Monday, November 29, 2021
লেখক শ্যামল চক্রবর্ত্তী -এর একটি গদ্য
দুষ্টু শংকর
শংকর শিয়ালদা স্টেশন থেকে প্রতিদিন ডানকুনি যাতায়াত করে। কয়েকজন ডেলি প্যাসেনজার। কাজের সূত্রে প্রতিদিন সকাল আটটা পাঁচ এর গাড়িতে যায়। লোকাল ট্রেন। সঙ্গে ওর অনেকগুলো বন্ধু বান্ধব। ট্রেনে প্রতিদিন যাকাতের পরিচিত বন্ধু বা গ্রুপ থাকে। একদিনের মজার ঘটনা।
একদিন দুপুর বেলা চারটে পাছে ডানকুনি লোকাল এর গ্রুপ ফিরছিল।
শংকর: অজয় আজ একটা মজার ঘটন ।
অজয়: কি ঘটনা রে?
শংকর: আমি আজকে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। তুই তো জানিস আমি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করি। আজ প্রচুর চিঠিপত্র ছিল বস্তা বস্তা চিঠি সরাতে হয়েছে। হাতটা ব্যথা কালরাত্রি ঠিক করে ঘুম হয়নি। আজ প্রচুর ক্লান্ত আর খুব ঘুম আসছে।
অজয় :তাহলে ঘুমাও, এটার কেমন কথা। এইটা আবার মজার ঘটনা নাকি?
শংকর: আরে না না আমি একটা ঘটনার, ঘটতে চলেছে দেখ না।
ওইযে ওইযে ওইযে দেখতে পাচ্ছিস যে ভদ্রলোক পাশে বসে আছে। আস্তে আস্তে!বলেছি আমি দক্ষিণেশ্বর চিনিনা দক্ষিণেশ্বর এলে আমাকে বলে দেবেন ,আমি নামবো।
ভদ্রলোক বললো হ্যাঁ দাদা দক্ষিণেশ্বরে এলে আমি বলে দেবো আপনি নেমে যাবেন।
অজয়: তুই মহা বজ্জাত তুই থাকিস ডানকুনিতে ও তোকে চেনে না ,তুই ওকে মিথ্যা কথা বললি।
আরে না না মা বলেছে প্রতিদিন তুই যখন দক্ষিণেশ্বরের পাশ দিয়ে আসবি মাকে প্রণাম করবি তোর ভালো হবে। তুই বল আমার কি অপরাধ। তুইতো বরণ করে নেবে যাবি। আমি যদি ঘুমিয়ে পরি। তাহলে আমাকে তো আর প্রণাম করা হবে না।
শংকর :ওই ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোথায় থাকেন উনি বললো আমি' জনাই' থাকি।
ইতিমধ্যে অজয় শংকর সমীর দিব্যেন্দু চারজন ছিল। দিব্যেন্দু ,সমীর ,অজয় যথাক্রমে উল্টোডাঙ্গা দমদম বড়নগর স্টেশনে নেমে গেলো।
এরইমধ্যে শংকর নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
এইবার বরনগর ছাড়ার পর যখন দক্ষিণেশ্বরে ট্রেন ঢুকছে,
জনাইয়ের ভদ্রলোক: ও দাদা ও দাদা আরে এত ঘুমালে হবে না। আরে আপনার স্টেশনে এসে গেল। আপনি তো নামবেন?
শংকর: (ধড়ফড়িয়ে ঘুম ভাঙলো) কি বলছেন কী বলছেন দাদা? ও দক্ষিণেশ্বর এসেছে?
জামাইয়ের ভদ্রলোক: আরে আপনার স্টেশন চলে গেলে পারবেন না।
শংকর: দাদা ঠিকই বলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
জনাইয়ের ভদ্রলোক: কি হলো না বলেন না? কি হলো উঠে দাঁড়িয়ে আপনি মন্দিরে প্রণাম করছেন এতবার।
শংকর: অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। কিছু মনে করবেন না ,আপনাকে মজা করেছিলাম। আসলে আমি আজ খুব ক্লান্ত কাল আমার ঠিক ঘুম হয়নি। আমি প্রতিদিন দুপুরবেলা যখন যাই মায়ের মন্দিরে প্রণাম করি। এইটা আমার জন্মদাত্রী মায়ের আদেশ। উনি আমায় বলে গেছেন যখনই তুই মায়ের দক্ষিণেশ্বর মায়ের মন্দিরের পাশ দিয়ে যাবি, প্রণাম করতে ভুলবি না।
আমি যদি ঘুমিয়ে পরি। তাহলে তোমাকে প্রণাম করা হবে না। ওই জন্য আপনাকে একটি মিথ্যা কথা বলেছিলাম দক্ষিণেশ্বর নামবো। এই প্রণাম করার জন্যই আপনাকে বলেছিলাম। আবার আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
জনাইয়ের ভদ্রলোক: দুনিয়ায় এমন লোক আপনার মতন দেখি নি মশাই। অসভ্য। খাবার আপনি হি হি করে হাসছে। ছি ছি এইটা আবার কেউ মজা করে।
শংকর: দাদা আমাকে মনে রাখবেন আমার নাম শংকর। অর্থাৎ আপনি ভোলেবাবা কি সাহায্য করলেন। আর আমাকে বিরক্ত করবেন না। ধন্যবাদ।
লেখক সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর একটি গদ্য
দর্পনে আত্মারাম
অন্তেষ্টিক্রিয়া শেষ করে ফিরেই , দাঁতে নিমপাতা কাটো, আগুনের তাপ নাও , লোহা স্পর্শ করে বিশুদ্ধ হও। জানা ই তো আছে নিশ্চিত , অতৃপ্ত আত্মা ঘুরঘুর করছে এখনো , এখানেই আসপাসে।
এইতো ছিল আপনজনের দেহ। ভালবাসার আকুল প্রত্যাশায় মোড়া। তাহলে !
সেই দেহস্থ আত্মা অতৃপ্ত , বোঝা গেল কীভাবে ?
এইতো কথার মতো কথা ।
আরে বাবা,, নিজের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি চলেনা। নিজের লোক। রক্তের সম্পর্ক। কোথায় ছিলে বাপধন ? কাজ গুছিয়ে সরে পরেছো। এখন রেড সিগনাল দপদপ করছে। অনুশোচনা,,,,?
পাপী শরীর । জ্ঞানপাপী মন।
কর্তব্যনিষ্ঠার পাঠ মুখস্থ , কন্ঠস্থ, মগজস্থ। শুধু পালনের অনিহা।
জীবিত কে ভয় নেই । সে বাৎসল্য বোধে ম্রিয়মাণ । কিন্তু , মৃত ভয়ানক । জীবিতের লৌকিক । মৃতের অলৌকিক ।
ক্ষমতা বড়ো লোভনীয়। শুধু নিজের জন্যে। অন্যের ক্ষমতা ঈর্ষনীয়। কর্তব্যপালন -ধর্ম , নিজের প্রতি । অন্যের প্রতি বর্জনীয়। অন্ধকার মনে সাপের বাসা।
দেহ পুড়লেই স্মৃতি বিলুপ্ত নয় । দেনা পাওনার হিসেব , চুটকি মেরে নিকেশ হয়ে যায়না ।
অশৌচ দেহ , অশৌচ মন।
ভেক ধরো, সাজো। নিখুঁত অভিনয়ে প্রমাণ করো তোমার কর্তব্যপরায়ণতা।
মালসায় হবিস্যি রাঁধো। মুখ ব্যাজার করে ঘি মাখিয়ে আলো চাল সেদ্ধ ঢোঁক গিলে নাও। মাত্র তো ক'টা দিন। খোঁচা খোঁচা চুল দাড়ি, হাঁটু পযন্ত ট্যাঁং টাঁং করা জ্যালজেলে ধুতি, উত্তরীয়র, গলায় ঝুলোনো লোহার চাবি। বগলে কুশাসন। লোকাচার শেষ । তারপর,,,
তন্ত্রধারকের দুর্বোধ্য দেবপুঁথি উচ্চারণ কে আরও দুর্বোধ্য ক'রে হয়ে যাও শুচি শুদ্ধ।
বিগ সাইজ পারশে মাছ সহযোগে সবান্ধবে সেরে ফ্যালো অন্তিম কর্ম।
আহা,, উনি পারসে বড্ড ভালবাসতেন ।
ব্যাস। নিশ্চিন্দি। আর ভয় নেই। ভাবনা নেই। ঝাড়া হাত পা। আত্মা তৃপ্ত । পরমাত্মার জয়জয়কার কেত্তন। বুক ফুলে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ।
কোথাও কী কোনও ফাঁক রয়ে গেল ? দ্যাখনদার লোকাচার কেরামতিতে ?
মন মোমবাতি বাতাসে দুলছে। সারারাত বিনিদ্র এপাশ ওপাশ ।
অর্ধাঙ্গিনীর শাস্ত্রসম্মত সাবধানী মাঝরাতের উপদেশ,,,,
অতো খুঁতখুঁত ক`রো না তো। বাৎসরিক কাজে পুষিয়ে দেওয়া যাবে খন। গয়া কিংবা হরিদ্বার। একটু বেড়ানোও হয়ে যাবে সেই ফাঁকে । এখন ঘুমোও দেখি । যথেষ্ট করেছো , আবার কী,,,,
মৃত বড়ো ভয়ংকর। জীবিত নিরীহ । বাৎসল্য বোধে টইটম্বুর ।
কোথায় যেন মন্দ বাতাস বইছে । কে যেন কু গাইছে। একটা খিকখিক তাচ্ছিল্য হাসির শব্দ । ফিসফিস করে , কানের পাশে পরিচিত কন্ঠ,,,, শ্রদ্ধাহীন শ্রাদ্ধ,,, হায়রে গর্ভজাত আদরের সন্তান আমার,,, হায়,,,
কে ! কে?,,, ও,, তু,,,মি,, বিশুদ্ধ আত্মা !
লেখক অরবিন্দ সরকার -এর একটি রম্য রচনা
রানীর দেশে
ইংরেজদের রানীর মত এক দেশের ,এক রাজ্যের রানী আছে। এখানে রানী সর্বময় কর্ত্রী।লণ্ডনের মত এখানেও রাস্তা জুড়ে লণ্ঠন জ্বলে। ওখানে টেমস্ নদী আর এখানে পর্বতের নদী। রানীমা ইচ্ছে বা মনে করলেই এখানকার আবহাওয়া লণ্ডনের মত হয়ে যাবে। তাঁর ইচ্ছা স্বর্গরাজ্য দখল।
মন্ত্রী পারিষদ জো হুকুম আজ্ঞাবহ রাজকর্মচারী।সব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তার প্রেরণার কথা উল্লেখ করেন।না করলেই তার ইস্তফা দফারফা মন্ত্রীত্বে। রাজ্যময় তার ছবিশ্রী।ছবি যেন ভালো হয় দেখতে নইলে ঐ দপ্তরের আধিকারীকদের দূরে বদলি। সংসারের মায়া ত্যাগ করে সুদূরে তার প্রাণান্তকর অবস্থা।
সরকারী পায়খানা তৈরীতে রানীমার প্রেরনা।ফিতে কেটে পায়খানার মধ্যে মন্ত্রীর বক্তব্য রানীর প্রেরনায় পায়খানা করলাম।
গণবিবাহ অনুষ্ঠান তাঁর প্রেরনায়। সিঁদুর দান,বাসরসজ্জা এগুলোও। সন্তানের দায় দায়িত্ব তাঁর প্রেরনায়।
প্রেমে উৎসাহিত করা তাঁর প্রেরনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় মদের দাম কমানো তারই প্রেরনা। কলকারখানা ধ্বংস ও বন্ধে তার প্রেরনা।
এরোপ্লেনে প্ল্যান পরিকল্পনা , অথবা পর্বতের মাথায় শৈলনিবাসে।
দুমদাম আদর সোহাগ যাকে তাকে! রন্ধন শিল্পে পারদর্শিনী। মসজিদে নামাজ, মন্দিরে পূজো,গীর্জায় বড়দিন ছটপূজোয় দণ্ডিকাটা পালনে জয়গান। ভুলভাল মন্ত্রে পূজো, নাটুকেপনার মধ্য দিয়ে বোরখা পড়ে আচার বিধি অনুকরন।
মেলা খেলা পূজোয় মোচ্ছবে ভর্তুকি, বামের দেনা ডানে বহে কতো তার কারচুপি।
পড়াশোনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি।পরে নির্দ্বিধায় ডক্টরেট ডিগ্রি ত্যাগ, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য। শিলান্যাস দেখে মনে হয় যেন শিলাবৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র শিবলিঙ্গের মতো বসানো।
বহু আত্মত্যাগ করে আজ তিনি চির কুমারী রানী।
রাজা বাদশাহের প্রচুর রানী থাকে।আর রানী হলে তো রাজা থাকবেই! রাজা আছে কি নাই সেটা একমাত্র ভজাই জানে। তবে সন্তানের ব্যবস্থা হয়ে গেছে তার প্রেরনায়।তার আজ্ঞাবহ পুলিশ প্রশাসন।আইন তার তালুর মধ্যে,তাই আইন নিজেই তৈরি করেন।পরের আইন থোরাই কেয়ার।খোদা বা ঈশ্বর পর্যন্ত তাকে ভয়ে ডরাই।
খেলা হবে-- এই খেলতে গিয়েই মিছেমিছি পায়ে লাগা, পরক্ষণেই পা ভেঙে চুরমার।প্লাস্টার নিয়েই গোটা রাজ্যে খেলা খেললেন। যেমন রেফারি বললেন গো-- ল! অমনি সঙ্গে সঙ্গে পা জোড়া লেগে গেলো। কিছু ঠেলাগাড়ির লোকের কর্মসংস্থান শিকেয় উঠলো।
বিধবাদের ভাতা, কুমার কুমারীদের প্রেমভাতা,সধবাদের হাতখরচ ভাতা। বেকারদের কাজ ভুলিয়ে মদভাতা।অর্থবল থাকলে তবেই চাকুরীর সুযোগ , টাকার পঁচাত্তর পঁচিশ ভাগ কাটমানিভাতা।
সবাই যদি চাকুরী করে তাহলে রাজ্যের উন্নয়নে মজুর কোথায় পাওয়া যাবে। গরীবদের সরকারি চাকুরী করতে নেই! বেসরকারি কাজও তো কাজ।রাখাল,মজুর,দাস দাসী তো লাগবে তাই এই ব্যবস্থা।আর মন্ত্রীরা চিরদিন থাকবে রানীর দলের দলদাস।
ঠিক কিনা? -- ঠিক ঠিক ঠিক!
