লেখক ডাঃ হর্ষময় মণ্ডল -এর একটি গল্প

উচ্চাভিলাষ




ইন্সপেক্টর রজত কোনরকম মাথা না ঘামিয়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদারকে কল করে নিয়ে এসে সাথে নিয়ে পৌছে গেলেন যেখানে খুন হয়েছে সেখানে। দেখলেন দু'জনে, বিশাল বড় একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি, দুটি দামি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দেখলেই বোঝা যায় খুবই অর্থবান ফ্যামিলি ।সামনে একটা বড় লন। গেটকিপার গেট খুলে দিতেই গাড়ি নিয়ে রজতবাবু ঢুকলেন একেবারে দরজার কাছে। সবাইকে বলে দিয়েছিলেন বাড়ির সদস্যরা কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যান। গাড়ি দাঁড়াতেই বাড়ির বৈঠকখানার দরজায় এসে হাতজোড় করে একজন বয়স্ক লোক কাঁদতে কাঁদতে বললেন - আসুন! 

রজতবাবু খান চারেক পুলিশ আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তারা গার্ডে আছে, তাদের দেখতে না পেয়ে বললেন- ভিতরে যাওয়ার আগে বলুন লাশ কোথায় আর আমার পাঠানো পুলিশ কোথায়?

-- সব দেখাবো।

-- আপনার পরিচয় ?

বাড়ির সকলে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে তাই একে একে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললেন - আমার নাম ধনেমান কালুই , ইনি হলেন আমার স্ত্রী গীতা ,এই আমার ছোট ছেলে ধীমান ,এ হলো আমার মৃত ছেলের স্ত্রী রত্না ।মৃত ছেলের নাম বিমান ।আর এই দুটি আমার বাড়ির কাজের লোক এর নাম হরি মউল আর এর নাম সোনা মাল ।আসুন আমার সাথে।

কিছু দূর গিয়ে ধনেমান বললেন - আমি আর সামনে যেতে পারছিনা ।

ব্যাপারটা বুঝে রজতবাবু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন ।তারপর ভাস্করবাবুকে নিয়ে লাশের কাছে গেলেন।

চারজন পুলিশ দুরত্ব বজায় রেখে পাহারা দিচ্ছিল রজত বাবুকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফটোগ্রাফার সাথে ছিল সে চটপট বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ফটো তুলে চলেছে ।লাশ দেখা হয়ে গেল রজতবাবু ফিরে আসতে আসতে ভাস্কর বাবু কে বললেন - কি বুঝলেন ?

-- মার্ডার করেছে। কারন লাশটা দেওয়ালের কাছাকাছি পড়েছে। যদি আত্মহত্যা হতো তাহলে লাস্ট দূরে পড়তো ও মুখ থুবড়ে পড়ত।পেরাপিটে বসে ছিল সেই অবস্থায় কেউ ধাক্কা দিয়েছে আর দুর্ভাগ্য দেখুন চারদিকে সবুজ ঘাস ওইখানেই একটা ইঁট ছিল যেটাতে মাথাটা ঠোকা গেছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসুক তারপর বোঝা যাবে।

রজতবাবু ভাস্করবাবু ধনমানের ড্রইং রুমে এসে বাড়ির চারজনকে নিয়ে সোফায় বসলেন। কাজের লোক দুজন দাঁড়িয়ে আছে। 

ভাস্করবাবু বললেন - ধনেমানবাবু আপনার ছেলে বিমান কি ড্রিংক করতো?

ধনেমান চুপ দিয়ে থাকাতে প্রশ্নটা আবার বিমানের স্ত্রী রত্নাকে করলেন।

--- রত্না বলল - হ্যাঁ করতো।

-- আপনাদের বিয়ে কতদিন হয়েছে?

--- ছ' বছরেরও বেশি ।

-- বৈবাহিক সম্পর্ক কেমন ছিল?

