Sunday, August 1, 2021

ইমরান শাহ্র একটি কবিতা

 নামান্তর



কোথায় যাচ্ছি কে ডাকে বেহাগের

করুণ সুর ধরে

কোথায় গেলে এতটুকু প্রশান্তি মিলবে

দীর্ঘতর; বলতে পারো?


বিচ্ছিন্ন এটেল মাটির পথ ধরে

হাটছি তো হাটছিই 

মিলবে না কি ইহকালে এতটুকু 

প্রতিসাম্য জীবনের বিন্যাস?


না-কি আমি ভুল, আউল-বাউল

ভুল চর্যাপদের করি–

বিশ্লেষণ; অথবা বেহাগে শুনি অভিন্ন

পাখির নীলাম্বর কন্ঠধ্বনি?


যেতে চাই, দেখতে চাই সেই

সুরে অন্যকেউ নাকি

স্বয়ং লুক্রেতিউস বলেই ডাকছে কেউ

এই আমার আমিকে?

সর্বাণী ঘড়াই এর একটি কবিতা

বেঁচে থাক আয়ু


 যতই বিষণ্ণতা মহামারি তিল তিল করে মেরে ফেলতে চায় 

 ততই সবুজ গাছ ফুল ফলের আন্দোলন আর প্রকৃতির স্পর্শে মনে হয় বেঁচে আছি

নিলাকাশে যখন সাদা মেঘ ভেসে যায়

 নিস্তব্ধ বুকের ভেতর টা

 দমবন্ধ গুমোট হাওয়া থেকে

 বেরিয়ে ছুটে যায় অনন্ত বাতাসে 

মনে হয় বেঁচে আছি 

যখন দুর সীমা রেখায় মিশে যায় সাগরের ঢেউ 

উথাল পাথাল ঢেউয়ের ছন্দ বাজে বুকের ভেতর 

তখন মনে হয় বেঁচে আছি

হে ধরিত্রী মা তোর এই প্রকৃতির মাঝে ফিরিয়ে আন প্রাণের ছন্দ 

প্রাণ ভরে শ্বাস নিক আরো কয়েকটা প্রজন্ম।

মানসী ঘোষের একটি কবিতা

 নবীনবরণ


ওরে নারী তুই উঠে দাঁড়া

এই নির্মম নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়া।

বদলাবে না কেউ ,তোর সীতা রূপে 

বরং জ্বলতে হবে তোকে অগ্নিপরীক্ষার তাপে ।

হয়ে ওঠ দূর্গা ,কর অসুর নিধন ত্রিশূল হাতে ।

স্মরণ করা তোর রূদ্রচন্ডী রূপ তাদের

তুই যে অবলা এই ভ্রম হয়েছে যাদের ।

ভেঙে ফেল সব কুসংস্কারের বাঁধন

তোর স্বাধীনতার হোক নবীনবরণ।

শ্রাবণী মুখার্জীর একটি কবিতা

  শুধু তোমার অপেক্ষা



আসিলো রবি তপন লইয়া , ওই ঝুলিতে সোনা ,

পবিত্র হইল দেহ মন ছুঁয়ে , ধরণী র ধুলিকণা। 

সে তো কোনোদিন দেখে নাই চেয়ে ধনী গরিবের তফাৎ ,

কঞ্চির দৌড় দেখি সারাক্ষণ কতো রকম অজুহাত ।

আঁটছে শিকল যতো কৌশল সারাদিন মনে মনে ,

কি করে দূষণ পায় উপহার ,ভারতরত্ন ভূষণে ।

পথে ঘাটে চলে অবিরাম শুধু তিক্ততা ঝুড়ি ঝুড়ি ,

নোংরা কালো ভাষার পাথর আর কাদা ছোড়াছুড়ি ।

কী ভীষণ দামী অন্যের গায়ে ,দূষণ ছিটিয়ে সুখ ,

আঁধারি খেলা জমে বরাবর, কিরণে লুকায় মুখ ।

খেলতে তোমরা ভালোই জানো ক্রিকেট বা পা বল ,

জনসাধারণ উইকেট আজ জীবন জীবিকা বল। 

সারা মাঠে ঘুরে পায়ে পায়ে ছোটে হাত বদলের খেলা ,

