Sunday, August 29, 2021

লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প

 ভালোবাসার শৈল্পিকতা



এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। রোগী শমরিতা হাসপাতালে। রিয়াজুল দেরি না করে বাইকে চড়ে চলে এলো হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে কক্ষ থেকে বের হলে এক তরুণী এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।


রিয়াজুল শাহেদ স্মিত হেসে বললো, নো টেনশন, ডু ফুর্তি। এবি পজেটিভ রক্ত সচরাচর পাওয়া যায় না। যখন প্রয়োজন হবে,কল দেবেন। জিরো ওয়ান সেভেন ওয়ান টেন এইট টু সিক্স জিরো ফাইভ নাইন।


তরুণীর কথা বলার অপেক্ষায় না থেকে রিয়াজুল শাহেদ বেরিয়ে এলো হাসপাতাল থেকে।


এক মাস পর একটি অপরিচিত নম্বরের ফোনকল গ্রহণ করলে ওদিক থেকে মেয়ে কণ্ঠ বললো, আপনি কি ঢাকায় আছেন? সেদিন আপনার নামটাও জানা হয়নি।


রিয়াজুল বললো, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এর আগেও আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে।


ঠিক ধরেছেন। মাস খানেক আগে শমরিতা হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিলেন। আজও রক্ত লাগবে। আসবেন?


কোথায় আসতে হবে বলুন।


মগবাজার কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।


আধা ঘন্টায় রিয়াজুল শাহেদ হাসপাতালে পৌঁছে দান করলো রক্ত। কিন্তু এবার ঐ তরুণীর দেখা পেলো না কোথাও।


ঠোঁট উল্টে রিয়াজুল চলে এলো হাসপাতাল থেকে। Unnamed শিরোনামে তরুণীর মোবাইল ফোন নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলো বলেই পরদিন ফোনকল আসায় অসুবিধা হলো না চিনতে।


কলটা গ্রহণ করে রিয়াজুল বললো, কোন হাসপাতাল?


কোন হাসপাতাল মানে?


রক্ত দিতে কোনো হাসপাতালে যেতে হবে না? নাকি এবার আপনার বাসায়?


আরে নাহ! আজ রক্ত দেবার জন্য কল দেই নি।


তাহলে?

আপনি মানুষটা খুব ভালো। কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন দিলাম।


শুধু ফোনে?


কিভাবে চাচ্ছেন আপনি?


সামনাসামনি।

কোনো সমস্যা নাই। কোথায় আসবো বলুন। কোনো পার্কে?


ঢাকার পার্কগুলো তো মোবাইল প্রস্টিটিউট।


তা যা বলেছেন। কোনো হোটেলে?


হোটেল? বাংলাদেশে? দাঁতাল পুলিশ রেইড মেরে প্রসটিটিউট বানিয়ে ফেলবে! আমি পুলিশ থেকে শত মাইল দূরে থাকতে চাই!

তাহলে আমার বাসায় চলে আসুন।


রিয়াজুল শাহেদ বিস্মিত হয়ে বললো, আপনার বাসায়!


অথবা আপনার বাসায়!


বাহ! আপনি খুব স্বতঃস্ফূর্ত ডেটিং-এর ব্যাপারে!


ওয়েস্টার্ন কাল্চার এডপ্ট করতে হলে এমন তো হতেই হবে! আমার বাসার এড্রেসটা আপনার মোবাইল ফোনে টেক্সট করে দিচ্ছি। চলে আসুন। বাই।


মেয়েটির কথাগুলো তখনো কানে বাজছে রিয়াজুল শাহেদের। বাংলাদেশের মেয়েরা এতো ফৃ হয়ে গেছে? ফৃ-সেক্সের দেশে ভালোবাসা নেই, আছে শুধু জৈবিক আকর্ষণ। বাংলাদেশও কি হয়ে যাচ্ছে তেমন?