--- ভালো।

--- গীতা বলল - খুব ভালো ছিল। নিজেদের কারখানা থেকে বাড়ি ফিরলে দুটিতে রুমে ঢুকে যেত আর বের হতো না। খাবার হরি বা সোনা রুমে দিয়ে আসতো।

-- ছ' বছরে তো এক দুটো বাচ্চার মা হওয়া উচিত ছিল! বাচ্চা নেননি কেন ?প্রশ্নটা রত্নাকে করলেন ভাস্করবাবু।

 সবাই এর তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।

--- রত্না বলল- এই নেবো সেই নেবো করে নেওয়া হয়নি।

-- ও । ধনেমানবাবু আপনার ছোট ছেলের কত বয়স হলো?

-- আজ্ঞে প্রায় ত্রিশ বছর হলো। দুভাই প্রায় পাঁচ বছরের ছোট বড়।

-- রজতবাবু বললেন - তাহলে তো বিয়ে দেওয়ার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দেন নি কেন? আপনার তো অর্থের কোনো অভাব নেই?

--- গীতা বললেন - করবো না বলছে। এখন বললে বলছে সামনের বছর, সামনের বছর বললে বলে আসছে বছর ।আমরা ওর যখন পঁচিশ বছর বয়স তখন থেকে বিয়ের কথা বলছি। -- তখন আপনার বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছলো? রজত বাবু জানতে চাইলেন।

--- গীতা বললেন - হ্যাঁ প্রায় বছর দুই হবে বড় ছেলে বিমানের বিয়ে হয়ে গেছে।

-- ভাস্করবাবু ধীমানকে বললেন - ধীমান বাবু বিয়ে করছেন না কেনো? না কোনো গালফ্রেন্ড আছে?

-- না না সেরকম কিছু নয় ।আমার বন্ধুরা কেউ বিয়ে করেনি তাই আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে সকলে হাসাহাসি করবে তার জন্য বিয়ে করছি না ।

-- আমি উল্টো বলছি একজন করলে দেখবেন সকলে বিয়ে করছে‌। একজনকে আগে শুরু করতে হবে। আর কথা না বাড়িয়ে ভাস্করবাবু বললেন - আপনাদের বেডরুম গুলো দেখতে চাই।

  রত্না ও ধিমান বললেন - চলুন।

-- যেতে যেতে ভাস্করবাবু বললেন -আপনাদের এত বড় বিজনেস কে সামলাতো?

-- ধীমান বলল - দাদা একা হাতে সামলাতো।

-- তাহলে তো বিরাট প্রেশার পড়ে যাবে, রাতে ঘুম ছুটে যাবে‌!

-- হ্যাঁ দাদার তো হাই প্রেসার ছিলো। ঘুমের ওষুধ খেতো।

-- স্বভাবিক।

 ঘুরে ঘুরে দেখলেন বেডরুম গুলো, তারপর ছাদে গেলেন। সাথে ধীমান ও রত্নাও এসেছে। সবকিছু দেখে নিলেন,কিছু বললেন না।



 থানায় এসে রজতবাবুকে বললেন একজন মহিলা ও একজন কনস্টেবল কে সাধারণ বেশে

ধনেমানের বাড়ির উপর নজর রাখতে বলুন। কেবল ওদের গতিবিধির উপর যেন কড়া নজর রাখে ।ওরা কার সাথে কি কথা বলছে এইসব। আর দুজনের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছি ফোন ট্যাপ করুন ।যদিও লাভ কিছু হবেনা, ফোন সিম চেঞ্জ করে দেবে তাও।

জিজ্ঞাসা করলেন আজ রাত নাগাদ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিশ্চয় পেয়ে যাবো?

