অঞ্জলি দে নন্দীর একটি গল্প

 বড় পুকুরের পাড়ে



চৈতন্যবাটী গ্রামের নন্দীদের বড় পুকুরের পাড়ে একটি বিরাট বহু পুরোনো নীম গাছ আছে। গ্রামের সবাই জানে যে ওই গাছে ভূত ও পেত্নী আছে। 

তবুও চোররা রাতে মাছ চুরি করতে যায়। গভীর রাতে তারা জাল ফেলে মাছ ধরে। খালুই ভরে। তারপরে, সকালে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রী করবে - এরকমই ওদের পরিকল্পনা রয়েছে। 

এক খালুই ভরে গেছে। এবার জাল থেকে মাছ পাড়ে ঝেড়ে তা দ্বিতীয় খালুইয়ে তুলে রাখছে। এমন সময় একদল ভূত ও পেত্নী তাদের ঘিরে ফেলল। ওরা শুনল, " হাউ মাউ খাউ, তোরা ছ'টা খালুই এনেছিস, সবগুলো মাছে ভর। তারপর চুপচাপ ওগুলি এখানেই রেখে চলে যাবি। না হলে সবার ঘাড় মটকাবো। হাউ মাউ খাউ...। "

এবার চোররা তাই করল। খালি জাল কাঁধে করে ভয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরে গেল। 

পরের দিন সকালে নন্দীমশাই প্রাতকালে দাঁত মাজতে মাজতে মাজতে হেঁটে হেঁটে হেঁটে বড় পুকুরের পাড়ে এসে হাজির হলেন। অবাক কান্ড এ যে! উনি দেখলেন ছ'খালুই মাছ। তখন মোবাইলে ফোন করে তিনি তাঁর নাতী আশিসকে ওখানে আসতে বললেন। ব্যাপারটা শুনে আশিস তখন তাদের বাড়ির চাকরকে ও দারোয়ানকে বলল, " ছ'টা বড় থলে নিয়ে বড় পুকুরের পাড়ে চল!" এরপর ওরা সেখানে গেল। দাদু, নাতী ও দারোয়ান সব মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। খালুইগুলো ওখানেই পড়ে রইল। পুকুর পাড়ে ঝোপের আড়ালে চাকর লুকিয়ে রইল। দুপুরে সে দেখল যে জেলে পাড়ার তাদের চেনা ওই লোকগুলো খালুইগুলো নিয়ে কাঁধে তুলছে। সে তখন দৌড়ে গিয়ে চোরগুলিকে হাতেনাতে ধরল। ও ওদের বলল, " নন্দীবাবুর কাছে চল! না হলে খুব খারাপ হবে। " ওরা গেল। নন্দী মশাই ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, " তোরা মাছ ভর্তি খালুইগুলো ফেলে রেখে গিয়েছিলি কেনো? " ওরা তখন ঐ ভূত ও পেত্নীদের কথা বলল। এরপর উনি তাদের ছেড়ে দিলেন। 

এই রাতে নন্দী মশাই( দাদু), আশিস(দাদুর নাতী), আশিসের বাবা(দাদুর ছেলে), চাকর, দারোয়ান সবাই মিলে বড় পুকুরের পাড়ে বসে রইল। মাঝ রাতে ঐ ভূত ও পেত্নীর দল ওদের কাছে এলো। এক এক এক জন করে এসে বলল, " আমি আশিসের দাদুর বাবা। আমি আশিসের দাদুর বাবার বাবা। আমি আশিসের দাদুর মা। আমি আশিসের দাদুর মায়ের মা। আমি আশিসের দাদুর বড় পিসিমা। আমি আশিসের দাদুর বড় মাসীমা। আমি আশিসের দাদুর জেঠু। আমি আশিসের দাদুর জেঠিমা। আমি আশিসের দাদুর ছোট পিসিমা। আমি আশিসের দাদুর ছোট মাসীমা। আমরা বহু বছর ধরে এই নীম গাছের ডালে দিনের বেলায় থাকি। আর রাতে এই বড় পুকুরের পাড়ে ঘুরে বেড়াই। তোরা সবাই মিলে এইবার আমাদের প্রত্যেকের নামে গয়ায় গিয়ে পিন্ড দান কর! তাহলেই আমরা মুক্তি পেয়ে এই নীম গাছ ছেড়ে স্বর্গে যেতে পারব। আমাদের তোরাসকলে মিলে এবার উদ্ধার কর! " ওরা তাদের কথা শুনে রাতে বাড়ি এলো।

সকালে গয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেখানে গিয়ে পিন্ড দান করে তারা ফের নিজেদের বাড়ি এল।

পরের রাতে আবার সেই বড় পুকুরের পাড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু কেউই আর এল না। ওরা বুঝল যে সত্যই সব ভূত ও পেত্নীরা অর্থাৎ তাদের নিজেরজনগণ সকলেই স্বর্গে চলে গেছেন, এই নীম গাছ ছেড়ে, চিরতরে। ওরা সারা রাত ওই বড় পুকুরের পাড়ে থেকে সকালে বাড়ি এল। 

তবে পুকুর পাহারা দেবার জন্য একজন পাহারাদার রাখলেন, নন্দী মশাই। সে বন্দুক নিয়ে সারা রাত নন্দীদের বড় পুকুরের মাছ পাহারা দেয়, এখন। কারণ, এখন তো আর ভূত ও পেত্নীরা তাদের পুকুরের মাছ পাহারা দেবার জন্য পাড়ের নীম গাছে নেই। তাই.........

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024