Sunday, October 16, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -23


 


শ্যামলীদি মুখ গম্ভীর করে বলল, আজ আর কারো বাপের হিম্মৎ নেই যে আমার পথে কাঁটা ফেলবে। আর কেউ যদি সে চেষ্টা করে, তাহলে সে যোগ্য জবাব পাবে। সন্ধ্যায় আমাকে বেরুতেই হবে। তাই সাত ঘন্টা আগে বলে রাখছি, যদি কেউ কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তাহলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো। আদরী মাসী ভয়ে পিছিয়ে গেলো।


আমি শ্যামলীদির কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলাম। ভেবেছিলাম যদি শ্যামলীদির সাথে তেমন দক্ষযজ্ঞ হয়ে ওঠে তাহলে মহাদেবের সাঙ্গ-পাঙ্গর মতো আমিও ঝাঁপিয়ে পড়বো। কিন্তু এতদূর যখন গড়ালো না, তখন অনর্থক কথা খরচ করে কি লাভ। আদরী মাসী পালিয়ে যেতেই হেসে উঠলাম।


সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শ্যামলীদির চঞ্চলতার সীমা রইলো না । কেন যে চঞ্চলতা তা বুঝতে পারলাম। শুধু কারণ একটাই, প্রতিশোধ নেবার সুযোগ এসেছে। শ্যামলীদি আমাকে তৈরী হতে বলে পাশের রুমে চলে গেলো। আমি উৎফুল্ল মনে গুঞ্জরণ করতে করতে শাড়ী বদলে শ্যামলীদির রুমে প্রবেশ করতেই আমার চোখ দুটো বিস্ময় বিস্ফারিত হয়ে গেলো। এ যে অকল্পনীয় ! আমার চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এ কি স্বপ্ন না বাস্তব! শ্যামলীদি তখন সুরাপান করে চলেছে। পুরুষের পোষাকে সজ্জিত হয়েছে। পরণে চোস্ত প্যান্ট ও সার্ট। চল্লিশ মিলিমিটার চওড়া চামড়ার বেলটে কোমরটা শক্ত করে বাঁধা। কোনদিন ঐ অবস্থায় বা ঐ পোষাকে দেখিনি শ্যামলীদিকে।


আমাকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, কি রে পুরুষ বলে মানিয়েছে তো? আজ পুরুষের কাজ করতে হবে বুঝলি ?


পুনরায় বোতলটা মুখের কাছে নিয়ে যেতে ওকে বাধা দিয়ে বললাম - এ কি করছো শ্যামলীদি, এভাবে তোমাকে মদ খেতে তো দেখিনি?


মদ আমি খাই, তোকে জানতে দিইনি কখনো। ভেবেছিলাম আমার ঠোঁট কোনদিন মদ স্পর্শ করবে না, কিন্তু কেন খাই জানিস? মদে ভীরু সাহস পায়, দুর্বল শক্তি পায়, দুঃখীর দুঃখ-যন্ত্রণার লাঘব হয়। বোতলটা দে, আজ আর বাধা দিস না।


আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো বোতলটা। এক নিঃশ্বাসে বোতলটা শেষ করে গম্ভীর মুখে বলল, ঠিক মতো তাকে আয়ত্তে আনতে না পারলে প্রতিশোধ নিতে পারব না পদ্মা। ঐসব নিম্নগামী, হীন পথাবলম্বী মানুষদের শিক্ষা দিতে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় পারা যায় না। চল আর দেরী করব না, সন্ধ্যা প্রায় হলে এলো


তখন ধরণীর বুকে সন্ধ্যার ঘন তমিস্রা ঘনিয়ে এসেছে। বস্তী হতে বেরিয়ে ফুটপাতে


এসে ট্যাক্সী ধরলাম। আমাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে বেশী সময় লাগলো না। শিবাজীদার


নির্দেশমত উপস্থিত হলাম বচন সিংয়ের ভাড়া বাড়ীতে। আমরা উপস্থিত হতেই সেলাম করে একজন নেপালী চাপরাসি বলল, আপনার নাম শ্যামলী হ্যায় ?


শ্যামলীদি ঘাড় নেড়ে তার নিজের পরিচয় দিলো।


সে আমাদের উপরে যেতে বলল। উপরে গিয়ে দেখলাম শিবাজীদা বারান্দায় পায়চারি করছে। আমাদের দেখে শশব্যস্তে হয়ে বলল, পাশের রুমে আমাদের হিতৈষী বন্ধু বন্দী অবস্থায় আছে।


শ্যামলীদি ও আমি পাশের রুমে প্রবেশ করতেই রন্টুর সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলো। শ্যামলীদির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মুখটা তার সিঁদুরের মত হয়ে গেছে। চোখ


দিয়ে যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বেরুচ্ছে।


শ্যামলীদি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো ?


রন্টুর মুখে কোন বাক্য নেই। হাত দুটো তার শক্ত দড়িতে বাঁধা। শ্যামলীদি আবার বলল, কথাটা শুনতে পাওনি বুঝি ? আমাদের দেখে বোবা হয়ে গেলে নাকি?


রন্টু তবুও নিরুত্তর। মনে হলো আমাদের দেখে ওর শরীরের রক্ত প্রায় শীতল হয়ে গেছে।


শ্যামলীদির ঢল ঢল চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠিক ভিলেনের অভিনয়ের মতো ওর কাছে গিয়ে বলল, আ-হা, পরোপকারী যুবক, একেবারে বোবা হয়ে গেলে যে! তখনি শ্যামলীদি গর্জন করে বলে উঠল, আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে মিঃ পল্টু বিশ্বাস। আমাকে চিনতে পেরেছো? বলতো আমি কে? কি আমার পরিচয় ?


কোন উত্তর নেই। যেন একটা জড় পদার্থ স্তম্ভের সঙ্গে রজ্জুবদ্ধ হয়ে আছে। রন্টুর মুখে কোন কথা বেরুচ্ছে না দেখে শ্যামলীদি বজ্রকণ্ঠে বলল, এখন আর বোবা সেজো না বন্ধু, বোবা সাজলেও আর রেহাই নেই। তোমার মুখে কিভাবে কথা ফোটাতে হয় তার ওষুধ আমার কাছে আছে। বলো, কত টাকার বিনিময়ে পদ্মাকে আদরী মাসীর কাছে বিক্রি করেছো?


তবুও সে নিরুত্তর। কোন কথা মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে না দেখে সজোরে তার তলপেটে এক লাথি মারলো শ্যামলীদি। এই তো শুভারম্ভ এখনো অনেক পাওনা বাকী আছে। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে মেরে তোমার হাড়-পাঁজরা সব গুঁড়িয়ে দেবো। উত্তর দাও, কার প্ররোচনায় কিসের লোভে সমস্ত ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে তুমি আমাকে বারাঙ্গনায় পরিণত করেছো? এতো সাহসই বা কোথায় পেয়েছিলে?


শ্যামলীদির রুদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনে রন্টুর হাত-পা যেন শিথিল হয়ে আসছিলো। মনে হতে লাগলো মৃত্যুর অশুভ ইঙ্গিতে সে যেন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার বিয়োগান্তক পরিণতি কি করুণ!


মেয়েদের নারীত্ব নিয়ে সে ছিনিমিনি খেলেছে। মনে হয় শ্যামলীদির কাছ হতে সে এবার চরম শাস্তি পাবে। ওকথা চিন্তা করা মাত্রই শ্যামলীদি বেতের চাবুকটা চালালো রন্টুর শরীরে। রন্টু চাবুকের আঘাতে মুখটা একটু উঁচু করে চোখ দুটো বন্ধ করল।


শ্যামলীদি ওর ঠোট নেড়ে বলল, বড্ড আরাম লাগলো না ? আর একটা দি তাহলে ? বলা মাত্রই চার পাঁচ বার চাবুক চালিয়ে বলল, কতগুলো মেয়েকে এই কদর্য পথে ঠেলে দিয়েছো? উত্তর দাও পল্টুবাবু। কি ভাবছো, দেবে না? উত্তর তোমাকে দিতেই হবে, নয়তো...


শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির ধারার মতো চাবুকের আঘাত পড়তেই রন্টুর মুখ দিয়ে কথা বেরিয়ে এলো - আর মেরো না শ্যামলী, তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। শ্যামলীদি একটু থেমে বলল, এবার তাহলে কথা বেরুলো? পদ্মা, ওষুধে আমার


কাজ করেছে রে। বলো, আমাকে বিক্রি করে কত টাকা পেয়েছো? ৫০ হাজার।


মোটেই পঞ্চাশ হাজার! তাহলে আরো অধিক টাকার বিনিময়ে আমার নারীত্বকে পূর্ব মর্যাদায় ফিরিয়ে দিতে পারবে?


রন্টু নীরব। তীক্ষ্ম কণ্ঠে শ্যামলীদি বলল, যারা দশের কাছে কুমারীর কুমারীত্বকে জোর করে বিলিয়ে দিতে পারে, যারা নারীর নারীত্বকে ধূলায় মিশিয়ে দিতে পারে, তারা কেন পারবে না কুমারীত্বকে ফিরিয়ে দিতে? একে চিনতে পারছো? যে মেয়েটা সরল মনে বিশ্বাস করে দুমুঠো অন্নের সন্ধানে তোমার সাথে এই মহানগরীতে এসেছিল, সেই পূজনীয় দাদার কৃপায় শেষ পর্যন্ত এই নিষ্পাপ মেয়েটা লালসা ও প্রবঞ্চনার শিকার হলো? তোমার মতো জানোয়ারকে আমি সহজে ছাড়বো না। তোমার একমাত্র শাস্তি।


চাবুকের আঘাতে তাকে ক্ষত বিক্ষত করে তুলল। কাটা ছাগলের মতো ছটপট করতে থাকল আমাদের পূজনীয় দাদা। শ্যামলীদি তবুও ক্ষান্ত হয় না। প্রতিশোধের আগুন তখন তার শিরায় উপশিরায় ছড়িয়ে পড়েছে, রন্টুর গগনভেদী আর্তনাদে দেওয়াল যেন ফাটতে শুরু করল। একটু পরে শ্যামলীদি আমার দিকে ছুরিটা এগিয়ে দিয়ে বলল, পদ্মা, এই ছুরিটা ধর, তারপর -


ছুরিটা দেখে রন্টু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, আমাকে মেরো না শ্যামলী। আমায় ক্ষমা করো, আমি আর কখনো অন্যায় করবো না।


শ্যামলীদি অট্টহাসি হেসে বলল, পাগল নাকি! তোমার মতো মহাপুরুষকে বলি দিয়ে আমার পাপের বোঝা বাড়াতে যাবো কেন? তাছাড়া তোমাদের মতো ব্যক্তি শত শত মেয়ের উপার্জনের পথ করে দিচ্ছে, তাহলে কেন তোমাদের মতো উপকারী বন্ধুকে পৃথিবী হতে সরিয়ে দেবো?


