রম্যরচনা || শুধু তোমার জন্যে || সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

 শুধু তোমার জন্যে




       দ্যাখো মরিস তোমার জন্যে আজ আমি না অফিস পালিয়ে এসেছি।বাব্বা, যা কাজ! যেন শেষ হতেই চায়না। সেই সকাল ৯/৩০টায় ঢুকে বসেছি কাজে: একটাও শেষ করতে পারিনি। জল খাবারেরও সময় করতে পারিনি। ভালো লাগেনা রোজ রোজ ঐ ফাইল চেক করা! আরে বাবা যদি ফাইল চেক করতেই হয় তবে কী দরকার ছিল এত লোক রাখার! তারা ভুল করবে আর আমি চেক করবো! কেন রে বাবা! তার ওপর তুমি একলা ঘরে এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে কী করে একলা আছো সেটা ভেবেই দৌড়ে চলে এসেছি। দাও দাও দাও দেখি তোমার ঐ চাঁদপাড়া মুখটা দাও, তোলো । এ্যাই এ্যাই একটা ঠোঁটের ছোঁয়া দাও দেখি। আমার না কী যে ভালো লাগে! কী করে বোঝাই তোমায়। তোমার ঠোঁট দুটো না কী নরম পাতলা! যাই হোক - মোট কথা তুমি আজ আর রান্নাঘরে যাবে না বলে দিলুম এ্যাঁ! সবসময় আমার মুখে মুখ রেখে শুয়ে থাকবে কেমন! আচ্ছা বাবা আচ্ছা - বললো মরিস। 

      কিন্তু সৌভিক ,তুমি আজ এমন কেন বলোতো। আমি তো তোমারই, শুধু তোমারই।সারাদিন সারারাত শুধু তোমার। তবে আজ হঠাৎ একী হলো তোমার! মরিস বলেই ফেললো শেষমেশ। 

    দ্যাখো, বাইরে কত মেঘ, কত বৃষ্টি পড়ছে, কত পাখির ওড়াওড়ি। ভিজে যাচ্ছে তাদের ডানা। আর উড়তে পারছে না। তারা এসময় কাকে চাইবে বলো তো--এক্কেবারে আপনজনের সান্নিধ্য তাই না! ! তাইতো আমিও চাইছি ওদের মতোই। তুমি কোথাও যেওনা আজ প্লিজ। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে একদমে বলে গেল আজকের সৌভিক। গান ধরলো--

ও কোকিলা তোরে শুধাই রে

সবারই তো ঘর রয়েছে 

কেন রে তোর বাসা কোথাও নাই রে!? 

ও কোকিলা----

   থাক্ থাক্ বুঝতে পেরেছি।আর গাইতে হবেনা।লায়লা আজ বোধহয় আসেনি অফিসে এই বৃষ্টির মধ্যে!? তাই এতো.... না হলে যে একদিন বলতো-- ও পাড়ার বিশুটা না বড্ড বেশি বৌয়ের পিছনে নড়বড় করে- সেই সৌভিক! যে বলতো বোয়েরা বাড়ির ভেতরে থাকবে আর পুরুষরা টাকা রোজগারের আশায় প্রাণ ঢালা খাটবে- সেই সৌভিক। 

  মরিস তাই অবাক আজকের সৌভিককে দেখে। 

আচ্ছা লায়লা কে ডাকলে হয় না- মরিস বললো! 

সে কি গো! সৌভিক বললো যদি বস জানতে পারে না তাহলে রোগ রোগী দুটোই যাবে! 

  মানে? - জিজ্ঞাসু চোখে মরিস বলে। 

  সৌভিক-- লায়লা যাবে, চাকরি টাও যাবে!  

