Sunday, October 3, 2021

লেখক সামসুজ জামান -এর একটি গল্প

 চোর 

     



‘চোর’ এই ছোট্ট কথাটা, ছোট্ট বাবলির মাথায় ঢুকে গেল। পড়তে পড়তে থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসা নিয়ে দাদুর কাছে দৌড়ে এল- দাদুভাই চোর কী? দাদুভাই ফাইলে ব্যস্ত ছিলেন তবুও ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে উত্তর দিলেন- না বলে পরের জিনিস নিতে নেই দিদিভাই। যে না বলে নেয়, তাকে চোর বলে।

- দাদুভাই,তুমি কি চোর হয়েছে কখনো ? 

- সেটা কি আর ভাল কাজ, যে করব ? বলতে বলতেই দাদুর মন পাড়ি দিল নিজের সেই হারানো স্কুল জীবনে। তখন ক্লাস সেভেন বোধহয়, ঘরেতে বরাবরই অভাব। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে সব বাচ্চারা যখন পকেটের পয়সা খরচ করে এটা-সেটা খেতে ব্যস্ত থাকত, জীবন সরকার নামের এই ছেলেটা তখন জুলজুল করে চেয়ে থাকত।

 সেদিনও কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, আইসক্রিম ওয়ালা ছেলেদের আইসক্রিম দিয়ে বাক্সে ঢাকনার উপর রাখছিল পয়সাগুলো। লোকটার একটু অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে বাক্সের উপর রাখা পয়সাতে হাত ছুঁইয়ে আওয়াজ দিয়ে জীবন বলেছিল - আইসক্রিম দাও তো একটা।

- কত দামের ? পয়সা দিলে? সরল বিশ্বাসে জিজ্ঞাসা করল তৃপ্তি আইসক্রিম বিক্রেতা ওই লোকটি।–

- এই তো পাঁচ টাকা রাখলাম। আমি কি চোর নাকি, যে, না দিয়ে বলব, দিয়েছি!

লম্বা জিভ কেটে আইসক্রিম বিক্রেতা বলল – না,না, বাবুসোনা, তোমরা চুরি করবে কেন? তোমরা তো সবাই ভদ্র ঘরের ছেলে। জানো, আমি তো আর পড়াশোনা করতে পারি নি, তাই তোমাদের দেখি আর কী যে ভাল লাগে। তোমাদের কাছে দু-পয়সার জিনিস বিক্রী করে কী যে আনন্দ হয়! আরও কী যেন সব বলতে লাগল লোকটা বিড় বিড় করে। কিন্তু সে সব না শুনে আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে একটু পাশে সরে এসেছিল জীবন। ভেবেছিল মজা করে খাবে কিন্তু সেদিন আইসক্রিমটা খেতে তেমন যেন মজা পায়নি জীবন। যদিও তার এই নতুন লোক ঠকানো পরিকল্পনার কথা কাকেও জানাতে পারেনি সে। 

আজ নাতনির কথায় মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। ছোট্ট ঘটনা কিন্তু সেটাও তো একটা চুরিই ছিল। পরে বার বার তার মনে হয়েছে গরিবের পাঁচ টাকা চুরির মূল্য তো অনেক বেশি! কতবার ভেবেছেন যদি সুযোগ থাকত তাহলে সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিতেন কিন্তু সেই আইসক্রিম বিক্রেতা মারা যাওয়ায় তাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মনে হলো আজ বাবলীর কাছে বলে একটু হাল্কা হবেন। কিন্তু মুখ যেন খুলল না জীবনবাবুর। নিজের আভিজাত্যকে এত ছোট করার মতো সরলতা দেখাতে পারলেন না। 

বাবলি তখন দাদুর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে কেন কে জানে! সে বলল - দাদু, কিছু বলবে? মাথাটা খুব জোরে জোরে নাড়তে লাগলেন জীবন বাবু। নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে গেল আর মনটা হঠাৎ বড় বিষন্ন হয়ে গেল তাঁর।

                      --------------------

No comments: