ঋষি
বিকাশ মন্ডল
দ্রষ্টা নই ; ঘাসে ঘাসে পা ফেলে
শিশিরের পতন শব্দ, হিম বোধ
অনুভবে আসে কই —
কখনো দেখিনি সত্যের মুখ, নির্মাণ ও ত্যাগ
উপনিষদ করি বা সেহেতু ; নোট দিই
শিষ্যকুল ফটোকপি করে, উত্তরপত্রে করে
আজীর্ণের বমন
কেউ মৌলিক নয়, না আমি ওরা তো নয়-ই....
ঋষি
বিকাশ মন্ডল
দ্রষ্টা নই ; ঘাসে ঘাসে পা ফেলে
শিশিরের পতন শব্দ, হিম বোধ
অনুভবে আসে কই —
কখনো দেখিনি সত্যের মুখ, নির্মাণ ও ত্যাগ
উপনিষদ করি বা সেহেতু ; নোট দিই
শিষ্যকুল ফটোকপি করে, উত্তরপত্রে করে
আজীর্ণের বমন
কেউ মৌলিক নয়, না আমি ওরা তো নয়-ই....
পাঁকাল মাছের মত
সান্ত্বনা ব্যানার্জী
আধুনিক এই সভ্য জগতে আমরা সভ্য কত!
জঞ্জাল যত কেটেকেটে চলি পাঁকাল মাছের মত।
পথের ধারেতে নোংরাভিখারীদেখেওদেখিনাভাই,
মুমূর্ষু রোগী অসহায় শিশু ফিরেও তাকাতে নাই।
জ্ঞানভোর দেখি দেশে দেশে শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা,
উলুখড় যতো জ্বলে পুড়ে যায় মৃত মানুষের মেলা
তার কিছু হয় খবরে প্রকাশ অনেকখানিই হয়না,
শুনে যাই শুধু নির্বাক হয়ে সবটাতো মনে রয়না।
খুব বেশী হলে একটু বিষাদ, একটা দীর্ঘশ্বাস,
তারপর সব খাঁড়া বড়ি থোর, আনন্দ পরিহাস।
ভাবি শুধু এই যাই বা ঘটুক আমি যেনথাকিসুখে,
হা হুতাশ যতো প্রকাশিত হয়সবটুকু থাক মুখে।
এমনি করেই সরিয়ে ফেলি যা কিছু অবাঞ্ছিত,
বাঁচার উপায় করেছি রপ্ত পাঁকাল মাছের মত।
নীরবতার অলেখ অজুহাত
পাপু মজুমদার
বালির ঝড়
এ যেন তোমায় ফিরে পাওয়ার
মিষ্ঠি ষড়যন্ত্ৰ
সমুদ্ৰের চেনা ডাকে
মন চায়
লিখে রাখি তোমার নাম !
সৃজা,
আঁকতে ইচ্ছে করে
তোমায় নিয়ে ছোট্ট একটি বালিঘর,
যেখানে আমার কল্পনারা
ছোঁয়ে থাকবে তোমায়
কোনো শব্দ বা কোলাহল নয়
চল দুয়েতে বসি সাগরের নীরব কোনো
বিকেলে মুখোমুখি-
চোখাচোখি
নীরবতার অলেখ অজুহাতে....
স্বপ্নবিলাস
শ্রীঅচিন্ত্য সেনগুপ্ত
স্বপ্নপূরণ হোক বা না হোক
স্বপ্ন দেখার শ্বাশ্বত অধিকারে আমি ঋদ্ধ৷
আমার স্বপ্নের রং সবুজ হবে না হলুদ -
তার আশমানী নীল মখমলি আঁচলের পাড়ে
কি জরিন সুতোর নকশা থাকবে,
আমার ত্বন্বি তিলত্তমা স্বপ্নের অবনমিত নয়ন
অস্ফুটে কি কথা কইবে .........
এ বিষয়ে ভাবার অধিকার একান্ত আমার৷
আমার অতি প্রিয়জনেরও এ রাজ্যে অনধিকার
প্রবেশ অমার্জনীয় মনে হয়৷
মলিন শয্যায় শুয়ে জীর্ণ ছাদের ছিদ্র দিয়ে
যখন জ্যোৎস্না'র সঙ্গে কথা বলি -
সে কথোপকথনের আমিই রচয়িতা,আমিই শ্রোতা,
শুধু আমিই...
