লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প
দলছুট
অশোক কোয়ার্টারের বারান্দায় বসে। একমনে বনের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকদিন একটা বন্য হাতির পাল খুব উৎপাত শুরু করেছিল। ওদের সামনে পড়ে একজন মারাও যায়। অনেক চেষ্টা করে হাতির পালকে বনরক্ষী বাহিনী এই জঙ্গল থেকে তাড়াতে পেরেছে। হাতির পালের কথাই ভাবছিল অশোক। বনরক্ষী তমাল এসে দাঁড়ায়। অশোক বলে, “হাতির পালের কোন খবর পেলে?”
“স্যার, দলটা দলমার দিকে ফিরে যাচ্ছে। এখন ধারে কাছে কোন হাতির পাল নেই।”
নিশ্চিন্ত হয়ে অশোক বলে, “যাক! এখন কয়েকদিন শান্তি। কী বল?”
“স্যার একটা খবর আছে। দলছুট হাতিটা ফিরে এসেছে।”
“ সে কী ! হাতিটা এখন কোথায়?”
তমাল বলে, “ কুনকিটার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ওর সাথে ডালপালা খাচ্ছে। অথচ দেখুন কদিন আগেও কুনকিটাকে কাছে যেতে দিত না। শিকল ছেঁড়ার চেষ্টা করত। আপনার হুকুমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বনে ফিরেও গিয়েছিল। কিন্তু আজ সকালে-------”
“ ফিরে এসে কুনকির আদর উপভোগ করছে। তাই তো?”
“ হ্যাঁ স্যার। এই অবাক কাণ্ড হল কেন?”
হেসে অশোক বলে, “ আহত হাতিটাকে তোমরা অনেক যত্নে সুস্থ করে তুলেছিলে। ওর গায়ে মানুষের গন্ধ লেগে গেছে। হাতি-সমাজে তাই ওর ঠাঁই নেই। এবার আমাদের কুনকিটা ঠিক ওকে কুনকি করে তুলবে। চিন্তার কোন কিছু নেই।”
গুলাবী শীতের রোদে চৌকিতে বসে রোদ পোয়াচ্ছিল। ইভা এসে বলে, “মাসি উলি ফিরে এসেছে।”
গ্রামের মেয়ে উলি। দেবনাথকে ভালোবেসে ঘর ছাড়ে। দেবনাথ কয়েকদিন ওর সাথে স্বামী-স্ত্রী খেলা খেলে। তারপর গুলাবীর কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রথম প্রথম কান্নাকাটি করতো। খরিদ্দার ঢুকতে দিতে চাই তো না। গুলাবী অনেক বুঝিয়েছিল। লাভ হয়নি। একদিন উলিকেফেরার টিকিট ও কিছু টাকা দিয়ে গুলাবী বলে, “যা বেটি ঘরে ফির যা। জোর করে কাউকে আমি লাইনে আনি না। কোনদিন অসুবিধা হলে তোর এই মাসি তোর পাশে আছে, এটা মনে রাখবি।”
সেই উলি ফিরে এসেছে শুনে গুলাবী বলে, “ উলি কথায়? আমার কাছে নিয়ে আয়।”
উলি এসে গুলাবীর পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। গুলাবী ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “ আমি জানতাম বেটি, তোর সাথে এমন হবে। এ পাড়ায় ঢুকেছিস। আমাদের ছোঁয়া লাগেছে। মানুষের সমাজে তোর ঠাঁই হবে না। ওরে ইভা, উলি বেটিকে আমার পাশের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দে।”
Comments