Friday, August 2, 2024

স্বার্থপরতা - আনন্দ গোপাল গরাই || Sarthaporota - Ananda gopal garai || কবিতা || Kobita || poems || poetry

 স্বার্থপরতা

 আনন্দ গোপাল গরাই 



স্বার্থঘড়ির কাঁটাটা ঘুরছে টিক্ টিক্ করে

প্রতি পলে প্রতি সেকেন্ডে ভরছে ভাঁড়ার আমার।

তিল তিল করে গড়ে উঠা তিলোত্তমার মতো

গড়েছি আমি টাকার পাহাড়

ওরা যদি ঘোরে থালা হাতে করে

পথে ঘাটে দুয়ারে দুয়ারে

ক্ষতি কী আমার?

ওরা যদি কাঁপে শীতে ফুটপাথে শুয়ে

কীই যায় আসে আমার?

ওরা যদি অনশন করে রাজপথে বসে

আমি তো পারি জলকামান দিয়ে

ভেঙ্গে দিতে ওদের সেই প্রতিবাদের ভাষা!

ওরা যা করে করুক---ওরা যা পারে করুক

নি:শব্দে ভরে তো চলুক স্বার্থের ঝুলিটা আমার।

ওরা সব আবর্জনা

আমি বলীয়ান ---

আমিই তো মহান!

Tuesday, July 30, 2024

অষ্টম শ্রেনী পাশে কর্মবন্ধু ও নাইট গার্ড পদে কর্মী নিয়োগ || Karmabandhu & Night Guard Recruitment 2024 || WB govt jobs

 




অষ্টম শ্রেনী পাশে কর্মবন্ধু ও নাইট গার্ড পদে কর্মী নিয়োগ || Karmabandhu & Night Guard Recruitment 2024 || WB govt jobs



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। আবার নিয়োগ হতে চলেছে অষ্টম শ্রেনী পাশে কর্মবন্ধু ও নাইট গার্ড পদে । ইতিমধ্যে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।



পোস্টের নাম: কর্মবন্ধু ও নাইট গার্ড পদে নিয়োগ করা হবে।


মোট শূন্যপদ: এখানে মোট ২ টি শূন্যপদ রয়েছে।



শিক্ষাগত যোগ্যতা : 

যে সকল প্রার্থীরা এই নিয়োগের জন্য আবেদন করতে চান তারা যেনে নিন প্রতিটি পদের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষকতার যোগ্যতা লাগবে। নীচে তা আলোচনা করা হল।


কর্মবন্ধু : যে কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে প্রার্থীদের অষ্টম শ্রেনী পাশ করে থাকতে হবে।


নাইট গার্ড: যে কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে প্রার্থীদের মাধ্যমিক পাশ করে থাকতে হবে।



বয়স সীমা: আবেদনকারী প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৬৪ বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।


 আবেদন পদ্ধতি : শুধু মাত্র অফলাইন এ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। সর্বপ্রথম প্রার্থীকে নিচে দেওয়া অনলাইন অফিসিয়াল লিংক থেকে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করতে হবে এরপর সম্পূর্ণ আবেদন পত্রটি নির্ভুলভাবে ফিলাপ করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় জমা করতে হবে।। 




আবেদন পত্র জমা দেওয়ার ঠিকানা : Principal Dharmada Govt P.T.T.I Vill Dharmada P.S Nakashipara Dist Nadia Pin – 741138



গুরুত্বপূর্ণ তারিখ: আবেদনকারীকে আগামী ০২/০৮/২০২৪ তারিখের মধ্যে আবেদনপত্র জমা করতে হবে।



নির্বাচন প্রক্রিয়া: আবেদনকারী প্রার্থীদের সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।



ডাউনলোড নোটিফিকেশন -


click here 🔴



অফিসিয়াল ওয়েবসাইট -

Click here 🔴

Sunday, July 21, 2024

গ্রামীণ ডাক সেবক (GDS) নিয়োগ 2024 || WB GDS recruitment 2024 || Post office peon recruitment 2024 || https://indiapostgdsonline.in/

 




গ্রামীণ ডাক সেবক (GDS) নিয়োগ 2024 || WB GDS recruitment 2024 || Post office peon recruitment 2024 || https://indiapostgdsonline.in/






রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। আবার নিয়োগ হতে চলেছে গ্রামীণ ডাক সেবক তথা GDS পদে। বিজ্ঞপ্তি টি ইতিমধ্যে Indian post এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।




মোট শূন্যপদ - 44,228 টি ( সমগ্র দেশে)। পশ্চিমবঙ্গে শূন্য পদ - প্রায় 4000 টি।



কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে - 


(1) ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার (BPM)


(2) অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার (ABPM)


(3) ডাক সেবক তথা পিওন 



পদ অনুযায়ী কাজ -

(1) ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার (BPM) - পোস্ট অফিস ও ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্কের যাবতীয় অফলাইন ও অনলাইন লেনদেন সংক্রান্ত কাজ করতে হবে। পোস্টাল পরিষেবা ও পণ্য, ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্কের পরিষেবা, কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া, পোস্ট অফিসের অধীন গ্রাম বা, পঞ্চায়েত এলাকার ব্যবসার পরিমাণ বাড়ানো, বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলা ও

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। রেকর্ড দেখা, চিঠি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। সেইসঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার ও ডাক সেবকদের কাজের তদারকি করা ইত্যাদি।


(2) অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার (ABPM) -

পোস্টাল পরিষেবা যেমন, ডাকটিকিট, খাম ইত্যাদি বিক্রি করা। বাড়ি বাড়ি চিঠি ও পার্সেল পৌঁছে দেওয়া। ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্কের টাকা জমা নেওয়া ও দেওয়া। পোেস্ট অফিসের অধীন গ্রাম বা, পঞ্চায়েত এলাকার ব্যবসার পরিমাণ বাড়ানো, বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলা ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। রেকর্ড দেখা, চিঠি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।



(3) ডাক সেবক তথা পিওন - 

ডাক সেবকরা সাব পোস্ট অফিস ও হেড পোস্ট অফিসের মতো জায়গায় নিযুক্ত হবেন। চিঠি পৌঁছে দেওয়া, ডাকটিকিট, খাম ইত্যাদি বিক্রি করা। ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্কের টাকা জমা নেওয়া ও দেওয়া। পোেস্ট মাস্টারের নির্দেশে অন্যান্য কাজ করতে হবে। রেলওয়ে মেল সার্ভিসের সর্টিং অফিসে কাজ করতে হবে। মেল ব্যাগের আদানপ্রদান, ব্যাগ নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে হবে। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করতে হবে।





বেতন- 


(1) BPM - 12,000 -29,380 টাকা


(2) ABPM ও peon - 10,000 - 24,470 টাকা






বয়সসীমা- ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন। যেমন তফসিলরা ৫বছর, ওবিসি রা ৩ বছর, প্রতিবন্ধীরা ১০ বছর।








শিক্ষাগত যোগ্যতা - 


শুধু মাত্র মাধ্যমিক পাশ করে থাকলেই আপনি এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।


 

বিশেষ যোগ্যতা -


আবেদনকারীকে অবশ্যই সাইকেল চালাতে জানতে হবে। তবে বাইক কিংবা স্কুটি চালানো প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এর সাথে চাকরিপ্রার্থীদের স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে, বুঝতে এবং লিখতে জানতে হবে।




নিয়োগ প্রক্রিয়া-


শুধু মাত্র মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেরিট লিস্ট তৈরি হবে। কোনোরকম লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ দিতে হবে না।



আবেদন প্রক্রিয়া -

নীচে দেওয়া অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 



আবেদন ফি -

সাধারণ প্রার্থীদের জন্য 100 টাকা। সংরক্ষিত প্রার্থী এবং মহিলাদের কোনো আবেদন ফি লাগবে না।






গুরুত্বপূর্ণ তারিখ-


আবেদন করা শেষ তারিখ হল 5/08/2024।



অফিসিয়াল ওয়েবসাইট -

Click here 🔴

Wednesday, July 17, 2024

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024

 



মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। নিয়োগ টি হবে জল জীবন মিশন প্রকল্পে।সমগ্র দেশে চালু হয়েছে জল জীবন মিশন প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই কর্মী নিয়োগটি হতে চলেছে । তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।

  


সংস্থাটির নাম - ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া।



প্রকল্পটির নাম - কেন্দ্রীয় জল জীবন মিশন প্রকল্প।


এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য - সমগ্র দেশজুড়ে প্রতিটি গ্রাম এবং শহরে পানীয় জল পৌঁছানোর জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় জলের ট্যাংকি তৈরি করে পানীয় জল সরবরাহ করা হবে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে।



নিযুক্ত কর্মীদের কাজ - মূলত জলের ট্যাংকি গুলির দেখাশোনা করা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই প্রকল্পে নিয়োজিত করা হবে কর্মীদের।


শূন্য পদের সংখ্যা – বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনশোর বেশি কর্মীকে নিয়োগ করা হবে জল জীবন মিশন প্রকল্পে।



শিক্ষাগত যোগ্যতা- কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে নূন্যতম মাধ্যমিক পাস করে থাকলেই হবে।



বয়স- চাকরিপ্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।


বেতন কাঠামো – নিযুক্ত কর্মীদের প্রতিমাসে ৮০০০ টাকা থেকে ১২০০০ টাকা বেতন দেওয়া হবে।




আবেদন পদ্ধতি –


১) সবার প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে ভিজিট করে নিজের নাম ঠিকানা থেকে শুরু করে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সের প্রমাণপত্র এবং সিভি সহ রেজিস্ট্রেশন করে রাখুন। 


২) তারপর ফর্মটি পূরণ করার জন্য যা কিছু তথ্য প্রয়োজন সেই সমস্ত তথ্য দিয়ে অনলাইনে ফর্মটি পূরণ করে ফেলুন।


৩) এরপর সমস্ত নথিপত্র আপলোড করার পর সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন।



নিয়োগ প্রক্রিয়া - এই জল জীবন মিশন প্রকল্পের আওতায় জল ট্যাংকি দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য জন্য কর্মী নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনরকম লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে না আবেদনকারীদের। শুধুমাত্র ইন্টারভিউ এবং ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে সকল কর্মীদের নিয়োগ করা হবে এই প্রকল্পে। ইতিমধ্যে আবেদন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনোরূপ আবেদন মূল্য লাগছে না। আবেদন করার আগে অবশ্যই অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করে নেবেন। 

Tuesday, July 16, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ১০ || part - 10 || Era Kara part 10 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা


 


