Sunday, March 6, 2022

কবিতা || যথোচিত কর্ম || পাভেল রহমান

 যথোচিত কর্ম






“দিবসে চন্দ্র সূর্যের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল”


-সম্মান বা বাঁচার লোভে এ কথা না বল।


খানিক ক্ষণে মিথ্যা বলায়


বহু প্রাণ রক্ষা পায়;


কিন্তু হালাল নহে সকল মিথ্যা সবসময়।


প্রিয়কে নয়, নিজেকে বাঁচাতে


মিথ্যা বলা না যাবে কোনো মতে;


তবে বন্ধু, প্রিয়কে বাঁচাতে মিথ্যা বলো নির্দ্বিধায়।

কবিতা || আমি একটু বসতে পারি তোমার পাশে || আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

 আমি একটু বসতে পারি তোমার পাশে





আমি একটু বসতে পারি তোমার পাশে,


বৈকালি হাওয়ায় সবুজ ঘাসে?




নীচে নদী প্রবহমান


ক্ষতি কী, যদি ঘটে যায় কোন অঘটন;




তোমার বাদামি চুল আর নীল চোখ


শুষে নিতে পারে আমার সব শোক।




আমার যত কাতরতা যত আর্তনাদ,


তুমিই চেপে রাখতে পারো বুকের খাদ।




তোমাকে আমার মনে হয়েছে সেই নারী


তাইতো আমি তোমাকে নিয়ে এইসব কল্পনা করি।




আমি একটু বসতে পারি তোমার পাশে,


বৈকালি হাওয়ায় সবুজ ঘাসে?

কবিতা || গুটি পোকা তবু স্বাপ্নিক || চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী

 গুটি পোকা তবু স্বাপ্নিক






আমি নিজেই নিজের সামনে দাঁড়াই


এর চেয়ে স্বচ্ছ আয়না বাজারে কোথায়?


যে দগ্ধ হতে হতে শিখেছে হাসির সোহাগ


তাকে দেখাতে এসো না দানবীয় ভয়।


কষ্টের নদী জলে সাঁতারে পেরোনোর সাহস


হাতের তালুতে নাচায় না পাওয়া বেদনার শোক।


মনের ভেতর গুটি পোকা তবু স্বাপ্নিক


প্রজাপতি হবার বিমুগ্ধ বাসনায়


একবিন্দু মধু যদি পাই


সেই তো জীবনের সার্থকনামা। 

কবিতা || পুরুষ তুমি || বন্দনা বিশ্বাস

 পুরুষ তুমি








আমি নারী, আমি প্রকৃতি, আমি সর্বংসহা


আমার আছে অফুরন্ত ধন ভান্ডার


পুরুষের অহমিকা আমাকে দগ্ধ করে


পুরুষ, একবার আমার দিকে তাকাও


আমি নিঃস্ব হতে চাই ,সম্পুর্ন নিঃস্ব


একবার আমাকে তোমার পাশে নাও


মুহুর্তে আমার সব আভরণ উন্মোচিত হবে


রানীরূপ খোলস ছেড়ে হবো সেবাদাসী






প্রকৃতি পুরুষের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়


যে প্রকৃতি, নারী, মা, কণ্যা, সেই 


পত্নী


পুরুষ তুমি আমাকে চিনতে শেখো


নারী সব উজাড় করে দিতে জানে


তুমি এসো হৃদয় দিয়ে গ্রহন করো


সেদিন আগুনে , অ্যাসিডে, মর্মদাহে পুড়বে না নারী ।

কবিতা || চিরনিদ্রায় ডিসকো কিঙ্ || রানু রায়

 চিরনিদ্রায় ডিসকো কিঙ্ 




বাপ্পীর গানে কোমর নাচানো

সবাই কে করেছে মাত

বস্তি থেকে পানের দোকান

এলিট সমাজ ও কুপোকাত।

তবলার তালে ঠোকা মেরে

গানের জগতে আজ

রক সঙ্গীতে পা রাখলে তুমি

নিয়ে নতুন সাজ।

পূজো হোক বা পার্টীর কোলাহল

সব জগতেই আছো তুমি

হয়নি তাই বিফল।

ডিসকো ডানসার থেকে

কলকাতার রসগোল্লা,

অসম সব স্থানেই

তোমার সাবলীল পদচারণা।

চলে গেলে তুমি আমাদের ফেলে

সঙ্কটে সঙ্গীত জগতে

অমৃত ধামে বসেছে কি আজ

গানের জলসা ঘর ।

শেষ কথাই তো তুমি বলেছিলে

কভি আলবিদা না কহে না-----

মৃত্যুই এক চরম সত্য

বিচার করে না 

রাজা না ভৃত্য।

কবিতা || কথা দিলাম || জয়িতা চট্টোপাধ্যায়

 কথা দিলাম




তোমার আমার মাঝের সাঁকোটা নড়বড়ে হয়ে গেছে দীর্ঘ অবহেলায়, তাই হয়তো পৌঁছতে পারছি না


