Sunday, January 2, 2022

কবিতা || সন্ধ্যা বেলায় || ফরমান সেখ

 সন্ধ্যা বেলায়

         


সন্ধে বেলায় রবি যখন

    দেয় বিদায়ের হাঁসি,

মাঠের থেকে লাঙ্গল নিয়ে

     বাড়ি ফিরে চাষী।


শিশির তখন পড়তে থাকে

     দূর্বা ঘাসের ডালে,

মাছেরা সব লুকোয় গিয়ে

    গভীর নদীর খালে।


চারিদিকে বাড়তে থাকে

    মশাদের আমদানি,

মন্ত্র পড়ে সন্ধে জ্বালায়

    হিন্দু ঘরের রানী।


নৌকা মাঝি নৌকা খানি

     ফিরায় নদীর কূলে,

গাছের ডালে বাদুড় গুলো

    উল্টো করে ঝুলে।


জোনাকিরা জোনাক জ্বালায়

    সন্ধ্যা হওয়ার সাথে,

মাঠের শিয়াল সন্ধে হতেই

      হট্টগোলে মাতে


মধুর সুরে বাজতে থাকে

    গো-রাখালের বাঁশি,

গগন কোলে মিষ্টি হেসে

      উঁকি মারে শশী।

কবিতা || চলো ফিরে যাই || নমিতা বোস

 চলো ফিরে যাই


     


ভালবাসলে সব রক্তের গ্রুপ-ও।

না এ-প্লাস না বি-মায়নস।

ভালবাসার মুন্সিয়ানায় খলম কুচি ও শব্দ বন্ধ ।

এ গঙ্গা বহতা ,সব স্বরবর্ণ।


জল ঢালা দুপুর ,নোনতা

আমেজ,সাবেকি সারেঙ্গী,

চলো ফিরে যাই।


শুকনো ইতিহাস,বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস,মনের দরজা হাট,

চলো ফিরে যাই ।


জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি,নির্দায় ভিসুভিয়াস,উত্তপ্ত বন্দেয়ানা ,

চলো ফিরে যাই ।


কলমের কৌলিন্যে নির্ভীক নিবন্ধ ,সোমরসে উপন্যাস ,

চলো ফিরে যাই ।


অজন্মা নয় গর্ভকোন,ভাঙাচোরা চৌকাঠ,উন্মাদ বসন্ত,

চলো ফিরে যাই।


আত্মঘাতি সাদা পাতা,নিয়মের কালরাত্রি,নেভানো বাতিঘরে শুধু ফিরে ফিরে চাই,

চলো ফিরে যাই,চলো ফিরে যাই,ফিরে যেতেই যে চাই ।

কবিতা || এভাবেই তৈরি হয় || সামসুজ জামান

 এভাবেই তৈরি হয় 

               


শুধুই ফুরফুরে দখিনা বাতাস শুধুই শিমুল গাছে সমীরণ

এতে জীবনের উষ্ণ পরশ কই? 

মাঝে মাঝে কলাগাছে ঝড় না হলে 

জীবন কেমন যেন আনোনা পান্তা ভাত।

 ভালোবাসা কথাটা তখনই দামি হয় যখন তার মুখের ভিতর লবণাক্ত স্বাদ জমে ওঠে।

 রোমাঞ্চকর পর্বত অভিযানে কত শত প্রাণ চলে যায় 

তবু ও তো আজও লোক চলে।

অমরনাথে মৃত্যু হল না তাই কখনো হয়?

 ওরে পাগল মৃত্যু না থাকলে জীবন কখন উপভোগ্য হয়?

ছায়া ছায়া যেসব স্মৃতি আপাত ভালো মানুষ হয়ে উকিঝুকি মারছে

জীবনের চৌকাঠে বারান্দায় তাদের একটু সুড়সুড়ি দাও 

দেখবে ঠোট কাঁপতে কাঁপতে একসময় হুহু করে অশ্রু ঝরছে।

 হৃদয় নামের রুমালটা ভিজে যাবে

এভাবেই ভিজে ভিজে তৈরি হয় ভালোবাসা 

এভাবেই রামী চন্ডীদাস শিরি-ফরহাদ লাইলী-মজনু 

এভাবেই তৈরি হয় ভালবাসার ইতিকথা।

কবিতা || বছরশেষ || প্রদীপ কুমার লাহিড়ী

 বছরশেষ




বছর শেষের প্রভাত বেলা  
আসে সে নিয়ে মরণ খেলা 
কোবিদ ভাইয়ের বিদায় বেলা 
দিয়ে গেলো অম্রিকন এর ঠেলা 
জানিনা নতুন বছর কেমন যাবে
 এ দুই দুশমন মোদেরসাথে রবে  
 ভয় করিনে লড়তে মোরা সবাই রাজি 
 মারি মোদের সাথী কেয়া করেগা কাজী 
 মরণের সীমানা ছেড়ে যাবো সবে মোরা
যাসনে ভাই না মোরে একটু তবে দারা

