Monday, August 16, 2021

প্রাবন্ধিক চাঁদ রায় -এর একটি কবিতা

 ছড়া ও তার প্রকারভেদ

   


প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তাঁর লেখা 'কাব্যতত্ত্ব' গ্রন্থে বলেছেন-- "মানুষের স্বভাবের মধ্যে কাব্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ছন্দ ও সুষমা বোধ মানুষের সহজাত। " এই সহজাত স্বাভাবিক প্রবৃত্তি পরিণতি লাভ করলে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম নেয় কাব্য। কাব্যের শ্রেণি দুরকম---যাঁরা গভীর প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন মহৎ বা উন্নত ক্রিয়া, প্রকাশ করেন উন্নত ও মহৎ চরিত্র। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে প্রার্থনা ও স্তুতি। অপর পক্ষে যাঁরা লঘু প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন লঘু চরিত্রের লঘু কার্যকলাপ। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক রচনা। 

দ্বিতীয় ধারাটির মধ্যে পড়ে ছড়া। ছড়া হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাহিত্যের একটি প্রাচীন শাখা। প্রখ্যাত পণ্ডিত ও সাহিত্যিক রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী সর্বপ্রথম এই অমোঘ উচ্চারণ করেছেন, "ছড়া বাংলা সাহিত্যের একটি মূল ধারা। " ছড়া হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকসাহিত্য। গ্রামবাংলায় এমন কেউ নেই যে, সে ছড়া জানে না বা শোনে নি। ছড়া মনে রাখাও সহজসাধ্য। দুচার লাইনের ছড়া মানুষের মনে দারুণ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। গ্রামের রস পিপাসু মানুষ রসের সন্ধানে ছড়ার আশ্রয় নেয়। বিশেষত মেয়েলি ছড়া সেই ভূমিকা পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিত ড: আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর লেখা, 'লোকসাহিত্য' গ্রন্থে ছড়াকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। ১) লৌকিক ছড়া ২) সাহিত্যিক ছড়া ৩) আধুনিক ছড়া। 

*লৌকিক ছড়া*

গ্রাম বাংলার লোকজ উপাদান থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এমন ছড়া হল লৌকিক ছড়া। এই ছড়াতে রচয়িতার নাম জানা যায় না। কারণ এগুলি মুখে মুখে প্রচলিত ও কোথাও এর লিখিত রূপ থাকে না। লৌকিক ছড়া বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন ছেলে ভুলানো ছড়া, সাধারণ নীতি মূলক ছড়া (খনার বচন, প্রবচন), ধাঁধার ছড়া এবং সর্বোপরি ব্রতের ছড়া। ব্রতের ছড়া গুলি কে সাধারণত শোলোক বলা হয়)। এই সব ছড়া গুলি নিতান্তই গ্রাম্য মহিলাদের নিজস্ব সম্পদ এবং দেশজ শব্দ যুক্ত আঞ্চলিক উপভাষায় ব্যক্ত। 

*সাহিত্যিক ছড়া*

ছড়া যখন কোনো কবি বা সাহিত্যিক দ্বারা রচিত হয়ে লোকের কাছে মুদ্রিত আকারে পরিবেশিত হয় তখন তাকে সাহিত্যিক ছড়া বলা হয়। এইসব ছড়ার রসদ লোক ছড়ার মধ্যেই অন্তর্নিহিত থাকে যা সযত্নে ব্যবহার করে থাকেন সাহিত্যিক তাঁর রচনায়। তবে একথাও সত্য যে, বহু সাহিত্যিক ছড়াও লোকজীবনে প্রভাব ফেলে অর্থাৎ লোক ছড়া সৃষ্টিতে প্রভাব ফেলে। 

*আধুনিক ছড়া*

বর্তমানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য অথবা শিক্ষা বিষয়ক কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যেসব ছড়া সৃষ্টি করা হয় তাকে আধুনিক ছড়া বলা হয়।

