Tuesday, May 30, 2023

এক কামরার ফ্ল‍্যাট - সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় || Eek Kamrar Flat - Sudipta Chattyapadhay || Short Story || ছোটগল্প

 এক কামরার ফ্ল‍্যাট

      সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় 



জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিল সুমনা। কাঁচ ভেদ করে আলো ঢুকতেই তীর্থজিৎ এর ঘুমটা ভেঙে গেল। 

আঃ ঘুমোতে দাও। পায়ের কাছে রাখা চাদর টা মাথা পর্যন্ত টেনে নিল তীর্থ। 

বাথরুমে ঢুকে পড়ল সুমনা। সকাল সকাল স্নান সেরে পুজো করা অভ‍্যেস।

কি হচ্ছে তীর্থ! এবার ওঠো। আট টা বাজতে চলল। বাশি বিছানা, বাশি কাপড় সুমনার একদম সহ‍্য হয়না। বাধ্য হয়েই বিছানা ছাড়তে হল তীর্থকে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত মোবাইলে চ‍্যাট করেছে। ঘুমটা ভাল হয়নি। এত সকালে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না কিছুতেই। 

একটা সিগারেট ধরাল। টয়লেট গেলেই একটা সিগারেট তাকে ধরাতে হয়। 

এক কামরার ছোট্ট ফ্ল‍্যাট। তারই মধ্যে সামান্য জায়গা নিয়ে ঠাকুরের সিংহাসন। দক্ষিণ দিকে ছোট্ট ব‍্যালকনি। বিছানার পাশেই বড় জানালা। ছোট্ট ফ্ল‍্যাট টা মনের মত সাজিয়েছে সুমনা। 

কতবার বলেছি তোমায়, বাথরুমে সিগারেট খাবে না। সারা ঘর এক বিচ্ছিরি গন্ধে ভরে যায়। সুমনা চিৎকার দেয়। 

টয়লেটে সিগারেট না খেলে আমার টয়লেট হয়না। জানোই তো সেটা। তবু চিৎকার করাটা তোমার স্বভাব।

উঃ রোজ এক কথা! আমাদের কি করে হয়। মনে মনে ভাবল সুমনা।

দশ বছরের বিবাহিত জীবন। কোনো সন্তান নেই। মেলা থেকে একটা গোপাল কিনেছে। সারাদিন তার সেবায় নিজেকে ব‍্যস্ত রাখে সুমনা। রোজকার ছোট বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ আছে। বন্ধুত্ব আছে। মান-অভিমান আছে। কিন্তু সত্যিকারের স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক তাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি কখনো। তাই ছোট্ট গোপাল মূর্তির মধ্যেই সুমনা খুঁজতে থাকে তার মাতৃত্ব। 

বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে বেশ কয়েকটা 

মিসড কল। ফোনটা ঘোরাতে থাকে তীর্থজিৎ। প্রিয়াঙ্কার ফোন। প্রিয়াঙ্কা এখনো তাকে ফোন করে। মাঝে অবশ‍্য দীর্ঘ দিন তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ফেসবুকে বন্ধুত্ব হবার পর ফোনটা আরও বেশি আসছে। খুব আপসেট আছে প্রিয়াঙ্কা। সবে তাদের ডিভোর্সটা হয়েছে। ঘুরে একটা ফোন করবে ভেবেও ফোনটা বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে নিল তীর্থজিৎ।

তোমার চা।

সিঁথি ভর্তি সিঁদুর আর লাল শাড়িতে আজও তাকে কী সুন্দর লাগে। চা টা নিতে গিয়ে হাত টা ধরতে ইচ্ছে হল। নিজেকে সংযত করে নিয়ে চায়ে চুমুক দিল তীর্থজিৎ। 

কোথাও বেরোচ্ছ? তীর্থজিৎ পিছু ডাকলো।

হ‍্যাঁ, আজ তো রবিবার। গানের ক্লাস আছে।

তোমার গোপাল সেবা হয়ে গেল। কথাটা বলেই তীর্থজিৎ এর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।

ও ভাবে বলো না তুমি। গোপাল আমার সন্তান। আমার ঈশ্বর।

তীর্থজিৎ বিশ্বাস করে না। কমিউনিস্ট দের ঈশ্বর বিশ্বাস করতে নেই। কলেজ মাঠে লাল লাল বলে চিৎকার করতে করতে এটাই বুঝেছিল সে। তারপর কলেজে পার্ট টাইম জব করতে করতে বাবার আদেশ।

'কন‍্যাদায়গ্রস্থ এক পিতাকে কথা দিয়েছি আমি। আমার পছন্দ মত মেয়েকেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে।'

মাথাটা ঝিম ঝিম করছিল। এক প‍্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলেছিল সারা রাত ধরে। 

সিগারেট খাও? ফুলসয‍্যার রাতে নব বধুকে অপমান করার জন্যই তীর্থজিৎ সিগারেট টা ধরিয়ে ছিল। ভয়ে বিছানার এক কোনে সিটিয়ে ছিল সুমনা। সিগারেটে একটা টান দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,কিসে অনার্স। 

নব বধুটি কাঁপা গলায় বলল, মাধ্যমিক।

লাল স্কাট পরে প্রিয়াঙ্কা যখন তার সাথে দেখা করতে আসত, তীর্থজিতের মনে হত পৃথিবীর সর্ব সুখ তার কাছে ধরা দিতে এসেছে। দৌড়াতো প্রিয়াঙ্কা। লাল স্কাট টা হাওয়াতে উড়তো। উঃ কী ড্রেস পরো প্রিয়াঙ্কা! এই ভাবে দৌড়াবে না। নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।

ঠোঁট ব‍্যাকাতো প্রিয়াঙ্কা। কি ড্রেস পরেছি। বুড়িদের মত শাড়ি পরে আসব বুঝি! 

তারপর নিজেই হেসে লুটিয়ে পড়ত তীর্থজিতের বুকে। 

বাবা, বিয়েটা আমি করতে পারব না। খুব সাহস করে কথাটা বলেছিল।

তোমাকে ত‍্যাজ‍্য পুএ করা হবে তীর্থ। আমি একজন মেয়ের বাবাকে কথা দিয়েছি। বাবার মুখের উপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি তীর্থজিৎ। কলকাতায় চলে আসে। একটা ফ্ল‍্যাট ভাড়া নিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে বিয়ে করে এখানেই থেকে যাবে ঠিক করে। একটা টেলিগ্রাম। বাবাকে দেখতে ছুটে যায়। স্টোক। 

তীর্থ বিয়েটা করে নে। কথার খেলাপ হলে তোর বাবা বাঁচবে না। মায়ের কাতর আবেদন। অবিশাপ লাগবে তীর্থ। মেয়ের বাবার অবিশাপ।

রবিবার বাড়িতেই থাকে তীর্থ। আগে পার্টি অফিস যেত। এখন আর ভাল লাগে না। রবিবার সুমনা বাড়ি থাকে না। সে সপ্তাহের এই একটা দিন গান আর ছাত্র - ছাত্রী নিয়েই কাটিয়ে দেয়। একদিন এই গান শুনেই তীর্থর বাবা সুমনাকে পছন্দ করেছিলেন। বিশ্বজিৎ বাবু বৌমার গান শুনতে ভালবাসতেন। বৌমার সেবা আর ভাল ভাল রান্না খেয়েই তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন।

একটা রাত তীর্থজিৎ সিগারেটে টান দিতে দিতেই কাটিয়ে দিয়েছিল। সারা ঘর ধোঁয়া আর বিচ্ছিরি এক গন্ধ। নব বধু নাক মুখ বন্ধ করে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।

সকালেই বেরিয়ে পড়েছিল তীর্থ। তার এক কামরার ফ্ল‍্যাটে। প্রিয়াঙ্কার কাছে। প্রিয়াঙ্কার অভিমান ভাঙিয়ে ছিল।

ঐ মেয়েটার সাথে আমার কখনও বনিবনা হবে না। ও আমার যোগ্য নয়। বাবা সুস্থ হয়ে উঠলেই আমি ডিভোর্স নেব। একটু অপেক্ষা কর প্রিয়াঙ্কা।

স্ত্রীর মর্যাদা পায়নি সুমনা। ঘরের কাজ আর শ্বশুর,শাশুড়ির সেবা করেই তার দিন কেটে যায়। মাঝে মাঝেই শাশুড়ির গলায় অভিযোগের সুর। কী মেয়েমানুষ! স্বামীকে ধরে রাখতে পারল না।

প্রিয়াঙ্কাকে কলবেক করে তীর্থ।

হ‍্যালো,

আমি তীর্থ।

কেমন আছো তুমি?

প্রিয়াঙ্কার গলাটা কান্নায় ধরে আসে। ছেলেটাকে ভর্তি করতে হবে। অপারেশন হবে।

উত্তেজিত হয়ে ওঠে তীর্থ। কী হয়েছে তোমার ছেলের?

ডাক্তার বলেছে, লাংসে ফুটো আছে। অপারেশন ছাড়া কোনো উপায় নেই।

তোমার বর কোথায় প্রিয়াঙ্কা?

জানোই তো সব। ও বিদেশে। কোনো দায়িত্ব নেবে না বলেছে।

কেন? ছেলেটা তো তারও। অন্তত বাবা হিসাবে!

বিশ্বাস করে না। তোমার আমার সম্পর্ক জড়িয়ে!

নিজেকে সংযত করে নেয় প্রিয়াঙ্কা।

বড্ড বিরক্ত লাগছিল তীর্থর। মাথাটা গরম হয়ে ওঠে তার। যত্ত সব ভুল ধারণার শীকার। নীচ মেনটেলিটি।

প্রিয়াঙ্কা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। ফোন কেটে দেয়।

তীর্থ আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না। বাবা আমার বিয়ের ঠিক করেছে। তুমি ডিভোর্সটা কী আদৌ দিতে পারবে? তোমার বাবা,মা তোমার স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। অতএব আমি আমার বাবার পছন্দ করা ছেলের সাথেই বিয়েটা করছি।

চিঠিটা পেয়েছিল তীর্থ। ছুটে গিয়েছিল সে। তখন প্রিয়াঙ্কাদের বাড়িটা ফুলে সাজানো।

এই কিছু দিনের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা তার জীবনের চরম সিদ্ধান্ত টা নিয়ে নিল। যখন তীর্থ এন.সি.সি ছেলে, মেয়েদের নিয়ে কলেজের বাইরে।

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই চমকে গিয়েছিল সুমনা।

ছেলেকে দেখেই সুহাসিনী দেবী কেঁদে ফেলেছিলেন। অভিমানে বিশ্বনাথ বাবু ছেলের সাথে কথা বলেন নি। বৌভাতের পর দিনেই কাউকে কিছু না বলেই ছেলে চলে গিয়েছিল কলকাতায়। কোনো খোঁজ নেয়নি। নব বধূর সেবায় যত্নে দিন কাটাচ্ছিলেন সুহাসিনী দেবী ও বিশ্বনাথ বাবু। হঠাৎ ছেলেকে এভাবে সামনে দেখে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা অভিমান, রাগ, অভিযোগ জল হয়ে বেরিয়ে আসতে চায় দুই অসহায় বৃদ্ধ, বৃদ্ধার চোখ দিয়ে। তীর্থ বেশ কিছুদিন থেকে যায় বাবার রাগ আর মায়ের অভিমান ভাঙানোর জন্য। কলেজের চাকরিটা পারর্মানেণ্ট হয়ে যায় তীর্থর। পার্ট টাইম থেকে ফুলটাইম। নিজেকে অধ্যাপক হিসাবে ভাবতে বেশ ভাল লাগে তীর্থর। সে আর পিছনে ফিরে তাকাতে চায়না। ভাবতে চায়না প্রিয়াঙ্কার কথা। সময়ের সাথে সাথে মায়ের অভিমান ভাঙলেও বাবা এখনো কঠিন হয়ে আছে। 

