Sunday, September 19, 2021

লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প

 বাবার খোঁজে




কানাঘুঁষায় শুনলেও এতোদিন বিশ্বাস করে নি লাভলি। এটা হতে পারে না। কত অমায়িক মা। ওকে সবসময় রাখেন আগলে। বাইরে কারো সাথে কথা বলতে দেন না। কখনো বাইরে যাবার প্রয়োজন হলে সাথে মা-ই যান। স্কুলেও মা নিয়ে যান। মা ওর প্রাণের বান্ধবী, খেলার সাথি।


বাবাকে লাভলি দেখে নি কোনো দিন। বাবা নেই। কেনো নেই-এর কোন জবাব মা দেন না। বাবার কোনো ছবিও নেই ঘরে বা কোনো এলবামে। বাংলাদেশে এখনো কোথাও ভর্তি হতে হলে পিতার নাম লাগে। ওর বেলায় পিতার নাম নেই।


তালাকপ্রাপ্তা মহিলার সন্তানের ক্ষেত্রে পিতার নাম উল্লেখ করা জরুরি না। তার মানে বাবা একজন আছে। কে সে?


জবাব নেই।


সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মাকে একটা গাড়িতে দেখে বেশ অবাক হলেও মাকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি লাভলি। আজকে আরেকটা গাড়িতে দেখে নিজকে আড়ালে রেখে পিছু নিলো মায়ের। অভিজাত এলাকার এক হোটেলে গাড়িটা ঢুকলে সেও ঢুকলো। লিফট গিয়ে থামলো থারটিন্থ লেভেলে। সে-ও ঐ লেভেলে এলেও কোন কক্ষে ঢুকেছে তা সনাক্ত করতে না পেরে নিচে এসে বসে রইলো লাউঞ্জে। তাকিয়ে বুঝতে পারছে ওখানে যারা আছে তারা এবং যারা ঢুকছে ও বের হচ্ছে সবাই ওকে অনন্ত একবার দেখছেই। দুই একজনের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় আর সে কোনদিকে তাকাতে পারছে না। বেশ অস্বস্তি লাগছে। এর আগে সে এমন অভিজাত হোটেলে কখনো ঢুকে নি। তাই বুঝতে পারছে না এভাবে মাথা নত করে বসে থাকবে, না বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবে। আড়চোখে নিজ হাতের ঘড়িও দেখছে মাঝে মাঝে। সিদ্ধান্ত নিলো যা থাকে কপালে বসেই থাকবে। লিফ্টটা সামনে থাকায় সুবিধাই হয়েছে ওর। ও লিফ্টের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারছে কে বা কারা নামছে।


প্রায় আধাঘন্টা পর বেশ পরিপাটি অবস্থায় মাকে লিফ্ট থেকে বের হতে দেখে লাভলি দাঁড়ালো। মার দিকে যাবে তখন একজন সুটেড-বুটেড ভদ্রলোক জড়িয়ে ধরলো মাকে। মাও জড়িয়ে ধরলেন ভদ্রলোককে। কী কথা হচ্ছে দু'জনের মাঝে লাভলি শুনতে পাচ্ছে না। ভদ্রলোকের সাথে মা ফের লিফ্টে চড়ে উঠে গেলো উপরে। লাভলি হতভম্ব। এসবের মানে কী? কার কাছে জানা যাবে? হোটেলের ম্যানেজার কি বলতে পারবে?


জড়তা নিয়ে ধীর পায়ে রিসেপশান ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলো লাভলি। ডেস্কের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলো চুপচাপ।


খদ্দেরটা চলে গেলে রিসেপশনিস্ট লাভলিকে জিজ্ঞেস করলো, কী সাহায্য করতে পারি তোমাকে লিটল গার্ল?


লিফ্টের দিকে তাকিয়ে লাভলি বললো, একটু আগে যে ভদ্রমহিলা লিফ্ট থেকে বের হয়ে ফের এক ভদ্রলোকের সাথে লিফ্টে করে উপরে গেলেন, উনি এখানে করেন?


