Sunday, October 3, 2021

প্রাবন্ধিক অমিত পাল -এর একটি প্রবন্ধ

 লকডাউন ধনীদের জন্য

                    



লকডাউন ধনীদের জন্য, গরীবদের জন্য নয়। লকডাউন তো তারাই চাই তারা প্রাসাদে বসে আরাম করে, লকডাউন তো তারাই চাই যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এ মাস শেষে মোটা টাকা আসে। কিন্তু গরীবরা তো লকডাউন চাই না। কারণ তারা হল দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষ।


এই লকডাউনে কত মানুষ অনাহারে ভুগছে হুঁশ আছে আমাদের দেশ ও রাজ্য সরকারের? আমাদের কি হবে কেউকি ভাবছেন? আমাদের মত গরীব দের পেট কিভাবে চলবে তার একটি রাস্তাও কি বের করা আছে? তাহলে লকডাউন কেন? মানছি করোনা অতিমারিতে এটা জরুরী পদক্ষেপ কিন্তু একটি বছর এই করে কেটে গেল। তাহলে আবার এই বছরে? এতে তো অনাহারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাহলে লকডাউন টা কি জরুরী ছিল?


আচ্ছা, প্রথম বছরের পরিস্থিতি তো অনেকটা শিথিল ছিল তাহলে আবার করোনা বৃদ্ধি পেল কেন? এইটা নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করে না। এখন দ্বিতীয় ধাপে করোনা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই কোনো কিছু না ভেবেই কি লকডাউন? সাধারণ মানুষের জন্য ই সরকার। তাহলে ভোটটা কি মহামারী থেকে মুক্ত হওয়ার পর করলে হত না? যেমন চাকরি পরীক্ষার রেজাল্ট ঝুলে থাকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান ঝুলে থাকে তেমনই ভোটটাও ঝুলিয়ে রাখলে কি অসুবিধা ছিল? মানুষের জন্য ই তো সরকার গঠন আর যদি মানুষ ই বেঁচে না তাহলে কার জন্য সরকার? এই প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন?


ধনীদের উদ্দেশ্যে বলছি, গরীবদের কষ্টের ফলেই আপনি কিন্তু প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তাই গরীবদের কথা ভাবুন। ধরুন আমাদের মত গরীবরা আর বেঁচে থাকল না, কেউ অনাহারে আবার কেউ মহামারীর কবলে ধ্বংস হয়ে গেল তখন কি করবেন? পারবেন কি রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলাতে? পারবেন কি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে শস্য বোঝাই করতে? কি খাবেন তখন? মাসের শেষে মে মোটা টাকা আসে সেগুলো তো কাগজমাত্র, তখন কি ঐগুলি খেয়ে বাঁচবেন? মনে রাখবেন এই প্রকৃতির বাস্তব পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রের চক্র বলে একটা চিরন্তন সত্য আছে। আমরা গরীব রা এবং আপনাদের মত ধনীরা এই চক্রের মধ্যে আবদ্ধ। তাই আমাদের মত গরীবরা ধ্বংস হলে আপনারাও ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্র ও সময়ের কাল চক্রে ধ্বংস হয়ে যাবেন। তখন কোথায় থাকবে প্রাসাদ? কেই-বা ভোগ করবে, ভেবেছেন কি?


সরকারের উচিত এই ব্যাপারে আমাদের মত গরীবদের জন্য ভালো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া। জানি লকডাউন দরকার। কিন্তু অতিমারির বদলে যদি অনাহারে আমাদের মৃত্যু হয় তখন তার দায় কি সরকার নেবেন? এর জন্য এই লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রতিটি গরীব মানুষদের পেটের দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। কিছু না হলেও অন্তত পরিবেশ সুরক্ষা মূলক ১০০ দিনের কাজ , গ্রাম উন্নয়ন মূলক কাজ দেওয়া হোক তাতে সরকারের ফান্ড থেকে আমাদের মত গরীবদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এও কিছু টাকা আসে। যাতে করে আমরাও বাঁচতে পারি। আমি কাজ ছাড়া সরকারকে এমনি টাকা দেওয়ার কথা বলিনি। তাই সরকারের উচিত এই দিক গুলো ভেবে দেখা।