   কেননা, লায়লা শুনেছি বসের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া। তাই সে কি চাইবে আমার মতো ছেলের সাথে----

  সৌভিক একদমে বলে কেমন যেন হয়ে গেল হঠাৎ। অথচ লায়লা এখন আফোঁটা কুঁড়ি। তার স্তন নিতম্ব বড়ই লোভনীয়। এখনও রঙ ধরেনি তাতে। আর বৃষ্টিতে ভিজে তার টপের ওপর অংশটা সামান্য ভিজে আজকে যা দেখাচ্ছে তা কোনও পুরুষের কাছেই বোধহয় চোখ থেকে সরতে চাইবে না। সৌভিক ও পারেনি।কিন্তু সৌভিক তার নরম বৌয়ের পিছনে" আর কেউ আসুক " সেটাও যে চায়না। যদিও আজ ভ্যালেনটাইন ডে বলেই নাকি লায়লা সৌভিককে একটা গোলাপ ফুলের 'তোড়া' উপহার দিয়েছে। ।

   মরিস শুনেই তো অবাক! কৈ সেটা কৈ গো! দেখাও না। প্লিজ্। 

সৌভিক-- অফিস ব্যাগের ভেতরে আছে। অনেক যত্নে তোমার জন্যে এনেছি; তোমাকে দেব বলে। 

মরিস- বারে, অপরের দেয়া জিনিস আমি নেব কেন! একটু ধরা গলায় বললো-- মরিস। 

তবে লায়লা যখন দিয়েছে দেখতে হবেই আমায়। এই বলে ছুটে অফিসের ব্যাগটা খুলেই মরিস বললো-- এতে তো আবার কী সব লেখা দেখছি। কী বলোনা গো। 

লায়লা বুঝি দিয়েছে তোমায়! 

    সৌভিক হতবাক। মনে মনে বললো লায়লা আবার এসব কখন দিলো! 

সে তো জানতে পারেনি। লায়লার কি তবে মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে! নাকি লুকিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে কখন ! 

  মরিস বললো-- ও, আজ তাকে কাছে না পেয়েই বুঝি আমার কাছে এসেছো ! তা যদি তাকে এতই ভালোবাসো তবে তাকেই তো ঘরে ডেকে নিয়ে আসতে পারতে। আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি তোমার কাছে। মরিসের স্টাটেসটিক্সটা তো তোমার কাছেই শুনেছি খুব বেশি মোহনীয়। যেমন চেহারা তেমন মুখের আদল আর চোখদুটো যেন রাতের শুকতারা। গালে দুটো ডিম্পল। কাছে এলেই শরীরের মধ্যে শিহরণ লাগে। আর তুমি , বা তোমার মতো ছেলেরা তো সবসময় নতুনভাবে নতুন কেই কাছে ডাকতে ভালোবাসো তাই না। 

তাদের বৌ তো পুরোনো হয়ে যায় । তাই তারা, নতুনকে চায় সবসময়। তাদের ভালোবাসা মানে তো ঐ মুসলমানদের মুরগি পোষার মতোই ! মরিস রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে কেঁদে কেঁদে বলেই ফেললো একটা সময়। বুকের মাঝে দুটো বিল্বফলের অংশটা তখন তার হাওয়ায় দুলে দুলে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় সৌভিককে। 

 কাগজ খুলে মরিস দেখে-- "ভিকি' বলে অনেক লেখা। কে গো! এই ভিকি আবার কে! মেয়েটা কিন্তু সুবিধের নয় বুঝলে। তলে তলে আরও ছেলে জুটিয়েছে। সাবধানে থেকো বাপু। যাই ,বাবা মায়ের জন্যে কিছু খাবার দিয়ে আসি বরং। ওনাদের অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয়নি। তারপর তোমার সাথে --- সারাক্ষণ.... 

 আমি কিন্তু নোংরা কাপড় পরে থাকতে পারবো না এই বলে দিলুম হ্যাঁ।। তাছাড়া তুমি "ওটা" আননি তো! রোজ ভুলে যাচ্ছো! আমি এত তাড়াতাড়ি সন্তান চাই না বুঝলে! শরীরের সৌন্দর্য এত শীগগির নষ্ট হোক আমি চাই না।। যাও ভিজে ভিজেই নিয়ে এসো --যাও। যেমন কর্ম তেমন ফল ভোগো। যাও। কবে থেকে বলছি-- কানেই নিচ্ছো না কথাটা। 

   সৌভিক কোন্ উত্তরটা আগে দেবে বুঝতে না পেরে বললো ডার্লিং, ভিকি আমারই নাম। অফিসে লায়লা ঐ নামেই ডাকে আমায়। এই বলে একপ্রকার ছুটেই রাস্তায় বেরিয়ে আনতে ছুটলো ()জিনিস টা(!)! আমি ও তো তাকে ডাকি চুটকি বলে। কেউ রাগ করেনি তো! 

