Sunday, October 31, 2021

লেখক সিদ্ধার্থ সিংহ এর একটি গল্প

প্যান্টি



কার্তিক দেখল আজ আর দুটো নয়, মেয়েটির দু'হাতে দু'টি করে চারটে পেয়ারা।

মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় তাদের বাড়ির উঠোনের উপর দিয়েই যায়। গত তিন-চার দিন ধরে কার্তিক দেখছে সে যখন যায়, তখন তার হাতে দুটো করে পেয়ারা থাকে। তাই গতকাল থাকতে না পেরে ও জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি প্রতিদিন কোথা থেকে পেয়ারা পাও গো?

মেয়েটি বলেছিল, আমাকে বিষ্ণুদারা দেয়।

--- রোজ রোজ?

---- হ্যাঁ, আমি ওদের গাছে উঠে এত্ত এত্ত পেয়ারা পেড়ে দিই তো... তাই আমাকে রোজ দুটো করে পেয়ার দেয়।

বিষ্ণুদের দলটাকে কার্তিক খুব ভাল করে চেনে। বুঝতে পারল, ছেলেগুলোর আসল উদ্দেশ্য কী। তাই বলল, তুমি ওদেরকে আর পেয়ারা পেড়ে দিও না, বুঝেছ?

মেয়েটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন গো?

ও বলল, তুমি তো বাচ্চা তাই বোঝো না। আসলে তুমি গাছে উঠলে নিচ থেকে ওরা তোমার প্যান্ট দেখে...

গতকালই বারণ করেছিল। অথচ আজ সেই মেয়েটিই দুটো নয়, চার-চারটে পেয়ারা নিয়ে আসছে! মেয়েটি কাছে আসতেই ও বলল, তোমাকে কাল বলেছিলাম না... গাছে উঠো না... নীচ থেকে ওরা তোমার প্যান্ট দেখে...

মেয়েটি বলল, দেখবে কী করে? আমি অত বোকা না। আমি তো আজ প্যান্টই পরে আসেনি।

লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প

 দলছুট



অশোক কোয়ার্টারের বারান্দায় বসে। একমনে বনের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকদিন একটা বন্য হাতির পাল খুব উৎপাত শুরু করেছিল। ওদের সামনে পড়ে একজন মারাও যায়। অনেক চেষ্টা করে হাতির পালকে বনরক্ষী বাহিনী এই জঙ্গল থেকে তাড়াতে পেরেছে। হাতির পালের কথাই ভাবছিল অশোক। বনরক্ষী তমাল এসে দাঁড়ায়। অশোক বলে, “হাতির পালের কোন খবর পেলে?”


     “স্যার, দলটা দলমার দিকে ফিরে যাচ্ছে। এখন ধারে কাছে কোন হাতির পাল নেই।”


     নিশ্চিন্ত হয়ে অশোক বলে, “যাক! এখন কয়েকদিন শান্তি। কী বল?”


     “স্যার একটা খবর আছে। দলছুট হাতিটা ফিরে এসেছে।”


     “ সে কী ! হাতিটা এখন কোথায়?”


     তমাল বলে, “ কুনকিটার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ওর সাথে ডালপালা খাচ্ছে। অথচ দেখুন কদিন আগেও কুনকিটাকে কাছে যেতে দিত না। শিকল ছেঁড়ার চেষ্টা করত। আপনার হুকুমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বনে ফিরেও গিয়েছিল। কিন্তু আজ সকালে-------”


     “ ফিরে এসে কুনকির আদর উপভোগ করছে। তাই তো?”


     “ হ্যাঁ স্যার। এই অবাক কাণ্ড হল কেন?”