লেখক সামসুজ জামান -এর একটি গল্প

 চোর 

     



‘চোর’ এই ছোট্ট কথাটা, ছোট্ট বাবলির মাথায় ঢুকে গেল। পড়তে পড়তে থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসা নিয়ে দাদুর কাছে দৌড়ে এল- দাদুভাই চোর কী? দাদুভাই ফাইলে ব্যস্ত ছিলেন তবুও ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে উত্তর দিলেন- না বলে পরের জিনিস নিতে নেই দিদিভাই। যে না বলে নেয়, তাকে চোর বলে।

- দাদুভাই,তুমি কি চোর হয়েছে কখনো ? 

- সেটা কি আর ভাল কাজ, যে করব ? বলতে বলতেই দাদুর মন পাড়ি দিল নিজের সেই হারানো স্কুল জীবনে। তখন ক্লাস সেভেন বোধহয়, ঘরেতে বরাবরই অভাব। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে সব বাচ্চারা যখন পকেটের পয়সা খরচ করে এটা-সেটা খেতে ব্যস্ত থাকত, জীবন সরকার নামের এই ছেলেটা তখন জুলজুল করে চেয়ে থাকত।

 সেদিনও কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, আইসক্রিম ওয়ালা ছেলেদের আইসক্রিম দিয়ে বাক্সে ঢাকনার উপর রাখছিল পয়সাগুলো। লোকটার একটু অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে বাক্সের উপর রাখা পয়সাতে হাত ছুঁইয়ে আওয়াজ দিয়ে জীবন বলেছিল - আইসক্রিম দাও তো একটা।

- কত দামের ? পয়সা দিলে? সরল বিশ্বাসে জিজ্ঞাসা করল তৃপ্তি আইসক্রিম বিক্রেতা ওই লোকটি।–

- এই তো পাঁচ টাকা রাখলাম। আমি কি চোর নাকি, যে, না দিয়ে বলব, দিয়েছি!

লম্বা জিভ কেটে আইসক্রিম বিক্রেতা বলল – না,না, বাবুসোনা, তোমরা চুরি করবে কেন? তোমরা তো সবাই ভদ্র ঘরের ছেলে। জানো, আমি তো আর পড়াশোনা করতে পারি নি, তাই তোমাদের দেখি আর কী যে ভাল লাগে। তোমাদের কাছে দু-পয়সার জিনিস বিক্রী করে কী যে আনন্দ হয়! আরও কী যেন সব বলতে লাগল লোকটা বিড় বিড় করে। কিন্তু সে সব না শুনে আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে একটু পাশে সরে এসেছিল জীবন। ভেবেছিল মজা করে খাবে কিন্তু সেদিন আইসক্রিমটা খেতে তেমন যেন মজা পায়নি জীবন। যদিও তার এই নতুন লোক ঠকানো পরিকল্পনার কথা কাকেও জানাতে পারেনি সে। 

আজ নাতনির কথায় মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। ছোট্ট ঘটনা কিন্তু সেটাও তো একটা চুরিই ছিল। পরে বার বার তার মনে হয়েছে গরিবের পাঁচ টাকা চুরির মূল্য তো অনেক বেশি! কতবার ভেবেছেন যদি সুযোগ থাকত তাহলে সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিতেন কিন্তু সেই আইসক্রিম বিক্রেতা মারা যাওয়ায় তাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মনে হলো আজ বাবলীর কাছে বলে একটু হাল্কা হবেন। কিন্তু মুখ যেন খুলল না জীবনবাবুর। নিজের আভিজাত্যকে এত ছোট করার মতো সরলতা দেখাতে পারলেন না। 