উবারে করে রিয়াজুল শাহেদ চলে এলো মেয়েটির দেয়া ঠিকানায়। অর্কিডের স্টিক দিয়ে ওকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো মেয়েটি। ওকে বসতে বলে চলে গেলো ভেতরে। প্রায় সাথে সাথে একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা এলেন। রিয়াজুল শাহেদ দাঁড়িয়ে সালাম জানালো।


ভদ্রমহিলা ইশারায় রিয়াজুলকে বসতে বলে নিজে মুখোমুখি একটা সোফায় বসে বললেন, আমার মেয়েটা দিনের পর দিন কেমন যেনো আলাদা ধরনের হয়ে যাচ্ছে। যে দুইজনকে তুমি রক্ত দিলে ওরা কেউ আমাদের আত্মীয় না-ওর দুই বান্ধবীর আত্মীয়। যখন শুনলো রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না তখন নিজেই রক্ত সংগ্রহের দায়িত্ব নিলো। এই স্বভাবের জন্য ওর হাসবেন্ডও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ওর প্রতি।

কবি গোবিন্দ মোদক -এর একটি কবিতা

 প্রত্ন-কথা 



প্রতিটি তিন-পঙক্তি শেষে একবার অল্প-থামা,

তারপর আবার সনিষ্ঠ উচ্চারণ

গলার ওঠানামা... স্বরক্ষেপণ ...

স্বর-যুক্তি ... স্বর-মুক্তি ... আর বিষাদ ...

এভাবেই একসময় শেষ হয় ত্রিপদী কবিতা ...

ফুরায় একলব্যের কাহিনী ...

তখন জনপদ জুড়ে শুধুই অর্জুনের আস্ফালন। 

তবু ইতিহাস দাগ রেখে যায়।

পৃথিবীটা জানে --

প্রকৃত সত্য কোথায় প্রোথিত আছে !

কবি জয়তী দেওঘরিয়ার -এর একটি কবিতা

 প্রতীক্ষা



এ কোন্ বিশ্ব

দেখে জাগে সংশয়!

সারা দেহ ধূলি-ধূসরিত।

তোমার ঐ অপরূপ রূপ 

কে করিল হরণ,কালিমালিপ্ত?

কে সেই হানাদার-বর্বর!

তুমি কি করেছো তারে ক্ষমা?

নিজ শক্তি আস্ফালনে লিপ্ত সারাক্ষণ। 

'আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই বীর'--

প্রমাণ করতেই ব্যস্ত। 

এ ভাবে চলতে চলতে

একদিন লুপ্ত হবেই

তোমার বুক থেকে

আস্ফালনকারীর অস্তিত্ব। 

ভয়ঙ্করের কলোমেঘ

সরে যাবে একদিন, 

সুন্দর সুষমায় পূর্ণ হবে এ বিশ্ব,

তারই প্রতীক্ষায়।

কবি স্বপ্না বনিক -এর একটি কবিতা

 তুমি তো এলে না

           


অনেক বসন্ত কেটে গেছে

শরতের মিঠে হাওয়াই এসেছে, 

তুমি তো এলে না প্রিয়

দেখা তো দিলে না আমায়। 


দীর্ঘ প্রতিক্ষায় বয়ে যায় বেলা

আর কেন লুকোচুরি খেলা

এখনও বাজে বাঁশরী

হৃদয়ে বৃথাই খুঁজে মরি। 


শুনেছি জলে স্থলে আকাশে

সূর্যালোকে অনন্ত মহাকাশে

তোমার পরিক্রমণ দশ- দিগন্তে

দেখা দিও প্রিয় জীবনের অন্তে। 


জানি তুমি আছো জীবন তরঙ্গে

সুখে দুখে আমারই সঙ্গে, 

আমারে ছেড়ো না প্রিয় কভু

সংসারের সকল কাজে থেকো প্রভু। 

কবি সুনন্দ মন্ডল -এর একটি কবিতা

 অনুরাগের আঁচল

          


একান্ত অনুরাগ

ভালোবেসে জীবন কাটানো

প্রেমিক সত্তা

প্রেমিকার আঁচল ধরে ঘোরে।


অন্যদিকে প্রেমিকা

সুখের আশায়

নিজের পরিবার ছেড়ে

প্রেমিকের পরিবারকে আঁচলে জড়িয়ে রাখে।


কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

 বর্ষণ



প্রকৃতির মাঝে চলতে চলতে

            পাখিদের গান শুনতে শুনতে

ফসলের খেত দেখতে দেখতে

            হঠাৎ কখনো জানতে পারিনি!

