Sunday, August 29, 2021

Photography by ARISHNA SARKAR



 

Photography by Amit Pal



 

Poet Soumendra Dutta Bhowmick's one poems

 CRITICAL


 

Alone and alone going down to the den

Dark is the destination above the level,

Dark is the mind-blowing apprehension,

Within me the alive person is sleeping

Not apprehending the actual happening.

Suddenly who who shouts for assistance

And lamenting over his or her own tears?


 

Alone and alone I always forget my way,

Try to surpass the valued feelings.

Then the demons dance and pounce around

Always I hear their remarkable sound.

They bring me to the diabolical hell

Where the heaven is surely not found.

প্রাবন্ধিক রাম প্রসাদ সরকার -এর একটি প্রবন্ধ

 



হারিয়ে গেছে

                          

                                              

ভ্রমণ প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে ছোটদের জন‌্যে অথবা ছোটদের নিয়ে অনেক দিন কিছু লিখিনি। তাই আজ লিখতে বসে বারবার মনে হচ্ছে আমাদের ছোটবেলা আর আমাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের ছেলেবেলার মধ‌্যে কতো তফাৎ। আমরা অধিকাংশ জন্মেছিলাম, বড় হয়ে উঠেছিলাম গাছগাছালি, নদী-নালা, সোনার ফসল ভরা মাঠ, ডাহুক ডাকা দুপুর, জোনাকি জ্বলা রাত— এই রকম একটা মায়াবী পরিবেশে। ঠাকুমার কোল ঘেঁষে ভূত-পেত্নী, দৈত‌্য-দানোর গল্প শুনেছিলাম। শীতের রাতে লেপ-কাঁথার তলায় শুয়ে ঠাকুমার কাছেই শুনেছিলাম দুয়োরানি-শুয়োরানির কথা। পরীক্ষাজ ঘোড়া, রাজকুমার-রাজকুমারীর গল্প। গল্প শুনতে শুনতে উত্তেজনায়, ভয়ে, শিহরণে ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম বুঝতে পারতাম না। সন্ধ‌্যেবেলায় তুলসী তলায় প্রদীপ দিতে গিয়ে মায়ের কণ্ঠে গুণগুনিয়ে ওঠা ভক্তিগীতি, শঙ্খধ্বনি, তারাভরা আকাশে সপ্তর্ষীমণ্ডলকে চিনে নেওয়া। কোনটি ধ্রুবতারা তার হদিশ করা, চাঁদের দিকে অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে চাঁদের বুড়ি সত‌্যিই চরকা কাটছে কিনা দেখা— সে এক মায়াময় জগৎ ছিল আমাদের। একটু বড় হতে খোলামাঠে খালি পায়ে ছুটে বেড়ানো, পুকুরে সাঁতার কাটা, নৌকা বওয়া, হাত ছিপ নিয়ে পুঁটি মাছ ধরা। জোড়া বঁড়শিতে যখন জোড়া পুঁটি মাছ উঠতো, তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে মাছের মুখ থেকে সযত্নে বঁড়শি খুলে মাছের মুখে ফু দিয়ে জলে ছেড়ে দেওয়া।