বাবলি তখন দাদুর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে কেন কে জানে! সে বলল - দাদু, কিছু বলবে? মাথাটা খুব জোরে জোরে নাড়তে লাগলেন জীবন বাবু। নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে গেল আর মনটা হঠাৎ বড় বিষন্ন হয়ে গেল তাঁর।

                      --------------------

কবি ইমরান শাহ্ -এর একটি কবিতা

 গন্তব্য



সে যে শরতের স্নিগ্ধ সুধাংশু-কিরণ,

উভয়েরি প্রাণে করে অগ্নি বরিষণ।

ইচ্ছে হলে আসে আবার চলেও যায়

তারই বিরহে কাটে স্মৃতি মেদুরতায়।


অজস্রজন্ম বৃথা অনাহুত করে শোক র‌্যালী

মিছিলে মিছিলে ভেতরটায় দেয় উলুধ্বনি।

সে ছাড়া যে নিতান্তই সব নিরর্থক

জীবন গানে সেই-তো শ্রেষ্ঠ আভোগ।


বলি কবিতায়, যদি তার ভালোবাসা পাই

সমুদ্দুর হবো, না-পেলে সন্ন্যাসী।

কবি তাপস মাইতি -এর একটি কবিতা

 নীলিমা তারা 


            


ভর সহ্য করতে করতে পুনরায় 

পৃথিবীর নিজস্ব কেন্দ্রের দিকে 

                        টান হয়ে উঠি ।


সমস্ত প্রেম যদি হয় 

                        সবুজ ও সতেজ 

আমি আমার ওজন -- টনের সীমারেখা 

বরাবর তাকে আর একবার 

টেনে ধরে তুলতে চাই ।


ঘূর্ণনের অপর নাম কেন্দ্রিক ভারকর্ষণ

সে -- এর সহ্যের কথা জানে না 

বলেই, আমি তার নীল -- নীলিমা 

তারায় একটা সহবাস রচনা করি ।

কবি তুলসীদাস বিদ -এর একটি কবিতা

 শারদীয়া

     