কেন? তুমি ওর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছো কেন?


উনাকে আমি চিনি। আমাদের মহল্লার। তাই জানতে চাচ্ছি।


ও এই হোটেলের মক্ষিরানী!


লাভলি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো, মক্ষিরানী মানে?


কলগার্ল!

কথাটা শোনার সাথে সাথে লাভলির মাথাটা ঝিম ধরে গেলো। সে কাটা কলাগাছের মতো সেখানে পড়ে গেলো।

লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প

 উঠোন




একান্নবর্তী পরিবার ছিল আমাদর। বাড়ির মাঝখানে ছিল একটি বিশাল উঠোন। দিনের বেলায় কচিকাঁচাদের খিলখিল হাসিতে উঠোন ভরে যেত। দুপুরে শুকোত বিউলির ডালের বড়ি ও নানা ধরনের আচার। পাশে শুকোত নুন লংকা মাখা আম বা তেঁতুল বা কতবেল। প্রথম বিকেলে দিদিরা, বৌদিরা পরচর্চার আড্ডার মাঝে রসিয়ে খেতেন ওগুলো। ছোটরাও ভাগ পেত। পড়ন্ত বিকেলের রোদে মা,কাকিমা ও দিদারা কুলোয় চাল বাছতে বাছতে শুকিয়ে নিতেন নিজেদের ভিজে চুল। সন্ধ্যের সময় বসত বাবা-কাকদের মজলিশ। সামাজিক সমস্যা, খেলাধুলো থেকে রাজনীতি নিয়ে তুমুল তর্ক চলত তাদের মাধ্যে। বাল্য বিধবা পিসিদিদা ধমক দিয়ে বলতেন, “তোদের তর্ক কী থামবে না? রাত হল খেতে হবে না?”


        মা বলতেন, “রাজা উজির মরুক। নির্বাচনে কে জিতবে ঠিক হোক। তারপর তো খাওয়া।”


        দুজনে সব তর্কে জল ঢেলে দিতেন। তারপর উঠোনে গোল হয়ে বসে সকলে রাতের খাওয়ার সারতে। মা, কাকিমারা খাওয়ার পরিবেশন করতেন। খাওয়ারের স্বাদ নিয়ে বড়রা মা কাকিমাদের পিছনে লাগতেন। বড্ড ভালো লাগতো।


সময়টা নদীর জলের মতন বয়ে চলেছে। আজ উঠোনটা অনেক খণ্ডে বিভক্ত। অনেকগুলো অদৃশ্য দেওয়াল গডে় উঠেছে উঠোনে। উঠোনের সকাল সন্ধ্যেগুলো কেমন চুপচাপ। মজলিস আর বসে না। টিভিতে কারা যেন রোজ সন্ধ্যেতে জুডে় দেয় তুমুল তর্ক। সেই শব্দ মাঝে মাঝে অন্য ঘর থেকে ভেসে আসে। কিন্তু তেমন আর ভালো লাগে কই?


        মনটা কেবলই খুঁজে বেড়ায় পুরানো অখণ্ড উঠোনটাকে। ওখানে যে অনেক সুখ স্মৃতি বন্দী হয়ে আছে। বেজে ওঠে মুঠোফোন। ওপারে একজন বলে, “স্যার, কাল সকালে আসছেন তো? এবার স্বাধীনতা দিবসের পতাকা আপনাকেই তুলতে হবে।”


        মনটা ভারি হয়। আবার একটা স্বাধীনতা দিবস। একটা অখণ্ড উঠোন হারানোর দিন।

কবি চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী -এর একটি

 আগমনী সঙ্গীত 

 


স্নেহ আর মায়ার মাঝ খানে 

অপেক্ষারত একটি প্রিয় ডাক,কানে

আসতেই নেচে উঠে বৃক্ষের শাখা ।

আমার গলায় এসে বসে তৃষ্ণার্ত চাতক

নাভি মূলে প্রশান্তি ঢালে ফোঁটা ফোঁটা ফটিক জল ।

ছাই দিয়ে ঘষতে ঘষতে সোনা হয়ে যাওয়া কাঁসার গ্লাসে 

ভেসে উঠে মায়ের মুখ 

ঠিক যেন ভোরের নরম আলোয় সদ্যফোটা শিউলি ফুল।

আকাশে বাতাসে জলে স্থলে বেজে ওঠে 

আগমনী সঙ্গীত ।

কবি রোকেয়া ইসলাম -এর একটি কবিতা

 প্রতীক্ষায় হীমেল ভোর 



কুয়াশার কোমল চাদরে আঁটকে থাকে পূর্ণিমা শিশির স্পর্শে বিকশিত গোলাপ জীবনের ডিসেম্বর ঘ্রানটান আর মেকআপ খুব প্রাসঙ্গিক 

অদেখা আঁধারে দৃশ্যমান শরীর -শিল্পিত,নির্ঝর। 


বাতাসে হেঁটে যায় পৌষের দীর্ঘরাত 

নির্ঘুম যাপনে অনুভবের বেহালা জমাট 

জানে শুধু একজন -বনমালী

সময় খুব অল্প আঁটসাঁট। 

পুষ্প আর চাঁদের গভীর মাখামাখিতে ক্লান্ত শিশির 

প্রেম ও প্রার্থনায় 

সব রাত আঁধারস্তুপ আলো প্রহরের সীমানায় 

সূর্য প্রতীক্ষায় থাকা প্রতিটি হিম ভোর আপন সুনিবিড়....

কবি ইমরান শাহ্ -এর একটি কবিতা

 কমলিনী বলছি... 




এই একুশ শতকের আধুনিকায়নের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দাড়িয়ে 

আমি কমলিনী আপনাদের বলছি...

একটি সাম্প্রদায়িক প্রেমের আখ্যান ;যেখানে হৃদয়ের,

মানবতার কোন মূল্য নেই।


আপনাদের কাছে প্রশ্ন, আধুনিক পৃথিবীতে আজও

কিসের ধর্মান্ধতা, কিসের বিভাজন 

দেশ -মানুষের মাঝে কেন এত বিভেদ? 

আছে এসবের কোন উত্তর! 


ভালোবাসার কোন ধর্ম-বর্ণ হয় না 

শুধু মানুষ হতে হয়।

ভালোবাসলে হতে হয় দুটি সত্ত্বাকে সমুদ্র

অথবা আকাশের মত উদার। 


তেমনি আমি, না ভুল বললাম, আমরা

ভালোবেসেছি মনুষ্য তৈরি দু'টি 

ভিন্ন দেশ, ধর্মে জন্ম নেওয়া মানবতাপ্রেমী

ধর্ম-বর্ণহীন প্রেমীয় অন্তর। 


আপনারা জানেন,

কবিতা আমাদের জীবনের প্রথম প্রেমের নাম

দু'জন দু'জনার পরিচয় কবিতায়,

আর কবিতাকে কণ্ঠে ধারণ করতাম বরাবর 

সংসার যাপনের মত করে।


আমরা কখনো জানতে চাইনি একে অপরের

দেশ-জাতপাত উঁচুনিচুর কথা

কাব্যিকতার মোহনায় কখন যে মিশে গেছি

বিশ্বাস করুন; বুঝতে পারিনি।


আজ যখন জানতে পারলো সমাজ পরিবার

আমাদের স্বর্গীয় প্রেমের কথা

টেনে আনলেন সবাই সমাবেত হয়ে ধর্মকে;

এঁকে দিলেন অনুশাসনের সীমারেখা। 


অথচ এই সমাজ, পরিবার প্রতিদিন লক্ষকোটি 

কন্যার দায়মুক্তির প্রার্থনা করেন

মাথা ঠোকেন ধর্ম নামক পাথুরে দেয়ালে

তোমরা বাহবা পাওয়ার যোগ্য।


মধ্য এশিয়ার সমস্ত চন্দ্র, গ্রহ, তারা

সবাই জানে আমাদের কথা 

কারো আপত্তি না থাকলেও আপত্তি আছে

দুটি দেশের, দুটি ধর্মের।




কথা বলুন,

মানবতা, ধর্মাবতার আপনারা সবাই চুপ কেন? 

কোথায় গেল মুখের বুলি

বলুন, আমরা ভালোবেসে কি দোষ করেছি ?

চুপ থাকবেন না আপনারা। 


আমি মানি না সেই প্রথা, বিশ্বাসকে

যা মানুষকে আলাদা করে

মানুষের কাছ থেকে, দেয়াল তোলে বন্ধনে

ধিক্ এমন হীনমন্য বর্বরতাকে।


আমি কোন বিশেষ শ্রেণি, ধর্ম, প্রথার

বলি হতে চাই না

স্বাধীকার চাই, চাই ভালোবাসার নিশ্চিত অধিকার 

শুধু মানুষ হতে চাই।


আপনাদের বলছি, ধর্ম প্রণেতাগণ অহিংসার 

কথা 

বলে যান অকপটে জনে-জনে

প্রয়োজনে টুটি চাপুন স্বার্থাঘাত হলে; না'হয় আপনাদের লোকে মানবে কেন?


আপনাদের লজ্জা করে না ? আপনারা অকপটে 

সাম্যের নিঃস্বার্থের কথা বলেন! 

অসাম্প্রদায়িক বলেন নিজেদের, কোথায় থাকে তখন 

এসব ধর্ম-জাতকুলের বেষ্টনী?


বিশ্ব মানবাধিকার,

আপনি যে সমান অধিকার দিয়েছেন বিশ্বমানবতায়

তা লঙ্ঘিত হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে

আপনার বসবাস বই-পত্রের ভাঁজে ভাঁজে

সর্বত্র অমানবিক আস্ফালন বিস্তৃত। 



আজ যে মৌলবী, পুরোহিত সমস্বরে বলছেন জাত গেল, জাত গেল;

সেদিন কোথায় ছিল আপনাদের কট্টর মনোভাব 

যেদিন একসাথে গেয়েছিলাম জাতীয়সঙ্গীত।


আজ দোহাই দিচ্ছেন পিতামহের পালনকৃত তথাকথিত 

মনুষ্য সৃষ্ট কিছু নিয়ামবলীর

বার বার বলছেন, এসব চলবে না।

এ পাপ এ অন্যায়।


আমরা সেদিন দক্ষিণেশ্বর সদাজাগ্রৎ চক্ষুযুগলের সামনে 

বিয়ে করেছিলাম স্বকীয়- ইচ্ছায়।

বিশ্বাস করুন, প্রসাদে, ফুলেল অর্ঘ্যে আমরা

কোন ধর্ম খুঁজে পাইনি।


সেদিন একটি চায়েরভাঁড়ে চুমুক দিয়েছিলাম অবলীলায় 

আমার বা তার একবারও 

মনে হয়নি সে অন্য ধর্মের, অন্য দেশের

তারচোখে শুধু প্রেম দেখেছি। 


জানেন আপনারা, 

সে আমায় ঠাকুর কিনে দিয়েছিল সেদিন

শ্যামবাজার এসে কানে কানে

আমায় রুদ্র, হেলাল হাফিজ, নজরুল শুনিয়েছিলো 

বলেছিল তুমি আমার রাজলক্ষ্মী।



আজ আমার ঘর থেকে আমায় বলছে,

কুলোটা, চরিত্রহীনা, আরো কতো_কি

মেয়েটা জাত মেরেছে, মুখে চুনকালি দিয়েছে 

লাজ শরমের মাথা খেয়েছে। 


ধীরে ধীরে বলবে গোটাদেশ। এই ফিসফাস

চলতেই থাকবে দিক-দিগান্তর    

পুজা মন্ডপে, অন্নপ্রাশনে, বিয়েবাড়িতে শুধু আমায়

নিয়েই আলোচনা চলবে বহুকাল।


তারপর একদিন স্বীকৃতি মিলবে আমাদের এই...

নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আলোকরশ্মি বিশ্বচরাচর

না'হয় আরেকটি হিরোশিমা সংঘটিত হবে আরেকবার

তবু এ'বাধন ছিড়বে না।


আপনাদের কাছে অনুরোধ ; আপনারা বিশাল করুন 

আপনাদের গোড়ামীর কঠিন হৃদয়কে

মনুষত্যের পরাজয় সন্নিবেশিত হবে, কড়া নাড়বে 

সম্প্রদায় নামক কট্টর দরজায়।

 


আমি কমলিনী, আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড 

বিশ্বমোড়ল আপনাদের কাছে নালিশ

আপনারা দেখুন, সবার উপরে 

আজও মানুষ সত্য হয়নি!

কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা

 আনন্দ,কোথায় আছিস ? 



বন্ধু,আনন্দ এলো না?

কোথায় গেল আনন্দ ?

সে কী হাসপাতালের শয্যায় 

করোনায় ধুঁকছে ?


প্রকৃতির পরিক্রমায় শিউলি -

কাশ ফুটেছে ,দোলাচ্ছে মাথা

শরত বাতাসে,শিউলি ঝরে পড়েছে

গাছতলা আলো করে

কিন্তু সে সু-ঘ্রাণ কোথায় গেল ?

সে কী আনন্দ নেই বলে !


লোকাল ট্রেনের হকাররা ধূপবাতি বিক্রি করছে দুয়ারে দুয়ারে 

আর বাবুদেরকে জিজ্ঞেস করছে--

বাবু,লোকাল ট্রেন খুলবে কবে ?

বাবু ব্যাজার মুখে উত্তর দিচ্ছেন-

জানিনা ,যত্তসব---


ঢাক বাজছে প্যান্ডেলে -প্যান্ডেলে 

তবু সব যেন ম্লান -বড় ফাঁকা --

আনন্দ,এখনো শোভা পাচ্ছে 

মায়ের বেদিতে তোর আল্পনা আঁকা ।

কবি বন‍্যা গুপ্ত -এর একটি কবিতা

 দেহদান প্রাপ্তির আর এক নাম

 



রাতের তারারা আজ পরীদের

সাথে আলাপচারিতায় ব‍্যস্ত।

মায়াবী পূর্নিমা চকোরির হাতছানি

কস্তুরির ঘ্রাণে দিক্ -শূণ‍্য মৃগ

ছুটে যায় দিগন্তের পথে।


বৈচিত্র্যময় জীবনের

কত কাহিনীর চিত্রনাট্য 

পথের খাঁজে খাঁজে..

নীরবতার আচ্ছাদনে পড়ে

থাকে একান্তে..

প্রত্নতাত্ত্বিকের খননে

তার ভাষা উদ্ধার হয় না।


শৈশবের রঙিন প্রজাপতির দিন ;

কৈশোরে চাঁদের রাজ‍্যে ঘোড়সওয়ার ;

যৌবনে প্রেমের আলোয় ঘরকন‍্যা।

বাস্তব! কংক্রিটের মত নিরস...সম্পর্কের

প্রতি গ্রন্থিতে স্বার্থপরতার ধোঁয়া।


তবু, মায়াময় পৃথিবীর প্রতি 

তৃণ আমাকে দু হাত দিয়ে

জড়িয়ে ধরে.. প্রতিটি মহীরূহ

শিকড় বিছায়ে আকঁড়ে আছে

 স্মৃতির শিকল, ভালোবাসার 

স্নেহের বন্ধন অবিচ্ছেদ‍্য।


অনেক পাওয়ার মাঝে,কোথায়

যেন না পাওয়ার হিসাবের খাতাটা

খালি প'রে থাকল দীর্ঘশ্বাসের ঘরে।

 কর্তব্যের লম্বা মাইলস্টোন পেরিয়ে

 অবশেষে...

জীবনে শেষযাত্রার লগ্ন এলো।

.

