাতে বৃষ্টি হয়েছে।মাঠে যে এখন কাদা।ইউনিফর্মে যে তাহলে কাদা লেগে যাবে।কিন্তু তারা বলতে ছাড়লো না,"শালা,বেঁচে গেলি যা, ধরতে পারলে আজ তোর যা করতাম না!"

                             পাঁচ

   পুলিশের মার খুব সাংঘাতিক।পুলিশের মার যে একবার খেয়েছে সে কাল-গু হেগে মরেছে।অতএব মনোজ দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের মধ্যে পালিয়ে গেল।যাতে এতদূর পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধ‍রতে আবার তেড়ে না আসে এবং সেখানে গিয়ে সে ভিজে মাটিতে পা পিছলে পড়ে গেল।"আ:,মরেছি গো!" মনোজের মুখ থেকে তখন আপনি আর্ত চিৎকারটি বেরিয়ে গেল।কিন্তু মনোজ তখন উঠল না।পড়ে পড়ে সে ভাবতে লাগল,সে যদি এখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেত তাহলে তার কী যে হতো!কী যে হতো!সে মারতে নিষেধ করলেও শুনত না,মারতই। মারতে মারতে তাকে আধমরা করে তবে ছাড়ত।যাক,পুলিশের হাতে যে ধরা পড়েনি সেটা তার ভাগ্য।

                               ছয়

   মনোজ এবার মাঠ থেকে উঠে বাড়ি চলে আসবে।তার আগে সে মাঠের চারদিকটা একবার তাকিয়ে দেখল।না,মাঠে কোনো জনমানুষ নেই,কোনো জনমানুষ নেই।মাঠে কোনো জনমানুষ দেখতে না পেলেও মনোজ তার পায়ের কাছে একটা জিনিস দেখতে পেল।চকচকে একটা জিনিস।জিনিসটার সামান্য অংশ দেখা যাচ্ছে।কিন্তু পুরোটাই নরম কাদার তলায় পু়ঁতে রয়েছে।জিনিসটা যে কী জিনিস সেটা দেখতে হলে কাদার তলা থেকে জিনিসটাকে উপরে তুলে আনতে হবে। অতএব মনোজ দুই হাত দিয়ে জায়গাটার কাদা সরাতে লাগল।সরাতে স‍রাতে জিনিসটা একসময় তার হাতে চলে এল। এলে পরে মনোজ সেটা গামছায় জড়িয়ে বাড়ি নিয়ে চলে এল।ঠিক যেভাবে ছেলেরা খালে বিলে মাছ ধরে সেই মাছ গামছায় করে জড়িয়ে বাড়ি নিয়ে আসে।

                             সাত

   মনোজ বাড়ি এলে পরে শুকতারা তার দিকে তাকালো।তাকিয়ে প্রশ্ন করল,"তুমি কি মাছ ধরে আনলে?"

   মনোজ বলল,"না।"

   "তাহলে মাছ ধরার মতো তোমার হাতে,পায়ে এত কাদা কেন?"

   "এমনি।"

   "গামছায় কী তাহলে?"

   মনোজ বলল,"একটা জিনিস আছে।"

   শুকতারা জিজ্ঞেস করল,"কী জিনিস আছে?"

   মনোজ বলল,"পুকুর থেকে আগে হাত,পায়ের কাদা ধুয়ে আসি।তারপর বলছি।" মনোজ পুকুর থেকে হাত,পায়ের কাদা ধুয়ে এসে বলল,"বালতিতে জল আছে?"

   শুকতারা বলল,"আছে।"

   মনোজ তখন গামছার বাঁধনটা আলগা করে দিয়ে সেই চকচকে জিনিসটা বালতির জলে ডুবিয়ে দিল।দেওয়ার পর বলল,"ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে জিনিসটা জল থেকে তোল।কাদা লেগে থাকেনা যেন।"

   শুকতারা তাই করল।পরে মনোজ বলল,"কী জিনিস এবার দ‍্যাখ!"

   শুকতারা জিনিসটা দেখে বলল,"এ যে খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি গো!তুমি কোথায় পেলে?এর যে অনেক টাকা দাম!অনেক অনেক টাকা দাম!"

   মনোজ এবার ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে বলল,"আস্তে!"

   খুব আস্তে এবং নিচু গলায় শুকতারা বলল,"কোথায় পেলে?"

   মনোজ বলল,"কুড়িয়ে পেলাম।"

   "কোথায় কুড়িয়ে পেলে?"

   "মাঠে।"

   "মাঠে তুমি কী করতে গিয়েছিলে?"