ঘন বর্ষায় পুকুরের জল যখন টইটুম্বুর করতো তখন শোল মাছের ডিম ফুটে বাচ্চা হতো। অসংখ‌্য ছোট ছোট বাচ্চা মাছ দল বেঁধে জলে ঘুরে বেড়াতো। তাদের বাবা-মা কাছাকাছি থাকতো। বাচ্চাদের পাহারা দেবার জন‌্যে। আমরা সে সুযোগের সদ্বব‌্যবহার করতাম। বড় বঁড়শিতে ঘুরঘুরে পোকা, আরশোলা অথবা ব‌্যাঙাচি গেঁথে ছোট শোল মাছের ঝাকের মাঝে ফেলে দিতাম। বড় শোল মাছটি খপ করে সে টোপ গিলে ধরে ফেলতো। সঙ্গে সঙ্গে ছিপে টান পড়তো। তারপর মাছটিকে টেনে ডাঙায় তুলতাম। আমাদের শিশুমনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত। বিকেল হলেই মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়ানো, রঙিন প্রজাপতির পিছনে ধাওয়া করা, গঙ্গা ফড়িংয়ের লেজে সুতো বেঁধে বাতাসে ওড়ানো, বর্ষার ভিজে ঘাসে বিরবারটি খুঁজতে যাওয়া। (শ্রদ্ধেয় সাহিত‌্যিক শ্রীরমাপদ চৌধুরীর ‘প্রথম প্রহর’ বইটিতে বিরবারটি উল্লেখ পাওয়া যায়)। ভেলভেট রঙের ছোট ছোট পোকা, কোনো কিছুর স্পর্শ পেলেই পাগুলো গুটিয়ে নেয়। সেগুলো ধরে ধরে আমরা খালি দেশলাই বাক্সে ভরে রাখতাম। ঘরে এনে মেঝেতে ছেড়ে দিতাম। কেমন গুটি গুটি পায়ে চলতো। আর যেই হাতের স্পর্শ পেতো অমনি গুটিয়ে যেত। আমরা তখন সুর করে বলতাম—

বিরবারটি চটিমটি লাল দরওয়াজা খোল দে

তেরে মামা লাড্ডু লায়া লাল দরওয়াজা খোল দে।

কিছুক্ষণ বাদে ওরা সত‌্যি সত‌্যিই চলতে শুরু করতো। আর আমরা আনন্দে ফেটে পড়তাম। এ সব নিয়ে এক ভিন্ন জগতের মানুষ ছিলাম আমরা।


।। দুই ।।

সব আনন্দ ছাপিয়ে পুজোর আনন্দ বড় হয়ে উঠতো। তখন আমাদের কতোই বা বয়স। বন্ধুরা সবাই প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। পাড়ার বারোয়ারি দুর্গা পুজো। এখনও মনে পড়ে, প্রতি বছর চৈত্রের গাজন হয়ে গেলে প্রতিমা গড়ার শিল্পী আসতো। নাম ছিল কালী পাল। পুজো মন্ডপে ঠাকুরের আটচালা আগে থেকে রাখা থাকতো। কালী পাল প্রথমে এসে খড় দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে চলে যেত। তারপর মাস দেড়েক ওর পাত্তা পাওয়া যেত না। আমরা ছটফট করতাম, তার আগমন প্রতীক্ষায়। রথের পরপর ও আসতো। সঙ্গে করে গঙ্গার পলি মাটি নিয়ে আসতো। এবার খড়ের ওপর মাটি দিয়ে প্রতিমা মূর্তি গড়তো। তিন চার দিন লেগে যেত। অবার কালী পাল চলে যেত। এদিকে মাটির প্রতিমাগুলো শুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরত। আবার বিশ্বকর্মা পুজোর পরপরই ও আসতো। এবার মাটি দিয়ে প্রতিমার ফাটল মেরামত করে গোলা মাটি দিয়ে প্রতিমা মসৃণ করতো। আমরা একে দোমেটে বলতাম। এই ভাবেই প্রতিমা আমাদের চোখের সামনে আস্তে আস্তে রূপ নিত। আর আমরা উত্তেজনায় ছটফট করতাম। এ অবস্থায় প্রায় প্রতিদিন সকাল বিকেল আমরা প্রতিমা দেখে আসতাম। আর পুজোর দু’-তিন দিন আগে কালী পাল আসতো প্রতিমা রং করতে। সঙ্গে নানান সাইজের তুলি, রং, আঠা ও ছোট ছোট মাটির পাত্র। এবার আমরা আর মন্ডপ ছেড়ে নড়তাম না। আমাদের চোখের সামনে মাটির প্রতিমা রূপ নিত। ঠাকুরের চোখ আঁকার সময় কালী পাল মৌনব্রত অবলম্বন করতো। আমাদের বলতো চোখ বন্ধ করে থাকতে, ঠাকুরের চোখ আঁকা দেখতে নেই। সব ঠাকুরের চোখ আঁকা হয়ে গেলে আমাদের চোখ খুলতে বলতো। চোখ খুলে দেখতাম মৃন্ময়ী মূর্তি জগন্ময়ী হয়ে উঠেছে, সে অনুভূতি লিখে বোঝানো যাবে না। পুজোর পাঁচটা দিন কী নিষ্ঠার সঙ্গে বারোয়ারি দুর্গাপুজো হতো যা আজ কল্পনা করা যায় না। সন্ধিপুজো ও বলিদান ঘড়ির সঙ্গে পল অনুপল মিলিয়ে সঠিক সময় করা হত। পাড়ার যত ছেলেমেয়ে সবাই প্রায় আমাদের বয়সি, ভোর না ভোর হতে ফুল তুলতে যেতাম। দেখতে দেখতে পুজোর আঙিনায় রাখা ঝুড়ি ফুলে ভরে উঠতো। শিউলি, টগর, স্থলপদ্ম, গন্ধরাজ, জবা, অপরাজিতা, করবী— নানান রকমের ফুল। আমাদের তোলা ফুলেই পুজো হত।