নিজের স্ত্রীকে যেদিন মেনে নেবে,সেই দিনেই তোমার সাথে কথা হবে।

বাবার এই দৃঢ়তার কাছে ডিভোর্সের কথাটা আর উচ্চারণ করতে পারেনি তীর্থ। 

সুমনার গানের সুরে সারা ঘর ভরে উঠত। যত দিন এগিয়ে আসতে লাগল সুমনার গুনে মুগ্ধ হতে লাগল তীর্থ। গানটা ভাল গাও তুমি। বলেছিল তীর্থ। নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিল সুমনা। ধন্যবাদ শব্দটা ধাক্কা দিয়েছিল তীর্থজিৎ কে। একদিন সুমনার দুটো চোখে চোখ রেখেছিল তীর্থ। শান্ত নিস্পাপ সরল দুটো চোখ। ডুব দিতে ইচ্ছে হয়েছিল তার সেই দুটো চোখে। বড্ড একা লাগে। নিজেকে অপরাধি মনে হয়। প্রিয়াঙ্কা আজ অন্য কারুর। ফুলসয‍্যার রাতে যে মেয়েটিকে দেখেছিল,সে ছিল ভীতু। এখন যে মেয়েটি তার সামনে দাঁড়িয়ে সে আত্মসম্মানে পরিপূর্ণ এক নারী। তার অবর্তমানে তার মা, বাবার নিঃস্বার্থ সেবা করে গেছে। গানের স্কুল চালিয়েছে। অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

একটা নীল কালারের শাড়ি পরে প্রিয়াঙ্কা এগিয়ে আসছে।

কলেজের বেশ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল মুহুর্তের মধ্যে। প্রিয়াঙ্কার ছুটে আসা। জড়িয়ে ধরা। প্রথম চুমু। নিজেকে সংযত করে নিল তীর্থ। শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেট টা পা দিয়ে পিষে ফেলল। দীর্ঘ সময় পর দেখা। সময়ের সাথে সাথে প্রিয়াঙ্কার মধ্যেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের সেই চঞ্চলা প্রিয়াঙ্কা কেমন যেন শান্ত হয়ে উঠেছে। শরীরে মেদ জমেছে। মুখে পড়েছে বলিরেখা। সারা মুখে চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট। প্রিয়াঙ্কা মেসেজে লিখেছিল দেখা করার কথা। বিয়ের পর প্রিয়াঙ্কার সাথে এই প্রথম দেখা। প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়ে যাবার পর তীর্থ তার ব‍্যাপারে মাথা ঘামায় নি। তার নতুন জীবনে ঢুকে পড়েনি কখনো।

চা খাবে। তীর্থ বলল।

একটু ভেবে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলল, চলো না আমাদের সেই আগের রেস্টুরেন্টে। যেখানে আমরা কফি খেতাম।

আর কোনো কিছুই আগের মত নেই প্রিয়াঙ্কা। তীর্থ দেখল, জবাবটা পাওয়া মাত্রই প্রিয়াঙ্কার মুখটা ফ‍্যাকাসে হয়ে গেল।

চায়ে চুমুক দিল তীর্থ।

ঠোঁটের কাছে চায়ের কাপটা নিয়ে গিয়েও ঠোঁটে ঠেকাতে পারল না প্রিয়াঙ্কা। জানো তীর্থ, প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠিয়েই ও ওর দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে। বিদেশে ওর নতুন সংসার হয়েছে। সেখান থেকে দীপ কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারবে না। 

দীপ, তোমার বরের নাম?

হুম।

 তোমাদের ডিভোর্সটা হয়ে গেছে? 

দীপ বিদেশ চলে যাবার আগেই। 

তুমি এখন কোথায় থাকো?

বাবা চলে যাবার পর, মায়ের কাছেই ছেলেকে নিয়ে থাকি। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জয়েন করেছি। ফেসবুকে তোমাকে দেখার পর, এই রকম এক ক্রাইসিসে তোমাকেই-----।

আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা তো বন্ধু। এত হেজিটেড করছো কেন! অপারেশন এর ডেট কবে?

কাল। আজ এই মাত্র ছেলেকে ভর্তি করে তোমার কাছে আসছি। বড্ড একা লাগছে তীর্থ। প্রিয়াঙ্কার চোখের কোনে জল। 

খুব দুর্বল হয়ে উঠল তীর্থ। একটা অজানা কষ্ট ঘিরে ধরল তাকে। নিজের অজান্তেই প্রিয়াঙ্কার হাতের উপর হাত রাখল তীর্থ।

ঘড়ির কাঁটায় আটটা। এখনো সুমনা বাড়ি ফেরেনি। ছাএ-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গানটা বেশ ভালই গায় সুমনা। চা টা বসাল তীর্থ। চিনি আর চা পাতা দিতে দিতে ভাবল, আজ প্রিয়াঙ্কার সাথে তার দেখা করার কথাটা কি বলবে সুমনাকে! তারপর নিজেকে বোঝাল, না থাক। সে শুধু শুধু চিন্তা করবে। প্রিয়াঙ্কার সাথে তার একটা অতীত আছে। সুমনা জানে। কিন্তু সে এ বিষয়ে কোনো কৌতুহল দেখায়নি। প্রশ্নও করেনি কোনো দিন। একসময় তীর্থ কিছু টাকা দিয়ে সুমনার দায় ঘাড় থেকে নামাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাবা,মার মৃত্যুর আগে তারই অসুস্থ বাবা,মাকে সে যে ভাবে সেবা করেছে, সে ছেলে হয়েও তা করতে পারেনি। আস্তে আস্তে যত দিন গেছে সে নিজেও সুমনার উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ভালবেসেছে। বলা হয়ে ওঠেনি। কলিং বেলের আওয়াজ। সুমনাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। চা টা এগিয়ে দেয় তীর্থ। সুমনা কাপড় ছেড়ে সন্ধ‍্যে দেয়। গোপালের শয়নের ব‍্যবস্থা করতে হবে। গোপালকে শয়ন দেয় সুমনা। 

 কী সব ছেলেমানুষী! পুতুল খেলা। ভাবতে থাকে তীর্থ। অন্য দিনের থেকে সুমনাকে আজ বেশিই ক্লান্ত লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে সে চিন্তিত। সুমনার চিন্তার কারণ সে জানে না।

কিছু জিজ্ঞাসা করতে তার আজ ইচ্ছে হচ্ছে না। সেও খুব চিন্তায় আছে। প্রিতমকে নিয়ে। কাল ছেলেটার অপারেশন। সুমনাকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না তীর্থ। কুকারে সুমনা খিচুড়ি বসায়। সিটি পড়তে থাকে। সারা ঘর খিছুড়ির গন্ধে ভরে যায়। মনটা ভাল হয়ে যায়। খিদেটা আরও বাড়তে থাকে তীর্থর।

হসপিটালের বেডে প্রিতম শুয়ে। ছ'বছরের একটা বাচ্চা। প্রিতম নামটা তীর্থর খুব পছন্দের ছিল। কলেজ মাঠে প্রিয়াঙ্কাকে বলেছিল, তাদের ছেলে হলে প্রিয়াঙ্কার নামে নাম মিলিয়ে রাখবে প্রিতম। কিন্তু তার দেওয়া নামটাই বা কেন রাখল প্রিয়াঙ্কা! প্রিতমকে দেখার পর থেকেই সে আলাদা একটা টান অনুভব করছে। মায়া ভরা দুটো চোখ। নাকটা যেন তারই মত।

হসপিটালের মধ্যে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। টেনশেনটা বেড়েই চলেছে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। প্রিয়াঙ্কা হসপিটালের ভেতরেই আছে। একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে। সিগারেটে টান দিতেই তীর্থ দেখে, গেটের কাছে সুমনা। সে এদিকেই এগিয়ে আসছে। তীর্থ কিছু বলার আগেই প্রিয়াঙ্কা ঝাপিয়ে পড়ে তার বুকে। তীর্থ অপারেশন সাকশেসফুল। এই মাত্র ডাক্তার জানালেন। 

সুমনা তুমি এখানে! তীর্থ বেশ অবাক হয়েই সুমনার দিকে তাকিয়ে থাকে। তীর্থর বুক থেকে মুখ তোলে প্রিয়াঙ্কা। মুখে এক গাল হাসি নিয়ে বলে, ইনি আমার ছেলের গানের শিক্ষিকা। 

এনার কাছে গান শিখতে গিয়েই প্রিতম জ্ঞান হারায়। অনেক চিকিৎসার পরেই জানা যায় প্রিতমের এত বড় অসুখ।  

তীর্থ ভেবে পায়না কী বলবে। সুমনার পাশে দাঁড়ায়। প্রিয়াঙ্কা,এ আমার স্ত্রী।

 রাত গভীর হতে চলল। তীর্থর চোখে ঘুম নেই। হসপিটাল থেকে ফেরার পর সুমনার সাথে কোনো কথা হয়নি। সুমনা কখন বাড়ি চলে এসেছে তীর্থ তা টের পায়নি। প্রিতমের জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত তীর্থ হসপিটালেই থেকে গিয়েছিল। কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে ছেলেটার উপর। প্রিতমকে স্পর্শ করলে তীর্থ এক আলাদা শান্তি পায়। সুমনার সামনে এভাবে তার অতীত চলে আসবে ভাবতে পারেনি সে। সুমনা আজ গোপালকে শয়ন দেয়নি। রান্না ঘরে রান্নার কোনো চিহ্ন নেই। বিছানার এক কোনে পড়ে আছে সুমনা। কীসের এত অভিমান, বোঝে না তীর্থ। প্রিয়াঙ্কার কথা গোপন করেছে বলে! কিন্তু তাদের মধ্যে তো কোনো স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক নেই। শুধু বন্ধুত্বের দাবী নিয়েই তারা এই এক কামরার ফ্ল‍্যাটে থেকে গেছে দীর্ঘদিন ধরে। 

খোলা ব‍্যালকনির সামনে এসে দাঁড়ায় তীর্থ। অনেক দিন আগে সুমনা একবার বলেছিল, তার এক ছাত্রের লাংসে ফুটো ধরা পড়েছে। অপারেশন করতে হবে। 

কোন ছাত্র, তীর্থ জিজ্ঞাসা করেনি। সময়ের সাথে সাথে ভুলে গেছে সুমনার বলা ছাত্রের কথা। এই এক কামরার ফ্ল‍্যাটটাতে প্রিয়াঙ্কার সাথে একের পর এক রাত কাটিয়েছে তীর্থ। প্রিয়াঙ্কা বাধা দিয়েছে। তীর্থ শোনেনি। আর কিছু ভাবতে পারছে না তীর্থ। দীপ প্রিয়াঙ্কাকে সন্দেহ করে ডিভোর্স দিয়েছে।

মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছে। সুমনার সিগারেটের গন্ধ সহ‍্য হয়না। সিগারেট টা ধরাতে গিয়েও ধরাতে পারল না তীর্থ। সুমনার কাছে শুনেছিল, ফুলসয‍্যার রাতেই তার ছাত্রের মাকে তার স্বামী সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছিল। তার মানে সেদিন সুমনা প্রিয়াঙ্কার কথাই বলছিল। আর কিছু ভাবতে পারল না তীর্থ। সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। রাগে মাথাটা ঘুরতে শুরু করল। কেন কিছু বলল না প্রিয়াঙ্কা! এত বড় কথাটা গোপন করে গেল। বিশ্বাস করতে পারেনি তাকে। ভরসা করেনি। প্রিয়াঙ্কা বুঝেছিল, তীর্থ কখনোই পারবে না তার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করতে। স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স নিতে।  

কিছুতেই ঘুমোতে পারছে না তীর্থ। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সুমনা ঘুমিয়ে পড়েছে। তীর্থর ইচ্ছে হল,সুমনাকে ডাকতে। জড়িয়ে ধরতে। চিৎকার করে বলতে, আমি তোমাকে ভালবাসি। প্রিয়াঙ্কা আমার অতীত। তুমি আমার বর্তমান। 

আস্তে আস্তে তীর্থর চোখে ঘুম নেমে এল। একটা রাত সে চেয়ারেই কাটিয়ে দিল। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। জানালা বন্ধ। ঘরে আলো ঢোকেনি। চায়ের গন্ধ নেই। গোপালের থালায় পিঁপড়েতে বাসা বেঁধেছে। আয়নায় বেশ কিছু টিপ চেটানো। চিরুনিতে কয়েকটা চুল। তীর্থর ঘুম ভাঙে। তার সাধের ফ্ল‍্যাট টা শ্রীহীন হয়ে আছে। তীর্থ খুঁজতে থাকে সুমনাকে। ফোন করে। রিং বেজে যায়। হাতে পায় একটা চিঠি।

'আমি চললাম আমার গানের জগতে। গানই আমার সাধনা। দীপ প্রথম রাতেই জেনেছিল, প্রিয়াঙ্কা তার প্রেমিকের সন্তানের মা। তুমি তোমার সন্তানের মাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিও। '

সুমনার চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরে তীর্থ। নিজের অজান্তেই গোপালের সামনে হাত জোড় করে বসে পড়ে সে। কোলে তুলে নেয় ছোট্ট গোপালকে। কিছুই চাইতে পারে না। শুধু গোপালের মধ্যেই তীর্থ দেখতে পায় প্রিতমের মুখটা।

                       

ক্লিওপেট্রার নাতি - প্রদীপ সেনগুপ্ত || Kliopetrar Nati - Pradip Sengupta || Short Story || ছোটগল্প

 ক্লিওপেট্রার নাতি

প্রদীপ সেনগুপ্ত



তাকে দেখি রোজ, বাস স্ট্যান্ডের শেডের কোনে। নিজস্ব পরিপাটি সংসার। গুটি কয়েক ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, একটা ছেঁড়া মশারী। 

লোকে ওকে দুরছাই করলেও 

আমি ওকে বেশ পছন্দ করতাম। 

ওকে দেখলে আমার মনে হত এক ক্লান্ত রাজ রমনী - বিশ্রাম নিচ্ছে প্রাসাদের অলিন্দে। 


আমি ওর সম্পর্কে কিছু বললে ক্লিওপেট্রা বলেই উল্লেখ করতাম। 

তাকে কখনই ভিক্ষা নিতে দেখি নি, 

বরং, ওর দিকে ছুঁড়ে ফেলা পয়সা

নির্বিবাদে নিয়ে যেত কিছু ক্ষুদে ভিখারী,

ও কিন্তু কোন দিন ফুঁসে ওঠে নি, 

কোন দিন অশ্লীল গালও দেয় নি তাদের উদ্দেশ্যে -বরং সম্রাজ্ঞীর মতই তাকিয়েছে এক বুক তৃপ্তি গায়ে মেখে ।  


শুধু, একটা ব্যাপার খুব নাড়া দিত , 

পরণের কাপড়টা। 

একদিন, বৌয়ের কাছ থেকে 

একটা সিল্কের কাপড় নিয়ে এলাম। 

ওর হাতে দিতেই এমন ভাবে তাকালো -

যেন, এ' কাপড় কোন সম্রাজ্ঞীর যোগ্যই নয়! 

কিন্তু, পরদিন দেখি কাপড়টা মাঝখান থেকে কেটে দুই ভাগ করে একভাগ এক অদ্ভুত দক্ষতায় নিজের শরীরটাকে 

আবৃত করেছে, অন্য অর্ধেক কোথাও হয় তো ফেলেই দিয়েছে, অপ্রয়োজনীয় মনে করে ! ও এখন আমাকে ওর কাছের জন বলেই মনে করে বোধহয় -

সে টা আমি ওর দৃষ্টি দেখেই বুঝি। 


সেদিন সারাটা সকাল মেঘলাই ছিল, তবে বৃষ্টি আসার কোন ইংগীত ছিল না। বাড়ি ফেরার সময়ে হঠাৎই বিনা ইশারাতেই বৃষ্টি শুরু হল। দৌড়ে বাস স্ট্যান্ডেই দাঁড়ালাম। রোজকার মতই সে তার জায়গায় বসা, তবে বেশ বিচলিত । এক পুলিশ কর্মী দাঁড়িয়ে পুল ভ্যানের অপেক্ষায়। অধ্যাপক মিত্র বাসের জন্য আর দুটি ছেলে মেয়ে কলেজে যাবার জন্য। হঠাৎ খেয়াল হল সবার পিছনে একটি মেয়ে সামনে ঝুঁকে দুটো হাত শানের উপরে দুই দিকে প্রসারিত করে বসে আর ক্লিওপেট্রার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার উপর। বুঝতে কষ্ট হল না মেয়েটির পূর্ণ গর্ভাবস্থা।খেয়াল করলাম আমি আসার আগেই উপস্থিত সবাই ব্যাপারটা বুঝে গেছে। কিন্তু, এক অদ্ভুত নির্লিপ্ততায় তারা তখনও অপেক্ষা করছে গন্তব্যে যাবার জন্য। হঠাৎই মেয়েটি প্রবল চিৎকার করে উঠল এবং সবাইকে চমকিত করে অনায়াসে আমার ক্লিওপেট্রা দ্বিধাহীন ভাবে এক টানে নিজের পরণে আমার দেওয়া শাড়ির অর্ধেক খুলে ওর সামনে দাঁড়িয়ে নিখুত ভাবে ঝুঁকে পড়ল মেয়েটি শরীরের নিচের দিকে। অসম্ভব ক্ষ্রিপ্ততায় কি যেন টেনে তুলল উপরের দিকে - দু'তিন সেকেণ্ডের মধ্যে সমস্ত স্ট্যান্ড মুখরিত হল এক নবজাতকের ক্ষীণ কান্নায়! চারিদিকের সবাই পরাজিত সৈনিকের মত দাঁড়িয়ে! শুধু সম্রাজ্ঞীর কণ্ঠস্বর সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল। দুই হাতে রক্ত মাখা, অসম্ভব দৃঢ়তায় শূণ্যে শিশুটাকে নিয়ে চিৎকার করতে লাগল, 

' আর ভয় নেই! রাজা এসে গেছে, আমার নাতি! তোমরা সবাই নেমে দাঁড়াও, জায়গা ছেড়ে দাও ওর ! '  

এক হুঙ্কারেই যেন রাস্তায় নেমে দাঁড়াল প্রশাসন, নেমে দাঁড়াল শিক্ষা আর আধুনিক সমাজ! 

সমস্ত সমাজের মুখে যে থাপ্পর এসে পড়ল -- তার জ্বালা ভুলতে বহু কাল লাগবে। 


বাড়ি ফিরলাম মিষ্টি নিয়ে, গৃহিনীকে বললাম, 

' নাও, মিষ্টি মুখ করো - ক্লিওপেট্রার নাতি হয়েছে। অনেক কাজ বেড়ে গেল আমাদের। '

ভাগ্যের পরিহাস - দেবাশীষ দেবনাথ || Vagger Porihas - Debasish Devnath || Short Story || ছোটগল্প

 ভাগ্যের পরিহাস

দেবাশীষ দেবনাথ


          একটি সত্য কাহিনী

                               ১

আমি দিপক নাথ, পুলিশে চাকরি করি , চাকরি জীবনে নানা জায়গায় নানান অভিজ্ঞতা ও নানা ঘটনা আমার সামনে ঘটে যাওয়ার স্মৃতি থেকে তার একটা এখানে তুলে ধরলাম।

আমার তখন পুরুলিয়ায় পোষ্টিং।পুলিশ ক্যাম্পের পাশে পুলিশ কোয়াটারে কতগুলো পুলিশ  ভাড়া থাকত।তার মধ্যে কল্যাণ ভট্টাচার্য্য নামে একজন পুলিশ ভাড়া থাকত। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন, ওনার স্ত্রী ও মাও দেখতে খুব সুন্দরী  ছিলেন।আমি মাঝে মাঝে  ওদের বাড়িতে গিয়ে ভাল মন্দ খেয়ে আসতাম। আর ভাল মন্দ রান্না হলেও আমার ডাক পড়ত।কিন্তু একটা দুঃখ এই যে কল্যাণ দার কোনো সন্তান ছিলনা। তার পাশে থাকতেন অশোকনগর গোলবাজারের শিব নাথ বাগচি। শিবুদার দাদা ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। শিবু দা দক্ষিণ ২৪পরগণার জয়নগরের কোনো একটা থানার সাবইন্সপেক্টর। বাগচিদার বাড়িতেও দু তিনবার গিয়েছি।একদিন কি হল একটি জীর্ণশীর্ণ চেহারার ভদ্র মহিলা বাগচিদার সাথে সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পে এল।কোথা থেকে এসেছে?

অশোকনগর থেকে এসেছে,রাতে ব্যারাকে কোথায় থাকবে, তাই শিবুদা কল্যাণদাকে বলে কল্যাণদার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। ।সঙ্গে একটি বাচ্চা ছেলে পাঁচ ছয় বৎসরের আর একটি মেয়ে দু তিন বৎসরের।

বাড়ি হচ্ছে বিহারের হাজারিবাগে রামগড় বলে একটি জায়গায়।তো রাত্রে কোথায় যাবে? সকালে বাসে তুলে দিলে চলে যাবে। তো আমি রাত্রে তখন কল্যাণদার বাড়িতে বসে ছিলাম। কল্যাণদার আসল বাড়ি বেহালা।

সেখানে আমি হাজার বার গিয়েছি, কত থেকেছি খেয়েছি। তারপর আমার  একটু ইন্টারেস্ট হল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনার বাড়ি বলছেন অশোকনগর তো আপনি এখানে কি করে এলেন?