প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি প্রবন্ধ
মৃত্যু আসলে দৃশ্যমান পটপরিবর্তন
মৃত্যু কোনো বেদনা নয়, পরিপূর্ণ বিশ্রাম। কর্মক্ষম মানুষ অদ্ভুতভাবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে অবধি নির্ঝঞ্ঝাট কর্মজীবন করতে ভালোবাসে। ইন্দ্রিয় সুখ, ভোগ- লালসা সবই হয় লীলায়িত মধুর।
শৈশব, কৌমার, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব,বার্দ্ধক্য এবং জরা সবই হোলো জীবনের ঐ ক্রমবিকাশের বিবর্তন। মৃত্যু তো আর একধাপ উন্নত পর্ব মাত্র।
ক্রমোন্নতির পথে এক শরীর অন্য শরীরের খোঁজে প্রস্তুতি নিতে গিয়েই আনে " মৃত্যু" নামক অহংকারহীন বিশ্রাম। তাই হয় দেহান্তর।
অর্থাৎ দেহের কর্মক্ষমতা কমলেই দেহধারী জীব অন্য দেহের সন্ধান করে। যেমন কোনও কিছু জড় বস্তুও যখন আর সক্রিয় বা সচল থাকে না আমরা তাকে বদল করি নির্দ্ধিধায়। এ- ও সেই রকমই দেহের বদল দেহ নিজেই করে। আমরা যার নাম দিয়েছি-- মৃত্যু।
তাই না! আমাদের ' শরীরের' বৃদ্ধি যখন ক্রমশঃ হতে থাকে আমরা মানুষরা কত আনন্দ পাই; বুদ্ধির বিকাশেও আমরা নত না হয়ে উন্নত বুঝি- তেমনি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইন্দ্রিয় সকল বিশ্রাম পেতেই দেহান্তরে যেতে চায়। এটাই তো আমাদের মৃত্যু ভয়।
কারণ, এই মুহূর্তে যাকে জীবন্ত দেখলাম, কথা বললাম, স্পর্শ সুখ অনুভব করলাম সেই উচ্ছ্বাস আর পাচ্ছিনা বা চিরতরে হারিয়ে গেল। অতএব, জাগতিক দুঃখ, মায়া আমাদেরকে নাস্তানাবুদ করতে শুরু করলো। কারোর মৃত্যু মানে শেষ বা সমাপ্তি নয়--+! নির্ঝঞ্ঝাট পরিবর্তন।
আমরা পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী। ভেবে দেখলে দেখা যাবে মূর্তি আরাধনা শেষে যখন তাকে( প্রতিমা) নিরঞ্জন করি তখন কি আমাদের সমপরিমাণ দুঃখ হয়!? বরং চিৎকার করে বলিনা-- " আবার হবে আসছে বছর"? কোনও দুঃখ না করেই প্রতি মাকে বিসর্জিত করি বরং। এ- ও তো সেই প্রতিমা। মৃত্যু তাকে মুক্তি দিল। অতএব সুষ্ঠুভাবে সদাচারে তাকে বর্জন করাই শ্রেয় নয় কি!?
" ধী' ব্যক্তি মানে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা হাসি কান্না বর্জন করে নতুন পর্বে প্রবেশের নতুন সংগা খোঁজেন। কোনও ঋতু যেমন চিরস্থায়ী নয়--- পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী তেমনই জীবনের ক্রমবিকাশে মৃত্য ও হোলো এখানে চরমতম বিবর্তন। কৌমার, যৌবন ফেলে প্রৌঢ়ত্ব ও বার্দ্ধক্য শেষে দেহান্তরে যাবার এক শ্রেষ্ঠতম পর্ব। তাই মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে, দুঃখ না করে যে বা যাঁরা বুঝতে চেষ্টা করেন তার বা তাঁদের দুঃখ ও কম।
অবশ্য অকালমৃত্যু বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুটা ঐ অসাবধানে হাত থেকে পড়ে কাঁচের কোনো শৌখিন বস্তুর ভেঙে যাবার মতই। যদিও কাঁচের বস্তুটি আবার সংগ্রহ করা যায় কিন্ত্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা অকালে ঝরে যাওয়া মানুষ কে আর ফিরে পাবনা ভেবে মায়া বদ্ধ মানুষ কেঁদে ভাসায়। । যার অন্তিম ফল-- শূন্য। প্রশ্ন সংশয়াতীত নয়-- তবুও--!! শোক পরিহর্তব্য।।
শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই শিশুটির জীবন পরিধি ক্রমশঃ ক্ষয় হতে থাকে। যেমন একটা প্রভাত শেষে একটা নতুন দিন ; কিন্তু কেউ কি ভাবি ঘড়ির কাঁটারয মতোই সে পলে পলে সেকেন্ডে সেকেন্ডে শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। আর একটা নতুন প্রভাত আসবে তাই।
-- জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে এই তত্ত্ব টাও খেয়াল করলে বোঝা যাবে মৃত্যু ভয়ংকর নয়। মৃত্যু জীবনের যবনিকায় শেষ পর্ব মাত্র।
মৃত্যু আসলে--
শরৎকালীন শিশিরের মতোই
দৃশ্যমান পটপরিবর্তন.......
লেখিকা উম্মেসা খাতুন -এর একটি গল্প
মৌনালির মনে দুঃখ
স্বর্গীয়া ননীবালা দেবী অমিতের মা। তিনি কাঙালদের খুব ভালোবাসতেন। নিজে না খেয়ে কাঙালদের খাওয়াতেন।
তাঁর আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে অমিত তাই একটা কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছে। প্রায় শ' খানেক কাঙাল ভোজ খেতে এসেছে। তাদের সাথে তাদের ছোট ছোট বাচ্চারাও এসেছে।
অমিত নিজ হাতে তাদের খাওয়াচ্ছে। আর মৌনালি গেটের কাছে একটা টুলে বসে রেজগি পয়সা বিতরণ করছে।
হ্যাঁ, খাওয়াতে খাওয়াতে অমিত একটা বাচ্চার খাওয়া দেখে আশ্চর্য হল। বাচ্চাটার গায়ে কোন কাপড় নেই। পরনে শুধু ছেঁড়া একটা হাফ প্যান্ট রয়েছে।
বাচ্চাটা কী সুন্দর করে খাচ্ছে! কেউ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে না। বা খাওয়ার জন্য কেউ সাধাসাধি করছে না। আপন ইচ্ছায় সে নিজ হাতে কত সুন্দর করে খাচ্ছে, ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত মেখে----
অথচ এই বাচ্চাটার মতন অমিতের নিজের একটা বাচ্চা রয়েছে। সে এখন ঘুমাচ্ছে।
ফ্রিজে তার জন্য কত রকমের খাবার রাখা রয়েছে। তার যখন যেটা ইচ্ছা করবে সেটা সে খাবে বলে। কিন্তু সে সব সে কিছুই খায় না। ভাত তরকারি তো মুখেই করে না। যদিওবা করে ওই দু-একবার। তারপর খুব ঝাল বলে অমনি জল চায়। পরে আর একবারও মুখে করে না। ওকে কি আর খাবার খাওয়া বলে? তাও আবার খাওয়ানোর সময় মোবাইল, খেলনা, পাখি ও আরও কত রকমের কত জিনিস দেখানোর পর। না হলে যে সেটুকুও খাবে না।
খাবার খায় না বলে ডাক্তার দেখানোও কামাই নেই। এই তো সেদিনই পাঁচশো টাকা ভিজিটের একটা ডাক্তার দেখিয়ে আনল। ডাক্তার দেড় হাজার টাকার ওষুধ দিয়েছে। সব ওষুধ খাওয়াচ্ছে তবু কোন কাজ হচ্ছে না, ভালো করে খাবার খাচ্ছে না। আর এই বাচ্চাটা?
রাত্রে অমিত মৌনালিকে কথাটা যেই বলে অমনি তার কান্না চলে আসে। ঠাকুর তাদের বাচ্চাটাকে যদি ভালো করে খাবার খাওয়া ধরাত!
হায়! মৌনালির মনে কী দুঃখ!
লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প
রুমী
করালীবাবু নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসেন কুকুরটিকে৷ নাম তার রুমী৷ খাঁটি দেশী কুকুর৷ বাজার করতে গিয়ে এই কুকুরটিকে কিনে বাড়ি ফেরেন৷ দাম তিন হাজার৷
করালীবাবুর বড় মায়া পরে গিয়েছিল কুকুরটির প্রতি৷ তাই করালীবাবুর স্ত্রী রমাদেবী কুকুরটি সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেই করালীবাবু বলে ওঠেন---- 'সখের দাম লাখ টাকা৷'
হঠাৎ একদিন করালীবাবুর বাড়িতে ডাকাত পড়ে৷ কিন্তু সজাগ রুমী ডাকাতদের বাড়িতে ঢুকতেই দেয়নি৷ বাঘের মতো চেহারা হয়েছে রুমীর, দেখলেই গা ছমছম করে৷ ব্যস এরপর থেকেই করালীবাবুর স্ত্রীর কাছে রুমী সন্তনের সমান৷
বহু বছর হল করালীবাবুর ছেলে বিয়েথাওয়া করে বউ-ছেলে নিয়ে বিদেশে চলে গেছে৷ এখন এই রুমীই করালীবাবু ও রমাদেবীর একমাত্র কাছের সন্তান৷
লেখক সিদ্ধার্থ সিংহ -এর দুটি গল্প
বিষ
গেটের মুখে জটলা। একটি মেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখল মৃত স্বামীর মুখ থেকে গাঁজলা বেরোচ্ছে। মাথার কাছে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। সেই স্ত্রীকে মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, আপনার স্বামী কী করে মারা গেছেন?
স্ত্রী বলল, বিষ খেয়ে।
মেয়েটি বলল, কিন্তু ওনার সারা গায়ে তো আঘাতের চিহ্ন দেখছি!
স্ত্রী বলল, বিষ খেতে চাইছিল না তো, তাই...
--------------------------
যাচ্চলে
রেস্টুরেন্টের এ টেবিলে ও টেবিলে প্রেমিকদের মুখোমুখি বসেছিল বিভিন্ন মেয়েরা। একটি ছেলে মোবাইলে বেশ জোরে জোরেই বলতে বলতে ঢুকল, তোর প্রেমিকাকে তো দেখছি এখানে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে বসে আছে...
তার কথা শেষ হল কি হল না, দেখা গেল, যে মেয়েগুলো ওই ছেলেদের সঙ্গে বসেছিল, তারা যে যেভাবে পারল পড়ি কি মড়ি করে সোজা রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেল।
এই দৃশ্য দেখে ছেলেটি শুধু বলল, যাচ্চলে!
লেখক আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস -এর একটি গল্প
অন্ধ সমাজ
।। এক।।
প্রতিদিন সকাল পাঁচটার মধ্যে ঘুম ভাঙে নিহারুলের। আজকেও তার ব্যতিক্রম হল না। যদিও আজ তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা ছিল। শুতে যে তার অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। ফলে নিহারুল ধরেই নিয়েছিল যে, আজ তার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হতে পারে। ও আজ তার হাঁটতে বেরনো নাও হতে পারে। তারপর নিহারুল মনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিয়েছিল যে, একটা দিন না হাঁটলে এমন কোন অসুবিধা বা ক্ষতি হবে না। আজ তিন বছর ধরে সে তো হাঁটছে। কোন দিন হাঁটা কামাই নেই। লিভারের চর্বি কাটানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শে নিহারুল কাজটা করে ভালো আছে।
হ্যাঁ, ঘুম থেকে উঠে নিহারুল যখন হাঁটতে বেরনোর জন্য তৈরি হল অমনি তার ফোনটা বেজে উঠল। ছায়ার নম্বর থেকে ফোন। তবে কি ছায়ার লেবার পেন উঠেছে? সেটা জানাতে ফোন করেছে? কাল বিকালেই তো ছায়ার সঙ্গে তার ফোনে অনেকক্ষণ ধরে কথা হল এবং ডেট এর কথা জিজ্ঞেস করলে আগামী বাইশ তারিখের কথা বলল। আজ তো সবে বারো তারিখ হল। বাইশ তারিখ আসতে এখনও দেরি আছে। তাহলে কি অন্য কোন সমস্যা হল? ভাবতে ভাবতে নিহারুল ফোনটা ধরল," হ্যালো!"
" কে, ভাই?"
" কে, সজল?"
" হ্যাঁ।"
" কী হল, বল।"
" বুবুর লেবার পেন উঠেছে।"
" কী!" নিহারুল চমকে উঠল।
" হ্যাঁ। বুবুকে নিয়ে আব্বা-মা হাসপাতালে যাচ্ছে।"
নিহারুল এখন তার নিজের বাড়িতে রয়েছে। যে বাড়িতে তার বাবা বা ভাইদের কারও কোন অংশ নেই। নিজের টাকায় সে বাড়ি করেছে। বছর সাতেক আগে সে একটা লটারি জিতেছিল। প্রথম পুরস্কার, এক কোটি টাকা। ওই টাকায় জায়গা কিনে সে বাড়ি করেছে। দেখবার মতো খুব সুন্দর একটা বাড়ি। তার বাবার অনেক বিষয় সম্পত্তি থাকলেও ওই বাড়ি নেই। শুধু তার বাবার কেন? তার ভাইদেরও নেই। ফলে নিহারুল এখন খুব সুখী। কিন্তু এক সময় সে খুব দুঃখী ছিল। তার প্রথম কন্যা সন্তান 'মায়া' জন্ম নেওয়ার পর।
।। দুই।।
নিহারুলরা মোট পাঁচ ভাই, বোন নেই। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে নিহারুল হল প্রথম। কিন্তু বিয়ে করে সে সব শেষে। তার সব ভাইদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। তার সব শেষে বিয়ে করারও উপযুক্ত একটা কারণ আছে। সেটা হল, তারা কয়েক জন বন্ধু মিলে একটা স্কুল চালাত, জুনিয়র হাইস্কুল। তাদের আশা ছিল স্কুলটা হয়ে যাবে এবং সরকার তাদের কাজে খুশি হয়ে বেতন দেবে। তারপর বিয়ে করবে। করে সুখী হবে। কিন্তু বছর দশেক চালিয়েও স্কুলটা হল না। ফলে বিয়ে করতে তার দেরি হয়ে গেল।
নিহারুল যখন বিয়ে করে তার ভাইয়েরা তখন কে দুটো কে তিনটে করে ছেলের বাবা হয়ে গেছে। নিহারুল ছাড়া তারা যে কেউই লেখাপড়া করে নি। সব ক অক্ষর গো-মাংস। সুতরাং তারা কেউই বেকারের জ্বালা বোঝে নি। হাফ প্যান্ট পরা ছেড়ে যেই লুঙ্গি পরা শিখেছে অমনি বিয়ে করে নিয়েছে। যে কারণে নিহারুলের মতো চাকরির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় নি। তাও আবার নিজেরা পছন্দ করে। কিন্তু নিহারুল বিয়ে করে তার বাবার পছন্দ করা মেয়েকে। তারপরও বছর খানেক বাদে ছায়ার পেটে যখন বাচ্চা আসে তার বাবা সামির সেখ তাকে বলে," বৌমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ওয়াশ করিয়ে আনছিস না কেন?"
নিহারুল বাবার এহেন কথার তাৎপর্য কী ঠিক বুঝতে পারে না। তাই, সে জিজ্ঞেস করে," কীসের জন্য ওয়াশ করিয়ে আনতে বলছেন?"
" ও, এখনও বুঝতে পারিস নি না!"
" না, বুঝিয়ে বলুন!"
সামির সেখ বুঝিয়ে বলে," বৌমার পেটে কন্যা সন্তান রয়েছে। কন্যা সন্তান নেওয়া যাবে না। তাই, ওয়াশ করিয়ে আনতে বলছি।"
নিহারুল এর কী উত্তর দেবে ভেবে পায় না। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সে জিজ্ঞেস করে," আপনাকে কে বলেছে?"
সামির সেখ হাসে," আমাকে কে বলবে, পেট দেখে আমি বুঝতে পারছি না!"
" পেট দেখে কী করে বুঝতে পারছেন? ডাক্তার বাবুরাই তো বুঝতে পারেন না।"
সামির সেখ এর উত্তরে তখন বলে," কন্যা সন্তান হলে পেট বেশি মোটা আর চওড়া হয়। দেখছিস না, বৌমার পেট কত মোটা আর চওড়া!"
" কিন্তু কন্যা সন্তান থাকেও যদি তাকে নষ্ট করতে হবে কেন?"
" তারও কারণ আছে।"
" কী কারণ আছে?"
" কারণটা হল, আমি কন্যা সন্তান পছন্দ করি না।"
" সে কী! পছন্দ করেন না কেন?"