তোমার কাছে, যেদিন সব উপেক্ষা নির্মূল হবে


সব দুঃখ, অভিমন ভেসে যাবে নদীর জলে


সেদিন অনায়াসে তোমার কাছে পৌঁছে যাবো


সমস্ত জঙ্গল ভেঙে, কাঁটাগাছ পেরিয়ে


বন্যার জল উপেক্ষা করে খরায়


ক্লান্ত হয়ে নিশ্চয়ই প্রিয় তোমার কাছে পৌঁছে যাব।

কবিতা || ফিরিয়ে দাও শৈশব || অশেষ গাঙ্গুলী

 ফিরিয়ে দাও শৈশব


            




ফিরিয়ে দাও শৈশবের

ওই হাশিখুশি দিনগুলো।


যখন ছিল না মনে জটিলতা আর হিংসার অবশেষ।


ফিরিয়ে দাও শৈশবের খোলা মাঠের প্রন্তর


আমার যেখানে প্রানখুলে নিতে পারতাম নিঃশ্বাস।


ফিরিয়ে দাও সহজ - সরল মন যা বুঝত না


সমাজ জটিলতা আর কঠিন মনোভাব।


ফিরিয়ে দাও ছোটবেলা র অবুঝ মনকে


জীবন এত কঠিন তা বুঝত না।


জানত না জীবনের চরম দুঃখ গুলো


শিশু মন শুধু জানত আনন্দ নিয়ে বয়ে


চলে যে সবার জীবন।


ফিরিয়ে দাও শৈশবের হাসি আর আনন্দের দিন গুলি


যা পরিস্থিতি র দূর্বিপাকে হয়েছে মলিন।


ফিরিয়ে দাও শিশু মনে কুঃসংস্কার হীন মনগুলো


আজ সংস্কারে চাপে হয়েছে বন্দি অন্ধকারে।


  যে মনে ছিল না হিংসা - বিবাদ আর অহংকারের চিহ্ন।


যে মনে সন্দেহ বলে ছিল না


ছিল না অন্ধকারাচ্ছন্ন মনোভাব।


সে জীবন আমি ফিরে পেতে চাই গো বারবার।

কবিতা || বসন্ত তুমি এলে তাই || চাতক পাখি

 বসন্ত তুমি এলে তাই...






আজ থেকে 


আর নয় 


এসেছে সে সময়।


সারাদিনের অপেক্ষার 


বুঝি হলো অবসান,


হলো কি তবে ভালোবাসারই জয়।




তাই বুঝি না জানি 


কোথা থেকে হটাৎই  


 একরাশ বসন্তের আলো এসে।


 ফুটিয়ে দিয়ে গেলো ফুল


 মনের কোণে গহীন বনে,


 তাই বুঝি তারই গন্ধ আসে ভেসে।


 