   পুরো ঘটনাটা মনোজ তখন শুকতারাকে খুলে বলল।কিছু গোপন করল না।

   ঘটনার বিশদ বর্ণনা শুনে শুকতারা বুঝে নিল যে,এটা দুর্গা ঠাকুরের একান্ত আশীর্বাদ। তার আশীর্বাদ ছাড়া এতবড় প্রাপ্তি কখনোই সম্ভব নয়।অতএব সে আর দেরি করল না। তক্ষুনি দুর্গা ঠাকুরের স্মরণ করল।----"তোমাকে ধন্যবাদ ঠাকুর,তোমাকে ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।"শুধু শুকতারা নয়,মনোজও স্মরণ করল।অত:পর আমরা আশা রাখব,মনোজের সংসারে একদিন সুখ আসবে।জীবনের দৈন‍্যতা দূর হবে।হবেই হবে।

গল্প || লাওয়ারিশ || দীপক কুমার মাইতি

 লাওয়ারিশ


                                                                 

          ডেলিপ্যাসেঞ্জার আমি। ছেলেটি প্রায় প্রতিদিন পাঁশকুড়াতে ওঠে। পরনে ছেঁড়া প্যান্ট ও জামা। সারা শরীরে অপুষ্টির লক্ষণ। হাতে ঝাঁটা। খুব যত্ন করে কামরা পরিষ্কার করে। তারপর যাত্রীদের কাছে হাত পাতে। কেউ দেয়, কেউ দেয়না। ছেলেটি নীরবে চলে যায়। সেদিন কামরা বেশ ফাঁকা। কিন্তু ছেলেটি উঠে কামরা পরিষ্কার করে। ছেলেটি বেশি পয়সা পায় না। আমার কাছে হাত পাতে। ওকে বসতে বলি। আলাপ করি। জানতে পারি, খড়্গপুরে এক বস্তিতে থাকে। চিকু বলে সবাই ডাকে। প্রতিদিন দুটো আপ ও দুটো ডাউন ট্রেনে ঝাঁট দিয়ে রোজগার করে। রেল পুলিশ ও দালালকে দিয়ে যা থাকে বাড়িতে দেয়। আমি বলি, “ আমার বাড়ি যাবি? ঘরের কাজ করবি। খাওয়া ও পোশাক পাবি। মাসে ভালো বেতন দেব।”


          আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর - “ নাহি সাব।”


          “কেন রে? রোজ রোজ এই নোংরা ঘাটতে ভালো লাগে?”


          “ সব লোক শোচে হাম লোক জনম চোরচোট্টা। কোই বিশওয়াস করে না। সব টাইম সন্দেহ করে। কোন লাফড়া হলে পাহেলে পিটাই উসকে বাদ পুলিশ। উসসে এ কাম সাহি হ্যায়। সাব, হাম লোক লাওয়ারিশ।”


          ট্রেন থামে। আমাকে সেলাম করে ছেলেটি চলে যায়।

কবিতা || লোকটা || নবকুমার

লোকটা



লোকটাকে চেনে না কেউ 

যদিও তাতে ওর কিছু যায় আসে না ।


গাঁয়ের পাশে নদী

লোকটি প্রতিদিন বিকেলে

নদীর বালিতে পা ছড়িয়ে বসে

বালি দিয়ে তৈরি করে ঘর

সে ঘরে মানুষ থাকে না -

থাকে তার নিজস্ব হৃদয় ।


কখনো কখনো বালি দিয়ে তৈরি করে মন্দির

এ মন্দিরে কি দেবতা থাকে ?

জিজ্ঞেস করলে বলে -না,

দেবতারা এ ঘরে থাকে না 

থাকে দামি দামি মন্দিরে ।


লোকটির একাকী জীবন-

লোকে বলে 'পাগল'

এক পাগলের বিস্তৃত সুন্দরবন।

কবিতা || আহ্বান || হরিহর বৈদ্য

 আহ্বান

 