।। চার।।


স্বরুপ বাবু কনিকাদের বাড়ীতে বিদায় নিয়ে আপন বাড়ীর উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই কনিকার চোখ জলে ভরে গেল। কি আশা নিয়ে সে এসেছিলো। তার মুখখানি দেখে তার হৃদয় ফেটে যাচ্ছিল। নিদারুন ব্যাথায় নিজেকে কাইল করার মতো ক্ষমতা নেই। প্রেমের অঙ্কুর জন্ম নিতে শুরু করেছিল অচিরেই বিনাশ হলো। কনিকা ভাবতে পারেনি এই ধরনের ঘটনা তার কর্ন গোচর হবে। কোন উপন্যাস বা গল্পে কদাচিৎ কোনদিন এই ঘটনা চোখে পড়েনি। কিন্তু এ যে কতখানি বাস্তবতা তা বুঝতে পারলে,। কনিকার মনে উদয় হলো ঈশ্বর এই ধরনের ঘটনা ঘটালেন কেন? কেন ঈশ্বর তার প্রতি বিরুপ হলেন। কেন অমাবস্যায় ঘিরে এলো তার জীবনের পট ভূমিকা। আশালতাদির ট্রাজিডি জীবনের সাথে তার জীবন মিলে গেল। অবশ্য কনিকার অঙ্কুর বিনাশ আর আশালতাদির ভালোবাসার নাটকে তৃতীয় অংকে কুয়াসায় ফিরে গেল। আশাদি চিরন্তনকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। দুটি হৃদয় যেন একই বাঁধা হয়েছিল। বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছিল এদের প্রেম চিরন্তর শ্বাশত, কেউ ছিন্ন করতে পারবে না। কিন্তু ওর জীবন হতে চিরন্তন যে কপূরের মতো উবে যাবে কোন কল্পনা করতে পারেনি। চিরন্তনকে অনেক জায়গায় শহর, নগর, গ্রাম গঞ্জের, হাসপাতাল নাসিংহোম ইত্যাদি প্রচুর খোঁজা খুজি করেছিল ওর বন্ধু বান্ধবরা কোন হদিস পায়নি। আশালতাদিকে শুধু হতাশ আমন্ত্রনে জর্জরিত করছে। মাঝে মাঝে আশাদি চোখের জলে ভাসতে থাকে। তবে আশাদি প্রতিজ্ঞা করেছে চিরন্তনকে খোঁজ করে বের করবেই।


হঠাৎ আশালতাদির মোবাইলে রিং হতেই তার চমক ভাঙ্গলো রিসিভ করলো- আমি আশালতাদি বলছি, কনিকা বললো-


বলো।


-কনিকা, স্বরুপ আজকে তোদের বাড়ী গিয়েছিল?


-হ্যাঁ


- ঠিক আছে তোর সাথে পরে কথা বললো। আজ রাত্রে তোদের বাড়ী যাবো। ঠিক আছে। তবে মনে রাখবি তোকে একটা মারাত্মক সারপ্রাইজ দেবো। এখন রাখছি, প্রয়োজনে ফোন করবি। আমি এখন আমার চেম্বারে আছি। একটা গুরুত্ব পূর্ণ পেসেন্ট দেখছি। কনিকা ওকে বিরক্ত করলো না।


বিনামূল্যে চিকিৎসা, আশালতার চেম্বার। আশালতা পারটাইমে এই চেম্বারে সময় কাটিয়ে দেয়। সে কাজের মধ্যে থাকতে ভালো বাসে বিশেষ করে ভুলে থাকতে চায় তার দুঃখকে।


বিকেল বেলা, সন্ধ্যে প্রায় আগত, মনে হয় আজ তার পেমেন্ট আসবে না। কারন চারিদিকে মেঘটা ঘন কালো আকারে জমাট হয়েছে। মনে হচ্ছে একটু পরে বৃষ্টি নামতে পারে। হঠাৎ এক মহিলা আশালতার পাদুটো ধরে বললো, আমাকে বাঁচান মিসটার। আশালতা ততক্ষনাৎ ওর হাত দুটো ধরে বললো এত উতলা হবেন না। আপনি স্থির হয়ে বসুন আমি আপনার কথা শুনবো। মহিলা বললো। চোখ মুখ ঘামে ভর্তি। নিজের কাপড়ের খুঁট দিয়ে মুছে বললো- আমার খুব বিপদ বলুন, কোথা থেকে আপনি আসছেন? মহিলা দ্বীর কন্ঠে বললেন - আমার নাম ময়না বারুই বাড়ী আমার চেতলাপুর। দামোদর নদীর পাড়ে। আমার খুব বিপদ।


আশালতা শান্ত স্বরে বললো, এবার বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি। ময়না নীরব থাকে। তার মুখ ফুটতে চাইছে না পুনরায় বললো আশালতা, কি হেলি মুখকে গাম আঁঠা চিটিয়ে রাখেেলন কেন? ময়না ধমক পেয়ে মৃদু স্বরে বললো-


-আমার মনে হচ্ছে আমি মা হতে চলেছি। আশালতা অবাক চোখে বললো,


- হোয়াট! একি বলছেন আপনি, আপনার তো বিধবার বেশ।


সে জন্য আমার আরো ভয়।


- আপনার এতো সাহস হলো কি করে?


- বিশ্বাস করুন আমি মোটেই রাজী ছিলাম না। আমার সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। ডীও ম্যাশাই চায়। কা


-ঠিক আছে, আমার কাছে সেই প্রতারনার কথা বা ঘটনা প্রকাশ করুন। যদি আপনি নির্দোষী হন তাহলে আমি আপনাকে বাঁচাবই। ময়না দ্বিতীয় উক্তি না করে ততার ঘটনা ঘটে যাওয়ার কথা স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করলো।


দামোদর নদীর তীরে বিশাল মাথা উঁচু করে পরপর কয়েকটা চিমনি দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভেতর দিয়ে গল গল করে গাঢ় আলকাতরার মতো কালো ধোঁয়া সর্বদাই বেরুচ্ছে। ঐ কারখানার বিশাল নাম। হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মস্থানের খ্যাতনামা জায়গা। কারখানার শ্রমিকরা, উচ্চপদস্থের, নিম্নপদের অফিসার ছাড়া ঠিকাদার কর্মী খুব সুখী। কারখানার মাইনেতে সুন্দর ভাবে তাদের দিন কেটে যায়। এই কারখানার ছয় নাম্বার মেসিনের হেড মিস্ত্রী হলো গজানন মোড়ল। নাম করা মিস্ত্রী। হঠাৎ তার কালাজ্বর হওয়াতে তাকে মৃত্যুবরন করতে হলো। কেউ ভাবতে পারেন নি গজানন মিস্ত্রীকে অকালে চলে যেতে হবে। কিন্তু বিধাতার লেখা কেউ খন্ডন করতে পারে না। একটি সাত বৎসরের সন্তান, চার বৎসরের কন্যাকে রেখে গেলেন। পত্নী ময়না ভাবতে পারে নি তাদের সকল কে অথৈই জলে ভাসিয়ে পর পারে রাস্তা ধরে নেবে। সংসার অভাবে ঘনিয়ে এলো। জমানো টাকা দিয়ে গজানন বাবু শ্রাদ্ধাদি কাজ সম্পন্ন হলো ঠিক কথা, কিন্তু অভাব ঘরের মধ্যে বাসা বাঁধলো। অনটন আর অনটন। প্রায় দিন ছেলে মেয়েদুটোর মুখে এক মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারতো না। একদিন গজানন বাবুর ছেলে চয়ন ক্ষিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে পারুল মাসীর দোকান হতে পাউরুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। পারুল মাসী ওকে মারতে শুরু করে। সেই সময় ঐ দোকানে ঐ অঞ্চলের একজন নামী নেতা, হিড়িম্বর পরম বন্ধু অর্থাৎ এক ডালের দুটি ফুল তারা। অনেকেই প্রত্যক্ষদর্শী হিড়িম্ব হাজরার অনুগতির মিছিলে তিনি হাঁটেন। প্রতিটি পদক্ষেপ সীমা নির্ধারক ছিলেন। কারখানার ইউনিয়নের একজন সদস্য ছিল। পারুল মাসী কে ধমকে দিলো- কি করছো পারুল, একটা পাউরুটির জন্য ছেলেটাকে মারছো কেন? এই নাও তোমার পাউরুটির দাম। ঢল ঢলে পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে পারুল মাসীর হাতে দিল। পারুল মাসী ছোঁ মেরে পাঁচটাকার নোটটা হাতে নিয়ে দু টাকা কেটে ডমনা ঘোষের হাতে তিন টাকা ফেরত দিল। এখানে খেলা শেষ নয়। ডমনা, ছেলেটাকে বললো, চুরি করতে কে বলেছে? জানো এর ফল কি? তোমার নাম কি, তোমার বাড়ী কোথায়? ছেলেটি উত্তর দিল ওর নাম চয়ন, এই পাড়াতেই থাকে। ডমনা বললো- তাহলে চুরি করলে কেন? ছেলেটি বললো, - আজবধি দুদিন পেটে দানা পানি পড়ে নি, খুব খিদে পেয়েছিল তাই ঐ মাসীর কাছে একটা পাউরুটি চেয়েছিলাম। বলেছিলাম পরে পয়সা দোব। আমার কথা শুনলো না বলে চুরি করতে বাধ্য হলাম। ডমনা বললো,


তোমার বাবা কি করেন?


বাবা তিন মাস আগে মারা গেছেন, ঐ কারখানাতে কাজ করতো।


তোমার বাবার নাম কি?


গজানন মোড়ল।


-তুমি গজানন মোড়লের ছেলে! তুমি হয়তো জানোনা, তোমার বাবা আমাদের পাশের ডিপামেন্টে কাজ করতো। তোমার বাবা একজন নাম করা মিস্ত্রী ছিল। তোমাদের বাড়ীতে কে কে আছে? শয়তান, বলুন আর চরিত্রহীন বলুন কোন কিছুর গন্ধ পেতে চাইছেন গন্যমান্য ভদ্রলোক শ্রীমান ডমনা ঘোষ। এদের চরিত্র বিশ্লেষন করা যায় না। পাতার পর পাতা এদের চরিত্র এর ব্যাখা করা যায়। বাড়ীতে কেকে আছে বললে না। চয়ন নম্র কণ্ঠে বললো, মা, আমি আর আমার ছোট বোন দীপালি, ডমনা বললো,- চল তোমাদের বাড়ীতে যাই। তোমার মা কেমন আছে খবর নিয়ে আসি। ডমনা ওদের বাড়ীর দিকে রওনা হোক চয়নের সাথে। ডমনাবাবু হলেন সমাজ সেবক, উপকারী বন্ধু, দেখা যাক এই পরিবারে প্রবেশ করে তিনি কি উপকার টি করছেন। ডমনা কোনদিন গজানন মোড়লের বাড়ী আসে নি। তাই ময়না কে কোন দিন চোখে দেখে নি। ময়না একজন পূর্ন যুবতী মেয়ে। এক পলক দেখেই ওর ভেতরটা যেন শির শির করে উঠলো। মেয়েটার যেমন শরীরের বাঁধন, যেন পান পাতার মত মুখ, পটলচেরা চোখ, গায়ের রং দুধে আলতায় মিশ্রন। বিশেষ করে ঐ যে ঠোঁটের নীচে একটা কালো তিল ওটাতে তার মুখের ফেস একে বারে লাবন্যময়ী। যে কোন পুরুষের মন হরন হতে বেশী সেময় লাগবে না। ময়নার মুখ পানে কতক্ষন যে তাকিয়ে ছিল ডমনা তা জানে না, চয়নের ডাকে তার তন্দ্রা কেটে গিয়ে লজ্জায় পড়লো। চয়ন বললো- জেঠু চা খাবে? ভমনা বললো,


- না চয়ন আজ চা খাবো না। তোমাদের একটা হিল্লে না করা পর্যন্ত্য তোমাদের


বাড়ীতে কিছু খাবো না। চয়ন ওর মাকে বললো, মা জেঠু চা খাবে না। ময়নার পানে তাকিয়ে বললে, তুমি চয়নের মা?


