রম্যরচনা || একান্নবর্তী নাকি অনু পরিবার || সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

 একান্নবর্তী নাকি অনু পরিবার



   

      পরিবার যদি যৌথ হয় অনেক কিছুই সহজলভ্য হয়। তাতে হয়তো কাউকে সামান্য আত্মকেন্দ্রিকতাকে বিসর্জন দিতে হয় কিন্তু লাভ হয় মানসিকতার এবং অনেক যৌথ প্রকল্পের। 

   অনু পরিবারে যেটা কখনোই সম্ভব নয়। ফলে অনু পরিবারের মানুষদের সন্তানেরা বেশি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারে সহজেই-- অন্যজনের তাতে কতটা ক্ষতি হলো তাদের কিছু যায় আসে না। 

ভীষণভাবে স্বার্থপর জীবন যাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা মা জীবিত থাকলে তাদেরকে বোঝা মনে করে সবকিছুই ব্যাঙ্কের দোরগোড়ায় জমা দিয়ে বাবা মাকে ঠকিয়ে কাজ হাসিল করতে চায়। কতটা সম্পত্তি তার হিসাব করে নিজের দখলে আনতে বাবা মাকে নির্বিচারে মানসিক চাপ দিতে ব্যস্ত হয়।। এরা অবশ্যই বেশিরভাগই "শিক্ষিত সম্প্রদায়ের। যার জন্যে বাবা মা অনেক জটিল পরিস্থিতিতেও তাকে শিক্ষিত করলো তার হিসেব না রেখে বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রম পর্যন্ত ঠেলে দিতেও কুণ্ঠা করেনা বরং আনন্দই পায়। এরা বর্তমানে সামাজিক স্বীকৃতি পেয়ে বড় লিডার ( নেতা) সেজে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বাবা বা মা কী খেল এবং আদৌ খেল কিনা তাদের খবর নেবার সময়ই হয় না তাদের। অনেক বিদ্বজ্জন অবশ্য বলেন তারাও পরবর্তী জীবনে একই জ্বালা যন্ত্রনা ভোগ করবে। এব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মত হলো কাউকে শাস্তি দিতে কানমূলে দিলে সেই ব্যক্তি যদি অন্যজনের কানের দেয় সেটা কি প্রথমজন বুঝতে পারলো কানমূলে দেবার যন্ত্রনা বা জ্বালা! অতএব এ পরম্পরা না থাকাই ভালো। বরং ছেলে একান্নবর্তী থেকে অন্যান্য ফ্যামিলি মেম্বারের খেয়াল রাখুক; একান্নবর্তী হোক্। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে পুত্র সন্তানের মোহে মানুষ কন্যা ভ্রুণ হত্যা করছে। কিন্তু ভেবে দেখুন--- মেয়েরা সম্পত্তির লোভে এতটা নৃশংস হয়না বোধহয়। 

    

 একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের হাসি ঠাট্টা খুবই মজার বিষয় হয়ে আনন্দ বৃদ্ধি করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেনা কেউ কাউকেই। হ্যাঁ, একান্নবর্তী থাকার সুবাদে কেউ হয়তো শারীরিক ভাবে ততটা শ্রম দিতে পারে না। কিন্তু সেটাও ধর্তব্যের মধ্যে ধরা হয় না। দাদা দিদি কাকা কাকীমা, জ্যেঠা জ্যাঠাইমা, ঠাকুমা, দাদুর আদর থেকে বঞ্চিত হয় না বরং লাভবান হয়। সামান্য তম স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পরম প্রাপ্তি হয়। যৌথ পরিবার এখন যদিও দুঃস্বপ্নের -- তবুও ক্ষমতাহীন নয়। অনুসারে পরিবারের ঢেউ অবশ্যম্ভাবী ভাবে একদিন নষ্ট হবেই হবে। নদীর স্রোত বাধা পেলে যেমন সে গতিপথ খুঁজে আরও জোরালো হতে চায় তেমনি এই যুগের অনুসারে পরিবারের স্রোত গতি পথ বদলাবে -- এ ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024