গনিত বিস্ময় - পুষ্প সাঁতরা || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article writing

 গনিত বিস্ময়

     পুষ্প সাঁতরা


গনিতে অসাধারণ প্রত্যুতপন্নমতিত্ব বিস্ময় ব্যক্তিত্ব শ্রীনিবাস রামানুজন! বিশ্বের অন্যতম সেরা গনিতজ্ঞ। স্বল্প আয়ুস্কালের মধ্যে তিনি এমন শীর্ষে পৌঁছেছিলেন যে, তাঁর সান্নিধ্যে বা গনিত ভাবনার সংস্পর্শে যাঁরাই এসেছেন প্রত্যেকেই রামানুজের প্রতিভার উজ্জ্বলতায় সম্মোহিত হয়েছেন। দুশত এগার র ছাব্বিশে ডিসেম্বর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং ঘোষনা করেন শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্মদিনটি 'জাতীয় গনিত দিবস '- হিসাবে পালিত হবে।

রামানুজনের পিতৃনিবাস তামিলনাড়ুর কুম্ভকোনম শহরে। বাবা কুপুস্বামী শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার ছিলেন এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, তাঁর ভক্তিমতী মা কোমলতাম্বল ছিলেন সু কন্ঠের অধিকারী ইরোড শহরের মামা বাড়িতে-- আঠারশ সাতাশি র বাইশে ডিসেম্বর রামানুজনের জন্ম। মা ছিলেন স্থানীয় জাগ্রত দেবী নামগিরির একান্ত ভক্ত। বাল্যে রামানুজনের খেলাধুলায় তেমন আগ্রহ ছিল না, তবে স্মৃতি শক্তি ছিল অসাধারণ! মায়ের কাছ থেকে আত্মস্থ করেছিলেন পুরাণের কথা, ভক্তি গীতি, রামায়ণ মহাভারত ও বিভিন্ন ধর্মের কাহিনি শুনতেও বড় ভালবাসতেন।

প্রাথমিকে শেষ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে রামানুজন ভর্তি হয় কুম্ভকোনম টাউন হাইস্কুলে, সেখানেই গনিতে তাঁর অসাধারণ মেধা ও প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় নবম শ্রেনীতে পড়ার সময় এসএল লোনির লেখা একটি ত্রিকোনমিতির বই পান। সামান্য সময়ের মধ্যে তত্ত্ব অনুধাবন সহ বইটিতে প্রদত্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেন সহজেই। ঊনিশ শ তিন সালে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় গণিতে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রামানুজন লাভ করেন-'রঙ্গনাথ রাও 'পুরষ্কার। ওই বছরই মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং বৃত্তি পান। পরের বছর কুম্ভকোনম সরকারী কলেজে এফ এ ভর্তি হন, তার আগেই তাঁর হাতে আসে জি এস কারের লেখা, 'এ সিনোপসিস অফ এলিমেন্টরি রেজাল্টস ইন পিওর ম্যাথমেটিক্স 'বই টি। সেই বইয়ে ছিল গণিতের বিভিন্ন শাখার সাড়ে চারহাজার সূত্র ও উপপাদ্য। রামানুজন সেগুলি প্রমাণ করার পর আবিষ্কার করতে থাকেন একের পর এক সূত্র ও উপপাদ্য। যা তিনি একটি খাতায় লিখে রাখেন, পরে সেটি রামানুজনের 'নোটবুক 'নামে খ্যাত হয়। কলেজে অঙ্কের প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও ইংরাজিতে কম নম্বর পাওয়ায় এফ এ কোর্সে দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে পারেন নি, মনের দুঃখে কলেজ ছেড়ে দেন।

উনিশ ছ সালে মাদ্রাজের পাপাইয়াচ্চা কলেজে ফের এফ এ ভর্তি হন, সেখানেও একশ তে একশ পান, কিন্ত অন্য বিষয়ে পাশ নাম্বার ও তুলতে পারেন নি, ফলে এফ এ তকমা পাওয়া হয়নি, তবু তাঁর গনিত সাধনা থামেনি বরং বাড়তি গতি পায়। নতূন নতূন আবিষ্কারে স্ফীত হতে থাকে তাঁর নোটবুক।

রামানুজন ঊনিশ শ ন সালে বিয়ে করেন জানকী দেবীকে, এর মধ্যেই রামানুজনের গনিতের সমস্যা ও সমাধান ইন্ডিয়ান ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হলে তিনি উচ্চ প্রশংসিত হন। তাঁর প্রতিভার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পারিবারিক প্রয়োজনে তাঁকে মাদ্রাজ পোর্টট্রাষ্ট অফিসে কেরানির চাকরি নিতে হয়। তবে গবেষণা অব্যাহত ছিল। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সেও আয়ারের পরামর্শে রামানুজন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক জি এইচ হার্ডি কে চিঠি লেখেন এবং সেই সঙ্গে পাঠান নিজের আবিষ্কৃত কিছু সূত্র ও উপপাদ্য, সেসব দেখে অধ্যাপক হার্ডি অভিভূত হন, তাঁর চেষ্টায় রামানুজন কেমব্রিজে যান।

সেখান তিনি আরও সৃজন শীল হয়ে ওঠেন। অধ্যাপক হার্ডির সহায়তায় রামানুজন লেখেন একের পর এক গবেষণার পত্র। ষোল সালে কেমব্রিজ থেকে বি এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সতর সালে লন্ডন ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির পদ লাভ করেন আঠার সালে নির্বাচিত হন কেমব্রিজ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য এবং প্রথম ভারতীয় হিসাবে ফেলো অফ ট্রিনিটি হন রামানুজন।

মানুষ হিসাবেও মহান, তাঁর ব্যক্তিত্ব আচরণ আন্তরিকতা সকলকেই মুগ্ধ করত, তিনি নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন, ঈশ্বরের উপর অগাধ বিশ্বাস 'যে সমীকরন ঈশ্বরের চিন্তাকে প্রকাশ করে না, তা আমার কাছে অর্থ হীন---- বলেছিলেন রামানুজন।

তিনি আরও বলতেন--'নামাক্কলের জাগ্রত দেবী স্বপ্নে তাঁকে সূত্র বলেদিতেন ' রামানুজনের কাজ ছড়িয়ে আছে তাঁর সাঁইত্রিশটি গবেষনামূলক প্রবন্ধ তিন হাজার দুশত চুয়ান্ন টি গানিতিক ফলে সমৃদ্ধ 'নোটবুক '।পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির জার্নালে পাঠানো আঠান্নটি প্রশ্নে এবং গবেষক হিসাবে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমা দেওয়া তিনটি গবেষনা পত্রে।

রামানুজনের কাজ শুধু গনিত কে সমৃদ্ধ করেনি, গনিত কে ছাড়িয়ে বিজ্ঞানের অন্য শাখাতেও প্রয়োগ করাহচ্ছে। ঊনিশ শ সতের সালে লন্ডনে হঠাৎই অসুস্থ হয়েপড়েন, চিকিৎসা চললেও দ্রুত সেরে উঠবেন এই আশায় ভারতে আনা হয় রামানুজনকে, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ঊনিশ শ কুড়ি সালের ছাব্বিশে এপ্রিল এই মহান গনিতজ্ঞের মহাপ্রয়ান ঘটে মাদ্রাজের চেতপাটে। তখন তাঁর বয়স মাত্র তেত্রিশ। এই প্রজন্মেও যাঁরা গনিত সাধনায় মগ্ন শ্রীনিবাস রামানুজন তাঁদেরকেও প্রেরনা জুগিয়ে চলেছেন!


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024