তখন মহিলাটি বলল, আমার বাড়ি বাংলাদেশে, আমরা খুঁব গরীব ছিলাম, আমরা তিন বোন কারোরই বিয়ে সাদি হচ্ছেনা। ঠিক মত খাওয়া জুটত না।এটা ১৯৮৫—৮৬সালের কথা।তো আমার স্বামী বাংলাদেশ গিয়েছিল কাজ করতে,মানে ভারত থেকে অনেক ট্রাক ড্রাইভার বা্ংলাদেশে ট্রাক নিয়ে যায় তো।আমার বাবার সাথে পরিচয় হয়। তখন সে বলে আমার দেশে অনেক জমি জায়গা  এবং বাড়িতে কাজ কম্মের লোকও ঠিক মত নাই,দেখাশোনারও লোকের অভাব। আমার বাবাও তার কথায় পটে যায়, আমার বাবা ওই বিহারিটার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। দেখতে শুনতে বিহারীরা যেমন হয় তেমনই আর কি।বিয়ে করে আমাকে নিয়ে তার বাড়ি হাজারিবাগের রামগড় নিয়ে চলে আসে।গিয়ে দেখি আমাকে নিয়ে উঠল একটা মাটির বাড়ি।জমি জায়গা আছে । সেখানে জোয়ার আর ভুট্টা চাষ হয়।

জমিতে ধান টান হয়না, কিছু সব্জি টব্জি চাষ হয়।বাড়িতে গরু আছে দুধও হয়।শ্বশুর শাশুড়ি ছিল, দেওরও ছিল। কি আর করব আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম, কারন আমি তো বাঙালি, বাবা একটা বিহারী সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। এই চিন্তা করে মাঝে মাঝে মনে মনে খুব কান্না করতাম। কিন্তু কিছু করার তো নেই, আমি তো বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে পড়েছি। এবং একজন মহিলা হয়ে আমি কি করতে পারি।

কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর বিহারিদের আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়ল। রাতদিন অত্যাচার মারধর। স্বামীটা মদ খায়। তাই সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তো বাপের বাড়িতে ক দিন রাখবে, তারাও তো গরীব তাই শিবুদার সাথে পরিচয় ছিল তাই শিবুদাকে বললাম শিবুদা আমাকে পুরুলিয়া পর্যন্ত নিয়ে চলুন, ওখানে রাতটা থেকে সকালে বাস ধরে বাড়ি চলে যাব।তাই শিবুদার সঙ্গে এখানে আসা।তো আমার কি মনে হল আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে এখান থেকে তোমার বাড়ি যেতে কত সময় লাগে। সে বলল এখান থেকে সকাল সাতটায় বাস ছাড়ে আর বিকাল পাঁচটা ছটায় রামগড় পৌছে দেয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে তোমাদের দিকে ডাকাতি টাকাতি কেমন হয়?বৌটা বলল না ডাকাতি হয়না তবে বিহারিরা তো গুন্ডাগিরি করে, ওখানে সবাই বিহারি, আমিই একমাত্র বাঙালি আমাকে খুব কষ্ট করে থাকতে হয়।

তো আমার কি ইন্টারেস্ট হল আমার তখন বয়েস কম  আমি বললাম আপনার সাথে যদি আমি যাই কোনো অসুবিধা হবে?           

                                     ২

বলল নানা এমনি কোনো অসুবিধা নাই।চলুন তা হলে আমার বাড়ি দেখে আসবেন। কল্যাণদা নিষেধ করল, ধ্যাত চিনিস না জানিস্  না কোথায় যাবি?

আমি ভাবলাম দেখিই না গিয়ে, পুলিশে চাকরি করি,পকেটে টাকা পয়সার অসুবিধা নাই, তাই সকাল বেলায় বাসে  উঠে মহিলাটার সাথে তাদের বাড়ি রামগড় রওনা হলাম। পুরুলিয়ার বর্ডার শেষ তারপর পাহাড় শুরু। পাহাড় আর পাহাড়, পাহাড় আর পাহাড়, যাচ্ছি তো যাচ্ছি এর যেন শেষ নেই।

মহিলাটি যা বলেছিল সে রকমই বিকাল পাঁচটার দিকে বাস থেকে নামলাম।তারপর যেখানে পাহাড় শেষ তারপর কিছু ফাকা মাটি, সেখানেই তার বাড়ি। বেশ কিছু সময় হেটে হেটে তারপর বৌটার বাড়ি গিয়ে পৌছালাম।

সেখানে গেলে বৌটার বাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসা করল এটা কে?বৌটা আমাকে শিখিয়ে  নিয়ে গিয়েছিল যে বাড়ির লোকে জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আমার ভাই আমাকে পৌছে দিতে এসেছেন। আমাকে আগেই বলে দিয়েছিল যে আপনি বলবেন না যে আপনি পুলিশে চাকরি করেন।

আমি বললাম আমি অশোকনগরেই থাকি চাকরি করি পুরুলিয়াতে হেল্থ ডিপার্টমেন্টে। তো দিদি আসছিল আমাকে বলল আমি যখন পুরুলিয়ায় যাচ্ছি  দিদিকে একটু পৌছে দিতে।

যা হোক রাতে রুটি ডিম দুধ টুধ দিল খেলাম , কিন্তু ঠান্ডার দিন কি ঠান্ডা, আমাকে একটা কম্বল দিয়েছে তাতে কি আর ঠান্ডা মানে?

ঘরের মধ্যে বিশ্রী গন্ধ, তো বৌটা পরিস্কার করে দিল, একটা মাটির ভাড়ে আগুন জালিয়ে দিল।পরের দিন ভাত রান্না করেছে সাথে ফুল কফি টমাটো  ওখানে শিতকালে সব্জিটা বেশ হয়। থাকলাম খেলাম, এভাবে দু দিন কেটে গেল।

তো ঘুরে টুরে দেখলাম এলাকাটা পুরোই নকশাল এলাকা। কিন্তু এদিকে তখন মাওবাদী নেই। তো ওরা বলল ওরা মাঝে মাঝে জঙ্গল থেকে নকশালরা  আসে আর বেশ কিছু ভেট নিয়ে চলে যায়।

এভাবে দিন দুই ওখানে ঘুরলাম ফিরলাম।দুদিন পরে রাতে ঘুমিয়ে আছি তো তখনও আমার ঘুম ঠিক গাঢ় হয়নি, তো বাপ বেটা আলোচনা করছে, যে ও আদমি কৌন হ্যায় জরুর জানানা কা সাথ কুছ হ্যায়। 

তাই রাতের বেলা ভয় লাগল যে নকশাল এলাকা এরা নকশাল কিনা কে জানে?

আমাকে আবার মার্ডার টার্ডার করে দেবে নাকি। যা হোক রাতটা জেগে জেগে ঘুমালাম, ঘুম কি হয় নাকি ওই আরকি ঝিমালাম।

তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে বললাম উঠে বললাম ভাই হাম ঘর যা রাহা হ্যায়।

বলল যা রাহা হ্যায় আমি বললাম হা যা রাহা হায়।ওখান থেকে বেরিয়ে বাস ধরে পুরুলিয়া এসেছি।

এর পর পাঁচ সাত বছর কেটে গেছে।

তখন আমি আবার খড়গ্পুরে চলে এসেছি। তো কোনোও কারনে আমি একদিন আদ্রা স্টেশনে কাজে গিয়েছিলাম, তো দেখছি ওই মহিলা ,দুটি বাচ্চাকে স্টেশনে শুইয়ে দিয়ে কলের থেকে জল আনতে গিয়েছে। বড় বাচ্চাটা তখন প্রায় দশ বারো বছর হবে ছোটোটা আর একটু ছোটো।

মহিলাটার তখন উস্কো খুস্কো চুল প্রায় পাগলির মত চেহারা, আমি দেখে চিনতে পেরেছি।তখন আমি তার কাছে গেলাম গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম হামকো পহেচানতা হায়, সে বলল নেহিতো, তো আমি বললাম 

আচ্ছাছে দেখ, তুমকো ঘর অশোকনগরমে হ্যায় না?

তো বৌটা বলল যে হা বাবু অশোকনগরমে হ্যায়।

আমি বললাম তুমকো ইয়াদ নেহি একরাত তুম পুরুলিয়ামে থা, তুমকো সাথ তুম্হারা ঘর গিয়া থা।

তখন বলল ও—দীপক বাবু?

                                    ৩

আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোমার এই অবস্থা কেন? তখন ও বলল কি বলব বাবু আমার স্বামীর অত্যাচারটা দিন দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌছাল যে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, তো একদিন বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসলাম।

আসার পথে ট্রেনে এক বাঙালির সাথে পরিচয় হয়েছিল, সে আদ্রাতে থাকে।

সে বলল এখন কোথায় যাবি চল আমার সাথে, আমার কাছে থাকবি,তো তাকে বিশ্বাস করে তার কাছে তার সাথে আসলাম। সে আমাকে মাস ছয়েক তার কাছে রাখল, আমাকে সে সম্পুর্ন ব্যবহার করল।এখন তার খাই তার পরি তাকে তো সন্তুষ্ট রাখতেই হয়।এর মাস ছয়েক পর একদিন সে পালিয়ে গেল।কোথায় উধাও হয়ে গেছে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আমি আর কি করি আদ্রা স্টেশনের পিছনে একটা ঝুপড়ী মত বানিয়ে তার ভিতর থাকি,আর দিনের বেলায় স্টেশনে ভিক্ষা করি, আমি বললাম ছেলেটা?বলল ছেলেটা ট্রেনে ঝাট টাট দেয়।আর মেয়েটা আমার কাছে থাকে। দিনের বেলায় স্টেশনে থাকি আর রাত হলে ঝুপড়িতে যাই রান্না বান্না করি খাই দাই, আবার দিনের বেলায় হলে স্টেশনে এসে বসি। এভাবেই চলে যাচ্ছে,। 

তো আমি বললাম তো তুমি অশোকনগর যাওনি? সে বলল গিয়েছিলাম, কি হবে –বাবা মারা গিয়েছে, মা মারা গিয়েছে, একটা ভাই ছিল বিয়ে করেছে। তো গিয়েছিলাম আমাকে ঢুকতেই দিলনা।

তাই আবার এখানে চলে আসলাম। এখন এখানেই থাকি, তো আমি পকেট থেকে একশ টাকা রের করে তাকে দিয়ে আসলাম।যে এটা রাখ। একটা কাপড় টাপড় কিনে নিও।

এঘটনাটা ১৯৯২-১৯৯৩সালের।

তারপর অনেকদিন ২০১০সালে আঠারো বছর পরে আবার আদ্রা গিয়েছিলাম পি এম ডিউটিতে, মমতা ব্যানার্জি এসেছিল,মমতা ব্যানার্জি তখন রেল মিনিস্টার।তখন মাওবাদী যুগ চলছে।

তো রাতে ব্যারাকে শুয়ে আছি হঠাৎ কি মনে হল, ভাবলাম একটু চা খেয়ে আসি। হাটতে হাটতে গেলাম স্টেশনের দিকে।

তারপর চা খাওয়া হলে ওয়েটিং রুমে বসে আছি,তো দেখছি ওই মহিলার ছেলেটা ওখানে যে সব ভিখারিরা থাকে, তাদের সঙ্গে বসে গাঁজা খাচ্ছে, তো আমি দেখে চিনতে পেরেছি।