সাদাবাদে লাল হলুদ নীলের নানা রঙের মেলা ।

শুধু তুমি তে আটকে গেছে কতো নিরীহ প্রাণ ,

তুমি আমি বিনা ধরণী মাঝে নাই কোনো পরিত্রাণ ।

বুনেই চলেছি মায়জাল শুধু তোমারই ,সারাজীবন  

হাজার স্বপ্ন বেনামী এখন ছিন্নভিন্ন মন । 

লুকিয়ে পড়েছে রবির বিবেক , গরম করা আদর ,

তোমার উষ্ণতা গায়ে মেখে ,শান্তি সুখের আতর ।

ছিঁড়ছে শিরা উপশিরা ..নিকোটিনের পাহাড় ,

  নতুন করে তৈরী বজ্র ঋষি দধীচির হাড় ।

ইলা চক্রবর্তীর একটি কবিতা

 তোমার খোঁজে     


আকাশ জোড়া স্বপ্ন আমার,

পুঞ্জিভূত মেঘ যেন আজ।

মিষ্টি হাওয়ায় উড়ে গিয়ে লাগায় মনে দোল,


তার তরে যে গান বেঁধেছি,

মনে আমার তুলছে যে হিল্লোল।


শ্বেত বলাকা মেঘ বালিকা দাওনা গিয়ে খবর তাকে,

  ওই সুদূরে তেপান্তরে সখা আমার যে জন থাকে।


সত্যিকারের ভালোবাসা ' ক ' জনই বা পায়,,,

মিথ্যে করে ভালোবাসা সহ্য করা দায়,,,,


আগুন আগুন ফাগুন দেখো হচ্ছে শুধু ছাই,

মুঠো করে বুকের মাঝে কুড়িয়ে নিলাম তাই।


আকাশ কুসুম ভাবনা গুলো পোকার মত কাটে,

চির সবুজ মনটা আমার নির্বাক শুধু থাকে।


তাইতো বলি ওগো পাহাড় তুমিও সাথী হও,

তারে গিয়ে একবারটি আমার কথা কও।

সুব্রত মিত্রের একটি কবিতা

 বিকারগ্রস্থ নীরবতা


আমি তো একটা আস্ত বলদের মত দাঁড়িয়ে আছি মাঝরাস্তায়

ও হ্যাঁ তো....! ভুলেই গেছি ।

সে তো এখন মস্ত বড় অফিসার

সে কি থাকবে আমার অপেক্ষায়?

তিনটি দশকের মাঝামাঝি এসেও তাকে--

ভোলা গেল না কেন, এ প্রশ্ন ফেলছে বড় বিরম্বনায়। 


সে এখন অনেক দূর।

এক কালবৈশাখী ঝড়ে তার সাথে দেখা হয়েছিল,

দেখেছিলাম ঘূর্ণিঝড়ে লৌহ শিকল ভাঙ্গা হাওয়ায় তালগাছের মাথাগুলো ঘুরছে

দূরে গরু ছাগলের দল ছুটছে।

কিছু পাখি নীড় হারা আমার আর তার মত।

স্তব্ধ হৃদয় দুলছে মর্ম বেদনায়

স্মৃতির স্রোত মনের মাঝে বলছে কথা। 


"আজ তুমি বহু দূরে আছো উজ্জ্বল সূর্যের মত

তোমাকে নিয়ে যত ভাবি মূর্খ হই তত,

আমি কবি হয়ে জন্ম নিইনি;

তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম বলেই আমাকে সবাই কবি বলে হয়ত।

বিগত দশক জুড়ে তোমার বিছানা পাতা এ বুকে

শতকের ওপ্রান্তে গিয়েও আমি বিনা জানি তুমি থাকবে সুখে"। 


মনে রেখ পৃথিবী, পারো যদি করিও মোরে স্মরণ

তাহার লাগি কবি হয়েছিল এক যুবক, কবি হয়েছিল এক যৌবন।


মুহা আকমাল হোসেনের একটি কবিতা

 লকডাউন পরবর্তী 



মরচে পড়া কারখানার তালা!