আকাশের কোণে গভীর মেঘ

            ধীরে ধীরে কালো হতে লেগেছে,

চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে

মনে হয় এখনই গভীর ‌‌বর্ষণ

            আকাশ হতে নেমে আসছে।

শান্ত প্রকৃতির বুক থেকে

            ঝরতে চলেছে গভীর বর্ষণ 

ঠিক এই মূহুর্তে ভেসে আসছে 

দূরে দূরান্তের পশুদের আর্তনাদ

           শুরু হতে লাগলো গভীর বর্ষণ

থেকে থেকে বিদ্যুতের চমকানি ,

           উত্তরের জানালাটার দীর্ঘ শব্দ;

           বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি

এখনও ভেসে আসছে আর্তনাদ!

ধীরে ধীরে বর্ষণ কমতে চলেছে

একটু পরে বুঝি থেমে যাবে।

উত্তরের জানালা দিয়ে শীতল হাওয়া

          প্রবেশ করছে কপাটের ফাঁক দিয়ে।

ঠিক এই মূহুর্তে বর্ষণ পুরো কমে এসেছে

বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করেছি

চারিদিকে জল আর জল

সমস্ত চাষের খেত জলে ডুবে গেছে।

          বনের পশুরা একহাঁটু জলে

          দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর কষ্টে।

          প্রচুর ফসলের কি হয়েছে হয়েছে-

          চেয়ে আছি, কিছু করার নেই

          এটাই প্রকৃতির রীতিনীতি

যেটা চলে আসছে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই।।

কবি ক্ষুদিরাম নস্কর -এর একটি কবিতা

 শেষ বয়সের ছুটি



মায়ের পিঠে ঢুলছে খোকা 

ঝুলছে ঘুমের মজা 

পেটের জ্বালায় মায়ের মাথায় 

মস্ত ইটের বোঝা


ঘাম ঝরা সেই দিনের শেষে 

যে টুক পয়সা মেলে 

সব চলে যায় চালে-ডালে 

লঙ্কা,লবণ,তেলে।


তার থেকেও বাঁচায় কিছু 

শিখবে পড়া ছেলে 

মানুষ মতো মানুষ হবে 

হয়তো সুযোগ পেলে।


থাকবে না আর অভাব তাদের 

ফুরাবেনা রুটি 

চাকরিজীবীর মত পাবে 

শেষ বয়সে ছুটি।


স্বপ্ন সবার সত্যি হয় না 

কষ্টো আরো শেষে 

খোকার চাকরি মস্ত বড় 

ফিরতে দেয় না দেশে।

কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

রম্যগাঁথা



মন চায় আমার 

 দুহাতে ধানের শীষকে জড়িয়ে ধরতে

আবেগ যে জড়িয়ে আছে এখনো,

চারদিকে কলমীর শাকের মতো লতানো ঘ্রাণ আমাকে গ্রাস করতে চায়

আমি পিছিয়ে যাই শুধু ইচ্ছে করেই।

কেননা,ভালোবাসার ব‍্যাকরণ যে আমি বুঝিনা।

ভালোবাসা যে আমার কাছে ছেঁড়া পোষ্টারের মতো, 

যার কোনো অভিমান নেই।

শুধু বহন করে অতীতের ধূসর সাক্ষ‍্য,

কানে কানে যেন বলে দেয় অভিমানের ঝরা বকুলের রম‍্যগাঁথা।

কবি সুব্রত মিত্র -এর একটি কবিতা

 মর্ম কথা



একদিন সব কোলাহল থেমে যাবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন আবার হঠাৎ করে কোলাহল শুরু হবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন আবার সকলে নীরব হতে হতে সমবেত কণ্ঠে বলবে কারুর নাম

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন সব দেয়া-নেয়া মিটে যাবে পড়ে রবে এই আপন ভুবন

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন পৃথিবীর আকাশে কবিদের ছায়া হয়ে মায়া গুলো পড়ে রবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন স্বার্থের বিনিময়ে ভালবাসার বড় অভাব হবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন এই মায়ার পাথরগুলো ফুল হতে গিয়েও ফল হয়ে ধরা দেবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন হয়তো তোমরা ভুলতে গিয়েও ভুলতে পারবেনা আমায়