ছেলেটা তখন বেশ লম্বা চওড়া হয়ে গেছে, দাড়িগোঁফ উঠেছে।আমি বললাম এই শোন তুই আমাকে চিনতে পারছিস?তখন ছেলেটার বয়স প্রায় চব্বিশ পঁচিশ হয়ে গেছে।লম্বায় খুঁব একটা বাড়েনি।তখন ও বলল না, আমি বললাম তোর বাবার বাড়ি রামগড় না? তোর মামাবাড়ি অশোকনগরে না।

ছেলেটি বলল হ্যা, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোর মা কোথায়?ছেলেটি বলল মা তো মেদিনীপুর জেলে আছে।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন, সে বলল আমার পরের বাবাটা আবার ঘুরে আসছিল।আবার আমাদের সঙ্গে থাকত, মদ টদ্ খেয়ে খুঁব অত্যাচার করত।

মা সহ্য করতে না পেরে একদিন পাথর দিয়ে মাথা থেতো করে দিয়েছিল।

সেই কেসে  মার যাবজ্জীবন জেল হয়ে গেছে। সেই থেকে মা জেলে আছে।জিজ্ঞাসা করলাম তোর বোনটা?বলল বোনটার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আসানসোলে আছে।আমি জিজ্ঞাসা করলাম জামাইটা ভাল?বলল হ্যা ভাল।মাঝে মাঝে আসে। কি করে জামাইটা?ওই কন্ট্রাটটারের আন্ডারে কাজ টাজ করে, তুই গাঁজা খাচ্ছিস কেন?বলল কি করব বাবু সারাদিন কাজ টাজ করি ওতেই সারাদিন চলে যায় তারপর একটু নেশা টেশা করি।থাকিস কোথায়?এই স্টেশনেই তো আছি বহু বছর ধরে।

আমি বললাম তুই মেদিনীপুর জেলে যাস?বলল যাই মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিয়ে আসি।

আমি যখন মেদিনীপুর  এ পোষ্টিং হলাম এই জি আর পি থেকে, ওখানে তিন বছর ছিলাম, তো আমাকে তো প্রতিদিন আসামি  নিয়ে  কোর্টে যেতে হত।

তমলুক কোর্ট, ঝাড়গ্রাম কোর্ট, মেদিনীপুর  কোর্ট বাকুড়া কোর্ট।

                                   ৪

তো একদিন হঠাৎ মনে পড়ল যে এই জেলেই তো মহিলাটা আছে।ওখানে জেল কয়েদি গুলো সমস্ত লেখালেখি করে।জেলার বাবুর সামনে একটা অফিস আছে ওখানে।

এই যে ঝাড়গ্রাম কোর্ট কটা আসামি আছে? দেখা গেল কারোও দশটা আসামি আছে কারও পাঁচটা আসামি আছে। ওরা সব লেখালেখি করে নিত।

ওখানে কাঞ্চন বলে একটা ছেলে ছিল, কাকাকে মার্ডার করে যাবজ্জিবন জেল খাটছে। ছেলেটা খুব ভাল।আমি ঘন ঘন যাওয়াতে আমার সাথে বেশ খাই খাতির হয়ে গেছে। 

আমি বললাম কাঞ্চন তোর সাথে একটা কথা আছে।এখানে একজন মহিলা তার স্বামীকে মার্ডার করে জেলে আছে, তার সাথে একটু দেখা করব, তোর দ্বারা কি দেখা করিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে? ও বলল স্যার চা খাবেন?আমি বললাম না চা খাবনা।বেলা দশটা বেজে গেছে যাদের যাদের কোর্ট আছে তাদের ডাকতে পাঠিয়েছে, নানান কোর্টে নাম ধাম সই সাবুদ  করে কোর্টে চালান দেবে। 

আমি বসে আছি,আমি বললাম এখানে একটা আসামি আছে, সে আদ্রায় ছিল সে তার স্বামীকে পাথর দিয়ে মার্ডার করে দিয়েছিল। তার যাবজ্জিবন  জেল হয়ে গেছে, তার একটা ছেলে আছে স্টেশনে ভিক্ষা টিক্ষা করে।

কাঞ্চন কিছুক্ষণ মনে করল, তারপর বলল এরকম এরকম দেখতে? আমি বললাম হ্যা , তো সেতো ব্রেইন খারাপ হয়ে গেছে, কাউকে চিনতে পারেনা। কাঞ্চন বলল দেখবেন?আমি বললাম হ্যা একটু দেখতে ইচ্ছা করছে।

তারপর মেয়েদের ওয়ার্ডের দিকে নিয়ে গেল।তারপর একটা সেলের দিকে দেখিয়ে বলল ওই যে ওইটা?আমি বললাম হ্যা ওইটা, দেখি চুল টুল পেকে গিয়েছে , আমি বললাম এই লক্ষী আমাকে চিনতে পারছ?

সে বলল কৌন হ্যায় বাবু?

আমি তখন বললাম আমি সেই দীপকবাবু তুমারা সাথ পুরুলিয়া গিয়েছিলাম।

তখন লক্ষী বলল ও—-দীপক বাবু, আমি বললাম তুম ক্যায়া কিয়াথা, হাম তো মরদকো পাথ্থরছে মার দিয়া। তুমারা লেড়কি কিধার হ্যায়, ও বলল ওতো মালুম নেহি।তুমারা ল্যাড়কা কিধার হ্যায়, ওতো হ্যায়, আতা হ্যায় কভি কভি। দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু আমি আর কি করবো, এর সমাধানের পথ আমার জানা নেই। তারপর কাঞ্চনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।এই লক্ষী এখনও হয়ত মেদিনীপুর জেলে পাগলিনী বেশেই আছে। জানিনা বিধাতার কি ইচ্ছা।


তারার আলো - বর্ণনা কর্মকার || Tarar alo - Barnona Karmakar || Short Story || ছোটগল্প

 তারার আলো

     বর্ণনা কর্মকার


ছেলেটা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে, 

একদম তার ভালোবাসার মানুষ টার মনের মতো! আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে সে নিজেই বলে উঠলো ~ " আজ নিশ্চয়ই আমাকে দেখে ঠোঁট ফোলাবি না! দ্যাখ, শার্টের রং টাও কিন্ত তোর পছন্দের।। ফুলহাতা শার্ট এর হাতা কব্জি অবধি গোটানো, 

   আজ আমাকে দেখার পর আর তোর কোনো অভিযোগ থাকবে না, 

অগোছালো বলে আমাকে কথাও শোনাতে পারবি না , পারফিউম টাও তোর ই গিফ্ট করা কিন্ত! মনে আছে তোর? 

       মনে পড়ে পাগলি, ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারতাম না বলে কত্তো অভিমান ছিল তোর? সবার মতো তথাকথিত ভালোবাসা টা আসতো না যে আমার, তাই তুই হয়তো বুঝতে ই পারতিস না কতোটা ভালোবাসি তোকে! "

             আজ ছেলেটার তাড়া যে প্রচন্ড, নিজের প্রিয়তমার অভিমান ভাঙাতে যাবে সে ! আজকে দিনটা তেই সে উপহার পেয়েছিল তাকে : এ দিন কী ভোলা সম্ভব? 

      একতোড়া লাল গোলাপ কিনে সে চললো, মনে কত্তো আশা ~ কথার বুননে পাহাড় তৈরি করে ফেলেছে সে , 

    এই একমাস কী কী করলো সে, কী কী হলো ~ সব বলতে হবে না ওকে? 

    সারাদিনের গল্প শোনাটাই যে মেয়েটার অভ্যেস আর, 

  ছেলে টা যখন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে ভুলেই যেত একটা পাগলি অপেক্ষা করে আছে, 

তখন মেয়ের সে কী রাগ? ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে ছেলেটার! দিনশেষে কান্নাভেজা স্বরে পাগলি টার অভিযোগ গুলো শুনেই তো আরও বেশি ভালোবেসে ফেলতো ছেলেটা পাগলি টাকে! 

     "দেরি করা যাবে না, পাগলি টা আমাকে দেখবে বলে বসে আছে ঠিক! "~ ছেলে টার অস্থিরতা র পারদ আজ খুব বেশি! 

       আজ দিন টাও বড়ো বেশি মেঘলা , 

      ছেলেটার একহাতে লাল টকটকে গোলাপের তোড়া আর অন্য হাতে হলুদ মলাটের সেই ডাইরি : শেষ উপহার! 

   অগোছালো ছেলেটা আজ বড্ডো গোছানো হাতে প্রিয়তমার সমাধি টা পরিস্কার করছে , 

       আর বলছে, ~

" কী রে, দ্যাখ এলাম তো ঠিক সময়ে? 

    দ্যাখ তাকিয়ে আজ আমার দিকে! কেমন লাগছে বলবি না আমাকে? 

তোর জন্য গিফ্ট আছে এনেছি যে, 

  লাফাবি না আগের মতোন? জ্বালাবি না আমাকে? 

এত্তো অভিমান কেন তোর? তুই চুপ করে থাকলে আমার কষ্ট হয়, বুঝিস না? 

  দ্যাখ, আমার জন্য লেখা তোর সব কবিতা গুলো আজ ছাপার অক্ষরে ~ তোর স্বপ্ন ছিল তো এটা? 

বলেছিলি একসাথে পূরন করবো? কিন্তু তার আগেই তো একা করে চলে গেলি আমাকে। আমার করা ভুলের শাস্তি এত্তো টা ভয়ানক ভাবে কেন দিলি? 

                 অগোছালো বোকা ছেলেটাকে সেদিন আটকাতে পারতিস তো একটি বারের জন্য? 

পারতিস না, বল! ভালোবাসা র অধিকারে একটিবার কী বলতে পারতিস না যে, লড়াই টা একসাথে করবো? 

   একদিন যোগ্য হয়ে সবার সামনে ভালোবাসা র অধিকারে তোর হাত ধরতে চেয়েছিলাম ~ অপেক্ষা টুকুও করতে পারলি না? 

       যেদিন তোর ভালোবাসা কে অস্বীকার করে তোর ভালো থাকার জন্য তোকেই অস্বীকার করলাম : সেদিন একটিবার ও কেন বললি না ~ " সোম, তোকে নিয়েই আমার ভালো থাকা , 

     আমার মন হয়তো আশা করেছিলো যে অন্তত তুই আমার অভিমান টুকু বুঝবি! 

  কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এক এমন অভিমানীনির সামনে দাঁড়িয়ে আছি যে সে নিজের কষ্ট নিয়ে অভিযোগ করতেই জানে না! 

            এত্তো টাই অভিমান যে ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিভৎস কষ্ট ও তার কাছে হার মেনেছে, বিদায়ের শেষ বেলাতেও অভিমান কমেনি তোর! 

একবার ও ডেকে বললি না কেন , জানালি না কেন আমাকে? 

ঐ একটা দিনের আমার মুখে র কথাটাই তোর কাছে ধ্রুব সত্যি হয়ে গেলো? আর আমার ভালোবাসা টা ? আমার চোখের ভাষা গুলো তোর শব্দের অপেক্ষায় ছিল যে, বুঝলি না পাগলি বল? 

তুই তোর পাগলকে চিনিস ই নি নাকী অধিকার নামক শৃঙ্খল দিয়ে বাঁধতে চাস নি, কোনটা? 