শ্যামলীদি চকচকে ছুরিটা নিয়ে ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়ে জামাটা কেটে শরীর থেকে সরিয়ে দিতে সাদা ধবধবে পিঠটা মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে এলো। চাবুকের অস্পষ্ট দাগ দেখে শ্যামলীদি সান্ত্বনা দেওয়ার মত করে বলল, সত্যি, সাদা ধবধবে পিঠটা সিঁদুরে মেঘের মতো হয়ে গেছে। বড্ড লেগেছে প্রিয়তমের! না না, আর মারবো না। তবে তোমাকে যাতে ঐ পথে না এগোতে হয়, তোমার জন্য আরো মেয়ে নষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা করে মুক্তি দেবো। কি, মুক্তি নেবে ?


রন্টু নীরব। মুক্তি কি দেবে শ্যামলীদি ওকে? সত্যি বলছি, বড় মায়া হয়েছিল ওর অবস্থা দেখে। জানি, সে আমাদের কতখানি সর্বনাশ করেছে। তবুও আমার কোমল হৃদয় ওকে মুক্তি দিতে চাইছিলো। শ্যামলীদির রক্তচক্ষু দেখে ভরসা পাচ্ছিলাম না। ওকে ক্ষমা করবে। কিন্তু ওর মুখে মুক্তি উচ্চারণ শুনে মনকে ধাক্কা দিলো। তাহলে তোমাকে মুক্তি দিই, কেমন?


রন্টু মুখটা একটুখানি উঁচু করতেই প্রবল বেগে ছুরিটার পুরো অংশটাই ওর পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে এক পাক ঘুরিয়ে দিলো। তৎক্ষণাৎ পিচকারী ফোয়ারার মতো রক্ত বেরিয়ে এলো ক্ষতস্থান থেকে। রন্টু প্রচণ্ড বেগে চিৎকার করে উঠল। আমি ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলাম।


এ কি করলে শ্যামলীদি! আমি যে বিশ্বাস করতে পারিনি তুমি ওকে খুন করবে!


শ্যামলীদি একটু শ্বাস নিয়ে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বলল, এতো দিন পর একটু শান্তি পেলাম রে পদ্মা। যে যন্ত্রণায় আমার ভেতরটা মর্মে মর্মে দগ্ধ হচ্ছিল তা হতে আজ আমি নিষ্কৃতি পেলাম। একটু পরে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ভাবছিস অন্যায় করলাম ? না রে পদ্মা, কোন অন্যায় আমি করিনি। ওর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ও বেঁচে থাকলে আমাদের মতো বহু নিষ্পাপ মেয়ের সর্বনাশ করতো।


একটু পরেই শিবাজীদা হাঁস-ফাঁস করে আমাদের কাছে হাজির হয়ে বলল, উসকো খুন কর দিয়া।


শ্যামলীদি ঘাড় নাড়লো।


তব জলদী চলো। য়্যাহা রহনা ঠিক নেহী হ্যায়। পুলিশকো মালুম হো চুকা কি


হম য়্যাহা হ্যায়।


এক রকম জোর করেই আমাকে আর শ্যামলীদিকে বাইরে নিয়ে এলেন শিবাজীদা।


পুলিশ খবর পেয়েছে শিবাজী সিং তার পুরানো আড্ডায় ফিরে এসেছে। তাই ওকে


ধরবার জন্য নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরী করেছে।

Saturday, October 15, 2022

ফ্লিপকার্ট (Flipkart) এ কর্মী নিয়োগ || বেতন ১৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে || Flipkart Recruitment 2022 || Flipkart Supply Chain Operations Free Training and Internship 2022


 


আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় ও ভরসা যোগ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ফ্লিপকার্ট (Flipkart) নিয়ে এসেছে একটি ফ্রি ট্রেনিং এবং পেইড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম। এটি পরিচালনা করবে ফ্লিপকার্ট, যা একটি সাপ্লাই চেইন অপারেশন একাডেমি প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে ই-কমার্স শিল্পের সম্পূর্ণ ডিটেলস তথা ওভারভিউ পাবেন। এর সাথেই দেওয়া হবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য ট্রেনিং। এই প্রোগ্রামের দ্বারা প্রতিদিন পাবেন 500 টাকা করে। 


এই ফ্রি ট্রেনিং এবং পেইড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের জন্য সব থেকে সুবিধা হল এখানে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর প্রয়োজন হয় না, সরাসরি মোবাইল ফোন এর মাধ্যমেই এই ফ্রী ট্রেনিংটি নিতে পারবেন। প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে, আবেদন কিভাবে করবেন ইত্যাদি নীচে সম্পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে, দেখুন -




পদের নাম - 

Flipkart Supply Chain Operations Free Training and Internship 2022






বর্তমান এ এই ট্রেনিং কেন দরকার -


আমরা প্রত্যেক মানুষই জানি Flipkart একটি ভারতীয় ই কমার্স কোম্পানি এবং সিঙ্গাপুরের একটি pvt লিমিটেড কোম্পানি। বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ইলেকট্রনিক, ফ্যাশন, মুদি এবং লাইফস্টাইল বিভিন্ন আইটেম এছাড়া অন্যান্য পণ্য বিভাগগুলি এখানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে Flipkart সংস্থাটি সর্বপ্রথম অনলাইনে বই বিক্রির মাধ্যম ছিল। আজ সেই flipkart কোম্পানির নেট ওয়ার্থ $ 37 বিলিয়ন।


বর্তমানে ফ্লিপকার্ট কোম্পানি সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী যারা ই-কমার্স শিল্পে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাদের জন্য নিয়ে এলো Flipkart সাপ্লাই চেন অপারেশন একাডেমি ট্রেনিং প্রোগ্রাম।


এটি সম্পূর্ণ ফ্রি ট্রেনিং। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ই-কমার্স শিল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝানোর পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন অপারেশন ম্যানেজমেন্টের একটি ব্যাপক ওভারভিউ প্রদান করা হবে। এছাড়াও ইন্টার্নশিপ সময়কালে ইনডাইরেক্টিভ ভিডিও, সিমুলেশন, ডিজিটাল হ্যান্ডসআউটস, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং অত্যাধুনিক সুবিধা যুক্ত হ্যান্ডস-অন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সুদক্ষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।


এই ট্রেনিং এর সময়সীমা হবে সর্বমোট 61 দিন, যার মধ্যে প্রথম 16 দিন ডিজিটাল লার্নিং ট্রেনিং দেওয়া হবে এবং 45 দিন ইন্টার্নশিপ চলবে। এই ট্রেনিং টি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। 




শিক্ষাগত যোগ্যতা - 


কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে থাকতে হবে। এছাড়াও ITI, গ্রাজুয়েশন, ডিপ্লোমা সহ অন্যান্য উঁচু শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন।




বয়সসীমা -

18 থেকে 57 বছর বয়স্ক সকলেই এখানে আবেদন করতে পারবেন।



প্রয়োজনীয় তথ্য -


 ট্রেনিং চলাকালীন পোর্টাল নির্দিষ্ট অবস্থানে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপলব্ধ হতে হবে।

Flipkart সাপ্লাই চেন ট্রেনিং প্রোগ্রামের শর্ত

প্রার্থীর অবশ্যই একটি 2 GB RAM এবং 64 internal Storage যুক্ত মোবাইল ফোন থাকতে হবে।

ফোনের ব্যাটারি ক্ষমতা 5000 mAh হতে হবে।

এছাড়াও ভালো ইন্টারনেট স্পিড এবং প্রতিদিন ১ জিবি ডাটা উপলব্ধ থাকতে হবে।




Flipkart সাপ্লাই চেন ট্রেনিং প্রোগ্রামের সুবিধাঃ

(1) এই প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষতা বিকাশে শিক্ষার্থীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সহায়তা করবে।


(2) 45 দিনের ইন্টার্নশীপের পর সকলকে একটি উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০০ টাকা।




(3) পুরো 61 দিনের প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেলে, ট্রেনিং শেষে একটি শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। যা বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি বা ব্যবসায় কাজে লাগবে।




 ট্রেনিং তথা ইন্টার্নশিপের বিবরণ -


16 দিনের ডিজিটাল লার্নিং শেষ হবার পর অংশগ্রহণকারীদের 45 দিনের একটি ইন্টার্নশিপের জন্য নিবন্ধিত করা হবে। তারা SMS, ইমেল বা ফোন কলের মাধ্যমে তাদের যোগদানের বিবরণ, যেমন অবস্থান, যোগদানের তারিখ, রিপোর্টিং সময় এবং রিপোর্টিং ম্যানেজার সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য পেয়ে যাবে।



ইন্টার্নশিপে চলাকালীন, অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই নিম্নলিখিত নথিগুলি থাকতে হবে -


১)বৈধ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথ্য (Bank Account)

২)আধার কার্ড (Aadhaar Card)

৩)ঠিকানা এবং পরিচয় প্রমাণ

৪)প্যান কার্ড (Pan Card)



 নির্বাচন পদ্ধতি -

একটি ফ্রি অ্যাসেসমেন্ট নেওয়া হবে। এই অ্যাসেসমেন্টে বেসিক ইংলিশ, ম্যাথমেটিক্স এবং লজিক্যাল টাইপের প্রশ্ন থাকবে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিলেবাস অপশন থেকে সিলেবাসটি দেখে নিতে পারেন।


এই ফ্রী অ্যাসেসমেন্টে কমপক্ষে 80% নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে।


অ্যাপটিটিউড লার্নিং এবিলিটি এবং আপনি কেন এই ট্রেনিংটি করতে চান সেই বিষয়ের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ নেওয়া হবে এবং সেখানে উত্তীর্ণ হলে আপনাকে ট্রেনিং এর জন্য কল করা হবে।


আবেদন পদ্ধতি - শুধু মাত্র অনলাইন এ।

নীচে দেওয়া অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে পারবেন।




Official Website-

Click here 🔴


Notice -

Click here 🔴


Apply Now-Now-

Click here 🔴



Friday, October 14, 2022

ছোট গল্প - অশ্বত্থের ডায়েরী || লেখক - রঞ্জিত মল্লিক || Written by ranjit mallik


 

 অশ্বত্থের ডায়েরী

          রঞ্জিত মল্লিক




      "........আশ্বিনের শারদ প্রাতে.......

......... .......... বেজে........"