নদী পাড়ে কাশের বন

ডাক দিয়েছে আয়রে আয়।

 সবুজ খেতের শিশির রেখা

আগমনীর গান যে গায়।

মেঘের কোলে শান্ত আকাশ

শীতল বাতাস দোদুল বায় ।

শিউলি ফুলের মিষ্ট সুবাস

শারদীয়ার আলো - ছায়।

সবুজ আমের শাখে শাখে

মিলন মেলার গন্ধ পায়।

আলতা পরা দুর্গা মাকে

দু-চোখ ভরে দেখতে চাই।

শ্রাবণ ধারা বাঁধন হারা

শরতে তার শেষ বিদায়।

শাপলা, শালুক দিঘি ভরা

পদ্ম ফুলে দীপ জ্বালায়।

পূজা পূজা গন্ধ বাতাস

সোনার রোদে মত্ততায়।

আশ্বিনে সেই নতুন আভাস

মাতৃ পূজার বন্দনায়।

দোলায় দোলে নব শাখে

উঠোন ভরে আলপনায়।

বরণ ডালা গাথা মালা

গ্রামের বধূ শাঁখ বাজায়।

পূজা পাঠে পূর্ণ ঘটে

শুক্লা পক্ষের চন্দ্রিমায়।

উল্লাসে প্রাণ মেতে ওঠে

মরা গাঙে বন্যা বয়।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 আভাস



শরৎ আকাশে ভেসে ভেসে

আসছে পূজোর আভাস ।

কৌলাস থেকে মা আসছেন

    বইছে খুশির বাতাস ।


শেফালি তলায় ঝড়া শেফালি

     গন্ধে মাতায় ভূবন ।

কাশফুলগুলি দ্যৌদুল দোলে

          আহা কি শোভা দর্শন।


শরৎ আকাশে স্নিগ্ধ বাতাসে

      ভাসে আগমনী সুর ।

আর দেরি নেই মহোৎসবের

         হবে মার আবাহন।


করোনার কালে পূজো শিয়রে

       মন ভারী ভারাক্রান্ত।

দশপ্রহরিণী দশভূজা মাগো

          পৃথিবীটাকে কর শান্ত ।

কবি রোকেয়া ইসলাম -এর একটি কবিতা

 শরতের গল্প অন্য শরতে



অন্যমনস্ক বিস্মৃত প্রায় শরতের পুনরাবৃত্তি হয়

ধুলো ঝেড়ে যত্ন করে ফিরে আসে অচেনা কিশোরী 

যখন নিরালা একা ও আমি শিউলি ঝরা ভোরে 

ভেবে নেই -বয়স এক সংখ্যা মাত্র 

ভেতরের সব প্রেম জড় করি সারাটা দুপুর জুড়ে... 


হাঁটাছি সব চেনা পথ হারিয়ে একাকি

ঐ দূরে সমুদ্রের মতো কাশবন

শ্বেত সখ্য ফুলের সাথে বাতাসের মাখামাখি 

 যেন কত বছরের ভালবাসাবাসির ঘর সংসার ; যাপন.... 

হাঁটছি. নিরেট প্রেমটুকু সম্বল

সবুজ বিকেল ছুঁয়ে ফেলে ধুসর সন্ধ্যা

সমুদ্রের বুকে আলবাট্রসের ছায়া নেই 

দূরের কাশবন কাছ এলে বড্ড ফাঁকা 

ম্লান হয়ে চেনা পোট্রের্ট ম্লান এই লোটাকম্বল 


উত্তরা পেরিয়ে মিরপুর ছাড়িয়ে দিয়াবাড়ির আমন্ত্রণে

পুরোটা শরত জুড়ে দুঃসহ প্রতীক্ষায় ছিলাম 

-- আসোনি

তোমার না আসা শরত মুখ লুকিয়েছে অন্য শরতে 

বুঝতেই পারিনি ভালবাসনি



নন্দনালোকে সে এক অসমাপ্ত অপেক্ষা 

তোমার আসার কথা ছিল বিকেলে আকাশের এক মুঠো নীল শার্টে

আমার খোঁপায় সাদা মেঘ রঙা রোদ্দুরের ফুল

আমাদের সে টার্ম পুরোটাই অপ্রাসঙ্গিক 

ভুলে যাওয়া ডাক নীলা 

সে পথ হারিয়ে বহুদূর, সিলগালা


অতঃপর 

খুলে দেয়া ঈশ্বরের দ্বার ছুঁয়ে নেমে আসে অরফিয়াস। 

না আমার স্বপ্ন দেখা মিথ্যে আমার ভাঙা ঘর।

অরফিয়াস সব সত্য অঙ্গিকারের বাহনে তুলে নেয় প্রেম হারানো আমাকে।

কবি জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর একটি কবিতা

 আক্ষেপ



কেন আমায় ডাকো বারে বারে এই অন্ধকারে বসন্ত দিন আমি, এখানে আমার ভূমিকা অল্পই

সারা শরীরে আবীর মাখা তোমার, পায়ের নীচে সাগর থৈ থৈ।

আমার শুকনো পাতায় ডালে ডালে ঝড় নামছে ওই

তুমিও কি জানতে পারো কার সেই পাগল করা গানের গলা ভাসায় তোমায়? ভাসায় তোমার বই? 

তুমিও কি জানতে পারো এমন ঝড়ে আমি যে তার শুকনো পাতা হই

বসন্ত কাল আসছে আবার শরীর কাঁপে থর থর, তোমার সঙ্গে তলিয়ে যাওয়ার উপায় আমার কই।

কবি কমল মন্ডল -এর একটি কবিতা

 সিদ্ধান্ত 

          


মানুষ মানুষের কাছে ফিরে এলে

লোপাট হয় বিবেক 

রাতে রক্ত খেয়ে এসেছে কুকুরগুলো

স্বাধীনতার রক্ত, মনুষ্যত্বের রক্ত, ভালোবাসার রক্ত 

যে ভালোবাসা মানুষকে সুন্দর হতে শেখায়। 

বাক্যের মধ্যে এলোমেলো শব্দ এলে 

জীবনের মধ্যে এলোমেলো সিদ্ধান্ত এলে 

সবই সংজ্ঞাহীন!

