লেখিকা মৌসুমী চন্দ্র -এর একটি গদ্য

 সেই দিন



"আপনি একটু দেখা করবেন আমার সাথে, বিশেষ প্র‍য়োজন আছে", স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপক বাবুকে সেদিন স্কুল শেষে ডেকে পাঠালেন।

দীপক বাবু ভীষণ কৌতুহল নিয়ে প্রবেশ করলেন

প্রধানা শিক্ষিকার ঘরে। 

প্রধানা শিক্ষিকা, দীপক বাবুকে বসতে বললেন।

দীপক বাবু বললেন, " আমার মেয়ে কেমন পড়াশুনা করছে? আমি তো বেশীক্ষণ ওর কাছে থাকতে পারি না,ও নিজেই বেশীরভাগ পড়াশুনা করে। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন, " এ বারের বাংলা পরীক্ষায় ওদের রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল, তোমার কাছে মা দুর্গার রূপ। আপনার মেয়ে যা লিখেছে একটু পড়ে শোনাই, "। 

দীপক বাবু ভীষণ ঘামতে শুরু করলেন বললেন জোর হাতে, " আজ্ঞে ম্যাডাম আমার মেয়ের মা নেই বড় অভিমানী মেয়ে আমার, যদি কিছু অন্যায় করে.... "। কথার মাঝেই হেড ম্যাডাম থামিয়ে দিয়ে বললেন আগে শুনুন


আপনার মেয়ে এই খানে লিখেছে, আমি মন্ডপে যতবার দেবী দর্শন করি, মনে মনে দেবীর রূপ কল্পনা করি, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার বাবার মুখ। আমার বাবা দেবী দশভূজার মত 

সংসারের সব কাজ সামলায়, আমায় মাতৃস্নেহে বড় করছেন। আমার বাবার স্নেহ পেয়ে আমি ভবিষ্যৎ জীবনে সত্যিকারের মানুষ হতে চাই। আমার বাবার মত সমাজ সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে চাই।আমার বাবাই আমার দেবী দুর্গা রূপী দশভূজা। কোনদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি। 


"আপনার মেয়ের এই চিঠিখানি পড়ে আমার এতটাই ভাল লেগেছে, আমি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনার মেয়ে দেবরত্না, একটা হীরের টুকরো মেয়ে। ওর নতুন চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটা নাটক করতে চলেছি, বিশ্ব পুরুষ দিবসে। যদি আপনি আমাদের সাথে একটু থাকেন, খুব ভালো লাগবে,দেবরত্না বলছিল আপনি নাটক করেন, লেখেন,আপনি থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে"। দীপক বাবু বললেন, " এ তো পরম সৌভাগ্যের, অবশ্যই সাহায্য করব"। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন," আপনি আমাদের স্কুলের সাথে যুক্ত থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে "।

নমস্কার, করে কি সুখকর একটি হাসি দিয়ে দীপক বাবু প্রধান শিক্ষিকার ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন। 

 বাইরে দেবরত্না খুব কৌতুহল নিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, " বাবা, কি বললেন ম্যাডাম?"

দীপক বাবু একগাল প্রশান্তির হাসি হেসে,বললেন," তোর লেখা চিঠিটি পড়লেন, আর বললেন আমার সোনা মা..... টা না খুব.... খুব........."।

বাবা মেয়ের গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন, আমি কি মা দুরগা হতে পারি, উনি তো দেবী রে মা... "

দেবরত্না বলল তুমি যেভাবে দশহাতে দশদিক সামলাও, তুমিই তো আমার কাছে দশভুজা"।

দীপক বাবু বললেন, ' পাগলী মেয়ে আমার, চল

বলে মেয়ের হাতটি শক্ত করে ধরে হাঁটা লাগালেন বাড়ির পথে।


গোধূলির অস্তমিত আলো তখন এসে পড়েছে ওদের ওপর। যেন নতুন এক নতুন উদ্যমে জীবনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে বাবা আর মেয়ে। এবন্ধন যেন বড় মধুর বড় মিষ্টি..... 


তুমি যেন সামলে রাখ, ঝড় উঠলে পরে

তোমার দুটি হাতের থেকে আদর ঝরে পড়ে।

ওই দুটি হাত বাড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে রাখ

দৌড়ে ছুট্টে যাই তখনি, যখন আয় খুকু আয় ডাক।



Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024