            ভাদ্রমাসের চড়া রোদ পড়েছে। আশাবরী ছাদে কাপড়গুলো শুকোতে দিয়েই নীচের ঘরে আড্ডাতে যোগ দিল। পুজো আসতে এখনও কিছুদিন বাকি। 


           আকাশে নীল মেঘের টোপর, খোলা খামে বলাকার চিঠি, পদ্ম দীঘির জলে শালুক, শাপলার সরল খুনসুটি, সবুজের মখমলে কাশের জনসভা, শিউলি ভোরে শিশিরের স্যাঁতস্যাঁতে অভিমান, মাঝে মাঝে ঢাকের মাতাল করা মিষ্টি মল্লারে ভেসে আসছে আগমনী সুর।


              আড্ডা বেশ জমেছে। ঘর থেকেই ঘন ঘন চায়ের অর্ডার আসছে। নিকোটিনের গন্ধে ভরপুর আড্ডার আসর। পুজোর বেড়ানো, শপিং, ঠাকুর দেখা নিয়ে কথা হচ্ছে। 


                 একটু পরেই দুর্নিবার ধূমকেতুর মতন উদয় হয়ে নৈঋতার বিয়ে ভাঙ্গার খবরটা দিল।


              "আমি আগেই জানতাম। নৈঋতার এই বিয়েটা টিকবে না।" আশাবরী বলল।

             "আমারও সব শুনে সেটাই মনে হয়েছিল। আমি জানতাম ও পারবে না গুছিয়ে সংসার করতে।"সোমলতা বলে ওঠে।

            "আসলে ওর একটা পুরানো অতীত আছে। সেই অতীতকে ছেড়ে..............."সাম্য কথাটা শেষ না করেই সিগারেটে টান দেয়।

            "আমিও কিছুটা শুনেছিলাম।তবে অতটা গুরুত্ব দিয়নি।" রাজন্যা বলে ওঠে।

               "সামান্য আভাসও আমিও পেয়েছিলাম। আমার সাথে প্রায়ই ফোনে কথা হত।"দুর্নিবার কথাগুলো বলেই একবার সকলের দিকে গভীর দৃষ্টি ছোড়ে। 

               "একটা অসমবয়সী প্রেম সব শেষ করে দিল। দোষটা দুজনের কারোর নয়।" সাম্য বলল। "হতে পারে এটা ইনফ্যাচুয়েশান। আর সেটাই মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রো করছে।" দুর্নিবার আবার বলে ওঠে।

                                     ***************


               নৈঋতা নিজেও ভাবতে পারেনি তার জীবনে এই রকম পরিণতি হতে পারে। শেষ বিয়েটা না টেকাতে পেরে আজকাল খুব ভেঙ্গে পড়েছে।


               সারাদিন ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকে। কোন কথা বলছে না। কিছুদিন ধরেই ভাবছে দুদিনের জন্যে কোথাও ঘুরে আসবে।


            "কি রে, সকাল থেকেই মুখ গোমরা করে বসে আছিস?" মা ঠাকুর ঘর থেকেই হাঁক পাড়ল।

           "মা, কিছুই ভাল লাগছে না। আমার আর এই জীবনে সংসার করা হবে না।" নৈঋতা বলল।

           "সবই আমার কপাল। আমাদের কপাল।একদিন দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।" মা স্বান্ত্বনা দেয়।

           "ভাবছি, একটু বাইরে যাব। স্কুল থেকে কদিন ছুটি নিয়েছি।"

          "কোথায় যাবি?"

          "মালদার চাঁচলে। আমার পুরানো স্কুলে একবার যাব।কিছু কাজ বাকি আছে। আজকেই বেরোতে হবে।"

           "আজ রাতেই যাবি?" 

          "এরপর গেলে আসল কাজটাই হবে না। অনেক দেরী হয়ে যাবে।"

           

               নাইটিতে চোখের জলটা মুছেই নৈঋতা ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। ব্যাগে পুরানো শাড়িটা ঢোকাতে গিয়েই কিছু চিঠি বেরিয়ে আসল। চিঠিগুলো দুর্জয়ের লেখা।মনটা নিমেষে ডানা মেলল দূর অতীতে।

                           

                                  *************


            ওর সাথে প্রথম বিয়ে। বিয়ের আগেই পাঁচ বছরের পরিচয় ছিল। দুর্জয়ের বাড়িতে যেদিন প্রথম পা রাখে, সেদিন ওর ঠাকুমার নৈঋতাকে দেখেই পচ্ছন্দ হয়েছিল।


               নৈঋতাও চাইছিল এই রকম এক শ্বশুড়বাড়ি। ঘরোয়া পরিবেশ। ছোট্ট সংসার।


               ধুমধাম করে বিয়ে হলেও বিয়েটা শেষাবধি টিকল না। দুর্জয় অনেক চেষ্টা করেছিল। নৈঋতাকে বোঝানোর। ও শোনেনি।


                প্রতি রাতে দুজনের ঘনিষ্ঠ হবার মুহূর্ত্যে অশ্বত্থের ছবি ভেসে আসত নৈঋতার মনে। নৈঋতা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল সেই সম্পর্ক থেকে। পারেনি, ভিতরে গুমরে উঠত। 


                একদিন দুর্জয় বলেই ফেলল...,


             "অশ্বত্থ কে? তোমার প্রাক্তন.....?"

            "আমার শুভাকাঙ্ক্ষী।।ভাল সম্পর্ক আছে। আমাদের মধ্যে। সেটা....."

            "আজও ওকে ভালবাস ?"

             "জানিনা। হয়ত কিছুটা হলেও ভালবাসি।তা না হলে সে আমার মনের মধ্যে আসবে কেন? আসলে আমাদের রিলেশানটা এমন যে তোমাকে ঠিক বোঝানো যাবে না।"

            "আর অশ্বত্থ? সেও কি....?"

            "হতে পারে।"


            টানা চার-পাঁচ বছর সংসার করার পর দুর্জয়ের সাথে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসে। জানেনা ও এখন কোথায় আছে। 


               ট্রেনে চেপেই ঘামে ভেজা শরীরটা চোখ বন্ধ করে জানালার গায়ে ছেড়ে দিল। 


                 এখন প্রায়ই অশ্বত্থের কথা মনে ভাসে। চাঁচলে চাকরি করতি গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। পরে বিএড করার সময় ওর সাথে ঘনিষ্ঠতা।


                                           **********


                বাবা, মা মরা অশ্বত্থ হোস্টেলে থাকত। বাড়ি জলপাইগুড়ি। গার্জেন বলতে একমাত্র কাকা,কাকিমা। মামার বাড়ির নিকটস্থ চাঁচলের স্কুলেই পড়ত।


           অংকে ভাল নম্বর পেতে অশ্বত্থের মামা নৈঋতাকে টিউটর হিসেবে ঠিক করে। বারো ক্লাসের ছাত্র অশ্বত্থ এমনিতেই অংকে ভাল। নৈঋতা এসে উজার করে সব কিছু শেখাতে শুরু করল।


                 আসতে আসতে নৈঋতা বুজতে পারল, অশ্বত্থ কেমন যেন ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।ওর জীবনের অনেক কিছুই শেয়ার করত দিদিমণির কাছে। সুন্দর বণ্ডিং ছিল দুজনের।


               এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বণ্ডিংটা আরো স্ট্রং হল। নৈঋতার ছোট ছোট কাজে অশ্বত্থ এগিয়ে আসে। বাজার হাট , ওষুধ কিনতে অশ্বত্থের ডাক পড়ত।


             নৈঋতা অসুস্থ হয়ে পড়লে, অশ্বত্থ নিজে এসে দিদিমণির রান্না করে দিয়েছে। মাথায় জলপটি দিয়েছে।

                           .......................


             "আজ শরীর কেমন আছে? জ্বরটা কমেছে দেখছি।"

             "জ্বর কমলেও শরীরে একটু ব্যথা আছে। মাথাটা পুরো ভারী হয়ে আছে।"         

         "কপালটা একটু টিপে দেব? বেশ হালকা লাগব।"

           "না, থাক।"

                                  ...........

             "অঙ্কগুলো সব হয়ে গেছে?""

             "সব হয়নি দিদিমণি। দু একটা বাকি আছে।"

              "স্কুলে কি করাল?"

               "ক্যালকুলাস।"  


                  বারো ক্লাসে হিংসে করার মতন নম্বর পেয়ে অশ্বত্থ জলপাইগুড়ির কলেজে ভর্তি হয়। ফিজিক্স অনার্স। নৈঋতার ইচ্ছে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক। কিন্ত আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ।নৈঋতা সব দিক ভেবে এগিয়ে আসে। অশ্বত্থকে জয়েন্টে বসতে বলে।


                  এক চান্সে জয়েন্ট উতড়ে যায়। জলপাইগুড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই ভর্তি হয়। নৈঋতাই সব খরচ দেয়। 


               পরে ও জলপাইগুড়িতে বিএড করতে এলে সম্পর্কের নিবিড়তায় পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে ওঠে।


              নৈঋতাও বুঝতে পারে অশ্বত্থের প্রতি কেমন একটা টান চলে আসছে। সেই টান কি ভালবাসার ? না অন্য কিছু? নিজেই জানে না।


               অশ্বত্থের পড়া শেষ হতে তখনও দুই বছর বাকি। নৈঋতা মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে জলপাইগুড়ির একটা স্কুলে জয়েন করে। মাঝে মাঝে অশ্বত্থকে ডেকে তার স্টাডি কেমন চলছে খোঁজ নেই। নিজের হাতে ওর খাবার, টিফিন বক্স সাজিয়ে দেয়।


                পুরানো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখটা বুজে এসেছিল খেয়াল করেনি। বর্ধমান এসে গেছে।


                জানালার দিকে আপন মনে তাকিয়ে আছে। একটু পরেই পিছন থেকে একজন টোকা মারল। ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে বিদর্ভ দাঁড়িয়ে।


            "তোমাকে শিয়ালদাতে উঠতে দেখেছি।"

          "কোথায় যাচ্ছ?"

         "অফিসের কাজে বালুরঘাটে যাচ্ছি।"  

                   "তুমি?"

         "মালদা। কাজ আছে। জলপাইগুড়িও যেতে পারি।"

       "বুঝেছি।"

      "কি?"

       "সেই পুরানো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পার নি?"

      "ঠিক ধরেছ। বেরোতে না পারলে তোমাকে এত সহজে........?"

    "মন থেকে বলছ?"


                 ট্রেন ছেড়ে দিল। বিদর্ভ ওর দুটো বগির পিছনেই উঠেছে। বেশী দিন হয়নি ওদের ডিভোর্স হয়েছে।


             দুর্জয় চলে যাবার পর ঠিক করেছিল জীবনটা একাই কাটাবে। কাউকে আনবে না এই ছন্নছাড়া জীবনে। অসুস্থ মার কথা রাখতেই কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিক বিদর্ভকে বিয়ে করে।


            ওকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল। পারেনি। তার কারণও ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর অশ্বত্থ ভাল চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালুরু চলে যায়। চার বছর পরে ওকে ফ্রান্সে পাঠায়।


             তখন থেকেই অশ্বত্থের সাথে যোগাযোগটা ফিকে হয়ে আসে। বিদর্ভকে অশ্বত্থের কথা বলতে হয়নি। খাঁচার পাখি অশ্বত্থকে বিদর্ভ নিজেই একদিন খাঁচাটা খুলে মুক্ত করে দিল।


           বিদর্ভ হঠাৎ একদিন জানায় যে সে এই সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাই। কারণ এক নার্সের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে যাকে সে ভালবাসে। যদিও নার্স তার থেকে বয়সে আট বছরের বড়।


     "আমি মনামীকে ঠকাতে পারব না। তোমার আগে ও আমার জীবনে এসেছে। ও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।"

   "সব বুঝলাম। তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন ? মার কাছে মহৎ হতে?"

     "কিছুটা তাই। তখন সিচুয়েশান অন্যরকম ছিল।"

  "এখন হঠাৎ নতুন করে পুরানো প্রেম উথলে উঠল?"