- হ্যাঁ, আমি হতভাগী সেই মা, যে মা দুটো ছেলে মেয়ের মুখে এক মুঠো অন্ন তুলো দিতে পারে না। তাদের মুখপানে তাকাতে পারা যায় না। তবে আপনি কি ভমনদা? ডমনা ব্যাকুল স্বরে বললো,


- হ্যাঁ আমি ডমনাদা। গজানন ভালো মিস্ত্রি ছিলো। কিন্তু ঈশ্বর এতো তাড়াতাড়ি ওকে সংসার থেকে বিদায় করবেন কেউ ভাবতে পারিনি। তবে ময়না একটা কথা মনে রাখবে, মানুষ কখনো চিরস্থায়ী নয়, তবে অকালে চলে গেলে বুকে বড় আঘাত হানে। তবে ভয় পেওনা, আমি তো মার পাশে আছি, থাকবো। জানি না আমার নিয়ে গজাননের কাছে আমার বর্ননা শুনে থাকবে। তবুও বলছি আমি কারখানার একজন নামী নেতা। ময়না ওর কথাকে কেড়ে নিয়ে বললো, -আমি রাজুদার কাছে শুনেছি আপনার কথা। যদি কোন প্রকারে একটা যে কোন কাজ করে দিতেন তাহলে দুটো বাচ্চার মুখে কিছু আহারের ব্যবস্থা করতে পারতাম। আপনি কি একটা দুস্থ পরিবারকে মৃত্যুর কবল হতে বাঁচাতে পারেন না? একটা ঝঞ্ঝা বিদ্ধস্ত দরিদ্র পরিবারকে অন্ধকারাছন্ন হতে আলোতে আনতে পারবেন না। ওকথা শুনে ডমনার কুন্ড যেন ধীরে ধীরে উৎতপ্ত হতে থাকলো। এইতো সুযোগ ময়নাকে- না থাক এতো তাড়াতাড়ি করে মনকে উতলা করা উচিত হবে না। ধীরে ধীরে ময়নাকে নিজের করে নিতে হবে। ডমনা ঐসব নানা কেত্তনের কথা চিন্তা করে তেপান্তরের মাঠে হাজির হয়েছিলো। ময়নার ডাকে নিজের তন্দ্রাকে কাটিয়ে তুললো- আপনি কাজের ব্যাপারে চিন্তা করছেন?


- তুমি ঠিক কথা বলছো। তোমার এই দারিদ্র পরিবারটিকে আর্থিক অন্বেষণের কোন পথ খোলা নেই আমি বুঝতে পারছি। আমি আরো অনুভব করছি তুমি তোমার জীবনে পঙ্কিলতার আর্বতে ঘুর পাক খাচ্ছে। তুমি তো জানো ময়না এই বর্তমান যুগে মানুষ বড় জঘন্য হয়ে গেছে। সর্বত্র বিষাক্ত নিঃশ্বাস সমাজে রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। সাবাস ডমনা ঘোষ সাবাস। এই সুন্দর ডাইলগ কি করে মুখ থেকে বের হলো এটাই আমাদের ভাবিয়ে তুললো। আচ্ছা দেখা যাক কত ভালো কাজ করছেন আমাদের ডমনা ঘোষ। তবে একটা কথা বলে রাখছি, ভূতের মুখে রাম নাম। ময়নাকে গভীর আশ্বাস দিয়ে বললো- তুমি চিন্তা করোনা ময়না আমি কথা দিচ্ছি কোন না কোন ব্যবস্থা করবই। এতো দিন পার্টী করছি তোমার একটা কাজ করতে পারবো না? আজ আর এখানে থাকার সময় হচ্ছে না। আমাকে ডিউটি যেতে হবে। এক কাজ করো, ভমনা ঘোষ কামিজের পকেট থেকে কড় কড়ে দশটার নোট কুড়িটা ময়নার হাতে দিয়ে বললো, - এই টাকা গুলো রাখ, তোমার ছেলে মেয়েদের মুখপানে তাকিয়ে দিলাম। ময়নাকে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও নিতে হলো। ময়না জানে, এই ধুরন্ধর পৃথিবীতে এমন একটা মানুষ পাবেন না যে বিনা স্বার্থে মানুষের কাজ করে। ময়না কথাখানি মন্দ বলে নি। যুগ অনুপাতে কথাখানি যথেষ্ট সত্যতা আছে। ভমনা এক সময় বললো, তাহলে আজ বিদায় নি। পরে সময় সুযোগ পেলে আসবো। তবে যাবার সময় একটা কথা বলে যাই, বিপদে তোমার পাশে আছি। ডমনাবাবু প্রস্থান করলেন।'

_____________________________________


পর্ব - ৯ পড়তে -

click here 🔴

Thursday, July 11, 2024

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job


 

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক টাটা কোম্পানিতে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। নিয়োগ টি হবে টাটা স্টিল সেক্টরে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।



পদের নাম : টাটা স্টিল সেক্টরে বিভিন্ন শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদনের নীচে অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির লিংক দেওয়া আছে সেখানে ক্লিক করলেই সমস্ত পদের নাম দেখতে পাবেন।


মোট শূন্যপদ : মোট ৬০০০টি কর্মী নিয়োগ হবে।


বেতন সীমা : এখানে প্রতিটি চাকরি প্রার্থীকে প্রতি মাসে ২৪৫০০ টাকা বেতন দেওয়া হবে এবং সর্বোচ্চ বেতন পাবেন ৬৮-৩০০ টাকা‌। এছাড়াও থাকছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ।


শিক্ষাগত যোগ্যতা : এখানে বিভিন্ন পদের জন্য বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা লাগবে। তাই কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম মাধ্যমিক অথবা উচ্চমাধ্যমিক অথবা এর উচ্চতার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও পদ অনুসারে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।



আবেদন পদ্ধতি : চাকরি প্রার্থীরা শুধুমাত্র অনলাইন এর মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। সর্বপ্রথম নীচে দেওয়া অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক ক্লিক করে ভিসিট করবেন। তারপর রেজিস্ট্রেশন করে নেবেন ।এরপর নির্দিষ্ট পদ সিলেক্ট করে সঠিকভাবে ফর্মটি পূরণ করুন। তারপর প্রয়োজনীয় তথ্য স্ক্যান করে আপলোড করবেন। সবশেষে ফর্মটি পূনরায় যাচাই করবেন তারপর সাবমিট করবেন।


নিয়োগ প্রক্রিয়া : চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবেনা। সরাসরি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবেএবং এর পাশাপাশি প্রার্থীর বয়স ও যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হবে।


আবেদন শেষ তারিখ : আগামী ০৮/০৮/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত আবেদনকারীরা অনলাইন এ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 



নোটিফিকেশন লিংক -

click here 🔴





অফিসিয়াল ওয়েবসাইট -


Click here 🔴


TATA Steel Job Recruitment 2024 || Tata Steel Company Recruitment for 6000 Vacancies || TATA company job


 

TATA Steel Job Recruitment 2024 || Tata Steel Company Recruitment for 6000 Vacancies || TATA company job



 Good news for state job aspirants. So far the central and state job recruitment was stopped. But now the wait of West Bengal job aspirants is about to end. A large number of Tata companies are going to recruit workers in the state again. The recruitment will be in Tata Steel Sector. So this is a golden opportunity for all the job aspirants who are currently waiting for government jobs. What posts will be appointed, how much monthly salary will be given, what is the age limit, what educational qualification will be required and how to apply will be known from below.



 Post Name: Tata Steel Sector has started recruitment for various vacant posts. Click on the official notification link below this report to see all the post names.


 Total Vacancies: Total 6000 employees will be recruited.


 Salary Limit: Here every job aspirant will be paid Rs 24500 per month and maximum salary will be Rs 68-300. There are also various facilities.


 Educational Qualification : Here different qualifications are required for different posts. Therefore, even if you have a minimum secondary or higher secondary education qualification from a recognized institution, you will get the opportunity to apply according to the post.



 Application Procedure: Job aspirants will have the opportunity to apply through online only. First visit the official website link given below. Then register. Then select the specific post and fill the form correctly. Then scan and upload the required information. Finally recheck the form and then submit.


 Recruitment Process: Candidates will not have to give written test. The recruitment process will be done through direct interview and besides this the selection of the candidates will be done based on the age and qualification of the candidate.


 Application Last Date: Applicants will get an opportunity to apply online till 08/08/2024. 



 Notification Link -


 click here 🔴




 Official Website -


 Click here 🔴

Sunday, July 7, 2024

মিড ডে মিলে সুপার ভাইজার নিয়োগ || WB Supervisor Recruitment 2024 || WB jobs || Supervisor Recruitment || WB jobs 2024 || ব্লকে ব্লকে ডে মিল প্রকল্পে সুপারভাইজার নিয়োগ


 

মিড ডে মিলে সুপার ভাইজার নিয়োগ || WB Supervisor Recruitment 2024 || WB jobs || Supervisor Recruitment || WB jobs 2024

ব্লকে ব্লকে ডে মিল প্রকল্পে সুপারভাইজার নিয়োগ



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক সুপার ভাইজার নিয়োগ হতে চলেছে মিড ডে মিলের প্রোগ্রাম দেখাশোনার জন্য। পুরুষ ও মহিলা সকল প্রার্থীই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।




পদের নাম : Supervisor (মিড ডে মিলের প্রোগ্রাম দেখাশোনার জন্য)


বেতনক্রম : প্রতি মাসে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সুপারভাইজার পদে ১০,০০০/- হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে


বয়স সীমা : আবেদনকারীর বয়স ০১/০১/২০২৪ তারিখ অনুযায়ী ৬২ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবেই সে এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 



শিক্ষাগত যোগ্যতা : আবেদন কারীকে অন্তত যে কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে যে কোনো শাখায় গ্রাজুয়েট হতে হবে, তবেই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 



আবেদন পদ্ধতি : শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নীচে দেওয়া নোটিফিকেশন লিংক থেকে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করতে পারবেন। প্রিন্ট আউট হয়ে যাওয়ার পর হাতে-কলমে সুন্দর ফিলাপ করে তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস একত্রিত করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সরাসরি নির্দিষ্ট ঠিকানায় জমা করতে হবে। 


নিয়োগ প্রক্রিয়া : আবেদনকারী প্রার্থীদের আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ইন্টারভিউ এর তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এখানে শুধুমাত্র ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। 


আবেদনের শেষ তারিখ : আগামী ১৬-৭-২০২৪ বিকাল ৪ঃ০০ টা পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা করার সুযোগ পাবেন। 


Website Link - 

Click here 🔴



Notification - 

click here 🔴

Thursday, July 4, 2024

জুন সংখ্যা ২০২৪ || June Sonkha 2024 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র

 



সম্পাদকীয়:


যে প্রেম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার উপর গড়ে ওঠে সেই প্রেমের স্থায়িত্বকাল কতটা তা সংশয়ের বস্তু। 'প্রেমে পড়া বারণ কারণ অকারণ' এই কথার মধ্যেই তাৎক্ষণিক প্রেমের ভয়াবহতা লুকিয়ে আছে। আসলে প্রেম একটা আনন্দদায়ক অভিশাপ। প্রেমের মাহাত্ম্য বোঝা সকলের সাধ্য নয়। তবে এটা কেবল কোনো নারীর প্রতি পুরুষের কিংবা কোনো পুরুষের প্রতি নারীর প্রেম ।


 আসলে কিছু প্রেম আছে যা হল সাধণা। প্রেমের সাধণায় যে মত মশগুল সে তত বেশি সন্ন্যাসী ও তান্ত্রিক। আসলে প্রেম হল ছোঁয়াচে। এই প্রেম হল সাহিত্যের প্রতি। সাহিত্য প্রেমিক সাধক হতে ভালোবাসে। আসলে এই সাধণাটা প্রত্যেক মানুষের দরকার। এতে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।