রৌদ্রকরোজ্জ্বল চন্দ্রাতপের নীচে গগন শয্যায়
ভাসতে ভাসতে ছোটো ছোটো এলোমেলো স্বপ্নগুলোকে নিয়ে বারবার নতুন করে সাজিয়ে রাখি,
তাদের সঙ্গে খুনশুটি করি,সহবাস করি৷
স্বপ্নগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর জেনেও স্বপ্ন দেখি৷
বাস্তবের নির্মম আঘাতে নিমেষে খান খান হয়ে যাবে জেনেও,বুকের ভিতর আগলে রাখি৷
আমার ধুলিমলিন জীবনশৈলী'র সঙ্গে বিপরীত বেমানান জেনেও বাস্তবে অনুভব করার চেষ্টা করি৷
এ স্বাধীনতা একান্ত আমার৷
বিরুদ্ধবাতাস যতই অবদমিত করার অপচেষ্টা করুক না কেন,আমি আমার স্বপ্নের সঞ্জীবনী সুধারসে নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে পাই৷
হয়তো মানুষ এভাবেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেই যাবে৷
তার জীবনীশক্তির প্রতিটি কণা দিয়ে আগলে রাখতে চাইবে তার শতভঙ্গুর স্বপ্নের ভঙ্গুরতা ৷৷
হৃদকক্ষে আবদ্ধ কথা
বিনিময় দাস
একটা পাথর বুকের ওপর চাপা,
হয়তো তারই জন্য কথাগুলো মাপা ।
ভেতরের ভালোবাসা বোঝাই শুধু ইশারায়,
ওপ্ৰান্ত বোঝে না, ঘুরে দাঁড়ায় ।
পাই যদি প্ৰতিদিন একটুখানি দেখা,
ওর পথে টানি অপেক্ষার রেখা ।
পাশ কাটিয়ে চলে যায়--ব্যস্ত,
আমার অপেক্ষার হয় না হ্যাস্তন্যাস্ত ।
প্ৰস্তাবের মহড়া আয়নার সামনে প্ৰতিদিন,
হৃদয়ে আবদ্ধ অস্ফুট কথারা পরাধীন ।
জোৎস্না রাতে
বাপী নাগ
এই নিঝুম জোৎস্না রাতে
ছিলে তুমি পাশে।
রেখে ছিলে তুমি জড়িয়ে
ছিলে তুমি মিশে।
তোমার ভালোবাসায় ছিল
আমার এ জীবনে।
রূপালী চাঁদের এই আলো
দেখেছি যে দুজনে।
আজও যে আশায় আছি
দেখব যে তোমায়।
রুপালি ঐ চাঁদের আলো
দেখবো দুজনায়।
তোমার ভালোবাসা আজ
পেতে আমি চাই।
জীবনে তোমার কাছ থেকে
কত যে সুখ পাই।
রূপালী চাঁদের ঐ সৌন্দর্য
পছন্দ আমি করি।
থাকবে তুমি আমার পাশে
আমার যে অপ্সরী।
হেমন্ত
সুশান্ত সেন
বাড়িতে এলো হাতে দম দেওয়া
কাল রেক্সিনে মোড়া গ্রামোফোন
তখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ি ,
তার সাথে ' রানার ' আর ' পালকির গান ' ।
সেই পরিচয় শুরু।
মাঝে মাঝে আরো আসতে থাকলো একটা দুটো।
ক্লাস নাইন টেন এ বাইরে বেরোবার অনুমতি তার সাথে সাথে দাদার সঙ্গে বাস এ ওঠার।
সেই শুরু, বাড়ি থেকে এইট বি বাস এ চেপে দেশপ্রিয় পার্ক , হাঁটতে হাঁটতে ' দি মেলোডি ' ,
পাঁচ টাকা তিরিশ পয়সায় একটা রেকর্ড।
তুমি ভরে রাখলে আমাদের শৈশব যৌবন আমাদের হৃদয়।
রেকর্ড বেরুলেই কেনা। সারা ট্রাংক টা ভরে উঠলো কেবল তোমাতে।
কলেজে টেবিল বাজিয়ে হীরক গেয়ে উঠলো ' এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু '------
হারায়
সমীর কুমার বন্দোপাধ্যায়
শহর শুধুই মাটি হারায়
কেবলই আকাশ ছুঁতে চায়
ভেসে যায় মরীচিকায়
আকুল নয়নে তৃষ্ণার জল চায়
সেখানে শুধুই রঙের বাহার
থেকে থেকে শুধু শব্দের মার
আলোর রোশনাই আড়ালে গভীর আঁধার
গোরস্থানে মাটি চাপা হয় মানবতার।।
আশ্রয়
রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। বিদ্যুৎ বিভাগ অর্থাৎ The West Bengal Power Distribution Corporation Limited (WBPDCL) এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে বিনা লিখিত পরীক্ষায় নতুন কর্মী নিয়োগ করা হবে। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেয়েছে। আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক তথা পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এই চাকরিতে আবেদন করার জন্য উপযুক্ত। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব।
নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নম্বর: WBPDCL/Recruitment/2023/02
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ: 23.02.2022
পদের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য তথ্য:
