Monday, October 18, 2021

কবি সুমিত্রা পাল -এর একটি কবিতা

 কন্যা সন্তা

 



কন্যা, সেও তো বাবা-মায়ের এক সন্তান,

তবুও বিবাহের সময় তাকে করতে হয় দান।

জন্ম থেকে কত আদর যত্নে সে বড় হয়,

তবে কেন সে বিবাহের পরে বাবা-মায়ের নয়?

কন্যার সুখের জন্য চলে কত কিছু আয়োজন,

 মেটায় তার সব চাহিদা যা কিছু প্রয়োজন।

একটাই ইচ্ছা যেন তার মুখে হাসি থাকে সারাক্ষণ,

দুঃখের পরশ যেন না লাগে সুখে থাকে সারা জীবন।

কন্যার মুখের হাসি দেখে যারা জীবন কাটায়,

অথচ একটি বিবাহ বন্ধনে বুক খালি হয়ে যায়।

থাকে না আর তার প্রতি আর কোন অধিকার,

তাকে কাছে পেতে গেলে লাগে দিন ,ক্ষণ ,বার।

একদিন যে ঘর ভরে থাকতো হাসিতে খুশিতে,

কন্যা বধূ হয়ে সে খুশি নিয়ে যায় অন্যের ঘরেতে।

পড়ে থাকে শুধু তার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো,

মেয়েকে খুঁজে পেতে মোছে বইয়ের বালি ধুলো।

সময় কাটাতে মেয়ের ভাঁজ করা জামা গুলো খোলে,

আবার নতুন করে ভাঁজ করে আলমারিতে তোলে।

ভুল করে নাম ধরে যখন তাকে আদর করে ডাকে,

হঠাৎ ভুল ভাঙে, মনে পড়ে ডাকলেও পাবেনা তাকে।

বুকের ভিতরটা ব্যাথায় কষ্টে দুমড়ে-মুচড়ে যায়,

কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে চোখের কোণ দিয়ে বায়।

হৃদয় হয় উথাল পাথাল বোঝেনা তো কেউ,

ঘরময় রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো শুধু তোলে ঢেউ।

কবি পম্পা ভট্টাচার্য -এর একটি কবিতা

 মনের দহন




আমি মেতে উঠেছি সব শেষ করার নেশায়

জানি না কিসে হবো শান্ত

শেষ থেকে শুরুতে না শুরু থেকে শেষে।


আমি মেতে উঠেছি শেষ দেখার নেশায়

জানিনা কিসের জ্বালা

কোনো হিংসা না কোনো বিদ্বেষে।


আমি মেতে উঠেছি হার জিতের খেলার নেশায়

জানিনা কিসে খুশি হবো

জয়ে না পরাজয়ে।


আমি মেতে উঠেছি অক্ষত এক লড়াইয়ে

জানিনা কিসে স্থির হবো 

ক্ষয়ে না অক্ষয়ে।


আমি মেতে উঠেছি এক ধ্বংস লীলায়

যার নেই কোনো

সৃষ্টি স্থিতি লয়।


আমি মেতে উঠেছি অজানাকে জানার নেশায়

যার উত্তর হবে অনিশ্চিত

এক চরম বেদনাময়।


আমি মেতে উঠেছি শান্তি পাবার নেশায়

জানিনা সেই শান্তিতে 

কেউ সুখী না দুঃখিত।


আমি মেতে উঠেছি ভালোবাসা পাবার নেশায়

জানিনা আজও সেই ভালবাসা

জীবিত না মৃত।

কবি মিতা দাসপুরকায়স্থ -এর একটি কবিতা

 পুজো                 

        


ঝলমলে আকাশ সাগরনীল ছাপা শাড়ি গায়ে

লাল হলুদ কমলা আকাশী বিচিত্র রংবাহারে,

মন চেপেছে আজ ঐ সাদা তুলো মেঘভেলায়

ছুটবো দিক-দিগন্তে করোনা ঠেলে হেলাখেলায়। 


কষ্টগুলো আজ উদভ্রান্ত বেচাকেনার হাটে রংমহলে

পুজো মানে 'দেহি' 'দেহি' প্রবল উচ্চারণ হালআমলে ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি

দেওয়া-নেওয়া আদান-প্রদান উৎকোচ স্তোত্রাদি ।


আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ায় মনের পুজো অধ্যাত্ম দর্শন

ভগবান, দেবতায় রূপান্তরিত হবে মানুষ ধূলিমলিন,

অপার্থিব দর্শন গ্রহণে বিফলতা ধরণীর মানুষের

পার্থিব প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় স্বপ্ন ও ভালোবাসা তার ।

কবি শ্রাবণী মুখার্জী -এর একটি কবিতা

 বিনিময় 



একদিনের জন্য ও ভালোবাসো নি আমায় জেনেও... আজও তোমার মুখাপেক্ষী আমি ।

কেনো জানো ? এ যে মনের তারের সংযোগ ,,

হঠাৎ করেই জুড়ে যায় অগোচরে ।

তুমি আমায় ভালোবাসো নি বলে আমিও তোমায় বাসবো না.. এতো ব্যবসা !

তুমি দিলে আমি দেবো , না দিলে আমি ও দেবো না , ,ভালোবাসায় লেনদেন হয় না ।আমি করি না ,

তুমি ব্যবসা করবে ?? তাহলে মিথ্যেবাদী হতে হবে কিন্তু নইলে আমার মতোই হতে হবে নিঃস্ব ।

সর্বত্র সমাধিস্তম্ভ মাঝে ঠোক্কর খেতে খেতে ...কখন 

যে স্মৃতিচিহ্নগুলো বিরাট নাসুর আকার নেবে ..

বুঝতেই পারবে না ।

স্বার্থান্বেষী সমাজে একটুকরো নিখাদ ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই ।তার থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান খোঁজো । ভালো থাকবে ।

সৌহার্দ্য বজায়ে হাত বাড়িয়ে ছিলেম আমি ,

শীতল জলটুপ আঙ্গিনায় রূপছায়ার কলকা ।বেগুনি রং এর শাড়িতে সোনা রঙের লহর ,কথার বিনুনিতে 

তাই আজ ও আমি সর্বহারা ।

কবি তাপস মাইতি -এর একটি কবিতা

 খবর 

      


সমস্ত রাগের ভার নিয়ে 

পুব -- দিগন্তে সূর্য উঠল ।


বাচ্চা -- মেঘেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে 

দলে দলে সৈন্যদের মতো তাদের 

দেহ সেখানে দিচ্ছে ফেলে ।


কারণ, কাল রাতে একটা শিশুর মতো 

সরল মেয়ে ধর্ষিতা হলে --- কেউ 

তার খবর তোলে নি ।


এখন আকাশের নীলের গায় 

ফুটে উঠছে তার সেই নাম ।

তার সেই নাম নিয়ে ওই দিবালোক 

চেঁচিয়ে গাঁ -- শুদ্ধু ঝড় ও 

বৃষ্টির তান্ডব করল শুরু ।


তবু , কিছুতে বাঁচল না মেয়েটা ! 