শঙ্খ বাজে ঈশ্বরের পাড়ায় পাড়ায়

মানবিকতা দশমী উপভোগ করে 

মা আর আসবেনা এ পাড়ায়

ফুল দিয়ে সাজানো মৃত থামগুলোয়

 স্বর্গের বারান্দা ঝুলতে থাকে

সিদ্ধান্ত ভুল করে ঈশ্বর ঢুকে পড়ে 

অন্ধকার গলিতে....... 

কবি সেখ নজরুল -এর একটি কবিতা

 নীল আকাশ

         


জ্যান্ত তুমি কে বহুদিন দেখিনি,

এখন দেখা হয় ফেসবুক পোস্টে কিংবা ফোন গ্যালারি ভিতরে।

সত্যিই বলতে এতো ভালো লাগতো যে,

মন পাওয়ার জন্য অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম।

 মুখে যখন বললাম,

হতবাক হয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।

কারণটা না বলাই থাক...

মন আমি পেয়েছিলাম ঠিকই,

তবে সেটা অন্য অনুভূতিতে।

হাজার হাজার মুখের ভিড়ে,

 কেন যে এই মুখ এত মনে পড়ে।

আজও আমার অজানাই রয়ে গেল!

হঠাৎই শুনলাম মরীচিকার পিছনেই ছুটছো,

অবশেষে যখন ধ্যান ভঙ্গ হলো,

অনেক দেরি হয়ে গেল।

সত্যিই জ্যান্ত তুমিকে দেখতে বারবার মন চাই,

আজও চোখ ছল-ছল করে ডায়েরির পাতায়।

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল এর মধ্যে এটা অন্যতম....

 তবে ভালবাসার মধ্যে কোনো ভুল ছিলো না।

কবি পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায় -এর একটি কবিতা

 তুমি আগন্তুক



আমার মনের 

জীর্ণশাখায় 

হলুদপাতার দেশে


ভিনদেশী এক

রাতের বাতাস

শব্দ ঝরায় হেসে 


ঘুম কেটে যায়, 

ঘুমের ভিতর

মধুর মত জ্বালা  


মাদুর পাতে 

আদুর গায়ে 

চাঁদের কথামালা


খুব থরথর 

আতুর ঠোঁটে

গা জ্বরজ্বর ভাঁজে 


নাভির গানে 

জীবনমুখী  

মহুয়া মাদল বাজে 


হলুদপাতা

গভীর গোপন

ভিস্যুভিয়াস হলে


ভিনদেশী রাত

বারুদ বারুদ

উঠবে আগুন জ্বলে


আহা উঠবে আগুন জ্বলে

আহা উঠবে আগুন জ্বলে।

কবি অভিজিৎ দত্ত -এর একটি কবিতা

 মহাত্মা গান্ধী

               