-- হ্যাঁ ।

--রিপোর্ট পাওয়ার পর ধনেমানের ঘরে যাবো।

-- ওকে।


পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে পাওয়া গেছে। বিমানের পেটে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে ।তাই কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ধনেমানের বাড়িতে ভাস্করবাবু রজতবাবু এসেছেন। জানতে পারলেন বিমান মদ খেত বাবা-মাও জানত । রত্না ঘুমিয়ে পড়লে একা একা ছাদে গিয়ে খেতো, কারণ রত্নার অ্যালকোহলের গন্ধে বমি পায়। মদ খেয়ে কি অবস্থা হয় বিমানের রত্না জানে না ।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুসারে ধরে নেওয়া হলো অত্যধিক অ্যালকোহল পান করার জন্য বেসামাল হয়ে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু ভাস্করবাবু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না কারণ চিৎ হয়ে পড়েছিল বিমান ও দেওয়ালের কাছাকাছি।



দিন সাতেকের জন্য অন্য একটা কেস সলভ করতে ভাস্করবাবু চলে গিয়েছিলেন ফিরে এসে শুনলেন ধনেমানের বাড়িতে কড়া নজর রাখার পরেও সন্দেহজনক কিছু পায়নি।

ভাস্করবাবু কারো ওপর ভরসা না করে নিজেই নজর রাখবেন ঠিক করলেন। কিন্তু কাউকে কিছুই বললেন না যে সে নিজে নজর রাখবে বরং বললেন নজরদারি যেমন চলছিল তেমনি চলুক। ভাস্করবাবু ফ্রেঞ্চকাট নকল দাড়ি পরলেন, মাথায় ঝাকড়া চুল পরলেন ,পাওয়ার চশমা, সাধারণ জামা প্যান্ট পরে ধনেমানের বাড়ি থেকে মেরেকেটে মিনিট দশেকের পথের দূরত্বে বাজারে নজর রাখলেন। ধনেমানের ঘরের দিকেই গেলেন না ।তিনদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরের দিন বাজারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন এমন সময় দেখলেন রত্না আসছে। একটা ফলের দোকানে এসে রত্না দাঁড়ালো। ফল কিনতে প্রচুর খদ্দের। বড় ফলের দোকান, তিনজন মিলে খদ্দের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। রত্না আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি হ্যান্ডসাম ছোকরা এল রত্নার কাছাকাছি দাঁড়ালো পনেরো মিনিট পর ছেলেটি কিছু না কিনেই চলে গেল ।রত্নাও চলে এলো। দেখে মনে হল ছেলেটি ফলের দাম জিজ্ঞেসও করেনি ।

ভাস্করবাবুর সন্দেহ হলো। ওরা চলে যেতেই কিছুক্ষণ পরে ফলের দোকানের দোকানদারকে এসে জিজ্ঞাসা করলেন - ভাই এখানে যে ম্যাডাম ফল কিনতে এসেছিলেন চলে গেলেন ?

-- হ্যাঁ। এইমাত্র গেলেন, ওই রত্না ম্যাডামের কথা বলছেন তো?

-- হ্যাঁ। আর ওই ছেলেটি?

-- কোন ছেলেটি?

-- রত্না ম্যাডামের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন?

-- উনিও চলে গেলেন?

-- ফল তো কিনলেন না?

-- না , মনে হলো রত্না ম্যাডামের সাথে দু'চারটে খুব নিচু স্বরে কথা বলছিলেন। মনে হলো পরিচিত। 

-- হতেই পারে। ছেলেটি কে চেনেন?.

-- চিনি না তবে আর একদিন দিন কয়েক আগে এসেছিলেন রত্না ম্যাডাম আসার পরে।

-- ও আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ।

ভাস্করবাবু চলে আসছিল। ও সাহেব ,সাহেব ডাক শুনে ঘুরে দেখলেন ফলের দোকানের পাশেই জুতো পালিশবালা ছেলেটি ডাকছে।

-- জিজ্ঞাসা করলেন - আমাকে ডাকছো ভাই?

-- হ্যাঁ সাহেব। আপনার এত সুন্দর চেহারা আর আপনার জুতোটা নোংরা দিন পালিশ করে দিই। দশ টাকা দেবেন।

 পালিশওয়ালার কাছে রাখা মাড়াটিতে বসে জুতো জোড়া খুলে দিলেন। ছেলেটি জুতো পালিশ করতে করতে বলল - সাহেব আপনি রত্না মেডাম আর ছেলেটার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন?