পুজোর পাঁচটা দিন দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে কেটে যেত বুঝতে পারতাম না। মন খারাপ হত বিজয়া দশমীর দিন। বারবার গিয়ে প্রতিমা দেখে আসতাম আমরা। সে বয়সে দুর্গা ঠাকুর বিসর্জন হয়ে যাবে ভেবে আমরা সত‌্যি সত‌্যিই কাঁদতাম আর প্রতিমার চোখেও জল দেখতাম। বয়সটা বোধহয় সেই অনুভূতিতে ভরা ছিল। প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আনন্দের জোয়ারে কিন্তু ভাঁটা পড়তো না। বাড়ি, বাড়ি গিয়ে প্রণাম করা, সেই সঙ্গে নাড়ু, মোয়া, ঘুগনী খাওয়া— সে এক ভিন্ন স্বাদের জগৎ ছিল।

পুজোর আনন্দ-আমরা যে ভাবে উপভোগ করেছি, আমাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা তার এক কণাও উপলব্ধি করতে পারে না, এখন বারোয়ারি পুজোয় বাহ‌্যাড়ম্বর বেশি। নিয়ম নিষ্ঠা নেই বললেই চলে। চোখের সামনে প্রতিমা গড়ে উঠত, পুজো থেকে বিসর্জন পর্যন্ত— আজকের প্রজন্মের কতজন দেখতে পায়। রঙ্গীন স্বপ্নে ভরপুর উত্তেজনা উদ্দীপনায় ছাপিয়ে যাওয়া সে সব দিনগুলো আমাদের জীবন থেকে যেমন হারিয়ে গেছে, তেমনি বর্তমান প্রজন্ম আজ সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত।


।। তিন।।

আজকাল কেউ আর রূপকথার গল্প শুনতে চায় না। জন্মনোর পর একটু বুঝতে শিখলে সে টিভি-র পর্দায় কার্টুন দেখছে, সে সোনার পালঙ্ক খাটে শুয়ে থাকা রাজকুমারী বা দৈত‌্যরাজ অথবা পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প শুনবে কেন। আজ কেউ আর কল্পনার জগতে বিচরণ করে না। সবাই বাস্তববাদী বা সম্ভাবনাময় হতে চায়। আমরা কল্পনার জগতটাকে আঁকড়ে ধরে রেখে বড় হয়েছি। হারায়নি কিছু, পেয়েছি অনেক কিছুই, অনেক বেশি। কল্পনাই কিন্তু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। বেড়ে ওঠার সহায়ক হয়। একটা তরুলতা যেমন গাছকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠে, কচি ডগা মাথা উঁচু করে সূর্যালোককে স্পর্শ করার চেষ্টা করে তেমনি কল্পনাকে কেন্দ্র করে ছোট্ট শিশুর জগৎটা গড়ে ওঠে ভবিষ‌্যতের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলতর করতে। কিন্তু মনের কল্পনা আজ হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে আমাদের সেই সব স্বপ্ন রঙিন দিন। যুগ পাল্টাচ্ছে সেই সঙ্গে মানসিকতা। আমরা যারা প্রৌঢ় অথবা বৃদ্ধের দল তারা হয়তো এই পরিবর্তনটাকে মেনে নিতে পারছি না। তাই নিজের অজান্তে লিখে ফেলি —