     হেসে অশোক বলে, “ আহত হাতিটাকে তোমরা অনেক যত্নে সুস্থ করে তুলেছিলে। ওর গায়ে মানুষের গন্ধ লেগে গেছে। হাতি-সমাজে তাই ওর ঠাঁই নেই। এবার আমাদের কুনকিটা ঠিক ওকে কুনকি করে তুলবে। চিন্তার কোন কিছু নেই।”


 


 


 


 


     গুলাবী শীতের রোদে চৌকিতে বসে রোদ পোয়াচ্ছিল। ইভা এসে বলে, “মাসি উলি ফিরে এসেছে।”


     গ্রামের মেয়ে উলি। দেবনাথকে ভালোবেসে ঘর ছাড়ে। দেবনাথ কয়েকদিন ওর সাথে স্বামী-স্ত্রী খেলা খেলে। তারপর গুলাবীর কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রথম প্রথম কান্নাকাটি করতো। খরিদ্দার ঢুকতে দিতে চাই তো না। গুলাবী অনেক বুঝিয়েছিল। লাভ হয়নি। একদিন উলিকেফেরার টিকিট ও কিছু টাকা দিয়ে গুলাবী বলে, “যা বেটি ঘরে ফির যা। জোর করে কাউকে আমি লাইনে আনি না। কোনদিন অসুবিধা হলে তোর এই মাসি তোর পাশে আছে, এটা মনে রাখবি।”


     সেই উলি ফিরে এসেছে শুনে গুলাবী বলে, “ উলি কথায়? আমার কাছে নিয়ে আয়।”


     উলি এসে গুলাবীর পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। গুলাবী ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “ আমি জানতাম বেটি, তোর সাথে এমন হবে। এ পাড়ায় ঢুকেছিস। আমাদের ছোঁয়া লাগেছে। মানুষের সমাজে তোর ঠাঁই হবে না। ওরে ইভা, উলি বেটিকে আমার পাশের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দে।”

লেখক তুলসী দাস বিদ -এর একটি গল্প

অনুভব



এতদিন যা গোপনে - আড়ালে আবডালে চুপিসারে হতো এখন আর তার দরকার হয় না। হবেই বা কেন? উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত মস্তিষ্ক - উন্নত সভ্যতা - তার কি কোনো মূল্য নেই।কে বলল নেই? আলবাৎ আছে। অতি আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা তাদের হাতের মুঠোয় সারা পৃথিবী। আমাদের মত প্রাচীনপন্থী কেন হবে? কথায় কথায় ওরা একগাল হেসে বলে "ও তোমরা বুঝবে না, সেকেলে ব্যাকডেটেড মানুষ। সত্যি তো এত ভারি বয়সে ওসব বোঝারই বা কী দরকার? এরকম রঙ্গলীলার চিত্রনাট্য বুঝব - এমন সাধ্য আমার বাপেরও নেই। তর্জনীতে বোতাম টিপে টিপে টিক - টিক - টিক - এ ভাষা বইতে আর চর পুষতে হয় না। নিমেষে সব হাসিল হয়ে যায়।


 যায় হোক বাজার থেকে বাড়ি ফিরছি, জনবহুল রাজ্য সড়কের উপর প্রকাশে দুজন... রোদ ঝলমল করছে। চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো সুলভ দৃশ্য।ছেলেটা না চেনার ভান করে ঘুরে দাঁড়ালো। আমিও দশ পা এসে অছিলায় নয় নির্লজ্জ কৌতুহলী হয়ে আবার ফিরে চাইলাম - সে এক কুচ্ছিত-বেল্লালাপনা। ছেলেটা খুব পরিচিত, হতদরিদ্র, সুপুরুষ, পুরোনো মেধাবী ছাত্র। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে কলেজে পড়তে এসেছে। বাবার কায়িক পরিশ্রমের রোজগারের যথার্থ ব্যবহার করছে ছেলে। অনুমান করলাম - আমার প্রিয় ছাত্র - সেই অনুভব। পরের দিন - একই পর্ব - বুকে একটা ব্যথা অনুভব করলাম - আমিও প্রাণ ভরে হাসলাম, মনে মনে করলাম, সোনায় সোহাগা- একদিকে নেট এর নেট ছড়ানো আর অন্য দিকে করোনার মুখোশ - মানুষ চেনা দায়!