-- ভাস্করবাবু হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো উত্তেজিত হয়ে বললেন - হ্যাঁ তুমি চেনো? এত উত্তেজিত ভাস্করবাবু খুব কম সময় হয়েছেন।

-- ম্যাডাম কে চিনি ও জানি ছেলেটার বাড়ি ঠিকানা জানিনা।

-- ভাস্করবাবু আবার হতাশ হলেন।একসাথে সব আলো নিভে গেলে যেমন হয় তেমন ।

-- কিন্তু একটা উপায় আছে সাহেব।

-- আছে বলো বলো আমার আশার আলো দেখতে পেলেন।

-- কাল এই সময়ে আসুন না হলে আমাকে কটা দিন সময় দিন । তবে দোকান বন্ধ রাখলে খেতে পাবো না। 

-- পাঁচশ টাকার নোট বের করে দিলেন ভাস্করবাবু বললেন - আরো দেবেন।

পরের দিন ঐ সময়েই গেলেন।

ছেলেটি বলল - এসেছেন সাহেব। তারপর একজন প্লাস্টিক কুড়ানিকে হাতের ইশারায় ডাকলো।মেয়েটি আসতেই ছেলেটি বলল- সাহেবকে ওই ছেলেটির ঘর দেখিয়ে দিয়ে আয়। ভাস্করবাবুকে নিয়ে মেয়েটি চলল। ভাস্করবাবু একটি দু'শ টাকার নোট মেয়েটিকে দিলেন।মেয়েটি খুব খুশি হলো। মিনিট দশেক হাঁটার পর মেয়েটি আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখালো ছেলেটির বাড়ি।

-- ভাস্করবাবু দেখলেন - একটি সাত তলা ফ্লাট। থার্ড ফ্লোরে থাকে। মেয়েটি কে বিদায় দিয়ে থানায় রজতবাবুকে ফোন করলেন ।কিছুক্ষণের মধ্যে রজতবাবু পুলিশ-সমেত পৌঁছালেন।

-- ভাস্করবাবু বললেন - আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন ।আমি বিশেষ করে ডাকলাম এই জন্য যে সিকিউরিটি আমাকে ঢুকতে দেবেনা।

 ভাস্করবাবু ছেলেটির বাড়ির দরজায় কলিং বেল টিপলেন মনে দ্বিধা নিয়ে। দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কেউ আছে না নেই , দরজার এমনি সিস্টেম।

দরজা খুললো ছেলেটি, বলল- কাকে চাই?

স্যার আমি হেলথ ইনসিওরেন্স ,গাড়ির ইন্সুরেন্স জীবন বীমা সবকিছুর এজেন্ট স্যার।

-- আপনি মিথ্যা বলছেন আপনার ব্যাগ নেই, কাগজপত্র নেই ইনসিওরেন্স করবেন?

-- হাসালেন স্যার !আপনার মত মানুষও যদি এই কথা বলেন?

-- মানে ?

-- মানে সাথে স্মার্ট মোবাইল আছে কি জন্য?

সবকিছু জেনে বলে দেব এক্ষুনি।আপনার যে পলিসিটা পছন্দ হবে তার সব কাজ অনলাইনে করে দেবো এখানে বসেই।

 -- ছেলেটিও হেসে বললো - ঠিকই বলেছেন, আসুন।

 -- আপনার শুভ নাম স্যার?

-- অয়ন গোস্বামী ।

-- ধন্যবাদ স্যার 

অনেক পলিসির কথা বললেন ভাস্করবাবু।

একটাও পছন্দ হচ্ছেনা। শেষে বললেন - স্যার এই এস বি আই এর হেলথ ইনসিওরেন্স রত্না ম্যাডামকে এইমাত্র করিয়ে এলাম ।

-- রত্না?