কবি ইউসুফ মোল্লা -এর একটি কবিতা

 কৃষকের মুখ




কৃষকের মুখ ছিল মিছিলের মাঝে

দু'বেলা মাঠে ঘাটে দিন কাটে

তবুও উপোস ছিল কী খাবে এই ভেবে



কৃষকের মুখ ছিল মিছিলের মাঝে

মন্ত্রীর ছেলে এলে দিতে হবে রাস্তা ছেড়ে

নাহলে চাকার তলায় মরতে হবে পিষে



কৃষকের মুখ ছিল মিছিলের মাঝে

রাজনীতি জানে না সে কীভাবে করে

তবুও পার্টির নেতা দরজায় কড়া নাড়ে



কৃষকের মুখ ছিল মিছিলের মাঝে

নেলসন ম্যান্ডেলা আর একবার এসো

কৃষকের ঘরে একবিংশ শতাব্দীর বেশে।

Sunday, October 17, 2021

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 শুভ বিজয়া



এসেছিলেন উমা, বছর পরে

   মর্ত্যধামে মায়ের ঘরে ।

পাদ্য-অর্ঘ্যে পূজিতা গৌরী

  ফিরলেন মা স্বামীর ঘরে ।


শারদ প্রভাতে মাতৃ পক্ষে

 হয়েছিল মায়ের আবাহন।

খুশির বন্যা বইয়ে মাগো

   দশমীতে মায়ের বিসর্জন ।


আসবে আসবে দুর্গা পূজো

    এটাই হয়তো ছিল ভালো।

হাসি - খুশিতে মাতিয়ে সবারে

      বিদায়ী সুরে ভরিয়ে তোলো ।


বছর, মাস, দিন, নিঘন্টের

      চললো আবার অপেক্ষার পালা ।

অধীর আগ্রহে রইবো বসে

       সাজিয়ে মায়ের বরণডালা ।

কবি জয়িতা চট্টোপাধ্যায় -এর একটি কবিতা

 পথ



এক পথ পেরিয়ে যাই তোমায় ঘুমন্ত পায়ে

যে পথ নৌকা পেরোয়ে নি আগে

তুমি দাঁড়িয়ে থাকো আমার শরীরে পালকের গায়ে

সমস্ত পথ থেমেছে এসে গাছের তলায়

যেখানে রাত্রি থামে তোমার বাড়ি

সিঁড়ি দিয়ে তোমার চোখে মুখে আলো উঠে যায়

আকাশ ভাঙে মাঝে মাঝে

মন মেঘেই আত্মহারা, তোমার আকাশে

নৌকা খোলা থাকে, আমার আকাশ ভরা তারা

আমার শরীর জুড়ে এক দিঘি জল

তুমি আমার গ্রাম তুমি আমার শহর, জল ছলোচ্ছল।। 

কবি সেখ নজরুল -এর একটি কবিতা

 ফুলের রানী



তোমার সুগন্ধে মাতোয়ারা আমার মনের আকাশ,

তুমি ঘটিয়েছো মোর ভালোবাসার বিকাশ।

 ফুলের রানী হয়ে আসব সবার মাঝে,

সুগন্ধে ভরিয়ে তোলো সকাল সন্ধ্যা সাঁঝে।

তোমার ওই ফুলের পাপড়ি ছোঁয়ায় জন্য,

মন যে আমার খুবই ব্যকুল।

তোমার ওই সাদা পাপড়ির মাঝে পোলেনকিট আহরনে আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখি,

সত্যি তোমার ওই সুগন্ধ পৃথিবীর সবকিছুই হার মানায়।

হলুদ কুড়ির মধ্যে পৃথিবীর সর্ব সুখ লুকিয়ে থাকে,

তাই বারবার ছুটে আসি তোমার কাছে।

সারাদিন ব্যস্ততার মাঝেও কেন তোমাকে ছোঁয়ার জন্য মন কেঁদে উঠে আজও অজানা,

হয়তো তোমারই ভালোবাসার টানে।

রাত্রি যত গভীর হয় তোমার সুবাস শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়,

তোমার পাপড়ির স্পর্শে শরীর সিক্ত হয়ে উঠে।

তা না হলে হঠাৎই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম!

জানিনা আমার স্পর্শে তুমি জাগরিত হবে কিনা?

