Monday, August 23, 2021

কবি স্বপ্না বনিক -এর একটি কবিতা

 দোসর হতে পারিনি



সূর্য তোমায় উত্তপ্ত করলেও রাতের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় আপ্লুত ছিলে্ তুমি মৌন মুগ্ধতায়। 

আমার ভালবাসা যেন ছুঁয়ে থাকে তোমায় চাঁদের আলোর মতো নিবিড় স্নিগ্ধতায়। 

তোমার দোসর হতে পারিনি তবুও রয়েছে স্মরণে মননে ব্যস্ত দিবসের নিভৃত ক্ষণে ব্যর্থ প্রেমের অব্যক্ত যন্ত্রনায়। 


কবি সুনন্দ মন্ডল -এর একটি কবিতা

 পূর্ণিমায় রাখি 

            ‎ 


আমি হিন্দু, তুমি মুসলিম

তাতে নেই কোনো ক্ষতি।

সম্পর্ক যদি ভাইবোনের হয়

স্বয়ং বিধাতা দেবেন মতি।


রাখির সুতোয় জীবন বাঁধবো

তোমার মতো ভাইয়ের।

সে জাতিতে হোক না মুসলিম!

ভাই বলে ডেকেছি তাদের।


সহোদর ভাই থাকবে পাশে

তুমিও থেকো আদরে।

প্রীতির রাখি জড়াবো হাতে

পূর্ণিমার দিন সাদরে।

কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

 কি দোষ ছিল



আকাশে ঘন মেঘ

চারিদিকে ঘন অন্ধকার

বাতাসের ঘনঘটা বয়ছে,

মেঘের নীচে চাঁদ ঢাকা

ধীরে ধীরে বৃষ্টি নামছে,

মেঘেদের আনাগোনা বাড়ছে

থেমে থেমে শীতল হাওয়া বয়ছে।

উত্তরের জানালার কপাট টা নড়ছে

ঠিক এই মূহুর্তে একটা বিশাল শব্দ!

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।

বাহিরের নিম্ গাছটা নিত্তেজ 

বাজ পড়ে গাছটি শেষ?

বেঁধে ছিল একটা পাখি বাসা

মরে পড়ে আছে পাখিটি

গাছের তলায়!

এলোমেলো খড় ছিটিয়ে আছে

মনে হচ্ছে পাখিটি কাঁদছে।

গাছের তলায় তাকিয়ে দেখি

সবে ফোটা সদ্য বাচ্চা দুটি

মরে শক্ত কাঠ হয়ে গেছে।

কি কারণে জানিনা তাদের দোষ?

বিধির বিচার চেয়ে।

নীরব‌ সেই ভোরের সকালটা-

ভোর হলে যে পাখিটা

রোজ এসে বসতো আমার

এই নিম গাছের ডালে।

হঠাৎ একদিন বেঁধে ছিল সে

আমারই গাছেতে বাসা;

জানিনা কি কারণে এমন হলো!

প্রতিদিন ভোর আসে

আজও খালি আছে

সেই জায়গা!


