প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন-এর একটি প্রবন্ধ

 আধুনিক বাংলা সাহিত্য কি accidental?




" কি ভাষা, কি সাহিত্য কোনোদিক দিয়ে আমরা সেই মন্দিরে একটি নূতন চুড়া তুলিতে পারি নাই, বরং তার ভিৎ জখম করিতেছি "! __ মোহিতলাল মজুমদারের এই আক্ষেপ কৌতূহল নয়, কাব্য সাহিত্যের রস যথেষ্ট না থাকার বেদনা।।

        আমার এই আলোচনায় essential বা সব থেকে প্রয়োজনীয় যেটা সেটা হোলো কাব্য সৃষ্টি বা সাহিত্য সৃষ্টির রহস্য সম্বন্ধে আমাদের মনে যে রসবোধ জাগে সেটার যথার্থ প্রয়োগ। এই রসসৃষ্টি স্বাধীন অন্তরের পরাজয় নয়, প্র লাপ ও দুঃস্বপ্ন নয়--- তড়িৎ গতি র প্রবৃত্তি ও আঁচলে বাঁধা ভাবনার আত্মপ্রসার। সেটা এখন বস্তু পীড়িত উদভ্রান্ত কলোচ্ছ্বাসের রূপ নিয়েছে। Emotion কে সুদৃঢ়ভাবে শব্দবদ্ধ করে সাহিত্যে খেয়াল খুশির জন্ম দিয়েছে। ফলে ভাষা ও বক্তব্য দুটোই অসংলগ্ন ও পরস্পর বিরোধী।

       সাহিত্য আঙিনায় এখন অনেকেই আল্পনা দিতে বসে সাহিত্যে র দর্পনে আত্মচরিত্ লেখায় ব্যতিব্যস্ত হওয়ায় নৈর্ব্যক্তিকতা ও জাতীয়তাবোধ জন্ম নিতে পারছে না। তাই বঙ্গ লক্ষ্মী ঘণ ঘণ মেঘের গর্জনে মমতাময়ী না হয়ে একধারে ক্রন্দনেই আকুল যেন।

    আমরা মাইকেল, বঙ্কিম,, শরৎ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, দ্বিজেন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কে পেয়েছি। তাঁরা নিজ নিজ ভঙ্গিতে বাংলা সাহিত্যকে সযত্নে অভিনবত্ব দিয়েছেন। সে যুগ এখন যেন দিবাস্বপ্নের মতো অলৌকিকতায় ভরা। এখন প্রচুর সাহিত্যিক মহাপ্রভুর ঢংয়ে নগর কীর্তনে বেরিয়েছেন সাহিত্য কে নিখুঁতত্বের দিতে সযত্নে সাহিত্য কলার মস্তক মুণ্ডন করছেন। অত্যন্ত দুঃখ জনক এ চিন্তা।

     অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যখন কামনা- লক্ষ্মী র সন্ধানে ব্যস্ত -- আমরা তখন তার নিরঞ্জনে কালক্ষেপ করছি। ভাবপ্রবণ বাঙালি র অস্তিত্বে মঞ্চ সাজানো হচ্ছে-- প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। কতিপয় বাঙালি ( পুরুষ/ নারী) অত্যন্ত সরল- তায় কাব্য লোকে আরোহন করতে চেয়ে সীমাহীন যথেচ্ছভাবে বিচরন করতে তৎপর। হিমালয়ের মত উই ঢিবি তৈরি হচ্ছে বটে কিন্তু বালির বাঁধের মতোই ক্ষণস্থায়ী। কেবলমাত্র পরিবর্তন ঘটে বটে কিন্তু মাতৃত্বের সূক্ষ্মতা য় সেটা নিতান্তই technically sound. হয় না; দুঃসাহসীকতা প্রকাশ পায়, কোমল মাতৃস্নেহ সুষমা মন্ডিত হয়না। একজন সমালোচকের কথায় বলি--- The pure poet is not a mystic, contemplation of the mystery is no end in itself for him. He is a doer, a maker, a revealer, a creator.

       চিন্তালেশহীন নিছক কয়েকটা শব্দের গুচ্ছতাই সাহিত্য নয়। যোগ সাধনা বা যোগাভ্যাসে যেমন শরীরের পুষ্টি বাড়ে তেমনি সকল ইন্দ্রিয়কে বশীভুত করে সাহিত্যে মন দিলে সাহিত্য পুষ্টি লাভ করবে।।

       সৌন্দর্য বোধ, শালীনতা ও যোগ সাধনা না করে সাহিত্যে র পুরোহিত হতে চাইলে সাহিত্য লক্ষ্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে-- এবং যেতে বাধ্য।

    যে মেঘে আকাশ কালো, সারা ঘরদোর অন্ধকার, সেই মেঘেই বৃষ্টির সম্ভাবনা-- সেই মেঘেই নব কিশলয় বার্তা বাহিত হয়- বাঙালি র ভাবনা ও সহ জিয়া সুর আজ কেন মমতাময়ী হতে পারছে না?

      কিসের ভয়ে আদর্শচ্যুত? সাহিত্য সৃষ্টিকে কি বাঙালি নিতান্তই accidental মনে করছেন?

      প্রীতি- প্রেম- কান্না- সৌহার্দ্য কি শুধুই নিছক নাটুকে কোলাহল! কল্পনার পাখায় সাধনা কেন ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বেড়াজালে আবদ্ধ!?

  বাঙালির লক্ষ্মী সরস্বতী কি তবে ভিনদেশী দের কাছে'" আয়া " র কাজে ব্যস্ত থাকবে?

   ভেবে দেখুন। অপেক্ষায় বিশুদ্ধতা অবশ্যই আসবে।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024