আর ঝরিয়ে গেলো তা 


 দমকা হওয়ায়


একরাশ ঝরা পাতা।




আর তুলে গেলো ঝড়


 বাম অলিন্দের খোলা জানালায় 


 দিয়ে গেলো একরাশ সরলতা।




আমি চাঁপার গন্ধে 


মুগ্ধ হলাম


বেলির মালা গেঁথে পড়লাম গলে।


বসন্ত তুমি এলে তাই এসব হলো


তাই বুঝি এ মন


 যখন তখন গুনগুনিয়ে কথা বলে।

কবিতা || শিব‍রাত্রী || নীতা কবি মুখার্জী

 শিব‍রাত্রী





শিবরাত্রি, শিবের বিয়ে, গাই যে শিবের গান


সবাই মিলে চলো রে ভাই শিব- বাবারই স্থান,


বর আসবে, বরযাত্রী আসবে, আসবে নন্দী ভৃঙ্গি


আরো সবাই সাঙ্গোপাঙ্গো বাবার যত বিরিঙ্গী।




রাত জাগবো গান গাইবো মালা বদল হবে


চারটি প্রহর জাগতে হবে তবেই বিয়ে হবে,


আকন্দ ফুল,ধুতুরা আর এনো জোড়া বেল


ঘি, মধু,গঙ্গাজল আর আনবে সুগন্ধি তেল।




কলকে গাঁজা এনো যদি পারো ছিলিম দুই 


কাঁচা দুধ আর গঙ্গা মাটি লাগবে টাটকা দই।


শিব-দুর্গার মিলন হবে আজ রাতেরই শেষে


মাকে নিয়ে যাবেন বাবা কৈলাসেরই দেশে।




বাবা আমাদের দয়াল ঠাকুর নামেই ভোলাভালা


বাবার পূজো করলে ভরে আশীর্বাদের ডালা।


এসো এবার সবাই মিলে করি বাবার নাম


বাবার প্রসাদ পেলে সবার পূরবে মনষ্কাম।




বাবা ভোলানাথ ভোলেভালা, অল্পে তুষ্ট হয়


রাগলে বাধবে দক্ষযজ্ঞ, কারো বাপের নয়।




নটরাজের নৃত্য যখন করেন বাবা-শুরু


স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল কাঁপে, বুক যে দুরু-দুরু।


শিব-দূর্গার মিলন রাতে জয়ধ্বনি দিই


হর-হর, ব্যোম-ব্যোম বলে বাবার প্রসাদ নিই।

কবিতা || আফতাব অ্যাভিনিউ || রথীন পার্থ মণ্ডল

 আফতাব অ্যাভিনিউ





আজও বয়ে চলে আফতাব অ্যাভিনিউ


নদী হয়ে বুকে 


অথবা রক্তস্রোতে 


জানতে পারে না কেউ... 


পায়ে পায়ে সাজে কত গল্পের চলা


মুখে মুখে বাজে কত দিবসের বলা


কত প্রেম, কত বিচ্ছেদ 


কত বন্ধুতা, কত বিপ্লব 


সাজিয়ে দিয়েছে জীবনের হরবোলা... 


শুধু জানতে পারে না কেউ 


বন্ধুর মত, বন্ধুর যাতায়াতেও


আজও বয়ে চলে আফতাব অ্যাভিনিউ...

কবিতা || ব্যথার বিরহ || রবীন বসু

 ব্যথার বিরহ





নদীর জলে জ্যোৎস্না পড়ে, আকুল হৃদয় তার


সঙ্গোপনের অনেক কথা জলের তলায় যায়;


ফিসফিসিয়ে কানের কাছেই তাবৎ কথার ভার


নদীর মনে বান ডেকেছে, পরান কোথায় হায়!



পরান যেথায় যাক না রে ভাই, ঢেউয়ের মাথা


নদীর জলে স্নান করে যে অপার তাহার হিয়া,


প্রেমের বানে ভেসেছে আজ সকল করুণ ব্যথা


ঘাট মানে না আঘাটাও না, চলে শুধু পরকীয়া।



নদীর সাথে জ্যোৎস্না হাঁটে, যুগলে কী চমৎকার


চোখ পুড়লো মন পুড়লো আকাশের মুখ ভার,


বুকের ব্যথা সামলাবে সে কোন তাবিজের ফল

কবিতা || ঝরে এক পশলা বৃষ্টি || রানা জামান

 ঝরে এক পশলা বৃষ্টি


 


খাতা কলমে বসলে

বৃক্ষ পোয়াতি হয়

নীলাকাশে ছিটেফোঁটা

গর্ভবতী মেঘ দেখা দেয়

চৈত্রের আকাশে এ এক

অমূল্য সম্পদ; পাথরে পাথর

ঘষতে ঘষতে কালো গহ্বরে

ক্ষীণ আলো দেখা দেয়

পছন্দের শব্দে পুরো মালা

গাঁথা হলে ঝরে পশলা বৃষ্টি।

কবিতা || মধ্যবিত্ত || দীপান্বিতা পান্ডে দীক্ষিৎ

 মধ্যবিত্ত 




মধ্যবিত্ত আসলে এমন একটি শব্দ ,

যার মধ্যে আছে অনেক অর্থের সম্ভার |

দুঃখসুখ ভালবাসা ঈর্ষা হিংসা আনন্দের উপাচার |

মধ্যবিত্ত হল অনেক কষ্টের কুমভাড়, 

ভালোমন্দের মেলামেশাই দিন যাপনের আধার।

একটু একটু করে জমানো অনেক বড় সুখের আশা ,

সেলাই করা রঙিন চটি রিক্সা ছেড়ে পায়ে হেঁটেই একটু ফুচকার ভালবাসা ৷

বারবার হাত দিয়ে রেখে দেওয়া পছন্দ

সামনের সারিতে বেমানান বড় তবুও সশব্দে ঘোষণা আনন্দের অভিযান ৷

এক কাপ চা আর মুড়ি স্বর্গ সুখের সমান ৷

সুখের বালিশে পূর্ণিমার যোছনা,

ভরে দেয় গরবের বুক |

সব থেকেও খুঁজে সুখের নূতন ভাষা

ঈর্ষার আগুনে জ্বলে জ্বলে অঙ্গার সুখ ৷

তবুও ঝলসানো ভালবাসা নিয়ে এক সাথে হাঁটা,

মধ্যবিত্তের স্বপ্ন পূরণের ছবি জ্বলজ্বলে এখনও মধ্যবিত্তের মনের ক্যানভাসে আঁটা |