এদেশ
মুহা আকমাল হোসেন
এদেশে গরুর গন্ধ আছে
শুয়োরের গন্ধ আছে
কেবল মানুষের গন্ধ নেই
মানুষ পুড়ল! মানুষের শহর গ্রাম পুড়ল
মানুষের পেট থেকে বার করে নেওয়া হল মানুষের ভ্রুন
কেবল মানুষের গন্ধ নেই!
এদেশ
মুহা আকমাল হোসেন
এদেশে গরুর গন্ধ আছে
শুয়োরের গন্ধ আছে
কেবল মানুষের গন্ধ নেই
মানুষ পুড়ল! মানুষের শহর গ্রাম পুড়ল
মানুষের পেট থেকে বার করে নেওয়া হল মানুষের ভ্রুন
কেবল মানুষের গন্ধ নেই!
শোণিত-শোষণ
অনুপম বিশ্বাস
সাইরেনের তীব্র ধ্বনি বেজে উঠতেই
সাধারনেরা ক্রন্দনে নিজেকে লুকিয়ে রাখে,
বোম-গুলির আঘাতে একজনের পর একজন
অনেক সুখের জীবন হারাতে থাকে।
ধ্বংস লীলায় বাসভূমি
রক্ত মাখা শশানে পরিনত হয়,
মানুষের মনে গনগনে চিতার আগুন
তাজা রক্তের গঙ্গা বয়।
হিংসা-ক্ষোভ-লালসার
বশে মানুষ আজ পাথর,
গঙ্গায় হারিয়ে যায় শঙ্খ ধ্বনি
কৃপা লাভের আশায় কাতর।
জল হীন সমুদ্র ভরে ওঠে চোখের জলে
মাথাধরা,আবছা স্মৃতিপটে লেগে থাকা ১৯৯৩ সাল,
যুদ্ধ!যুদ্ধ!যুদ্ধ!ফুটন্ত রক্ত ছিটকে ওঠে,
জীবনের সংকেত আজও লাল।
পথের পাঁচালি
না সি র ও য়া দে ন
আজ যদি হেঁটে যাই দূরে, বহুদূরে
সবকিছু ছেড়ে, সুস্পষ্ট অন্ধকারে
সরলরেখার উপর ধুলো চিহ্নপথ
ধুলিমাখা পূর্বপুরুষের পায়ের ছাপ
ভালবাসা মিশে আছে, ঝড়ের প্রগতি
যাই আসি চিহ্ন রেখে পথেরই বসতি
সত্য থাকে নিত্য বেঁচে মিথ্যে হয়ে শব
বিশ্বাসই মিলায় পথ, বাকি সব রব
যে ছবি ছেয়ে আছে এখানে ওখানে
লম্পটের ছায়ামূর্তি কবরে শশ্মানে
সত্য কেন বজ্রকঠিন, মিথ্যে লঘু বোঝা
ঝেড়ে ফেলে কলঙ্ক দাগ পথ চলা সোজা
যে দায় তোমার নেই, আমার তা আছে
কুকর্মের দুর্গন্ধ ছড়ায় সংসার সমাজে
পরম উল্লাসে নাচো, সম্মতিতে উঠো
রক্তের বিষম স্বাদে হও কঠিন, কঠোর
পথের মেঠো সুরে বাজে না-মরার কাহিনি
বাঁচামরা পথ ধরে কণ্ঠস্বরে উঠে তীব্র ধ্বনি
সেই তিরে বিদ্ধ হও বিস্ফোরিত আঁখি,কলি
কি করে বোঝাই বলো,এ-সব পথের পাঁচালি ।
লক্ষ্যপথ
আনন্দ গোপাল গরাই
ভাবনাগুলো ভিড় করে এসে মনের আকাশে
খন্ড খন্ড কালো মেঘের মতো
মাঝে মাঝে ঢেকে দেয়
স্বচ্ছ চিন্তার সূর্যটাকে
অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই পথ
কানামাছির ভোঁ ভোঁ খেলার মতো
এদিকে ওদিকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাই লক্ষ্যটাকে
পাইনা নাগাল--- ফিরে আসি ব্যর্থ মনোরথে।
লক্ষ্যহীন জীবনের পথে
কতদিন হেঁটে যাব জানিনা
কখন ছুঁতে পারব লক্ষ্যের বুড়িটাকে
জানা নেই তাও। তবু থামব না পথে
পথ হোক যতোই বন্ধুর
বাঁধার কাঁটাবন পেরিয়ে
রক্তাক্ত পায়ে হেঁটে
একদিন পৌঁছে যাব
কাঙ্খিতের দেশে।
মন
সুশান্ত সেন
মনে বিভেদ মনে জ্বালা
মনে বসে আছে বিচিত্র কথামালা
দেশ আর নেই নেই সরস্বতী নদীর চলন
অবাধ্য অশান্ত এক মন।
যারা সম্পদ'শালি
তারা কেবলই
ডাক ধাক বাজনা বাজায়
টিকে থাকা বড় দায়।
বিদেশি অতিথি ও আসে
ঘন ঘন শ্বাস পড়ে ঘাসে
ফেবু দিয়ে গন্ধ
ভরে যায় আসে পাশে।
বিষ প্রয়োগে জাগে বিশ্বায়ন
রাহেনা হয়ে যায় একান্ত আপন।
বুক বেঁধে থাকি
ইলা সূত্রধর
কুয়াশায় ঢেকেছে পথ -
পারাপারের সেতু তাই ক্ষীণ হয়ে গেছে।
প্রসস্থ প্রান্তরে জড়ায় ধূসর বলয়,
বাষ্পীয় মেঘ নামে নদী বরাবর;
শিশিরেরা ডুব মারে অতল জলে।
তীক্ষ্ণ শীতের কাঁপন স্পর্শে বিদারক,
বেলা বেড়ে গেলে ঝরে বিবর্ণ পাতা;
নূপুরের মতো ধ্বনি মর্মর বাজে।
যাপনের ভিতর আরেক বাসভূমি খুঁজি !