কবি সুমিতা ঘোষ -এর একটি কবিতা

   স্বামী



জীবন পথের সাথী তুমি

অগ্নি সাক্ষী রেখে করেছ স্বীকার

স্ত্রীর গৌরব, সন্মান তুমি

করেছ সাথে থাকার অঙ্গীকার। 

তুমি শক্তি,, তুমি মুক্তি

গভীর অন্ধকারে আলোর কিরণ। 

তুমি অলংকার, তুমি অহংকার, 

সঙ্গীত মুখর রঙিন জীবন। 

তুমি আশা, ভালবাসা

জন্মান্তরের সাথ। 

হৃদয় সাম্রাজ্যের সম্রাট তুমি

আমরণ ধরে রেখো হাত। 

স্বামী হলো স্ত্রীর অর্ধাঙ্গ

সপরিবারেই নারী সম্পূর্ণ

যেমন রাধিকা বিহীন কৃষ্ণ

কৃষ্ণ বিহীন রাধা অসম্পূর্ণ। 


কবি সব্যসাচী মজুমদার -এর একটি কবিতা

 কুয়াশা



কিছুই জানি না রেণুটির

মনে নেই উড়ে যায় মানুষের

লিবিডোর কাছে



 ইঁদুরের দেহ 

বিবিধ ঋতুর জল চায়



আদিত্য বর্ণের কাক 

ওড়ে রমণী ঘাতক কুয়াশায়

কবি সুজিত রেজ -এর একটি কবিতা

 পুরুলিয়া



ঝালদা-হাঁড়িতে দু'টাকা কিলো চাল ফুটছে

অন্নপূর্ণা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে

গড় পঞ্চকোটের ভগ্ন স্তম্ভ চোঁয়া লাল জলে

আদিবাসী নৃত্যের তালে তালে


মহুয়া মাতালের পদক্ষেপে

দুর্গা ফলস্ ঝরে পড়ছে অস্ট্রিক শব্দমালায়


গরম পিচচুমায়

বান্দোয়ানের দলছুট হাতির পায়ে ফোস্কা-জ্বালা


রাঁচি-হাতিয়া এক্সপ্রেস থেকে

পিলপিল করে নেমে আসছে

শালপ্রাংশু দেশোয়ালি


অযোধ্যা পাহাড়ের পদচাতালে ঝুঁকে পড়া রোদ

শুষে নিচ্ছে রামের ছৌমুখোশ

কবি রানা জামান -এর একটি কবিতা

 ভালোবাসার অন্তর্নিহিত উত্তাপ

 


ভালোবাসায় অন্তর্নিহিত একটা উত্তাপ আছে

সেই অমোঘ উত্তাপে আবালবৃদ্ধবণিতা

হতে চায় উত্তপ্ত; নিষিদ্ধ গন্ধমের চেয়েও অপ্রতিরোধ্য

আকর্ষণ তাতে; আভাষ পেলেই শত শত লালপরী

নীলপরী চোখের পাতায়; রংধনুর সকল রং

তুলিতে কলমে রাবিন্দ্রিক জীবনানন্দীয় ছন্দ

আর কল্পনায় বৃন্দাবন

আপন গায়ের রক্তে লিখে ফেলা যায় অনায়াসে

শত শত প্রেমপত্র; ভেবে ভেবে মজনু, বা অষ্টম

এডওয়ার্ড হওয়া মামুলি ব্যাপার; তুড়িতে পাহাড়

কেটে রাজপ্রাসাদে দুধের গঙ্গা বইয়ে

দেয়া যায়; কয়েনের এপিট ওপিট পার্থক্যটা

বুঝে না কাব্যিক মন; ভালোমন্দের ব্যালান্সসিট

মগজে পায় না ঠাঁই; একমাত্র ইচ্ছে

বুনো ষাঁড়ের মতন ধায় সামনে; মরা গাছে

পুস্প ফুটলে মধুরেণ সমাপায়েত এবং শান্ত জলে

কোনো ঢেউ এলে ইতিহাসের সেলিম।

কবি রফিকুল রবি -এর একটি কবিতা

 দাঁড় কাক 



হঠাৎ যদি চলে যাই তোমার খোলা চোখের সীমানার বাহিরে, যদি আর না এসে হাটি তোমার শহরে ; তবে কি অদেখা শহরে আমার বিচরণে কাঁপবে তোমার শহর? লণ্ডভণ্ড হবে শহরের স্থাপনা ?


তখন, যদি একটা দাঁড় কাক পাখা ঝাপটে এক পাক ঘুরে যায় তোমাকে ঘিরে.... 

তুমি কি বুঝবে- এটা আমি!

কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা

 বিশ্বাস



ছন্দপতন হবে না কখনো

এমন কি আর সবসময় তে হয়?

শোকের ছায়া পড়বে না জীবনে

এমনটা সুখ কজনার বা সয়?


জীবনটা যে ভাঙা গড়ার খেলা

ভালো মন্দ সবটা মিলে মিশে,

খারাপ যদি কেউ বলে কখনো

ভোরের আলো অন্ধকারের শেষে।


বহু ক্ষত অন্তরেতে জমে

জোয়ার ভাটার মত ছন্দমিলে

রাত্রিবেলা হয়তো ধূসর লাগে

স্পষ্ট হয় ভোরের শুকনো বিলে।


দুঃখ পোষা মুখ কি লাগে ভালো?