(1) পদের নাম- মাইনস ম্যানেজার (Mines Manager)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 82,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে Mining Engineering / AMIE in Mining Engineering-এর ডিগ্রি থাকতে হবে।
শূন্যপদ- 2 টি
(2) পদের নাম- সেফটি অফিসার (Safety Officer)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 63,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- UGC-র স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে Degree in Mining Engineering / AMIE in Mining Engineering-এর ডিগ্রি থাকতে হবে।
শূন্যপদ- 5 টি
(3) পদের নাম- অ্যাসিস্ট্যান্ট মাইনস ম্যানেজার (Assistant Mines Manager)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 63,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- (a) Degree in Mining Engineering / AMIE in Mining Engineering from any institute approved / recognized by the UGC, AICTE with 2nd Class Manager’s Certificate of Competency under the CMR, 1957/2017
b) Diploma in Mining Engineering from an Institute approved by the State Council of Technical & Vocational Education and Skill Development / AICTE with 2nd Class Manager’s Certificate of Competency under the Coal Mines Regulation, 1957 / 2017.
শূন্যপদ- 13 টি
(4) পদের নাম- ব্লাস্টিং অফিসার (Blasting Officer)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 63,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা-
(a) UGC-র স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে Degree in Mining Engineering / AMIE in Mining Engineering-এর ডিগ্রি থাকতে হবে।
(b) State Council of Technical & Vocational Education and Skill Development / AICTE থেকে Mining Engineering বিষয়ে ডিপ্লোমা করতে হবে।
শূন্যপদ- 4 টি
(5) পদের নাম- ওয়েলফেয়ার অফিসার (Welfare Officer)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 63,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- 2 years full time Post-Graduate Degree / Diploma (PGDBM) / MBA / MHRM with specialization in Personnel Management / IR / HR from a University recognized by UGC / Institute approved by AICTE or from IIMs / XLRI / IIT B – School.
শূন্যপদ- 1 টি
(6) পদের নাম- সার্ভেয়র (Surveyor)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 41,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- Diploma in Survey Engineering from an Institute approved by the State Council of Technical & Vocational Education and Skill Development / AICTE with DGMS Certified Surveyor’s Certificate under the Coal Mines Regulations, 1957/2017.
শূন্যপদ- 4 টি
(7) পদের নাম- ওভারম্যান (Overman)
মাসিক বেতন- প্রতি মাসে 41,000 টাকা এবং অন্যান্য ভাতা।
বয়সসীমা- বয়স 55 বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- Diploma in Mining Engineering with valid Overman’s certificate of Competency from DGMS under Coal Mines Regulation 1957/2017.
শূন্যপদ- 16 টি
নিয়োগ প্রক্রিয়া:
শুধুমাত্র ইন্টারভিউ নেওয়া হবে অর্থাৎ ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট পদের জন্য চাকরিতে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো রকমের লিখিত পরীক্ষা হবে না।
ইন্টারভিউ এর তারিখ: 13.03.2023 এবং 14.03.2023 তারিখ দুদিন ইন্টারভিউ হবে।
ইন্টারভিউ এর স্থান: ‘Bidyut Unnayan Bhaban’ – Corporate Office – WBPDCL, Block- LA, Plot No.-3/C, Sector-III, Bidhannagar, Kolkata-700106 (beside National Institute of Fashion Technology).