"এক্সিডেন্টের পর মনামীর স্মৃতি চলে যায়। এখন ওর স্মৃতি ফিরে এসেছে। ও আমাকে খুঁজে চলেছে।"

"বেশ তো যেদিন বলবে আমি ডিভোর্স পেপারে সই করে দেব।"


               নৈঋতা আর কথা বাড়ায়নি। বিদর্ভের দাবী মেনে নিয়েছিল। পরে চিঠি লিখে বিদর্ভকে অশ্বত্থের বিষয়ে সব জানিয়েছিল।


            ট্রেন বোলপুর ছাড়তেই ঘুমটা আবার ভেঙ্গে গেল। বোলপুরের শান্তিনিকেতনে একবার অশ্বত্থ কাকাদের সাথে এসেছিল পৌষমেলাতে। সেবারে নৈঋতা দিদিমণিকেও আসতে রাজী করিয়েছিল। ওর মনে আছে পৌষমেলাতে মাদলের সাথে পা মিলিয়েছিল। অশ্বত্থ ওকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখিয়েছিল।


              আজও নৈঋতার শূন্য বুকের মাঝে একটা মাদল বাজে। সেটা আনন্দের না কষ্টের ও নিজেই জানে না। তবে সেই মাদলের তালে তালে, মাঝে মাঝে অশ্বত্থের স্পন্দনটা টের পায়।


          চোখের জলটা মুছেই আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল। ঘুম কিছুতেই আসছে না।


                     

                                   ***************


                   ট্রেন মালদা ছুঁয়েছে। চাঁচলের স্কুলের কাজ মিটতে একটু বেলা হল।


              শরৎকাল যে এসেছে প্রকৃতির সাজ দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। আম বাগানের ফাঁক ফোকর দিয়ে হলদে রোদ্দুরটা আলপনা এঁকে বেড়াচ্ছে। কাশের বনে সাদা বকের জ্যোৎস্না।


               অশ্বত্থের মামার সাথে দেখা হয়েছিল। ওর খবর একটা পেয়েছে। আর তাতেই......। পুরানো স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে। চোখ ছলছল করছে অনবরত। নিজেকে আজ ভীষণ একা মনে হচ্ছে। একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। চারিদিক জমাট অন্ধকারে ঘিরে ধরবে। নৈঋতার মনে হচ্ছে সেই অন্ধকার ওর সব কিছু কেড়ে নেবে। 


                                  ********


             চাঁচল থেকে জলপাইগুড়ি অনেকটা পথ। ওখানে নেমেই চোখে মুখে একটু জল দিল। ওখানের পুরানো স্কুলেও একবার যেতে হবে।


                স্কুল থেকে ফিরেই সোজা চলে আসল অশ্বত্থের বাড়ি।বাড়িটা আগের মতই আছে। সেই রকম সাজানো গোছানো। গুছিয়ে রাখার সেই মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে না। মামার কাছে গতকালই শুনেছে ও দেশের বাইরে আছে। তবে বাড়ির মধ্যে পা ফেলেই বুঝতে পেরেছে একটা চাপা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সাড়া বাড়িতে। 


  "অশ্বকে দেখছি না?"

   "অশ্ব এখানে এখন আর থাকে না।"

   "শুনলাম আমেরিকাতে আছে?"

   "কে বলল?"

   "মামী।"

   "হ্যাঁ, ঠিক শুনেছ। ও আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।"


           অশ্বের কথা বলতে বলতে কাকিমার চোখ ছল ছল করে উঠল। একটু থেমেই, "আর একটা দিন থেকে গেলে হত না?"

"এবারে ছুটি কম। পরে একবার আসব।"


                নৈঋতা বেরোনোর জন্যে রেডী হতেই কাকিমা ওর হাতে একটা ডায়েরী এগিয়ে দিয়ে করুণ সুরে বলল," ডায়েরীটা অশ্বত্থের। এখানে অনেক কিছু লেখা আছে। ও তোমাকে দিতে বলেছে।"


                 ডায়েরীটা হাতে নিয়ে নৈঋতা বেশ অবাক হল। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে কাকিমণির দিকে।একটু থেমে বলল,"কিন্তু কেন?"

"জানিনা, আমরা কোনদিন এর পাতা উল্টেও দেখিনি। ও চলে যাবার আগে এটা তোমাকে........"


            ডায়েরী নিয়েই নৈঋতা স্টেশনের দিকে পা বাড়াল। ছিপ ছিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ওর চোখেও নামল শ্রাবণের ভরা কোটাল। বৃষ্টির বিন্দুগুলো পদ্মপাতার উপর পড়ে এক অপূর্ব সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করছে।


              ট্রেনে উঠেই জানালার ধারে হেলান দিয়ে বসল। আজ মনে হচ্ছে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। অশ্বত্থের মুখটা ভাসছে সদ্য ফোটা শিউলির মতন।ওর সরল হাসি, শিশুসুলভ কথাগুলো কানে বাজছে। মনে মনে ভাবছে,ভালই হয়েছে ও দূরে চলে গেছে। কেউ আর ওকে বিরক্ত করবে না।


             নৈঋতা বুঝতে পেরেছিল অশ্বত্থের কাছে ও বাঁধা পড়েছে। অশ্বত্থও একটা অজানা টান অনুভব করত ওর প্রতি। হতে পারে সেই টানটাই ভালবাসা। কিংবা ভালবাসার মতই এক শক্ত, নিখাদ বন্ধুত্ব।                     

                                   *****************


                   সময়ের খরস্রোতে ন টা বছর দেখতে দেখতে কেটে গেছে। বোধনের রোদ্দুর আবার চৌকাঠে এসে ঝলমল করছে। কদিন পরেই মা অপর্ণা সবার ঘর আলো করে আসবে।


                    "বাজলো তোমার

                      ........... আলোর বেণু......."


                    আশাবরীর বাড়িতে পুজোর আড্ডাটা আর নেই। সেখানে ঘোলাটে ভেজা অন্ধকার। তার প্রতিফলন অশ্বত্থের জলপাইগুড়ির বাড়িতে। নৈঋতার ঘরেও। কাকিমণি মারা গেছে। নৈঋতার মায়েরও বেশ বয়স হয়েছে। 


                   দুর্জয় মাঝে মাঝে নৈঋতার মা, বৃদ্ধা সবিতাদেবীর খোঁজ রাখে। ও আর বিয়ে করেনি। সিঙ্গল ফাদার হিসেবে থাকতে চায়। একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছে। বাবা, মেয়েতে আছে ভালই। বিদর্ভের সাথে মনামীর অসমবয়সী প্রেমটা ছাদনাতলার গন্ধ মাখলেও শেষরক্ষা হয়নি। মনামীর আবার স্মৃতি লোপ পেলে বিদর্ভ শোকে দুঃখে তিন বছরের মধ্যেই মারা যায়। 


                  আজ অষ্টমী। সন্ধিপুজো শুরু হতেই সবিতাদেবী প্রদীপ হাতে নৈঋতার ঘরে ঢুকল। প্রদীপের স্বর্ণাভ আভায় ধুলোর চাদরে মোড়া মেয়ের ছবিটা জ্বল জ্বল করছে।ঠিক যেন মা উমা!  


              ছবির ভিতর থেকে নৈঋতা মিষ্টি হেসে যেন বলছে,"মা, তোমাদের আদরের ঋতা ভাল আছে। যেখানে আছে সুখেই আছে।"


               ঐ আলোর ছটা, নৈঋতার মধুর হাসি জলপাইগুড়ির অরবিন্দ পল্লীর এক দোতলা বাড়ির ছোট্ট ঘরকেও আলিঙ্গন করল। যেখানে ভালবাসা আজও বেঁচে আছে। নৈঋতা, অশ্বত্থ যেখানেই থাকুক ওরা ভাল থাকবে।


                সন্ধিপুজো শেষ হতেই ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হল। সবিতাদেবীর চোখেও নামল শ্রাবণের ভরা কোটাল।      


               "দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী......

                ..........মহিষাসুরমর্দিনী........"


               কিছু অসমবয়সী প্রেম কুসুমিত হবার পর কালের নিয়মে কেন জানিনা ঝরে যায়। কিন্তু তার রেশ আজীবন থেকে যায়। নৈঋতা, অশ্বত্থ, আর বাকিরা সেই অসম, বন্ধুর পথের কুশীলব।


                                    **************


              সেদিন চাঁচলের মামা অশ্বের সঠিক খবরটা দেয়নি। কাকার বাড়িতেও বিষয়টা চেপে রাখে। কাকিমণি জানত, শুনলে নৈঋতাও ভীষণ কষ্ট পাবে। তাই ওকে কিছু বলা হয়নি।। ও যে আসবে সেটাও ভাবতে পারেনি। তাছাড়া কাকিমণিও অশ্ব আর নৈঋতার মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল।

           

             ট্রেনে যেতে যেতে ডায়েরীর অনেকটা পড়ে নৈঋতা অশ্বত্থর মনের অনেক অজানা, না বলা কথায় জানতে পারল। যার কিছুটা অনুভব করেছিল মাত্র। হৃদয় দিয়ে। ভালবাসা দিয়ে।      


                                   *****************

          

               জলপাইগুড়ির স্কুলে কিছু বছর চাকরি করার পর প্রোমোশন পেয়ে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে হুগলীর একটা স্কুলে যোগ দেয়। ও চেয়েছিল অশ্বত্থ জীবনে বড় হোক। রোজ ভগবানের কাছে প্রে করত। ভগবান প্রার্থনা শুনেছে। 


            অশ্বত্থ চাকরি পাবার পর ব্যাঙ্গালুরু চলে যায়। তারপর ইউরোপ। ওর সাথে যোগাযোগ একটু ঘোলাটে হতেই নৈঋতাকে একাকীত্ব গ্রাস করে। সেই সময়ই বিদর্ভ আসে জীবনে। অশ্বত্থ বিয়ের খবরটা জানল অনেক পরে।ও দিদিমণির প্রথম বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। হয়ত চায়নি উনি এত তাড়াতাড়ি ঘর বাঁধুক।


               দু দুটো বিয়ে ভেঙ্গে যেতে অশ্বত্থ একটু অবাকই হয়েছিল। বিদেশ থেকে ফেরার পরে অশ্বত্থও একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। অফিসের বসের মেয়ে শ্রীকে বিয়ে করে ফেলে। ততদিনে নৈঋতাও বিদর্ভের সাথে সংসার করছে। যদিও শ্রী বয়সে আট বছরের বড়, তবুও তো একটা সম্পর্ক।


               ভালবাসতে পারেনি শ্রীতমাকে। সব সময় নৈঋতার ছবি মনে ভাসত। জানত দিদিমণির একটা নতুন সংসার হয়েছে। উনি হয়ত আর ফিরে আসবেন না। ওখানেই বাঁধা পড়েছেন। 


               অশ্বত্থের কষ্টও হয়েছিল। বসের মেয়ে বলে শ্রীতমা মাঝে মাঝে অশ্বত্থকে মানসিক নির্যাতনও করত। মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, নিত্য অশান্তি চলত।মাঝে মাঝে ও ডিপ্রেসনে চলে যেত। সেই কারণেই..

.