এই সাহিত্যের প্রতি প্রেমের সাধণায় মশগুল থাকার সুযোগ করে দিয়েছে আপনার আমার সকলের প্রিয় পত্রিকা ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা। তাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সাহিত্যের প্রতি প্রেমের সাধণা করে যান নিরন্তর। ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন আপনার পাশে আছে। 


                  ‌ ধন্যবাদান্তে 

                                   সম্পাদকীয় বিভাগ 



____________________________________________


                                 সূচীপত্র 

 

English story - Bhaskar sinha


English poem - Samir Kumar Dutta 


বাংলা কবিতা - সুশান্ত সেন 


বাংলা গল্প - তপন তরফদার, গায়ত্রী ভট্টাচার্য 


প্রবন্ধ - শংকর ব্রহ্ম 



_____________________________________



___________________________________


_____________________________________




              

Wednesday, July 3, 2024

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় - শংকর ব্রহ্ম || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article


অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


                  শংকর ব্রহ্ম





                 বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হলেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি তাঁর দেশ- কালকে স্বচ্ছন্দে অতিক্রম করে এক যুগোত্তীর্ণ মর্যাদায় অবতীর্ণ হয়েছেন বাঙালি পাঠক-হৃদয়ে , তাঁর কালজয়ী খ্যাতি দেশের সীমাকে অতিক্রম করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তারলাভ করে বিদেশি পাঠকদের হৃদয়কেও জয় করেছে।



             বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্র এমন একটি নূতন পথ ধরে লেখা শুরু করেছেন যা বাঙলা কথাসাহিত্যের পরিধিকে আরও প্রসারিত করে দিয়ে তার মধ্যে এনেছে এক অভূতপূর্ব বৈচিত্র্য। তাঁর সংবেদনশীল হৃদয়, ব্যাপক জীবনজিজ্ঞাসা, প্রখর পর্যবেক্ষণশক্তি, সংস্কারমুক্ত স্বাধীন মনোভঙ্গি প্রভৃতির গুণে শরৎসাহিত্য লাভ করেছে এক অনন্যসাধারণ বিশিষ্টতা যা পরবর্তীকালের বাঙলা সাহিত্যের গতি-প্রকৃতিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত করেছে।



                    শরৎচন্দ্রের সমস্ত উপন্যাস ও ছোট গল্পগুলিকে প্রধানতঃ পারিবারিক, সামাজিক ও মনস্তত্ত্বমূলক – এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। তবুও তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসের কেন্দ্রভূমিতে রয়েছে বাঙালীর সমাজ সম্পর্কে এক বিরাট জিজ্ঞাসা এবং বাঙালির মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ জীবনের বাস্তব রূপায়ণ। সমাজের বাস্তব পরিপেক্ষিতে নরনারীর জীবনভঙ্গিমা ও জীবনবোধকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের মানসলোকে যে সূক্ষ্ম জটিল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, শরৎসাহিত্যে আমরা পাই তারই সার্থক রূপায়ণ। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের দুঃখ-বেদনার এতবড় রূপকার এর আগে আমরা দেখিনি। মূঢ়তায় আচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর শাসনে লাঞ্ছিত নর-নারীর অশ্রুসিক্ত জীবন-কাহিনি অবলম্বন করে মানবদরদী শরৎচন্দ্র যে কতগুলি উৎকৃষ্ট ট্রাজেডি রচনা করেছেন তাতে বাঙলা সমাজের অতিবিশ্বস্ত ও বহুচিত্রিত এক আলেখ্য উন্মোচিত হয়েছে সকলের সামনে।


             তাঁর সাহিত্যে প্রতিফলিত জীবন একান্তই আটপৌরেজীবন। সাধারণ বাঙালি জীবনের বহুবর্ণিল কিংবা আনন্দ-বেদনা, বিরহ-মিলনেরই অভিঘাত। প্রগাঢ় অনুভবের গভীরতায় এই রূপায়ণ কল্পনাজাত কোনও প্রলেপ নয়। জীবনের অন্তঃপুরে প্রবেশ করে এমন করে এই সমাজ, জীবনকে আর কে দেখিয়েছেন!


     বাঙালি সমাজের প্রথাগত ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, কুসংস্কারকে তিনি নিপুণভাবে চিহ্নিত করেছেন। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোথায় গলদ-সূত্র। তবু বেশির ভাগ সমালোচকই মনে করেন- 'শরৎচন্দ্র সমস্যা চিহ্নিত করেছেন বটে, সংকট-উত্তরণের পত বাতলে দেননি।' সমস্যা চিহ্নিত হলে মুক্তির পথ আপনি রচিত হয়- এমনটি বলতেই পারি। লেখককেই কেন পথ বাতলে দিতে হবে, তাহলে আলোচকের কাজ কী? বঙ্কিমচন্দ্র 'কৃষ্ণকান্তের উইলে' বিধবার প্রেমকে শুধু নিরুৎসাহিত করেননি; রোহিণীকে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ 'চোখের বালি'তে একধাপ রঙ চড়ালেন বটে কিন্তু বিধবা বিনোদিনীকে শেষ পর্যন্ত পাঠিয়ে দিলেন তীর্থস্থানে। 'ঘরে বাইরে'তে বিমলার স্খলনকালে হাল ধরলেন শক্ত হাতে!


    'গৃহদাহ'তে শরৎবাবু তো বরং বেশ অগ্রসরতা দেখালেন। সম্ভাব্য সবকিছু ঘটনা-প্রবাহের অনিবার্য স্রোতে ঘটার পর মহিম-অচলা-সুরেশের ত্রিভুজপ্রেম গন্তব্য খুঁজে পায় স্বামীনিষ্ঠায়। ভারতীয় ঐতিহ্যে, বাঙালি সমাজব্যবস্থার দীর্ঘদিনের স্বামী-সংস্কারে অর্থাৎ 'পতি পরম গুরু' এই নিষ্ঠার কাছে সমাধান খোঁজাকেও অনেকে তীর্যকভাবে দেখেছেন।



            হুগলী জেলায় দেবানন্দপুর একটি ছোট্ট গ্রাম। গ্রামটি ইষ্টার্ন রেলওয়ের ব্যান্ডেল রেল স্টেশন থেকে মাইল-দুই উত্তর–পশ্চিমে অবস্থিত। এই গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ১৮৭৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে (বাংলা ১২৮৩ সালের ৩১শে ভাদ্র) শরৎচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে শরৎচন্দ্রের আরও দুই ছোটভাই এবং অনিলা দেবী ও সুশীলা দেবী নামে দুই বোনও ছিলেন। অনিলা দেবী ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় আর সুশীলা দেবী ছিলেন সবার ছোট।



      শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল এন্ট্রান্স পাস করে কিছুদিন এফ.এ. পড়েছিলেন। তিনি অস্থিরচিত্ত, ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তাই অল্প কিছুদিন চাকরি করা ছাড়া আর কখনও কিছুই করেননি। গল্প-উপন্যাস লিখতেন; কিন্তু ঐ অস্থিরচিত্ততার জন্যই কোন লেখা সম্পূর্ণ করতেন না। অভাব অনটনের জন্য তিনি বেশীর ভাগ সময় স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। তাই শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলার অনেক গুলো বছর কেটেছিল ভাগলপুরে মামার বাড়িতে।


শরৎচন্দ্রের মাতামহ কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল ২৪-পরগনা জেলার হালিশহরে। কেদার বাবু ভাগলপুরে কালেকটারি অফিসের কেরানি ছিলেন। তিনি ভাগলপুরেই সপরিবারে বাস করতেন। কেদারবাবুর ছোট চার ভাই পরিবারসহ তাঁর কাছেই থাকতেন।



শরৎচন্দ্রের বয়স যখন পাঁচ বছর সেই সময় তাঁর পিতা তাঁকে গ্রামের (দেবানন্দপুরের) প্যারী পন্ডিতের (বন্দ্যোপাধ্যায়ের) পাঠশালায় ভর্তি করে দেন।শরৎচন্দ্র এখানে দু-তিন বছর পড়েন। পাঠশালার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি ছিলেন দুরন্ত।



শরৎচন্দ্র যখন প্যারী পন্ডিতের পাঠশালায় পড়ছিলেন, সেই সময় স্থানীয় সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্য দেবানন্দপুরে একটি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন। এই স্কুল স্থাপিত হলে শরৎচন্দ্রের পিতা শরৎচন্দ্রকে প্যারী পন্ডিতের পাঠশালা থেকে এনে সিদ্ধেশ্বর মাস্টারের স্কুলে ভর্তি করে দেন। এই স্কুলেও শরৎচন্দ্র বছর তিনেক পড়েন।



এই সময় শরৎচন্দ্রের পিতা বিহারের ডিহিরিতে একটা চাকরি পান। চাকরি পেয়ে তিনি ডিহিরিতে চলে যান। যাবার সময় তিনি স্ত্রী ও পুত্রকন্যাদের ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে রেখে যান। পরে তিনি পরিবার ডিহিরিতে নিয়ে গেলেও শরৎচন্দ্র কিন্তু পড়বার জন্য ভাগলপুরেই থেকে গেলেন। তবে ছুটিতে অবশ্য তিনি মাঝে মাঝে ডিহিরিতে বাবা মার কাছে যেতেন।


শরৎচন্দ্র দেবানন্দপুর থেকে ভাগলপুরে এলে তাঁর মাতামহ তাঁকে ভাগলপুরের দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তি ক্লাসে ভর্তি করে দেন।ঐ ক্লাসে শরৎচন্দ্রের মাতামহের কনিষ্ঠ ভ্রাতা অঘোরনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মণীন্দ্রনাথও পড়তেন। সে বছরে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে শরৎচন্দ্র এবং মণীন্দ্রনাথ উভয়েই পাস করেছিলেন।



ছাত্রবৃত্তি পাস করে শরৎচন্দ্র ১৮৮৭ সালে ভাগলপুরের জেলা স্কুলে সেকালের সেভেন্‌থ্‌ ক্লাসে অর্থাৎ বর্তমানের ক্লাস ফোর বা চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন।



ছাত্রবৃত্তিতে তখন ইংরাজী পড়ানো হত না। তবে বাংলা, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয় একটু বেশী করেই পড়ানো হত। শরৎচন্দ্র ছাত্রবৃত্তি পাস করার ফলে জেলা স্কুলের সেভেন্‌থ্‌ ক্লাসের বাংলা অঙ্ক ইত্যাদি তাঁর কাছে অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছিল। তাঁকে কেবল ইংরাজীই যা পড়তে হত। ফলে সে বছরের শেষে পরীক্ষায় ইংরাজী এবং অন্যান্য বিষয়েও শরৎচন্দ্র এত বেশী নম্বর পেয়েছিলেন যে, শিক্ষকমশায়রা তাঁকে ডবল প্রমোশন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ শরৎচন্দ্র ১৮৮৮ সালে সেকালের সেভেন্‌থ্‌ ক্লাস থেকে সিকস্‌থ্‌ ক্লাস টপকে একেবারে ফিপ্‌থ্‌ ক্লাসে উঠেছিলেন। তখনকার দিনে স্কুলের নীচের দিক থেকে এইভাবে ক্লাস গণনা হত-নাইন্‌থ্‌ ক্লাস, এইট্‌থ্‌ ক্লাস, সেভেন্‌থ্‌ ক্লাস, সিকস্‌থ্‌ ক্লাস, ফিফ্‌থ্‌ ক্লাস, ফোরথ্‌ ক্লাস, থার্ড ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ও ফার্স্ট ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস হল বর্তমানের ক্লাস টেন বা দশম শ্রেণী।