ইন্টারভিউ এর সময়: সকাল 10.30 টা থেকে দুপুর 2.00 টো পর্যন্ত ইন্টারভিউ হবে।
চাকরির ধরন:
তিন বছরের জন্য সম্পূর্ণ কন্ট্রাকচুয়াল (Contractual) হিসেবে নিয়োগ করা হবে। তবে পরবর্তীতে কাজের ভিত্তিতে চাকরির সময়সীমা বাড়ানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তি ষ্পষ্ট জানানো হয়েছে।
ইন্টারভিউ এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া:
এই চাকরির জন্য আগে থেকে কোথাও আবেদনপত্র পাঠানো বা অনলাইনে আবেদন করতে হবে না। চাকরিপ্রার্থীদের সরাসরি ইন্টারভিউয়ের দিন একটি আবেদনপত্র এবং বেশ কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে হাজির হতে হবে।
ইন্টারভিউয়ের জন্য আবেদনপত্রটি অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির ৬ নম্বর পেজে দেওয়া আছে। নিচে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি তথা আবেদন করার ফর্মটি আপনি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ডাউনলোড করে ফর্মটি অর্থাৎ আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে সঠিকভাবে পূরন করে ফেলতে হবে। তারপর ওই আবেদনপত্রটি এবং দরকারি সমস্ত ডকুমেন্ট গুলি নিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্দিষ্ট ঠিকানায় উপস্থিত হতে হবে।
ইন্টারভিউয়ের জন্য দরকারি ডকুমেন্ট:
(1) জন্ম সার্টিফিকেট অথবা মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড
(2) শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশীট এবং সার্টিফিকেট
(3) কাস্ট সার্টিফিকেট (SC, ST, OBC দের ক্ষেত্রে)
(4) অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
(5) Copy of disability certificate
(6) Copy of MSP certificate
Official notice -
Official Website -
সেদিন রাত্রিযাপন যে কিভাবে করলাম তা প্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল না। শত যন্ত্রণা দুঃখ ও নির্যাতনের পরে যে একটুখানি হাসির রেখা মুখে ফুটে উঠবে তা কল্পনা করিনি। দেবী আমাকে দিন কয়েক পরেই রেজেষ্টারী করে বিয়ে করবে। যদিও আমি বলেছিলাম তার বাবার আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে সে শোনেনি।
আমি এই কারণে বলেছিলাম বা ইচ্ছে ছিল, যখন দেবীর জীবন তরণীর কর্ণধার হয়ে সেখানে যাবো তখন একেবারে সব বাধা বিঘ্নকে দূর করে ভবিষ্যৎ গার্হস্থ জীবনকে মধুময় করতে পিছনের কোন গ্লানি বা সাংসারিক চিন্তা রাখবো না। হয়তো এমনও হতে পারে দেবীর বাবা আমার পরিচয় জেনে ফেললে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিলে আমার স্বপ্নের গড়া স্বর্গ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বরং সেই দুর্নাম বা ওদের আভিাজত্যকে কোনরূপ নষ্ট করার আগেই সরে পড়া অনেক ভালো।