প্রাবন্ধিক তৈমুর খানের -এর একটি প্রবন্ধ

 প্রেমিক বাউল অনন্তের কবি কবিরুল 




এক গূঢ় অভিমান আর তাচ্ছিল্যের হাসি রেখেই চলে গিয়েছেন কবিরুল ইসলাম(২৪ /৮/১৯৩২ —১৯ /৭ /২০১২)। পঞ্চাশের দশক থেকে নীরবে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য চর্চা করেছেন। বাংলা কবিতাকে তিনি গভীরভাবে ভালবেসেই প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য বাংলা সাহিত্যের কোনও নিয়ামক পর্যৎ কবিকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেননি। সেই অভিমান কোনওদিন প্রকাশ না করলেও নীরব আর স্বগত সংলাপে কাব্যচর্চার মতো তিনি আশ্চর্য উদাসীনতায় এক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছেন ওইসব পুরস্কার আর তাঁবেদারে। গ্রামজীবন, পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবাৎসল্যের পরিমণ্ডলেই তিনি বসবাস করতে ভালবাসতেন। আগাগোড়া রাঙামাটি বীরভূমের বাউল পথিক হয়েই তিনি সুফি-সহজিয়া সাধনমার্গের সন্ন্যাসীপ্রতিম মানুষ। সারাজীবন তিনি আত্মখননের মধ্যে দিয়েই আত্মান্বেষণ করেছেন। নিজের সঙ্গে নিজেরই সংলাপে তুলে এনেছেন কবিতার ভাষা। নিজের রূপে নিজেকেই দেখেছেন। বহুমাত্রিক দৃশ্য, বহুমাত্রিক রূপ, বহুমাত্রিক অনুভূতির পয়গামেও একজনই রহস্যচারী সত্তার অধিকারী। তিনি কখনও নারী, কখনও অন্তরদেবতা, আসলে কবি নিজেরই পরিচয় বুঝতে চেয়েছেন। 


    কবিরুল ইসলাম জন্মেছিলেন নলহাটির কাছে হরিওকা গ্রামে। পিতা মহম্মদ ইয়াকুব হোসেন, মাতা মরিয়ম বেগম। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো করে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক হন। ষাট দশক থেকেই লেখালেখি শুরু। “দেশ” পত্রিকাসহ ভারত ও বিদেশের বহু পত্রিকায় লিখেছেন মূলত কবিতাই। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কুশলসংলাপ” প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। এরপর একে একে কাব্যগুলি হল : “তুমি রোদ্দুরের দিকে”, “বিবাহ বার্ষিকী”, “বিকল্প বাতাস”, “বিদায় কোন্নগর”, “তিনে তিনে চাপা চু”, “মাগো, আমার মা”, “দীঘার কবিতা”, “৩১ মার্চ ১৯৯২”, “অবলম্বন”, কবিতার জন্ম”, অনন্ত কুয়াশা”, অনূদিত কবিতা”, “আত্মখনন” এবং একটি গদ্যের বই “কবিতার ঘরবাড়ি” প্রকাশিত হয়েছে। বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী উচ্চারণে তাঁর কবিতার স্বর আলাদা করে চেনা যায়। বাউলের মরমিয়া সুরে হৃদয়ের বাঁশি আপনা থেকেই বেজে ওঠে। কোনও মনীষীলোকের শান্ত স্নিগ্ধ ব্যাপ্তি আত্মকথনের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। সীমাহীন অস্থিরতাকে তিনি ভাষা দিতে চান। প্রেম ও বিষাদ, স্বপ্ন ও যন্ত্রণাকে রূপান্তরের মাধুর্যে ও মিশ্রণে শিল্প করে তোলেন। সত্যসন্ধানী দার্শনিকের মতো কোনও প্রত্যয়ী শাশ্বতীর কাছে পৌছাতে চান ; কিন্তু বারবার ফিরেও আসেন নিজের কাছে — আত্মখননে –—


“পা বাড়ালে রাস্তা নেই চৌকাঠ পেরিয়ে 

হাত বাড়ালে বন্ধু নেই রাস্তার ওপারে 

রাস্তার শেষে কী আছে বন্ধুর ঠিকানা 

জানি না। জানি না।”


এক অবিমিশ্র সংশয় কবিকে তাড়া করেছে। মানবিক শুশ্রূষা আর আত্মিক শুশ্রূষা চেয়েছেন কবি। সংসারের অসংখ্য বন্ধন মাঝেও নিজেকে বাউল করে সহজিয়া আয়নায় মুখ দেখেছেন। বহুমাত্রিক জটিল প্রেক্ষিত থেকে জীবনের সৌন্দর্য খুঁজেছেন। টান টান পয়ার, মাত্রা নির্ণয়, ভাঙা-গড়ায় ছন্দ সচেতন কবি দক্ষ নাবিকের মতো তাঁর কাব্যতরণি ভাসিয়ে নিয়ে গেছেন। অসম্ভব দরদি আর নরম মনের মানুষ বলেই কবিতার সঙ্গে তাঁর অন্তরের একটা যোগ ঘটেছে। মাটি-অন্ন-আকাশকে আপনার বিচরণের সীমানায় বেঁধেছেন। বীরভূম ও কবিরুল নামটি তাই আজ একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। 


