মাহেশ্বরী - কবিতা ধর || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story
মাহেশ্বরী
কবিতা ধর
মোহন বাবু সকাল বেলায় বাজারে বেরিয়েছেন । সকাল বেলায় বাজারের এদিকটায় বেশ ভিড় থাকে। হঠাৎ দেখেন সবাই সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন সামনে একটা কালো বিড়াল আহত হয়ে রাস্তায় শুয়ে আছে।মোহন বাবু মনে মনে হাসলাম সারাদিন মানুষের কত ব্যস্ততা অথচ একটা বিড়াল রাস্তায় আছে বলে তার ভয়ে মানুষ একটুও নড়ছে না। বাড়ি ফিরে এসে সারাদিন ধরে সারাবাড়িতে আলপনা দিয়ে চলেছে অপটু হাতে। মাটির প্রদীপ গুলো জ্বালাতে গিয়ে মোহন বাবুর মনে পড়ে এই আগুনেই বলি হতে চলেছিল তার একমাত্র অন্তঃসত্বা মেয়ে শ্বশুরবাড়ির ষড়যন্ত্রে । আজ প্রদীপের আলোয় বাড়িটা খুব স্নিগ্ধ লাগছে।গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বরণ ডালার থালাটা হাতে নিয়ে ছুটে যায়।গাড়ি থেকে নেমে তার সহধর্মিনী আর তার একমাত্র মেয়ে তুহিনা।মেয়ের কোলে তোয়ালে জড়নো পাঁচ দিনের ছোট্ট এক রত্তি।তার আদরের নাতনি।
সদর দরজায় নাতনিকে বরণ করে মোহন বাবু। উঠোনে পা দিয়ে তুহিনা আর তার মা অবাক হয়ে যায়। তুহিনা বলে " বাবা আজ তো লক্ষ্মী পুজো নয়।আজ যে কালী পুজো। তুমি সারা উঠোনে লক্ষ্মীর চরণ একেছ কেনো?" মোহন বাবু বলে আজ যে মহালক্ষ্মীর ও পূজো রে মা।আমার নাতনি তো আমার মহালক্ষ্মী। তুহিনা বলে কিন্তু ও যে মা কালির রূপ নিয়ে জন্মেছে।আর বাবা তুমি তো আমার মেয়েকে আশীর্বাদ করলে না। মোহন বাবু তার একমাত্র নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন "কালো বিড়ালনী হও" এই কথা শুনে তুহিনার র চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তে থাকে।
মোহন বাবু তার অভিমানী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে “বিড়াল কালো হোক বা সাদা দুজনেই তো মা ষষ্ঠীর সন্তান । তবে কালো বিড়াল এর কথা শুনে তোর মন খারাপ হচ্ছে তাই না রে। সে শুভ না অশুভ টা তো মানুষের তৈরি।তবে একটা জিনিষ খেয়াল করেছিস কখনো,কালো বিড়াল যখন সামনে দাঁড়ায় তখন সবাই তাকে রাস্তা ছেড়ে দেয়।আমার নাতনিকেও সেইরকম সাহসিনী বানাব। সে যখন দাঁড়াবে সবাই তাকে রাস্তা ছেড়ে দেবে। তোকেও যদি এমন সাহসিনী বানাতে পারতাম তাহলে তোর শ্বশুরবাড়ির লোক তোকে পুড়িয়ে মাড়ার সাহস পেত না। তুই নিজেই তো তোর মেয়ের রূপ নিয়ে চিন্তিত। তাই আমি ওকে এমন ভাবে তৈরি করবো যাতে ওকে সবাই ভক্তিতে না হলেও ভয়ে ভজবে ।ওর অন্তর হবে মহালক্ষীর র মত স্নিগ্ধ।আর বাহিরে থাকবে মহাকালীর মত তেজ ।তাই আজ কালী পুজোর দিনে কালীমায়ের নামে ওর নাম রাখলাম। ওর নাম হল মাহেশ্বরী।
Comments