" পছন্দ করি না কারণ, সম্পত্তির ভাগ বেরিয়ে যাবে। আর তাছাড়া, মেয়েরা হল জঞ্জাল আর আবর্জনার স্তূপ। এরা বাপের কোন কাজে লাগে না, কোন উপকারে আসে না। স্বামী-সংসার পেয়ে গেলেই পর হয়ে যায়। এমনি তো আর আগে যুগে মানুষ কন্যা সন্তান হত্যা করত না! মেরে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখত না! এই সব কারণের জন্য।"
শুনে নিহারুলের গা রাগে রি রি করতে থাকে, সামির সেখের টোল পড়া দু' গালে ঠাস ঠাস করে দু' চড় বসিয়ে দিতে তার ইচ্ছে করে। কিন্তু তা পারে না। বাবা বলে বেঁচে যায়। কিন্তু বলতে ছাড়ে না," মেয়ে হয় আমার হবে। তাতে আপনার কী? আপনার মনে এত বিষ ধরল কেন, শুনি!"
" শুনতেই যখন চাস, শোন তাহলে।" সামির সেখ বলে," উত্তরাধিকার সূত্রে তুই আমার কোন সম্পত্তির ভাগ পাবি না, মানে আমি তোকে আমার সম্পত্তির ভাগ দেবো না। আমার সব কিছু থেকে তোকে বঞ্চিত করব। কেননা, তোকে ভাগ দিলে তোর মেয়ে ভাগ পেয়ে যাবে। আমি সেটা কখনোই চাই না, হতে দেবো না।"
সামির সেখের মুখের উপর নিহারুল তখন বলে," আপনার মতো চিন্তার মানুষ পৃথিবীতে অনেক আছে। আগেও ছিল এবং এখনও আছে। তবে তাদের জন্য আমার কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় আপনার জন্য। কারণ, আপনি আমার বাবা। একটা জঞ্জাল লোকের আমি ছেলে। নিজের প্রতি এর জন্য খুব ঘৃণাও হয়।"
" কী বললি, আমি জঞ্জাল!" সামির সেখ চেঁচিয়ে ওঠে।
" শুধু জঞ্জাল হলে তো ভালোই হতো, ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যেত। আপনি তার চাইতেও বেশি।"
" মুখ সামলে কথা বলবি, হারামজাদা!" সামির সেখ চিৎকার করে।
" আপনিও মুখ সামলে কথা বলবেন।" তারপর নিহারুল নিজে থেকেই থেমে যায়। কারণ, সে বুঝতে পারে যে, একটা মূর্খ লোকের সাথে তার তর্ক করা ঠিক হচ্ছে না, সে ভুল করছে। সামির সেখ যদিও মূর্খ নয়, শিক্ষিত। আগেকার উচ্চমাধ্যমিক পাশ। সে সময় সে বেশ কয়েকটা চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার দরুন চাকরি সে করে নি। তবু অরুচিকর ব্যবহারের জন্য নিহারুলের চোখে সে একটা মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়। এতদিন সে তার বাবাকে একটা ভদ্র, শিক্ষিত এবং মার্জিত রুচির মানুষ বলে জেনে এলেও সে যে আসলে একটা নীচ মনের মানুষ নিহারুলের কাছে তখন সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং পরে ছায়ার পেট থেকে যখন খুব সুন্দর একটা ফুটফুটে কন্যা শিশু সন্তান জন্ম নেয় নিহারুল খুব খুব খুশি হয়। মুখটা তার কী মায়াময়! ফলে নিহারুল তক্ষুনি তার নাম রেখে দেয় 'মায়া'।
কিন্তু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সামির সেখ তাকে বলে," কী রে, আমার কথা ঠিক হল? আমি বলেছিলাম না মেয়ে হবে, হল?"
" হল হল, তাতে আপনার কী? মেয়ে হয়েছে আমার হয়েছে। আমার মেয়ে ব্যাপারে আপনি একদম কোন কথা বলবেন না।"
" কথা বলব না মানে? একশো বার বলব। কারণ, যে বাড়িটায় তুই বাস করছিস ওটা আমার বাড়ি। বাপের বাড়িতে থাকতে হলে বাপের কথা শুনতে হবে, বাপের আইন মানতে হবে। তোর বউকে এক্ষুনি তোর তালাক দিতে হবে। না হলে ও বছর বছর শুধু কন্যা সন্তানই জন্ম দেবে। আর তোর যে কন্যা সন্তানটি হয়েছে তাকে মেরে ফেলতে হবে। কীভাবে মেরে ফেলতে হবে আমি তোকে দেখাচ্ছি। দুই হাতে এই ভাবে গলাটা টিপে ধরে-----" সামির সেখ দুই হাতে নিজের গলাটা আলতো ভাবে টিপে ধরে দেখায়।
নিহারুল গর্জে ওঠে," খবরদার! দ্বিতীয়বার আর ও কথা একদম উচ্চারণ করবেন না। যদি করেন, বাবা-ছেলের সম্পর্কের কথা তাহলে ভুলে যেতে বাধ্য হব।"
" কী! আমাকে চোখ রাঙানো! এই মুহূর্তে তুই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা কুলাঙ্গার, এই মুহূর্তে তুই আমার বাড়ি থেকে-----"
" হ্যাঁ, তাই যাব। থাকব না আপনার বাড়ি।"
" হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই যা। তোর মতন অবাধ্য ছেলের আমার দরকার নেই। আমার আরও ছেলে আছে তারা থাকবে। আমার বিষয় সম্পত্তি সব তাদের নামে লিখে দেব।"
" তাই দিবেন। আমার দরকার নেই আপনার পাপের ওই বিষয় সম্পত্তির।"
ব্যস, তারপরই সামির সেখ নিহারুলের ঘরে এই মোটা একটা তালা ঝুলিয়ে দেয়। নিহারুল তার তীব্র প্রতিবাদ করতে যায়। কিন্তু তার বাপ-ভাইয়েরা সব এক দিকে হয়ে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং তাকে সারা জীবনের মতো বাড়ি থেকে উৎখাত করে।
।।তিন।।
নিহারুল দেশে থাকে না। মনের দুঃখে চোখের জল ফেলতে ফেলতে ছায়াকে তার বাপের বাড়ি রেখে কলকাতা চলে যায়। অনেক ঘুরে ঘুরে একটা রেস্তোরাঁয় কাজ পায়। চেয়ার, টেবিল পরিষ্কার করা ও থালাবাসন ধোয়ার কাজ। যা তার যোগ্যতার চাইতে অনেক ছোট। তবু মাইনে খুব কম। কিন্তু খাটুনি বেশি। এই জন্য কিছু দিন করার পর কাজটা নিহারুল ছেড়ে দেয়। কিন্তু দেশে ফিরে আসে না। দেশে ফিরে এসে কী করবে? লোকের জমিতে মুনিশ খাটা ছাড়া। মুনিশ খাটা কাজটা আবার নিহারুলের কোন দিনই পছন্দ নয়। তার থেকে ব্যবসা করা ভালো। যে কোন ব্যবসা। হোক তা ছোট। তাতে শরীর, মন এবং স্বাস্থ্য সব কিছু ভালো থাকে। পাঁচটা মানুষের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়। অতএব নিহারুল শিয়ালদহ স্টেশনে 'লেবু চা' বিক্রি করা শুরু করে। প্রথম প্রথম কয়েক দিন একটু লজ্জা লাগলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। সারাদিন কেটলি হাতে 'লেবু চা লেবু চা' আর রাতের বেলায় ফুটপাতে ঘুম।
এই ভাবে চা বিক্রি করতে করতে একদিন এক টিকিট বিক্রেতার সাথে নিহারুলের আলাপ হয়। নাম তার দীপ। বিধান নগরে বাড়ি। বিবাহিত। তারও খুব কষ্টের সংসার। ছোট একটা কুঁড়ে ঘরে তারা তিনটে প্রাণী বাস করে। তারা স্বামী-স্ত্রী দু' জন, আর তাদের একমাত্র মেয়ে। টিকিট বিক্রি করে তার সংসার চলে। তারও বাবার অবস্থা ভালো। কিন্তু বাবার অমতে নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে বলে তার এই হাল। নিহারুলও তার লাইফ হিস্ট্রিটা শোনায়। শোনার পর দীপ বলে," তোমার যে আমার চাইতেও বেশি দুঃখ, বেশি কষ্ট গো!" তারপর বলে," ও নিয়ে কোন দুঃখ বা চিন্তা করো না,একদিন দেখবে তুমিই সবার চাইতে ভালো থাকবে, জীবনে প্রচুর উন্নতি করবে। কীভাবে করবে বলতে পারব না, কিন্তু করবে।"
" তোমার কথা যেন সত্যি হয় দীপ, তোমার কথা যেন সত্যি হয়।" বলতে বলতে নিহারুল কেঁদে ফেলে।
দীপ নিহারুলের পিঠ চাপড়ে বলে," কাঁদে না,হবে।"
নিহারুল তারপর আর কাঁদে না। বলে," আমি স্বপ্নেও কোন দিন ভাবি নি যে, আমার মতো ছেলের এই হাল হবে।"
দীপ সান্ত্বনা দেয়," তুমি জানো না, ভালো ছেলেদের কপালে চিরকাল কষ্ট বেশি। সেটা ঘরে হোক অথবা বাইরে। তবে ভালো ছেলেদের জন্য ভগবান ভাবেন। নিশ্চয়ই তোমার জন্যও তিনি ভাববেন।"
নিহারুল বলে," তোমার সঙ্গে কথা বলে আমার বুকটা অনেক খানি হালকা হল, দীপ। মনের দুঃখ অনেক খানি লাঘব হল। বল, তুমি কী খাবে?"
দীপ বলে," একটু জল তেষ্টা পেয়েছে অনেকক্ষণ হল। একটু জল খাবো। খাবার জল আছে নাকি?"
" আছে।"
" একটু জল দাও তাহলে, খাই।"
নিহারুল একটা বিস্কুট বের করে দেয়। বিস্কুটটা দেখে দীপ বলে," আমি তো শুধু একটু জল চাইলাম। বিস্কুট কেন?"
নিহারুল বলে," কখন খেয়ে বেরিয়েছ তার ঠিক নেই, বিস্কুটটা খেয়ে জল খাও।"
দীপ নিহারুলের বলার মধ্যে এতটাই আন্তরিকতা দেখে যে, বিস্কুটটা না খেয়ে সে পারে না। তারপর এক কাপ চা খেয়ে নিহারুলকে বলে," তোমার চা, বিস্কুটের দাম কত দিতে হবে বল।"
নিহারুল বলে," দাম দিতে হবে না, আমি তোমার কাছে দাম নেব না। আমি তোমাকে এমনি খাওয়ালাম।"
দীপ তা শোনে না। বলে," এমনি খাওয়া হয়? এটা তোমার ব্যবসা না! বল, কত দিতে হবে।"
না, নিহারুল বলে না। দীপ তখন মনে মনে ঠিক করে যে, নিহারুলকে সে একটা টিকিট দেবে। ও অনেক টিকিটের ভিতর থেকে সে একটা টিকিট বের করে দেয়," এই টিকিটটা তুমি রাখো, নিহারুল। কপাল ভালো হলে প্রথম পুরস্কার এক কোটি টাকা পেয়ে যেতে পারো। আর হ্যাঁ, আমি এখন কয়েক দিন আসব না। কাল আনন্দবাজারে তুমি দেখে নিও।"
" আসবে না কেন?"
" কয়েক দিনের জন্য শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যাব।"
" ও, আচ্ছা। কিন্তু দীপ?"
" বল।"
" আমি টিকিট কাটি না যে।"
দীপ বলে," তুমি তো কাটছো না, আমি তোমাকে নিজে থেকে দিচ্ছি। রাখো।"
নিহারুল এবার টিকিটটা হাসি মুখে গ্রহণ করে এবং পরের দিন দীপের কথা মতো টিকিটটা সে আনন্দবাজারে মিলিয়ে দেখে, প্রথম পুরস্কার এক কোটি টাকা তার নম্বরে লেগে গেছে। নিহারুল অমনি আনন্দে কেঁদে ফেলে। তারপর সে চা বিক্রি করা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসে। এসে রোডের ধারে একটা জায়গা কিনে বাড়িটা বানিয়ে ফেলে। পরে নিহারুল দীপের খোঁজে অনেক বার কলকাতা গিয়েছে, স্টেশনে অনেক খোঁজা খুঁজি করেছে, অন্য টিকিট বিক্রেতাদের ধরে ধরে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু দীপের সঙ্গে তার আর কোন দিন দেখা হয় নি। কেউ তার কথা বলতে পারে নি, কেউ না।
।।চার।।
ছায়া নিহারুলের এই বাড়িতেই ছিল। মাস খানেক হল সে ওখানে গিয়েছে। তার বাবার বাড়ি। তার বাবা এসে নিয়ে গিয়েছে। মায়ার বেলাতেও সে এই সময় ওখানে ছিল। সেবারও তার বাবা এসে নিয়ে গিয়েছিল।
।।পাঁচ।।
সজলের সঙ্গে কথা বলার পর নিহারুলের আর হাঁটতে বেরনো হল না। তক্ষুনি সে বেরিয়ে পড়ল। তাকে যে এক্ষুনি হাসপাতালে ছায়ার কাছে পৌঁছাতে হবে। ছায়া নিশ্চয়ই তাকে খুব মিস করছে। এই সময় মেয়েরা প্রিয় জনকে খুব মিস করে।
হাসপাতালে কদম গাছতলায় ছায়ার মা-বাবা বসে রয়েছে। নিহারুল হাসপাতালে পৌঁছে তাদের দেখে কাছে এগিয়ে গেল," আপনারা বাইরে কেন?"
ছায়ার বাবা বলল," ভিতরে বাড়ির লোক থাকতে দিল না, বের করে দিল। তাই, বাইরে এসে বসলাম।"
" আর ছায়া?"
" ছায়া ভিতরে আছে।"
" বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়েছে?"
" এখনও হয় নি। হলে মাইকে ডাকবে বলেছে।"
" ডাকেনি?"
" না।"
" সে কী!" নিহারুলের চিন্তা হল।
ছায়ার মা তখন বলল," আমার খুব ভয় করছে।"
নিহারুল জিজ্ঞেস করল," কেন?"
" ছায়া ভর্তি হওয়ার পর দুটো মেয়ে প্রেসার বেড়ে খিঁচুনি হয়ে মারা গেল। ও দুটো বাচ্চা হয়ে হয়ে। ছায়ার কপালে যে কী আছে এক মাত্র খোদাই জানে!"
নিহারুলের চোখে, মুখে এতক্ষণ আতঙ্কের কোন ছাপ ছিল না। সে এতক্ষণ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ছায়ার মায়ের মুখে কথাটা শোনার পর সে কেমন হয়ে গেল। গত মাসে লাস্ট চেক আপে গিয়ে ডাক্তার তার ব্লাড প্রেসার হাই বলেছিলেন। কাঁচা নুন, ঝাল,মশলা ও চর্বি জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করেছিলেন। সুতরাং নিহারুলের চিন্তা বেড়ে গেল। তার কিছু হয়ে গেল না তো? তাহলে সে যে বড় একা হয়ে যাবে, বড় একা। তাদের মায়াও যে মা হারা হয়ে যাবে। তার মায়ের অভাব সে কি পূরণ করতে পারবে? পৃথিবীতে সন্তানের কাছে বাবার চেয়ে মা-ই হল বেশি আপন, বেশি প্রিয়। সে তাকে মানুষ করবে কীভাবে? মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কষ্টে যে তার বুক ফেটে যাবে।...ভাবতে ভাবতে নিহারুলের চোখে জল চলে এল এবং খানিক বাদে ভেজা চোখ দুটো রগড়ে নিয়ে সে বলল," মায়া কোথায়?"