আমার কথা শুনে দেবীদাস আমায় বলল, তার বাবা যদি আমাকে কোন প্রকারে অস্বীকার করেন তা মানবে না। প্রয়োজন হলে বাড়ী হতে বেরিয়ে গিয়ে আমাকে নিয়ে অন্যত্র সুখের নীড় বাঁধবে। তাতে যদি বাবা তাকে তাজ্য পুত্র বলে ঘোষণা করেন তাতে তার কোন আপত্তি থাকবে না। কারণ সে তার ভালবাসার পাত্রীকে কিছুতেই উপহাস্যস্পদ হতে দেবে না। ময়নার মা হারানোর দুঃখকে যখন রমা নিজের মাতৃস্নেহ দিয়ে ঘুচিয়ে দিয়েছে তখন রমার কৃতজ্ঞতা দেবীদাস কোন দিন ভুলতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার কলঙ্কিত অতীত জীবনকে বার বার স্মরণ করিয়েও আমি তাকে এই পথ হতে বিচলিত করতে পারিনি। অবশ্য আমার অজ্ঞাতসারে আমার নারীমন কখন যে তার হৃদয়ের মধ্যে একটা স্থান করে নিয়েছে তা আমি জানি না। দেবী আমাকে কোন প্রকারে ত্যাগ করবে না শুনে আমার চক্ষু হতে কত বার আনন্দাশ্রু ঝরে পড়েছে। বিশেষ করে তার বাবার আগমনের কথা শুনে আমার মন অজ্ঞাত আশঙ্কায় ভরে উঠেছিল। বিয়ে আমাদের অতি শীঘ্র হবে। কিন্তু আমাদের পরিনয়ের শুভ রাত্রির
পূর্ব্বে শ্যামলীদির কারা মুক্তির বিশেষ প্রয়োজন তা না হলে এই শুভদিন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
কিন্তু সে আশা পূর্ণ হয়নি। তার আগেই শ্যামলীদি কারামুক্তির পথ নিজেই খুঁজে পেয়েছিলো। অভিমানীনি কন্যা কোন প্রকারে তার বাবাকে কলঙ্কিত মুখখানি দেখাতে রাজী হয়নি। পিতা-মাতাকে নিজের মুখ দেখানোর আগেই সে কারাভ্যস্তরে আত্মহত্যা করেছিলো। নিজেদের পরামর্শ মতো আমরা সকলেই সেদিন শ্যামলীদির কারাকক্ষের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম। শ্যামলীদি কারাকক্ষ হতে মুক্ত বাতাসে আসবে। আমরা সকলে তাকে আনতে যাবো। অরূপবাবু বহু পরিশ্রম করে শ্যামলীদিকে জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। শ্যামলীদি পুনরায় আমাদের মাঝে উপস্থিত হবে শুনে মনটা আনন্দ বিহ্বল হয়ে উঠেছিলো।
আমরা সকলে কারকক্ষের কাছে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছি কখন শ্যামলীদি বেরিয়ে আসবে। অরূপবাবু উপস্থিত হয়ে শ্যামলীদির বেরিয়ে আসার দেরি দেখে জেলের মধ্যে প্রবেশ করে খোঁজ নিতে গেলেন। দেবীদাস ও সুভাষদা আলোচনায় মগ্ন। তারা সকলেই আগের মতো শ্যামলীদিকে আদর করবে। সে সুস্থ সমাজ জীবন থেকে অধঃপতিত হয়ে গেছে বলে ঘৃণা করবে না। আমার বারবার তখন মনের মধ্যে এই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। যারা পতিতা এবং ভ্রষ্টা, তারা যদি প্রত্যেকেই কখনও দরদী মনের স্নেহস্পর্শ লাভ করে, তাহলে সমাজ জীবনে তারাও আবার অন্যান্যদের মতো পিছনের কলঙ্কিত জীবনের ঘৃণা কাহিনী ভুলে গিয়ে সুস্থ সমাজ ও মধুর গার্হস্থ জীবন গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু কে তাদের সমবেদনা জানাবে।
হঠাৎ এক সময় অরূপবাবু শোকের ঝড় নিয় আমাদের কাছে উপস্থিত হলেন। ওর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে অধৈর্য্য হয়ে বললেন শ্যামলীদির বাবা। অরূপবাবু আপনি নীরব রইলেন কেন? তবে কি শ্যামলীর জামিন হবে না?