জাতের কভু নেই ভেদাভেদ
    এই কথাটি জানি,
ভাই হয়ে তবু ভাইয়ের রক্তে
     এত কেন হানাহানি?
হিন্দু-মুসলিম এক জাতি মোরা
        একসাথে আছি গাঁথা,
দলাদলির লড়াই তথাপি
          মনে বাজে বড় ব্যথা!
কে বলে হিন্দু, কে বলে মুসলিম?
     আমরা একই জাতি,
অশ্রু ঝরাই কাঁদলে সবাই---
         সুখেও সবাই হাসি।
জীবনের দাম সবারই সমান
     নেই সেথা ভেদাভেদ,
পুরান- কোরান- বাইবেল বা
      খুলে দেখো তুমি বেদ।
জন্ম-মৃত্যু, সৃষ্টি- বিনাশ---
          একই নিয়মে বাঁধা,
তব দেহে যেমনি রক্ত
      মোর দেহের সেই ধারা।
তাই সবাই মিলে ভাববো 
     মোরা একে অপরের ভাই,
কারো উপর ঘটলে আঘাত
       যেন সকলেই ব্যথা পাই।
মতভেদ আজ যত থাক 
      তবু একটা কথাই খাঁটি,
সবার উপরে এটাই সত্য
        আমরা মানব জাতি।
সব ভুলে তাই হাতে হাত রেখে
       শুধু এই কথাটাই বলি,
ভুল বোঝাবুঝি শেষ করে
     এসো একসাথে মোরা চলি।

কবিতা || স্মৃতিচারণা || মিলি দাস

 স্মৃতিচারণা



নির্বাক নিস্তব্ধ নারীগুলি 

যখন উন্মুক্ত বক্ষে দ্বিপ্রহরে

প্রদক্ষিণ করে চলেছে কারুকার্য মন্দির,

হাতুড়ি ছেনি শলাকা রেখে

সমান্তরাল প্রবাহে অন্বেষণে

প্রত্যক্ষ করি গুহা গহবরের চিকচিক করছে বৃষ্টি ফোঁটা মাখা শ্রাবণী মেঘেরা,

ওদের চোখের বিষণ্ণতা ধরা দিয়েছিল

প্রতিটি ভাস্কর্যের অন্তরে।

রিরংসার উৎকণ্ঠা জাগ্রত হয়নি

পাথুরে ঘন ছায়ায়,

বরং মনে পড়েছিল একযুগ আগে ফেলে আসা স্ত্রী,

প্রেয়সী কিংবা রক্তে ভেজা সুডৌল কন্যার কথা।

কবিতা || ছেড়ে দাও || ফরমান সেখ

 ছেড়ে দাও




যাকে তুমি জীবনের বিনিময়ে--

দিতে চেয়েছিলে একটা স্বচ্ছ জীবন

ভালোবাসার বেড়া দিয়ে

 করেছিলে লালন-পালন...


সে তোমার স্বপ্ন ভেঙে--

তোমার বেড়া করেছে পার

সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে--

মেরেছে ছুট

প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় !


তাকে আর ধরে লাভ নেই

তাকে ছেড়ে দাও

স্বাভাবিক উদ্ভিদের মত


যদি ফেরে কপালের চাকা

ঠিক সে নিজেকে সামলে নেবে,

দাঁড়াবে নিজের পায়ে,

উঠবে বেড়ে নিজের মত

ছড়াবে নতুন শাখা-প্রশাখা...

কবিতা || স্বপ্নের রানী || শেখ নজরুল

 স্বপ্নের রানী



কি অপরূপ আঁখি তোমার,দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।

সত্যি অসাধারণ তোমার গোলাপী ঠোঁটের হাসি,সেই জন্যই তো আজও তোমাকেই বড় ভালোবাসি।

তোমার পাগল করা কেশে, আমি হারিয়ে যাই স্বপ্নের দেশে।

তোমার কি অপরূপ মহিমা, হাসলেই ঝড়ে পড়ে মধুচন্দ্রিমা।

তোমার ঐ বাঁকা চোখের চাউনি,মন ভরে ওঠে তাকাই যখনই।

হৃদয় জুড়ায় তোমার শাড়ির ভাঁজে,তাইতো ছুটে আসি সকাল-সন্ধ্যা সাঁঝে।

কানে আসে যখন আলতা পরা পায়ের নুপুরের শব্দ, হৃদয় তখন তোমার প্রেমে জব্দ।

বেঁধেই রেখেছো আমায় মায়ার বাঁধনে,তোমার কথা মনে পড়ে হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে।

কবে রাখবো তোমার কোলে মাথা,প্রানভরে বলবো আমার মনের কথা।

মন চায় থাকতে তোমার চোখের কাজল হয়ে,সারাজীবন থাকবো তোমার শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে।

সর্বসুখ বিরাজমান মোদের স্বপ্নের দেশে,হাজারো স্বপ্ন ফুটে উঠবে আলিঙ্গনের শেষে।

কবিতা || আমি || সৈয়দ শীষমহাম্মদ

 আমি 

    


কে আমি কিবা পরিচয়,

রয়েছি কোন ক্ষমতায় ?

আগে পিছে খুঁজে না পাই 

ধোঁয়াশা কুয়াশাতে রই,

এই আছি তো এই নেই 

ভাবে ভবে আছি শূন্যেই l