    প্রকৃত কবির পথ চলা তো মৃত্যুর পরই শুরু হয়। সুতরাং বেঁচে থাকাও মৃত্যুর পরেই। জীবনের প্রতিধ্বনি সীমাহীন। মাটির কায়া একদিন এই মাটিতেই বিলীন হয়ে যায়। বাউল সাধকরা বারবার একথা বলেছেন। কবিরুল যে চাবি খুঁজেছেন তা জীবনের চাবি। প্রথম জীবনের কাব্যগুলিতে জীবনরসের ভাঁড়ারের উৎসমুখে কবি পৌঁছাতে চেয়েছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই এসেছে সংশয় ও আত্মিক সংলাপে অগ্রসর হবার প্রেরণা। কিন্তু পরবর্তীতে এই জীবনরসায়নকে তিনি বাউল ও দর্শনে পরিমার্জন করতে চেয়েছেন। তখন এক সর্বব্যাপী নির্জনতা, আক্মবোধের সীমাহীন ক্ষেত্র কবিকে টেনে নিয়ে গেছে। অনুভূতির শব্দবাহী পর্যটনকে কবি স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন :


“মুখের ভাষা বন্ধ যদি 

হৃদয় জেগে ওঠো।”


আত্মখননে হৃদয় তো জাগবেই। রক্ত-মাংস কাম-কলা আর শিরা-উপশিরা নয়, বাউলের দেহতত্ত্ব তো আত্মদর্শনেরই নানা রূপ। সেখানে মান-অভিমানের সঙ্গে থাকে শূন্যতা ও আকুলতা। মনের মানুষকে খুঁজে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু এই মনের মানুষ যে কবির ভেতরেই বাস করে, দূরে কোথাও নয়, কবির রূপেই তাঁর রূপ, কবির হাতেই তাঁর হাত, কবির কণ্ঠেই তাঁর কণ্ঠ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। “আত্মখননে” এই দর্শনই বারবার উঠে এল। কবি লিখলেন :


“গাঁইতি-শাবলে 

নিজেকে খনন করি শুধু 

হয়তো তোমাকে তা স্পর্শও করে না কিন্তু 

আমি হাতে-নাতে ধরা পড়ি 

জলের গভীর থেকে হঠাৎ যেমন মায়াবী বঁড়শিতে 

মাছ উঠে আসে 

সে-সময় তোমার অস্তিত্ব আমি এক জেদে উপেক্ষা করি 

ভুলে যাই 

কিন্তু কী আশ্চর্য তুমি হাঁটুমুড়ে 

                               আমার ভিতরে ঢুকে পড়ো।”


ঘরের মধ্যে পড়শি বসতের মতনই কবির দ্বৈত সত্তা, আলাদা হয়েও একই শরীরে ধরা দেয়। কবি কথা বললেও বুঝতে পারেন :


“আমার গলার স্বরে তোমার আওয়াজ”


এভাবেই বাউল সাধনায় যেমন এক আশ্চর্য যোগ ঘটে নিজের সঙ্গে অন্যের, মানুষের সঙ্গে মানবেরও সেই যোগ। তখনই তো Manও Human হয়ে যায়। অন্ত হয়ে যায় অনন্ত। টি এস এলিয়ট হয়তো এই কারণেই সময়কে খণ্ডিত করেননি। অতীত বা ভবিষ্যৎ বলেই তাঁর কাছে কিছু ছিল না। প্রবহমান বা শাশ্বত বর্তমান বলেই তিনি ভেবেছিলেন : “Measures time not our time, rung by the unhurried.” আর এই কারণেই কবিরুল হৃদয়কে জাগিয়ে দিয়ে লিখলেন :


“মৃত্যুর এ ঘেরাটোপ, এসো পার হই —

এসো আমরা জীবনের দিকে হাঁটি।”


এই অবিরাম, অফুরান হাঁটা । বোধে বোধান্তরে হাঁটা । আমরা আমাদের মধ্যেও এই হাঁটার শব্দ উপলব্ধি করতে পারি।