১৮৮৯ সালে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুলের ফোরথ্‌ ক্লাসে উঠলেন, সেই সময় তাঁর পিতার ডিহিরির চাকরিটিও চলে যায়। শরৎচন্দ্রের পিতা তখন পরিবারবর্গকে নিয়ে আবার দেবানন্দপুরে ফিরে আসেন। শরৎচন্দ্র বাবা-মা’র সঙ্গে দেবানন্দপুরে এসে ঐ বছরই অর্থাৎ ১৮৮৯ সালেই জুলাই মাসে হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলের ফোরথ্‌ ক্লাসে ভর্তি হলেন। ১৮৯২ সালে শরৎচন্দ্র ফার্স্ট ক্লাসে পড়ার সময় তাঁর পিতা অভাবের জন্য আর স্কুলের মাহিনা দিতে পারলেন না, ফলে শরৎচন্দ্র পড়া ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে রইলেন।



শরৎচন্দ্র এই সময় সতের বছর বয়সে সর্বপ্রথম পাঠশালার সহপাঠী কাশীনাথের নাম নিয়ে ‘কাশীনাথ’ নামে একটি বড়গল্প লেখেন। এ'ছাড়া ‘ব্রহ্মদৈত্য’ নামে আরও একটি গল্প লিখেছিলেন। ব্রহ্মদৈত্য গল্পটি পাওয়া যায় না।



দেবানন্দপুরে মতিলালের অভাব ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠায় তিনি তখন বাধ্য হয়ে আবার সপরিবারে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে গেলেন। সেটা তখন ১৮৯৩ সালের প্রথম দিক। শরৎচন্দ্র ভাগলপুরে গিয়েই আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহান্বিত হলেন। কিন্তু শরৎচন্দ্রের আগ্রহ হলে কি হবে! হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলের বকেয়া মাহিনা মিটিয়ে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট আনার টাকা কোথায়? ১৮৯২ সালের জানুয়ারী মাসে তাঁর মাতামহের মৃত্যু হওয়ায় মামার বাড়ির একান্নবর্তী সংসার ভেঙ্গে যায়। শরৎচন্দ্রের নিজের দুই মামার মধ্যে বড়মামা ঠাকুর দাসের তখন চাকরি ছিল না। ছোটমামা বিপ্রদাস সামান্য বেতনে সেই সবে একটা চাকরিতে ঢুকেছেন। তাঁকে একাই তাঁর নিজের, তাঁর দাদা ঠাকুরদাসের এবং ভগ্নীপতি মতিলালের সংসার চালাতে হয়।



সাহিত্যিক ও সাংবাদিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ঐ সময় ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এবং ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের মামাদের প্রতিবেশী ছিলেন। পাঁচকড়িবাবুর পিতা বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের মাতামহের বন্ধু ছিলেন। তাই শরৎচন্দ্র পাঁচকড়িবাবুকে মামা বলতেন। শরৎচন্দ্রের পড়ার আগ্রহ দেখে পাঁচকড়িবাবুই অবশেষে শরৎচন্দ্রকে তাঁদের স্কুলে ভর্তি করে নিয়েছিলেন।



শরৎচন্দ্র এই তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকেই পর বৎসর অর্থাৎ ১৮৯৪ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরীক্ষার আগে স্কুলে পরীক্ষার ফি এবং ঐ সঙ্গে দেয় ক’ মাসের মাহিনার টাকা জমা দেবার সময়ও শরৎচন্দ্রের ছোটমামা বিপ্রদাসকে স্থানীয় মহাজন গুলজারীলালের কাছে হ্যান্ডনোট লিখে টাকা ধার করতে হয়েছিল।



                     শরৎচন্দ্রের মাতামহের কনিষ্ঠ ভ্রাতা অঘোরনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মনীন্দ্রনাথও ঐ বছর এন্ট্রান্স পাস করেন। এন্ট্রান্স পাস করে মণীন্দ্রনাথ তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু টাকার অভাবে শরৎচন্দ্রের আর ভর্তি হওয়া হল না। অভাবের জন্যই বিপ্রদাস শরৎচন্দ্রকে কলেজে ভর্তি করাতে পারলেন না।


শরৎচন্দ্রের পড়া হবে না দেখে মণীন্দ্রনাথের মা কুসুমকামিনী দেবীর বড় মায়া হল। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে, তাঁদের দুই ছোট ছেলেকে পড়াবার বিনিময়ে শরৎচন্দ্রের কলেজে ভর্তি হওয়ার এবং কলেজে প্রতি মাসে মাহিনা দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিলেন। এর ফলে শরৎচন্দ্র কলেজে ভর্তি হতে সক্ষম হলেন। শরৎচন্দ্র রাত্রে মণীন্দ্রনাথের ছোট দু ভাই সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে পড়াতেন। এরা তখন স্কুলের নীচের ক্লাসে পড়তেন। এরা ছাড়া বাড়ির অন্য ছোট ছেলেরাও তাঁর কাছে এমনি পড়ত।


কলেজে পড়ার সময় শরৎচন্দ্র টাকার অভাবে কলেজের পাঠ্য বইও কিনতে পারেন নি। তিনি মণীন্দ্রনাথের এবং সহপাঠী অন্যান্য বন্ধুদের কাছ থেকে বই চেয়ে এনে রাত জেগে পড়তেন এবং সকালেই বই ফেরৎ দিয়ে আসতেন। কলেজে এইভাবে দু বছর পড়েও টেস্ট পরীক্ষার শেষে এফ.এ.পরীক্ষার ফি মাত্র কুড়ি টাকা জোগাড় করতে না পারায়, শরৎচন্দ্র আর এফ.এ. পরীক্ষাই দিতে পারলেন না। ঠিক এই সময়টায় শরৎচন্দ্র অবশ্য মামার বাড়িতে ছিলেন না। কারণ ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে শরৎচন্দ্রের মাতার মৃত্যু হওয়ায় তার কিছুদিন পরেই শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল শ্বশুরালয় ছেড়ে পুত্রকন্যাদের নিয়ে মাইল খানেক দূরে ভাগলপুরের খঞ্জরপুর পল্লীতে এসেছিলেন। এখানে মতিলাল খোলার ছাওয়া একটা মাটির ঘরে পুত্রকন্যাদের নিয়ে থাকতেন।জ্যেষ্ঠা কন্যা অনিলা দেবীর ইতিপূর্বে হাওড়া জেলায় বাগনান থানার গোবিন্দপুর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল।অনিলা দেবী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।



শরৎচন্দ্র কলেজের পড়া ছেড়ে ভাগলপুরের আদমপুর ক্লাবে মিশে অভিনয় ও খেলাধূলা করে কাটাতে লাগলেন। এবং ভাগলপুরের নির্ভীক, পরোপকারী, মহাপ্রান এক আদর্শ যুবক রাজেন মজুমদারের সঙ্গে মিশে তাঁর পরোপকারমূলক কাজের সঙ্গী হলেন। (শরৎচন্দ্র পরে তাঁর ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে এঁকেই ইন্দ্রনাথরূপে চিত্রিত করে গেছেন) শরৎচন্দ্র এই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টদের বাড়িতে মিশে সেখানে নিজের একটা আস্তানা করেছিলেন এবং সেই আস্তানায় বসে দিন-রাত অজস্র গল্প-উপন্যাস লিখতেন এবং পড়তেন। শরৎচন্দ্র এই সময় মাতুল সুরেন্দ্রনাথ, গিরীন্দ্রনাথ ও উপেন্দ্রনাথ (মাতামহের তৃতীয় ভ্রতার পুত্র), এঁদের বন্ধু যোগেশচন্দ্র মজুমদার এবং প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্ট ও তাঁর ছোট বোন নিরুপমা দেবী প্রভৃতিকে নিয়ে একটা সাহিত্য সভাও গঠন করেছিলেন। সপ্তাহে একদিন করে সাহিত্য সভার অধিবেশন হত। সেদিন সভায় সভ্যরা যে যার লেখা পড়তেন। নিরুপমা দেবী সভায় যেতেন না। তিনি তাঁর দাদা বিভূতিবাবুর হাত দিয়ে লেখা পাঠিয়ে দিতেন। সাহিত্য সভার ‘ছায়া’ নামে হাতে-লেখা একটা মুখপত্রও ছিল। শরৎচন্দ্র এই সময়েই তাঁর বড়দিদি, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা প্রভৃতি উপন্যাস এবং অনুপমার প্রেম, আলো ও ছায়া, বোঝা, হরিচরণ প্রভৃতি গল্পগুলি রচনা করেছিলেন।



শরৎচন্দ্রের পিতা দেবানন্দপুরের ঘরবাড়ি সমস্ত বিক্রি করে এর-ওর কাছে চেয়ে চিন্তে কোন রকমে সংসার চালাতেন । শরৎচন্দ্র এই সময় বনেলী রাজ এস্টেটে অল্প কিছু-দিনের জন্য একটা চাকরি করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন পিতার উপর অভিমান করে সব ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন এবং সন্ন্যাসী সেজে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এই ঘুরে বেড়াবার সময় যখন তিনি মজঃফরপুরে আসেন, তখন একদিন তাঁর পিতার মৃত্যু সংবাদ জানতে পারেন। তা জেনেই তিনি ভাগলপুরে এলেন। এসে কোন রকমে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে ছোটভাই-দুটিকে আত্মীয়দের কাছে এবং ছোট বোনটিকে বাড়ির মালিক মহিলাটির কাছে রেখে (শরৎচন্দ্রের ছোটমামা পরে একে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন এবং তিনিই এঁর বিয়েও দিয়েছিলেন) ভাগ্য অন্বেষণে কলকাতায় এলেন।



          কলকাতায় এসে তিনি উপেন মামার দাদা কলকাতা হাইকোর্টের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেন এবং তাঁর কাছেই ত্রিশ টাকা বেতনে হিন্দী পেপার বুকের ইংরাজী তর্জমা করার একটা চাকরি পান। শরৎচন্দ্র লালমোহনবাবুর বাড়িতে মাস-ছয়েক ছিলেন। এরপর (জানুয়ারী ১৯০৩ সালে) এখান থেকে বর্মায় চলে যান। বর্মায় গিয়ে লালমোহনবাবুর ভগ্নীপতি রেঙ্গুনের অ্যাডভোকেট অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেন।


          শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন যাওয়ার দু-একদিন আগে কলকাতার বৌবাজারে সুরেন মামা ও গিরীন মামার সঙ্গে দেখা করতে গেলে (এঁরা দুজনেই কলকাতায় কলেজে পড়তেন) গিরীন মামার অনুরোধে বসে সঙ্গে সঙ্গেই একটা গল্প লিখে কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গল্পটিতে নিজের নাম না দিয়ে সুরেনবাবুর নাম দিয়েছিলেন। গল্পটির নাম ‘মন্দির’। দেড়শ গল্পের মধ্যে ‘মন্দির’ সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়েছিল।



                শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গেলে কিছুদিন পরে মেসোমশায় অঘোরবাবু বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে তাঁর একটা অস্থায়ী চাকরি করে দেন। বছর দুই পরে হঠাৎ অঘোরবাবুর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর পরিবারবর্গ রেঙ্গুন ছেড়ে দেশে চলে আসেন। এই সময় শরৎচন্দ্রের রেলের অডিট অফিসের চাকরিটিও চলে যায়। শরৎচন্দ্র তখন তাঁর রেঙ্গুনের এক বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগুতে যান। পেগু রেঙ্গুন থেকে ৪৫ মাইল উত্তরে। পেগুতে গিয়ে তিনি গিরীনবাবুর বন্ধু অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অনেক দিন ছিলেন। অবিনাশবাবুর বাড়ি ছিল শরৎচন্দ্রের জন্মস্থান দেবানন্দপুরের অদূরে বৈদ্যবাটীতে। তাই অবিনাশবাবু সেই বিদেশে শরৎচন্দ্রকে নিজের দেশের লোক হিসাবে খুবই আদর-যত্নে রেখেছিলেন।



            অবিনাশবাবুর বাড়িতে থাকাকালে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস একাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রকুমার মিত্রের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের একদিন পরিচয় হয়। মণিবাবু শরৎচন্দ্রকে বেকার জেনে পরে ১৯০৬ সালের এপ্রিল মাসে নিজের অফিসে তাঁর একটা চাকরি করে দেন।শরৎচন্দ্র এই চাকরি পেয়েই পেগু থেকে রেঙ্গুনে চলে আসেন। এই চাকরি পাওয়ার আগে শরৎচন্দ্র মাঝে নাঙ্গলবিনে কিছুদিন এক ধানের ব্যাবসায়ীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন। শরৎচন্দ্র মণিবাবুর দেওয়া এই চাকরিই ১৯১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত করেছিলেন।১৯১২ সালে শরৎচন্দ্রের অফিস বর্মার একাউন্টেন্ট জেনারেল অফিসের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।



         শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে থাকার সময় বেশির ভাগ সময়টাই থেকেছেন শহরের উপকণ্ঠে বোটাটং-পোজনডং অঞ্চলে। এখানে শহরের কলকারখানার মিস্ত্রীরাই প্রধানত থাকত। শরৎচন্দ্র মিস্ত্রীদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতেন। তিনি তাদের চাকরির দরখাস্ত লিখে দিতেন, বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়ে দিতেন, অসুখে বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন, বিপদে সাহায্যও করতেন। মিস্ত্রীরা শরৎচন্দ্রকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভক্তি করত এবং দাদাঠাকুর বলে ডাকত। শরৎচন্দ্র এদের নিয়ে একটা সঙ্কীর্তনের দলও করেছিলেন।



শরৎচন্দ্র মিস্ত্রীপল্লীতে থাকার সময় তাঁর বাসার নীচেই চক্রবর্তী উপাধিধারী এক মিস্ত্রী থাকত। ঐ মিস্ত্রীর শান্তি নামে একটি কন্যা ছিল। চক্রবর্তী এক প্রোঢ় ও মাতাল মিস্ত্রীর সঙ্গে তার কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করে। চক্রবর্তীর কন্যার কিন্তু এই বিবাহে ঘোর আপত্তি ছিল, তাই চক্রবর্তীর কন্যা একদিন তাকে ঐ বিপদে রক্ষা করবার জন্য শরৎচন্দ্রের পায়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করে। তখন শরৎচন্দ্র বাধ্য হয়ে নিজেই তাকে বিয়ে করেছিলেন।



শরৎচন্দ্র স্ত্রী শান্তি দেবীকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন। তাঁদের একটি পুত্রও হয়। পুত্রের বয়স যখন এক বৎসর, সেই সময় রেঙ্গুনেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শান্তি দেবী এবং শিশুপুত্র উভয়েরই মৃত্যু হয়। স্ত্রী ও পুত্রকে হারিয়ে শরৎচন্দ্র তখন গভীর শোকাহত হয়েছিলেন।


শান্তি দেবীর মৃত্যুর অনেকদিন পরে শরৎচন্দ্র ঐ রেঙ্গুনেই দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। বিবাহের সময় পর্যন্ত শরৎচন্দ্রের এই দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাম ছিল মোক্ষদা। বিবাহের পর শরৎচন্দ্র তাঁর মোক্ষদা নাম বদলে হিরণ্ময়ী নাম দিয়েছিলেন এবং তখন থেকে তাঁর এই নামই প্রচলিত হয়। বিয়ের সময় হিরণ্ময়ী দেবীর বয়স ছিল ১৪।



হিরণ্ময়ী দেবীর বাবার নাম কৃষ্ণদাস অধিকারী। তাঁর মূল বাড়ি মেদনীপুর জেলায় শালবনীর নিকটে শ্যামচাঁদপুর গ্রামে। কৃষ্ণবাবু তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর আট বছরের কনিষ্ঠা কন্যা মোক্ষদাকে সঙ্গে নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে এক মিস্ত্রী বন্ধুর কাছে রেঙ্গুনে এসেছিলেন। তাঁর পুত্র ছিল না। ক্ষীরোদা, সুখদা ও অপর একটি কন্যার আগেই বিয়ে দিয়েছিলেন।


হিরণ্ময়ী দেবী যখন রেঙ্গুনের মিস্ত্রীপল্লীতে তাঁর বাবার কাছে থাকতেন, সেই সময় শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বাবার বিশেষ পরিচয় হয়। এই বিশেষ পরিচয়ের জোরেই হিরণ্ময়ী দেবীর বাবা একদিন সকালে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করে করে বলেন-আমার মেয়েটির এখন বিয়ের বয়স হয়েছে। একে সঙ্গে নিয়ে একা বিদেশ বিভুঁইয়ে কোথায় থাকি! আপনি যদি অনুগ্রহপূর্বক আমার এই কন্যাটিকে গ্রহণ করে আমায় দায়মুক্ত করেন তো বড় উপকার হয়। আর একান্তই যদি না নিতে চান তো, আমায় কিছু টাকা দিন। আমি মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে যাই। দেশে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দিই।



কৃষ্ণবাবু শেষে শরৎচন্দ্রের কাছে টাকার কথা বললেও, তিনি বিশেষ করে শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করেন, যেন তিনিই তাঁর কন্যাটিকে গ্রহণ করেন।


শরৎচন্দ্র প্রথমে অরাজী হলেও কৃষ্ণবাবুর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন।



হিরণ্ময়ী দেবী নিঃসন্তান ছিলেন। বিয়ের সময় পর্যন্ত হিরণ্ময়ী দেবী লেখাপড়া জানতেন না। পরে শরৎচন্দ্র তাঁকে লিখতে ও পড়তে শিখিয়েছিলেন। হিরণ্ময়ী দেবী ছেলেবেলা থেকেই শান্তস্বভাবা, সেবাপরায়ন ও ধর্মশীলা ছিলেন। শরৎচন্দ্র তাঁকে নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুখে শান্তিতেই কাটিয়ে গেছেন।


শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পড়াশুনা, গান-বাজনা এবং সাহিত্য-চর্চাও করতেন। প্রথম দিকে অনেক দিন ছবিও এঁকেছেন। মিস্ত্রী-পল্লীতে বোটাটং-এর ল্যান্সডাউন স্ট্রীটে যখন তিনি একটা কাঠের বাড়ির দুতলায় থাকতেন, সেই সময় ১৯১২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী তারিখে তাঁর বাসার নীচের তলায় আগুন লাগে। সেই আগুনে তাঁর কয়েটি বইয়ের পান্ডুলিপি, কিছু অয়েল পেন্টিং এবং এক সাহেবের কাছ থেকে কেনা একটি লাইব্রেরী-সমেত তাঁর বাসাটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।



রেঙ্গুনে থাকাকালে ১৯১২ সালের অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র একবার অফিসে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। এই সময় মাতুল উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মারফত যমুনা-সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পালের সঙ্গে একদিন তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয় হলে ফণীবাবু তাঁর কাগজে লিখবার জন্য শরৎচন্দ্রকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গিয়ে লেখা পাঠিয়ে দেবেন বলে কথা দেন।


ঐ কথা অনুযায়ী শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গিয়ে তাঁর ‘রামের সুমতি’ গল্পটি পাঠিয়ে দেন। ফণীবাবু এই গল্প তাঁর কাগজে ১৩১৯ সালের ফাল্গুন ও চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশ করেন। 'রামের সুমতি' যমুনায় প্রকাশিত হলে শরৎচন্দ্র এক গল্প লিখেই একজন মহাশক্তিশালী লেখক হিসাবে সাহিত্যিক ও পাঠক মহলে পরিচিত হন।


                 এর আগে ১৩১৪ সালে 'ভারতী' পত্রিকায় শরৎচন্দ্রের ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হয়।   


        'বড়দিদি' অনিলা দেবী ছদ্মনামে পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হাবার পাঁচ বছর পর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকের ধারণা হয়েছিল এটি বোধহয় রবীন্দ্রনাথেরই লেখা।


তখন অনেকের মত রবীন্দ্রনাথও এই লেখা পড়ে শরৎচন্দ্রকে প্রতিভাবান লেখক বলে বুঝেছিলেন। 


              বিভূতিভূষণ ভট্টর সতীর্থ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের লেখার খাতা থেকে ‘বড়দিদি’ নকল করে এনেছিলেন এবং পরে শরৎচন্দ্রকে না জানিয়ে এটি ভারতীতে প্রকাশ করেছিলেন।



               ‘রামের সুমতি’ প্রকাশিত হলে তখন নবপ্রকাশিত ভারতবর্ষ এবং সাহিত্য প্রভৃতি পত্রিকার কর্তৃপক্ষও তাঁদের কাগজের জন্য শরৎচন্দ্রের কাছে লেখা চাইতে থাকেন। শরৎচন্দ্র যমুনার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষেও লিখতে আরম্ভ করেন।শেষে যমুনা ছেড়ে কেবল ভারতবর্ষেই লিখতে থাকেন এবং ভারতবর্ষ পত্রিকার মালিক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স তাঁর বইও প্রকাশ করতে শুরু করেন। যমুনা-সম্পাদক ফণী পালই অবশ্য প্রথম তাঁর ‘বড়দিদি’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন। ঐ সময় ফণীবাবুর বন্ধু সুধীর চন্দ্র সরকারও তাঁদের দোকান এম.সি. সরকার এন্ড সন্স থেকে শরৎচন্দ্রের পরিণীতা, পণ্ডিতমশাই প্রভৃতি কয়েকটি বই প্রকাশ করেন।



১৯১৬ সালের গোড়ার দিকে শরৎচন্দ্র হঠাৎ দুরারোগ্য পা-ফোলা রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি স্থির করেন অফিসে এক বছরের ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসে কবিরাজী চিকিৎসা করাবেন। অফিসে শেষ দিনে ছুটি চাইতে যাওয়ায় উপরওয়ালা সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ফলে শরৎচন্দ্র চাকরিতে ইস্তফা দিয়েই বরাবরের জন্য রেঙ্গুনে ছেড়ে দেশে চলে আসেন।



শরৎচন্দ্র তাঁর রেঙ্গুন-জীবনের শেষ দিকে আর মিস্ত্রীপল্লীতে থাকতেন না। এই সময় প্রথমে কিছুদিন ছিলেন ৫৭/৯ লুইস স্ট্রীটে। তারপর ছিলেন ৫৪/৩৬ স্ট্রীটে ।



শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন থেকে সস্ত্রীক এসে প্রথমে হাওড়া শহরে ৬নং বাজে শিবপুর ফার্স্ট বাই লেনে ওঠেন। এ বাড়িতে তিনি প্রায় আট মাস ছিলেন। তারপর এ বাড়ি ছেড়ে তিনি পাশেই ৪নং বাজে শিবপুর ফার্স্ট বাই লেনে যান। ঐ বাড়িতে তিনি প্রায় নয় বছর ছিলেন। তারপর এখান থেকে শিবপুর ট্রাম ডিপোর কাছে ৪৯/৪ কালীকুমার মুখার্জী লেনে গৌরীনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বছরখানেক ছিলেন। এইখানে থাকার সময়েই তিনি তাঁর দিদিদের গ্রাম হাওড়া জেলার বাগনান থানার গোবিন্দপুরের পাশেই সামতাবেড়েয় জায়গা কিনে একটা সুন্দর মাটির বাড়ি তৈরি করান। বাড়িটি একেবারেই রূপনারায়ণের গায়েই। মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলার পানিত্রাস (সামতাবেড়) গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দেউলটি স্টেশন থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটারের পথ সামতাবেড়ের বাড়িটা রূপনারায়ণ নদের তীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। পাশাপাশি দুটো পুকুরে সানের ঘাট, বাগান, ডালিম, পেয়ারা গাছে ঘেরা। ১৯৭৮ সালের বন্যায় পাশাপাশি সব গাঁয়ের মাটির বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটা রূপনারায়ণের কূলে থেকেও আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। জানালা পর্যন্ত ভিতটি ইঁট-সিমেন্টে গাঁথা ছিল বলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পড়ে যায়নি। পরে সরকারি উদ্যোগে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র শিবপুরেও থাকতেন। শিবপুর ব্যাতাইতলা বাজার থেকে চ্যাটার্জিহাট পর্যন্ত রাস্তা শরৎচন্দ্রের নামেই চালু আছে।


শরৎচন্দ্র ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে হাওড়া শহর ছেড়ে তাঁর সামতাবেড়ের বাড়িতে চলে যান।



       শরৎচন্দ্রের মেজভাই প্রভাস রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিয়ে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। সন্ন্যাস জীবনে তাঁর নাম হয়েছিল স্বামী বেদানন্দ। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন থেকে ফিরে ছোটভাই প্রকাশকে এনে কাছে রাখেন। পরে বিয়ে দিয়ে তাঁকে সংসারী করে দেন। প্রকাশবাবুর এক কন্যা ও এক পুত্র।


হাওড়ায় বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই শরৎচন্দ্র তাঁর বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাই ঐ সময়টাকেই তাঁর সাহিত্যিক জীবনের স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। এই বাজে শিবপুরে থাকাকালেই ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তখন দেশবন্ধুর আহ্বানে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তিনি হাওড়ায় থাকতেন বলে দেশবন্ধু তাঁকে হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি করেন । ১৯২১ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মাঝে ১৯২২ সালে তিনি একবার হাওড়া কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করতে চাইলে দেশবন্ধু তা করতে দেননি। শরৎচন্দ্র অহিংস কংগ্রসের একজন ছোটখাট নেতা হলেও বরাবরই কিন্তু ভারতের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগ্রামী বা সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বা সংক্ষেপে বি ভি দলের সর্বাধিনায়ক প্রখ্যাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ, কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার আসামী বিপ্লবী শচীন সান্যাল প্রমুখ ছাড়াও বারীন ঘোষ, উপেন বন্দোপাধ্যায়, চারু রায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিন গাঙ্গুলী প্রমুখ খ্যাতনামা বিপ্লবীদের সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। বিপিনবাবু সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মামা হতেন। শরৎচন্দ্র বহু বিপ্লবীকে নিজের রিভলবার, বন্দুকের গুলী এবং অর্থ দিয়েও সাহায্য করতেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মহাবিপ্লবী সূর্য সেনকেও তিনি তাঁর বৈপ্লবিক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন।

             শরৎচন্দ্র হাওড়ার বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। পরিচয় হয়েছিল জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে বিচিত্রার আসরে। শরৎচন্দ্রের বাল্যবন্ধু ঔপন্যাসিক চারু বন্দোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে শরৎচন্দ্র বিচিত্রার আসরে ১৩২৪ সালের ১৪ই চৈত্র তারিখে তাঁর বিলাসী গল্পটি পড়েছিলেন।

পরে নানা সূত্রে এঁদের উভয়ের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। শরৎচন্দ্র নানা প্রয়োজনে একাধিকবার শান্তিনিকেতনে ও জোড়াসাঁকোয় কবির কাছে গেছেন। শরৎচন্দ্র শেষ বয়সে কলকাতায় বাড়ি করলে সেখানে অনুষ্ঠিত এক সভায় কবি একবার শরৎচন্দ্রের বাড়িতেও গিয়েছিলেন।


           কবির সত্তর বছর বয়সের সময় দেশবাসী যখন কলকাতার টাউন হলে তাঁকে অভিনন্দন জানায় সেই অভিনন্দন সভার বিখ্যাত মানপত্রটি রচনা করেছিলেন শরৎচন্দ্র। কবিও নিজে একবার শরৎচন্দ্রকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

শরৎচন্দ্র হাওড়া শহর ছেড়ে সামতাবেড়ে যখন থেকে বাস করতে থাকেন, তখন থেকে ঐ অঞ্চলের দরিদ্র লোকদের অসুখে চিকিৎসা করা তাঁর একটা কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোগী দেখে তিনি শুধু ওষুধই দাতব্য করতেন না, অনেকের পথ্যও কিনে দিতেন। হাওড়া শহরে থাকার সময় সেখানেও তিনি এই-রকম করতেন। শরৎচন্দ্র সামতাবেড় অঞ্চলের বহু দুঃস্থ পরিবারকে বিশেষ করে অনাথ বিধবাদের মাসিক অর্থসাহায্য করতেন।


              শরৎচন্দ্র সামতাবেড়ে থাকার সময় অল্প তিন-চারটি মাত্র গ্রন্থ রচনা করতে পেরেছিলেন। শরৎচন্দ্র সামতাবেড়ে থাকার সময় শেষ দিকে কলকাতার বালীগঞ্জে একটা বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। বাড়িটি দোতালা এবং দেখতে সুন্দর। এই বাড়ির ঠিকানা হল – ২৪ অশ্বিনী দত্ত রোড।


কলকাতায় বাড়ি হলে তিনি কখন কলকাতায়, আবার কখন সামতাবেড়ে – এইভাবে কাটাতেন। কলকাতায় থাকাকালে কলকাতার তখনকার সাহিত্যিক ও শিল্পীদের দুটি নাম-করা প্রতিষ্ঠান রবিবাসর ও রসচক্রের সদস্যরা তাঁকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। এঁরা কখন কখন শরৎচন্দ্রকে সম্বর্ধনাও জানিয়েছেন। রসচক্রের সদস্যরা শরৎচন্দ্রকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করেছিলেন।

১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্রকে ডি.লিট. উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন। এর আগে ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী পদক উপহার দিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে একবার বি.এ. পরীক্ষায় বাংলার পেপারসেটার বা প্রশ্নকর্তাও নিযুক্ত করেছিলেন। এসব ছাড়া, দেশবাসীও তাঁকে তখন ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ এই আখ্যায় বিভূষিত করেছিলেন। বৈদ্যবাটী যুব সংঘ, শিবপুর সাহিত্য সংসদ, যশোহর সাহিত্য সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ও সাধারণভাবে দেশবাসীর পক্ষ থেকে একাধিকবার তাঁকে সম্বর্ধনা জানান হয়।

         ১৯৭৬ সালে ভারত সরকার তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। হাওড়া স্টেশনে তাঁর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। হাওড়া ময়দানের নামকরণ করা হয়েছে শরৎ ময়দান। 


       শরৎচন্দ্র কেবল গায়ক, বাদক, অভিনেতা ও চিকিৎসকই ছিলেন না, তাঁর চরিত্রে আরও অনেকগুলি গুণ ছিল। তাঁর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যটি সবার আগে চোখে পড়ে, তা হল- মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন একজন দরদী মানুষ। মানুষের, এমন কি জীবজন্তুর দুঃখ-দুর্দশা দেখলে বা তাদের দুঃখের কাহিনী শুনলে, তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়তেন। অনেক সময় এজন্য তাঁর চোখ দিয়ে জলও গড়িয়ে পড়ত।


পুরুষ-শাসিত সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর প্রতিই তাঁর দরদ ছিল বেশী। আবার সমাজের নিষ্ঠুর অত্যাচারে সমাজপরিত্যক্তা, লাঞ্ছিতা ও পতিতা নারীদের প্রতি তাঁর করুণা ছিল আরও বেশী। পতিতা নারীদের ভুল পথে যাওয়ার জন্য তিনি হৃদয়ে একটা বেদনাও অনুভব করতেন।


জীবজন্তুর প্রতি স্নেহবশতঃ শরৎচন্দ্র বহু বছর সি.এস.পি.সি.এ. অর্থাৎ কলকাতা পশুক্লেশ নিবারণী সমিতির হাওড়া শাখার চেয়ারম্যান ছিলেন।

এক সময় অবশ্য তিনি একজন ছোটখাট শিকারীও ছিলেন। তখন ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে এবং বন্দুক নিয়ে পাখি শিকার করতে তিনি বিশেষ পটু ছিলেন। পরে এসব ছেড়ে দেন। তিনি বরাবরই দক্ষ সাঁতারু ছিলেন। সাপুড়েদের মত অতি অনায়াসেই বিষধর সাপও ধরতে পারতেন।


আর তিনি ছিলেন অসাধারণ অতিথিপরায়ণ, বন্ধুবৎসল পত্নীপ্রেমিক। বিলাসী না হলেও কিছুটা সৌখিন ছিলেন - বিশেষ করে বেশভূষায় ও লেখার ব্যাপারে। তিনি ঘরোয়া বৈঠকে খুব গল্প করতে পারতেন। বন্ধুদের সঙ্গে বেশ পরিহাস-রসিকতা করতেন। আত্ম-প্রচারে সর্বদাই বিমুখ ছিলেন এবং নিজের স্বার্থের জন্য কাউকে কিছু বলা কখন পছন্দ করতেন না।


শরৎচন্দ্রের জীবনের শেষ ক’বছর শরীর আদৌ ভাল যাচ্ছিল না। একটা-না-একটা রোগে ভুগছিলেনই। ১৯৩৭ সালের গোড়ার দিকে তিনি কিছুদিন জ্বরে ভোগেন। জ্বর ছাড়লে ডাক্তারের উপদেশে দেওঘর বেড়াতে যান। সেখানে তিন-চার মাস থাকেন।নদেওঘর থেকে ফিরে এসে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর শরৎচন্দ্র সেপ্টেম্বর মাসে আবার অসুখে পড়লেন। এবার তাঁর পাকাশয়ের পীড়া দেখা দেয় এবং দেখতে দেখতে এই রোগ ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল। যা খান আদৌ হজম হয় না। তার উপর পেটেও যন্ত্রণা দেখা দেয়।