 না স্ত্রী করা দারোয়ানী পোশাক 

ঝুলছে দেওয়ালের প্রেরেকে

 দু-নলা বন্দুকের ফিতের জড়ুল গর্দানে স্মৃতিচিহ্ন… 

ঘর বলতে - ঘিঞ্জি বস্তিতে কয়েক ফুট 

একটা নুনিয়া ধরা নেটের জানালা

 ঘর কাছাড়ে একটা এদো পাট্ট পুকুর- তিনটে পাতিহাঁস- এক নাছড় কালো কচুবন 

যাতায়াতের সঙ্গী সাইকেল

 লিক সারাতে না পেরে লক্কড় শরীর; 

বার্ধক্যের অবসর চেয়ে বসে।

 সূর্য উঠলো -ডুবল

 পাখিরা ব্যকরণ মেনে খাদ্য খোঁজে এলো 

তুমি ওই ভাবে তাকাচ্ছ কেন? আমার মুখের দিকে সভ্যতার প্রতিবন্ধী সময় ক্রাচের ওপর ভর করে পার হয় রাজপথ

 তালা খুলবে। তেল মেরেছে গতকাল গোপন পৌরুষ কোষে

মাইনে শূণ্য উপস দিনের আয়োজন! 

এমন করে তাকাচ্ছ কেন, আমার মুখের দিকে।


পান্থ দাসের দুটি কবিতা

   সুখ


কি এই সুখ ?

যেন হাজারো নিস্তব্ধতা বর্তমান,

অসংখ্য আলোর প্রতিফলন

যেন ভ্রাম্যমান,

বিষয়টা হল, 

আদৌ কি আমরা সুখি ?


গভীর অরণ্যের 

যেন বিশাল গাছালী

উঁকি দিচ্ছে,

পাহাড়ের মাঝে

হাজারো গোলাপের ঘ্রাণ 

যেন কিছু বলছে,

প্রজাপতি তার রূপালী প্রদর্শন

করে চলছে,

তবে বিষয়টা হল,

আদৌ কি সে সুখি?

________________________________


সোয়েটার

       

ভাবনা শুধুমাত্র এক,

তবে তাঁর ব্যাখ্যা অনেক,

সময়ের সাথে সাথে

সব পরিবর্তনশীল,

তবে কেন,

অসহায়দের দিন আলো হীন?


শব্দ সাধারণত একটি,

যেথা সোয়েটার ৷

শীতে কেউ তাতে গা ঢাকে,

আবার কেউ তাতে তাঁর আশা ঢাকে !


