লেখিকা শ্রাবণী মুখার্জী -এর একটি গল্প

 ব্রহ্মময়ী 



বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করতে লাগলো নীপা । দুচোখের ঘুম কোথায় যেন নিরুদ্দেশ ।ধীরে ধীরে ছটফটানি বাড়তে লাগলো , ভীষণ রকম অস্বস্তিকর হতে হতে ঘেমে রাত্রিবাস ভিজে একসা ।

আস্তে আস্তে উঠে পড়লো , না.... ঘুম আসবে না আর আজ । দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো ,রাতের আকাশে দ্বাদশীর একফালি চাঁদ এর দিকে নজর দিতেই কয়েকটি নিশাচর পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে গেলো । নীপা যেন আর নিজের অসুস্থতা চেপে রাখতে পারছে না ,শিমুল গাছটার নীচে এসে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ । বামুনপাড়ার দুর্গামন্দিরের পাশের রাস্তায় কয়েকটি ঘর পেরিয়ে তিলজলা পুকুর টার কথা মাথায় এলো । ছোটো বেলা থেকে শুনে আসছে ওই পুকুরে নাকি কুমির থাকে ,তাই কেউ ভয়ে ওই পুকুরের ধার মাড়ায় না । 

নীপা ক্লান্ত পায়ে গুটি গুটি সেই পুকুরের পাড়েই এসে পৌঁছালো । শ্যাওলা ধরা আধখাওয়া সিড়িটার উপর বসে পড়লো মন্ত্র মুগ্ধের মতো ।কচুরিপানায় ভর্তি পুকুরে বোঝার উপায় নেই কুমির আছে কি নেই । বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ঘড়ি দেখেছিলো ভোর চারটা বাজে । বাবা বলেছিলেন এই সময় টা নাকি বহ্ম্র সময়, এই সময় একান্ত মনে সাধনা করলে ফল পাওয়া যায় ।


    সারা সন্ধ্যা দেবেশের সাথে ঝগড়া হয়েছে ,নীপা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে যাদের নিয়ে তুমি সন্দেহ করছো তারা শুধু আমার বন্ধু ব্যাস আর কিছু না , দেবেশের মাথায় যেন আজ ভুত চেপেছে কোনোভাবেই মানতে সে রাজী নয় । তোমার সবাই তুমি তে অবস্থান করে লাভ সিম্বল দ্বারা । নীপা বোঝায় লাভ সিম্বল মানে দেখবে লেখা আছে ' খুব ভালো ' '


এমনিতে দেবেশ অতি শান্ত টাইপের ,কোনো কিছুতেই কোনো মাথাব্যথা নেই তার ।খায় দায় নিজের বেসরকারী অফিসে ছোটে , ফিরে সেই রাত্রী বেলা । ঘরের বা বাইরের কোনো চিন্তা করার সময় তার নেই । লকডাউনে তার কাজটা চলে গেলো । অফিস থেকে অনেক কর্মী আবার নিয়োগ হলো কিন্তু দেবেশের কাজটা হলো না । সারাদিন ঘরে বসে বসে মেজাজ টা খারাপ হয়ে থাকে । তাই যতোটা সম্ভব নীপা তাকে আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করে ।


আজ তর্ক যখন চরমে উঠলো নীপা বললো দেখো ... অভাবের সংসারে রোজ রোজ তোমার এই প্যান প্যান ভালো লাগে না , আমি সবসময় তোমার সাথে থাকি তোমার কাছে ই আমার সমস্ত সত্বা তবু কেন এরকম প্রতিদিন সন্দেহ করো ? বারবার সন্দেহে সম্মান নষ্ট হয় তখন ই একঝটকায় নীপার হাতটা টেনে সারা শরীর টা দেবেশে বুকের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো । ওয়াশিংমেশিনে কাপড় যেমন উল্টে পাল্টে দুমড়ে মুচড়ে জল ঝরায় তেমনি নীপার দেহ নিংড়ে যেন সমস্ত রস একদিনেই পান করতে চায় দেবেশ । কেনো বোঝো না গো তুমি শুধু আমার , শুধু আমার ... আমার তুমি , তোমাতে পূর্ণ আমি ।যখন তোমার কেউ প্রশংসা করে বা তুমি কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলো আমার রক্তে আগুন জ্বলে । মাথায় যেন কামারশালের হাতুড়ি। 

নীপাও তার শরীরের সবটা উজাড় করে দেয় দেবেশের কামনার কাছে । দেবেশের কামনা যে তারও চাহিদা ।এই জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ আমার চোখের তারায় ধরা পড়বে না দেব , আমার প্রতি নিশ্বাসে তুমি ,সেটা তুমি জানো ।তবুও কেন বারবার এমন কথা বলো যে হজম করতে কষ্ট হয়। আমাকে কষ্ট দিতে তোমার কষ্ট হয় না ?


প্রতিদিনের এই রুটিন .. দেবেশের মন থেকে কিছুতেই সন্দেহ দুর করতে সক্ষম হয় না নীপা । সন্দেহ সুন্দর সম্পর্কে চিড় ধরাতে একনম্বর হাতিয়ার । একদিন দেবেশ নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে সে বিশ্বাস আছে নীপার কিন্তু ততদিনে .........

হঠাৎ পায়ে কিসের ঝটকা কামড় উঃঃঃঃঃ মা গো .... ভোরের আলো মৃদুল বাতাস বয়ে গেলো ।দুটো কোকিল পালা করে ডেকে চলেছে । সূর্য উঠতেই দেখা গেলো আধখাওয়া সিড়িটার গায়ে ঘষটানো রক্তের দাগ ।



Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024