                                       *****************


                সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে নৈঋতা ডায়েরীর সবটা পড়তে পারেনি। ওর ঘুম চলে এসেছিল। সারাদিনের ক্লান্তিতে। বাড়িতে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে গভীর রাতে ডায়েরীর বাকি পাতা ওল্টাতেই চমকে উঠেছিল। সারা শরীর বেয়ে নেমে এসেছিল শিহরণ।


                   ডায়েরীর বেশ কিছু পাতাতে অশ্বত্থ দিদিমণির প্রতি তার ভালবাসা উগড়ে দিয়েছে। সেখানে পরিষ্কার আদরের দিদিমণির প্রতি তার চূড়ান্ত দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। সাদা কালো অক্ষরে, পেনের কালিতে তা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু লাইনে অশ্বত্থ নিজেই স্বীকার করেছে যে, সে নৈঋতাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাকে গভীরভাবে কাছে পেতে.......


                ডায়েরীর শেষ দিকের কিছু লাইনে নৈঋতার চোখ আটকে গেল। বেশ কিছু কথা এলোমেলো আর অসংলগ্ন। সেখানে ক্রমশঃ ভয়ের ভাব প্রকট। কিছু কিছু লাইন সুউচ্চ পর্বতের গভীর গিরিখাতের মতন সংকীর্ণ ঢালু হয়ে নেমে গেছে। যা অতীব ভয়ঙ্কর। 


                 নৈঋতার মনে হচ্ছে সে ঐ গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সে তলিয়েও গেল। ডায়েরীর একেবারে শেষ লাইনগুলো তার আর পড়া হয়ে ওঠে নি। আর কোনদিন হবেও না।


                      "........জাগো দুর্গা.......

                       .......... ..........তুমি জাগো......"


                 মহালয়ার ভোর শুরু হবার আগেই নৈঋতার শোক জর্জরিত বেদনা ক্লিষ্ট শরীরখানি সিলিং থেকে ঝুলে পড়ল ভীষণ ব্যথায় আর অভিমানে। 

                                               ********** 


              সেদিন দুই বাড়ির কথা শুনে নৈঋতা বুঝেছিল অশ্ব আমেরিকাতে আছে। আসলে ও ততদিনে মারা গিয়েছিল। যেটা ওকে কষ্টে কেউ বলেনি। 


              অশ্বত্থ আমেরিকা গিয়েছিল ঠিকই। তবে ও মারা যাবার দেড় বছর আগে। আমেরিকা থেকে ফিরে এসেও শান্তি পায়নি।শ্রীতমা ওর জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছিল। যার নিদারুণ পরিণতি সুইসাইড।


             মারা যাবার একমাস আগেই সব কিছু লিখে রেখেছিল ডায়েরীর পাতায়। প্রথমদিনের ক্লাস থেকে শুরু করে একটু একটু করে দিদিমণির সান্নিধ্যে আসা, বিপদে আপদে উনার পাশে এসে দাঁড়ানো, নৈঋতার অকৃপণ সাহায্যের হাত বাড়ানো, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা কোন কিছুই বাদ রাখেনি।


                 ডায়েরীর শেষ দিকের লাইনগুলোতে অশ্ব অব্যক্ত যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছে। দিদিমণিকে হারানোর ব্যথায় দ্বগ্ধ হয়েছে তার সবুজ মন। বারে বারে তার লেখার আকুতিতে এটা স্পষ্ট যে সে নৈঋতার কাছে ফিরে আসতে চায়। ওর এই চরম দুর্দিনে নৈঋতার আগের মতন পাশে দাঁড়ানোটা খুব প্রয়োজন।


               সময়ের জোয়ার যত সামনের দিকে এগিয়েছে অশ্বত্থ নিজেকে তত গভীর হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে। ডায়েরীতে নিজেকে শেষ করে দেবার কথাও বলা আছে। আর সেটাই শেষ পরিণতি পেয়েছে।


              নৈঋতাও ডায়েরীটা পড়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। অশ্বত্থের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি। 


               শেষে চরম দ্বন্দ, হতাশা, একাকীত্বের দাঁড়িপাল্লায় দুলতে দুলতে অশ্বত্থের মত ও ফিরে গেছে না ফেরার দেশে। 


                                     ************


                 নবমীর পুজো এখনও বসেনি। গতকাল সারাদিন উপোসের পর ঘুমিয়ে ছিলেন। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। 


                দরজা খুলেই দেখে দুর্জয় মেয়ে শাল্মলীকে নিয়ে হাজির। নীল শাড়িতে ওকে অসাধারণ লাগছে। নৈঋতা নাকি ছোটতে এই রকমই ছিল। দুর্জয় প্রতিবার বিজয়াতে আসে। এই প্রথম মেয়েকে আনল। তাও আবার নবমীর সকালে। 


           "দিদুন,আমি কদিন তোমার কাছেই থাকব।"

           "মা, আসলে আমি অফিসের কাজে একটু বাইরে যাচ্ছি। শালুর হোস্টেলেও ছুটি পড়েছে। তাই ভাবলাম......."


            সবিতাদেবী দুর্জয়ের কথা ঠিকমত শুনতে পায়নি। শাল্মলীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকরুদ্ধ। উনার বারান্দাতে সোনামুগ হলদে রোদের জলসা। তার অণু,পারমাণু নাতনির চোখেও।


           নৈঋতা ফিরে এসেছে। সেই সাথে মনে হল মা দশভূজাও আজ উনার ঘর আলো করে বসে আছেন। সবিতাদেবীর চোখে নিষ্পাপ আশ্বিনী শিশিরের স্পন্দন। সব দুঃখ ভুলে মনটা নতুন করে খুশীতে ভরে উঠল। 


            "শঙ্খ শঙ্খ মঙ্গল গানে......

            "জননী এসে দ্বারে........"

             

               

              

            

        

Thursday, October 13, 2022

ছোট গল্প - ভ্রান্তির ভূত || লেখক - তৈমুর খান || Short story - Vrantir vut || Written by Taimur khan


 

ভ্রান্তির ভূত 


    তৈমুর খান



আলো জ্বলা দেখে বাড়ির কাছাকাছি যাচ্ছি আর অমনি মনে হচ্ছে বাড়িটা সরে গেল। আর একটু এগিয়ে গেলে বাড়িটার কাছে পৌঁছাব। এমনি করে করে যতদূর এগিয়ে যাচ্ছি বাড়িটা সরে যাচ্ছে। গ্রামে ঢোকার রাস্তাটা দূর থেকে মনে হচ্ছে: হ্যাঁ আমাদেরই গ্রাম। রাস্তার দু'পাশে তালগাছ, গ্রাম ঢোকার মুখে বিশাল একটি বটগাছ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তেমনই ধারণা। মানিকের সাইকেল ভালো করার সেই আটচালা। বামদিকে কুতুবের চায়ের দোকান। তেমনই তো সব ঠিকঠাক আছে!


     দাদু বললেন: সকালে তো এই রাস্তা দিয়েই এসেছি! আমাদের ভুল হবার কথা নয়! কিন্তু এতটা পথ হেঁটেও এখনো পৌছালাম না কেন?


  আমিতো ভয়ে জড়োসড়ো। দাদুর বাম হাতের একটা আঙুল শক্ত করে ধরে আছি। রাস্তা কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আকাশে ঘন ঘোর মেঘ। আষাঢ় মাস। ব্যাঙের সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকারা একটানা ডেকে যাচ্ছে। মানুষের কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটা মালগাড়ি সো সো শব্দে পেরিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে দাদুকে বললাম: এবার আমরা ঠিক পথেই চলেছি আর ভুল হবে না।


   কিন্তু একটু পথে হেঁটেই বুঝতে পারলাম আমাদের পথটা ভুল। যে আলোটা নিকটেই মনে হচ্ছিল, এখনো সেটা তাই-ই মনে হচ্ছে। ওই যেমন বটগাছ, সাইকেল সারাইয়ের দোকান, চায়ের স্টল সবই মনে হচ্ছে আরও একটু দূরে। আমরা সেদিকেই লক্ষ্য রেখে হেঁটে চলেছি আর সেগুলিও ঠিক তেমন দূরত্বেই অবস্থান করছে।


 আর কতদূর যাব দাদু?


 আর একটু এগিয়ে যাই তারপর দেখি!


     কিন্তু আমাদের যাওয়া যে ফুরোচ্ছে না? সেই রাত দশটায় ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমেছি। বড়জোর আধঘন্টা লাগে আমাদের বাড়ি ফিরতে। ট্রেনটা লেট না করলে আমরা সাড়ে-আটটাতেই নেমে যেতাম। স্টেশন থেকে সোজা পশ্চিম দিকে মাত্র তিন কিমি রাস্তা হাঁটলেই আমাদের গ্রাম। আসার সময় পিসি বারবার বলেছিল আজ থেকে যেতে। আমারও তাই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দাদু থাকলেন না। জমিতে এখনো ধানের বীজ পড়েনি। কোন্ সময় বৃষ্টিতে সব ভর্তি হয়ে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে পরের দিন সকালেই মাঠে যাবেন। স্টেশনে নামার সময় কয়েকজন মাত্র প্যাসেঞ্জার তারা এদিক ওদিকে কোথায় চলে গেল। আমি আর দাদু পশ্চিম দিক বরাবর হাঁটতে শুরু করলাম। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল আমাদের সামনে দিয়ে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো সেও আমাদের গ্রামে যাবে। তার সঙ্গ ধরার জন্য দাদু খুব জোরে হাঁটতে লাগলেন। আমি হাঁটতে না পেরে পেছনে পেছনে লাগালাম ছুট। কিন্তু লোকটাকে ধরতে পারলাম না। সে এগিয়েই গেল। তার পেছন পেছন হাঁটতে গিয়ে আমাদের এই দশা। আন্দাজ করছি তখন রাত বারোটা। কতবার আমরা একই রাস্তায় ঘুরে ফিরে বারবার একই জায়গায় পৌঁছচ্ছি। আর কেবলই মনে হচ্ছে আর একটু গেলেই আমাদের গ্রাম।


     অবশেষে আমরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আমি বললাম: আর হাঁটতে পারব না দাদু! পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা! চলো আবার স্টেশনে ফিরে যাই। ওই ট্রেন গেল ওই পথ দিয়েই রেললাইনে হেঁটে স্টেশনে যাব। তারপর স্টেশনেই রাতটুকু কাটিয়ে দেব।


  দাদু রাজি হলেন। বললেন: স্টেশন মাস্টার দাসবাবু, আমার খুব পরিচিত। তাকে বলে একটা আলোর ব্যবস্থা করে নেবো।


  রেললাইন মুখি আমরা তখন প্রাণপণে হাঁটছি। কিন্তু কোন্ দিকে যাচ্ছি সেটা ঠিক করতে পারলাম না। কেবলই মনে হল সামনেই রেললাইন। কিন্তু অনেকটা হেঁটেও রেললাইনের নাগাল পেলাম না। কেবল একইভাবে মনে হতে লাগল: এইতো! আর একটু গেলেই পৌঁছে যাব!


     রাত তখন প্রায় দুটো। আবার আমরা হতাশ। কতদূরে স্টেশন? কতদূর রেললাইন? কে উত্তর দেবে? চারিপাশে চেয়ে দেখি শুধু অন্ধকার। সামনে শুধু আলো জ্বলছে। পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে সবদিকেই টিমটিমে আলো। তবে কেউ কি আলো জ্বালিয়ে এখন অপেক্ষা করছে? কাছাকাছি গেলেই মনে হচ্ছে আর একটু দূরে। এভাবে যে রাত কেটে যাচ্ছে। দাদু, কী হবে আমাদের?