জোয়ার ভাঁটার মতো এজীবনে সব,
ছন্দপতন হলে মাত্রা ব্যহত;
ভেঙ্গে পড়ে বাঁধনের হাল হকিয়ৎ।
জানি কাল হাজির হবে বসন্তবিলাপ !
সেজে ওঠে উপাচারে পালতোলা নাউ,
চেয়ে চেয়ে বসে আছি সময়ের কাছে;
ক্ষতের প্রলেপে শুধু আশা জেগে থাকে !
অযুত স্বপ্নগুলোর যত ছবি আঁকি -
তবু কেন কাতরতায় এমন বিভোর ?
শূন্যকে পূর্ণতায় আগলেছি প্রহর
নিদারুণ সকাল এলেও বুক বেঁধে থাকি !!
এবার আপনাদের সামনে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করছি পড়লেই বুঝতে পারবেন, জানতে পারবেন ঐ হাড়হাঞ্জার কতখানি মনি ইজ্জত। তবে মিঃ হাজরাকে আমি ছাড়িনি। আমি সূঁচের সুতোর মত ওর পিছনে ধাওয়া করেছি বা ফলো করেছি। এই প্রসঙ্গ একটু অন্য রকমের।
"লালবিহারী জুনিয়ার হাইস্কুল" এই স্কুলে নীল রতন রায় নামে এক ভিন জায়গার মানুষ কেরানী পদে জয়েন করেছেন মাস খানেক পূর্বে। নীলরতন ছেলেটি মেধাবী, পড়াশোনাতে ভালো। বহু কষ্টে, লড়াই করে চাকুরীটা যোগাড় করেছেন। পারত পক্ষে কোন মন্ত্রী ওকে মদৎ করেছেন, শোনা যায় নীলরতন সেই মন্ত্রীর ছাত্র ছিলেন। জয়েন করার দুই মাস পর হিড়িম্ব মহারাজ ও সাথে তিন জন দুনম্বরী মাকড়াকে নিয়ে বডি ফেললেন নীলরতনের ভাঁড়া বাড়ীর সামনে। নীলরতন প্রথমতঃ একটু হকিয়ে গেলেন। মি হাজরা একটা দামী সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটাকে বত্রিশ মিলি মিটার রেডিয়াস করে বেশ কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে নীলরতনকে বললো- মহাশয়ের কতদিন আগমন হয়েছে এই স্কুলে? নীলরতন বাবু বললেন,- সবে মাত্র চল্লিশদিন হলো। তিনি বুঝতে পেরেছেন এরা এক একটি পলিটিক্যাল মাকড়া। তবে এই লোকটা চেনা মনে হচ্ছে নামটা মনে পড়ছে না। এদের সাথে সংযত ভাবে কথা বলতে হবে। নতুবা নীলরতনের মাথা গরম হলে কোন মাকড়াকে পরোয়া করেন না। কোনদিন অন্যায়কে সমর্থন করেননি। শয়তানদের কথা বলার ঢঙ্গ দেখে মাথার উপর রক্ত উঠে গিয়েছিল। সেই সময় এক মহাপুরুষের বানী মনে পড়ে গেল "ক্রোধকা পাল্লা শিখো ব্যাটা"। ততক্ষনাৎ একশো ডিগ্রী হতে শূন্যতে রাগ নামিয়ে নিলো।
তোমার নাম কি? ব্যাটারা ভদ্রতাও জানে না। নম্র কন্ঠে বললেন,
- নীলরতন রায়। ট্যারাচে চোখে হাজরা বললো,
- আমাকে চেনো? নীলরতন বাবুর সরল উত্তর- না।
- আমার নাম হিড়িম্ব হাজরা পার্টীর লোকাল কমিটির সেক্রেটারী। আমিই এই অঞ্চলের সর্বেসর্বা।
তাই নাকি! ভালোই হলো আপনার সাথে পরিচয় হয়ে। ভেতরে আসুন, চায়ের ব্যবস্থা করি। হাজরা সিগারেট টেনে বললো,
তোমার বাড়িতে চায়ে চুমু দিতে আসিনি। এসেছি পার্টির স্বার্থে ডোনেশন নিতে। আরে এ পঞ্চা একে কত টাকা ডোনেশন দিতে হবে? পঞ্চা একটা মোটা খাতা খুলে বললো,
- গুরু বেশী না মাত্র কুড়ি হাজার পার্টি ফান্ডে, আর বার হাজার টাকা শিশুকল্যানের স্বার্থে। নীলরতন ধীর কন্ঠে বললো,
-এ এমন কিছু নয়। কবে দিতে হবে। অন্য আরেক চাচা বললো,
এখানে যখন চাকুরী করতে এসেছেন, তখন আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে চলতে হবে। পায়ের তালে তালে এগোতে হবে। মিটিং মিছিলে সামিল হতে হবে। তাহলে আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন।
নীলরতন ব্যঙ্গ স্বরে বললেন,- আপনারা এই অঞ্চলের মধ্য মনি আপনাদের কথায় না চললে মানে, জলে বাস করে কুমীরের সাথে বিবাদ করলে চলবে? ঠিক আছে আপনারা আগামী মাসের দশ তারিখে আসবেন বত্রিশ হাজার টাকা আমি রেডি করে রাখবো মাইনে পাই বা না পাই ও ব্যাপারে আপনাদের পরিশ্রান্ত হতে হবে না। ছুঁচোরা পয়সা পাবি? আপন মনে নীলরতন বাবু অংক কষে বসলো; একটা ছেদাম পাবি না। অনেক কাট খড় পুড়িয়ে এখানে এসেছি। নিজেকে শক্তিশালী করে এখানে এসেছি। জয়েন করার পূর্বে এখানে একবার এসেছিলেন। সেই সময় এই হিড়িম্ব হাজরার জালচিত্র কাঠামো, চারিত্রিক এমন কি ওর ঠিকুজি সমন্ধে জানতে পেরেছে। নীলরতন জানতো একদিন যে কোন সময় ঝড় আসতে পারে। এরা অর্থ পিপাসী, গৃধনু, লোভ এরা সমাজের শত্রু এরা মনুষ্যত্ব কে হারিয়ে ফেলেছে। এহেন