-- হ্যাঁ স্যার । উনিই তো আপনার ঠিকানা দিলেন

নইলে কেমন করে আপনার কাছে আসতাম বলুন? এভাবেই তো আমাদের কাস্টমার বাড়ে। আপনি আবার খুশি হয়ে অন্য কোন আত্মীয় বা বন্ধুর ঠিকানা দেবেন, সেখানে আমরা যাবো। এভাবেই চলে স্যার।

-- ঠিক আছে রত্না কে ফোন করে জেনে নিচ্ছি।

-- অবশ্যই স্যার।ম্যাডাম তো বললেন আমি বললে না করবে না। আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্ব। যদি টাকার অসুবিধা থাকে ম্যাডাম বললেন আমি দিয়ে দেবো। স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসে ম্যাডাম ।

--ছেলেটি হাসলো।

-- স্যার ম্যাডামকে বিয়ে করলে পারতেন। আমার বয়স হলো অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ম্যাডাম খুব কষ্ট পাচ্ছি মনে হল ও বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। নিজের ভালোবাসাকে হারানোর বেদনা ম্যাডামের চোখে মুখে ।

অয়ন কোনো জবাব না দিয়ে ব্যথিত হলো। ভাস্কর বাবু লক্ষ্য করলেন।

রত্না কে ফোন করলো --- ও প্রান্ত থেকে হ্যালো হ্যাঁ বল,----- না না আমি কোন ইনসিওরেন্স এজেন্টকে পাঠায়নি, ও দেখো ছদ্মবেশে কে !

ফোন রেখে অয়ন বললো -আপনি কে?

-- আমি প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদার।

-- ভাস্কর তালুকদার সর্বনাশ !

-- হ্যাঁ সর্বনাশ ।

-- অয়ন ভাস্করবাবুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে গেলো।

ভাস্কর বাবু সিঁড়ি ভাঙার শব্দ পাচ্ছেন। জানালা থেকে চেঁচিয়ে বললেন রজতবাবু অয়ন পালাচ্ছে ওকে ধরুন।



অয়ন, রত্না ও ধীমানকে থানায় ধরে আনা হয়েছে ভাস্করবাবু একটা সিগার ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে বললেন এই খেলাটা কেন খেললেন রত্না ম্যাডাম? বলুন কথা বলুন সবকিছু নিজের মুখে স্বীকার করুন নইলে সব ব্যবস্থা আছে।

রজতবাবুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে ।রজতবাবুর আরো প্রচুর কাজ আছে তাই ডাকলেন সূর্পনখা?

সুপর্ণা নাম ওর। ফিগারের জন্য ও কাজকর্মের জন্য সবাই সূর্পনখা ডাকে, তাতে সুপর্ণা কিছু মনে করে না।

-- তড়িৎগতিতে সুপর্ণা এসে টুটিটা ধরে শূন্যে তুলে ধরল রত্নার। ফাঁসিকাঠে ফাঁসিতে ঝোলালে মানুষ মৃত্যুর আগে যেমন ছটফট করে তেমনি করে রত্না ছটফট করতে লাগলো। অল্প সময়ে রেখে ধপাস করে ফেলে দিলো বেঞ্চের উপর। কাসতে কাসতে বললো - বলছি আমি সব বলছি। 

আমার আর অয়নের ছোটবেলা থেকে প্রেম। আমরা বর্তমানে বিবাহিত ।আমার বাবা-মা মারা গেছে অয়নের ও তাই। কিন্তু আমার এক দাদা আছে সে কোথায় চলে গেছে জানিনা, অয়নের কোন ভাইবোন নেই। অতএব অয়নকে কে রেঁধে বেড়ে দেবে বা আমাকে কে আগলাবে, নিরাপত্তা দেবে ? দুজনেই বড় অসহায়।