কবিতা || নব বর্ষে || তাপস কুমার বেরা

 নব বর্ষে 



শুভ নব বর্ষে 

অশুভ শক্তির 

হোক পরাজয় |

বিবেকহীন মানুষদের 

শুভ বোধ 

জেগে উঠুক |

প্রবঞ্চকরা 

পরিহার করুক 

তঞ্চকতা |

দুঃখী মানুষের 

দুঃখ দূর হোক |

দরিদ্র মানুষের 

দারিদ্র দূর হোক |

শান্তি আসুক |

সুখী হোক সবাই |

অশান্তির 

কালো মেঘ 

কেটে যাক 

চির তরে |

শুভ নব বর্ষের 

হোক জয় |

কবিতা || ভালো থেকো তুমি || সুব্রত মিত্র

 ভালো থেকো তুমি




তারাগুলো জ্বলে আছে সব ,

আসলে সবগুলোতো তারা নয়

আমার মাঝে আমার সত্যতা

কতটা রয়েছে দৃঢ় তাও যে বলার নয় ,

কত স্মৃতি বয়ে গেল মালা হলোনা

চলে গেল প্রাণটা আপন হলোনা ,

দেহটাও হয়ে ওঠে মূর্তি যখন

মূর্তি বিনাশের আগুন জ্বলেছে

শত শতাব্দীর ইতিহাস ডিঙ্গিয়ে

শ্বসানের আগুনে পুড়ে যায় অভিমান ,পুড়ে যায় দণ্ড ,

ডুবে যায় সুখ পারিজাতের নম্র পত্রের ভাষা

নিজ সুখের সূর্যরশ্মি দিয়ে

তোমার মায়ার পাথর পুড়িয়ে দিয়েছি আমি ।

এই অঙ্গের সাথে পৃথিবীর মিল বড় অমিল

কটুকথা ,অপমান ,অবহেলা আমায় কিনেছিল দুবেলা

ক্ষমা করো ,ক্ষমা করো ,ক্ষমা করো নিয়তি মোর।

কোন পাপী মহাজনের দলিলের দাখিল নেব ভেবেছিলাম

মৃত্যুর পরেও মৃত্যু আমাকে মেরে ফেলে বারবার । 

কবিতা || নীরবতা নেমে আসে || ক্ষুদিরাম নস্কর

 নীরবতা নেমে আসে




ভাবনার ভেতর খুঁজি জীবন মহৎ,

সেজেছি সন্ন্যাসী শুধু অন্তরে আসক্ত।

চেয়েছি অনেক কিছু---

পেয়েছি কি কম ?

জ্ঞানহীন,ভক্তি হীন,মুক্তি হীন মনে,

কামনা বাসনা আশায় হৃদয় পাথর।

আতর রাত্রির ও নেমে আসে ভোর,

নিষ্ঠুর নীরবতা----

ধীরে ধীরে নেমে আসে ঘুমের ভিতর।

কবিতা || দিনলিপি || জয়িতা চট্টোপাধ্যায়

 দিনলিপি




আমার সারা উঠোন জুড়ে আজ বিষাদের ছায়া, সেই বিষয়ে ছায়া ডেকে আনতে মৃত্যু, আমার চারপাশে মৃত্যু গন্ধ, প্রতিটি শব্দে বিষাদের স্পর্শ, প্রতিটি অক্ষর হিম নীল হয়ে আসছে, ঘুম ভাঙনের বুকের ভেতর দুরু দুরু ভয়ের স্রোত, কতকাল দিনের আলোতে আর সকাল হয় না, সকালের পসরা সাজিয়ে আছে মৃত্যুর গল্প, গন্ধ, স্পর্শ, আমার দিনলিপি নীল নীল অক্ষরে লেখা, লিখে চলেছি হিম অক্ষরদের।

কবিতা || তবু লিখে যেতে হবে || অমল কুমার ব্যানার্জী

 তবু লিখে যেতে হবে




আমার লেখার মাঝে কি যে থাকে জানি না যে আমি,

তবুও মনে হয় যেন লিখে যেতে হবে,তাই লিখি।

তোমাদের দরবারে হাবিজাবি লেখা গুলো এসে

হয় জড়,

জানি আমি তোমাদের বিরক্ত করে অনর্গল কলমের কালি।

কেউ হাসে কেউ দেয় গালি, ভাবি মনে মনে,

লেখা তুই থেমে যারে আজ,

তবু লেখা থামেনি কখনও, লিখে চলি হাবিজাবি যতো।


আমার এই লেখা, একদিন থেমে যাবে মৃত্যুর

ঘোর অন্ধকারে,

হয়তো সেদিন আমার লেখার মাঝে, আমি কে?