       একবার যদি সেদিন আটকাতিস তাহলে আমাদের ও দুজনের একটা সংসার হতো, বল! 

  তোর জীবনের শেষ কটা দিন ও আমি তোর সাথে থাকতে পারলাম না, কী হতভাগ্য আমি দ্যাখ? 

তোর - আমার সংসারের স্থায়িত্ব যে কটা দিনের ই হতো তার স্মৃতি নিয়েই বাকী দিন গুলো কাটিয়ে দিতাম আমি! তুই না থাকলে ও বাড়ি টা জুড়ে ঐ সংসার টা জুড়ে তো তুই থাকতিস বল? আর এখন ? তোর কয়েকটা লেখা চিঠি, কবিতা আর ঐ রঙিন দিনের স্মৃতি গুলো সম্বল! 

  বুড়ো হলে শুনেছি স্মৃতি ঝাপসা হয়, তুই বল তো বুড়ো বয়স এর মুহূর্ত গুলো কী আঁকড়ে বাঁচবো আমি? 

   শুনতে পাচ্ছিস তুই আমার কথা? 

   এত্তো জ্বালাছিস, কষ্ট দিচ্ছিস তো ~ সব সুদে আসলে শোধ নেবো আমি, 

    তুই শুধু অপেক্ষা টুকু করিস এবার : আমার ওপারে যাওয়ার অপেক্ষা টুকু! 

 এবার আর ফাঁকি দিস না প্লিজ, 

আর অভিমান কে জিতিয়ে দিবি না, কথা দে? 

      আমিও উপলব্ধি করেছি জানিস যে ভালোবাসা কে বলিদান দিয়ে ভালোবাসা র মানুষের ভালো থাকার অজুহাতে তাকে ছেড়ে আসাটা কাপুরুষতা, 

    ভালোবাসা তো প্রমাণ হয় লড়াই করার মাধ্যমে , 

আমরা ছেলেরা বুঝি না "ভালো থাকিস" বলে যার হাত ছেড়ে আসি, তার ভালো থাকাটাই আমাদের নিয়ে , তার জগত টা আর্বতিত হয় আমাদের ঘিরে, 

 আর যখন বুঝি তখন বড্ডো বেশি ই দেরি হয়ে যায়! 

যখন বুঝি , আমাদের ভালো থাকার চাবিকাঠি টাও ঐ ছেড়ে আসা মানুষ টার হেফাজতে : তখন সবটা শেষ! 

   ফিরে তাকানো যায় না, ফিরে যাওয়া যায় না! 

  শুধু একরাশ আক্ষেপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ~ লড়াই টা যদি করতাম ওর হাতটা ধরে, ওর পাশে থেকে! 

         তোর বলা প্রতি টা কথা আমি আজ প্রতি টি রোমকূপ দিয়ে অনুভব করি, কিন্তু আজ আমি নিঃস্ব, অসহায়!  

    বলিদানে মহানত্বের সুখ আছে ঠিকই কিন্তু বেঁচে থাকার কারণ টাই হারিয়ে যায় ঐ নিষ্ঠুরতার করাল আঘাতে, আর ঐ বলিদানে র ক্ষনস্থায়ী সুখ যখন ক্ষীণ হতে শুরু করে, 

যন্ত্রনা র আগুনের আত্মদংশন জীবন টাকে দুর্বিষহ করে তোলে। 

প্রতি মুহূর্তে নরক যন্ত্রণা র অনুভূতি সহ্য করাটাও যে খুব কঠিন~ আজ আমি সবটাই বুঝি! 

    তাই, তুই আর একটি বার সুযোগ দিলে আমার করা প্রত্যেক টা ভুল আমি শুধরে নেবো, তোর মনের মতো হয়ে যাবো ~ কথা দিলাম! 

         আর এই গোলাপ টাও তোর জন্য! কখনো তোর মনের মতো করে বলা হয় নি যে ভালোবাসি, 

আজ বলছি ~ " I love you & I will love you for the rest of my life . 

     will you be mine for today, tomorrow , decades & for the next life also? 

            ছেলেটার চোখের জল, গোলাপের তোড়া আর ঐ আলগোছে পড়ে থাকা কবিতার বই সমাধির মাটির ওপর নিজেদের অস্বিত্ব কে ঠিক ই খুঁজে নেয়। 

       দূরে মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের শব্দে ছেলেটা বুঝি শুনতে পায় মেয়েটার কন্ঠস্বর , 

  ~ " দিন পালটায়, রং বদলায়

   অস্থির মন! 

হাতের মুঠোয় ফেরারি সময়, শুধু শিহরণ, 

 ছায়াপথ জুড়ে হাতছানি কার 

সেই পিছুটান! 

কার কথা মনে পড়ে? 

রাতজাগা পাখি যায় ডেকে যায়

দীর্ঘ শ্বাস, 

জোনাকিরা জ্বলে গাছের পাতায়

আলোর আভাস, 

পাশে পড়ে থাকা কবিতার খাতা, 

নীলচে আকাশ, 

কলমের রং গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে স্তব্ধ বাতাস! 

ঝড় বয়ে গেছে পড়ে আছে শুধু, 

ছেঁড়া মাস্তুল, 

ফিকে হয়ে যাওয়া কুয়াশার পিছে, 

উঁকি দেয় ভুল, 

ছেঁড়া কবিতার পাতাগুলো সব আলো অক্ষর, 

হৃদয়ের কোনে ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর! 

     কার কথা মনে পড়ে? "

    

     কখনো কখনো দীর্ঘশ্বাসের ওজন বড্ডো বেশি ই ভারি হয়! 


মে সংখ্যা 2023 || May Sonkha 2023


 



শেষ গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ট জীব বৈচিত্র্য। মেঘ মল্লারের বিভীষিকা কখনো খুশি, কখনো যন্ত্রণাদায়ক। প্রাণের প্রভু বহুকাল যাবত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ভক্তদের আন্দোলন চাতক পাখির কাছে একমত। এমতাবস্থায় মানুষ কে দু'দন্ড শান্তি দেয় বেআকুল বাঁশরী, শেষ বিকেলে দোতারা, আর হাজার বছরের পুরাতন ঘেঁটে দেখা সাহিত্য চর্চা।


প্রেম রসিক বাঙালি সহ সমগ্র জনজীবন একে অপরকে জড়িয়ে চুমু খেতে ভয় পায় বর্তমানে। তবে নদীর মিলন সমুদ্র স্বীকার করে। ভালোবাসার কন্টকাকীর্ণ পথ বর্তমানে কঠিন থেকে কঠিনতর। তবে কবির কলম এই গুলোকে তুচ্ছ করে তোলে। পৌঁছতে পারে নিজের কলমের আদলে প্রকৃতিকে আঁকতে। ভালোবাসার রঙিন স্বপ্ন তার ডায়েরী পাতার ছত্রে ছত্রে। কবি তার সাহিত্য দিয়ে পৌঁছতে পারে প্রেমিকের সাথে গোপন অভিসারে। আর একনিষ্ঠ পাঠক ভক্তি সুলভ আচরণে কবি তথা লেখকের সাথে এক ভাবনায় নিজেকে আন্দোলিত করে তোলে। প্রভাব ফুটে পারস্পরিক সহযোগিতায়।

এই সুযোগ আমারা দিয়েছি প্রতিটি লেখক ও পাঠক গোষ্ঠীদের, আমাদের মাসিক পত্রিকা ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডার হাত ধরে। আপনি হয়ে উঠুন একনিষ্ঠ পাঠক। লেখক গোষ্ঠি নিজেকে বিস্তৃত করুক। এই আমাদের সংকল্প।


   ‌‌                             ধন্যবাদান্তে
        World ahitya adda সম্পাদকীয় বিভাগ



বি.দ্র:- সকল কবি ও লেখক তাদের লেখা এই সংখ্যাতে থাকছে তারা প্রত্যেকে এই হোম পেজে নীচের দিকে যান তারপর 'view web virsion' এ ক্লিক করুন । তারপর ঐ মেন পেজে ডানদিকে সূচিপত্রের লিস্ট পাবেন। সেই লিস্ট নিজের নামে ক্লিক করলেই লেখা গুলো দেখতে পাবেন। সেটাই আপনার লেখার লিংক। এই নিয়ম শুধু মাত্র স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য। যারা কম্পিউটার এ খুলবেন তারা সরাসরি মেন পেজ পাবেন সেখানে সূচিপত্র পাবেন।

Sunday, May 21, 2023

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -42



 মা রমা, আমি একটু চমকে উঠলাম। তোমাকে পুত্র বধূ রূপে পেয়ে মা হারা ময়নার মরা গাঙে জোয়ার এনেছে এটা তোমার কম কৃতিত্বের কথা নয়। তুমি এক মহীয়সী নারী। তবে আমার অনুরোধ, দেবী যদি কোন দিন, কোনরূপ ভুল করে ফেলে তাহলে একটু মানিয়ে নিও।


ও কথা শুনে আমার ভেতরটা টন টন করে উঠলো। বাবাকে প্রণাম করে বলে উঠলাম, আমার আশীর্বাদ করুন, আমি যেন আপনাদের আশা আকাঙ্খাকে সার্থক করে তুলতে পারি। তিনি আশীর্বাদ করলেন ।

একটু পর এটাচী হতে একটা দামী সোনার গলার হার বের করে হাতে দিয়ে বললেন, বহু যত্ন সহকারে এই অলংকারটিকে তৈরী করিয়েছিলাম। নতুন বৌমাকে এমনি তো আশীর্বাদ করতে পারি না, তাই এই হারখানি নিয়ে এসেছি। কি পছন্দ আছে তো?