আর পাড়া-প্রতিবেশী আমাদের দুজনের মেলামেশা বা এক ঘরে থাকা এটা সহ্য করতে পারছিল না। গ্রামের লোক এটা কিছুতেই মেনে নিতে চাইল না। তাই আমরা বিয়ে করতে বাধ্য হলাম। লেখাপড়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। গ্রামে কাজের সুযোগ কম কোন রকম দিনপাত হচ্ছিল ।তাই ঠিক করলাম সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে দুর্গাপুরে চলে যাবো। সেই মতো সব কিছু বিক্রি করে এখানে এসে ভাড়াবাড়িতে থাকলাম। দুজনে প্রাইভেট জব করে সুন্দর চলে যাচ্ছিল। আমি একটা নার্সিংহোমে রিসেপসনিস্টের কাজ করছিলাম। এখানে একদিন বিমান রুগী হয়ে এলো ।দিন সাতেক ভর্তি ছিলো। আমি জানতে পারলাম বিমান হিজড়া। কিন্তু বিশাল ধনী লোক, শিল্পপতি। আমার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল বাড়িতে এসে অয়ন কে বললাম - ওই লোকটাকে যদি বিয়ে করি তাহলে কেমন হয়? ও তো আমার কিছু করতে পারবে না আমি তোমারি থাকবো। ওকে কোনরকম রাস্তা থেকে হাঁটাতে পারলেই বিমানের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবো। আমরা শিল্পপতি হয়ে যাবো, শিল্পপতি। প্ল্যান মাফিক শেষ তিন দিন খুব খেয়াল রাখলাম ফোন নাম্বার দিলো। বিমানকে দেখলে বোঝার উপায় নেই ও হিজড়ে। প্রায় ছ ফুটের কাছাকাছি লম্বা, গৌরবর্ণ, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি কেবল লিঙ্গ নেই। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগলো। বিয়ে করলাম। প্রথম রাতে যখন জানতে পারলাম মানে জানি কিন্তু অভিনয় করলাম তখন বিমান বললো - একদম চুপ থাকবি আমার ঘরে সোনার পিঞ্জরে বন্দী হয়ে থাকবি, বেচাল দেখলে খতম করে দেবো। আমি আশা নিয়ে এসেছিলাম বিমানকে পথের থেকে সরাতে পারলেই হবে কিন্তু বিমানের যে ভাই আছে তা জানতে পারলাম বিমানকে বিয়ে করে বিমানের বাড়ি এসে। এক বছর বিয়ে হওয়া হয়ে গেল আমি বিবাহিতা পুরুষের সঙ্গ জানি ।তাই ধিমানকে প্রেম জালে ফাঁসালাম। এই কথাটা অয়ন জানেনা। দৈহিক সুখের জন্যই প্রেম, ভালোবাসি অয়নকেই। ভাবলাম যদি বিমানকে খুন করি তাহলে ধীমানকে হাতে রাখা জরুরি এবং সে হাতে থাকবে একমাত্র নারী শরীরের জন্য। বিমান রোজ রাতে প্রচুর মদ খেতো তারপর বেহুঁশ হয়ে ঘুম।সেই সুযোগে প্রতিরাত আমি আর ধীমান শারীরিক মিলন করতাম, আর গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট খেতাম কারণ প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে অয়ন মেনে নেবে না, বা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এইজন্য যে রাতে বিমান মরল সেই দিন আমি মদের সাথে ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছিলাম আর ধীমানকে বলেছিলাম আমার পিরিয়ড চলছে এসোনা। বিমানকে কোনরকম ছাদে নিয়ে গিয়ে কার্নিশে বসিয়ে দিলাম ।

--রজতবাবু বললেন - ভাস্করবাবু আপনি ঠিকই বলেছিলেন যে কেউ আত্মহত্যা করলে দূরে মুখ থুবরে পড়বে।

-- ভাস্করবাবু বললেন - আপনি বেঁচে গেলেন ধীমান। সেকেন্ড টার্গেট ছিলেন আপনি।মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন করব এইরকম দুশ্চরিত্রা,উচ্চাভিলাষী মহিলার ও অয়নের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। জানিনা আদালত ধীমানের জন্য কি শাস্তি বরাদ্দ করবেন।


                  

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024