প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি প্রবন্ধ
মৃত্যু আসলে দৃশ্যমান পটপরিবর্তন
মৃত্যু কোনো বেদনা নয়, পরিপূর্ণ বিশ্রাম। কর্মক্ষম মানুষ অদ্ভুতভাবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে অবধি নির্ঝঞ্ঝাট কর্মজীবন করতে ভালোবাসে। ইন্দ্রিয় সুখ, ভোগ- লালসা সবই হয় লীলায়িত মধুর।
শৈশব, কৌমার, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব,বার্দ্ধক্য এবং জরা সবই হোলো জীবনের ঐ ক্রমবিকাশের বিবর্তন। মৃত্যু তো আর একধাপ উন্নত পর্ব মাত্র।
ক্রমোন্নতির পথে এক শরীর অন্য শরীরের খোঁজে প্রস্তুতি নিতে গিয়েই আনে " মৃত্যু" নামক অহংকারহীন বিশ্রাম। তাই হয় দেহান্তর।
অর্থাৎ দেহের কর্মক্ষমতা কমলেই দেহধারী জীব অন্য দেহের সন্ধান করে। যেমন কোনও কিছু জড় বস্তুও যখন আর সক্রিয় বা সচল থাকে না আমরা তাকে বদল করি নির্দ্ধিধায়। এ- ও সেই রকমই দেহের বদল দেহ নিজেই করে। আমরা যার নাম দিয়েছি-- মৃত্যু।
তাই না! আমাদের ' শরীরের' বৃদ্ধি যখন ক্রমশঃ হতে থাকে আমরা মানুষরা কত আনন্দ পাই; বুদ্ধির বিকাশেও আমরা নত না হয়ে উন্নত বুঝি- তেমনি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইন্দ্রিয় সকল বিশ্রাম পেতেই দেহান্তরে যেতে চায়। এটাই তো আমাদের মৃত্যু ভয়।
কারণ, এই মুহূর্তে যাকে জীবন্ত দেখলাম, কথা বললাম, স্পর্শ সুখ অনুভব করলাম সেই উচ্ছ্বাস আর পাচ্ছিনা বা চিরতরে হারিয়ে গেল। অতএব, জাগতিক দুঃখ, মায়া আমাদেরকে নাস্তানাবুদ করতে শুরু করলো। কারোর মৃত্যু মানে শেষ বা সমাপ্তি নয়--+! নির্ঝঞ্ঝাট পরিবর্তন।
আমরা পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী। ভেবে দেখলে দেখা যাবে মূর্তি আরাধনা শেষে যখন তাকে( প্রতিমা) নিরঞ্জন করি তখন কি আমাদের সমপরিমাণ দুঃখ হয়!? বরং চিৎকার করে বলিনা-- " আবার হবে আসছে বছর"? কোনও দুঃখ না করেই প্রতি মাকে বিসর্জিত করি বরং। এ- ও তো সেই প্রতিমা। মৃত্যু তাকে মুক্তি দিল। অতএব সুষ্ঠুভাবে সদাচারে তাকে বর্জন করাই শ্রেয় নয় কি!?
" ধী' ব্যক্তি মানে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা হাসি কান্না বর্জন করে নতুন পর্বে প্রবেশের নতুন সংগা খোঁজেন। কোনও ঋতু যেমন চিরস্থায়ী নয়--- পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী তেমনই জীবনের ক্রমবিকাশে মৃত্য ও হোলো এখানে চরমতম বিবর্তন। কৌমার, যৌবন ফেলে প্রৌঢ়ত্ব ও বার্দ্ধক্য শেষে দেহান্তরে যাবার এক শ্রেষ্ঠতম পর্ব। তাই মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে, দুঃখ না করে যে বা যাঁরা বুঝতে চেষ্টা করেন তার বা তাঁদের দুঃখ ও কম।
অবশ্য অকালমৃত্যু বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুটা ঐ অসাবধানে হাত থেকে পড়ে কাঁচের কোনো শৌখিন বস্তুর ভেঙে যাবার মতই। যদিও কাঁচের বস্তুটি আবার সংগ্রহ করা যায় কিন্ত্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা অকালে ঝরে যাওয়া মানুষ কে আর ফিরে পাবনা ভেবে মায়া বদ্ধ মানুষ কেঁদে ভাসায়। । যার অন্তিম ফল-- শূন্য। প্রশ্ন সংশয়াতীত নয়-- তবুও--!! শোক পরিহর্তব্য।।
শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই শিশুটির জীবন পরিধি ক্রমশঃ ক্ষয় হতে থাকে। যেমন একটা প্রভাত শেষে একটা নতুন দিন ; কিন্তু কেউ কি ভাবি ঘড়ির কাঁটারয মতোই সে পলে পলে সেকেন্ডে সেকেন্ডে শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। আর একটা নতুন প্রভাত আসবে তাই।
-- জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে এই তত্ত্ব টাও খেয়াল করলে বোঝা যাবে মৃত্যু ভয়ংকর নয়। মৃত্যু জীবনের যবনিকায় শেষ পর্ব মাত্র।
মৃত্যু আসলে--
শরৎকালীন শিশিরের মতোই
দৃশ্যমান পটপরিবর্তন.......
Comments