কবি অর্চনা দাস -এর একটি কবিতা

 বার্তা




আকাশে মেঘেরা কানে কানে

দিয়ে যায় বার্তা

নৃত্যের তালে জেগে উঠে

আনমনা বাতাস

চকিত চাহনির অনন্ত আহ্বানে

কে বা রয় ঘরে বসে, 

 ম্মিত হাসি ছড়ানো রবিকর-

প্রাণের পরশে করে স্নাত। 

বিস্তৃত ভুবন

রঙিন পুষ্পরাজি

নবসাজে ধ‍রা দেয়

প্রেমের আলিঙ্গনে

সমগ্র চরাচ‍র মৃদু গুঞ্জনে

মুখরিত। 

মা আসছে-

তাই প্রাণের আবেগে

প্রকৃতির এই 

মোহিনী রূপসজ্জা, 

আর নয় অশ্রুপাত

মনের গ্লানি মুছে

সাজাও আঙিনা আল্পনায়

ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দাও

পথে প্রান্তরে। 

পদচিহ্ন পড়বে মায়ের

প্রতিটি আঙনে, 

দুঃখ হতাশা ভুলে

জাগো-জাগো সবে

আশিস মায়ের নাও

মাথায় তুলে।

কবি জয়তী দেওঘরিয়া -এর একটি কবিতা

 পারলে না

         



জানো ,আমার না খুব ইচ্ছে

স্মার্ট হওয়ার ,

কতবার চেষ্টাও করেছি।

বারবার বদলে ফেলেছি নিজেকে,

সাজিয়েছি নতুন সাজে।

নতুন পোশাক, নতুন চুলের ছাট

আয়নায় দেখেছি নিজেকে।

রঙ-তুলির আঁচড় দিয়েছি 

চোখে-মুখে ও গালে।

তবু মন পাইনি তোমার!

আমি আজও নিজেকে সাজাই

স্মার্ট করে তুলি ।

কিন্তু কে যেন ফিসফিস করে

বলে যায়---

'তুমি ব্যর্থ!'

সেই ব্যর্থতার গ্লানি মেখে

আবার গিয়ে দাঁড়াই তোমার কাছে

তুমি ফিরেও দেখ না।

আবারও সেই ধ্বনি 

অস্ফুট স্বরে ধ্বনিত হয়

'তুমি ব্যর্থ, তুমি পারলে না।'

কবি ঋদেনদিক মিত্রো -এর একটি কবিতা

 শীত 



শীত এসেছে, ঝরবে পাতা,  

 ঝরবে কত ফুল,  

ঝরবে না তো কোনো শীতেই  

  আমাদেরই ভুল! 


আসুক শীত, আসুক গ্রীস্ম, 

   কী বয়ে যায় তাতে,  

তেমন ঋতু নেই কোথাও  

   এসে হাতেনাতে --- 


ঝরিয়ে দেবে আমাদেরই  

   বদঅভ্যেস যত,  

তারপরে ঠিক ভরিয়ে দেবে 

  বসন্তের-ই মত ---    


ফুলে ফলে ভরবে মনের     

  বাগানগুলি সব,  

মানব জাতি খুঁজে পাবে --- 

   হারানো গৌরব! 