“হারিয়ে গেছে ছেলেবেলার 

স্বপ্নরঙ্গীন দিন

রাজকুমার আর পক্ষীরাজে 

ফিরবে না কোনোদিন

ফুলপরীরা ঘুমিয়ে গেছে

দূষণ পরিবেশে

দিঘীর ঘাটে স্নান করতে 

আসবে না রাত শেষে

ভূতপেত্নী দৈত‌্যদানো পালিয়েছে 

সব ছেড়ে

বিজ্ঞান আজ সবার কাঁধে

ভর করেছে এসে।

ঘুমপাড়ানী মাসিপিসি

গ‌্যাছে ঘুমের দেশে

ফিরবে না আর কোনোদিনও

শব্দবাজীর দেশে।

সোনার কাঠি রূপোর কাঠি

সোনার পালঙ্ক খাট

রাজকুমারী নেই কো শুয়ে

নেই কো দৈত‌্যরাজ। 

বিজ্ঞান আজ হাতের কাছে

এনেছে সব কিছু

তারই সাথে রূপকথাকে

হারিয়েছে সব শিশু।”

লেখক ডঃ রমলা মুখার্জী -এর একটি গল্প

  মা ভূতনী



দস্যি অর্কের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে ওর স্কুলের ম্যাডামরা তো একেবারে হতবাক। যে ছেলে মোটেই বই ছুঁতো না, একটুও পড়া বলতে পারতো না, সে কিনা সব পড়া একদম বলতে পারছে, বই নিয়ে সবসময় পড়ছে! কি আশ্চর্য কান্ড!

       অর্কের মা তমা মাসদুয়েক হল গত হয়েছেন, তার প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ কারণ বলা যায় অর্ক। অর্কের অতিরিক্ত দুরন্তপনা আর পড়াশোনা না করার জন্যে অর্কের মা খুবই চিন্তা করত। স্কুলবাসেও অর্ক অন্য বন্ধুদের পেছনে লাগত, ভীষণ দুষ্টুমি করত। ইদানিং তো ইচ্ছে করে দেরি করে ঘুম থেকে উঠত, বেশিরভাগ দিনই স্কুলবাস মিস হয়ে যেত। তাই অগত্যা তমা বাইক চড়া শিখে অর্ককে রোজ বাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসত, আবার নিয়েও যেত। অর্কর বাবা সুমন তো অফিস নিয়েই ব্যস্ত- তার মোটেই সময় নেই। অর্কের সব দায়িত্বই তাই তমাকেই পালন করতে হত। কিন্তু অর্ক তো মোটেই পড়াশোনা করে না। তাই এবারের সেমিস্টারেও খুব খারাপ রেজাল্ট করেছে। তমাকে সেদিন অর্কর ম্যাডামরা বলেই দিয়েছেন আর অর্ককে স্কুলে রাখা যাবে না কারণ তার পড়াশোনার বুদ্ধি মাথায় না থাকলে কি হবে দুষ্টবুদ্ধিতে মগজ পুরো ঠাসা। অন্য বন্ধুদের টিফিন খেয়ে নেওয়া, বই লুকিয়ে রাখা থেকে মারামারিও করে অর্ক। অর্কর চিন্তাতেই একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল তমা। অর্ককে স্কুলে দিয়ে, স্কুলের মিটিং সেরে অসতর্ক হয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল সে। তাই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। একটা ইলেকট্রিক পোলে সজোরে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল তমার।  