     এবার এগিয়েই যাব। একটা গ্রাম তো পাব? যেখানে মানুষ বাস করে। মানুষ থাকলেই সাহায্য পাব।


     দাদুর কথা শুনে আমিও যেতে লাগলাম। দুই পা কাঁটায়-পাথরে ও মাটির ঢেলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। কিছুই বলতে পারছি না। কতক স্থান থেকে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে আঁধারে তা অনুভব করছি। কতক্ষণে বাড়ি পৌঁছাব শুধু একটিই লক্ষ্য।


       যেতে যেতে হঠাৎ একটা বাড়ি চোখে পড়ল। ছোটখাটো একটা কক্ষ। খড় দিয়ে ছাউনি করা। একটামাত্র দরজা। দাদু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগলেন:


 কেউ আছো বাড়িতে? কেউ আছো? কেউ কি আছো?


 কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। ভেতরে অদ্ভুত একটা শব্দ হল। কান্নার শব্দ না হাসির শব্দ কিছুই বোঝা গেল না। দাদু আবার ডাকলেন: কেউ আছো সাড়া দাও! আমরা খুব বিপদে পড়েছি!


    হঠাৎ দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালেন দীর্ঘদেহী এক অন্ধকার মানুষ। তার মুখের চেহারা কিছুই বোঝা গেল না। হাতদুটি এত দীর্ঘ যে হাঁটু পর্যন্ত ঝুলে আছে। শুধু চোখ দুটি আগুনের ভাটার মতো লাল। এ-কি কোনো মানুষের চোখ? হতেই পারে না। দাদুকে জড়িয়ে ধরেছি ভয়ে। দাদু স্থির হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন: গ্রামে যাব, রাস্তা ভুলে গেছি; আমাদের রাস্তা দেখিয়ে দাও!


 অন্ধকার লোকটি এক অদ্ভুত হাসির শব্দ তুলে বললেন: কোঁন্ রাঁস্তায় যাঁবি? আঁমি দেঁখিয়ে দিঁচ্ছি আঁই!


        অগত্যা তার সঙ্গে-সঙ্গে যেতে হল। না গেলে যদি অন্য বিপদ হয়!


        সে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই তার মাটিতে পা পড়ে না। মনে হচ্ছে যেন বাতাসে ভর করে সে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমরা তার সঙ্গে অত দ্রুত হাঁটতে পারছি না। তবু দাদু আর একটা কথাও বললেন না। ওর পরিচয়ও জানতে চাইলেন না। সেদিন কতদূর এগিয়ে গেলাম তার হিসাব করতে পারিনি। আমাদের সম্বিৎ ফিরল ভোরের আযান ধ্বনিত হওয়ার পর। তখন দেখি অন্ধকার ফিকে হতে শুরু করেছে। থেকে থেকে পাখিরা ডাকছে। সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মাণী নদী। জলপ্রবাহের কুলুকুলু শব্দ কানে আসছে। স্টেশন থেকে পঞ্চাশ কিমি দূরে এক মাঠের মধ্যে এক প্রাচীন এবং এক নবীন প্রজন্ম ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়েছি। সারারাতের এই পরিভ্রমণ স্বপ্নের মতো মনে হল। আলো আর অন্ধকার এই দুইয়ের ভ্রান্তির শিকার আমরা।

ছোট গল্প - তেপান্তরের মাঠ || লেখক - ঈশিতা বিশ্বাস চৌধুরী || Short story - Tepantorere math || Written by Isita biswas Chowdhury



 তেপান্তরের মাঠ

          ঈশিতা বিশ্বাস চৌধুরী 




প্যানডেমিকের জন্যে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না তিতিরের। কি যে এক রোগ এলো অফিস কাছারি, স্কুল, কলেজ, মার্কেট এমনকি পার্কটাও বন্ধ। বাড়ি থেকে না বেরোতে পেরে খুব মন খারাপ ক্লাস সিক্সের তিতিরের। মা, বাবা দুজনেরই ওয়ার্ক ফর্ম হোম চলছে। কতদিন কোথাও না গিয়ে বাড়িতেই বন্দি জীবন কাটছে তাদের। সেই একঘেয়ে অনলাইন ক্লাস আর টিভিতে কার্টুন। কতদিন তার প্রিয় বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না ।

আজ দুপুরে ফোনে গেম খেলার জন্য মার কাছে বকা খেয়ে মন খারাপ করে বসে আছে সে। তাদের ঊনত্রিশ তলার ফ্ল্যাটের সতেরো নাম্বার ফ্লোরের ব্যালকনিতে বসে এসব ভাবছিল সে। চোখের থেকে জল টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। 


মায়ের মন দূর থেকে সবই লক্ষ করে। মেয়ের দুঃখের কারণ রুমা ভালোই বোঝে। তিতিরকে সুন্দর একটি ভ্যাকেশন উপহার দেবার জন্যে প্ল্যান করতে থাকে সে। তাই লকডাউনের শিথিলতা দেখা দিলেই একদিন ভোরে সবাই মিলে তারা বেরিয়ে পড়ে যে দিকে দুচোখ যায়। তিতির জানতে চায় "বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি?"

 বাবা বললেন, "এই কৃত্তিম শহর থেকে অনেক দূরে যেখানে শান্তি বিরাজ করে।"


তিতির তো এতদিন পরে বেরিয়ে ভীষণ আনন্দ পায় ।

বেশ কিছুটা আসার পর তারা একটা ছোট্ট ধাবায় এসে দাঁড়ালো ব্রেকফাস্ট করবার জন্য। খড়ের চাল এবং বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট্ট দোকান। লালমাটি এবং রাস্তার দু'পাশে শাল সেগুনের বিশাল জঙ্গল । মা তাকে জিজ্ঞেস করল ,"কি খাবে তিতির ? দুধ কর্নফ্লেক্স পাওয়া যাবেনা, ব্রেড অমলেট খাবে কি? " ডিম খেতে সে ভালোবাসে তাই আপত্তি করল না। দোকানের আঙ্কেলটা কি সুন্দর গরম গরম ব্রেড-অমলেট বানিয়ে দিল তাদের। মা-বাবা সঙ্গে মাটির ভাঁড়ে চা খেলো।মাঝে মাঝে স্নিগ্ধ বাতাসে দু'ধারের জঙ্গল দুলে উঠছে। এক অদ্ভুত মর্মর ধ্বনি চারিপাশে। তিতির মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে খাবার খেতে থাকে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তারা গাড়িতে উঠে বসলো। এই রাস্তায় গাড়ি সেরকম চলে না মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে তাদের পাশ দিয়ে। 

বেশ কিছুটা চলে আসার পর সে বললো,"আর কতক্ষন বাবা?" 

"এই তো এসে গেছি।" মা বলল ,"সামনেই লাভপুর বলে একটা জায়গা আছে সেখানে এক জঙ্গলের মধ্যে একটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যদিও সেটি সম্পর্কে খুব একটা তথ্য ইন্টারনেটে নেই তবে রিভিউ আছে খুব ভালো। তাই আমরা এখানে আসব স্থির করি। আশা করি তোমার ভালো লাগবে। তুমি তো আগে কোনদিন জঙ্গলে আসোনি তাই তোমাকে নিয়ে এলাম। এখানে জঙ্গলে হাতি, চিতাবাঘ নানারকম বন্যপ্রাণী, হরিণ বিভিন্ন রকম পাখি দেখতে পাবে । আমরা কাল একটা জিপ ভাড়া করে জঙ্গলটা ঘুরে দেখব । কি এখন খুশি তো ?"

তিতিরের আর অপেক্ষা সহ্য হয়না! কতক্ষণে গিয়ে রিসোর্টে পৌঁছাবে সেই কথা ভাবতে ভাবতে চঞ্চল হয়ে পড়ে সে। খানিকটা যাবার পর হাইওয়ে ছেড়ে একটি মেঠো রাস্তায় ঢুকে পরে তারা। তিতিরের বাবা সুবীর, জিপিএস অন করে রেখেছে । লালমাটির রাস্তা ধরে গাড়িটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগোতে থাকে। গাড়ি এসে দাঁড়ায় রিসোর্টের লোহার গেটের সামনে । দারোয়ান গেট খুলে দিলে তাদের গাড়ি এসে সোজা দাঁড়ায় একটি ঘাসের লনে। 

জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত রিসর্টটি অতীব সুন্দর। নাম 'প্রান্তিক রিসর্ট' । চারিদিকে বিভিন্ন নাম না জানা পাখিদের কলতান শোনা যাচ্ছে। সেরকম সূর্যালোক প্রবেশ করে না এখানে ।

 এখন দুপুরে বড় বড় গাছের ছায়া পড়ে অপূর্ব সুন্দর লাগছে চারপাশের পরিবেশ। পুরো অঞ্চল ঘিরে ছোট ছোট কটেজ বানানো। চারিদিকে কাঁটাতার দিয়ে ফেন্সিং করা। তাদের জন্য কটেজ আগে থেকে বুকড ছিল। সব ফর্মালিটি শেষ হলে, একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল ,

"স্যার আমার নাম নবীন, দিন আপনাদের জিনিসপত্র রেখে আসি।" গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নিয়ে 

কটেজটি একদম জঙ্গলের প্রান্তে। কটেজের ঠিক পেছনে বিশাল জঙ্গল শুরু হয়ে গেছে। সুবীর জিজ্ঞেস করল, "রিসোর্ট কি ফাঁকা নাকি ভাই সেরকম কাউকে চোখে পড়ছে না?" "

"আমাদের কটেজটা কিছুদিন হল তৈরি হয়েছে, এখনও সেরকম কেউ এর সন্ধান জানেনা। তবে উইকেন্ডে ভালোই ভিড় হয়। আপনারা তো উইক ডেজে এসেছেন তাই একটু ফাঁকা ফাঁকা আর কি। তবে এই পরিবেশে খুব ভিড় হলে কি আপনাদের ভালো লাগতে স্যার?"

রুমা বলল, "হ্যাঁ সেটা অবশ্য ঠিক। আমরা শহর থেকে এত দূরে নিরিবিলিতে সময় কাটাবো বলে এসেছি, তবে আমরা ভালো সময় থেকে এসেছি বলতে হবে।"




তিতির এমন পরিবেশ দেখে আনন্দে আত্মহারা। সারা রিসোর্ট জুড়ে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে । কিন্তু এখন লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে আর অতটা জার্নি করে এসে সবাই খুব ক্লান্ত। তারা খাবার অর্ডার করে দিলো। গরম গরম মাংসের ঝোল ভাত,আর স্যালাড। লাঞ্চ শেষ করে সুবীর, রুমা এবং তিতিরও শুয়ে পড়ল। রুমা এবং সুবীর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেও তার চোখে ঘুম আসছেনা। বড় কাঁচের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে সে দেখল, ঘন জঙ্গলের মধ্যে পাখিরা ইতিউতি ওড়াউড়ি করছে। অনেক দূরে গাছের ঝোপের মধ্যে কি একটা সরে গেল। তিতিরের এখন মোটেই ঘুমোতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে আসে। কিন্তু মা বাবাকে ছাড়া একা একা যেতেও তার ভয় লাগে। তাই দরজা খুলে সে বারান্দায় এসে বসলো।তারপর সে চারপাশের সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে লাগল। শহর থেকে বহুদূরে সবুজের এই জঙ্গলে চোখে যেন ধাঁধা লেগে যায় তার। হঠাৎ কার কণ্ঠস্বরে শুনে চমকে উঠে তিতির। সামনে নবীন নামে সেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে সে বলল, "একি মামনি এখানে কি করছ? তোমার মা-বাবা কই? তুমি একা একা বারান্দায় বসে আছ?"



তিতির বলল, "আঙ্কেল আমার ঘুম আসছে না, মা-বাবা তো ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আমি এখানে বসে আছি। আচ্ছা ওই জঙ্গলের ভিতরে কি আছে? আমরা দেখতে যেতে পারবো?" 

নবীন চমকে উঠে বলল, "একা একা কোথাও যেওনা। আর এই জঙ্গলটা সেরকম নিরাপদ নয়। দেখছনা ফেন্সিং করা আছে? বন্যপ্রাণীরা ভিতর চলে আসতে পারে তাই জন্যে। সামনেই প্রতাপপুর অভায়ারণ্য, সেখানে জিপে করে তোমার মা বাবা তোমায় জঙ্গল থেকে ঘুরিয়ে আনবে 

পরে। এখনতো সাফারি বন্ধ হয়ে গেছে কাল সকালে যেও।"

"আমি এখন যেতে পারি না?"

"না না এখন যেও না। বরং রুমের ভেতরে গিয়ে বসো। মা বাবা জানলে চিন্তা করবে।"

সে বলল "আমি কোথাও যাবো না একটু এখানে বসে ভেতরে চলে যাব।" 

নবীন একটু ভেবে বললো বলল ,"তবে বস। কিন্তু তুমি জঙ্গলের মধ্যে যাবে না ,জঙ্গলে কিন্তু অনেক রকম বিপদ আছে।"

বলে নবীন নিজের কাজে চলে যায়। বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে মা-বাবা গাড়ি নিয়ে বের হল।পাশেই একটা পুরনো জাগ্রত দেবীর মন্দির আছে সেটা দেখে এবং ফটোগ্রাফি করে সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরল সকলে। কাল সকালে তারা জঙ্গল সাফারি করতে যাবে। 

রাত্রে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছে তিতির। হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে অদ্ভুত এক শব্দ তার কানে এল। কোন বন্যপ্রানীর গর্জন ও মেঘের ডাকার শব্দ মিশে একটা অপার্থিব শব্দ তার কানে এলো। তিতির ভাবলো হয়তো কোন প্রাণী হবে তাই জন্য তো পুরো রিসোর্টটির ফেন্সিং করা আছে। কাল সকালে তাড়াতাড়ি গেলে কত বন্যপ্রাণীর দর্শন পাবে। এত কাছ থেকে জীবজন্তু দেখতে পাবে ভেবে, উত্তেজনায় তার রাত্রে ভালো করে ঘুমই হলো না। 

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল জঙ্গল সাফারি উদ্দেশ্যে । হুডখোলা জিপে চড়ে তারা জঙ্গলের একটা বিশাল অংশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। নানান রকম প্রাণীর আনাগোনা সেখানে। কোথায় হরিন ছুটে বেড়াচ্ছে, কোথাও শূকর, বন্য মহিষ, গাছে হনুমানের দল এছাড়া অসংখ্য পাখপাখালি তো আছেই। আর জঙ্গলের ভেতরে একটি বিশাল ঝিল এবং সেখানে নানা পরিযায়ী পাখির সমাবেশ। দুচোখ ভোরে দেখতে লাগল এবং মা-বাবাকে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে লাগলো তিতির। এই জঙ্গলে চিতাবাঘও বাস করে কিন্তু সেগুলি থাকে কোর এরিয়াতে । তারা জনসমক্ষে সহজে আসেনা। সাফারির পর তারা রিসোর্টে ফিরে এলো। খেয়ে

সবাই দুপুরে বিশ্রাম নিচ্ছে ,তিতির মায়ের ফোন নিয়ে একটি কার্টুন সিরিজ দেখতে ব্যস্ত । বিকেলের সোনালী রোদ গাছগাছালির ফাঁক থেকে উঁকি মারছে। অদ্ভুত এক মন্মুগধকর পরিবেশ।। কাল রাতের সেই অদ্ভুত শব্দের কথা মনে পড়ল তার । ছোট্ট তিতিরের মনে হল আর এই জঙ্গলের মধ্যে নিশ্চয় অদ্ভুত কোনো প্রাণী আছে সেটাকে দেখতে হবে। সন্তর্পনে রুমের বাইরে আসে সে। সূর্যের সোনালী আভায় সারা আকাশ জুড়ে নানা
রঙের খেলা চলছে। লন ধরে হেটে যেতে যেতে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। নবীন বিকেলের স্ন্যাকসের  আয়োজন করছে। তিতিরের সাথে দেখা হল, সে বলল "আঙ্কেল কাল রাতে জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ পেয়েছিলাম, সেটা কিসের বলতে পারো?" নবীনের হাসিমুখে একটু চিন্তার উদ্রেক হল, সে বলল ,"তোমায় তো বলেছি জঙ্গলের ভেতর অনেক বিপদ আছে, বন্যপ্রাণী আছে তাদের শব্দ হতে পারে।"

"আমি জঙ্গলের ভেতরে যেতে চাই। আমরা তো সাফারিতে জিপ থেকে নামতেই পারলাম না, একটু ঘুরে জঙ্গলটা দেখে চলে আসব। আর বাবা বলেছে চিতাবাঘ, হিংস্র বন্যপ্রাণী জঙ্গলের  'কোর' এরিয়াতে থাকে। নবীন একটু বিরক্ত হয়ে বলল ,"তোমায় বলেছি না জঙ্গলের ভেতরে যাবে না। তারপর ফিসফিস করে বলল ,"জঙ্গলের ভিতরে এক বিশাল তেপান্তর মাঠ আছে। একবার সেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। বুঝলে? অনেক বাচ্চারা সেখান থেকে হারিয়ে গেছে। তুমি ভুলেও সেখানে যাবার চেষ্টা করবে না। এক্ষুনি রুমে যাও, মা-বাবার সাথে থাকবে সবসময়।"

বলে নিজের কাজে মন দেয়  নবীন। বেড়াতে এসে কারো কাছে বকা খেতে হবে এ কথা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। খুব অভিমান হলো নবীনের ওপর। ওদিকে মা-বাবা এখনো ওঠেনি। কিন্তু তিতিরের নিজের কৌতুহল নিরসন করতে ও নিজেকে সাহসী প্রমান করার উদ্দেশ্যে একবার জঙ্গলের ভেতরে যাওয়ার খুব ইচ্ছা তার। 

3


তিতির সব কিছু কে এক্সপ্লোর করতে ভালোবাসে। এই বয়স টাই এমন। তাই মনের ইচ্ছে দমন করতে না পেরে  সবার অলক্ষ্যে ফেন্সিং দিয়ে ঘেরা রিসোর্টের ঘেরাটোপ পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একাই হাঁটতে শুরু করে সে । মুক্তির স্বাদই আলাদা। আবছা সোনালী রঙে রাঙা বিকেলের আকাশ। জঙ্গলের মধ্যে কত নাম না জানা জংলি ফুলের সুবাস। গাছে গাছে পাখিরা বাসায় ফিরছে। আচমকা অদূরে কাল রাতের সেই কান ফাটানো আওয়াজটা শুনতে পায় তিতির।  সূর্য অনেক্ষন দিগন্তের অন্তরালে চলে গেছে। হালকা এক  লালিমা আকাশে বর্তমান। চারিদিক সুনসান। নির্জন জঙ্গলে সেই চিৎকার কি অদ্ভুতই না শোনালো।  তিতির ভয়ে ভয়ে এগিয়ে দেখল সামনে একটি  দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ। সবুজ ঘাসে ঢাকা। মাঠটি কোথায় শুরু বা শেষ কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। এটাই কি তবে তেপান্তরের মাঠ? চমকে ওঠে সে। হঠাৎ তার মনে হল দূরে কে যেন তাকে ডাকছে , "এদিকে এসো! আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম কবে থেকে! এসো এসো।" 

সম্মোহিতের মত এগিয়ে যায় ছোট্ট তিতির। আধো অন্ধকারের মধ্যে ধীরে ধীরে মিশে যায় সে।


ওদিকে  রুমা ও সুবীর উঠে বসে দেখে তিতির ঘরে কোথায় নেই। সমগ্র রিসোর্ট তন্নতন্ন করে খুঁজেও তিতিরকে কোথাও পাওয়া যায়না। রুমা  কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। সুবীর এবং রিসোর্টের বাকি লোকেরা হতবাক। পুলিশ এসে ছবি সহ বাকি সব তথ্য নিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি চলছে। তবে আসে পাশের সব জায়গায় খোঁজা হলেও তার চিহ্ন মাত্র পাওয়া যায়নি। পুলিশ রিসোর্টের লোক নিয়ে জঙ্গলের আসে পাশে খোঁজ চালাতে গিয়েছে অনেকক্ষণ। তিতিরের কোন খোঁজ নেই। 

রাত্রি নটা বাজে। রুমা ও সুবীর ঘরে চুপ করে বসে আছে। এরকম আনন্দ করতে এসে যেরকম চরম বিপদের সম্মুখীন হবে তা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। আচমকা হন্তদন্ত হয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে নবীন। বলে ,"স্যার আমি জানি দিদিমণি কোথায় আছে। আমি খুঁজতে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু আর তাকে বোধ হয় আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।" সুবীর চেঁচিয়ে উঠলো,"কী বলছো কী নবীন?  ও কোথায় আছে? আমাদের এই মুহূর্তে জানাও। নাহলে আমি তোমাকে পুলিশে দেব। নির্ভীক কণ্ঠে নবীন বলল "পুলিশ কিছু করতে পারবে না স্যার, আমি আপনাদের আগেই বারণ করেছিলাম ওই জঙ্গলের মধ্যে কাউকে না যেতে। আমাদের এই অঞ্চলে এই জঙ্গল পেরিয়ে এক বিশাল মাঠ আছে যাকে আমরা বলি তেপান্তরের মাঠ। সেখানে কেউ গেলে আর কোনদিন ফিরে আসে না। রুমা রেগে বলল "তুমি আমাদের সাথে পুলিশের কাছে  চলো! কোথায় সেই মাঠ দেখাও আমরা খুঁজ বের করব।"

নবীন কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,"ম্যাডাম বোঝার চেষ্টা করুন! আমি এবং পুলিশের টিম মিলে  সমস্ত জঙ্গল খুঁজেছি। চারপাশে খুঁজে দেখা হয়েছে কিন্তু দিদিমণিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি এখন ভিনগ্রহীদের দেশে। এভাবেই আমি আমার ছোটভাই কেও হারিয়েছি। তাইতো আমি অনেকবার বারণ করলাম দিদিমণিকে ওদিকে যেতে, কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলো না সে।"