   হায়রে কী দুর্দান্ত শাস্তি রে বাবা। এমন মেয়ে ছেলের পাল্লায় পড়ে আজ একী দুর্দশা আমার। চুটকি হয়তো এসব করতোই না-- সৌভিক ভেবেই চলে। 

   বৃষ্টির বেগ কমেনি তখনও কিন্তু সৌভিকের 'ইচ্ছাটা' আর তেমন জোরালো নয় আগের মতো। 

     মেয়েদের বুক আর নিম্নাঙ্গ দুটোই বড়ো কাজের। কিন্তু ছেলেদের! ----

     ধুর আর ভাল্লাগছে না। তার চেয়ে চুটকির পাশে পাশে গায়ে গা ঠেকিয়ে বসি বরং। এই বৃষ্টির মধ্যে না পাবার ইচ্ছাটা তখন জমে ক্ষীর হয়ে যেত । বরং সেটাই ভালো ছিল। আর লায়লা কত কিছু শোনাতো, কোথাও বেড়াতে নিয়েও যেতো হয়তো। মরিসের কাছে ফিরতে দেরি হলে কোনও বাহানায় নাহয় এড়িয়ে যেতাম। । আরে বাবা, প্রেমে পড়লে একটু আধটু এরকম মিথ্যে তো বলতে হয়ই। তাছাড়া ও ভীষণ জমা টি। অন্ততঃ মরিসের মতো তো নয়। এখনও ওর দিকে তাকালে শরীরের সবটুকু দেখার জন্যে মনটা বড়ই উসখুস করে। যাই অফিসে ফিরে যাই। কেউ জিগ্যেস করলে যা হোক কিছু বলে এড়িয়ে যাব নাহয়। 

 মরিসের কাছে আজ আর পাবোনা। পেলেও সুখ হবে না ততটা। যাই অফিসে ফিরে। সৌভিক এরকম নানান চিন্তায় কী করবে ঠিক করতে পারছে না। যাঃ বাব্বা, হিত করতে বিপরীত! কোথায় একটু বেশি করে পাব তা নয় শুধু ফরমাস।

   ঐ চুটকিই বরঞ্চ ভালো। অফিসে বসে যেটুকু পাই সেটাই অনেক।। কিন্তু আমাকে এতক্ষণ না দেখে ও আবার বাড়ি চলে যায়নি তো আজ! যাই দেখি।

      সৌভিক অফিসের ব্যাগ ছাড়াই চললো লায়লার সান্নিধ্যে। ঘরে মরিস তখনও সময় গুনছে। আহা বেচারা! 

   আচ্ছা চুটকিকে আগে একটা ফোন করলে হয় না-- সৌভিক ভাবে। কিন্তু মোবাইলটা তো বাড়িতে ব্যাগের মধ্যে রয়ে গেছে। কী করবে ভাবছে সৌভিক। ফোন নম্বরটাও মুখস্থ নেই। কাউকে যে অনুরোধ করবে তারও উপায় নেই। দেখাই যাক অফিসে গিয়ে। লায়লা হয়তো আমাকেই খুঁজছে এতক্ষণে। যদি ফোন করে! নাঃ। আর ভাবতে পারছি না। অফিসে গিয়েই দেখি। সৌভিক চললো একটা 'ওলা' ডেকে অফিসে। ঘরে মরিস একা একা তখন কাঁদছে। 

     হায়রে বিধি!  

    বিধি রে তোর লীলা বোঝা দায়! 

যে উড়ে যায় তারে বাঁধিস খাঁচায়!!

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024