নেই এরা করতে পারে না। প্রথমেই বলেছি প্রশাসন এদেরকে ছত্রছায়ায় রেখেছে। হঠাৎ হিড়িম্ব হাজরা সাঁড়া হাঁসের মত গলার কন্ঠস্বরে নীলরতনের তন্দ্রা কাটলো- কি ভাবছেন টাকা টা আজই দিলো ভালো হতো। নীলরতনবাবু বললেন- দশ তারিখে আসুন খালি হাতে ফিরে যাবেন না। ওদের মধ্যে ঝন্টু নামে ছেলেটি ভিলেনের মতো পোজ করে বললো,- ফিরে যাচ্ছি ঠিক কথা, কিন্তু কথার যেন নড়চড় না হয়। চলো গুরু বাদুরপুর যেতে হবে ওখানে একটা সভা আছে। ওরা সকলে প্রস্থান করলো। ওরা চলে যেতে পুনরায় দেশের চিন্তায় ডুব দিলেন নীলরতন বাবু। আমাদের দেশের এই চাল চিত্র শয়তান, বদলোক, বেইমানি, মাস্তানদের নিয়ে পার্টী। আপনারাই বলুন এরা কি কখনো দেশের ও দশের ভাবনা ভাববে? এরা এক এক জন লাইসেন্স ধারী গুন্ডা। এদের চাল চলন সাধারন মানুষের থেকে অনেক পৃথক। এরা কখনো মানুষের ভালো করতে পারে না। সেদিন ওদের নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না, কারন যেখানে মানুষের চরিত্রের ঠিক নেই সেখানে চরিত্রহীন মানুষরাই আধিপত্য পাবে সব চেয়ে বেশী।
ক্রমান্বয়ে দিন ঘনিয়ে এলো। মাসের দশ তারিখ। স্বয়ং হিড়িম্ব বাবু সাঙ্গদের নিয়ে পুনরায় বডি ফেললেন। বত্রিশ হাজার টাকা বিনা পরিশ্রমে রোজগার। ভাগ বাটোয়ারা তো হবেই। খুব অল্প কথায় বলি, "ছেলের নামে পোয়াতি বাঁচানো" নীলরতন বাড়ীতে ছিলেন। ওদের গুরু গম্ভীর ডাক শুনে বেরিয়ে এলেন। ঝন্টে নাটকের কায়দায় বললো, - আমরা এসে গেছি মাগুর ছাড়ুন চলে যাবো আমাদের তাড়া আছে। নীলরতন বললো আপনাদের আদেশ অমান্য করবে কার এতো ক্ষমতা আছে? টাকা নিয়ে আসছি। নীল রতনবাবু পুনরায় বাইরে এসে হিড়িম্ব বাবুর দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, হিড়িম্ব বাবু দেখুন তো আপনাকে কে যেন ফোন করেছেন। হিড়িম্ব মোবাইল টা হাতে নিয়ে হ্যালো করতেই একটা কাঁচা খিস্তি শোনালেন। - কেরে দুঃশাসন, কতদিন পার্টী করছিস? হিড়িম্ব ছেড়েদেবার পাত্র নয়। সেও গলার শির ছিঁড়ে জোরে বললো- তুই কেরে স্টুপিট? নীলরতন বাবু মোবাইলের স্পীকার ভালো রকম বাড়িয়েছেন তাই সকলে তাদের খিস্তি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে। - আমি তোর বাপ। আমি মন্ত্রী অসীম রায় বলছি, শোন শয়তানের দল এই সব মস্তানী ছাড়। তোদের মত মস্তানদের জন্য পার্টীকে একদিন ডুবতে হবে। তোদের মত জানোয়ারদের জন্য পায়ের নীচে মাটি থাকবে না। ফোনটা ছাড়বি না। শোন এই নীলরতনের গায়ে যদি একটা আঁচরের দাগ বসে তাহলে তুই যেখানে থাকিস না কেন, যে কোন গর্তে থাক না কেন ঠিক খোঁজ করে বের করবো। মনে রাখবি আমি অসীম রায় বলছি। মন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরা বেশ ভালো ভাবেই চেনেন ও জানেন। অমানুষের দল, এই রাজনীতি করছিস্? মিঃ হিড়িম্ব হাজরা বাবু মোবাইলটা নীল রতনের হাত দিয়ে বাঘের গর্জনের মতো আওয়াজ করে ততক্ষনাৎ কপূরের মতো উবে গেলো।
মিঃ হাজরা অসীম রায়কে ভালো ভাবেই চেনে। লোকটা ভীষন রাশভারী, অধিকাংশ মানুষ ভয় ও করেন আবার শ্রদ্ধা ও করেন। নীল রতনের সাথে লড়াই করা মুশকিল হবে। হয়তো ওর জন্য নিজের আধিপত্য না থাকতে পারে। এই ব্যাপারে লেজকে একটু গুড়িয়ে নিতে হবে। তবে সুযোগ পেলে নীলরতনের বাপের শ্রাদ্ধ করবে করে ছাড়বে। অদ্যাবধি কারো কাছে মাথা নত করেনি। ব্যাটা একেবারে বুকের মধ্যিখানে লাথি মারলো? বদলা সে নেবেই, তবে এ কথা ঠিক এই হিড়িম্ব হাজরাকে যে মাকড়া অপমানিত করবে তাকে সহজে ছাড়বে না। ফাটা রেকর্ড এর মতো অপমানের সুর মাথায় বাজতে থাকলো।