প্রাবন্ধিক রামপ্রসাদ সরকার -এর একটি প্রবন্ধ






 কলকাতার পরী ও স্মৃতিমেদুরতা


।।এক।।

আমি এখন একটি জেনেরাল ইনসিওরেন্স কোম্পানীর প্রধান কার্যালয়ের ভিজিটিং রুমে বসে আছি, আমার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচের কিছুটা অংশের চেক পাওয়ার আশায়। ছ’তলার খোলা জানালা দিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখা যাচ্ছে। মাথার পরীটা ঘুরছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন স্থবীর থাকার পর পরীটা আবার ঘুরছে। কলকাতার পরী প্রাচীন ঐতিহ‌্যের প্রতীক। 

 এই পরীর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পুরনো দিনে ফিরে যেতে হবে। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত‌্যুর পর তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে এই সৌধটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। এই স্মৃতি সৌধটি নির্মাণ করতে ১৫ বছর সময় লেগেছিল ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত। ১৯২১ সালে সৌধটির মাথায় প্রায় সাড়ে ছয় টন ওজনের পরীটি বসানো হয়।

 তখন পরীটি ঘুরতে ঘণ্টায় পনেরো কি.মি. বেগের বাতাসের প্রয়োজন হতো। বলবিয়ারিং প্রযুক্তির সাহায‌্যে পরীটি ঘুরতো। কালের প্রবাহে শহরের অনেক উন্নতি সাধন হয়। চারদিকে সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে উঠেছে, বেড়েছে বায়ুদূষণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে হাওয়ার বেগ। তাই এখন পরীটি ঘুরতে ঘণ্টায় কুড়ি কি.মি.-র বেশি হাওয়ার বেগের প্রয়োজন হয়। মাঝে মধ‌্যেই পরীর ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। সে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার সৌভাগ‌্য আমি সেদিন কলকাতার পরীকে ঘুরতে দেখেছিলাম, সে ২০০৭ সালের কথা। 

 এই সৌধটির স্থাপত‌্যশৈলী ইতালিয় রেনেসাঁ ও মুঘল স্থাপত‌্য রীতির সংমিশ্রণ।

 ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে সারা বছর ধরে অসংখ‌্য মানুষের সমাগম হয়। তার প্রাচীনত্ব যেমন মানুষকে আকৃষ্ট করে, তেমনি মেমোরিয়াল চত্বরে প্রায় ৬৪ একর জমি জুড়ে নানান ধরনের বাহারী গাছ, রং বেরঙের ফুল গাছের সমারোহ সমভাবে আগত মানুষকে আনন্দ দেয়।

 এটি একটি সংগ্রহশালাও। এখানে পঁচিশটি গ‌্যালারি আছে। ব্রিটিশ আমলের বহু তৈলচিত্র ও নথিপত্র এখানে দেখতে পাওয়া যায়।

 একটি সংবাদ পত্রের প্রতিবেদনে প্রকাশ যে বাজ পড়লেই কলকাতার পরীর ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৬ সালে প্রথম বার বাজে ক্ষতি হয়েছিল পরীটির। ঘুর্ণন থেমে গিয়েছিল।

 দ্বিতীয়বার ২০০৬-২০০৭-এ বাজ পড়ে আবারও সেটির ক্ষতি হয়। দুবারই প্রযুক্তির সাহায‌্যে মেরামত করা হয়। বর্তমানে যেভাবে মুহূরর্মুহু বাজ পড়ছে তাতে যে কোনও দিন ‘কলকাতার পরী’-র ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। 


।।দুই।।

 তন্ময় হয়ে কলকাতার পরীর ঘোরা দেখেছিলাম। ভিজিটিং রুমের এক কোণায় পুরনো ফাইল পত্তর ডাঁই করা। তারই গন্ধ নাকে আসছিল। গন্ধটা খুব চেনা চেনা। ঠিক স্মরণে আনতে পারছিলাম না। গন্ধটার সঙ্গে কবে আমার পরিচিতি হয়েছিল।

 বাইরে অঝোরে বৃষ্টি নামলো। মন কেমন করা বৃষ্টি। তখনই স্মৃতির পরদায় একটা পুরনো মুখ ভেসে উঠলো। এমনি এক বর্ষণমুখর দিনে কলকাতা হাইকোর্টে পুরনো ফাইল-পত্তরের গন্ধের মাঝে চেয়ার টেবিলে মুখোমুখি বসে রঞ্জিতদা ও আমি। রঞ্জিতদা আমার বস। বি.কম, পাশ করে শিক্ষকতা ছেড়ে সবে তখন কলকাতা হাইকোর্টের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছি। জজ সাহেবদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। জজ সাহেবদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ইংরেজিতে নোট পাঠাতে হত। সেই নোটের ওপর তাঁরা তাঁদের নির্দেশাবলী দিতেন। সেগুলোর আবার সঠিক উত্তর তৈরি করে দিতে হত। 

