প্রাবন্ধিক অমিত পাল -এর একটি প্রবন্ধ
বিধর্মী প্রেমের পরিণাম
প্রথমেই বলে রাখি আমি এই প্রবন্ধের মাধ্যমে কোনো ধর্মকে আঘাত হানতে চাইনা৷ চাই শুধু একটা সঠিক দৃষ্টান্তের খোঁজ কিংবা দিতে চাই সত্য ভাষার নিদর্শন৷
প্রথমেই জানিয়ে দিতে চাই এই প্রবন্ধটি যার সম্পর্কে লিখছি সে আর কেউ নয়, আমার খুব কাছের পরিচিত একজন৷ সম্পর্কে সে আমার দাদা৷ নামটা তার প্রকাশ করা আমার পক্ষে বাঞ্ছনীয় নয়৷ যাইহোক ঘটনায় ফেরা যাক, এই যে বিধর্মীর সাথে প্রেম - এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে তা আমি আমার দাদার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেই বুঝতে পারছি৷ আসলে সে যার সাথে প্রেমেলিপ্ত সে হল এক বিধর্মী মহিলা৷ সে এমন এক বিধর্মী মহিলা যে আমার দাদাকে বশীভূত করে ফেলেছে নিজের কুটিল মায়াজালে৷
প্রেম হলে শুনেছি প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে রসের কথা, নিজেদের মনের কথা আলোচিত হয়৷ উভয়ের মধ্যে কখনো কখনো ভালোবাসার টানাপোড়েন ঘটে, আবার মিলন ঘটে৷ কিন্তু কখনো শুনিনি প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ধর্ম নিয়ে আলোচনা৷ প্রেমের দোহাই দিয়ে প্রেমিককে প্রেমিকার ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়া - এই ব্যাপারটা কেমন যেন অর্বাচীন৷
দুঃখ কি জানেন, অশিক্ষিতের কাছে শিক্ষা নিলে সে যেমন অশিক্ষিতে পরিণত হয়, ঠিক তেমনি আমার দাদাও শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও, নিজে হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও ভুলে গেছে নিজের সঠিক শিক্ষা, নিজের সততার ধর্ম ও নিজের আরাধ্যা দেব-দেবীকে৷ এমনকি দাদা নিজের দেব-দেবী সম্পর্কে কু-রটনা করতেও ছাড়ে না৷ আসলে সেই বিধর্মী মেয়েটি দাদাকে প্রেমের আদলে বশীভূত করেছে প্রেমাকাঙ্ক্ষী হিসাবে নয়, ধর্মচ্যুত করানোর উদ্দেশ্যে৷
আমি একটা কথা জোড় দিয়ে বলতে পারি যে, আমি হিন্দু হলেও আমি কোনো ধর্মকে অসম্মান বা অবহেলা করি না৷ কারণ আমি হিন্দু৷ গর্বের সাথে আমি বলতে পারি আমি একজন হিন্দু৷ তবে আমি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী৷ তাই আমার দাদার সাথে কোনো বিধর্মী মেয়ের যে প্রেমালাপ ঘটেছে তাকে আমি সমর্থন করেছি৷ কারণ ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ আমিও মানিনা৷ আমি ঈশ্বরকে মানি৷ আর ঈশ্বরকে মেনে চলার অর্থ সকলেই তাঁর সন্তান৷ তাই আমি মন থেকে দাদাদের প্রেম সমর্থন করেছিলাম৷
কিন্তু হায়! সেই সমর্থন যে আমার দাদার জীবনে কালপিট হয়ে উঠেছে৷ সেই বিধর্মী মেয়ের পাল্লায় পড়ে দাদা যেন সেই বিধর্মের অনুগত হয়ে উঠেছে৷ দাদাও হয়ে উঠেছে যেন এক বিধর্মী পুরুষ৷ তাতে কোনো দোষ নেই আমার মতে৷ কিন্তু নিজের ধর্মকে ভুলে যাওয়া, নিজের আরাধ্যা দেবতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা, ঈশ্বরের ভেদাভেদ করা এটা আমি মানতে পারছি না৷ কারণ যে ছেলে হিন্দুত্বের প্রতি, ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস রেখেছিল৷ আজ তার সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ৷
আমি একদিন বসলাম দাদার সাথে যুক্তি তর্কে৷ সেখানে থেকে যা বুঝলাম তার একটা উদাহরণ স্বরূপ দৃষ্টান্ত দিই -- আমি ধর্মের দৃষ্টান্তে প্রথমেই দাদাকে সহজ ভাবে নাক দেখালাম, দাদা বুঝল না৷ আমি আবার দাদাকে ঘুরিয়ে নাক দেখালাম, দাদা বুঝল না৷ আসলে দাদার এখন নাকটাকে কান বলে মনে হচ্ছে৷ তাই আমি নিজেই সরে এলাম এটা ভেবে - কুকুরের লেজ বেঁকে গেছে তাই একে সোজা করার ক্ষমতা আমার নেই৷
তবে দুঃখ হয় দাদার ভবিষ্যতের কথা ভেবে৷ এর পরিণাম কি হতে পারে জানো? আমি কিন্তু জানি৷ এর ভবিষ্যৎচিন্তা করে বলতে পারি -- যখন দাদা হোঁচট খাবে, আবার ফিরে আসবে ঘরের ছেলে ঘরে তখন হয়ত সমাজ, সততা, হিন্দুত্ব, ন্যায় বলবে জোড় গলায় দাদার প্রতি চেয়ে -- আমরা কারুর ব্যবহার করা রুমাল ফেরত নিই না...
Comments