পতিত পাবন ওর গ্রামের ছেলে। ওরা একই সাথে পড়াশুনা করতো। পতিত পাবন মেধাবী ছেলে, পড়াশুনা ছাড়া ফুটবল, কাবাডি, জিমনাষ্টিক প্রভৃতিতে ভালোনাম করেছে। সেই জন্য স্কুলে সকলের প্রিয় পাত্র। হঠাৎ করে পতিত পাবনের প্রেমে পড়বে শ্যামলী ভাবতে পারেনি। একদিন ওদের উভয়ের প্রেম গভীরে গিয়ে ছিলো। কিন্তু এদের প্রেম ক্ষনভঙ্গুর হবে ভাবতে পারেনি পতিত পাবন। অবশ্য বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে কি শ্যামলী। যে দিন শ্যামলীর বিয়ের কথা বার্তা পাকা হলো সে দিন শ্যামলীর চরিত্র পুরো পালটে গেলো। পতিত পাবন সেদিন গভীর দুঃখের সাথে বলেছিল- আমাকে বিশ্বাস করতে পারলে না শ্যামলী! শ্যামলী প্রায় অহংভাব নিয়ে বলে ছিলো তোমার ঘরে আমাকে মানাবে না পতিত, কারন ঐ ভাঙ্গা ঘরে জ্যোৎস্নার আলো প্লাবিত হবে না, আমি যে জ্যোৎস্না সম। তুমি আসতে পারো। শ্যামলী ওদের বাড়ীতে দরজা বন্ধ করে ভেতরে প্রবেশ করলো। বুধুরামের কন্ঠস্বরে শ্যামলীর চমক ভাঙ্গলো।
কি ভাবছো বৌমা?
-ও কিছু না, বলুন আমায় কি করতে হবে।
- আমি যা বলবো তা তোমাকে করতে হবে। আমার মনের যে কামনা বাসনা তা চরিতার্থ করতে হবে। আমি তো জানি আমার ও হাজরা বাবু কথোপথন আড়ি পেতে শুনছিলে। তবে খুব ভালো করেছো। আমাকে নতুন করে বোঝাতে হবে না।
বুধুরামের অনেক দিন ধরে অন্তঃজ্বালা হচ্ছে। তার ইচ্ছে শ্যামলীকে একদিন বুকে চেপে ধরবে আদর করবে। কোন প্রকারে যদি কাছে টানার সুব্যবস্থা করতে পারে তাহলে বুধুরাম ষোল আনা কিস্তি মাত করবে। তার অদম্য লালসায় তাকে একদিন তার শয়ন কক্ষে নিয়ে যাবেই। এই চাকুরীটা করে দিলে ওকে হাতের মুঠোও পেয়ে যাবে। এক সময় ওর ভেতর যেন কাতলা মাছের মত লাফিয়ে উঠলো। সেই সময়ই শ্যামলীকে আঁকড়ে ধরে চুমু খেতে যাচ্ছিল; কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো বুধুরামের গিন্নী হারানী। বুধুরামের কাজে বাধা পড়তে দাঁত গুলোকে কড় মড় কড় মড় করতে করতে বললো- মাগী কিছু দিতে ও পারবে না আর নিতেও দেবে না। বুধুরাম অনেক সময় (রাত্রে) বিছানায় ছটপট করতে থাকে। তখন ইচ্ছে করে গলাটা টিপে বুড়ীকে শেষ করে দিব। কি আছে বুড়ির? বুকের হাড়গুলো দেখা যায়।
বুধুরাম এও জানে হরে রাম কোন কম্মের নয়। যাক ওসব কথায় মারো গুলি এখন কাজ হলো শ্যামলীকে কাছে পাওয়া, ও হাজরাকে দিয়ে আই.সি.ডি. এসের চাকুরী পাইয়ে দেওয়া। চাকুরীটা হলে শ্যামলীর মনটা ভালো থাকবে আর বুধুরামকে শ্যামলী গাম আঁঠা দিয়ে বুকে চিটিয়ে রাখবে। অনেক কথার গল্প তৈরী করতে করতে শ্যামলীকে বলে উঠলো- কি হলো বৌমা, চাকুরী করবে তো? শ্যামলী জানে ওর শশুর ও কলির কেষ্টটার মতলব টা কি। শ্যামলী চাকুরীর লোভটা ছাড়তে পারলো না। সরকারেী চাকুরী, তার সম্মান বাড়বে। তাই নম্র কন্ঠে বললো- আপনাদের ক্ষুধা নিবারন করার জন্য করতেই হবে। বুধুরাম প্রায় লাফ দিয়ে শ্যামলীকে ঝাপটে ধরে চুমু খেয়ে বললো- এই আমার বৌমা?- থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। মনে মনে ভাবতে থাকলো, তোমার মত মাকড়াকে আমি ভালো করেই চিনি ও জানি। আমাকে পাবার জন্য তুমি যে কোন কাজ করতে পারো। তোমার কাছে মা, বোন, বেটি কারও মূল্য নেই। আর মূল্য থাকবে কেন। আনন্দ করো, ভোগ করো স্ফুর্তি করো, মনের জ্বালা মিটিয়ে নাও। কামনার জ্বালা মেটাতে যদি অতি নিম্নপথের যাত্রী হতে হয় তাও হবে। আর হিড়িম্ব হাজরা, সে তো আরো লম্পট, চরিত্রহীন। ব্যাটার রুচিবোধ নেই। শ্যামলী জানে মিঃ কলির কেষ্টর বাহু বন্ধনে ওকে আবদ্ধ হতে হবে। নতুবা চাকুরীর জন্য কড়ি মাপতে হবে। শ্যামলীর টাকা পয়সা নেই। তার শশুর বুধুরাম হলো হাড় কিপটে মানুষ। দিনে কটি বিড়ি খাবেন তার হিসেব রাখেন। বৌমার ইজ্জতের চেয়ে টাকা হলো আসল সম্পদ। বুধুরাম এক সময় বলে উঠলো- তাহলে বৌমা হাজরা বাবুর সাথে কথা কই কেমন? শ্যামলী বললো-বলে দেবেন আগামী সোমবার দুপুর বারটায় ওর অফিসে হাজির হবো। আর আপনি ও এক কাজ করুন- শাশুড়ী মাকে ছলে বলে কৌশলে বাপের বাড়ীতে রেখে আসুন। তাহলে আপনারও সুবিধে হবে, কারন ডুবে সাঁতার যখন কাটবেন পিছনটান থাকবে না। তাহলে আমিও রাত ভোর আপনার সঙ্গিনী হতে পারবো। বুধুরাম ওর কথাশুনে কি যে করবে ভাবতে পারছে না। এটা স্বপ্ন, না বাস্তব! আবার আরেকটা কথায় চমকে উঠলো, পারেন তো কচি পাঁঠার মাংস ও বেশ দামী ইংলিশ বোতল নিয়ে আসবেন। প্রথম শয্যাতে ওটা বাদ থাকে কেন? বুধুরাম ওর কথা শুনে নানা রঙীন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। আনন্দে বিভোর হয়ে বললো- বৌমা, শ্যামলী ততক্ষনাৎ পাল্টা জবাব দিল, বৌমা নয় বল ডালিং। আমার প্রিয়তমা। বুধুরাম আনন্দে গদ গদ হয়ে বললো- ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমার নির্দেশ মতো কাজ হবে। বুধুরাম মনে অংক কষেছিলো, হাজরা বাবুর যদি সঙ্গিনী হতেই হয়, তাহলে কেনই বা ওর পূর্বে শ্যামলীকে কাছে টানবে না। শ্যামলী যখন নিম্ন কাজে ভাসতে যাবে তখন বুধুরামের আশাখানি কেন পূর্ণ করবে না। শ্যামলীর জীবন এই ভাবেই কাটতে শুরু করলো। অবশ্য তার চাকুরীটা হয়েছে।