শরৎচন্দ্র এই সময় সামতাবেড়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। চিকিৎসা করাবার জন্য কলকাতার বাড়িতে এলেন। কলকাতায় ডাক্তাররা এক্স-রে করে দেখলেন, শরৎচন্দ্রের যকৃতে ক্যানসার তো হয়েছে, অধিকন্তু এই ব্যাধি তাঁর পাকস্থলীতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এই সময় শরৎচন্দ্র একটি উইল করেন। উইলে তিনি তাঁর যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতি স্ত্রী হিরণ্ময়ী দেবীকে জীবনস্তত্বে দান করেন। হিরণ্ময়ী দেবীর মৃত্যর পর কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রকাশচন্দ্রের পুত্র বা পুত্ররা সমস্থ সম্পতির অধিকারী হবেন, উইলে এ কথাও লেখা হয়।(হিরণ্ময়ী দেবী তাঁর স্বামীর মৃত্যর পর প্রায় ২৩ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্য তারিখ ১৫ই ভাদ্র, ১৩৬৭।)


কলকাতার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকগন-ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, ডাঃ কুমুদশঙ্কর রায় প্রভৃতি শরৎচন্দ্রকে দেখে স্থির করলেন যে, শরৎচন্দ্রের পেটে অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

ডাঃ ম্যাকে সাহেবের সুপারিশে শরৎচন্দ্রের চিকিৎসার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে দক্ষিণ কলকাতার ৫নং সুবার্বন হস্‌পিটাল রোডে একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু এখানে শরৎচন্দ্রকে তাঁর নেশার জিনিস সিগারেট খেতে না দেওয়ায়, তিনি কষ্ট বোধ করতে লাগলেন।


            এই নার্সিং হোমে সকালে ও বিকালে দেখা করবার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় কাকেও শরৎচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে দিত না। তাছাড়া ইউরোপীয় নার্সরা এদেশীয় লোক বলে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে নাকি ভাল ব্যাবহার করতেন না। এই সব কারণে শরৎচন্দ্র দু'দিন পরে সেখান থেকে চলে এসে তাঁর দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ডাঃ সুশীল চ্যাটার্জীর ৪ নং ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত ‘পার্ক নার্সিং হোমে’ ভর্তি হলেন।

শরৎচন্দ্রের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংবাদ শুনে রবীন্দ্রনাথ তখন এক পত্রে লিখেছিলেন-

কল্যাণীয়েষু, শরৎ, রুগ্ন, দেহ নিয়ে তোমাকে হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়েছে শুনে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হলুম। তোমার আরোগ্য লাভের প্রত্যাশায় বাংলা দেশ উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকবে। ইতি ৩১।১২।১৯৩৭.

সেই সময়কার বিখ্যাত সার্জন ললিতমোহন বন্দোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের পেটে অপারেশন করেছিলেন। অপারেশন করেও শরৎচন্দ্রকে বাঁচানো সম্ভব হল না।

অপারেশন হয়েছিল ১২।১।৩৮ তারিখে। এর পর শরৎচন্দ্র মাত্র আর চারদিন বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটা ছিল রবিবার, ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারী (বাংলা ১৩৪৪ সালের ২রা মাঘ)। এই দিনই বেলা দশটা দশ মিনিটের সময় শরৎচন্দ্র সকলের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬১ বৎসর ৪ মাস।

রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ শুনে ইউনাইটেড প্রেসের প্রতিনিধিকে বলেন-‘ যিনি বাঙালীর জীবনের আনন্দ ও বেদনাকে একান্ত সহানুভূতির দ্বারা চিত্রিত করেছেন, আধুনিক কালের সেই প্রিয়তম লেখকের মহাপ্রয়াণে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গভীর মর্মবেদনা অনুভব করছি’।

এর কয়েকদিন পরে ১২ই মাঘ তারিখে কবি আবার শরৎচন্দ্রের মৃত্যু সম্পর্কে এই কবিতাটি লিখেছিলেন-

'যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে।

ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।

দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি

দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে বরি।'


সব শেষে শরৎচন্দ্রের রচিত গ্রন্থগুলি প্রকাশের একটা কালানুক্রমিক তালিকা এখানে দেওয়া হলো। এখানে এ কথাও উল্লেখ্য যে, এই গ্রন্থগুলি ছাড়া শরৎচন্দ্রের কিছু অসামাপ্ত এবং টুকরো লেখাও আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে সেখানে। 


তাঁর প্রকাশিত বই


উপন্যাস


১). বড়দিদি (১৯১৩ সালে প্রকাশিত)

২). বিরাজবৌ (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৩). বিন্দুর ছেলে (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৪). পরিণীতা  (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৪). পন্ডিতমশাই (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৫). মেজ দিদি (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৬). পল্লী-সমাজ (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৬). চন্দ্রনাথ (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৬). বৈকুন্ঠের উইল (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৭). অরক্ষণীয়া (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৮). শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

৯). নিষ্কৃতি (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১০). দেবদাস (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১১). চরিত্রহীন (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১২). কাশীনাথ (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১২). দত্তা (১৯১৮ সালে প্রকাশিত)

১৩). স্বামী (১৯১৮ সালে প্রকাশিত)

১৪). শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব (১৯১৮ সালে প্রকাশিত)

১৫). ছবি (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৬). গৃহদাহ (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৭). বামুনের মেয়ে (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৮). দেনা পাওনা (১৯২৩ সালে প্রকাশিত)

১৯). নব-বিধান (১৯২৪ সালে প্রকাশিত)

২০). পথের দাবী (১৯২৬ সালে প্রকাশিত)

২১). শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব (১৯২৭ সালে প্রকাশিত)

২২). শেষ প্রশ্ন (১৯৩১ সালে প্রকাশিত)

২৩). শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব (১৯৩৩ সালে প্রকাশিত)

২৪). বিপ্রদাস (১৯৩৫ সালে প্রকাশিত)

২৫). শুভদা (১৯৩৮ সালে প্রকাশিত)

২৬). শেষের পরিচয় (১৯৩৯ সালে প্রকাশিত)


নাটক


১). ষোড়শী (১৯২৮ সালে প্রকাশিত)

২). রমা (১৯২৮ সালে প্রকাশিত)

৩). বিরাজ বউ (১৯৩৪ সালে প্রকাশিত)

৪). বিজয়া (১৯৩৫ সালে প্রকাশিত)


গল্প


১). রামের সুমতি (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

২). পরিণীতা (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৩). বিন্দুর ছেলে (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৪). পথ-নির্দেশ (১৯১৪ সালে প্রকাশিত)

৫). মেজদিদি (১৯১৫ সালে প্রকাশিত)

৬). আঁধারে আলো (১৯১৫ সালে প্রকাশিত)

৭). দর্পচূর্ণ (১৯১৫ সালে প্রকাশিত)

৮). বৈকুণ্ঠের উইল (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

৯). অরক্ষণীয়া (১৯১৬ সালে প্রকাশিত)

১০). নিষ্কৃতি (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১১). কাশীনাথ (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১২). স্বামী (১৯১৭ সালে প্রকাশিত)

১২). একাদশী বৈরাগী 

১৩). ছবি (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৪). বিলাসী (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৫). মামলার ফল (১৯২০ সালে প্রকাশিত)

১৬). হরিলক্ষ্মী (১৯২৬ সালে প্রকাশিত)

১৭). মহেশ (১৯২৬ সালে প্রকাশিত)

১৮). অভাগীর স্বর্গ (১৯২৬ সালে প্রকাশিত)

১৯). অনুরাধা (১৯৩৪ সালে প্রকাশিত)

২০). সতী (১৯৩৪ সালে প্রকাশিত)

২১). পরেশ (১৯৩৪ সালে প্রকাশিত)


প্রবন্ধ


১). নারীর মূল্য

২). তরুণের বিদ্রোহ (১৯১৯ সালে প্রকাশিত)

৩). স্বদেশ ও সাহিত্য (১৯৩২ সালে প্রকাশিত)

৪). স্বরাজ সাধনায় নারী

৫). শিক্ষার বিরোধ

৬). স্মৃতিকথা

৭). অভিনন্দন

৮). ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য

৯). গুরু-শিষ্য সংবাদ

১০). সাহিত্য ও নীতি

১১). সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি

১২). ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত


তাঁর লেখার চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে -


তাঁর সাহিত্য-কর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে।

১৯৩৬ সাল-এর 'দেবদাস' চলচ্চিত্রে কুন্দন লাল সায়গল এবং যমুনা দেবী।

বাংলা ছাড়াও 'দেবদাস' উপন্যাসটি হিন্দি এবং তেলুগু ভাষায় আটবার চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। 

     বিভিন্ন সময়ে 'দেবদাস' বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সুমিত্রা মুখার্জি, শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত প্রমুখ। 

         এ'ছাড়া সন্ধ্যারানি ও উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত বাংলা ছবি 'বড়দিদি', 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'পরিণীতা' ছবি নির্মিত হয়। 'পরিণীতা' উপন্যাস দু-বার চলচ্চিত্রায়িত হয়, 

বাংলা ছবি উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত 'চন্দ্রনাথ', রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, উত্তমকুমার ও মাধবী মুখার্জি অভিনীত 'বিরাজ বউ', 

ঋষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি 'মাঝলি দিদি' অন্যতম। 

'স্বামী' (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা লেখকের পুরস্কার পান। 'বিন্দুর ছেলে' অবলম্বনে 'ছোটি বহু' (১৯৭১) নামে বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ১৯৭৬ সালে 'দত্তা' চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তার 'নববিধান' উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে ২০১৩ সালে 'তুমহারি পাখি' নামে একটি ভারতীয় টিভি সিরিয়াল নির্মিত হয়।


-----------------------------------------------------------------------------------------

তথ্য সংগৃহীত ও সম্পাদিত। সূত্র -  অন্তর্জাল ]


সূত্র নির্দেশিকা - 


মাসিক কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, মে ২০১১, পৃ. ৩৩ ; 

আজাদ, হুমায়ুন (২০১০)। লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৯৯.


সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান (১৯৭৬),

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ৫০৩.


আলম, মাহবুবুল (২০১৪)। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (২০১৩ পঞ্চদশ সংস্করণ)। ঢাকা: খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি। পৃষ্ঠা ৪৯১.


ঘোষ, অমরেন্দ্র কুমার। "শরৎ-প্রসঙ্গ"। কলিকাতা: ভাব ও লেখা।


শরৎ কথামালা (প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), ইন্দ্রমিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ২.


শরৎচন্দ্র (তৃতীয় সংস্করণ ১৩৬১ বঙ্গাব্দ), শ্রীকানাইলাল ঘোষ, দি প্রকাশনী, কলিকাতা।


 ঘোষ, অমরেন্দ্র কুমার। "শরৎ-প্রসঙ্গ".

 কলিকাতা: ভাব ও লেখা।


শরৎ রচনাবলি, জন্মশতবার্ষিকী সংস্করণ, প্রথম ভাগ, প্রথম প্রকাশ  : ১২ ভাদ্র, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ, পুনর্মুদ্রণ কার্তিক ১৪০০, প্রকাশক : নাথ পাবলিশিং, কলকাতা, সম্পাদক : শৈলেন্দ্রনাথ গুহ রায়।


 সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা আকাদেমি চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৬২.


"An Insight Into Sarat Chandra's Depiction Of Dynamic Women"। Daily Sun (ইংরেজি ভাষায়)। 


Awara Messiah: A biography of Sarat Chandra Chatterjee, Vishnu Prabhakar, translated by Jai Ratan, B.R.Publishing Corporation, Delhi, 1989, আইএসবিএন ৮১-৭০১৮-৫৬৪-৫.