তবে তোমার অনুপস্থিতি আমি সর্বক্ষণ অনুভব করি।

কবি অভিজিৎ দত্ত -এর একটি কবিতা

 মহালয়া




কতদিন পরে মা আসছে

মর্ত্যে বাপের ঘরে 

অধীর আগ্রহে মর্ত্যের মানুষ

সবাই এরজন্য অপেক্ষা করে।


মায়ের আগমনে চারিদিকে 

বাজছে খুশির সুর 

প্রকৃতি সেজে উঠেছে 

অপরূপ সাজে কী সুন্দর।

আগমনীর আগমনে , দেবীপক্ষের 

সূচনা হয় এইদিনে।


মহালয়ার এই বিশেষ দিনে

পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টি বিধানে

মানুষ ,পুরোহিতের কাছে

বিধিসম্মত তর্পণ করে নিয়ম মেনে।


অশুভ শক্তির বিনাশ

শুভশক্তির জয় এই হল

মহালয়ার আসল বিষয়।

মহালয়ার এই বিশেষ দিনে

বধ হয়েছিল মহিষাসুর

দেবী দুর্গার পরাক্রমে ।

তাই মহালয়ার এই বিশেষ দিনে

দেবী দুর্গা প্রেরণা হয়ে উঠুক

সমস্ত নারীদের মনে।

কবি নীতা কবি মুখার্জী -এর একটি কবিতা

 বিসর্জন




আগমন-কালে দিকে দিকে ছিলো আগমনী গানে ভরা

উমা এসেছিলো বাপের বাড়ীতে পড়েছিলো তারই সাড়া

শিউলি চুমেছে চরণদুখানি,শিশির ধুয়েছে পা

কাশফুল তাই সোহাগ-ভরে দুলিয়েছে তার গা।


জগজ্জননী মা আমাদের দনুজদলন করে

অশুভশক্তি হার মেনে তাই মায়ের চরণ ধরে

সন্তানেরা সব মেতে উঠেছিলো, আনন্দে মাতোয়ারা

আজ বিদায়ের সুর বাজে ঐ,সবাই আকুলপারা।


সপ্তমীতে এলো মা জননী চতুর্দোলায় চড়ে

মহা-অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে সব পূজার মন্ত্র পড়ে

নবমী তিথিতে কতো কিছু 'বলি' অর্ঘ‍্য দিলাম তাঁরে

দশমী তিথিতে মিষ্টিমুখ আর বিদায় অশ্রু ঝরে।


আর দুটো দিন থেকে যাও মাগো ,ওগো আনন্দময়ী

তোমার প্রসাদে মর্ত‍্যবাসী যেন হতে পারে জয়ী

বাবা-ভোলানাথ বড়ো অভিমানী ,কৈলাস আছে ফাঁকা

পার্বতী বিনা শিব কি সেখানে থাকতে পারেন একা?


নন্দী-ভৃঙ্গী যতো অনুচর সবাই যে খোঁজে মা-কে

শিব-ঘরণী বিনা শিবের আলয়?যেতেই হবে তাঁকে

বিসর্জনের বাদ‍্যে বাজলো অতীব করুণসুর

আকাশে বাতাসে সেই সুর ভেসে চলে যায় বহুদূর।


আনন্দময়ীর আগমনে ছিল এ ধরণী মাতোয়ারা

মা চলে গেছেন, সন্তানেরা সব হয়েছে মাতৃহারা


আবার এসো মা-আনন্দময়ী অসুরনাশিনী তুমি

আসছে বছরে চরণপরশে ধন‍্য হবে এ ভূমি।

কবি রাজা দেবরায় -এর একটি কবিতা

 পুজোতে কয়টা জামা হলো?

 



"পুজোতে কয়টা জামা হলো?"

জিজ্ঞেস করেন বড়রা।

"এটা একটা প্রশ্ন হলো?"

বললে বলবেন মুখরা!

মা-বাবা'র আর্থিক অবস্থা

না জেনেই প্রশ্ন করেন।

আপনি হয়তোবা জানেন,

আর্থিক কষ্টে অনেকে মরেন!

জিজ্ঞেস করার আগে ভাবুন,

আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝুন।

তবেই সচেতন নাগরিক হবেন,

বাস্তববোধ হৃদয়ে খুঁজুন!

কবি আশীষ কুন্ডু -এর একটি কবিতা

 গান শুনি 




গান শুনি এখনো অতীতের 

বৃষ্টির ছাট দেখি জানলায়

ভেজা হয় না, 

মাঠের গন্ধমাখা হয় না

কাশফুল দেখি ফোনে সুপ্রভাতে

বাতাবিলেবু আর শিউলফুল বাজারের ভিড়ে

গন্ধ পাই না নীল আকাশের 

ঝাঁক বাঁধা পায়রারা আসে না ফিরে 

আমার বিষণ্ন ছাতে ছুটির বিকেল

রোদ্দুরে ভরা দুপুর একলা পড়ে থাকে।