লেখক অরবিন্দ সরকার -এর একটি রম্য রচনা

        রানীর দেশে

           


ইংরেজদের রানীর মত এক দেশের ,এক রাজ্যের রানী আছে। এখানে রানী সর্বময় কর্ত্রী।লণ্ডনের মত এখানেও রাস্তা জুড়ে লণ্ঠন জ্বলে। ওখানে টেমস্ নদী আর এখানে পর্বতের নদী। রানীমা ইচ্ছে বা মনে করলেই এখানকার আবহাওয়া লণ্ডনের মত হয়ে যাবে। তাঁর ইচ্ছা স্বর্গরাজ্য দখল।

মন্ত্রী পারিষদ জো হুকুম আজ্ঞাবহ রাজকর্মচারী।সব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তার প্রেরণার কথা উল্লেখ করেন।না করলেই তার ইস্তফা দফারফা মন্ত্রীত্বে। রাজ্যময় তার ছবিশ্রী।ছবি যেন ভালো হয় দেখতে নইলে ঐ দপ্তরের আধিকারীকদের দূরে বদলি। সংসারের মায়া ত্যাগ করে সুদূরে তার প্রাণান্তকর অবস্থা।

সরকারী পায়খানা তৈরীতে রানীমার প্রেরনা।ফিতে কেটে পায়খানার মধ্যে মন্ত্রীর বক্তব্য রানীর প্রেরনায় পায়খানা করলাম।

গণবিবাহ অনুষ্ঠান তাঁর প্রেরনায়। সিঁদুর দান,বাসরসজ্জা এগুলোও। সন্তানের দায় দায়িত্ব তাঁর প্রেরনায়।

প্রেমে উৎসাহিত করা তাঁর প্রেরনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় মদের দাম কমানো তারই প্রেরনা। কলকারখানা ধ্বংস ও বন্ধে তার প্রেরনা।

এরোপ্লেনে প্ল্যান পরিকল্পনা , অথবা পর্বতের মাথায় শৈলনিবাসে।

দুমদাম আদর সোহাগ যাকে তাকে! রন্ধন শিল্পে পারদর্শিনী। মসজিদে নামাজ, মন্দিরে পূজো,গীর্জায় বড়দিন ছটপূজোয় দণ্ডিকাটা পালনে জয়গান। ভুলভাল মন্ত্রে পূজো, নাটুকেপনার মধ্য দিয়ে বোরখা পড়ে আচার বিধি অনুকরন।

মেলা খেলা পূজোয় মোচ্ছবে ভর্তুকি, বামের দেনা ডানে বহে কতো তার কারচুপি।

পড়াশোনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি।পরে নির্দ্বিধায় ডক্টরেট ডিগ্রি ত্যাগ, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য। শিলান্যাস দেখে মনে হয় যেন শিলাবৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র শিবলিঙ্গের মতো বসানো।

বহু আত্মত্যাগ করে আজ তিনি চির কুমারী রানী।

রাজা বাদশাহের প্রচুর রানী থাকে।আর রানী হলে তো রাজা থাকবেই! রাজা আছে কি নাই সেটা একমাত্র ভজাই জানে। তবে সন্তানের ব্যবস্থা হয়ে গেছে তার প্রেরনায়।তার আজ্ঞাবহ পুলিশ প্রশাসন।আইন তার তালুর মধ্যে,তাই আইন নিজেই তৈরি করেন।পরের আইন থোরাই কেয়ার।খোদা বা ঈশ্বর পর্যন্ত তাকে ভয়ে ডরাই।

খেলা হবে-- এই খেলতে গিয়েই মিছেমিছি পায়ে লাগা, পরক্ষণেই পা ভেঙে চুরমার।প্লাস্টার নিয়েই গোটা রাজ্যে খেলা খেললেন। যেমন রেফারি বললেন গো-- ল! অমনি সঙ্গে সঙ্গে পা জোড়া লেগে গেলো। কিছু ঠেলাগাড়ির লোকের কর্মসংস্থান শিকেয় উঠলো।

বিধবাদের ভাতা, কুমার কুমারীদের প্রেমভাতা,সধবাদের হাতখরচ ভাতা। বেকারদের কাজ ভুলিয়ে মদভাতা।অর্থবল থাকলে তবেই চাকুরীর সুযোগ , টাকার পঁচাত্তর পঁচিশ ভাগ কাটমানিভাতা।

সবাই যদি চাকুরী করে তাহলে রাজ্যের উন্নয়নে মজুর কোথায় পাওয়া যাবে। গরীবদের সরকারি চাকুরী করতে নেই! বেসরকারি কাজও তো কাজ।রাখাল,মজুর,দাস দাসী তো লাগবে তাই এই ব্যবস্থা।আর মন্ত্রীরা চিরদিন থাকবে রানীর দলের দলদাস। 

ঠিক কিনা? -- ঠিক ঠিক ঠিক!

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024