 জজ সাহেবদের কাছে অফিস নোট কীভাবে লিখতে হয়, কীভাবে পেশ করতে হয় তারই তালিম দিচ্ছিলেন রঞ্জিতদা। প্রথম পরিচয়ে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে রঞ্জিতদা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।

 পুরনো ফাইল-পত্তরগুলোর মাঝেই বসে আমাদের কাজ। এগুলো যে কতো পুরনো কেউ বলতে পারে না। কিন্তু সেইসব ফাইল-পত্তরের মাঝে যে কতো পুরনো ইতিহাস লুকিয়ে আছে, সে কথা সবাই বলে। পুরনো ফাইলের সেই গন্ধ আজও আমার নাকে লেগে আছে।

।।তিন।।

 কাজের ফাঁকে রঞ্জিতদা একদিন আমাকে বলেছিলেন, এখানে পড়ে থাকিস না। কোনও ভবিষ‌্যৎ নেই। এই আমাকেই দ‌্যাখ না— চল্লিশ বছর ধরে কলম পিষে সেই কেরাণী হয়েই আছি। শেষ বয়সে গিয়ে হয় তো অফিস সুপার হব-তাও রিটায়ারমেন্টের কয়েক বছর আগে।

 আরও বলেছিলেন, তুই যদি এখানে থাকিস তাহলে লেখ। হাইকোর্টকে নিয়ে লেখ। পুরনো ফাইল-পত্তর দেখার পারমিশন করিয়ে দেব। এইসব ফাইল পত্তরগুলোর মধ‌্যে অনেক লেখার খোরাক পাবি। তোর যখন লেখার হাত রয়েছে, দেখিস তুই একদিন বড় লেখক হবি, নাম করবি।

 রঞ্জিতদার কথা শুনে সাহিত‌্যিক শ্রদ্ধেয় মণিশঙ্কর মুখোপাধ‌্যায়ের (শঙ্কর) লেখা প্রথম উপন‌্যাস ‘কত অজানারে’ বইটির কথা মনে পড়ে গেল। স্কুল ফাইনাল পাশ করার আগেই (১৯৫৮) এই বই আমার পড়া হয়ে গিয়েছিল। বইটির পটভূমিও জানা ছিল। 

 আমার গর্ব হতো এই কথা ভেবে যে প্রথিতযশা সাহিত‌্যিক শঙ্করের প্রথম উপন‌্যাসের পটভূমি কলকাতা হাইকোর্ট, আর আমি সেখানে চাকুরি করছি।


।।চার।।

 রঞ্জিতদা, তোমার কথা আমি রাখতে পারিনি। উঁচু বেতনের মোহে, হাইকোর্টের চাকুরি ছেড়ে, কলকাতা ছেড়ে, সান্ধ‌্য কলেজে ‘ল’ পড়া ছেড়ে মফস্বলের একটি ব‌্যাঙ্কের শাখায় জয়েন করি। তুমি তো তার আগেই রিটায়ার করে গেলে। তোমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি।

 তোমার কথা রাখলে হাইকোর্টের পুরনো ফাইল-পত্তর ঘেঁটে গল্প-উপন‌্যাস লিখে আজ হয়তো বড় লেখক হতে পারতাম। 

(লেখকের ব‌্যক্তিগত বাস্তব উপলব্ধি)

লেখক সুমন সাহার একটি মুক্ত গদ্য

দেড় তলা বাসার ছাদে𑁋ভুলগুলোর জার্নি 


ভুলে যেতে চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। ভুল হয়েই যায়। ভুলে𑁋কাউকে ছোট করে ভাবা। মনের অজান্তে, হতেও পারে, নাও হতে পারে। কাউকে ছোট ভেবে, নিজেই ছোট হয়ে আসা, ছোট কেমনে হয়, কেমন করে, ব্যাপারটা দেয়ালে ঘুষি দিয়ে নিজের হাতেই ব্যাথা। ব্যাথায় কাতরানো। আর ব্যাথাপ্রসঙ্গে, কাশফুল সাদামেঘকে ভুলে যায়। সাদামেঘ কাশফুলকে ভুলে যায়। একে অপরকে আগলে রাখবে। আগলে রাখতে পারে, অনেকেই পারলো না, পারবেও না। 