চলো হই আজই সামিল 

এক অভিনব প্রয়াসে,

থাকবেনা কোন বেদনার সুর

থাকবেনা কোন অসহায়

তার স্বাভাবিক প্রাপ্তি থেকে দূর ৷

আবদুস সালামের একটি কবিতা

নষ্ট


নষ্ট পাড়ায় ঘর বাঁধতে মানা নেই

এখানে কেউ খুঁত ধরেনা

নষ্ট মানুষের দলে দিব্যি বিন্দাস দিনযাপন

পাঁকের ভিতর পাঁকাল মাছের সংসার 


প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যায়

আনন্দ বাগানে ঝুলে আছে মাকাল ফল

পূর্ব পুরুষেরা ইতিহাসের মলিন পৃষ্ঠায় এঁকে রেখেছে রক্তের জলছবি

মরণের যন্ত্রণারা রোজ এসে চুমু দেয়


ছেঁড়া নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যায় অবিশ্বাস

বিশ্বাস লুন্ঠিত হয় রোজ

ইতিহাসের দলিল গুলো ভেসে গেছে সময়ের নদীতে

নষ্ট পাড়ায় বিষাদ মেখে দহনেরা বেঁচে থাকার রেওয়াজ করে


রঙিন মানুষেরা শোনায় অধর্মের গান

ধর্ম ব্যাবসায়ীরা ধর্মের সাথে অফার করে বিদ্বেষ

আমরা মেতে উঠি

নষ্ট পাড়ায় নষ্ট প্রজাপতিরা আসে

নষ্ট ফুলে মেখে দেয় নষ্ট প্রেমের মুদ্রিত কলরব

মীনা সাহার একটি কবিতা

 আলোকিত অভিসার


ফুল জোছনায় আলোকিত দিগ-দিগন্ত চরাচর

ভালোবাসা পেলে হৃদয় রঞ্জিত মেঘ-মল্লার রাগে

মনের একান্তে মনোভূমি জুড়ে হৃদয়-পাপড়ি খোলে বরাবর

ভিজে ভিজে বর্ষা-বসন্ত চির-যৌবনা প্রকৃতি জাগে


মন-ময়ূরী উছলে নাচে হৃদয় দুয়ার খুলে

প্রকৃতি-প্রেমে মগ্ন তনুমন ঝুম ঝুম বৃষ্টি-নূপুরে

নদীও উতলা আপন বেগে ছুটছে দুলে দুলে

ফুলের মতই জোছনা ঢালে চঞ্চল হৃদয় জুড়ে


 সুরে সুরে ফুলে ফুলে এ হৃদয় মধু করে পান

ভ্রমর ছুটে যায় মৌ-পিয়াসে মধু আহরণে

হৃদয় ও ফুল মত্ত অভিসারে করে চলে মধু স্নান

স্বপ্ন ছুঁয়ে যায় আকাশের বুক মুগ্ধ সমীরণে


কুসুমিত হৃদয়ে হৃদয়ে গাঁথা হোক প্রেম-মালা

অস্থির ধরণী শান্ত হোক জুড়াক যত জ্বালা


জয়িতা চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতা

 দীর্ঘশ্বাস


তোমার আমার মাঝখানে দূরত্ব ততটুকুই যতটুকু ওপরের ঠোঁট থেকে নীচের ঠোঁট, 

রোদ্দুর আর ছায়ায় আমাদের প্রেম ভীষণ মাখোমাখো

চোখের আড়ালে স্বচ্ছন্দে আমাদের যাতায়াত

আকাশের চোখ চিরে নেমে আসে প্রেম

অনর্গল চিবুকে চুমুপাত, অজ্ঞাতবাসে

শুয়ে থাকে শরীর, শুয়ে থাকে আগুনমর্মরে

জীবিত দীর্ঘশ্বাস।। 

সুস্মেলী দত্তর একটি কবিতা

 রতি


কবিয়ানা ঢাকি শূন্য গভীর ক্ষতে

চাঁদ তারা ফুল জোনাকির মজলিশ

নিখাকি বিরহ বেনোৱাত নিশিডাকা

থইথই দেহ আমাকেও কিছু দিস


দিয়েছি ছুঁয়েছি অভিমুখ চোরাস্রোতে

দিগন্তছায়ে হাতমিথুনের নেশা

ফুট কাটা মন কিশোরীর চপলতা

ব্যাপক দহন মঘা আর অশ্লেষা


তারায় তারায় ধুত্তেরি আঁটকুড়ি

থালায় কাঁদছে আবছা সফেন ভাত

ব্যঞ্জন সখা শঙ্খিনী সমারোহে

তবুও দুপুর বিকেল সারাটা রাত|

গোবিন্দ মোদকের একটি কবিতা

 আগুন, কাঠ আর অন্ধকারের গল্প



সেটা ছিল একটা অন্য গল্প।

আগুন, কাঠ আর অন্ধকারের গল্প ---

যে গল্পে অন্ধকার ঘনালেই 

একটা অলৌকিক জলযান এসে

নোঙর করতো মাঝদরিয়ায়। 

কিছু আগুনখেকো পতঙ্গ

তুরীয়ানন্দে সাঁতার দিতো লক্ষ্য স্থির রেখে। 

ওদিকে শুকনো কাঠ আর দাউ দাউ আগুনের 

সে কী ভেল্কি ! 

এ আঙুল দেখায়, তো, ও চোখ ঠারে !

তারপর এমনি করে নীলচে হয়ে আসে রাত্রির শরীর, 

থিতিয়ে পড়ে অন্ধকার, 

শিরা জুড়ে তখন তৃপ্তির উন্মাদনা ... 

একটা স্বস্তির ঘুম। 

তবে এটা কোনও ঘুমের গল্প নয় ;

এটা একটা কাঠের গল্প, কিছুটা আগুনের গল্প,

আর বেশিটা অন্ধকারের .....