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

যদি কোনদিন কেউ করো আমায় নিয়ে সমালোচনা

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

পৃথিবীর গায়ে আমি খোদাই করা বিরম্বনা

আমি মরচে পড়া শব্দের ধাতু, আমায় সকলে চিনলো না।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 একটাই রাস্তা



ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি

কর জাতির বিচারে।

আমরা হলাম মানব জাতি

জন্ম মায়ের উদরে।

ভূমি, জল, বাতাস নিয়ে

একই আকাশ তলে।

শ্বাস প্রশ্বাস প্রাণে নিয়ে

বাস করি সকলে।

সাকার - নিরাকার ঈশ্বর একই

ভজন - সাধন করি।

মৃত্যুকালে শমন আসে সবার

একই পথ ধরি।

কবি সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি কবিতা

 তোমার সঙ্গে



যাব আমি যাব তোমার সঙ্গে যাব

কোথায় গিয়ে কী যে খাব আমি খাব

সেথায় যদি হয় গো দেখা ঐ বাংলার মাঠ

জলাজমি অরন্য আর নদী পুকুর ঘাট

শালিক ডাকবে কিচিরমিচির সুরে

বনলতা ঘেরা বনপলাশি নাচবে অচিন পুরে

কোকিল ডাকবে কুহু কুহু রবে

কোকিলা আসবে ছূটে আপন সগৌরবে

সেথা আমি যাব গাইবো নতুন গান

ভাদ্রের নীল আকাশের ছেঁড়া মেঘের টান। 


তবুও সোঁদা গন্ধের গন্ধ লাগবে নাকে

শরৎ আসবে শিউলি ঝরবে তাল পড়বে ঢাঁকে

এমন পুজোর শারদীয়া কেন যে আজ মনমরা

বাঙালি হৃদয় তবুও কেমন সুধারসে ভরা। 

যাব আমি যাব সেথা পুজোর সাজ পরে

আনন্দে মাতবে যেথায় মানুষ থরে থরে।।

কবি তীর্থঙ্কর সুমিত -এর দুটি কবিতা

 ভালোবাসার জলাশয়


হাতে হাত ---

উড়ে বেড়ায় স্বপ্ন

চোখ খুললেই পৃথিবী জেগে ওঠে

কিছু বাকি রয়েই যায়

বিবর্তন শুধু শরীরের ___

হাত,পা,মুখ

এবার একটা ইতি টানতে হয়


হাঁস ভেসে যায় ভালোবাসার জলাশয়।

-----------------------------------------------------------------------


স্বপ্নের ফেরিওয়ালা



কত স্বপ্ন বিক্রি হয়ে যায়

সকাল বিকেল প্রতিনিয়ত ...

ধূসর স্বপ্ন গোধূলি আঁকে ঝাঁকা ভরে

ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে চিকন হাওয়া

অনন্ত যাত্রাপথে সঙ্গীহীন নৌকা একাকী

ফিরে আসে তার গন্তব্যে 


এভাবেই কেটে যায় কত জীবনের ট্যাজেটি। 

কবি তৈমুর খান -এর একটি কবিতা

 ভবিষ্যৎ



বেলা বাড়ছে 

বেজে যাচ্ছে ধৈর্যের সংগীত 

বিপ্লবের মঞ্চ বেঁধে স্বপ্নের নীলরাষ্ট্র ছড়াচ্ছে উদ্বেগ 

সময়ের তরঙ্গ এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে 

বিকেলে আলোর চিঠি আকৃষ্ট করেছে 



এখানে অন্ধকারের পাহাড়ে 

দু একটি সুড়ঙ্গ গিরিখাতে 

ভবিষ্যৎ উঁকি মারছে :

কী সুন্দর মাজা, পুলক মাখা পলক 

ঠোঁটে ঠোঁটে নতুন চুমুর অভিঘাত 



ধৈর্যের স্বরলিপি আর দূরের দর্শক আমি 

যদিও অভিযাত্রী, যদিও বশংবদ 

সময়ের কাছে রেখেছি সমর্পণ 

নিঃস্ব ঝরনায় ধুয়ে নিয়েছি হাত মুখ