মুক্তি ! খোলা আকাশে

বন্ধন ছিঁড়ে এগিয়ে চলা।

কান্নাভেজা পথ পেরিয়ে ...দূরে দূরান্তে

রেখে গেলাম কিছু আত্মীয়তার

সেতু....স্মৃতির কিছু ঝিলিক

কালের নিয়মে মুছে যাবে একদিন।


চোখ দুটৌ রেখে গেলাম 

চোখ দুটো আজও নূতনকে দেখে

তৃপ্ত হয়....কত স্বপ্ন চোখের মধ‍্যে

সাঁতার দেয় নোনা জলে।

নতুন মানুষের দৃষ্টিতে চোখ

আবার স্বপ্ন খুঁজবে অহরহ।


হৃদয়টা রেখে গেলাম..

ব‍্যথায় অভিমানে ভারাক্লান্ত ছিল।

কারোর হৃদয়ে প্রতিস্হাপিত হয়ে

সুখের সাগরে ভেসে মোহনায়

মিলিত হবে খুশির স্রোতে।


 প্রতিটি অঙ্গে আমার স্বপ্ন

বহু মানুষের মাঝে রয়ে গেলাম।

জন্মান্তর বিধাতার লিখন নয়

আমার দানের স্বেচ্ছাপত্র!

 নতুন জীবনের অনুপ্রবেশ।



নতুন প্রভাতের প্রভাতফেরির 

কুচকাওয়াজ বিউগলের ধ্বনি

আবার সেই পাখির কলকাকলি...

কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি?"

কবি মুহাম্মদ বায়েজিদ আলী -এর একটি কবিতা

 ক্ষোভ!



ক্ষোভ!

হস্ত উল্টানো হামার বেলা নেই।

উদাস কেন নিজ?

অন্যের তরে উল্টালাম কতই-বা আর—

পাতিলাম যত।

কবি অমিত পাল -এর একটি কবিতা

 সাধারণ মানুষ

               


বলি, আমি বামপন্থী নই---

নইকো আমি কংগ্রেসী।

আরে, আমি কোনো রাজনীতিবিদ নই

আমি মানুষ। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক নাবিক।


অন্যায় দেখি প্রতিদিন

কিন্তু প্রতিবাদে ভয় পাই,

পা বাড়াই গোপন পথে।

শুধু একার দ্বারা জয় সম্ভব নয়।

আমি চাকুরিহীন সাধারণ মানুষ,

নই কোনো অভিলাষী মন্ত্রী।

কবি উদয়ন চক্রবর্তী -এর একটি কবিতা

 জানি কিন্তু জানিনা 



নিজের কোথায় কোথায় দরজা বন্ধ 

করে রেখেছি কিছুইতে বলি না কাউকে 

সমস্ত শরীর বেয়ে নেবে যায় সরীসৃপ নিশ্বাস

ক্যাকটাসের নিজস্ব প্রতিরোধ দক্ষতায় শরীর 

সঞ্চয় করে নিজের চবুতরায় নিশ্চুপে আড়াল।

হাসি টা ধরে রেখেছি বিচার ব্যাবস্থায় চোখ বেধে 

রাখা দাড়ি পাল্লার মানবীর মতো নিথর নির্বাক

তবুও এখনো প্রজাপ্রতির সাথে সখ্য রেখে চলেছে 

কেউ কেউ তাই সূর্যাস্ত স্বার্থহীন অপেক্ষায় থাকে

এগিয়ে দিতে আর একটা দিনের আনন্দ ঢেউ 

শুকতারা মিটিমিটি হাসে সখ্য হীন সহবাসে 

আছি তাই এত কথা এত হাহুতাশ জ্বলন্ত আক্ষেপ 

জানি কিন্তু জানিনা অনন্তকাল থাকবো না কেউ।

কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা

 একটি কবিতা লিখবো বলে




একটা কবিতা লিখবো বলে নিঝুম রাতে আকাশের বুকে আলপনা আঁকলাম,

লিখতে পারলাম না।

মাটিতে ছড়ানো শিউলিগুলো তুলে

অন্ধকারে ঝর্ণার দিকে ছুঁড়ে দিলাম,

একটি কবিতা লিখবো বলে সংযমী থেকে

না ছুঁয়ে সর্বাঙ্গে জলের ধারা ছিটিয়ে দিয়েছি,কত প্রতিঘাত এসে ধুয়ে দিয়েছে আমায়,শিল্পরূপে কত সন্ধ্যেরা মেঘ এনে দিয়েছে আমার আঁচলে,