রুমা একটু নরম হয়ে বলল ,"নবীন আমাদের একমাত্র মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে।  আমাদেরকে নিয়ে চলো। ওকে খুঁজে না পেলে আমাদের আর বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না।আমিও জঙ্গলে চলে যাব।"

"ঠিক আছে চলুন। তবে আমি আপনাদের মেয়েকে আমি কিভাবে ফিরিয়ে দেবো জানিনা। সম্ভব হলে আমার ভাইকেও ফিরিয়ে আনতাম। পারিনি। আপনারা চলুন বুঝতে পারবেন।"

একটা টর্চ সঙ্গে নিয়ে তিনজনে মিলে গভীর জঙ্গল পেরিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এগিয়ে চলল। চারপাশে বন্যপ্রাণী এবং রাত পাখিদের ওড়াউড়ির শব্দ। তারাও যেন জঙ্গলের মধ্যে মানুষের এই অনধিকার প্রবেশে ভীষণভাবে বিরক্ত। অনেকটা পথ পেরিয়ে তারা এসে পৌছালো একটি খোলা মাঠের ভেতর। আজ পূর্ণিমা, তাই চারিদিক আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে। সেই আলোয় বোঝা গেল মাঠের মাঝখানে একটি গোল বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোন  প্রকান্ড এবং ভারী ধাতব জিনিস যেন সেখানে নেমে ছিল। তাতেই ওরকম একটি অদ্ভুত আকার সৃষ্টি হয়েছে।  

নবীন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বলল,"দেখছেন ম্যাডাম ঘাসের মধ্যে যে গোলাকার বৃত্তের মত চিহ্নটি দেখা যাচ্ছে ভালো করে লক্ষ্য করুন, আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু এই অঞ্চলে ভিনগ্রহীদের আনাগোনা বহু বছর ধরে চলে আসছে। জানিনা কেন তারা আমাদের এই জঙ্গল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেছে নিয়েছে। হয়তো নিজেদের লুকিয়ে রাখার সুবিধার্থে। 

অনেক ছোটবেলায় আমার ভাই ঠিক এই অঞ্চল থেকে এক পূর্ণিমার রাত্রিতে হারিয়ে যায়। তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্যেকদিন রাত্রে আমি এই জঙ্গলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম যে ভাই ফিরে আসে কিনা। একদিন পূর্ণিমার সন্ধ্যেবেলায় আকাশের চাঁদ ওঠার পর দেখি এক অদ্ভুত শব্দ করে একটি বৃত্তাকার যন্ত্রের মতো বিশাল আকাশযান নেমে আসছে আমাদের এই মাঠের মধ্যে। আমি দূরে লুকিয়ে ছিলাম বলে তারা আমার উপস্থিতি টের পায়নি। তারপর থেকে প্রত্যেক পূর্ণিমায় এবং যখন আকাশে চাঁদ থাকে তখন ওরা এই প্রান্তরে পদার্পন করে সবার অলক্ষ্যে ।

 আমি এখানে  মাঝে মাঝে আসি ভাইয়ের খোঁজে,  কিন্তু তাকে কোনদিনই আর দেখতে পাইনি। সে বহুকাল আগের কথা, জানিনা সে বেঁচে আছে কিনা। সেই জন্যই আমার এই  রিসোর্ট কাজ নেওয়া। এখান থেকে আমি সহজেই  ভিনগ্রহের প্রাণীদের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করতে পারি।একবার পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে আমি তাদের দেখেছিলাম। বিশালাকায় দেহ, অত্যন্ত লম্বা। দুটি কালো বড়ো চোখ এবং কৃশকায় দেহ। আমি বিশেষ পড়াশোনা জানিনা কিন্তু তারা যে এই গ্রহের বাসিন্দা নয় এটুকু বুঝতে আমার এক মুহূর্ত দেরি হয়নি। তারা অন্য ভাষায় কথা বলে, আমাদের দেশের ভাষা তারা বোঝে না। তবে তারা আমাদের ভাষা নকল করতে পারে। আমার ধারণা আজকে সন্ধ্যেবেলায় দিদিমণি হাঁটতে হাঁটতে মাঠে এসে পড়ে এবং কোনভাবে সেই ভিনগ্রহীদের চোখে পড়ে যায তার পর  থেকেই সে নিরুদ্দেশ।"


রুমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, "এটা হতে পারে না এ যে অসম্ভব!  তুমি কি বলছ? তোমার মাথা ঠিক আছে নবীন? না মজা করছো আমাদের সাথে?" নবীন আবার বলল, "গ্রামের অনেক মানুষ এই অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সত্যি কথা বলতে বিশেষ কেউ এ ব্যাপারে জানেও না। তারা একে তেপান্তরের মাঠ বলে আখ্যা দিয়েছে।

কিন্তু আসল সত্যিটা সকলেরই অজানা। তাই তারা এই জনহীন প্রান্তরে বিশেষ আসেনা। যারা হারিয়ে গেছে তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি। এই অলৌকিক ঘটনা আমিও কাউকে বলিনি কাউকে  বললে বিশ্বাসও করবে না। পুলিশ প্রশাসনও তো নয়ই ।


সুবীর এতক্ষণ ধরে সমস্ত কথা শুনছিল, সে নবীনের হাত ধরে টেনে বললো, "চলো তুমি, ও যতসব বাজে কথা বলছে, ওই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে তিতিরকে, এখন এসব বলে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এক্ষুনি পুলিশের কাছে নিয়ে গেলে এমন মার মারবে, সব কথা বেরিয়ে যাবে।" রুমা বলল,"হ্যাঁ তাই চলো, একটা কথাও বিশ্বাসযোগ্য নয় ওর। আমাদের অসহায়তার সময় মজা করতে লজ্জা করছেনা তোমার?"

নবীন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সে বলল,"আমি জানতাম আপনারা এটাই বলবেন।"


হঠাৎ এক অপার্থিব শব্দ সবার কানে এলো। মাঠের মধ্যে বৃত্তাকার নীল আলো চোখে পড়ল সবার। আকাশের দিকে তাকাতেই তারা দেখল একটি গোলাকার বিশাল ধাতব বস্তু চক্রাকারে নেমে আসছে এবং তার থেকে এক অদ্ভুত নীলচে আলোক রশ্মি নির্গত হচ্ছে। সাথে সাথেই বইতে শুরু করে প্রবল হাওয়া। সুবীর এবং রুমা স্থানুর মতো দূরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখল। নিজের চোখকে যেন তারা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। মাটিতে আস্তে আস্তে নেমে আসার পর  সেই ধাতব আকাশযানের একটি অংশ শাটার এর মতন সরে গেল। সেখান থেকে অদ্ভুত দর্শন ভিনগ্রহীরা নেমে এসে আকাশের চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে লাগলো। সুবীর এবং রুমা দেখে কি করবে স্থির করতে পারল না। হতভম্ভ রুমা ছুটে গেল সেই ভিনগ্রহীদের যানের দিকে। পেছন পেছন সুবীরও ছুটল। এতক্ষণ যে কথা তারা বিশ্বাস করছিল না মুহূর্তেই সেই চিন্তা ভুলে নিজের একমাত্র মেয়ের সন্ধানে দুজনে  ছুটে গেল সেদিকে। দুজনেই কিছু না ভেবে উঠে পড়ল সেই স্পেসশিপে। ভিনগ্রহীরা সেই দৃশ্য দেখে দ্রুত  উঠে স্পেসশিপটির দরজা বন্ধ করে দিল। মুহুর্তের মধ্যে বিকট আওয়াজ করে সেই আকাশ যান উড়ে গেল দূর কোন অজানা গ্রহের উদ্দেশ্যে। একটু পরে সেই নীল আলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল মহাশূন্যের অন্তরালে।   তেপান্তরের মাঠে অশ্রুসজল চোখে নির্বাক দর্শকের মত দাঁড়িয়ে রইল নবীন ।

পশ্চিমবঙ্গে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ || WB Bandhan Bank Recruitment 2022 || Bandhan Bank Job Vacancy 2022


 



##রাজ্য জুড়ে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগের হবে। বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া এখানে চাকরি পাওয়া সোজা। শুধু বায়োডাটা ও ডকুমেন্ট জমা মাধ্যমেই আপনার চাকরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় না এখানে। সরাসরি নিয়োগ হয়। বর্তমানে বন্ধন ব্যাংকে কর্মীর প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে। তাই নিয়োগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেই এই ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসীমা, আবেদন পদ্ধতি বিস্তারিত তথ্য নীচে দেওয়া হল--




মোট শূন্য পদ - ৩০টি



কোন কোন পদে নিয়োগ হবে:


বিভিন্ন যোগ্যতায় বিভিন্ন পদ রয়েছে। পদ গুলি হল-

Operation And Office Staff.




শিক্ষাগত যোগ্যতা: অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক পাস বা গ্রাজুয়েশন পাস হতে হবে।


বয়স- বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।


বেতন - মাসিক ১৪,৫০০ থেকে ২১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।


কাজের ধরন: এটা একটি পার্মানেন্ট চাকরি। 




আবেদন পদ্ধতি: অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।


 

 

কীভাবে আবেদন করবেন :

Online- আপনি নিজেই মোবাইল এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আপনি কেবলমাত্র ফোন করেও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ইমেলের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। ইমেইল এ আপনার বায়োডাটা পাঠিয়েও আবেদন করতে পারবেন।


যে নম্বরে আপনি যোগাযোগ করবেন তা হলো-


৯৮৩১৪২০৮৭৫


এছাড়া যে ইমেল আইডিতে আপনি বায়োডাটা পাঠাবেন তা হলো-



bandhanbankdepatment@gmail.com




গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-


এই চাকরিতে আবেদনের জন্য যে নথিপত্রগুলির প্রয়োজন সেগুলি হলো-


১) শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র

২)বয়সের প্রমাণপত্র 

৩)নিজের সাক্ষর

৪)বাসস্থানের প্রমাণপত্র

৫)পরিচয়পত্র (আঁধার কার্ড, ভোটার কার্ড)

৬) কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)

৭) পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র (যদি থাকে)


এছাড়া যদি আরও কিছু জানতে চান আপনাকে অফিসিয়াল নোটিশটি ডাউনলোড (Download) করতে হবে। অফিসিয়াল নোটিশ ডাউনলোডের লিঙ্ক নিম্নে সবার শেষে দেওয়া আছে।




নিয়োগ পদ্ধতি: নিয়োগ করা হবে বায়োটাডেটার উপর ভিত্তি করে । কোনরকমের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই কেবলমাত্র ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। আপনি যদি ইন্টারভিউয়ে সিলেক্ট হন তাহলে আপনাকে সরাসরি ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হবে। 

 ট্রেনিংয়ের চান্স পাওয়া মানে কনফার্ম চাকরি পাওয়া। ট্রেনিং শেষে আপনাকে সরাসরি জয়েনিং করানো হবে। 





আবেদন মূল্য: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করুন



OFFICIALWEBSITE: 

Click here 🔴



________________________________________


চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-


https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate




Whatsapp group-



https://chat.whatsapp.com/FOyQc45Ny1A7acqIc9mKdl