      তমার মৃত্যুর পর থেকে অর্কের এই আকস্মিক পরিবর্তনে সুমনও কম অবাক হয়নি। অর্ক তো খুব ছোট, তার তো অনুশোচনা করার বয়স এখনও হয়নি। সবসময় অর্ক ম্রিয়মাণ হয়ে থাকে, মুখে হাসি নেই, দুরন্তপনা নেই। এ যেন অন্য অর্ক। একা থাকতে ভয় পায়, সবসময় মা’কে নাকি দেখতে পায়। খুব চিন্তায় পড়ল সুমন, অফিস কামাই হয়ে যাচ্ছে, চাকরিই না চলে যায় তার। অগত্যা আত্মীয়স্বজনদের পরামর্শে বাধ্য হয়েই সুমন অর্কের নতুন মায়ের জন্য পাপিয়াকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু কি কেলেঙ্কারী, বাড়ির চৌকাঠ যেই পাপিয়া পেরিয়েছে অমনি সে হুমড়ি খেয়ে উল্টে পড়ল। কি করে যে পড়ে গেল বোঝাই গেল না, কিন্তু অর্ক চেঁচিয়ে উঠল, “মা, মা, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল নতুন মাকে, আমি স্পষ্ট দেখলাম।” কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার অর্ক ছাড়া ব্যাপারটা আর কেউ বিশ্বাসই করল না।

     এরপরের কাহিনী আরও দুঃখের। পাপিয়াও মাঝে মধ্যে তারপর থেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে লাগল। সেও যেন কিসের একটা ভয়ে সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকে। সুমনের তো খুব মুস্কিল হল। অর্ককে দেখভাল করার জন্যই সুমন বিয়ে করল, কিন্তু লাভ তো কিছুই হলনা, উল্টে অর্কর সাথে পাপিয়াকেও দেখাশোনা করতে হচ্ছে সুমনকে- না চাকরিটা এবার আর থাকবে না সুমনের। সুমন কাছে থাকলে ওদের কোন ভয় নেই, সুমন চলে গেলেই যত ভয় ওদের গ্রাস করে।  

     অর্কের আবদারে পাপিয়া একদিন বিরিয়ানি রান্না করেছে। কিছুই তো অর্ক খেতে পারে না, পাপিয়ার তৈরি বিরিয়ানি কিন্তু অর্ক তৃপ্তি করে খেল। সেদিন স্কুল নেই, স্কুলের ফাউন্ডেশন ডে উপলক্ষে ছুটি ছিল অর্কের। অর্ককে খাইয়ে যেই বিরিয়ানি নিয়ে পাপিয়া খেতে বসেছে অমনি মুরগীর ঠ্যাংটা থালা থেকে উঠে হাওয়ায় ভেসে উঠল আর কে যেন খপ করে ধরে নিল। আবার খেতে যাবে আবার আর একটা ঠ্যাং যেই উঠেছে পাপিয়া খপ করে ঠ্যাংটা ধরে সাহস করে বলল, “কে তুমি? কি চাও? সবসময় আমায় এমন করে জ্বালাও কেন?”

- “আঁমি অঁর্কের আঁসল মাঁ। তুঁমি আঁমার ঁসংসারে ঢুঁকে পঁড়লে জোঁর কঁরে। প্রঁথম দিঁন তোঁমায় ধাঁক্কা মেঁরে ফেঁলে দিঁয়েছিলাম মঁনে আঁছে?”

- মনে আছে। তাহলে সেই ধাক্কা মারা, মাঝে মধ্যেই ছায়ামূর্তির মত ঘুরে বেড়ানো সেসবই কি তোমার কাজ?

- হ্যাঁ আঁমি। আঁমি দেঁখি, পাঁহারা দিঁঁই অঁর্ককে। পঁড়াশোনা কঁরছে কিঁনা? ঠিঁকমতো খাঁচ্ছে কিঁনা? আঁজ তুঁমি অঁর্ককে ছোঁট ছোঁট ঁমাংসগুলো দিঁলে আঁর তুঁমি বিঁরিয়ানির বঁড় বঁড় ঁমাংসের টুঁকরোগুলো নিঁলে, তাঁই আঁমি সঁহ্য কঁরতে পাঁরলাম নাঁ।

- কিন্তু এসব করে তো তুমি অর্কের ক্ষতিই করছ? দেখছ না অর্ক কেমন চুপচাপ থাকে, ভাল করে খায় না, কেবল পড়াশোনাই সব, কেমন রোগা হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছ না?

