লেখক যতীশগোবিন্দ জানা -এর একটি গল্প
বিড়াল
বারাসাতের বড় বাজারের চালের গোডাউন একটি সৌম্য দর্শন নিরীহ কিশোর একমাস যাবত কাজ করছে। আশপাশের দোকানদারেরা কেউ তার নাম জানেনা। গোডাউনের সামনের মুদির দোকানের মালিক বণিক বাবু তার নাম দিয়েছে বিড়াল। মালিকের অবিশ্রান্ত দাঁত খিচুনি, বকুনি ও গালাগাল সমস্তই কিশোরটি
মুখ বুঝে সহ্য করে---এইজন্যেই বণিক বাবু ভিজে বেড়ালের মত নিরীহ ছেলেটাকে বেড়াল
নাম দিয়েছে। তার কথামতো অন্যান্য দোকানদারেরাও তাকে ওই নামেই চেনে।
কিন্তু বণিক বাবু এটা লক্ষ্য করেছে আপাত নিরীহ চোখে মুখে এক কঠিন প্রত্যয়ের ভাষা লুকিয়ে আছে যেন।
একদিন দোকান খুলতে দেরি হচ্ছিল। ছেলেটি বণিক বাবুর দোকানের বারান্দায় মালিকের আসার অপেক্ষায় গোডাউনের চাবি নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিল নামধারী কিশোরটি। বণিক বাবু উপযাচক হয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করে জানলো যে তার নাম বিজয়। গোডাউনের মালিক এর সামনে কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না---মালিকের তিরিক্ষি মেজাজ এর জন্যে। বণিক বাবু কিছুটা আশ্বস্ত হলেন তার দেওয়া নামের আদ্যক্ষরের মিল দেখে।
বণিক বাবু ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল,
"তোমাকে যে মালিক ওয়ান থেকে চুন খসলেই
কারনে অকারণে অত্যাচার ও গালিগালাজ করে
---তুমি মুখ বুজে সহ্য করো কেন? শুনতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে। তুমি কোন প্রতিবাদ করো না কেন?"
"কাজটা চলে গেলে বড়ই বিপদে পড়ে যাব"--বিজয় বলে।
বিজয় আরো বলে--"আপনারা যে আমাকে আড়ালে বিড়াল বলেন তা আমি জানি। কিন্তু বিড়ালের সভার জানেন তো?"বণিক বাবু মুখ বুজে "না" সূচক মাথা নাড়েন।
এই কথার মধ্যেই গোডাউনের মালিক এসে যাওয়ায় দুজনেই চুপ ক'রে যায়। দোকান খুলে ধুপ- ধুনো দেওয়ার পর মালিক তাকে ডেকে বণিক বাবু কি বলছিলেন জিজ্ঞেস করায় বিজয় চুপ করে থাকে। তার এই চুপ করে থাকার জন্যে মালিক রেগে যায়। আসলে মালিক বাবুটির অনেক কু-কর্মের জন্যে কেউই তাকে পছন্দ করে না। আছে তার সব কথা বিজয় জেনে যায়--তাই বিজয় কে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। মালিক আবার জিজ্ঞেস করায় বিজয় শান্তভাবেই বলে--"যাই কথা হোক না কেন, আপনাকে সব জানতে হবে?"
সামান্য একটা কর্মচারীর মুখে এই উদ্ধত্যপূর্ণ জবাবে মালিক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এমনকি তাকে চড়-চাপাটিও মারতে যায়।
বিজয় হঠাৎ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হাতের কাছে একটা পাঁচশো ওজনের বাটখারা তুলে নিয়ে মালিকের কপাল লক্ষ্য করে মেরে সেই যে দৌড়ে উধাও হয়ে গেল, তার আর কোনো হদিস পাওয়া গেল না।
Comments