একটুখানি সুখের ছোঁয়া নাও

রঙিন হবে রুক্ষ্ম মধুর জীবন

ক্ষত মুছে শিশিরে পা দাও।


ছন্দপতন হবে না কখনো

শুন্য তুমি পুণ্য হবে গুনে

সম্পর্কে বেঁধে আছি দুজন

শুনতে পাচ্ছ শব্দ করছে ভ্রূণে।


কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

 তটভূমি 




জো‍ৎস্নায় জেগে ওঠে

উন্মুক্ত বধ্য তটভূমি, 

হৃদয়-বিভূতি জুড়ে লেগে আছে

অমৃতের অম্লান ঘ্রাণ।


প্রাণহীন দেহ থেকে নেমে আসে

স্তব্দতার তরঙ্গরাশি,

সেই সকল অনুপম ঐশ্বর্যের সাক্ষী হয়ে থাকুক এই উপল ভূমিখন্ড। 


বিদায় মুহূর্তের শুকনো পাতার মতো খসখসে শব্দের বাতাবরণ নিয়ে,

অপেক্ষার শব্দ ঘনিয়ে আসে কালপুরুষের মায়াবী বীণা থেকে।


জীবন দ্রুত অতীত হয়ে থাকে 

মায়াবী স্বপ্নের মতো,

শ্মশানের পোঁড়াকাঠে লেগে থাকে বৈরাগ‍্যের অনুভূতি।

কবি আবদুস সালাম -এর একটি কবিতা

 সংবিধান ও আমরা



সভ্যতার প্রতি রাতে ক্ষরণ হয় রক্ত

অস্তিত্ব ক্ষয়ের পতাকা ওড়ে

মিথ্যে পরিচয় দিয়ে ধার্মিক সাজি

নামাবলী দিয়ে ঢেঁকে নিই সংবিধানের পাতা

রাত গভীর হলে মানুষ পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী হয়

মরা মাঠে জেগে ওঠে ধার্মিক ভূগোল আর নষ্ট সময়ের কলঙ্কিত দলিল


কবি স্বাগতা দাশগুপ্ত -এর একটি কবিতা

 ওগো মাছ



ইলিশের আঁচলেতে সর্ষে ফেলেছে ছায়া

তেলে আর পাতুড়িতে জড়ানো সে কত মায়া।


মুখ ভার কাতলার;তার নাকি নেই দম..

দই দিয়ে রাঁধলে সে যে স্বাদে হয় উত্তম।


ডিম ভরা ট্যাংরা-ভীষণ গুমোর তার

ঝাল ঝোল যাই করো, তাইই হবে চমৎকার।


বাঙালী কাঙালী আজ,

পারে না সে কিনতে-

গলদার হেঁড়ে মাথা চিতলের চিলতে।


তোপসে ফ্যাকাসে পড়ে,

পাবদার জুলুসে ..

পাতেতে আসে না সেতো 

দাম যে আকাশে!


পাতে-তে ভাতে-তে মেখে

নাও যদি পারি খেতে-

ওগো মাছ এসো তবু বাঙালীর স্বপ্নেতে।

কবি সুব্রত মিত্র -এর একটি কবিতা

 অহরহ দর্শন



পৃথিবীর বুক চিরে যখন কোন নদী এগিয়ে যায়

তার ভাঙ্গা কান্না কেউ শুনতে নাহি পায়,

পৃথিবীর জনকৌশল মাখা রৌদ্র দ্বারে;

মানবের কুল রাখিয়াছে তারে,

তার ভাঙ্গা সেতারের বিহঙ্গী সুর-মায়া ভুলাইবে তাহারে। 


পরশের মায়া খেলার স্বাদ হইবে বাদ

আজি অগ্রজ পথিক হইয়া মিলিবে অবসাদ

অপছন্দের কারুকার্যে কেন আজ এত সাজ

ভুল পথে ধাবিছে প্রজন্ম পথ ভাঙ্গা পথে হেঁটে চলে নতুন সমাজ

দখলদারির মনোভাব ভারী,

আগ্রাসী ভূমিকায় তেজিয়া আসিতেছে ঐ কান্ডারী। 


কার হাত ধরিয়া জাগিবে পৃথিবী?

তেজ আর লোভে মোড়া ঐ কান্ডারীর মুখে--

কলম ছুঁড়িয়া মারিবে কোন কবি? 


বিদ্বেষী মনোভাব নিবে কাড়ি সংযম

বিনোদনের হাটে যাবে ভাসি আমার মা-বোনের শাশ্বত সম্ভ্রম।