কবি সুমিত্রা পাল -এর একটি কবিতা

 ভোটের দামামা




যখন বাজে ভোটের দামামা,

থাকে একরাশ প্রতিশ্রুতি আর হাঙ্গামা ,

দল বদলের খেলা চলে ,

একে অন্যকে কুকথা বলে ।

 মুখোশ গুলো পড়ে আসে,

ভোট পেতে কোমর বাঁধে কষে ।

নেতা-নেত্রীদের ভাঙে ঘুম,

চলে মানুষকে কাছে টানার ধুম।

হাসিমুখে সব কথা শোনে,

 মনে মনে সপ্নজাল বোনে।

একবার পেয়ে গেলে আসনটাকে ,

ঠিক দেখে নেবে সব বেটাকে।

বুঝবার নেই কোন উপায়,

বোকা জনগণ ভোলে এদের কথায়।

এলে ভোটের সময় কাল ,

নেতারা হয় তখন ভিজে বেড়াল।

নেতাদের লোভের লালসায় ,

সাধারণ মানুষের প্রাণ চলে যায়।

এল গেল কত রকমের দল,

 মানুষ পেয়েছে শুধুই ছল।

নেই ঠিকমতো অন্নবস্ত্রের সংস্থান,

 আজো তাদের ঘরে বেকার সন্তান।

আজও বসে আছে আশায় ,

হয়তো আলো জ্বলবে বাসায়।

হয়তো খুশির জোয়ার লাগবে ,

হয়তো একদিন মানবতাজাগবে।

কবি চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী -এর একটি কবিতা

 অকৃতজ্ঞ




ভণ্ডরা কখন যে কোন রূপ ধরে প্রেমকে দেয় ফাঁকি

জানে না প্রেম পুজারির উঠোন।


দরজা খোলা রাখে

অভুক্ত ফিরে গেলে সে যে বড়ই বেদনার

তাই বেড়ে দেয় ভাত

এক সময় গতর বাড়ে

বলও আসে শরীরের এ-কানায় ও-কানায়।


অহিংসার ভূমিতে প্রেমের ছায়া তলে দাঁড়িয়ে

যারা সান দেয় আসুরিক প্রবৃত্তি

ছিঁড়তে থাকে শান্তির নরম পালক।


এক সময় যে পাতে খায় সে ভাতে ছেদ করে

লেজ নাড়তে নাড়তে ছুটে যায় ভাগাড়ের দিকে

এক সুরে বাজায় গান মাংস ছেড়ার উল্লাসে

কবি প্রতীক হালদার -এর একটি কবিতা

 দিদার কান্ড 



ছুটল গোপাল আমটা পেড়ে 

করল দিদা তাড়া ,

হয়েছিস কেমন বাপের ব্যাটা 

একবার তুই দাঁড়া ।


জোরসে ছুটে বেড়ার ওপার 

পড়ল গোপাল জোরে ,

হোঁচট খেয়ে পড়ল দিদা 

ছিল ঘুমের ঘোরে ।


চেঁচায় জোরে আয় রে ছুটে 

ভাঙল বুঝি ঠ্যাং ,

গোপাল ছোঁড়া বড্ড জোরে 

মারল আমার ল্যাঙ ।


ঘেঁচি জোরে দৌড়ে এল 

একি তোমার দশা ?

এই বয়েসে পা'টা গেলে 

চরম সর্বনাশা ।


কি কান্ডটা কর না তুমি 

বয়সটা কি কম ?

এই বয়েসে কোথায় তুমি 

পাও যে এত দম ?

কবি মঞ্জুলা বর -এর একটি কবিতা

 কোথায় চেতন 




সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ কবে আর 

মানুষ হবে ? এতো শিক্ষা ব‍্যবস্থা  

এতো আইন কানুন তবুও শত সহস্র

 নারীর গণধর্ষণ গর্ভকালীন !


 কেমন শিক্ষা?---ভাবতে অবাক লাগে

 এতো পুলিশের সমারোহ পথে পথে--

 হাজার হাজার জন মানব তবে কী

 করে মোড়ে মোড়ে নারীর কেন 

 এত ধর্ষণ ও মৃত্যু !