" মায়া বাড়িতে। ওর খালার কাছে রেখে এসেছি।"
মায়ার এই খালার নাম হল সাকিনা। তার বিয়ে হয় নি। কলেজে পড়ছে। মায়া তার এই খালার কাছে খুব থাকে। মায়াকেও সে খুব পছন্দ করে। ছায়ার কিছু হয়ে গেলে মায়ার কথা ভেবে হয়তো তাকে বিয়ে করতে হতে পারে। অতএব মায়ার ব্যাপারে তখনকার মতো নিহারুল নিশ্চিন্ত হলেও ছায়ার জন্য তার চিন্তা আরও বেড়ে গেল এবং ঘনীভূত হল। ছায়াকে সে একবার দেখতে পেল না। কে জানে যে এত আগে....তাহলে সে তো দু' দিন আগেই চলে এসে ছায়ার পাশে বসে থাকত। যেমন মায়ার বেলায় ছিল। ছায়ার যেন কিছু না হয়। মা ও শিশু দু' জনেই যেন খুব ভালো থাকে। দ্বিতীয় বিয়ে তাকে যেন করতে না হয়। উপর অলাকে নিহারুল স্মরণ করল। আর তখনই হাসপাতালের মাইকে ঘোষণা হল," ছায়া বিবির বাড়ির লোক কে আছেন, আসুন!"
নিহারুল অমনি ছুটতে লাগল।ছুটতে ছুটতে গিয়ে বলল," সিস্টার, আমি ছায়া বিবির বাড়ির লোক, আমি ছায়া বিবির স্বামী। কী হয়েছে, আমাকে বলুন!"
সিস্টার বললেন," আপনার মেয়ে হয়েছে।"
শোনা মাত্র নিহারুল আর ওখানে দাঁড়াল না। 'আমার মেয়ে হয়েছে, আমার মেয়ে হয়েছে' করে লাফাতে লাফাতে বাইরে বেরিয়ে চলে এল। বাইরে অধীর আগ্রহে বাড়ির লোক যারা অপেক্ষা করছিল খবরটা তখন সবার শোনা হয়ে গেল।
প্রথমটা যেহেতু কন্যা সন্তান হয়েছে নিহারুলের শ্বশুর বাড়ির মানুষের তাই এবার একটা পুত্র সন্তান কাম্য ছিল, মানে ব্যাটা ছেলে। বিশেষ করে নিহারুলের শাশুড়ি মায়ের। কিন্তু সেটা হল না বলে তার মনটা খারাপ হল। নিহারুলের সামনে তো সে বলেই ফেলল," আল্লা এবারও মেয়ে দিল! একটা ছেলে দিল না!"
নিহারুল তার শাশুড়ি মায়ের কথায় ভীষণ রেগে গিয়ে তার শাশুড়ি মাকে বলল," মেয়ে হল তো কী হল? মেয়েরা কি মানুষ নয়? আপনিও তো মেয়ে। তাহলে আপনি কি মানুষ নন? সুতরাং মেয়ে হয়েছে শুনে.... কেন আপনি?" তারপর সে সাবধান করে দিল," খবরদার! এ রকম কথা আর একদম বলবেন না। অন্তত আমি যেন শুনতে না পাই।"
নিহারুলের শাশুড়ি মা তখন বিরাট লজ্জা পেয়ে গিয়ে নিহারুলের কাছে ভুল স্বীকার করল," আমার ভুল হয়েছে, বাবা।" তারপর জিজ্ঞেস করল," মা ও শিশু কেমন আছে?"
নিহারুলের এটা জিজ্ঞেস করে আসা হয়নি। সুতরাং সে আবার ছুটল," সিস্টার, মা ও শিশু কেমন আছে?"
সিস্টার বললেন,"আপনি কি পাগল আছেন একটা?"
সিস্টারের তাকে এ রকম কথা বলার কারণ কী, নিহারুল সেটা ঠিক বুঝতে না পেরে সিস্টারের মুখের দিকে হাঁ করে তাকাল।
সিস্টার বললেন," মেয়ে হয়েছে শুনে তখন তো নাচতে নাচতে খুব ছুটলেন। একবারও জানতে চাইলেন না, মা ও শিশু কেমন আছে?"
" সরি! আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন বলুন,মা ও শিশু কেমন আছে?"
" বাচ্চার অবস্থা ভালো নেই। বমি করছে। নোংরা খেয়ে ফেলেছে। স্যালাইন চলছে।"
সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে উদ্ভাসিত নিহারুলের সুন্দর মুখ খানা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তারপর কাঁদো কাঁদো হয়ে জিজ্ঞেস করল," আর মা?"
" মায়েরও স্যালাইন চলছে।"
তারমানে মা ও শিশু দু' জনের কেউই ভালো নেই। যার দরুন ভীষণ দুশ্চিন্তায় কেটে গেল পুরো সারাটা দিন এবং পরের দিনও। তারপরের দিন থেকে নিহারুলের মনের আকাশে যত কালো মেঘ ছিল সব আস্তে আস্তে কেটে গেল। মা ও শিশু দু' জনই এখন সুস্থ আছে, ভালো আছে।
পুনশ্চঃ নিহারুলের দুই মেয়ে হল। দুই মেয়েকেই নিহারুল মানুষের মতো মানুষ করবে। এতে তার যত টাকা লাগে সে খরচ করতে রাজি আছে। তারপর তার মেয়ে দুটো মানুষ হয়ে গেলে তার আর কোন চিন্তা থাকবে না। শুধু পুত্র সন্তানের জন্য যারা লালায়িত হয় তাদের দেখিয়ে দেবে যে, শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েদের প্রতি উদার মানসিকতা থাকলে মেয়েরাও মানুষ হয়। পরবর্তীতে নিহারুলের মেয়ে দুটো সত্যি সত্যি মানুষ হয়। মায়া হয় আই পি এস অফিসার। আর দ্বিতা হয় ডাক্তার। নিহারুল সেটা সমাজের মানুষদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও ওরা দেখে না। আসলে সমাজটাই যে অন্ধ। নিহারুল এর কী ব্যাখ্যা দেবে!
লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা যতীন
উনিশ শ একাত্তর খৃস্টাব্দের এপ্রিল মাস।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগ্রাসী ইচ্ছা নিয়ে আস্তে আস্তে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।যেখানে যাচ্ছে সেখানে সহযোগীদের সহায়তায় আশেপাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে; লুটপাট করছে এবং হত্যা করছে অসহায় বাঙালিদের; ধরে নিয়ে যাচ্ছে মা-বোনদের-সম্ভ্রম নষ্ট করছে।
অকুতোভয় বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সেই ২৬ মার্চ হতেইপ যার যা অস্ত্র আছে তা নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।ইন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করছে।গেরিলা যুদ্ধ, সন্মুখ যুদ্ধ। যখন যেখানে যেমন প্রয়োজন তেমন চলছে যুদ্ধ।
এপ্রিলের ২৫ তারিখ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্যারাস্যুট নিয়ে বরিশাল জেলার ইছাকাঠি এলাকায় নামে।স্থানীয় থানা দখল করে ঘাঁটি গাড়ে।পরদিন থেকে শুরু হয় হানাদার বাহিনীর আক্রমণ ও জ্বালাও-পোড়াও।নথুল্লাবাদ হয়ে হাসপাতাল রোড থেকে চড়বাড়িয়া ইউনিয়নে লামছড়িতে চলে যায় পাক হানাদার বাহিনী। ঝুনাহার গ্রামে চালায় আক্রমণ।আগুন দিতে থাকে বাড়িঘরে।চলতে থাকে লুটপাট এবং বাঙালি হত্যা।হানাদার বাহিনী এসে ঢুকে উপেন্দ্রনাথ কর্মকারের বাড়িতে।তখন উপেন্দ্রনাথ ঘরের বারান্দায় বসা ছিলেন।পাশে কিশোর যতীন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক মেজর উর্দুতে জিজ্ঞেস করেন,তোমার বড় ছেলে সচিন কোথায়?
উপেন্দ্রনাথ কর্মকার ভয়ে কাঁপতে থাকলেও নিজকে সংযত রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, মার সাথে মামার বাড়ি বেড়াইতে গেছে।
হানাদার বাহিনীর সাথে এক মৌলানা ছিলেন।তিনি সাথে সাথে বলেন, হে মিছা কথা কইতাছে স্যার।হের বড় পোলা সচীন মুক্তিবাহিনীতে গেছে।
উপেন্দ্রনাথ কর্মকার মৌলানার দিকে তাকালেও কিছু বলতে সাহস পান না।সাথে সাথে পাক বাহিনীর সৈন্যরা ওর দিকে একে ফরটি সেভেন রাইফেল তাক করে ধরে।যতীন ভয় পেয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যান।একটু পর সবগুলো রাইফেল একসাথে গর্জে উঠে।রাইফেলের ব্রাশ ফায়ারের প্রচণ্ডতায় যতীনের কানে তালা লাগার যোগার তখন। তিনি ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে বসে পড়েন। দুই হাতে তিনি দুই কান চেপে ধরে আছেন।হঠাৎই সব শান্ত হয়ে যায়।যতীন কান ছেড়ে আস্তে আস্তে উঠে বসেন।উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বেরিয়ে আসেন বারান্দায়।বাবার রক্তাক্ত দেহটা পড়ে আছে উল্টাপাল্টা অবস্থায় বারান্দায়।যতীনের চোখ শুকনো।সে বাবার নিথর দেহের পাশে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।হঠাৎ ওর মনে হয় দাদা স্বরূপকাঠি থানায় একটা স্কুলে আছে,যেটা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প।যতীন একবার গিয়েছিলেন।তিনি বারান্দা থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করেন।
যতীন দৌড়াচ্ছেন।কেউ ওকে দেখছে কিনা বা অনুসরণ করছে কিনা এই বোধ ওঁর মাঝে নেই।হাঁপালেও ক্লান্তি ওঁকে স্পর্শ করছে না।নিজ এলাকা ছেড়ে চলে এলেন স্বরূপকাঠি এলাকায়।দৌড়ানোয় বিরতি নেই ওঁর।উর্ধশ্বাসে দৌড়াতে থাকেন তিনি। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এলেন আটঘর কুড়িয়ানা হাইস্কুলে।মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের সবাই ওঁকে চেনে। কিশোর থাকায় সবাই আদরও করে বেশ।ওকে হাপাতে দেখে ক্যাম্পের সবাই অবাক হন।
সচীন কর্মকার বেরিয়ে আসতেই যতীন বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।ওর কান্নায় সবাই অবাক।সবাই একে অপরকে দেখতে থাকেন।
সচীন ছোট ভাইকে বুকে জড়িয়ে রেখে জিজ্ঞেস করেন, কী রে ছোটদাদা? তুই এইভাবে কানতাছস ক্যান? কী হইছে?
যতীন হেচকি টানতে টানতে এমনভাবে জবাব দিলেন যে সচীন বা অন্যরা কিছুই বুঝতে পারলেন না।সচীন ফের জিজ্ঞেস করেন, কীরে ছোট? কী হইছে? এইভাবে কানতাছিস ক্যান? কেউ মারছে তোকে?
এবার সচীন একবার হেচকি টেনে স্বর স্পষ্ট করে বলেন, পাক বাহিনী বাবারে মাইরা ফালাইছে দাদা।
সবাই বুঝতে পেরে স্তব্দ হয়ে গেলো।কারো মুখে কোনো কথা নেই।পিন পতন নিরবতা কক্ষটায়।নিরবতা বজায় রেখে ধীর পায়ে একে একে সবাই এগিয়ে আসতে থাকেন দুই ভায়ের দিকে।ছোট ভাইকে আকড়ে ধরে থাকা সচীনের হাত আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে; আর ওঁর চোখ দুটো ভিজতে শুরু করে।হঠাৎ হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করেন সচীন।দুই ভায়ের কান্নায় অন্যদের চোখেও অশ্রু দেখা দেয়।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ অশ্রু মুছে বলেন, কেঁদে আর কী হবে সচীন।যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে হানাদার বাহিনী শুধু তোমার বাবাকেই হত্যা করে নি; বহু সন্তান বাবা-মাকে হারাচ্ছে; বোনকে হারাচ্ছে;আত্মীয়স্বজনকে হারাচ্ছে।আমাদের এই স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।অশ্রু মুছো।ছোট ভাইকেও শান্ত করো।তুমি কাঁদতে থাকলে ও-তো কাঁদবেই।আজ থেকে ও আমাদের সাথে ক্যাম্পেই থাকবে।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ সচীনের কাছে গিয়ে পিঠে হাত রাখেন।সাথে সাথে সচীন কান্না থামিয়ে ক্যাম্প-ইন-চার্জের দিকে তাকান।ক্যাম্প-ইন-চার্জ চোখ বুজে মাথা নেড়ে ইতিবাচক সায় দেন।
সচীন একটা হেচকি গিলে ছোট ভাই যতীনের দিকে তাকান।ছোটভাইকে বুকে আরেকটু চেপে ধরে বলেন, কান্দন থামা যতীন।আমরা আর কাঁদবো না।আমরা বাবা হত্যার বদলা নিবো।
যতীন কান্নার শব্দ থামিয়ে নিরবে কাঁদতে থাকেন।ক্যাম্প-ইন-চার্জ যতীনের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন স্কুলের একটা কক্ষের দিকে, যেটা ক্যাম্প-ইন-চার্জের শয্যাকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।কক্ষে ঢুকে বিছানায় বসে যতীনকে পাশে বসান।হাত দিয়ে যতীনের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে বলেন, বাবার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই না?
যতীন একবার হেচকি টেনে ইতিবাচক মাথা নাড়েন।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ বলেন, তোমার সামনেই কী পাক বাহিনী তোমার বাবাকে গুলি করেছে?
যতীন ফের একবার হেচকি টেনে ইতিবাচক মাথা নাড়েন।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ বলেন, আমরা ওদের ছাড়বো না যতীন।আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে।কদিন পরই তোমার ভায়ের ট্রেনিং শেষ হবে।তখন সে যুদ্ধে চলে যাবে।
যতীন বলেন, বাবারে মারলো ক্যান? ওরা কারা?
ক্যাম্প ইন-চার্জ বলেন, তোমার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে।তাই ওরা তোমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।আমরা এর বদলা নেবো।
যতীন জিজ্ঞেস করেন, ওরা কারা ভাইয়া? ওরা মানুষ মারে ক্যান?
ওরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
হানাদার বাহিনী কী?
যে সেনা বাহিনী অন্য দেশে জোরপূর্বক ঢুকে যুদ্ধ বাঁধায়, ওদের হানাদার বাহিনী বলে।পাকিস্তানি সেনা বাহিনী আমাদের দেশে জোর পূর্বক ঢুকে যুদ্ধ বাঁধিয়েছে।
আমার বাবা কী দোষ করেছিলো?
তোমার বাবা দোষ করে নাই।কিন্তু তোমার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে, সেকারণে তোমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।ওরা এমনই করছে। আমরা ওদের এদেশ থেকে হটানোর জন্য যুদ্ধ করছি।
আপনেরা ওদের সাথে পারবেন?
অবশ্যই পারবো।আমাদের পারতেই হবে।আর কথা না।তুমি আমাদের সাথে থাকো।ঘুরাফেরা করো।তোমার ভায়ের সাথে কথা বলে কোনো একদিন তোমাকে তোমাদের কোনো আত্মীয় বাড়ি পাঠিয়ে দেবো।
যতীন ক্যাম্পে অবস্থান করে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করেন আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেখেন।ওঁর ভালোই লাগে।তিনি মাঝে মাঝে স্টেনগান, গ্রেনেড গুলি হাতিয়ে দেখেন।অস্ত্র গোলাবারুদ দেখলে খুব ভালো লাগে ওঁর।
একদিন যতীন ক্যাম্প-ইন-চার্জের অফিস কক্ষে ঢুকে মুখোমুখি দাঁড়ান। একদৃষ্টে তিনি তাকিয়ে থাকেন ক্যাম্প ইন-চার্জের দিকে।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ জিজ্ঞেস করেন, কী দেখছো অমন করে?
যতীন দৃঢ় কণ্ঠে বলেন,আমি মুক্তি যুদ্ধে যাইতে চাই কমান্ডার ভাই!
ক্যাম্প-ইন-চার্জ অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি মুক্তিযুদ্ধে যাইতে চাও!তোমার বয়স কত জানো তুমি? তাছাড়া থ্রি নট থ্রি বন্দুক তোমার চাইতে লম্বা! তুমি বন্দুক চালাবে কিভাবে?