    সম্পর্কঘটিত দিকটা বিদিক হয়ে যায়। থুম মারে শালিক, কাক কাকের কাজই করছে। করবেই। নিন্দুক নিন্দাচর্চায় ব্যস্ত। অনেকের অনেক ব্যস্ততা। পৃথিবীতে কেউ বেড়াতে আসেনি। সবাই কিছু কাজ করেই যাচ্ছে। কাজ বলতে অনেক কিছুই। কোন প্রাণেরইতো অবসর নাই। একদিন দেখা গেলো অনেক করেও কাজের স্বীকৃতি নাই। না আসলেও কেউ কাজ থামাবে না। থামিয়েই লাভ কি। আনন্দ আসছে। অনেক আনন্দের অভাব টাকা বুঝে না৷ আনন্দের অভাবে যা যা হয়ে যায়। সেগুলোর একটা জার্নিতে গেলে বুঝা যাবে। যাবনে আরেকদিন...

লেখক তুলসী দাস বিদ -এর একটি গল্প

 গোধুলী


মাটির পথ ধরে গরু গুলো পায়ে পায়ে ধুলো উড়িয়ে বাড়ি ফিরছে। পশ্চিমদিকে আবির ছড়ালো রঙের ছটা, আকাশকে সুন্দর করে কনে সাজানোর মতো সাজিয়ে তুলেছে। দিগন্তে বলাকার ঝাঁক যেন সোনার হারের মতো উড়ে চলেছে। গালগল্প সেরে নদীর ঘাটের কাজ ফেলে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে আটপৌরে গায়ের বধূরা। মাঝিরা নৌকাটা পাড়ের খুঁটিতে বেঁধে বাঁশের মাচায় বসে মজলিশে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। পানকৌড়ি চখাচখি কাঁদাখোঁচারা সময় বুঝতে পেরেছে। জোনাকিদের আনাগোনা বাড়লেও সাঁঝের প্রদীপ জ্বালেনি। দূরের গাছ গাছালি ঘেরা গ্রাম ঝাপসা দেখাচ্ছে। ষাট ঊর্ধ্ব রমাকান্ত বৈকালিক ভ্রমণে আসার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সুন্দর মধুর ক্ষণকে জীবনের সাথে মিলিয়ে নেন প্রতিদিন। অভ্যাসগত ভাবে নদীর পাড়ে সবুজ দুর্বা ঘাসের গালিচায় শরীরকে এলিয়ে দিয়ে অতীতকে রোমন্থন করতে করতে অজান্তে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। এটাও বাস্তব সত্য নদীর পাড়ের নাতিশীতোষ্ণ ফুরফুরে হালকা বাতাস যেন মায়ের মতো স্নেহের হাত বুলিয়ে আদর করে। আচমকা কান্নার শব্দে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেলো। অদূরে শ্মশানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। শ্মশান সঙ্গীরা বল হরি হরিবোল বলে থেমে গেলেন।

লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প

 ঈশ্বরের দান



তিনটি দুধের শিশু আর গফুর মিঞাকে নিয়ে সাকিনা বিবির গরীবের সংসার। স্বামী গফুর মিঞা ভোরবেলায় দুটো পান্তা খেয়ে চলে যায় মাঠে। দিন ভর হাল বেয়ে সন্ধ‌্যেবেলা ফিরে আসে ঘরে। তিনটি বাচ্চাই তখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সাকিনা ভাতের থালা আগলে বসে থাকে মিঞার জন‌্য। মিঞা ফিরলে দুজনে একই থালায় খেয়ে শুয়ে পড়ে। মাটির মেঝেতে পাতা বিছানা। বিছানা বলতে দুটো বড় ছেড়া কাঁথা আর ছেড়া দুটো বালিশ। গফুরের মনে দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বপ্ন আবার ভীড় করে আসে।
তিনটে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হবে। পাঁচ বছরের আসিফকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। ছেলেটার পড়াশোনায় ভীষণ উৎসাহ। স্কুল থেকে ফিরে একটু খেয়েই পড়তে বসে আসিফ্‌। দিনের আলো থাকতেই পড়া শেষ করে রাখে সে। রাত্রিবেলায় লণ্ঠন জ্বালাবার তেল নেই। ওইটুকু ছোট ছেলে মনে মনে ভাবে কবে সে বড় হয়ে বাবার মতো রোজগার করবে। সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। বাড়ি বাড়ি কাজ করে মা যা দুটো পয়সা আনে, তাই দিয়েই ওদের খাওয়া-পরা কোন রকমে চলে যায়। 
দেখতে দেখতে ঈদ এসে পড়ে। সারা মাস সাকিনা ও গফুর রোজা রাখে। রাত্রি বেলা কিছু খেয়ে উপোস ভাঙ্গে। ছোট্ট আসিফ্‌ দেখে বাবা-মা অভুক্ত থেকে ওদের মুখে খাবার তুলে দেয়। প্রতি রাতেই প্রার্থনা জানায় খোদার কাছে ওদের দুঃখ দূর করার জন‌্য। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে আসিফ্‌ দেখলো পথের ধারে একটি মানিব‌্যাগ পড়ে আছে। কৌতুহলবসে আসিফ্‌ ব‌্যাগটা তুলতেই বেরিয়ে পড়লো একগুচ্ছ নোটের তাড়া। ভয়ে, উত্তেজনায় আসিফের বুক্‌ ধক্‌ করে উঠলো। ব‌্যাগটা নিয়ে ছুটে এসে মায়ের হাতে দিয়ে সব ঘটনা বললো। সাকিনা ব‌্যাগটা মাথায় ঠেকিয়ে বললো— ‘এটা ঈশ্বরের দান বাবা’।

কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

 কবিতাই জীবন কবিতাই মরণ




আমার মরণ হবে কবিতার পাতায়
বিরহের কলমে কতই যন্ত্রণা
লিখতে গিয়ে আমার অদ্ভুত চোখ
কিছু যেন একটা খুঁজতে চাই!
আমার যত আশা ভালোবাসা
কবিতাই জীবন কবিতাই মরণ।


আমি মরে যাবো মনের সুখে
আমার যাবতীয় লেখার ভাবনা
কী যেন একটা খুঁজতে চাই!
আমার লেখার অজান্তেই।


আমি সত্যকে আকাশ ছুঁয়ে
দেখতে চায় হৃদয়ের ঘরে।
অসম্ভবকে সম্ভব করে
লিখতে চাই কবিতার মানে।


আমার মরণ হবে বিরহের কলমে
তবুও এ জীবন চলে যাবে
ফাগুনে ফোঁটা নতুন ফুলে,
আমার গোপনীয় রক্ত ক্ষরণে
গোলাপের পাপড়ি কেঁদে ওঠে
গ্রীষ্মের উষ্ণ ভরা দুপুরে।


আমি মরে যাবো বিষ পান করে
তবু মিথ্যা অপমানকে বুকে নিয়ে
ভেসে যাবো নদীর জলে
দিনেদিনে প্রতিদিনে।


আমি প্রকৃতির যন্ত্রণা দেখে
নিয়েছি গলায় ফাঁসির দড়ি,
বেদনার কলমকে সঙ্গী করে
কবিতায় বাঁচবো কবিতায় মরবো।।

কবি সব্যসাচী মজুমদার -এর একটি কবিতা

 ক্রেংকার



ক্লীবে অস্হির হয়ে খুঁজছো

কার জন্মের মতো অন্ধে

দুটো চিল কেঁদে ওঠে...আছড়ায়


তীরে উপগতহীন ঈশ্বর

তটে অস্ট্রাল দেহ উদগ্রীব

আলো জ্বালবো না এই সন্ধ্যায়

 ভীত অংকুরতম ভাসানে 


তুমি অযথাই মনে রাখছো

সংবদলের কিছু সংঘাত

আর ক্রেংকার হয়ে ভাসছো

সোনা বন্দের মতো ঝরোখায়

কবি সুজিত রেজ -এর একটি কবিতা

 অন্তর্লীনা



দ্বিধা করিনি কোনদিন, যা কিছু দেওয়ার ছিল

                                           দিয়েছি তোমাকে।

দু'হাত উজাড় করে অথৈ লাবণ্যপূর্ণ প্রাণ,

সহজ সতেজ জীবনের সরল কমা-কোলন।


কিছুটা প্রাণের গুঁড়ো পারো তো মাখিয়ে দিয়ো।

চোখের কোলের চিকচিক খুশিবালি বিলিয়ে দিয়ো।

রৌদ্রের পালক-বিছানায় আমাকে সঙ্গী কোরো।


কী করে বোঝাব তোমায় 

                                   তুমি অপরিহার্য আমার!