আসলে সব থেকে ও কিছু নেই অভাগা 

দেশে! জ্ঞানের আলোকে মানুষ কবে  

আর মানুষ হবে?সবাই আমরা মুখে 

কত জ্ঞানের বাণী শোনাই কিন্তু সত‍্যি কী 

কেউ সঠিক পথে চলি! সবটা যেন  

অজানা! ------


বিবেক চেতন যদি জাগতো তবে দিনের 

পর এতো অন‍্যায় অরাজকতা হতো না!

মিথ‍্যার কবলে সত‍্য হতো না জর্জরিত ।


লোভের মোহে দিকে দিকে ধান্দা 

আর মারামারি । স্বার্থের তরে হিংসা,ঈর্ষা ,

ক্ষুণ,খারাপি চলছে অহরহ।  


 কোথায় মনুষ্যত্ব ?কোথায় চেতন?

কোথায় বা মানবিকতা? নীরবে আজও 

কাঁদে অসহায় ধরণী ।

কবি শ্রাবণী মুখার্জী -এর একটি কবিতা

 প্রয়াস 




দেখিলে কন্যা রাজকন্যা বন্দিনী র বেশে ,

তোমার মনের গহন বনে রূপকথার দেশে ।

রূপ তোমায় পারে নি করিতে মোহিত স্নিগ্ধ হেসে 

বন্ধু হয়ে দাঁড়ালে না তবু কোনোদিন পাশে এসে ।

মুক্ত করিতে করিলে না তুমি কণামাত্র প্রয়াস ।

ব্যাকরণ বুঝায়ে জানিয়ে গেল মুক্ত ধূসর আকাশ ।

ঝরলো বৃষ্টি কপোল বাহিয়া শ্রাবণের বারিধারা ,

চাহিলে পারিত মুছাতে দুঃখ প্রেমিক পাগলপারা ।

ভাসে নি রূপেতে মিত্র আমার অতি সাবধানে পা, 

সময় কাটানোর যন্ত্র করেছে উপায়ান্তর না ।

সাজায়েছো কতো স্বপনে মননে সুন্দরী কুমুদিনী,

লুটায়ে কেশ জড়ায়ে বাহু প্রেমিকা বিরহীনি ।

বাজিলো না ভেরি মধুরিমা ওই ছোট্ট আশায় জুড়ে ,

সুনীল আকাশ বুক ভরানো কি হবে হৃদয় খুঁড়ে ?

 মন্দ্রতালে লয় তাল মেলায় খানিক ছন্দপতন ,

কাঙালিনী বধূ কুসুম চয়নে রেখেছে জীবন পণ ।

প্রাচীর ছিদ্র বেয়ে কোনোদিন আসিবে কি সোনারবি ?

বন্দিনী হয়ে দাঁড়ালে সেথায় কবিতা লিখবে ? কবি ।

হৃদয় দুয়ারে এখনো রইবে শুভ সকাল শুভ রাত ,

বৃষ্টিস্নাত প্রভাতী বেলায় দিও সারা জীবন সাথ ।

কবি তহিদুল ইসলাম -এর একটি কবিতা

 নানা জনের নানান মত



একটা স্তম্ভের উপর একটা শিশুমূর্তি 

একটা অবোধ্য শব্দ করে চিৎকার করছে।

তার অমন আওয়াজ শুনে মানুষ এসে জড়ো হয়।

তাদের মধ্যে কয়েকটি মতে অবস্থান নিলো।

একদল বলল,' ছেলেটা কেমন কান্না করছে।

আরেকদল বলল,' না না, ও কাঁদছে না,

ও হাসছে দেখুন; ও না,অমন করেই হাসে।'

পাশের ফ্লাট থেকে একটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে এলো,

' এইযে শুনুন, ও না অমন করেই লোক জড়ো করে।'


চিদানন্দ সন্ন্যাসীর দল,দরবেশ ফকিরের মতে,

' মানুষ আনন্দ পেলে হাসে, দুঃখ পেলে কাঁদে।

ব্যথার নীল পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সে গান করে।

সে এখন অমন সুরে গান ধরেছে।'