আমি বন্দুক চালাইতাম না।
তাহলে যুদ্ধ করবে কী দিয়ে? খালি হাতে?
স্টেনগান আর গ্রেনেড দিয়া।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ কিছু বলতে গিয়ে থেমে তালেন যতীনের চোখের দিকে।যতীনের চোখ স্থির, যেনো আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে।প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে অগ্নিগিরির মতো।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ জিজ্ঞেস করেন, তোমার বয়স কত?
যতীন বলেন, সতেরো।
ক্যাম্প-ইন-চার্জ চেয়ার ছেড়ে উঠে যতীনের হাত ধরে বাইরে আসেন।তখন বাইরে কয়েকটি দলের প্রশিক্ষণ চলছিলো।একটি দলের সাথে যতীনকে ভিড়িয়ে দেন প্রশিক্ষণের জন্য।
আটঘর কুড়িয়ানা হাইস্কুলে ছাব্বিস দিন প্রশিক্ষণ চলার পর হঠাৎ একরাতে পাক বাহিনী ঐ ক্যাম্প আক্রমণ করে।যুদ্ধ চলে সারারাত।গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে থাকে।এবং চলে যায় আত্মগোপনে।বাইশ মে তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা ফের কুড়িয়ানা হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে।কিছুদিন পরে রাজাকারের সহায়তায় হানাদার বাহিনী পুনরায় আক্রমণ করলে যুদ্ধ চলে দুই পক্ষে।কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলার পরে ফের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা ফের পিছু হটে খুলনা হয়ে ইন্ডিয়া চলে যায়।যতীন হাসনাবাদে নয় নম্বর সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। প্রশিক্ষণের ফাঁকে যতীন মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা লেখাসংবলিত পত্রিকা বিলি করেন এলাকায়।যতীনের এ ধরনের পত্রিকা বিলি করায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে উঠতে থাকে।
প্রশিক্ষণের ফাঁকে ফাঁকে যতীন গোপালগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করেন।এসময় যতীন হেমায়েত বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।নভেম্বরের শেষের দিকে যতীন খুলনা চলে আসেন এবং পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সন্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।যতীনের দল একে একে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও খুলনার গল্লাবেরি রেডিও সেন্টার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মু্ক্ত করে।
লেখক আশীষ কুন্ডু -এর একটি গল্প
দেবী
"চাপ নিয়ো না বস্, "- ঘাড় ঘুরিয়ে বললো বউ।
আজ মেয়ের ফিজ্ জমা দেবার শেষ দিন। অমল সবে অবাক হতেই রীণা তার হাতে গুঁজে দিলো, পাঁচশো টাকার বান্ডিলটা। টাকা জমা দিয়ে দোলাচলে পড়লো অমল। এতদিন যাকে পকেটমার মনে করে অশান্তি করেছে, তাকে এখন দেবী ভাবার চেষ্টা করতে হবে।
Poet Pavel Rahman's two poem
1.
Governance Of Almighty
Man wants to rule other by atomic weapons,
But the Almighty rules all by affection.
Governance of Almighty
Is really very sweety.
His governance makes a human tidy.
2.
Please Control Own Greed
Almost all have greed for something,
My sister, even I have at least one greed.
Seeing many I say it-
“ Almost all have greed”
Almost we all have at least a greed.
For peace of every own,
For all peace, let’s control
Greed in own by controlling own deeds,
Not by doing other any bad deed!
Poet Namita Basu's one poem
I am the care of
I am the care of obscure hope with a concealed juncture,
to set up let with a bride chamber by the nanogey beliefs.
Here the large gregarious trees and consonants startled the moment,
The placard brush are hanging on their nec,
Blue eyes, broken words are stumbling in front of famine,
Till the auspicious of being birth,
the empty practiced sounds Sa, Ni,Dha ,Pa, Ma, ga, re, Sa.
It's a cover file,
belief in a short dress,
Here the univers are reflected by only a point,
and the wonders is vibrated by the intellectual oblique.
If it's a food of hiron or a fox!
so what?
Till I am the exceptional age,
Here the river flows have losts it's characteristics,
Greens are attacked by the palace,
So shabby, please grown up in a paved,
and request the wind to push the sky by the two hands for reproduction. If the seeds are not transfusions,
it may be,
But I am now a care of Palm tree,
which stands with one leg in a so high that is non comparable.
Poet Sunanda Mandal's one poem
A line of Vermilion
We have a house,
There are windows on both sides.
Pride stuck on the door curtain on one side,
Day and night naughtiness.
Hidden family in the middle
Dust in the blink of an eye.
A little bit of happiness in the stalk
And removed the mountain of pain
I will find the vermilion of the soul.
Yet I have stuck to the lifeless mindless life
In the bitterness of the whole day.
কবি সৈয়দ শীষমহাম্মদ -এর দুটি অনু কবিতা
৩)
যদি আমার কিছু ভালো চাস ওরে -
আমাকে বোঝ তবে আমার মতো করে ।
৪)
মানুষ হয়ে মানুষ সমাজে বাস করি,
করোনার কালে মানুষ দেখে ভয়ে মরি।
কবি চাঁদ রায় -এর একটি কবিতা
চঞ্চল
নদীর মতোই কখনো চঞ্চল
কখনো বা রক্তস্রোতে প্রাণ পাখি
ঘাসের গোড়ায় মুখ নেই শূকরের মতো।
সমগ্র শরীরে গঙ্গা বয়ে যায়
পাথর স্পর্শ করি কখনো
অথচ পারি নি আকাশের শিষ্য হতে।
দুহাতে মেখেছি চন্দ্রাণু কখনো
মাদুর বুনেছি মনের কাঠি মিশিয়ে
তবুও গ্রীষ্মের প্রখরতা ঢাকিনি ছত্রছায়ায়।
আমি চঞ্চল হরিণের মতো
চতুর্থ অবতারের বিষ্ণু ভক্ত কখনো
ধ্বংসের মাঝে শান্তি মানি নি তবুও।
কবি অভিজীৎ ঘোষ -এর একটি কবিতা
ডিগ্রীর ঝোলা
তোমার আছে অনেক শেখা
বুদ্ধিজীবী হইছো তাই,
আমার ঘটে গোবর ভরা
বুদ্ধু হয়েই থাকতে চাই।
তোমার ফাইল ডিগ্রি ভরা
তাইতো এত অহংকার,
আমার কাঁধে শূন্য ঝোলা
জ্ঞানের আশায় নির্বিকার।
সংখ্যা ভেঙে অঙ্ক বানাও
লেটার দিয়ে শব্দ,
আমার মতো অজ্ঞ যারা
সেই কলেতেই জব্দ।
তোমার হাতের পেনের খোঁচায়
বিশ্ব জোড়া হিসাব রয়,
আমার মতো মুর্খ হলে
জীবন শুধু দুঃখময়।
জ্ঞানকে নিয়ে করছো খেলা
খেলতে খেলতে খেলোয়াড়,
আমি শুধুই জানতে থাকি
তাইতো আমি জানোয়ার।
কবি বিধান সাহা -এর একটি কবিতা
অজান্তে
রীতিমতো উচ্ছ্বাসের
প্লাবন বয়ে গেছে
আমার অজান্তে
চেনা অচেনার স্বপ্ন
নতুন মায়ায়
নতুন করে
আলোকিত করেছে
নিশ্চুপ মুহূর্তগুলো
আলোকিত আবেগ
নতুন ভাবনায়
নতুন প্রত্যাশায়
বুক ভরে দিতে চেয়েছে
নতুন মাধুরীতে
উচ্ছ্বসিত প্রলাপ
জোয়ারের বিপুল স্রোতে
ভাসিয়ে দিয়েছে
পরিবেশ পরিস্থিতি
সবই আমার অজান্তে ...
কবি শেখ নজরুল -এর একটি কবিতা
পূর্ণিমার চাঁদ
আবার দুজনে হবে দেখা বিদায় লগ্নে,
বলবো খুলে মনের কথা ভালোবাসার সন্ধিক্ষণে।
নেমে আসবে সোহাগ
পূর্ণিমার চাঁদ,
দুজনার মনে অনুভব হবে ভালোবাসার স্বাদ।
শরতের শিউলি ফুলের সুগন্ধে বাতাস যাবে ভরে,
আমরা দুজন হারিয়ে যাবো প্রেম সাগরে।
মন দিয়ে দেখবো তোমার ওই চাঁদ মুখ,
ফিরে পাবো হাজারো অজানা সুখ।
তোমার হাসিতে মুখরিত হবে সোনালী সন্ধ্যা,
তোমাকে উপহার দেবো অঙ্কুরিত রজনীগন্ধা।
সেই অঙ্কুর ফুটিয়ে তুলবো আমরা দুজন মিলে,
সেই স্মৃতি গাঁথা থাকবে সারা জীবন দুজনার দিলে।
কবি ইব্রাহিম সেখ -এর একটি কবিতা
সীমাহীন যাত্রা
যে যাত্রা করেছ শুরু উঁচিয়ে ভুরু
কোন ঠিকানায়, কোথায় শেষ?
আঁকাবাঁকা কানা গলি
নিজের সার্থে সবাই চলি,
দাঁড়াবার সময় নেই এক নিমেষ।
তড়িঘড়ি তাড়াতাড়ি কুড়াই কড়ি
বাড়ছে বোঝা পাপের রাশি,
ঘুষের রাজা পায়না সাজা
স্বর্গ সুখে বাজাই বাঁশি।
বস্তাবন্দি দুরভিসন্ধি মগজ মাঝে
নানান ছন্দে দ্বন্দ্ব বাধাই,
ধনের তৃষা অতুল নেশা মনের ঘরে
দু-চোখে তাই ঘুম হারায়।
জীবন পাতার হিসাব খাতার
উল্টো দিকে অনন্ত ঘুম,
দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন পুড়ে, আঁধার পুরে
মরণ যজ্ঞের লেগেছে ধুম।
শেষের-- শেষে,পরের দেশে যেতেই হবে
সেই যাত্রার নেই ঠিকানা--
কেমন করে আঁধার ঘরে রইবে পড়ে
কেউ জানো না,শেষ সীমা-না!
কবি উদয়ন চক্রবর্তী -এর একটি কবিতা
জল শুকিয়ে যায়
কখনও কখনও আগুন কে
খায় মানুষ নির্লজ্জ নির্লিপ্ত নির্মমতায়
নিসপিস করে মনের ভেতরে ঘুনপোকা
অস্তিত্ব অস্বীকারে চোখ থেকে রক্ত ঝরে পড়ে
কৃষ্ণ ধূসরতা রূপান্তরে মায়াবী যন্ত্রণায় কাতরায়
আগুন ধুয়ে মুছে দেয় অস্তিত্ব
সেখানে দীর্ঘশ্বাস নুয়ে পড়ে বিতৃষ্ণায়।
ধর্ষিতার ধর্ষণ হওয়াই ঠিক নিদেন দেয়
গেরুয়া রঙের জীবন্ত রামেরা
বাতাসে ওড়ে সভ্যতার ছাই
জীবনের ভঙুর অহংকার ছুঁয়ে থাকে অন্ধকার
ছুঁয়ে দেয় সৃষ্টির ইতিহাস সংগোপনে।
আগুনই ছিল প্রাণের সৃষ্টির ঐতিহ্যের
একান্ত প্রচেষ্টার নিয়ামক সেদিন --
আগুনই শেষ করে মানুষের ঔদ্ধত্য ছাই হয়ে
জল শুকিয়ে যায় সময়ের ক্যানভাসে।
কবি অরবিন্দ সরকার -এর একটি কবিতা
বুদ্ধিজীবী
বুদ্ধি বেচেই জীবিকা তাই বুদ্ধিজীবী,
নাটক যাত্রায় শিল্পী পেশাদার বটে,
পালাবদলে ভূমিকা দিবি আর নিবি,
তুলি কলমে অঙ্কন সব এক ঘাটে।
শিল্পধ্বংসে উজ্জীবিত শিল্পে তালাচাবি,
বেকারের স্বপ্ন চূর্ণ বুদ্ধি লোপ ঘটে,
বুদ্ধিজীবী নেতা মন্ত্রী নাড়িয়ে পৃথিবী,
গুনগানে দলভুক্ত বেহায়া পা চাটে।
অমেরুদণ্ডপ্রাণীর শিরদাঁড়া উবি,
পথের লড়াই ভুলে পয়সা পকেটে,
কলমের নিব্ ভোঁতা সে যে রাজকবি,
বুদ্ধিজীবী পদলোভী এ দুর্নাম রটে।
গিরগিটি বুদ্ধিজীবি রঙ বদলায়,
আত্মসম্মান হারিয়ে শুধু খায় খায়।
কবি আবদুস সালাম -এর একটি কবিতা
কৌশল বিষয়ক
সভ্যতার রকেটে চড়ে বিষ্ফোরণের কবিতা লিখি
ছন্নছাড়া শব্দগুলো অনাথ হলে আনকোরা ইতিহাস শিখি
দীর্ঘ পথের অনুভূতি ছুঁয়ে যায় হৃদয় কথা
বিবেকের ক্ষয়িষ্ঞু সূর্য ছায়া ফেললে মরমী বাতাসে বাজে তা
সভ্যতার পঙ্কিল অভিমান ডিগবাজি খায় অনাদরে
বিষাক্ত রক্ত কনিকা জাগে,ব্যস্তানুপাতিক ইতিহাসের গহবরে
ইতিহাসের ঐতিহ্য পাল্টে যায় দহনের বেড়াজালে
জন্ম দাগ ধূসর হয় প্রয়োগশালার কূটচালে
রক্তে মিশে অবিশ্বাস, লাজুক নগর আজ ভাঙনের কবলে
মোহময় অন্ধকার তাকিয়ে আছে , জাতিতত্বের বেড়াজালে।
কবি জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর একটি কবিতা
নদীহীন
যে শহরে এনেছ ফেলে সেই শহরে কোনো নদী নেই
প্রতিদিন হা হা শব্দে নদী খুঁজেছি
তবুও লিখিনি কোনও নৌকার কবিতা
ভিজতে চেয়েছি প্রতিবর্ষায় থৈ থৈ হাঁটু জলে
ভাসিয়েছি আমার কাগজের নৌকা
দমকা বাতাস এলোমেলো করে দেয় আমায়
উল্টোনো নৌকাকে সোজা করে ঠেলে দিই
নদীহীন শহরের খাঁ খাঁ বুক
ওকেই আমি আপন করে নিই।
কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা
রোজনামচা
কথাটা হয়তো অনেক আগেই বলার প্রয়োজন ছিল
কিন্তু বলতে পারিনি।
যদিবা নিজের স্বার্থে আঘাত আসে,তার জন্য
তবে কি আমিও ঘৃণ্য পশুর মতো হয়ে গেছি
না,ভেতরের মানুষটা এখনো যে জেগে আছে।
তাইতো এখনো রাত জেগে লিখে রাখি দৈনন্দিনের রোজনামচা
ভোরবেলায় বাউলের একতারার সুরে গেয়ে উঠি মানবতার গান।
কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা
পরাজয় সুখ
সান্ধ্য সরণির আলোটা জ্বলেছে
সরোদ ঘুমিয়ে আজও,
এ কোন ব্যথা বাজে বুকে তার?
চেতনার রঙে ঢাকে লাজও।
ক্লান্ত প্রিয় মুখ ইশারায়
গোপনে সংযত দৃষ্টি
হাজারো যুদ্ধ চলেছে
তবুও কেন অনাসৃষ্টি?
বোঝেনি আকাশের মুখ ভার
দিয়েছে যা ছিল শরীরে
কিসের মালা আজও গাঁথছো?
