দূরদৃষ্টি - রানা জামান || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story
দূরদৃষ্টি
রানা জামান
প্রিয় নেতার আশীর্বাদ নেবার জন্য ছেলে নবীনসহ হরিহরবাবু স্থানীয় সাংসদ রবিশঙ্করের শহরের বাড়িতে এলেন। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। দারোয়ান আটকে দিলো ওদের। কিন্তু হরিহরবাবু জানেন দারোয়ান ওকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না-সাংসদ ওর নাম শোনার সাথে সাথে ভেতরে ডেকে নেবেন। কারণ, সাংসদ জানেন ওর হাতে কত ক্ষমতা! ওর এই ক্ষমতা হলো ভোট। ওর হাতে প্রচুর ভোট। হরিহরবাবুর এলাকায় হাজার ভোটার আছে, যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। এই সকল ভোটার হরিহরবাবুকে দেবতার মতো মানে এবং ওর কথামত ভোটও প্রদান করে থাকে। ঘটনাচক্রে নবীনের জন্মও হয়েছে রবিশঙ্করের গাড়িতে। ঐদিন এম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব হওয়ায় রবিশঙ্কর তাঁর গাড়ি দিয়ে হরিহরের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন; কিন্তু গাড়িতেই নবীনের জন্ম হয়ে যায়।
হরিহরবাবু বললেন, স্যার আমাদের চেনেন। আমরা হরিগাতি গ্রাম থেকে এসেছি। আমার নাম হরিহর।
হরিহর দারোয়ানের হাতে পঞ্চাশ টাকা গুঁজে দিলে দারোয়ান ওদের ঢুকতে দিলো ভেতরে।
নবীনসহ হরিহর ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে স্থানীয় এক নেতা ভেতরে ঢুকে রগচটা স্বরে বললো, উপজেলা ইলেকশানে এবার আমাকে নমিনেশন না দিলে খবর আছে আপনার নেতা!
সাংসদ রবিশঙ্কর রগচটায় ওর চেয়ে এক কাঠি উপরে।
রবিশঙ্কর নেতার মাথা ধরে টি-টেবিলে আঘাত করে বললেন, আমাকে ভয় দেখাস তুই! কী করবি তুই আমার?
নেতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। মাথায় ঢুকে আছে টি-টেবিলের কাঁচের একটা ভাঙ্গা টুকরো। হতভম্ব রবিশঙ্কর নেতার হাতের নাড়ি টিপে বুঝতে পারলেন মারা গেছে।
আতঙ্কিত চোখে ওদের দিকে তাকালে হরিহর বললো, আপনি ওকে মেরে ফেলেছেন স্যার!
রবিশঙ্কর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি আমাকে খুব পছন্দ করো, তাই না হরিহর?
জ্বি স্যার।
খুনের দায়ে আমি এখন জেলে গেলে এলাকার খুব ক্ষতি হবে। তুমি এই খুনের দায় নিয়ে নাও। আমি তোমার পরিবারের ভার নিলাম এবং ছেলেটাকে ডাক্তার বানানোর দায়িত্বও নিলাম।
নবীন এক কদম এগিয়ে এসে বললো, বাবা না স্যার, আমি নেবো। কিশোর অপরাধী হিসেবে আমার কয়েক বছর সাজা হবে। তবে শর্ত আছে একটা।
কী শর্ত?
উপজেলা ইলেকশানে বাবাকে নমিনেশন দিতে হবে। বাইরে জনতার সামনে গিয়ে এখনই ঘোষণা দিয়ে তারপর পুলিশে খবর দিন!
Comments