অরূপবাবু অতি ধীর কণ্ঠে বললেন, শ্যামলীকে জামিন নেবার জন্য আর বেগ পেতে হবে না। সে আর ইহজগতে নেই। নিজে মুক্তি নিয়েছে সেই সঙ্গে আমাদিগকে মুক্তি দিয়ে গেছে। এই পত্রটা পড়লে বুঝতে পারবেন।
শ্যামলীর বাবা ব্যাকুল হয়ে পত্রটার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছোট্ট ছেলের মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আমরা সকলে মুষড়ে পড়লাম প্রিয়জনের বিরহ বেদনায়। আমার বুক কঠিন পাষাণ হয়ে গেলো। দেবীদাস পত্রটা পড়ে গোপনে চোখের জল মুছে আমার হাতে পত্রটা তুলে দিলো। আমি বহু কষ্টে কোন প্রকারে চোখের জলকে সংযত করে পত্রটা পড়তে শুরু করলাম। শ্যামলীদি লিখেছে,
স্নেহের পদ্মা,
তোকেই এই শেষ পত্র লিখছি তুই আমার অন্তিম স্নেহ ভালবাসা গ্রহণ করিস। আমি তোদের কাছ হতে চিরবিদায় নিচ্ছি বলে আমাকে ক্ষমা করিস। আত্মহত্যা ছাড়া কোন উপায় ছিল নারে। তুই তো জানিস আমি এর আগে মৃত্যু বরণ করতে পারতাম, কিন্তু কেন করিনি তা তো জানিস। এবার আর ধৈর্য্য করতে পারলাম না এই কারণে, যখন শুনলাম আমাকে পুনরায় বাবার কাছে যেতে হবে। একদিন বলেছিলাম তোকে, আমার এই কলঙ্কিত মুখ কোন প্রকারে বাবাকে দেখাতে পারব না। কারণ দেবতুল্য পিতাকে অপমান করে এক লম্পটের সাথে বেরিয়ে গিয়ে নিজের জীবনকে কলঙ্কে পরিণত করেছি। সে পিতার কাছে কিভাবে দাঁড়াই বলতো? পারলাম নারে তোদের সাথে মিলেমিশে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে। যে দিন জানতে পেরেছিলাম দেবীদাস দাদার বন্ধু, সে আমাকে জেলে থাকতে দেবে না, সেদিনই আমার ভবিষ্যৎ ঠিক করে নিয়েছিলাম।
গতকাল যখন জেলের অধিকর্তা আমাকে বললেন, আমি মুক্ত বাতাসে যাবার পারমিশন পেয়েছি, ভাবলাম কেন আমার দ্বারমুক্ত করলেন। আমার যে বাইরে বেরুবার মতো কোন মানসিক অবস্থা নেই। তা হলে কেন আমাকে মুক্তির পথ দেখালেন।
আমার উপর অভিমান করিস না বোন। আমিও চেয়েছিলাম পাঁচ জন মেয়ের মতোই বাঁচতে, কিন্তু পারলাম না। বেশী কথা লেখার মানসিকতা নেই, পরপারের বাঁশী আমার কানে বাজছে, বলতে ইচ্ছে করছে, ‘মরনকে তুঁউহু মম শ্যাম সমান'।
শেষে লিখি যে, যদি কোন দিন বাবার সাথে দেখা হয়ে থাকে তাহলে বাবাকে বলিস, এই পাপীষ্ঠাকে যেন ক্ষমা করেন। আর তোরাও একটু কামনা করিস আমার আত্মা যেন একটুখানি শান্তি পায়।
শুভেচ্ছান্তে,
হতভাগিনী শ্যামলীদি
চিঠিটা পড়ার পর দুই চক্ষুকে কোন প্রকারে সামলাতে পারিনি মাতৃহারা মেয়ের মতো কাঁদতে থাকলাম। বারবার বিরহ যন্ত্রণায় দারুনভাবে শোকাহত হয়ে বারংবার অভিযোগ ও ধিক্কার দিয়ে বলতে থাকলাম, কেন ভুল করলে শ্যামলীদি। তোমার পাপ, তোমার অজ্ঞাত ভুল-ত্রুটিকে তোমার বাবা মেনে নিতেন, তাহলে কেন আমাদের কাছে ফিরে এলে না? পথভ্রষ্টা নারী হলেও তুমি আবার নতুনভাবে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা শুরু করতে পারতে।