এবার আপনারা বলুন, আমাদের সমাজটাকে কারা অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হায়রে বিধাতা এদের কি বলে বাহবা দেবে। শুধু শ্যামলী নয় আরো কতনারী এদের পাল্লায় পড়ে এই সব অপীতিকর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ বা এদের ফাঁদে পড়ে এই জীবন শুরু করছে। কেউবা আত্ম হননের পথ বেছে নিচ্ছে। এর জন্য দায়ীকে? আপনি, আমি, না ঐ জানোয়ারের দল!
দিন তারিখ মনে না থাকলেও সময় ছিলো। গ্রীষ্মকাল আমি মামা বাড়ী হতে ফিরছি। প্রখর রোদে পথ ক্লান্ত হয়ে ভাবলাম এই বটবৃক্ষের তলায় বিশ্রাম নিই। সুতরাং বিলম্ব না করে ঐ বটবৃক্ষতলায় বসে পড়লাম। আমার মত আরো কয়েকজন বৃক্ষতলে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ গামছা পেতে শুয়ে ঘুমোছে। আবার কেউ মাটিতে বসে গামছাটাকে ভাঁজ করে পাখা স্বরুপ ব্যবহার করে গরম থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। আমি ও একপাশে বসে ছিলাম সামনে চওড়া রাস্তা, ঐ দিকে অনেকে যাতায়াত করছে। রাস্তা পানে আমি তাকিয়ে আছি, হঠাৎ একটা ছেলে তার মুখ দিয়ে এমন অশ্লীল খিস্তিবের করলো যে একশো মিটার বেগে আমার কানে ধাককা মারলো। বললো- শালা ছোট লোকের বাচ্ছা একটা আই.সি.ডি.এস চাকুরীর জন্য এক পার্টির নেতার শয়ন কক্ষে বৌমাকে পাটাতে দ্বিধা করলো না। আমাদের জাতির কলঙ্ক। মুখ থেকে প্রায় ২০ গ্রাম থুথু বের করে মাটিতে নিক্ষেপ করলো। আমি কাছে গিয়ে ওর সাথে বন্ধু পাতালাম। আমার ধান্দা কি সকলেই বুঝতে পারছেন। তাছাড়া প্রতিমানুষের সাথে এমন ভাবে মিশে যাই সে আমার যেন আপন মানুষ হয়ে উঠে। কিছুক্ষন নানা আলোচনা করে তার ব্রেনটাকে এমন ওয়াশ করলাম যে, সে গলগল করে পুরো ঘটনা আমাকে প্রকাশ করলো। আমি লেখক, মানুষের কাছে যে ঘটনায় শুনি না কেন আমার মস্তকে ঠিক জায়গাতে আটকে রাখি যথা সময়ে কাজে লাগাই। ঘটনা কি, কোথাকার তা প্রকাশ করছি। মন দিয়ে পড়ুন। ঘটনা হলো "পানুড়ী” একটি ছোট্ট গ্রাম পনের-কুড়ি ঘর মিলে গড়ে উঠেছে এই পানুড়ী গ্রাম। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ব্রেন একেবারে ঝক ঝকে কাঁচের মতো পরিস্কার। তবে বুধুরামের বুদ্ধি খাঁসা। নিজের স্বার্থ ছাড়া একপা এগোই না। বুধুরামের রিং মাষ্টার হলেন স্বয়ং ধর্মরাজ হিড়িম্ব হাজরা। বুধুরাম হাজরা বাবুকে ভগবানের মত মান্য করেন। বহুদিন ধরে পার্টি করছেন বিশিষ্ট ভদ্রলোক বুধুরাম। তিনি জানেন হাজরা বাবুকে যদি সন্তুষ্ট করতে পারেনকোন দিক দিয়ে, তাহলে কেল্লা ফতে। একদিন কথায় কথায় বলে ফেললেন বুধুরাম - আপনার মতো মানুষ হয় না হাজরা বাবু। আপনি কথায় কথায় চাকুরী দিতে পারেন, আত্মায় আঘাত থাকলে সর্বনাশও করতে পারেন। আই.সি.ডি.এসের চাকরী, পার্শ্ব শিক্ষকের চাকরী আপনার হাতের মুঠোয়। তবে গরীবের স্বার্থে কোন দিনই গা ভাসান না। ওকথা শুনে হাজরা বাবু বললেন- শোন বুধুরাম, কথায় আছে না, "ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর?" যুগ অনুপাতে কাজ করতে হয়। তাছাড়া বহু লড়াই করে ঐ আসনটি নিজের আয়ত্বে এনেছি। তুমি টাকা দাও তোমার ও পরিবারের সদস্যর চাকুরী হতে পারে। আই.সি.ডি.এস এ পাঁচটি পদ খালি আছে। বুধুরাম বললো- তাহলে আমার বৌমার একটা হিল্লে করুন হাজরা বাবু।
টাকা দিলে হয়ে যাবে, সত্তোর থেকে আশি হাজার লাগবে।
হাজরা বাবু ওর পরিবর্তে যদি কোন কিছু উপহার দেওয়া যায়।
অন্য কি উপহার দেবে?