আকাশে একটুকরো মেঘ কোথায় উড়ে এলো

বাতাস উঠলো, মূর্তির গা'য়ের ধূলো উড়িয়ে দিলো

তারপর বৃষ্টি নামলো,ভিজিয়ে দিলো তার শরীর

ধুয়ে দিল ব্যথা ,যন্ত্রণা যত জমেছিল বুকে তার।

যেমন করে মা'য়ে দেয়,তার সন্তানের।

কবি অভিজীৎ ঘোষ -এর দুটি কবিতা

 আজব জেরা



এইতো সেদিন পুলিশ মামা 

গ্রামের ভিতর এসে, 

দাসুর বাড়ি ডুকলো সবাই

ধরলো তারে কষে। 

নিয়ে গেল জীপে তুলে

থানার রাস্তা ধরে, 

ভগবানকে ডাকছে দাসু

ভয় ভরা অন্তরে। 

পুলিশ সুপার করছে জেরা

অস্ত্র কোথায় আছে? 

ক্ষীণ স্বরে বললেন দাসু

'নেই তো আমার কাছে।'

ধমক দিয়ে বলল পুলিশ

বলবি কিনা বল? 

তোরা সবাই একই গ্যাঙের

সবটা তোদের ছল। 

দাসু তখন বললো কেঁদে

 শুনুন স্যার তবে , 

গ্রামের মুখে তিনখানি গাছ

তার দুখানি বাদ যাবে। 

তারই পরে তিনখানা পথ

প্রথম দুটি বাদে, 

গেলেই পরে দেখতে পাবেন

মোর পরিবার কাঁদে। 

সেই বাড়িতে তিনখানি ঘর

ঢুকেই দেখতে পাবেন, 

প্রথম এবং দ্বিতীয় বাদে

তৃতীয় ঘরে যাবেন। 

সেই ঘরেতে আছে রাখা

তিনখানা আলমারি, 

প্রথম দুটি বাদ দিয়ে স্যার

তৃতীয়টা দরকারী। 

তারই ভিতর তিনটি লকার

প্রথম দুটি ছেড়ে, 

তৃতীয়টা খুলবেন স্যার

হাতল খানি ধরে। 

দেখতে পাবেন তিনটি ছবি

তৃতীয় ছবিতে মা, 

ঐ ছবির কশম খেয়ে

বলছি ধরে পা! 

জানিনে মুই কোনো কিছু

অস্ত্র কিম্বা বোমা;

তাইতো বলি সবার মাঝে, 

করুন আমায় ক্ষমা। 

পুলিশ মামা বললো হেসে

ছাড়রে পাগল পা, 

তোকে আমি দিলুম ছেড়ে

বাপি বাড়ি যা।

_______________________


  চাওয়া-পাওয়া




চাইলি কেন হাসনুহানা,ভাবছি

 তোকে গোলাপ দেবো;

বাইক চড়ার সখ ছিল তোর, 

পক্ষীরাজে সঙ্গে নেবো। 

খেয়াল বশে বায়না সেদিন,প্যারিস 

নাহয় ফ্রান্সে যাবি;

নিয়ে গেলুম নরওয়ে, বললি 

সেথায় ফুচকা খাবি। 

আবার প্রাণে শখ ছিল তোর

নাইতে যাবি নায়াগ্রাতে, 

স্নানের শেষে মিশর যাবি

প্রখর রোদে চুল শুকাতে। 

যেতেই হলো আফ্রিকাতে

তোরই অভিমানের বশে, 

ফিরতে হলো অস্ট্রেলিয়ায়

প্রেম-পিরিতির দারুণ জোশে। 

আমার শুধু চাওয়ার ছিল

তোর সঙ্গ দু-দশ জনম;

হৃদয় ভরা সেই ক্ষতটা, ঢাকতে

যে তুই লেপলি মলম।