মনে মনে ভাবলাম, সোনার ছাড়া যদি অন্য কোন ধাতুর হার দিতেন তাতেও আমার মনোক্ষুন্ন হতো না। আপনার নিকট আমার একমাত্র কামনা, আপনার শ্রীচরণে একটুখানি আশ্রয় । গোপনে চোখের জল ফেলে হারখানি গলার মধ্যে আটকে রাখলাম।

ঈশ্বরকে কাতর স্বরে ডেকে বললাম, ঠাকুর এর অমর্যাদা কোন দিন যেন না হয়। জীবনে যে কষ্ট দিয়েছো নীরবে সহ্য করেছি। কোন দিন অভিযোগ করিনি । তাই এই হতভাগী বারবনিতাকে যখন অন্ধকার কূপ হতে উদ্ধার করে পবিত্র গঙ্গা জলে শুচিস্নাত করেছো, তখন বিগত দিনের মালিন্য ও কলুষতা যেন আমার মনের মুকুরে আর প্রতিবিম্বিত না হয়। দেবীর মনে একটা প্রেমের নিভৃত আসন করে নিতে পেরেছি সে আসন থেকে আর যেন আমি বিচ্যুত না হই - এটাই ভগবানের নিকট সকাতর প্রার্থনা জানালাম।

কিন্তু আমার কথা তিনি শুনেন নি। কারণ তার কয়েকদিন পরেই দেবী ও ময়নাকে ত্যাগ করে সেই গৃহ হতে নিশীথ অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। একটু পরেই তা প্রকাশ করবো। হয়তো আমার ডায়রীতে আমার পঙ্কিলময় জীবনের রূপ রেখা ঠিক মতো ফুটে উঠছে কিনা জানি না। তবে যা ঘটেছিলো তা এখন সুন্দরভাবে স্মরণ রেখেছি।

পরের পর ঘটনাকে মালা করে গেঁথে রেখেছি। মনে হচ্ছে সেই মালার গাঁথা ফুল একটিও মনে পড়েনি। কেবল একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।

আমাদের রেজেষ্টারী বিয়ে হয়েছে বলে বাবা মনোক্ষুন্ন হলেন না। তিনি মেনে নিয়েছেন আমাদের বিয়েকে। বিয়েতে কোন অনুষ্ঠান হয়নি বলে। তিনিও রাজ ভোজের আয়োজন করবেন। এই ভোজই হলো আমার জীবনের আরেকবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার অশনি সংকেত। পলকে পলকে আমি আগের মতোই দুঃখ যন্ত্রণায় কাতর হলাম।

শ্বশুর মশাই বাড়ীতে আসার পর কয়েকদিন আনন্দ উল্লাস ও গৃহ কর্মের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হলো। যত দিন গত হচ্ছিলো, ততই বাবার নিকট প্রিয় পাত্রী হয়ে আনন্দে মেতেছিলাম। আমাকে তার প্রয়োজনের সময় যদি না পেতো তাহলে স্থির থাকতে পারতেন না। আমিও তার কোন কাজে সাহায্য করতে ব্যর্থ মনোরথ হইনি। যখন যে বস্তুর দরকার হয়েছে আমার কাছে পেয়েছেন। সেইজন্য বাবা আমাকে আদর করে বলতেন গৃহলক্ষী।

আজ অনুষ্ঠান, অর্থাৎ বিবাহের প্রীতিভোজ। সকালে ঘুম হতে প্রাতঃরাশ সেরে দেবীর সাথে বাজারে গেলাম। ময়নাও গিয়েছিলো সাথে। ওর পছন্দ মতো দামী পোষাক নিলাম। পোষাক পরিচ্ছদ ছাড়া আরো বাজারের দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে যখন বাড়ী ফিরছি।

হঠাৎ নজরে পড়লো ফুটপাতে বাসের অপেক্ষায় এক পরিচিত বন্ধু সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে আমার শরীর হিম শীতল হয়ে গেলো। বিশেষ করে এই জন্য সে কলহাস্যে বলে উঠল দেবীকে, হ্যালো ব্রাদার, কেমন আছিস ? আধঘন্টার উপর এখানে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি, কোন ট্যাক্সি পাচ্ছি না। তোদের বাড়ী যাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছি। গতকাল মামা বাবুর একখানা পত্র পেলাম যে আজ তিনি এক অনুষ্ঠান করবেন, যেন অবশ্যই উপস্থিত থাকি মা ও আমি। মা'র তো ভীষণ শরীর খারাপ তাই আমাকেই আসতে হলো।

আমি ঘোমটা নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলাম, ঐ শয়তানটাকে আমার মুখ দেখাতে চাই না। কারণ ওর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে আমার কপাল ভেঙ্গে যাবে। চুরমার হয়ে যাবে আমার ঘর বাঁধার স্বপ্ন। ঐ শয়তানটা যখন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছে, তখন সে পুরানো শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে ছাড়বে না। কাপুরুষরা যখন একটুখানি সুযোগ পেয়ে থাকে, সেই সুযোগে নিজেকে মহীয়ানের পরিচয় দিয়ে শত্রুর প্রতি বদলা নিতে ছাড়ে না।

বাহু বল না থাকলেও ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা বলে শত্রুকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে। মনে হয় এই সুযোগ ছাড়বে না। আমাকে যে নিরীক্ষণ করেছে তা বুঝতে পেরেছি, এবং আমি যে দেবীর বৌ তা অনুমানে বুঝতে পেরেছে। বারংবার আড়চোখে আমার মুখ পানে তাকানো, তার প্রতিশোধের ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

সেদিনের ঘটনা আজও মনে আছে। এই ভদ্র সন্তান, আমাদের আনন্দ কুঞ্জে একদিন অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমি ও শ্যামলীদি ওর মুখ পানে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম এই সেই লোকটা যার শরীরে গুপ্ত রোগ বর্তমান। শ্যামলীদি ও আমি পাশাপাশি বসে আছি, হঠাৎ মদ খেয়ে টলতে টলতে আমাদের কাছে উপস্থিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করল।

শ্যামলীদি বার বার অনুরোধ করল, এই বাড়ী হতে যেন বেরিয়ে যান।

সে কোন কথা কর্ণপাত না করে মদমত্ত গলায় বলল, আমি তোমাদের কাছে কিছু না নিয়ে তো যাবো না সুন্দরী। তোমাদের মধ্যে একজন আমার ক্ষণিকের সঙ্গিনী রূপে

পেতে চাই। ভয় নেই প্রচুর টাকা দেবো। মোট কথা একে (আমাকে) আমি চাই-ই। বললাম, আপনি এখন হতে বিদায় নেবেন কিনা জানতে চাইছি। যদি না নেবেন তাহলে কান ধরে বের করে দেবো ।

কি বললে, দেহ পসারিনী হয়ে এতো দেমাক ?

হ্যাঁ, তোমার বোন যদি এই পথে পা বাড়াতো তারও এরকম দেমাক হতো । কারণ আমরা বারবনিতা হতে পারি তবুও আমাদের সম্ভ্রম বোধ আছে। আপনি যে কত বড় সংক্রামক রোগ গ্রস্ত ব্যক্তি তা অজানা নয়। ভালো মানুষের মতো বেরিয়ে যান নতুবা গনেশকে ডেকে ঘাড় ধরে বের করে দেবো। 
লোকটা এক রোখা, কোন প্রকারে যেতে চাইছিলো না। গনেশকে ডেকে থাপ্পড় মারতে মারতে বের করে দিলাম।

যাবার সময় নানা অকথ্য ভাষায় গালি গালিগালাজ করছিলো। সে সুযোগ পেলে প্রতিশোধ নেবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে অনেক কিছু ভাবছিলাম।

দেবীর ডাকে নিজের সম্বিৎ ফিরে পেলাম। সে বলল, এর নাম অতীন, হাওড়াতে থাকে। আমার পিসীমার ছেলে। বড় ব্যবসা আছে, ভুরি ভুরি টাকার কারবার।

মনে মনে ভাবলাম অর্থের ভান্ডার পরিপূর্ণ বলে নিত্য নতুন পারিজাতের গন্ধ পেতে ভালোবাসে। এবং শরীরকে ব্যধির মন্দির করতে চায়।

ওর সাথে বেশী বাক্যালাপ না করে বাড়ীতে এসে উপস্থিত হলাম। স্নান সেরে মায়ের মন্দিরে এসে কর জোড়ে প্রার্থনা করলাম, মা আজ আর রেহাই নেই। আমার স্বরূপ উৎঘাটিত করে দেবার জন্য শয়তান উপস্থিত হয়েছে। আমার বিশ্বাস দেবীর বাবার কানে আমার কলঙ্কিত জীবনের পরিচয় দিয়ে আমার সুখের নীড়কে ধূলিসাৎ করবে। আমার আননে কাননে দাবানলে দহন এনে দেবে। এই লম্পটটা সহজে আমাকে রেহাই দেবে না। আমি কি করবো মা বলে দাও ।

আমার অশ্রুসিক্ত চক্ষুদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ মা, আমি কি কোন অপরাধ করেছি? হঠাৎ মনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো এর জন্য চিন্তা করে কোন লাভ হবে না। দেবীর কাছে ঐ শয়তানটার চরিত্র প্রকাশ করলে ভয় কেটে যাবে।

কিন্তু দেবীকে বলার মতো কোন সুযোগই পেলাম না। দেবীদাস নিজ কর্তব্যে ব্যস্ত একবার সুযোগ পেয়ে দেবীকে কাছে ডেকে বললাম, দেবী তোমার সাথে আমার অত্যন্ত জরুরী কথা আছে।

দেবী বলল, বলো, তোমার জরুরী কথা কি ।

আমি গলা ঝাঁপিয়ে বললাম, তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় বের করতে হবে এবং এই মুহুর্তে।

দেবী বলল, ঠিক আছে আমি সময় দিলাম।

তাহলে আমার সাথে শোবার ঘরে যেতে হবে। চলো। কয়েক পা এগোতেই করালী কাকু বাধা দিয় বলল, ছোটবাবুকে বিশেষ জরুরী দরকারে বড়বাবুর রুমে যেতে বললেন।

ঠিক আছে একটু পরে যাচ্ছি।

না এক্ষুনি যেতে হবে। দেরী করা চলবে না।

দেবী একটু পরে আসবে বলে করালী কাকুর সাথে বড় বাবুর রুমের দিকে পা বাড়ালো। আমি স্থির হয়ে ওর গমন পানে তাকিয়ে রইলাম। চোখ ছাপিয়ে জল এলো। 
আর সুযোগ পাবো বলে আমার মনে হয় না। তাহলে-তাহলে দেবীকে মনের কথা বলবো কেমন করে, তাই বলা হলো না।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যে উত্তীর্ণ হলো। আমাদের বিরাট প্রাসাদে বিভিন্ন আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল। সকাল হতে সানাই এর সুরে গমগম করছিল। বাড়ীর প্রতিটি লোকের মনে আনন্দের জোয়ার। ধীরে ধীরে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা আসতে শুরু করলেন। দেবী ও বাবা স্বয়ং প্রত্যেক অতিথিকে সম্মান করলেন।

দেবীও বাবার মনে আনন্দের শেষ নেই। শুধু আনন্দ নেই আমার। কেবল ঐ চিন্তা, যদি কোনরূপ অঘটন ঘটে তাহলে কি হবে। একবার ভেবেছিলাম ঐ শয়তানটার পায়ে ধরে ঝরঝর করে বলি আমার জীবনকে আর যেন কালো মেঘে ঢেকে না দেয়। অনেক নির্যাতন, যন্ত্রণা সহ্য করে একটুখানি আশ্রয় পেয়েছি, সুতরাং আমার করুন মুখপানে তাকিয়ে আমার জীবনকে মরুভূমির রুক্ষতায় পরিণত না করে।

না? ওকেও বলার কোন সুযোগ পেলাম না। অতিথিদের সামনে সাজগোছ করে দাঁড়াবার তাদের সাথে ইন্টারভিউ করার কোন ইচ্ছাই ছিলো না। কিন্তু বাবার কথা কাটতে পারলাম না। বেদনাসিক্ত এবং চিন্তাশীল মন দিয়ে কোন প্রকারে অতিথিদের সামনে আসতে চাইছিলাম না। মনে সক্রিয় চেতনা, প্রফুল্লতার কোন আলোড়ন নেই যেখানে, সেখানে কিছুই ভালো লাগে না।

Tuesday, May 16, 2023

মাধ্যমিক পাশে রাজ্যের খাদ্য দফতরে ফুড সাব ইন্সপেক্টর পদে কর্মী নিয়োগ || WB Food Sub-inspector Recruitment 2023 || WB job news || https://wbpsc.gov.in


 


রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (WBPSC), কলকাতার তরফে পশ্চিমবঙ্গে ফুড সাব ইন্সপেক্টর (Food SI) পদে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য wbpsc.gov.in ওয়েবসাইটে একটি Indicative বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব।



Indicative নোটিশ নম্বর – 04/2023

নোটিশ প্রকাশের তারিখ – 10/05/2023



নিয়োগকারী সংস্থা :

পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (West Bengal Public Service Commission) বা সংক্ষেপে WBPSC. 