বোঝো না বোঝো আমি কান পেতে রই,

নখের কিনার খুঁড়ে মনের মিনারতলে

                                          কুতুবমিনার গড়ি,

টান করা চিবুক ধরে অগণন নক্ষত্র চুপচুমু খায়।

কবি রানা জামান-এর একটি কবিতা

 মন্দ ভালোর নামে আছে সকল কামে




ভালোর সাথে মন্দ মিশে লাগায় দ্বন্দ্ব কী যে জগাখিচুড়ি

মন্দের বাহাদুরি থাকে না তো জুড়ি বাজায় এলাহি তুড়ি


দোলটা তুলে হিপে ভালোর গলা টিপে বাচ্চা দানে সারমেয়

ধাধা লাগায় চোখে আসতে থাকে লোকে ভেঙ্গে দিয়ে দ্বারকেও


দাপট বেহাল মন্দে দুর্বল কাহিল গন্ধে কাটা পড়ে অক্সিজেন

সবই জানে কর্তা পাতে নিয়ে ভর্তা দাবা খেলার প্রক্সি দ্যান


ভালোর ভাগ্যে ঠেঙ্গা আরো জোরে ভেঙ্গা থাকুক হয়ে কুনোব্যাঙ

রোদে পোড়ে নিত্য গিলে টিলে পিত্ত খেতে পাচ্ছে কুচোচ্যাং


বাড়ছে সংখ্যা মন্দের গলা টিপছে ছন্দের খেলে যাচ্ছে ক্যাসিনো

দিনে কিংবা রাতে দেখছি আছে সাথে রাষ্ট্রের অনেক মেশিনও


আমজনতায় ভালো আছে অগোছালো মুচকি হেসে ধুকছে

বাড়ছে সংখ্যা নিঃস্বের এটাই চিত্র বিশ্বের মন্দে ভালো ঝুকছে

মন্দ ভালোর নামে আছে সকল কামে সবাই চ্যালা শয়তানের

যা খুশি তা করছে জতুর গৃহ গড়ছে মত্ত নষ্ট লয় তালের।

কবি রফিকুল রবি -এর একটি কবিতা

 প্রত্যাক্ষিত গোলাপ



প্রত্যাক্ষিত গোলাপ তখন ফুলনামায় সিদ্ধ খুনি।

ক্ষণ-পল-ক্ষণ দিন পুঞ্জিকা দেখে সময়ের সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা গিলে ক্ষত-বিক্ষত, ছিন্নভিন্ন করে প্রেমিক হৃদয় ততোবার ঠিক যতোবার তার পুনর্জন্ম হয়।


তখন জল শূন্য চোখ, চাতক মুখে যেনো সে নির্বিকার একটা মানুষ মাত্র। খুনি গোলাপের নিচে দেয় আত্মদান ।


নষ্ট মস্তিকের ভ্রষ্ট রাস্তায় বিষাক্ত গোলাপ নির্যাস ঢালে অবলীলায় যেমন সক্রেটিস পান করেছিল হেমলক।

কবি প্রণব দাসের একটি কবিতা

 শেষপাতা

                  

এখনো ভাঙেনি লেখকের ঘুম

শেষের বাকি ক'টি লাইন

আগুনে পোড়ার মতো

ছটফট করে হৃদয়

কি হবে কে জানে?

প্রশ্ন তোমার আমার

গল্পটি শেষ হয়নি,

আরো আছে জীবনের

ম্যানহোল, ধুলো-ময়লা

 নয়তোবা চাঁদের সাথে

আলাপন।

ঘুমের ঘোরে বুক কেঁপে ওঠে

মনে করিয়ে দেয় তুমি অপেক্ষিত।

কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা

 অদৃশ্য



ভারতবর্ষের মানচিত্র আঁকবো বলে উরুর উপর বসিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখিয়েছি।

ঐতিহ্য পরম্পরার নির্বাচিত কাহিনী চিত্রায়িত করবো বলে নগ্ন হয়ে ধ্বংসকালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে বলেছি।নতুন শতাব্দীতে এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি করবো বলে

হিংস্র পশুর পাশবিকতায় তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে পরিবর্তনের স্রোতস্বিনী ধারাকে দেখাতে সর্বস্ব পণ করেছি।

এখনো তারস্বরে চিৎকার করে বলছো তোমার অনেককিছু দেখা বাকি?