সমুদ্রের মত বিস্তারিত হয়ে আমার মন কতবার ছুটে গেছে সেই ভগ্নস্তূপের সামনে

আমার ঠোঁটের উপর থাকা রুদ্ধ শব্দের পাপড়িরা প্রাণপনে গাঁথতে চেয়েছে মালা

তবুও কবিতা লিখতে পারিনি।

সবে লিখতে গেছি, একটি মূর্তির স্বর্গীয় মুখ আমার সাথে বসবাস করতে চাইছে

তখনই ভেবেছি এই-সে, যার অলীক যোজন দূরত্বের জন্যই কবিতা লিখতে পারিনি।

আজ লিখবো।

মুখচ্ছবি ভাঙছে গড়ছে বিপাশা শতদ্রুর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে কিন্তু হৃদপিন্ড জেগে উঠে একটি কবিতা কিছুতেই লিখতে পারছি না।

কে যেন আমায় চিৎকার করে বলছে কি কবিতা লিখতে চাও কবি?

বললাম একটি ভালোবাসার কবিতা।

সমস্ত ব্যর্থতার ধ্বংস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে

সীমাহীন আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম

কি কবিতা লিখবো আমি ?

কি কবিতা?

ছোট্ট শিশুগুলি সমস্বরে চিৎকার করে বলে উঠলো

ভালোবাসার কবিতা

কবি একটি ভালোবাসার কবিতা লেখো।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 শরৎ মানে দুর্গা পুজো



বর্ষা রানী বিদায় নিল

   ভূমি সরস করে ।

শরৎ ঋতু বিরাজ করে

     নীল আকাশ জুড়ে।


পেঁজা-পেঁজা তুলোর মতো

  সাদা মেঘের রাশি।

যেথায় দাঁড়ায় সেথায় ঝরায়

         মুক্ত মনের হাসি।


শরৎ এলে কাশের সারি

  শুধুই মাথা নাড়ে।

শিউলিগুলি সাত সকালে

           গাছের তলে ঝড়ে।


শরৎ আনে জীমূতবাহন , বিশ্বকর্মা

        বোধন আর মহলয়া।

কৈলাস থেকে পাই আভাস

আসছেন মহাদেবের জায়া ।


হিসাব - নিকাশ কড়ায় - গন্ডায়

   দুইটি মাসের নিদান।

শারদা মায়ের ছুটির মেয়াদ

     চারটি দিনের বিধান।


শরৎ ঋতু নেশা জাগায়

    বাঙালির মনে - প্রাণে।

আলোক সজ্জায় সাজেন দশভূজা

        একটি বৎসর গুণে।


শরৎ তুমি মিষ্টি ভারী

   নানান গুণে ভরা।

শুভ্র আকাশ মলয় বাতাস

     ধন্য আজি ধরা।

কবি আশীষ কুন্ডু -এর একটি কবিতা

 কথা



কথার সুতোয় সেতু বেঁধে 

এগিয়ে যায় গুটিগুটি পায়ে 

ভালবাসা সিক্ততায়-

         সবুজ ঘাসের মাঠে! 

কথার সারণী বেয়ে নেমে আসে 

অনেক প্রাণের ঢল, মধ্যরাতে 

রাত পোহাতে --জাগরণী গানে! 

কথার পিঠোপিঠি রোজ 

নতুন শব্দবন্ধ মিছিলের মতো

স্লোগান তোলে --'জীবন জিন্দাবাদ'। 

তাই কথা শেষ হয় না, 

কিংবা শেষকথা হয় না-

শেষের কথার আগে।