- তুঁমি ঠিঁক বঁলছো?

- হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি।

- তুঁমি অঁর্ককে যঁদি খুঁব ভাঁলবাস, ওঁর সঁবকিছু খুঁব ভাঁল কঁরে দেঁখভাল কঁর, ওঁকে ভাঁল ভাঁল রাঁন্না কঁরে খাঁওয়াও তোঁ আঁমি শাঁন্তি পাঁব। তুঁমি কঁথা দাঁও অঁর্ককে তুঁমি আঁরও বেঁশী কঁরে যঁত্ন কঁরবে তাঁহলে আঁমি আঁর কঁখনও তোঁমাদের জ্বাঁলাতন কঁরতে আঁসব নাঁ। আঁমি এঁখান থেঁকে নিঁশ্চিন্ত মঁনে চঁলে যাঁব। আঁমার আঁত্মা মুঁক্ত হঁয়ে হাঁওয়ায় মিঁশে যাঁবে। পঁরে আঁবার অঁন্য কোঁথাও নঁবরূপে জঁন্মলাভ কঁরবে।

- ঠিক আছে আমি কথা দিলাম দিদি তোমার ছেলে অর্ককে আমি আমার নিজের ছেলের মতই ভালবাসবো, আদর-যত্ন করব। ওকে ভাল ভাল রান্না করে খাওয়াব, ওকে পড়াবো। তুমি একদম চিন্তা কোরো না।

- প্রঁমিস

- প্রমিস

তারপরই একটা দমকা হাওয়ার ঝড় উঠল আর পাপিয়া দেখল উঠানের আমগাছের পাতাগুলো প্রচন্ড কেঁপে উঠল। বেশ কিছু কাঁচা আম উঠানে পড়ল আছড়ে। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনদিন তমা আসে নি অর্ক বাঁ পাপিয়াকে জ্বালাতে।

     সুমন এখন নিশ্চিন্ত মনে অফিসে যেতে পারছে। পাপিয়ার আদরে অর্ক আবার আগের মত হাসছে, খেলছে, তবে পড়াশোনাও সে তার সাথে সমান তালে করছে।  

লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প

 অপারেশন



'বুবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ো'- রুমকীদেবী নিজের পাঁচ বছরের ছেলেকে বলে উঠলেন৷


'আমরা আজ ডাক্তার কাকুর কাছে যাব তো মা?'- ঘুম থেকে উঠে বুবাই বলে উঠল৷


'হ্যাঁ বাবা, এখুনি৷'


আসলে বুবাই-এর হার্টে একটা ফুটো আছে৷ তাই বুবাই-এর আজ অপারেশন৷


'আজকের পর থেকে আমি কি খেলতে পারব তো মা?'


বুবাই-এর বাবা রেডি হয়েই ঘরে এলেন এবং ছেলের মুখে এই কথা শুনে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না৷ শুধু বললেন 'নিশ্চয় বাবা, আমি আর তুমি দুজনে একসাথে খেলব৷'

লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প

 ভালোবাসার শৈল্পিকতা



এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। রোগী শমরিতা হাসপাতালে। রিয়াজুল দেরি না করে বাইকে চড়ে চলে এলো হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে কক্ষ থেকে বের হলে এক তরুণী এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।


রিয়াজুল শাহেদ স্মিত হেসে বললো, নো টেনশন, ডু ফুর্তি। এবি পজেটিভ রক্ত সচরাচর পাওয়া যায় না। যখন প্রয়োজন হবে,কল দেবেন। জিরো ওয়ান সেভেন ওয়ান টেন এইট টু সিক্স জিরো ফাইভ নাইন।


তরুণীর কথা বলার অপেক্ষায় না থেকে রিয়াজুল শাহেদ বেরিয়ে এলো হাসপাতাল থেকে।


এক মাস পর একটি অপরিচিত নম্বরের ফোনকল গ্রহণ করলে ওদিক থেকে মেয়ে কণ্ঠ বললো, আপনি কি ঢাকায় আছেন? সেদিন আপনার নামটাও জানা হয়নি।


রিয়াজুল বললো, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এর আগেও আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে।


ঠিক ধরেছেন। মাস খানেক আগে শমরিতা হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিলেন। আজও রক্ত লাগবে। আসবেন?