জ্যোৎস্না চলে গেছে বহুদূরে।
ভেবেছ ভাঙবে অনুভূতি
অক্ষর মিশে যাবে স্রোতে
এখনো অভিমান হয় প্রিয়
দুঃখ টা যায়নি তো মোটে।
পুড়তে নেই কোন বিশ্বাসে
রাখতে নেই মনে আশা
গোলাপ ফুঁটেছে মরুভূমিতে
বিবেকশূন্য খেলা পাশা।
এখনও লোভ জাগে দুচোখে
আগুনে চমকে ওঠে বুক
নেশার ঝাপসা এ দুনিয়ায়
এ কোন পরাজয় সুখ।
কবি সুমিত্রা পাল -এর একটি কবিতা
মৃত্যুর হাতছানি
মৃত্যু, তুমি হাতছানি দাও কেন বারবার ?
আগেও ডেকেছো কত, তাও মানিনি হার।
যতই ডাকো হারবে তুমি, করব বাঁচার লড়াই,
থাকবেই ঘাত প্রতিঘাত, তাকে না ডরাই।
চলার পথ তো কঠিন হবেই ,পাই না ভয়,
সব বাধা সরে গিয়ে একদিন হবেই জয়।
মৃত্যু তুমি কেন বারবার কড়া নাড়ো দ্বারে?
তোমার বিষাক্ত নিঃশ্বাস কেন পিঠে ঘাড়ে?
যাও যাও যাও তুমি, যাও যাও ফিরে।
কেন তুমি জাল বিছাও আমাকে ঘিরে?
কারণে-অকারণে ছল করে ,আসো ঘুম ঘোরে,
দরজায় দিয়েছি খিল, এসোনা আমার ঘরে।
হারবো না তোমার কাছে ,আছে মান হুঁস,
আমি নই মেরুদণ্ডহীন ভীরু কাপুরুষ।
হারিয়ে যাক যতই ,ঠোঁটের কোণে হাঁসি,
তবুও তোমার লোভের থাবায় ঝুলবনা ফাঁসি।
সুখ-দুঃখ দুই ভাই ,থাকে তারা কাছাকাছি,
দুঃখ যদি থাকে, সুখও আসবে পাশাপাশি।
কবি সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক -এর একটি কবিতা
একুশ শতকের শিশুটি
বাঁধন ভেঙে আসছে ভোর
আলোক-শিশু বাড়ছে গর্ভে
ভ্রূণের বুকে না মেরে লাথি
বরং এসো খুশীতে মাতি।
শুকনো মুখে কাটুক দুদিন
অথবা ঝাঁপাক অনটন
নাচার বসে থাকাই ভালো
যেহেতু দুহাত অনেক কালো।
সব কালি যে যাবেই মুছে
একুশ শতক দুলুক আলোয়
তেমন শিশুর শুনছি হাসি
হৃদয় যখন সর্বনাশী।
Sunday, November 28, 2021
কবি নীতা কবি মুখার্জী -এর একটি কবিতা
কুচবিহারের রাসমেলা
আমরা যাবো রাস দেখতে কুচবিহারের রাজবাড়ী
পর লো তোরা, পর লো সবাই মিলে হাজার টাকার ঢাকাই শাড়ী।
কতো লোক যে আসবে যাবে ইয়াত্তা তার নাই
হাতে হাতে ধরে থাকবি, একলা যাবি নাই।
মেলা মানেই খুশীর আঁগন, খুশী লুটে নাও
ভালো ভালো জিনিষ কেনো,রকম রকম খাও।
জামাকাপড়, কাঁসার জিনিস, শাল,কম্বল কত
আশেপাশে গাঁয়ের লোকে জুটিয়ে আনে যত।
মেলায় থাকে অনেক মজা থাকে পাঁপড় ভাজা
বড় বড় জিলিপি আর থাকবে ঢাউস খাজা।
চটপটি আর রোলের গন্ধে নাক করে 'ম' 'ম'
নানা রকম আওয়াজেতে কান করে ভঁ ভঁ।
বেলুন আছে খেলনা আছে, তাল পাতারই সেপাই
চোর ধরতে ঘুরছে সেথা বড় বড় সেপাই।
আসুন দাদা দেখুন বলে ডাক দেয় সব দোকান
একটু আলগা দিলেই তারা কাটবে তোমার দু-কান।
বড় বড় দোলনা আছে, আছে ডিস্কো ড্যান্সার
আরো অনেক রাইড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সার সার।
চুড়ি, কানের, হাতের বালা, নানান রকম মালা
কচি, বুড়ো সবাই কেনে, পূজোর থালা।
পাথর বাটি, মাটির সরা, নকশা করা বাসন
কেউ বা কেনে ফুলের সাজি, কেউ কিনছে আসন।
দোকানে থাকে বড় বড় জিলিপি, পান্তোয়া, লেডিকেনি
ভাজছে খাজা গরম গরম দিয়ে গাদা চিনি।
রাধাকৃষ্ণের মিলন দিনে সবাই খুশি মনে
সবাই যে যায় দলে দলে ঠাকুরদালান পানে।
হরিনাম, সংকীর্তন, গান-বাজনা চলে
দেশ-বিদেশের শিল্পী এসে জোটে দলে দলে।
রাজার বাড়ী লোকারণ্য মহা -সমাগম
সবার বাড়ী কুটুম্ব আসে বেশী আর কম।
কোচবিহারের রাসের মেলা আমাদেরই গর্ব
তিক্ত-জীবনে খুশী ভরে, দুঃখ কিছু খর্ব।
এসো, একবার সবাই মিলে হরির-ধ্বনি দিই
কৃষ্ণ-চরণ স্মরণ করে মেলার মজা নিই।
কবি মহীতোষ গায়েন -এর একটি কবিতা
কথোপকথন
শরীর জুড়ে মহুয়া ফুল
শরীর জুড়ে কালো
'ও' মেয়ে তোর শরীরে কি
বিদ্যুৎ চমকালো?
শরীর জুড়ে কাশফুল তোর
শরীর জুড়ে আলো
'ও' ছেলে তোর সন্ধ্যেবেলার
চরিত্র কি ভালো?
কবি তৈমুর খান -এর একটি কবিতা
জলগান
কৌতুক জলের কাছে বিজ্ঞাপিত হই
বিম্বিত ছায়ার হাসি মিশে যায় জলে
জলও হাসে, জলের ঔরসে
আত্মজনেষু মায়া জন্মায় অন্তরালে
জীবন সত্যের কাছে অন্ধ বাউল
দ্যাখে শুধু জলোচ্ছ্বাস, নত অন্ধকার
চারপাশে ভিক্ষার দেওয়াল দেওয়া ঘর
ঘরে ঘরে মুণ্ডুহীন ধড়, নিঃস্ব করতল
হাততালি তোলে ঢেউ, ভেজা অভিমান
দুপুরও ভেঙে যায়, নৌকায় প্রজ্ঞা পার হয়
কতদূর এসে তারপর জেগে ওঠে মূর্খ হৃদয়
বাঁশ ও বাঁশির কাছে তবু জল ভেজা জলগান
১৮ তম সংখ্যার সম্পাদকীয়
অঙ্কন শিল্পী- মৌসুমী চন্দ্র
সম্পাদকীয়:
মানসিক উত্তেজনায় বিকারগ্রস্থ মানুষের হৃদয় থেকে কবিতা বের হতে পারে। ভাববার বিষয় তার কাছে প্রেম ও আছে আবার বেকারত্বের আর্তনাদ আছে। তাই কবিতার কাঁচামাল হিসেবে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে! এক আকাশ ভাষান্তরে জর্জরিত না করে একটি গাছের পাতা গুণতে থাকার সমান শব্দ প্রয়োগে কবিতা গুচ্ছ হয়ে ওঠে আরও বেশি উজ্জ্বল এবং বেদনাদায়ক। ভালোবাসার আর অন্তর্নিহিত আর্তনাদ বলেও একটি কথা আছে। সেই নিয়ে কবি মন আরও বেশি উৎসুক। তাই লিখুন নতুন নতুন প্রেম। ভালোবাসার নরম ও বেদনাদায়ক চাদরে ভরে উঠুক আমাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা World Sahitya Adda. ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। পাশে থাকুন আমাদের।
ধন্যবাদান্তে
world sahitya adda
______________________________________________
##Advertisement (বিজ্ঞাপন):
১)
___________________________________________________
২)
___________________________________________________
৩)
Saturday, November 27, 2021
১৮ তম সংখ্যার সূচিপত্র ( ৩২ জন)
সম্পূর্ণ সূচিপত্র:
Monday, November 22, 2021
লেখিকা মৌসুমী চন্দ্র -এর একটি গদ্য
সেই দিন
"আপনি একটু দেখা করবেন আমার সাথে, বিশেষ প্রয়োজন আছে", স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপক বাবুকে সেদিন স্কুল শেষে ডেকে পাঠালেন।
দীপক বাবু ভীষণ কৌতুহল নিয়ে প্রবেশ করলেন
প্রধানা শিক্ষিকার ঘরে।
প্রধানা শিক্ষিকা, দীপক বাবুকে বসতে বললেন।
দীপক বাবু বললেন, " আমার মেয়ে কেমন পড়াশুনা করছে? আমি তো বেশীক্ষণ ওর কাছে থাকতে পারি না,ও নিজেই বেশীরভাগ পড়াশুনা করে। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন, " এ বারের বাংলা পরীক্ষায় ওদের রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল, তোমার কাছে মা দুর্গার রূপ। আপনার মেয়ে যা লিখেছে একটু পড়ে শোনাই, "।
দীপক বাবু ভীষণ ঘামতে শুরু করলেন বললেন জোর হাতে, " আজ্ঞে ম্যাডাম আমার মেয়ের মা নেই বড় অভিমানী মেয়ে আমার, যদি কিছু অন্যায় করে.... "। কথার মাঝেই হেড ম্যাডাম থামিয়ে দিয়ে বললেন আগে শুনুন
আপনার মেয়ে এই খানে লিখেছে, আমি মন্ডপে যতবার দেবী দর্শন করি, মনে মনে দেবীর রূপ কল্পনা করি, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার বাবার মুখ। আমার বাবা দেবী দশভূজার মত
সংসারের সব কাজ সামলায়, আমায় মাতৃস্নেহে বড় করছেন। আমার বাবার স্নেহ পেয়ে আমি ভবিষ্যৎ জীবনে সত্যিকারের মানুষ হতে চাই। আমার বাবার মত সমাজ সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে চাই।আমার বাবাই আমার দেবী দুর্গা রূপী দশভূজা। কোনদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি।
"আপনার মেয়ের এই চিঠিখানি পড়ে আমার এতটাই ভাল লেগেছে, আমি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনার মেয়ে দেবরত্না, একটা হীরের টুকরো মেয়ে। ওর নতুন চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটা নাটক করতে চলেছি, বিশ্ব পুরুষ দিবসে। যদি আপনি আমাদের সাথে একটু থাকেন, খুব ভালো লাগবে,দেবরত্না বলছিল আপনি নাটক করেন, লেখেন,আপনি থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে"। দীপক বাবু বললেন, " এ তো পরম সৌভাগ্যের, অবশ্যই সাহায্য করব"। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন," আপনি আমাদের স্কুলের সাথে যুক্ত থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে "।
নমস্কার, করে কি সুখকর একটি হাসি দিয়ে দীপক বাবু প্রধান শিক্ষিকার ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন।
বাইরে দেবরত্না খুব কৌতুহল নিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, " বাবা, কি বললেন ম্যাডাম?"
দীপক বাবু একগাল প্রশান্তির হাসি হেসে,বললেন," তোর লেখা চিঠিটি পড়লেন, আর বললেন আমার সোনা মা..... টা না খুব.... খুব........."।
বাবা মেয়ের গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন, আমি কি মা দুরগা হতে পারি, উনি তো দেবী রে মা... "
দেবরত্না বলল তুমি যেভাবে দশহাতে দশদিক সামলাও, তুমিই তো আমার কাছে দশভুজা"।
দীপক বাবু বললেন, ' পাগলী মেয়ে আমার, চল
বলে মেয়ের হাতটি শক্ত করে ধরে হাঁটা লাগালেন বাড়ির পথে।
গোধূলির অস্তমিত আলো তখন এসে পড়েছে ওদের ওপর। যেন নতুন এক নতুন উদ্যমে জীবনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে বাবা আর মেয়ে। এবন্ধন যেন বড় মধুর বড় মিষ্টি.....
তুমি যেন সামলে রাখ, ঝড় উঠলে পরে
তোমার দুটি হাতের থেকে আদর ঝরে পড়ে।
ওই দুটি হাত বাড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে রাখ
দৌড়ে ছুট্টে যাই তখনি, যখন আয় খুকু আয় ডাক।
প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন-এর একটি প্রবন্ধ
আধুনিক বাংলা সাহিত্য কি accidental?
" কি ভাষা, কি সাহিত্য কোনোদিক দিয়ে আমরা সেই মন্দিরে একটি নূতন চুড়া তুলিতে পারি নাই, বরং তার ভিৎ জখম করিতেছি "! __ মোহিতলাল মজুমদারের এই আক্ষেপ কৌতূহল নয়, কাব্য সাহিত্যের রস যথেষ্ট না থাকার বেদনা।।
আমার এই আলোচনায় essential বা সব থেকে প্রয়োজনীয় যেটা সেটা হোলো কাব্য সৃষ্টি বা সাহিত্য সৃষ্টির রহস্য সম্বন্ধে আমাদের মনে যে রসবোধ জাগে সেটার যথার্থ প্রয়োগ। এই রসসৃষ্টি স্বাধীন অন্তরের পরাজয় নয়, প্র লাপ ও দুঃস্বপ্ন নয়--- তড়িৎ গতি র প্রবৃত্তি ও আঁচলে বাঁধা ভাবনার আত্মপ্রসার। সেটা এখন বস্তু পীড়িত উদভ্রান্ত কলোচ্ছ্বাসের রূপ নিয়েছে। Emotion কে সুদৃঢ়ভাবে শব্দবদ্ধ করে সাহিত্যে খেয়াল খুশির জন্ম দিয়েছে। ফলে ভাষা ও বক্তব্য দুটোই অসংলগ্ন ও পরস্পর বিরোধী।
সাহিত্য আঙিনায় এখন অনেকেই আল্পনা দিতে বসে সাহিত্যে র দর্পনে আত্মচরিত্ লেখায় ব্যতিব্যস্ত হওয়ায় নৈর্ব্যক্তিকতা ও জাতীয়তাবোধ জন্ম নিতে পারছে না। তাই বঙ্গ লক্ষ্মী ঘণ ঘণ মেঘের গর্জনে মমতাময়ী না হয়ে একধারে ক্রন্দনেই আকুল যেন।
আমরা মাইকেল, বঙ্কিম,, শরৎ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, দ্বিজেন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কে পেয়েছি। তাঁরা নিজ নিজ ভঙ্গিতে বাংলা সাহিত্যকে সযত্নে অভিনবত্ব দিয়েছেন। সে যুগ এখন যেন দিবাস্বপ্নের মতো অলৌকিকতায় ভরা। এখন প্রচুর সাহিত্যিক মহাপ্রভুর ঢংয়ে নগর কীর্তনে বেরিয়েছেন সাহিত্য কে নিখুঁতত্বের দিতে সযত্নে সাহিত্য কলার মস্তক মুণ্ডন করছেন। অত্যন্ত দুঃখ জনক এ চিন্তা।
অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যখন কামনা- লক্ষ্মী র সন্ধানে ব্যস্ত -- আমরা তখন তার নিরঞ্জনে কালক্ষেপ করছি। ভাবপ্রবণ বাঙালি র অস্তিত্বে মঞ্চ সাজানো হচ্ছে-- প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। কতিপয় বাঙালি ( পুরুষ/ নারী) অত্যন্ত সরল- তায় কাব্য লোকে আরোহন করতে চেয়ে সীমাহীন যথেচ্ছভাবে বিচরন করতে তৎপর। হিমালয়ের মত উই ঢিবি তৈরি হচ্ছে বটে কিন্তু বালির বাঁধের মতোই ক্ষণস্থায়ী। কেবলমাত্র পরিবর্তন ঘটে বটে কিন্তু মাতৃত্বের সূক্ষ্মতা য় সেটা নিতান্তই technically sound. হয় না; দুঃসাহসীকতা প্রকাশ পায়, কোমল মাতৃস্নেহ সুষমা মন্ডিত হয়না। একজন সমালোচকের কথায় বলি--- The pure poet is not a mystic, contemplation of the mystery is no end in itself for him. He is a doer, a maker, a revealer, a creator.