হাজরা বাবু খুব ভালো উপহার দেবো। আপনার বাম কানটা একটু আমার দিকে এগিয়ে দিন চুপি চুপি বলবো। শুধু আপনার আর আমার মধ্যে থাকবে। হাজরা হলো এক নম্বরের শয়তান। "সাপের হাঁচি যেমন বেদে চেনে," তেমনি বুধুরামের মুচকি হাসিতে কিসের ইঙ্গিত রয়েছে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। সে জন্য ততক্ষনাৎ বাম কানটা বাড়িয়ে দিতে, বুধুরাম, ফিস্ ফিস্ করে বললো,- বৌমা আপনার পাশে পর পর কয়েকটা রাত অর্থাৎ নিশিযাপন করলে নিশ্চয়ই আপনি খুশি হবেন? চরিত্রহীন হিড়িম্ব হাজরা আলতো ভাবে গালে একটা চাপড় মেরে বললো- তোমার বৌমার চাকুরী প্রথমেই হবে। এতো সুন্দর উপহার দেবে আমি না করতে পারি? তবে বৌমাকে আমার অফিসে সোমবার দিন দুপুর বারটার সময় নিয়ে যাবে ফর্ম ফিলাপ হবে আর দর্শন করাও হবে। বুঝছো বুধুরাম কথাটা মগজে রেখ ঠিক দুপুর বারটা। হাজরা এইখানে কথাকে যবনিকা করে খুশী মনে রওনা হলেন। আপনারা সকলেই বুধুরামকে বাহবা দিন। তবে বিশ্বাস করুন বুধুরাম বাবুর বাবা হাইস্কুলের অংকের টিচার ছিলেন। ঐ তল্লাটে সকলেই তাঁকে সম্মান দিতেন। মানুষটা গুরু গম্ভীর হলেও মনটা ছিলো পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন এবং পরউপকারী। এক সময় তিনি দেশের কাছে লিপ্ত ছিলেন। এক কথায় স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঐ জন্য অঞ্চলগত ভালোনাম ছিলো। কিন্তু এবার মনে হয় নিজের ও পরিবারদের মানইজত সব খোয়াবেন। মান যশের চেয়ে অর্থই হলো তার কাছে প্রধান। বর্তমান যুগে চায় টাকা। টাকা না থাকলে দুনিয়াটাই ফাঁকা। তাই সেদিন কথায় কথায় তার বৌমা শ্যামলীকে বললেন, শোন বৌমা, যে কাজটা করাবো একমাত্র তোমার ও আমার মধ্যে থাকবে। দ্বিতীয় প্রাণীর যেন কর্নগোচর না হয়। বর্তমানে টাকাই হলো পরম রতন ও পরম ধন। অবশ্য এও জানি অর্থই হলো অনর্থের মূল। কিন্তু ঐ পূর্বপুরুষদের বানী এখন অচল পয়সার মত। যার অর্থনেই তার জীবন কয়লা। শুধু নিম পাতার মত তেঁতো মনে রাখবে। তাছাড়া সুযোগ যখন হাতের মুঠোর মধ্যে তখন তাকে কাজে লাগানো বুদ্ধি মানের কাজ। তুমি বুদ্ধিমতী ও শিক্ষিতা তোমাকে বোঝান আমার কাজ নয়। লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েরা যে কোন চাকুরীর জন্য শত কষ্ট ছাড়া দিনের পর দিন হতাশ হয়ে, মনের মধ্যে গভীর বেদনা নিয়ে নিঃস্পভ হয়ে দিনকাটাচ্ছে। বারংবার জীবনটাকে ধিককার দিচ্ছে, শুধু একটাই প্রশ্ন, ঈশ্বর কেন এই মাকড়াদের সমাজে এনে সমাজ টাকে ধ্বংস করে দিলো, বেকারত্ব বাড়ালো। এক শ্রেণীর মানুষ হাত পা তুলে গৌরাঙ্গের মতো নাচানাচি করছে আর এক শ্রেণী অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বুভুক্ষু হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শ্যামলী ওর ভাষন শুনে উত্তর দিতে চাইছিলো কিন্তু পারলো না নিজের দুর্বলতার জন্য। কারন কোন এক দিন ওর খুড়তুতো দেওর (ঠাকুরপো) দিবাকরের সাথে এক আপত্তিকর সম্পর্ক করতে চেয়েছিলো। তার কারন হলো সে দিন শ্যামলীর ফুলশয্যার রাত্রে তার স্বামী হরে রাম তাকে সরাসরি বলে ছিলো- দেখ বৌ, আমি তোকে কোন দিন দেহ ও মনের সুখ মেটাতে পারবো না। কারন আমি এক রকম হিজড়া বলতে পারিস। আমি বিয়ে করতাম না, এক মাত্র মার জন্য আমার বিয়ের মালা পড়তে হয়েছিল। তোর রূপ যৌবন, উন্মাদনাকে শান্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি অথর্ব, নপুংসক, আমায় ক্ষমা করিস। সেদিন রাত্রে ঘর হতে বেরিয়ে গিয়েছিল। সেই রাত্রে হরেরামের কথা শুনে ক্ষোভে, দুঃখে মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করেছিলো শ্যামলী। ঈশ্বর তার প্রতি কেন অবিচার করলেন! কেন এ ভাবে প্রতারনা করলেন! তবে কি পতিত পাবনকে অপমানিত করার জন্য ঈশ্বর তার প্রতিশোধ নিলেন!
