লেখক শ্রাবণী মুখার্জী -এর একটি গল্প
বিপরীতে
সুবিকাশ ও সরমা পাশাপাশি বসে আছে গাড়ির মধ্যে কিন্তু দুজনার মুখই দুইদিকে ঘোরানো , দুজনেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে যেন খুব মন দিয়ে ,
চোখে চোখ রেখে কথা বলছে না আর, । সুবিকাশ ভালো করেই জানে তীর লক্ষ্যভেদ করেছে , সঠিক প্রয়োগ হয়েছে ,এবার জ্বলুক সরমা ।
সরমা ও বুঝলো এতোদিন যাকে ঘিরে এই লড়াই চালিয়ে এসেছে , হয়ত সবাই সমান নয় এই ভাবনায় একটু করে উঠে দাঁড়াবার সাহস করছিলো, সেও একই।
বাইরের লোকের একটা কথাতে বিশ্বাস করে ভুল ধারণা করে তাকে ঘুরিয়ে নাক দেখানো হয়েছে।
সম্পর্কে চিড় ধরে যদি বিশ্বাস ও ভরসা না থাকে ।
সুবিকাশের সাথে সরমার বিয়ে হয়েছে মাত্র একবছর হলো , কিন্তু তারা পূর্ব পরিচিত , অনেকদিন থেকেই বিভিন্ন মহলে দেখেছে ,সেভাবে কথা না হলেও তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একে অপরের অজানা নয় ।
সুবিকাশের ব্যাকিং কাজ থেকে শুরু করে অফিসিয়ালী সব কাজেই সরমা একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে । একসময় সুবিকাশ খুব উপকার করেছিলো সরমার তাই সরমা ও পাশে দাঁড়াবার সাহস করেছে ।যখন সরমার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো , নিজের ঘরের অভাব ঢাকা রেখে সে সুবিকাশের সাহায্য করতো যখন যা প্রয়োজন তাই মিটিয়ে ,
সুবিকাশ ও সরমা যেমন ঝুরঝুরে ভালোবাসা দিয়ে তাদের প্রেমের বাগান তৈরী করেছিলো তাতে পুরো বাগানে নানা রঙের মেলা বিখ্যাত হবে এই আস্থা ছিলো । বিগত জীবনের সব দুঃখ হাসিমুখে ভুলতে বসেছিলো সরমা ।কিন্তু ইদানীং দেখছিলো সুবিকাশ কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে ,কথা কম বলে ,ফোন করলে ধরে না , ফোন ধরলেও অফিসে আছি বলে কেটে দেয় ।
ঈশান কোণে মেঘ ধরেছে আজ বৃষ্টি হবেই .. প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হোক ,ধুয়ে নিয়ে যাক মনের সব কালিমা। সেই সেদিনের মতো দিন যেন ফিরে আসে জীবনে ।
বারান্দায় টবে একটা পাতাবাহার গাছ লাগিয়েছিলো দুজনে মিলে , সুবিকাশ বলেছিলো এর লতানো কান্ড হলো আমার বাহু ,যে পুরো বাড়ি, সংসার বাহুবেষ্টিত করে সুরক্ষা দেবে আর তুমি হলে এর মূল , তোমার উৎস তেই এর প্রাণ সঞ্চার হবে নইলে নিস্তেজ ...বুঝলে আমার পাগলি ..বলে কাদা আঙুলেই গালটিপে একটু আদর করে দিলো ।লজ্জায় সেদিন মুখটা নামিয়ে নিয়েছিলো সরমা ।
'যাঃ..... তুমি না খুব অসভ্য ' বলে একছুটে গিয়ে দাঁড়ালো আয়নার সামনে ।
কেন এখন ওর মনে দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলছে ? এক অনন্য ভালোবাসা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলি কে সুন্দর আগলে রেখেছিলো । প্রবাসী বন্ধু টিই তাহলে শত্রুর কাজ করলো ? কিন্তু কেন ?
কেন এমন ভাবে হেরে গেলো তার বিশ্বাস ?
তবে কি সুবিকাশ অন্য কাউকে............?
না না সে পারবে না জানি , তবে কি খুব অল্প সময়ে তার এতো পদোন্নতি , এতো টাকা ওর মাথাটা ঘুরিয়ে দিয়েছে ?
এতো কম সময়ে এতো সাফল্য কিভাবে পেলো সেটা জানতেই একদিন কথায় কথায় তাদের দুজনেরই কমন বন্ধু নেপাল কে বলেছিলো সরমা ।
নেপাল বাগ ইংল্যান্ডে বাড়ি চাকরি সুত্রে এখানে এসেছে মাস ছয়েক হলো , নেপালের নজর ছিলো সরমার দিকে ,তার প্রস্তাবে রাজী হয় নি বলেই কি ?
তাকিয়ে দেখলো একবার ,বিকাশ একমনে ফোন ঘাটছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ।
জানলার এপারে চোখ ফেরালো সরমা প্রবল বেগে বিপরীতে ছুটে চলেছে সবুজ রং ,কতো মানুষ , কতো দোকান , কতো স্মৃতি.. সবই বিপরীতে ।
স্মিত হেসে স্থির করলো তার চোখের কাজল ।
নেতাজী ইন্ডোর স্টেটিয়ামের সামনের রাস্তায় সরমা নেমে যেতেই , সুবিকাশ ড্রাইভার কে বললো 'চলো '।
পশ্চিমাকাশে হেলানো ভাস্কর তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানালো ঘাড় নেড়ে !
আজ দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেলো চিরতরে ।
Comments