চিন্তালেশহীন নিছক কয়েকটা শব্দের গুচ্ছতাই সাহিত্য নয়। যোগ সাধনা বা যোগাভ্যাসে যেমন শরীরের পুষ্টি বাড়ে তেমনি সকল ইন্দ্রিয়কে বশীভুত করে সাহিত্যে মন দিলে সাহিত্য পুষ্টি লাভ করবে।।
সৌন্দর্য বোধ, শালীনতা ও যোগ সাধনা না করে সাহিত্যে র পুরোহিত হতে চাইলে সাহিত্য লক্ষ্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে-- এবং যেতে বাধ্য।
যে মেঘে আকাশ কালো, সারা ঘরদোর অন্ধকার, সেই মেঘেই বৃষ্টির সম্ভাবনা-- সেই মেঘেই নব কিশলয় বার্তা বাহিত হয়- বাঙালি র ভাবনা ও সহ জিয়া সুর আজ কেন মমতাময়ী হতে পারছে না?
কিসের ভয়ে আদর্শচ্যুত? সাহিত্য সৃষ্টিকে কি বাঙালি নিতান্তই accidental মনে করছেন?
প্রীতি- প্রেম- কান্না- সৌহার্দ্য কি শুধুই নিছক নাটুকে কোলাহল! কল্পনার পাখায় সাধনা কেন ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বেড়াজালে আবদ্ধ!?
বাঙালির লক্ষ্মী সরস্বতী কি তবে ভিনদেশী দের কাছে'" আয়া " র কাজে ব্যস্ত থাকবে?
ভেবে দেখুন। অপেক্ষায় বিশুদ্ধতা অবশ্যই আসবে।
লেখিকা উম্মেসা খাতুন -এর একটি গল্প
নমস্য
ভোরের আযান শেষ হয়েছে, জামিন মিয়ার ঘুম ভাঙলো। তারপর সে খানিক আলস্য কাটিয়ে বলদ দুটো নাদে বেঁধে দিয়ে এক ডালি শুকনো খড় ঢেলে দিল," লে, একটু জলখাবার খাইয়্যা লে, ম্যালা দিন তোধের দিইয়্যা কুনু কাম করাই নি, আজ একটু কাম করাব। শিষ্যার মাঠে আমার একটা এ্যাক বিঘ্যা ভুঁই আছে, ভুঁইডা চষতে হবে। এ্যাখুন এ্যাক চাষ দিইয়্যা ফেল্যা রাখব। তাহিলে ঘাস যা আছে সব মইর্যা যাইয়্যা ভুঁইডা পরিষ্কার হইয়্যা থাকবে। পরে আর এ্যাক চাষ দিইয়্যা বাতাল কইর্যা রাই বুনব। এই ভুঁইডায় রাই খুব ভালো হয়। নাহিলে ত্যালের যা দাম ত্যাল কিইন্যা খাতি পারব না। আমার মুতোন মানুষ জ্যান্ত মইর্যা যাবো। হ্যাঁ রে, সত্যি বুলছি। লে, তাড়াতাড়ি খাইয়্যা লে!..."
মাঠে গিয়ে লাঙ্গল জুড়ে অর্ধেক ভুঁই চাষ করে জামিন মিয়ার খুব খিদে আর জল তেষ্টা পেয়ে গেল। লাঙ্গল ছেড়ে দিয়ে জামিন মিয়া তখন ভুঁইয়ে একটা বাবলা গাছতলায় বসল, এ্যাখুন এ্যাক থালি পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত পালে খুব ভালো হতো, জানডা ঠাণ্ডা হতো। কিন্তু সাকিনা আজ বাড়ি লাই। কাল তার মা'র বাড়ি গেলছে। বাড়িতে থাকলে সে ঠিকই এ্যাক থালি পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত আনত। সে তার বিহ্যা করা স্ত্রী না! আর সে তা মজা কইর্যা খাতো। কুনও কারণে যিদি আসতে না পারত তো কাহুকে দিইয়্যা পাঠিয়্যা দিত। কিন্তু আজ আর সেডা হওয়ার লয়। আজ তাকে এ্যাক প্যাট খিদ্যা লইয়্যা ভুঁই চাষ করতি হবে। বাড়িতে জুয়ান ব্যাটারা থাকলেও কেহু আসবে না। বুড়া বাপডা খাতে পালো কি পালো না কেহু কুনু দিন খোঁজ লিইয়্যা দ্যাখে না।...."
"জামিন মিয়া, ও জামিন মিয়া...."
"কে গো?" জামিন মিয়া উঠে দাঁড়ালো।
"আমি গো, নির্মল মাজি।" কাছের কলাবাগান থেকে উত্তর এল।
"ও, নির্মল মাজি!"
"হ্যাঁ।"
"কী হলো, বুলো।"
"বুলছি, ভাত খাবা নাকি? খালে আসো। ম্যালা ভাত আছে।"
"তা খালে হতো।"
"আসো তাহিলে।"
"কী ভাত? বাসি না গরম?"
"বাসি। খাবা কি? খালে চলে আসো।"
বলা মাত্র জামিন মিয়া চলে গিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে বসে গেল," দিবা তো দ্যাও তাহিলে,খাই!"
নির্মল মাজি নিজে অর্ধেক আর জামিন মিয়াকে অর্ধেক ভাত দিল। ভাত গুলো খেয়ে দু' জনেরই ক্ষুধা নিবৃত্ত হল। শান্ত মনে তারা এবার নিজ নিজ কাজ করতে পারবে। সাদা মনের এই সব মানুষ গুলো চিরকালই আমার নমস্য।
লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প
নতুন জামা
"কমল তোর জামার দাম কত?"--- পূজা মন্ডপে ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রিজু বলে উঠল।
"তিন হাজার টাকা ব্রাদার, তোরটা কত?"
"পাঁচ হাজার টাকা"--- রিজুর মুখে এই কথা শুনে সুজয় কোনো কথাই বলতে পারল না।
আসলে তার জামার দাম যেমন কম তেমনই পুরাতন। গতবছর পূজোর সময় সুজয়ের বাবা দু'শো টাকা দিয়ে তার জামা কিনে এনেছিল। এই বছর পূজোয় কোনো দামি জামা তো দূরের কথা, কোনো নতুন জামাও কিনতে পারেননি।
লেখক সিদ্ধার্থ সিংহ -এর একটি গল্প
ফোন কল
স্বামী-স্ত্রী রাত্রিবেলায় খেতে বসেছেন। দু'জনেরই মোবাইল টেবিলের উপরে। তখনও তাঁদের খাওয়া অর্ধেকও হয়নি। ঘনঘন রিং বাজতে লাগল স্বামীর মোবাইলে।
এই সময় রোজই তাঁর ফোন আসে। আজকে দেরি করে খেতে বসেছে দেখে। না হলে এই সময় ও শোওয়ার ঘরেই থাকে। এদিককার টুকিটাকি কাজ সেরে যতক্ষণ না বউ ওই ঘরে যাচ্ছে ততক্ষণ ও কথা বলে যায়।
বউও জানে কার ফোন। তাঁর স্বামী একদিন তাকে বাড়িতেও নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর স্বামী ফোন ধরছে না দেখে এর মধ্যে কবে যেন ওই মেয়েটি তাঁকে ফোনও করেছিল।
বউ বুঝতে পারল, সে সামনে বসে আছে বলেই তাঁর স্বামী ফোনটা ধরছে না। ফোনটা ননস্টপ বেজে যাচ্ছে।
না, এ বার আর স্বামীর নয়, বেজে ওঠল তার ফোন। বউয়ের ফোনে রিং হতেই তাঁর স্বামী তড়িঘড়ি করে বলল, কেউ যদি আমার খোঁজ করে বলবে বাড়িতে নেই।
বউ কলটি ধরেই বলল, আমার স্বামী বাড়িতে আছে। বলেই, লাইনটি কেটে দিল।
স্বামী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, তোমাকে বললাম না, বলে দিও আমি বাড়িতে নেই?
বউ তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা তোমার ফোন নয়, আমার।
Poet Pavel Rahman's one poem
Cause Of Living
If you don’t get anyone’s love,
If all hopes to live are vanished,
Nonetheless, you will have to live-
For saving others from danger.
Though night is coming deeper,
Though there is no any hope to live,
Nonetheless, say to your mind-
“ I will have to live for saving others.”
Poet Sunanda Mandal's one poem
Catalyst
We don't have society,
No struggle for existence.
In the present civilization
A mixture of anxiety and pain,
A kind of catalyst.
The smell of rotten meat emanating from life.
কবি তহিদুল ইসলাম -এর একটি কবিতা
তুমি বলে ছিলে
তুমি বলে ছিলে, বৃষ্টি ভালোবাসো
কিন্তু যখন বৃষ্টি ঝরে ,তুমি আশ্রয় খুঁজে পাও
তুমি বলে ছিলে, সূর্য ভালোবাসো
চোতের বিরহকাতর মাঠের বুকফাটা রোদে
তুমি হাফ ছেড়ে বাঁচো ,ছায়া খুঁজে নাও
আমি বড় চিন্তিত, তুমি যখন বলো,
" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।
তুমি বলে ছিলে ,চাঁদ ভালোবাসো
আবার জোছনা রাতে ,তার কলঙ্ক খুঁজতে যাও
তুমি বলে ছিলে, গোলাপ ভালোবাসো
গোলাপ বনের কাঁটা দেখে থমকে দাঁড়াও।
আমার ভয় করে তুমি যখন বলো,
" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।
কবি সেখ নজরুল -এর একটি কবিতা
ভালোবাসা অন্ধ
সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,
চোখে দেখা যায় না।
মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।।
আমি যখন মাতৃগর্ভে ছিলাম, তখন মা আমাকে না দেখেই মনে মনে অনুভব করে,আমাকে নিয়ে হাজার ছবি আঁকতেন।
আমার খোকার এরকম হবে, তার চোখ দুটো এরকম হবে, তারা হাত দুটো এরকম হবে, তার পাদুটো এরকম হবে,তার নাকটা এরকম হবে।
অনেক সময় আমরা অজানা মানুষের ছবি মনের মধ্যে এঁকে ফেলি এবং পাগলের মতো ভালোবাসি।
সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,
চোখে দেখা যায় না,
মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।যখন আমরা বাইরে থাকি,
মা ভাবতে শুরু করে,
আমার খোকা কিছু খেয়েছে কিনা,আমার খোকা কি করছে,,কখন বাড়ি ফিরবে।
সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,
চোখে দেখা যায়না,,
মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।
কাউকে দেখে তার প্রতি মন কেঁদে ওঠে,
এটা ভালবাসা নয়,,ভাললাগা।
আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কোনোদিন চোখে দেখিনি, তবুও উনার প্রতি আমাদের মন কেঁদে ওঠে এবং দুটি হাত তুলে সব সময় উনার কাছে কিছু চাইতে থাকি।
সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,
চোখে দেখা যায় না,
মনে দিয়ে অনুভব করতে হয়।
কবি অভিজিৎ দত্ত -এর একটি কবিতা
মৃত্যু
হে পথিক করিও স্মরণ
জীবনের শেষে আসবে মরণ
মৃত্যু জীবনের চরম সত্য
অথচ এই সত্যটিকে আমরা
কেন ভুলে যায় অবিরত?
লোভ,হিংসা,মারামারি
একে অপরকে বঞ্চিত করার জন্য
করি শুধু বাড়াবাড়ি
এমন কী এজন্যই পিতামাতাকে
পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে ঘর-বাড়ি।
মানুষের দুর্নীবার লোভ
গ্রাস করেছে সবকিছু
অথচ কিছুই যাবে না সঙ্গে
কবে বুঝবে মানুষ এই সত্য?
অন্যায়, অবিচার, দেবেন,হিংসা
সবই লোভ পেতো
যদি মৃত্যুভয় স্মরণে থাকতো।
মানুষের বিবেক যদি হয় জাগ্রত
সব অন্যায় হবে পরাভূত।
মৃত্যুকে গ্রহণ করো হাসিমুখে
মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে যাও
শুভ কার্যের সাথে।
কবি অরবিন্দ সরকার -এর একটি কবিতা
গুরু
লালন পালনে গুরু তাঁরা মাতাপিতা,
গোরু পালনে গোপাল সে পরমগুরু,
দলের নেতা ভোম্বল সেও কাটে ফিতা,
ডাকাত দলে সর্দার নাম তার হীরু।
গুরু মশাই শিক্ষক তিনি পাঠদাতা,
বস্ত্রহরনে খচ্চর তার হাতে নাড়ু,
সব শালায় কর্মের গড়েন বিধাতা,
যত শালা আছে তারা, সবে ধর্মভীরু।
পশুরাজ সিংহ গুরু নয় পরিত্রাতা,
স্রষ্টা গুরু প্রজাপতি হাতে নিয়ে গারু,
জীবের কল্যাণে ব্রতী তিনি বিশ্বপিতা,
স্বর্গ মর্ত্য পাতালেতে বাজাবে ডমরু।
পাঠশালায় শিক্ষক গোশালায় গোরু,
কামার কুমোর শালা না থাকলে মরু!
___________________
কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা
সমস্ত প্রতারণাগুলি
সমস্ত প্রতারণা গুলি লিখে রাখি বুকের দেয়ালে ।
যেখানে গেছি পেয়েছি শুধুই প্রতারণা
কেউ দেয়নি স্নেহে একটু শীতল জল ।
মরুভূমির ভেতর হেঁটে হেঁটে
ফোস্কা পড়েছে পায়ে
কেউ বলেনি ডেকে -এসো ,একটু জিরিয়ে নাও শীতল ছায়ায়।
যা-ই ধরতে গেছি পিছলে পিছলে গেছে
অসময়ে রজ্জুও সাপ হয়ে মাত করে
ছোবলে ছোবলে ।
সমস্ত প্রতারণা গুলি লিখে রাখি বুকের দেয়ালে ।
কবি সৈয়দ শীষমহাম্মদের অনু কবিতা
১
লাঙ্গল ঘাড়ে কৃষক আমি
মুখে তুলে দিই অন্ন,
দিসনা বাধা আমার কাজে
তোর সাথে নই ছিন্ন ।
______________
২
ভাত ঘুমের ব্যার্থ চেষ্টা হলো
ঘুম যে গেল চলে,
তিনটে শালিক ঝগড়া করে
রান্না ঘরের চালে l
কবি কমল মন্ডল -এর একটি কবিতা
চেনা গন্ধ
সুন্দরতাকে উপেক্ষা করে তুমি চলে গেছো সাফল্যে
আমি জানি, তুমি চলে যাবে স্নান ঘরে
শরীর ভিজিয়ে ভাববে নাতো আমায়
স্বপ্ন খুঁজে পাওয়া যায় সকল মধু
আমি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি নরম শাড়িতে।
চুড়ির চেনা শব্দ কানে বাজে আমার
কেউ কোথাও নেই
কে ওখানে দাঁড়িয়ে। কেউ কোথাও নেই
একটা খুব চেনা গন্ধ ঘরময় ছড়িয়ে
আমাকে জড়িয়ে ধরলো, গলা শুকিয়ে গেছে
কাঠগলায় বললাম কে ওখানে দাঁড়িয়ে
কোনো আওয়াজ নেই!