মিনিট কয়েকের মধ্যে ওঁরা সকলে অভিরামের আঙিনায় গিয়ে হাজির হলেন। মোদিনী বাবু সাঁড়া হাঁসের গলায় চিৎকার করে ডাকলেন- অভিরাম বাড়ীতে আছিস? অভিরাম বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে হুংকার দিয়ে বললে- এতো চিৎকার করার কি প্রয়োজন, বলুন কি চাইছেন? তিনি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ হয়ে বললেন, তোর মতো প্যাঁটার কাছে কি চাইতে আসবো রে বদমায়েসটা, তোর গালে এমন একটি চড় মারবো প্যান্টে পাঁচ বার পেচ্ছাপ করতে বাধ্য হবি। বিধবা ভাতা কি তোর পয়সা? কমলাদেবীর বিধবা ভাতা পাবার হান্ড্রেন পারসেন্ট হক আছে। চোখের সামনে দেখছিস, পাশে দাঁড়াতে শিখেছিস? যে মহানুভব ব্যাক্তিটি কমলাদেবীর বিধবাভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তাকে কলঙ্কিত করে কুকুর তাড়া করলি। শোন আমার কথা, যদি ষড়যন্ত্র করে কমলাদেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করার চেষ্টা করিস্ তাহলে মনে রাখবি সব কটা শুয়োরকে প্রকাশ্যে কুকুরের মতো গুলি করে মারবো। আমি ভারত মাতার সন্তান বহু কস্টে ভারতকে স্বাধীন করেছি। তোদের মত জানোয়ার নই আমাকে ভারত সরকার পিস্তল দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তোদের পার্টির আদর্শবান নেতা হিড়িম্ব অর্থাৎ হাড় হাঞ্জাকেবলবি এই মেদেনী সরকার
প্রকাশ্যে বলেছেন এই এলাকায় কোন মানুষের যে কেউ পার্টির লোক যদি ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে এই মেদিনী সরকার তাদের সব কটাকে মায়ের ভোগে পাঠিয়েদেবে। কথাটা মনে থাকে যেন। মেদিনী বাবু নিভারানীকে বললেন- তোমার কোন ভয়নেই মা। আমাদের দল সর্বদাই তোমার বা তোমার পরিবারের পাশে থাকবে।
এরপর হতে কোন রূপ ঝঞ্ঝা বিদ্ধস্ত এর মুখে পড়তে হয়নি। তবে যাই বলুন না, এরা লিপিতে বেহায়া শত অপমানে জর্জরিত হলেও নোংরামী করতে ছাড়ে না। হয়তো মেদিনী বাবুর এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে। অবশ্য প্রশাসন এদের ধারে পাশেই থাকে। তাই এরা ভাবে এদের বিশাল ক্ষমতা। এদের মলাটের নীচে প্রচুর নোংরা জমে আছে। ধীরে ধীরে পড়তে থাকুন আর মানবিকতার দিক দিয়ে কি করা
কর্তব্য মনকে জিজ্ঞেস করুন। শুধু হাড়হাঞ্জা নয়, বহু ব্যাক্তি দাদাগিরি করে, বেইমানী করে সমাজে কেউটে হয়ে বসে আছে।
অবশ্য হিড়িম্ব হাজরার গপ্পো শুরু করছি। ওকে সহজে ছাড়া যাবে না; ঐ সব অমানুষদের কত কাহিনী যে জমে আছে, একটু ধৈর্য্য ধরুন জানতে পারবেন। হাজরা বাবুর গপ্পো আরেক টা শুরু করা যাক।
বৈশাখ মাস্ প্রখর রোদের তাপে মানুষের জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠেছে। মাসের শেষ হতে চললো, না হোল কালবৈশাখী ঝড় ও কয়েক পশলা বৃষ্টি। বেলা সাড়ে তিনটা হবে হাজরা মশায় অটোতে বসে বারংবার তাগাদা করতে শুরু করলো- আরে ভাই একটু জোরে চালাও, নইলে গরমে শরীর ঝলসে যাচ্ছে। আসলে শরীর ওর ঝলসে যাচ্ছে না, মহুয়ার আকর্ষনে সে অতীষ্ট হয়েছে, ভেতরটা ওর টবগ টগ্ করছে কখন মহুয়ার কাছে পৌঁছুতে পারে এবং মহুয়ার মধুখাবার জন্য ভ্রমর হয়ে চিটিয়ে থাকতে পারে। মহুয়ার কাছে গেলে মহুয়া থর থর করে কাঁপতে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা ওকে অতীষ্ট করে তুলে। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়েই এই নরপশুটার কাছে আত্ম সমর্পণ করতে হয়েছে।
যথা সময়ে হাজির হলো ১০ নং অফিস কোয়াটারে, কলিং বেলটা বেজে উঠতেই মহুয়া চমকে উঠলেন। সে জানতে পেরেছে ঐ পশুটাই এসেছে। কপাট খোলতেই শোবার পালঙ্কে টান হয়ে শুয়ে পড়লো। একটু পর পাশ ফিরে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো- জানো মহুয়া তোমাকে কাছে পেয়ে আমার প্রানের উচ্ছ্বাস, প্রানের উদ্মাদনা কত গভীরে চলে গেছে আমি একজন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসারের বৌ এর পাশে শুয়ে প্রতিদিন কামনা চরিতার্থ করছি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো কবে তোমার পাশে শোব। সেইদিন আমার এসে গেছে। জানো মহুয়া, পিয়াসা আমাকে তৃপ্তি দিতে পারে