পদের নাম -

ফুড সাব ইন্সপেক্টর (Food Sub Inspector- Food SI)
 

শূন্যপদ -

শূন্যপদ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ নেই। 



শিক্ষাগত যোগ্যতা -

প্রতিটি আবেদন কারী প্রার্থীদের মাধ্যমিক পাশ হতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে বাংলা ভাষার লিখতে ও পড়তে পারার জ্ঞান।


বয়সসীমা -

আপাতত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নেই।


মাসিক বেতন -

আপাতত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নেই।


নিয়োগ পদ্ধতি -

প্রথমে হবে লিখিত পরীক্ষা তারপর হবে ইন্টারভিউ। এই কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে প্রার্থীদের বাছাই করে নির্বাচিত করা হবে।


আবেদন পদ্ধতি - 

অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এর জন্য https://wbpsc.gov.in. ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্টার করে তারপর নিজেদের তথ্য দিয়ে ফর্মটি ফিলাপ করে ফেলতে হবে। এরপরে আবেদন মূল্য জমা দিয়ে ফর্মটি সাবমিট করে নিতে হবে।


আবেদন ফি -

শুধুমাত্র জেনারেল, EWS এবং OBC প্রার্থীদের জন্য 210 টাকা করে আবেদন মূল্য ধার্য করা হয়েছে।



আবেদনের সময়সীমা -

 আবেদন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। যখন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং নিয়োগের শূন্যপদ সংক্রান্ত অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে তখন আমরা আপনাদের জানিয়ে দেবো। তাছাড়া আপনারা চাইলে কমিশনের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখতে পারেন।





গুরুত্বপূর্ণ লিংকগুলি -

# Indicative Notice: 


# অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: 

_________________________________________


চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-



Whatsapp group-


Monday, May 1, 2023

ঘর - সুশান্ত সেন || Ghor - Susanta Sen || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 ঘর

সুশান্ত সেন



কোনোদিন কি ঘরের বাইরে যেতে পারবো !

পারবো নিতে হাসনুহানার স্বাদ

কোনোদিন কি দক্ষিণ দুয়ার খুলে 

সমুদ্র দাড়াবে চৌকাঠে ! 

কোনোদিন কি মন খুলে বলে উঠতে পারবো

যা বিশ্বাস করি।

কোনোদিন কি পতাকা উড়িয়ে বলতে পারবো

আমি তোমাদের ভালবাসি, আমি তোমাদের লোক, আমি তোমাদের ভালো চেয়েছিলাম।

কোনোদিন কি আমি হাতের শিঙ্খল খুলে, ফেলে দিতে পারব আস্তাকুড়ে।

কোনোদিনও কি আমি খোলস ছেড়ে , মুখোশ ফেলে রেখে নেমে এসে দাঁড়াতে পারব গাছতলায় !!!




তোমায় দিলাম - শাশ্বত বোস || Tomai dilam - Saswata Bose || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 তোমায় দিলাম

  শাশ্বত বোস



তোমায় দিলাম একফালি রোদ, বৃষ্টিমুখর দিন


 মেঘলা আকাশ, জলের কণা, দৃষ্টি অমলিন|


তোমায় দিলাম, অবুঝ আমি, সবুজ পাতার গান


পুকুর পাড়ের দমকা বাতাস, ঝোড়ো শালিধান|


তোমায় দিলাম, চৈতালি চাঁদ, ইফতারি বেল জুঁই


অন্ধ বাউল একতারা গায়, মেঠো গানে ছুঁই|


তোমায় দিলাম, শহুরে গান, বিপন্নতার রোজ


ঢাক গুড় গুড় মেঘের আওয়াজ, মেঘবালিকার খোঁজ|


তোমায় দিলাম, একমাথা চুল, এলোকেশীর বেশে


সোনার কাঠি, রুপোর মালা, পথভোলাদের দেশে|


তোমায় দিলাম, ঝাপসা বিকেল, ঝিমোনো রোদ্দুর


এক ছুট্টে ভিজতে চাওয়া, সাতটি সমুদ্দুর|


তোমায় দিলাম মেয়েবেলা, এলানো বেণী,


চিনেছ আমায়? বুঝেছ কি? সাদা পাতায় শব্দ বুনি|


পুতুল খেলা, খোলা জুতো, সাদা ভ্রমর


তোমায় দিলাম, একলা আকাশ, বৃষ্টি ভেজা, মাটির সফর|


 




নাড়ির টান - অমল বিশ্বাস || Narir Tan - Amol Biswas || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 নাড়ির টান 

অমল বিশ্বাস



ক্ষত-বিক্ষত পায়ে

কাঁটাতার পেরুতে গিয়ে যে বিভেদের রেখা পড়ে

মন বলে, তা নৈতিক না।


পায়ে ধুলো মেখে 

পরদেশে একটি বারান্দায় উঠতে

একজন মা দরজায় দাঁড়িয়ে বলে, আয় বাবা

ধুলো পায়ে ঘরে আয়,

ঐ ধুলোর মধ্যে আছে আমারও নাড়ির টান।


যখন পায়েপায়ে মায়ের বাড়া ভাতে হাত রাখি

তাঁর শুকনো চোখের জল মিশে যায় 

পদ্মা ও গঙ্গার স্রোতে।


স্নিগ্ধ হাতের তালু মাথায় রেখে বলে,

হৃদয়ের অঞ্চলে শুধু কান্নার কৌলিন্যতা না

আত্মিক সৌহার্দ্যের স্পর্শ

উঠিয়ে দিতে চায় নেতাদের অনৈতিক হিসেব,

সৃষ্টি করতে চায় পুনরায় একই অবস্থান 

একটি ভাষায়।


মায়ের চোখে ভেসে ওঠে

পান্তাভাত, কাগুজে লেবু, কাঁচালঙ্কার ছবি,

মায়ের ক্ষত-বিক্ষত পায়ে 

হাত ছুঁয়ে যখন প্রণাম করতে যাই

মা আমার কাঁদোকাঁদো সুর গেয়ে ওঠে

"আমার সোনার বাংলা 

আমি তোমায় ভালোবাসি।"


ষড়যন্ত্র - শ্রী অচিন্ত্য সেনগুপ্ত || Sorojontra - Sri. Achinta Sengupta || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 ষড়যন্ত্র

 শ্রী অচিন্ত্য সেনগুপ্ত


শব্দ ও অর্থ'র পারস্পরিক সম্পর্ক'কে যথাসম্ভব ম্রিয়মান করে দেওয়ার,মনে হয় কেউ যেন ষড়যন্ত্র করেছে৷

শব্দগুলো যাতে শব্দের ভিত্তিভূমি থেকে শিথিল হয়ে, গোত্রহীন হয়ে পড়ে৷তারপর সেই ছিন্নমূল শব্দগুলো একসঙ্গে নিয়ে তালগোল পাকিয়ে দেওয়া,যাতে এক মহা সরগোলের আঁধার নেমে আসে৷

সেই কোলাহলের মাঝপথে হারিয়ে যাবে শব্দগুলোর অর্ন্তনিহিত অর্থের আসল পরিচয়৷তারপর দিশাহীন বিভ্রান্ত হয়ে মহাকালের গর্ভে পঞ্চত্ব লাভ করবে৷


পরবর্তিতে অন্তসারশূন্য শব্দগুলো ক্রিতদাসের মতো

বাজারে স্বল্পমূল্যে বিকিয়ে যাবে৷

সেই বিক্রিত ক্রিতদাসেরা নিজের প্রভুর ঈশারায়

কাটপুতলির মতো সমস্ত চিন্তাধার,মূল্যবোধকে

সমূলে ধ্বংস করবে৷

চারদিকে কান পাতলেই সেই সরগোল শোনা যাচ্ছে৷

মনে হয় কেউ যেন ষড়যন্ত্র করেছে৷

তবুও এই ক্ষয়িষ্ণুতার মধ্যেও কেউ যেন অন্তরাল থেকে বলছে -  

শব্দদের এই অবমূল্যায়ন,শব্দকৌলিন্যের অবক্ষয় রুখে দেওয়া যাবে৷

এখনও কিছু নিবেদিতপ্রাণ শব্দপ্রেমিক আছেন,যারা শব্দদের এই গণসংহার হতে দেবেন না৷

যদি তারা আছেন,যেখানেই আছেন জেনে রাখুন তাদের হাতে সময় খুব অল্প আছে৷

মনে হয় কেউ যেন ষড়যন্ত্র করেছে ৷

নববর্ষ - অভিজিৎ দত্ত || Noboborsho - Avijit Dutta || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 নববর্ষ 

অভিজিৎ দত্ত 



নতূন বছর দিচ্ছে ডাক 

সব অন্ধকার মুছে যাক 

নববর্ষের নতূন আলোকে

সব কালিমা যাক ঘুচে।


নববর্ষে করবো শপথ

পরিবেশ রক্ষায় আমরা

সব হবো তৎপর।

নতূন, নতূন গাছ লাগাবো 

পরিবেশকে সুন্দর করবো।


নববর্ষে করবো শপথ 

নিজেরা ভালো করে তৈরি হয়ে

দেশসেবায় হবো তৎপর। 


নববর্ষ দিচ্ছে ডাক 

মানুষের মধ্যে সব ভেদাভেদ 

দ্রুত ঘুচে যাক। 

নববর্ষ দিচ্ছে ডাক 

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাক। 


নববর্ষে করবো শপথ 

দেশরক্ষায় আমরা সব

হবো তৎপর।

প্লেটোনিক - কবিতাবুড়ো || Pletonik - Kobita Buro || Bengali Poem || Poetry || Kobita || কবিতা

 প্লেটোনিক 

কবিতাবুড়ো



মধ্যরাতে উশ্রী নদীর ধারে 

কেউ কি ভীষণ একলা হতে পারে? 

একলা, সে তো একলা থাকা নয়

অন্ধকারে মন খারাপের জয়।। 


মধ্যরাতের উশ্রী নদীর ঢেউ

বড্ড গভীর, তল পেলো না কেউ

গভীর, আর‌ও গভীর নদীর বুকে

ভীষণ গভীর কয়েকটা ভুলচুকে,


উশ্রী তখন বয়ঃসন্ধি পার

মধ্যরাতের স্বপ্ন হারাবার

স্বপ্ন, সে তো স্বপ্ন দেখা নয়

অজান্তে এক হারিয়ে যাবার ভয়! 


উশ্রী, সে তো অন্য কারো জানি

বুকের বাঁদিক চিনচিনে হয়রানি

অতল নদী, অদৃশ্য এক প্রেম, 

আজকে না হয় পদ্য‌ই লিখলেম!!


যে কবিতার ছন্দ সবার জানা

মধ্যরাতের গন্ধে হাসনুহানা 

ফুল নদী আর পদ্য নিয়ে সাথে, 


উশ্রী না হয় প্রেমেই থাকুক

স্পর্শ নিয়ে, ঘুমভাঙা মাঝরাতে.....