চাপা দীর্ঘশ্বাসে আমার বুকে যেন বিচ্ছেদের শত শত বান এসে বিদ্ধ করতে লাগলো। মুখে কাপড় গুঁজে কাঁদতে থাকলাম। এক সময় শ্যামলীদির শবদেহ এক ট্রেচারে বহন করে সরকারী এ্যাম্বুলেন্সের কাছে নামালো। কোন প্রকারে ঢাকা খুলে সেই হাসিমাখা মুখখানি দেখে ওর উপর আছড়ে পড়লাম। বার বার ঐ এককথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল, আমিও তোমার মত পতিতা মেয়ে, আমার মতোই সুখের নীড় বাঁধতে পারতে। এছাড়া আরো অনেক কথা বলেছিলাম, তা মনে নেই।
জানি না ঐ দিন কতক্ষণ আমি শ্যামলীদির শবদেহের উপর আছড়ে পড়ে কান্নায় রত ছিলাম। শ্যামলীদির বাবা ও দাদার মুখপানে তাকাবার অবকাশ ছিল না। শ্যামলীদির এই শবযাত্রার মর্মন্তুদ দৃশ্য আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শ্যামলীদির বাবাকে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে থাকতে দেখলাম। ওর দাদা কাদতে থাকলেন। এই দৃশ্য কতখানি যে কষ্টদায়ক সে দিন বুঝেছিলাম।
সেদিন ওখান হতে গভীর বেদনা বক্ষে নিয়ে দেবীদাসের বাড়ীতে ফিরে এলাম। বাড়ীতে এসেও আমি শোককে সহজে ভুলতে পারলাম না।
শ্যামলীদির মৃত্যুর পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। নিদারুন শোকাতুর মন নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছিলাম দিনগুলোকে। কোন প্রকারে নিজেকে শান্তিতে রাখতে পারছিলাম না। কারণ আমার মানসপটে শ্যামলীদির মুখচ্ছবি বারবার ভেসে উঠতো। বিশেষ করে ওর কথা গুলো যখন আমি স্মরণ করতাম তখন এক নিদারুন বিবেকের দংশন জ্বালা আমি দেহ মনে অনুভব করতাম।
শ্যামলীদির অভাব আমি জীবনে পূরণ করতে পারিনি, মানসিক মর্মজ্বালায় ক্ষত- বিক্ষত ও বিভ্রান্ত। সেদিন গায়ত্রীদি আমাকে চাপ দিয়ে ধরে বসলো শ্যামলীদি কি করে অন্ধকার জীবনে প্রবেশ করেছিল। যদিও বলার মত ক্ষমতা আমার ছিল না। বার বার তার কাতর প্রার্থনাকে পরিত্যাগ করতে পারিনি। বলতে বাধ্য হয়েছিলাম। সে কাহিনী বলার সময় কতখানি যে চোখের জল পড়েছে তা জানি না।
গায়ত্রীদি ঘটনা শুনে শুধু ঠোঁটকে দাঁতে চেপে বলেছিলেন, শয়তানটাকে খুন করে কোন অন্যায় করেনি। কিন্তু হতভাগী কেন মৃত্যু পথযাত্রী হয়েছিলো। হলই বা সে পাপিষ্ঠা। তবুও আমরা সকলেই তাকে মেনে নিতাম। গায়ত্রীদির সাথে তর্ক করার মত ক্ষমতা আমার ছিল না।
তবে শ্যামলী যে কথা পত্রে লিখেছে তা ঘুনাক্ষরে মিথ্যে নয়। গায়ত্রীদির সাথে আলোচনা করার পর তিনি প্রস্থান করলে পর দেবী এক সময় আমার মনকে সতেজ করার জন্য এক সুখের বার্তা এনে উপস্থিত হলো। দেবী কোর্টে আপিল করেছে রেজেষ্টারী ম্যারেজ নিয়ে। কিছু দিনের মধ্যে তারা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত জীবন উপভোগ করবে। সেই সময় সুখের বার্তা আমার মোটেই ভালো লাগেনি। তবুও অতীতের কথা মনে পড়তেই দুই চোখ বয়ে জল পড়তে শুরু করল । অতীতের স্মৃতিকে চোখের সামনে ভাসিয়ে তুললাম।
পতিতালয়ে দীর্ঘদিন ধরে জীবন যন্ত্রণায় কাতর হয়েছি, জীবন দেবতার নির্মম পরীক্ষায় অধৈর্য্য হয়ে বার বার নীরবে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু আজ দেবীর কথা শুনে আমার ঘৃণ্য ইতিহাসকে পিছনে ফেলে, শত গ্লানি যন্ত্রণাকে ত্যাগ করে ঊষর আকাশের নীচে দাঁড়াবার সুযোগ পেলাম। দেবী আমাকে কোন দিনই মিথ্যে বলে না। আমরা মাস খানেক পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।