না। মহুয়া খুবই ভদ্র, এবং বনেদী বাড়ীর মেয়ে। কোন দিন অন্যায়কে প্রশয় দেয় নি। সর্বদাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছে। কিন্তু (একমাত্র) স্বামীর জন্য হিড়িম্ব হাজরার পাশে শুতে বাধ্য করেছে। কেন বাধ্য করেছে এ ঘটনা পাঠক/পাঠিকাদের কাছে এখন প্রকাশ করবো না। একটু ওয়েট করুন আপনাদের সামনে ঐ ঘটনা ছায়াছবির মত তুলে ধরবো। তার পূর্বে যে ঘটনা এখানে প্রকাশ করা জরুরী বা প্রযোজ্য সেটাই করছি।
।। দুই।।
পর্ব - 2
তোমাদের মদত করে না! তোমরা দুঃস্থ, তোমরা উর্পাজনহীন, বিধবা ভাতা, বার্দ্ধক্য ভাতা এগুলোতো পেতে পারো? নিভারানী ঢোক গিলে বললো- সে পাটীতে দরদী লোকনেই নবীনদা। তাদের বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। আমাদের পরিবারের মধ্যে নেতা রয়েছে, তিনি সিদ্ধপিঠ মহাপুরুষের বানী আওড়ান। বারংবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। আমরা ভিক্ষে করি, দশজনের কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিই এটাই চায় তারা। নবীন বাবু বুঝতে পারলেন নিভারানীর ভাষায় কিসের ইঙ্গিত রয়েছে। হঠাৎ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে,- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? নিভারানী বললো,- দিয়াপুর চললাম অন্নের সন্ধানে। একজন প্রতিবেশী সন্ধান দিয়েছেন একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গিয়েছে দুটো বাচ্চাকে কে রেখে, তাদের দেখা শুনা বা পরিচর্চার ভার নিতে হবে। বিনিময়ে মাসিক বেতনদেবে, কতদেবে তা ঠিক হয় নি। নবীন বাবু বললেন- তুমি বাড়ী ফিরবে কবে?
- মনে হয় সাত দিন পর। কিন্তু আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন কেন? নবীন বাবুর উত্তর, তোমাদের বি.ডি.ও তে সাত মাস হলো জয়েন করেছি। বাড়ীতে এসেই আমার অফিসে যাবে, আমার নামে খোঁজ করলে যে কেউ আমার অফিস রুম দেখিয়ে দেবে। তবে তোমার শাশুড়ীর ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড জেরক্স করে সঙ্গে রাখবে। তোমার শাশুড়ীর হয় বিধবা ভাতা নতুবা বার্দ্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করবই। নিভারানী কাতর কণ্ঠে বললো- তাহলে খুবই উপকার হয় নবীনদা। - তুমি চিন্তা করোনা যে কোন ব্যবস্থা হবেই। আর অপেক্ষা করা যাবে না, বাস এসে গেছে। তুমি অফিসে এসো কিন্তু। নবীনবাবু বাসে উঠলেন। নিভারানী ওর গমন পানে তাকিয়ে রইলো। আপন মনে বলতে থাকলো ঈশ্বর আছেন।
_______________________________________
যে পাখিগুলো যাযাবর তাদের যেতে দাও। মুক্তির আকাঙ্ক্ষা সবার আছে। ওরা যাযাবর। ঠিক আছে, কিন্তু ওরা সঙ্গীহীন নয়। ওরা নিজের প্রজাতির কাছে গাঢ়। ওরা ভাসতে জানে, ওরা ভাসাতে জানে তবে একসাথে।
তুমি সুদূর নীলনদ থেকে যে প্রেমের হীরা কুড়িয়ে এনেছিলে তার প্রেমের অন্তরালে মোহগ্রস্ত হয়ে সে অচিন পাখি তোমাকে আদর না দিয়ে যাযাবর হয়ে গেছে। তার চাতক প্রাণা দৃষ্টি তোমাকে বেআকুল করে দেবে, যখন তুমি ঘুরতে ঘুরতে হাঁপিয়ে যাবে তখন তুমিও আবার সঙ্গহীন যাযাবর। এবার একটু বিশ্রাম তোমাকে শিক্ষা দেবে। তুমি এবার আঁকড়ে ধরবে সাহিত্যকে, ক্ষতি নেই। তোমার অপেক্ষাতেই সাহিত্য আছে। তুমি ওকে আদর করো, একটু পড়ে নাও, কোলে তুলে গ্রাস করো। দেখবে তুমি ক্ষণিকের শান্তি পেয়েছো। ঐ ক্ষণিকের শান্তি নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবে ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন। তাই ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ম্যাগাজিনকে সাদরে গ্রহণ করুন। সাহিত্যে থাকুন। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
ধন্যবাদান্তে
ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা সম্পাদকীয় বিভাগ