মেয়ের কান্নায় ঘুম ভেঙে যায়।
কবি আবদুস সালাম -এর একটি কবিতা
অবিশ্বাস মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে
অবিশ্বাসের ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
ধর্ম প্রচারের দ্বায়ীত্বে আছেন ধর্ষক বাবা
অসহায় রাস্তায় পাহারা দিচ্ছে পঙ্গু পুলিশ
ধর্ম প্রাণ মানুষ পুলিশের হাতে গুঁজে দিচ্ছে বরাদ্দ মাসোহারা
এটাই নাকি অলিখিত সংবিধান
ইহকাল নিয়ে বিজ্ঞাপনের পাতা ভরাট হয়
সংকেত পাঠাচ্ছে পরকাল
দীর্ঘরাত অসহায় বারান্দায় ঘুমায়
বয়ঃসন্ধির বিজ্ঞাপন ঝুলছে ধর্মবেদীর দূয়ারে
সকাল সন্ধ্যা পূজা করি যৌন মানবের
অসহায় ঝরে পড়ছে বিবেকের বারান্দায়
Sunday, November 21, 2021
কবি সুব্রত মিত্র -এর একটি কবিতা
রোষের মুখে কালক্রম
উদঘট পাথরে জীবনের নাম লেখা
জীবন দরিয়ায় মায়া-মমতার ছবি আঁকা;
কল্পনার বিষ পাথরে তামাশারা গল্প লেখে
পরিণতির পরিহাস সদাহাস্য বারো মাস--
বাস্তবের কালিমা আছে গায়ে মেখে।
সৃষ্টির লীলাভূমি তুমি মোর প্রিয়তম
শত দুর্গতি এসে যায় কপালে তবু --- ---
তবু যেন হও তুমি স্বর্গ সম,
এখনো তো ঝড় হয়; ভাঙে ঘরবাড়ি;
আমি অদ্ভুদ স্রোতের মাঝে অলিখিত প্রতিরোধ
এক অদৃশ্য শক্তির সহযোগে রুখে দাঁড়াই আড়াআড়ি।
সরল আর সহজের হাটে সাধনারা ফিকে হয়
দূর্মূল্যের বাহারি রংমশাল আজকাল বড় সম্মান পায়,
অবচেতনার সিঁড়ি বেয়ে প্রজন্ম ক্রমশ ঝরে পড়ে সময়ের পায়ে
কর্মেরা আগাছার দিকে তাকায়;
বিচ্ছিন্ন গতিপথে মানুষেরা সংঘবদ্ধতা হারায়,
ব্যবধান লেখা থাকে মানুষের চেতনায়
ব্যবধান লেখা থাকে মানুষের ভাবনায়,
তৎক্ষণাৎ উর্বর গতি রেখার দিকে সকলে ধেয়ে যায়
ক্রমান্বয়ে দূরদর্শিতার অভাব দেখা যায় এই সময়।
এই সকল ভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে---------
কালের জয়ের কথা রেখে গেলে কালজয়ী হওয়া যায়
সমকালে কোনদিন যদিও জীবন হয় অমলিন
নাভিশ্বাস আর দীর্ঘশ্বাস আসবে না কোনদিন;
তবু তারা কেহ কেহ ছুটে যায় প্রান্তকে ভেদ করে
মর্মবাণীর 'পরে মর্মেরা শুয়ে পড়ে,
আমি জীর্ণ চেতনায় শীর্ণ হয়ে জেগে থাকি ঘুমোঘরে।
একবার দেখে যাও,শুধু একবার পৃথিবী যাও তুমি দেখে
এই ভগ্ন হৃদয়ের শক্ত দেওয়াল হতে--------
ক্রন্দন ভেসে আসে রাতে দিনে দুপুরে।
পৃথিবীরা সুখে থাকে; লড়াই করে বাস্তব,
মূর্খেরা করে বড়াই তবুও থামেনা সে লড়াই
বেহিসেবী খাতা কলম দিয়ে যায় মুখরোচক মলম
নিঃস্ব হয়ে পড়ে থাকে ন্যায্য চেতনার সামাজিক অনুভব।
কবি জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর একটি কবিতা
আমার অসুখে
আমার অসুখ বেড়ে ওঠে যেমন বেড়ে ওঠে লতা
পরম গুহায় নামে তুমি নামের বৃষ্টি
দুচুমুক স্নান করে আমার কবিতা
তোমার কাছে রেখে যাই দংশনের দায়
দুঃখ ভিজে যায় পুরনো পাতার মতো
আয়ুর মতো জেগে থাকে ঘুম ঠায়
তুমি এসে চলে যাও নিজের আড়ালে
স্রোত থেকে স্রোতে প্রেম কাঁদে
প্ররোচনা দেয় অসুখ শরীর
সামনে এসে দাঁড়ালে মিশে যাও তুমি
আর তোমার পাঞ্জাবি আকাশের নীলে
বৃষ্টির মুদ্রিত রূপ আমার কবিতায়
আমায় অসুখ নিয়ে তুমি জড়িয়েছিলে
সমস্ত মৃত্যু আজ লেগে থাকে শ্রাবণের গায়ে
আমার অসুখে পৃথিবী আজ নিজেকে লুকায়।
কবি সুমিত্রা পাল -এর একটি কবিতা
কি চায় জনগণ
ওগো নেতানেত্রীগণ,
শোনো দিয়া মন,
আমরা চাইনা ভিক্ষার দান,
সে দানে বাঁচেনা প্রাণ!
আমরা চাই উন্নয়ন ,
আমরা সাধারন জনগন।
ওগো নেতানেত্রীগণ,
শোনো দিয়া মন,
চাকরির আশায় খইছে জুতো,
আমরা চাই নাই এই বেকারত্ব।
আমরা চাইনা অবিচার !
চাই আমাদের ন্যায্য অধিকার।
ওগো নেতানেত্রীগণ ,
দাঁড়িয়ে যাও কিছুক্ষণ!
কি চাই দেশের জনগণ?
বাবা-মা-ভাই-বোন ,
বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজন ,
শোনো দিয়া মন।
ওগো নেতানেত্রীগণ,
একটু বোঝো কি চায় জনগণ!
আমরা চাই না ঐ সিংহাসন!
শুধু চাই, বেঁচে থাকার মতো উপার্জন।
চাই কর্মব্যস্ত জীবন,
চাই সুস্থ শরীর, সুস্থ মন।
ওগো নেতানেত্রীগণ ,
আমরা চাই নিরাপদ জীবন।
আমাদেরও আছে আত্মসম্মান,
চায়না চলে যাক তাজা প্রাণ ।
চাই মানুষ হওয়ার দীক্ষা,
পেতে চাই সঠিক শিক্ষা।
এটুকু তো চাওয়া,
তাও হয় না পাওয়া!
ওগো নেতানেত্রীগণ,
করো একটি পণ,
পেয়ে বিজয় সিংহাসন ভুলবেনা ধর্ম ,
ভুলবেনা নিজের কর্ম ।
মনে রেখো, সকল মানুষজন,
সবাই তোমার আপন জন।
কবি অভিজীৎ ঘোষ -এর একটি কবিতা
চাওয়া-পাওয়া
চাইলি কেন হাসনুহানা,ভাবছি
তোকে গোলাপ দেবো;
বাইক চড়ার সখ ছিল তোর,
পক্ষীরাজে সঙ্গে নেবো।
খেয়াল বশে বায়না সেদিন,প্যারিস
নাহয় ফ্রান্সে যাবি;
নিয়ে গেলুম নরওয়ে, বললি
সেথায় ফুচকা খাবি।
আবার প্রাণে শখ ছিল তোর
নাইতে যাবি নায়াগ্রাতে,
স্নানের শেষে মিশর যাবি
প্রখর রোদে চুল শুকাতে।
যেতেই হলো আফ্রিকাতে
তোরই অভিমানের বশে,
ফিরতে হলো অস্ট্রেলিয়ায়
প্রেম-পিরিতির দারুণ জোশে।
আমার শুধু চাওয়ার ছিল
তোর সঙ্গ দু-দশ জনম;
হৃদয় ভরা সেই ক্ষতটা, ঢাকতে
যে তুই লেপলি মলম।
কবি সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক -এর একটি কবিতা
দিশান্তর
জহান্নমের তখতে বেশ বেশ আছি বসে।
ফুরফুরে ফুলেল আমেজ মগজের কোষ-কোষান্তরে
যেন হাসাহাসির ফুলঝুরি।
এরপর আধবোজা চোখে ঢুলঢুলু বিক্রম ত্রাস
ছড়ায় নাভিশ্বাসে।
চকিতচপলা মুহূর্তের ঘরে অতিঘন অকাতরে
বাজে দুন্দভি, হঠাৎ ওড়ে রাতজাগা ত্রস্ত পাখী,
বিষ-বিষয়ে নারাজ আকুলতা
তথাপি খোঁজে একখণ্ড বাতিল অনাবাদী জমি-
সেখানেই আবার আবার বসত-নির্মাণ,
নির্মিত ইমারতে একমুঠি বাচাল অকাল আকাশকুসুমে
ভর্তি হাওয়ায় শুধুই কালাতিপাত,
ধোঁয়াশায় এখনো অন্তরাল স্পষ্ট স্পষ্টতর
যেদিকে প্রত্যাশায় জন্নত-সরণী।
কবি রানা জামান -এর একটি কবিতা
ময়ূর
পালক খসিয়ে চলে যায় ময়ূর সুদূরে
মুঠো ফসকে; চড়ুই সামান্য দানাপানি
খেয়ে খড়ের বাসায় থাকে ঘুমিয়ে; পেছনে
ফাইভস্টার হোটেলের খাদ্যের সুবাসে
জিভ থেকে লালাটা ঝরায় না টোকাই
প্রাকৃতিক নিয়মে ঘাসের ডগায় শিশির
বসে পাওনাটুকু বুঝে নেয়
সূর্যালোক থেকে; কৃষকের উদাসিনতার
সুযোগে কিটানু হুল বসায় কোলের
ফসলে; গ্রহণ লাগে ভরা পূর্ণিমায়
দিন যায় রাত আসে; এর চক্রে
প্রতিনিয়ত কতক তারা খসে; কিছু অনাঘ্রাতা
গাড়িতে আগুন লাগিয়ে ধরায় সিগারেট।
কবি নীতা কবি মুখার্জী -এর একটি কবিতা
শিশু-মঙ্গল
শিশু দিবসের মহান লগ্নে শিশুদের ভালোবেসে
স্নেহ চুম্বন দিয়ে যান যেন দেবতা মাটিতে এসে।
মাতৃহারা, অনাথ শিশু সহায় সম্বলহীন
একটু সহায় হবে কি তোমরা?শোধ হবে মনুয্যত্বের ঋণ?
হোটেলে , বাজারে ,রেস্তোরাঁতে যত শিশু মজদূর
ছিঁড়ে ফেলে দাও শৃঙ্খল তার, অবহেলা করো দূর।
শিশুরা হাসবে, খেলবে, গাইবে, আনন্দে মতোয়ারা
সেই সুযোগেই শিখে নেবে তারা জীবনবোধের ধারা।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হোক বা না হোক মানুষ তো হোক আগে
বিবেক- বুদ্ধি, পরোপকার আর মনুষ্যত্ব যেন জাগে।
বিদেশে গিয়ে টাকা রোজগারের যন্ত্র যেন না হয়
আর্ত-দুখীর পাশে থেকে যেন সমাজের ভার বয়।
এই সমাজের পিতা মাতা আর অভিভাবকের দল
চাপিয়ে দিচ্ছে প্রত্যাশার বোঝা,শিশুরা যে টলমল।
সুন্দর আর নিষ্পাপ শিশুকে ঠিক মতো দাও বাড়তে
অতিরিক্ত আকাঙ্খার বোঝা চাপিও না তাকে মারতে।
ছোট্ট কুঁড়িরা হতাশায় ভোগে প্রতিযোগিতার ভিড়ে
মৃত্যুর কোলে সঁপে দেয় তাদের, অসহায় নিজ নীড়ে।
একটি ফুলকে যত্ন করে পালন করো গো মা
বিদ্যাসাগর, নেতাজীর মতো করে তোলো উপমা।
আমার দেশের, আমার মাটির ছোট্ট কুঁড়িশিশু যত
ফুটে ওঠে যেন কোমল কুসুম, শতদল শত শত।
স্বার্থপর এই দুনিয়াটাতে পথশিশু আজ বড়ো বিপন্ন
ঘরে ভাত নাই ! কে তুলে দেবে তাদের মুখে দুমুঠো অন্ন?
সারাদিন ধরে কাগজ কুড়ায় ছেলেটা পাড়ায় পাড়ায়
কখনো আমরা চোর বলে তাকে পুলিশ ডেকে ধরাই!
শোনো রে মানুষ ভাই,
পৃথিবীতে এসে ভালো কিছু করো যাতে ওরা বেঁচে যায়।
কবি আশীষ কুন্ডু -এর একটি কবিতা
আলোর পথে
আলোর সিঁড়ি বেয়ে চুপ সময়
ওঠা নামা প্রহর গোনে মনোময়
সুখ আকাশ এক ঝাঁক পায়রার
সফেদ মেঘের ভেলায় ফেরার
টুকরোয় নামে আলোর বাসর
হাটের সীমানায় নাবাল প্রান্তর
তোমায় লিখবো ভেবে সাদাপাতা
এক ঝাঁক শব্দের খাঁচায় খাতা
মন কি বলে সবটাই হয় না শব্দে
আরও কিছু ঝকমারি শব্দজব্দে।
কবি মহীতোষ গায়েন -এর একটি কবিতা
সানাই
রাত খুন হয়ে যাচ্ছে আর
গাছের তলায় বসে সানাই
বাজাচ্ছে মাতাল প্রেমিক,
প্রেমিকা বাসবদত্তার বাসর
পুড়ছে লোভের আগুনে...
কবি তৈমুর খান-এর একটি কবিতা
সংশয়ের সিলেবাস
নিজেকে গড়ানোর প্রক্রিয়া কী
সমাজের কীভাবে উন্নতি হবে
কল্যাণ কল্যাণ বলে যাকে ডাকি
সে কি প্রকৃত কল্যাণ?
এসবই সংশয়ের সিলেবাস
রোজ সূচিপত্র দেখে দেখে
ধ্বংসাবশেষ হাতড়াই
সময়ের মরালাশ বজ্রের আলোয় চকচকে
বিভূতি উড়িয়ে দেখি শুধু হাড়
বেঁচে থাকা যদি নদীর মতো হয়
বিশ্বাস যদি পাহাড়ের মতো
তাহলে ধ্বংসাবশেষই সংশয়
আলো জ্বেলে কিছুই দেখা যায় না
অথচ অন্ধকারে স্পষ্ট হয় কল্যাণের মুখ।
১৭ তম সংখ্যার সম্পাদকীয়
অঙ্কন শিল্পী- মৌসুমী চন্দ্র
___________________________________________________
সম্পাদকীয়
নদীর মত বয়ে যাওয়া ভাষাশৈলী কে বুঝতে হলে প্রয়োজন সমুদ্র সুলভ মন। কারণ একটাই নদীর শেষ ঠিকানা সমুদ্র। আজ এগারোতম সংখ্যা প্রকাশিত হল। এতদিন লিখছেন, পড়ছেন আমাদের ব্লগ ম্যাগাজিন। পাশে আছি আমরা পরস্পরের কাছে। ভালোবেসে পড়ুন পত্রিকা। লেখা গুলি হৃদয়ে অন্তর্নিহিত করে তাৎপর্য বুঝতে শিখুন। জানান প্রতিটি লেখার মন্তব্য। তাই আমাদের ওয়েবসাইট ম্যাগাজিনে লেখা পাঠান, অন্যের লেখাকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। পড়তে থাকুন আমাদের পত্রিকা।
ধন্যবাদান্তে
World sahitya adda সম্পাদকীয়
##উত্তরপাড়া,সিঙ্গুর এবং কোলকাতার বেহালায় এছাড়াও যে কোনো প্রান্ত থেকেই যেকোনো ক্লাসই অনলাইনে করতে পারবেন।