খুঁজে পাবে।

যাকে তুমি খুঁজেছিলে জীবনের প্রতি ক্ষনে ক্ষনে।

সন্ধ্যা অন্ধকারে প্রদীপের শিখা টিম টিম জ্বলে,

দৃষ্টির মাঝে উদ্ভাসিত শব্দমালা ঝাপসা মনে হয়।

কি লিখেছি আমি, অব্যাক্ত থেকে যাবে মনের গভীরে।


আমি আজ নিশ্চিত মনে, বসে আছি নক্ষত্রলোকে,

হাবিজাবি লেখা গুলো আজও বুঝি সমাজের অন্ধ গলি মাঝে মৌচাক বাঁধে।

আমার ফরিয়াদ তোমাদের কাছে লিখে যাব আমি,

পাগলের প্রলাপ বলে দূরে সরিয়ে নিও আপনারে।


অশান্ত অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে, বিলীন আমি যে আজ আমার লেখাতে।

হয়তো সেদিন, কোন এক গৃহবধূ আনমনে

পড়িতেছে কার কাব্য খানি?

কৌতূহলী দৃষ্টি তোর আস্ফালন করে,

কার কাব্য পড়িতেছ ঘোর অন্ধকারে?


লিখে যাব আমি নবজাতকের কাছে অঙ্গীকার

আজ,

সমাজের অন্যায় অবিচার, আমার লেখার মাঝে পাবে তা প্রকাশ।

তোমরা তা পড়িবেনা জানি, তবু জেনো, লিখে যাব

আমি,

আমার কবিতা মাঝে আজও বেঁচে, বিদ্রোহী

যবনিকা আমি।

কবিতা || নববর্ষের সাহেব || শ্যামল চক্রবর্ত্তী

 নববর্ষের সাহেব


 


রাতে আমি সাহেব হবো,

তোতলামি আমি ইংলিশ।

বাঙালি বলে করিস না খাটো,

বর্ণ গায়ের কালো ।

 পেয়ালা আমি চলকাই,

তাকে কত রঙিন জল।

 বারোটয় সূচনা নববর্ষ,

আতশবাজিতে হইচই।

হোকনা দূষণ বাতাসের,

ক্রন্দন তাই কতো উদ্ভিদের।

অনাড়ম্বর করনা পালন,

আমরা বাঁচলে , বাঁচাবি জীবন।

কবিতা || দুমদাম, চুপচাপ || সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

 দুমদাম, চুপচাপ




ফুল ফুটছে দুমদাম। 

বাজি ফোটে চুপচাপ

চাঁদের আলো শব্দ করে

সমুদ্র ভাসে সাগর জলে। 


মিথ্যা গড়া পাথর দিয়ে বাঁধ হচ্ছে

বিধায়ক হচ্ছে প্রবল বলশালী

রাশিয়ার বলশেভিক পার্টির মতো

আম পাবলিক মরছে গুমরে গুমরে

পৃথিবীতে মানবিকতা মরছে ধুঁকে ধুঁকে। 


বাংলার হচ্ছে নব রূপায়ন

কলকাতা ভাসছে চোখের জলে। 

নিকাশি দূর অস্ত। 

জল জমছে ঘরের মধ্যে

কে পারবে সূর্যের মুখ থেকে

ছিনিয়ে আনতে 

একটুকরো আশার আলো!

কবিতা || উন্নয়ন || অভিজিৎ দত্ত

 উন্নয়ন 

      




ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার 

একমাত্র ছিল লক্ষ্য দেশের 

উন্নয়নই যেন হয় মুখ্য। 

হায়রে দেশের অবস্থা 

ভোট সর্বস্ব রাজনীতি 

শেষ করলো দেশটা।

ভোট যখনই আসে

মনে পড়ে উন্নয়নের কথা

ভোট চলে গেলে আবার 

সেই পূর্বেকার অবস্থা। 

জাতপাত, ধর্মের তাস খেলে

যে দেশে হয় ভোটের লড়ায় 

উন্নয়ন সেখানে থমকে দাঁড়ায়। 

কোথাও উন্নতি,কোথাও অবনতি 

এইভাবেই হয় জনগণের ক্ষতি।

উন্নয়নের জায়গায় বেশীরভাগই 

এখন আখের গোছাতে ব্যস্ত 

কে,কতো তাড়াতাড়ি বড়োলোক হবো, 

সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত। 

অর্থ আর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে

যে কোনো কাজ হয় সময়ে

তাহলে দেশের জনগণ 

কতদিন সইবে এই অনুন্নয়ন?

কবিতা || জীবন আছে || নবকুমার

 জীবন আছে 




নদীর এক কূল ভাঙে 

দাঁড়িয়ে আছি ভাঙনের তীরে ।


ওপারকে জানাবো প্রার্থনা -

-একটু আশ্রয় দেবে না ?

'হ্যাঁ'বললেও ভাল

'না' বললেও নেই ক্ষতি

শুধু অপেক্ষা একটি যতি ।


হয়তো হড়পা বানে পাড় ভাঙবে-

ভেসে যাবো জলের তোড়ে-

ভাসতে ভাসতে ঠেকবো কোন চড়ায় ।


তুমি যদি দেখতে পাও

বলবে--এখনো জীবন আছে

কিন্তু আমি তো মরা-ই ।