ইংরেজদের কঠোর অত্যাচারে

ভারতবাসী যখন জর্জরিত 

পরাধীনতার নাগপাশে

সবাই যখন ক্ষুব্ধ তৎকালীন

ইংরেজদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে

অনেকেই যখন দ্বিধাগ্রস্ত 

সেই মুহূর্তে সত্য ও অহিংসাকে

অস্ত্র করে 

যে মানুষটি লড়াই করেছিলেন 

সেই অনন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব 

পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধী 

নামে হয়েছিলেন খ্যাত ।


কর্মসূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকায় 

যেতে হয়েছিল যাকে 

সেই মহাত্মা গান্ধীর লড়াই 

শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।


সাদাকালোর মিথ্যে ভেদাভেদ 

বর্ণবৈষম্যের কালো অন্ধকার 

গ্রাস করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে 

মহাত্মা গান্ধী ও রেহাই পায়নি 

এই অত্যাচারের হাত থেকে ।

ট্রেনের প্রথম শ্রেণীতে ওঠার জন্য 

শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের কাছে 

ধাক্কা খেতে হয়েছিল তাকে 

মহাত্মা গান্ধী হালকা ভাবে নেননি 

এই ঘটনাটিকে ।

তিনি লড়াই করেছিলেন বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে 

সত্য আর অহিংসার অস্ত্রে 

পরাজিত করেছিলেন বর্ণ বৈষম্যকে।


দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে 

লড়াই শুরু করেছিলেন অত্যাচারী 

ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে ।

খেদা, চম্পারন আর আমেদাবাদে 

এক এক করে হয়েছিলেন জয়ী 

অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে 

সত্য আর অহিংসার অস্ত্র কে সঙ্গে নিয়ে ।


ইংরেজ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে 

অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো 

তিনটে বিখ্যাত আন্দোলন করেছিলেন 

ভারতবাসীদের সঙ্গে নিয়ে । 


শেষ পর্যন্ত ভারত হয়েছিল স্বাধীন 

কিন্তু দেশভাগ আহত করেছিল মহাত্মা গান্ধীকে 

তিনি চিরকাল চেয়েছিলেন' অখন্ড ভারতের পক্ষে ।


হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা 

ব্যথিত করেছিল তাকে 

শেষ পর্যন্ত দাঙ্গা বন্ধ করার জন্য 

আমরণ অনশনের কর্মসূচি 

চালিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে ।

এই মহান নেতাকে 

শেষ পর্যন্ত মরতে হয়েছিল 

নাথুরাম গডসের মত 

এক উগ্র হিন্দুত্ববাদীর হাতে।


বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন 

বলেছিলেন হিংসায় উন্মুক্ত পৃথিবীতে 

কেউ বিশ্বাস করবে না 

গান্ধীজীর মত মহান নেতা 

জন্মেছিলেন এই পৃথিবীতে 

আজ গান্ধীজীর জন্মদিনে

ব্যথিত চিত্তে স্মরণ করি 

ও শ্রদ্ধা জানাই এই মহান নেতাকে।

কবি নীতা কবি মুখার্জী -এর একটি কবিতা

 জাতির পিতা




মহাত্মা গান্ধী নামে বিখ‍্যাত ভুবনে

"জাতির জনক"তুমি তাই রাখি স্মরণে

"বাপুজী"বলেই আমরা ডাকি সবে প্রাণ ভরে

ত‍্যাগের মন্ত্র দিয়ে রেখেছিলে সবে ধরে।


অহিংসা ,ধৈর্য্য, সংযম সব মহা গুণ নিয়ে

ভারতবাসীকে শেখালে কঠোর অনুশীলন দিয়ে

"ইংরেজ ভারত ছাড়ো" এই মহামন্ত্রে

স্বদেশ চেতনাটুকু জাগালে স্নায়ুতন্ত্রে।


আফ্রিকাদেশে গিয়ে প্রতিবাদ গড়লে

কালো মানুষের পাশে তুমি 

নিজে দাঁড়ালে

তোমার সাহসী প্রতিবাদে ইংরেজ-রাজারা

হয়েছিল শঙ্কিত ,বেজেছিল নাকাড়া।


শাসকের শোষনটা যবে উঠে তুঙ্গে

সেইকালে ডাক দিলে "করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে"

সৎপথে থাকো আর জপ করো তাঁর নাম

সবার উপরে আছেন রঘুপতি রাজারাম।


শ্রম করো যতো পারো, সূতো কাটো চরকায়

মনে হও দৃঢ়-চেতা, কাউকে যে ভয় নাই

ভারতের গর্ব তুমি,তুমি গুণী-সন্তান

মহাত্মার দেশ বলে করে সবে জয়গান।


ভারতের ইতিহাসে উজ্জ্বল আকারে

লেখা আছে তব নাম স্বর্ণের অক্ষরে।


বিতর্কিত পুরুষ তুমি, বিতর্কও থাকবে

নিঃস্বার্থ ত্যাগ দিয়ে অমর হয়ে বাঁচবে।