কোথায় আসতে হবে বলুন।


মগবাজার কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।


আধা ঘন্টায় রিয়াজুল শাহেদ হাসপাতালে পৌঁছে দান করলো রক্ত। কিন্তু এবার ঐ তরুণীর দেখা পেলো না কোথাও।


ঠোঁট উল্টে রিয়াজুল চলে এলো হাসপাতাল থেকে। Unnamed শিরোনামে তরুণীর মোবাইল ফোন নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলো বলেই পরদিন ফোনকল আসায় অসুবিধা হলো না চিনতে।


কলটা গ্রহণ করে রিয়াজুল বললো, কোন হাসপাতাল?


কোন হাসপাতাল মানে?


রক্ত দিতে কোনো হাসপাতালে যেতে হবে না? নাকি এবার আপনার বাসায়?


আরে নাহ! আজ রক্ত দেবার জন্য কল দেই নি।


তাহলে?

আপনি মানুষটা খুব ভালো। কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন দিলাম।


শুধু ফোনে?


কিভাবে চাচ্ছেন আপনি?


সামনাসামনি।

কোনো সমস্যা নাই। কোথায় আসবো বলুন। কোনো পার্কে?


ঢাকার পার্কগুলো তো মোবাইল প্রস্টিটিউট।


তা যা বলেছেন। কোনো হোটেলে?


হোটেল? বাংলাদেশে? দাঁতাল পুলিশ রেইড মেরে প্রসটিটিউট বানিয়ে ফেলবে! আমি পুলিশ থেকে শত মাইল দূরে থাকতে চাই!

তাহলে আমার বাসায় চলে আসুন।


রিয়াজুল শাহেদ বিস্মিত হয়ে বললো, আপনার বাসায়!


অথবা আপনার বাসায়!


বাহ! আপনি খুব স্বতঃস্ফূর্ত ডেটিং-এর ব্যাপারে!


ওয়েস্টার্ন কাল্চার এডপ্ট করতে হলে এমন তো হতেই হবে! আমার বাসার এড্রেসটা আপনার মোবাইল ফোনে টেক্সট করে দিচ্ছি। চলে আসুন। বাই।


মেয়েটির কথাগুলো তখনো কানে বাজছে রিয়াজুল শাহেদের। বাংলাদেশের মেয়েরা এতো ফৃ হয়ে গেছে? ফৃ-সেক্সের দেশে ভালোবাসা নেই, আছে শুধু জৈবিক আকর্ষণ। বাংলাদেশও কি হয়ে যাচ্ছে তেমন?


উবারে করে রিয়াজুল শাহেদ চলে এলো মেয়েটির দেয়া ঠিকানায়। অর্কিডের স্টিক দিয়ে ওকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো মেয়েটি। ওকে বসতে বলে চলে গেলো ভেতরে। প্রায় সাথে সাথে একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা এলেন। রিয়াজুল শাহেদ দাঁড়িয়ে সালাম জানালো।


ভদ্রমহিলা ইশারায় রিয়াজুলকে বসতে বলে নিজে মুখোমুখি একটা সোফায় বসে বললেন, আমার মেয়েটা দিনের পর দিন কেমন যেনো আলাদা ধরনের হয়ে যাচ্ছে। যে দুইজনকে তুমি রক্ত দিলে ওরা কেউ আমাদের আত্মীয় না-ওর দুই বান্ধবীর আত্মীয়। যখন শুনলো রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না তখন নিজেই রক্ত সংগ্রহের দায়িত্ব নিলো। এই স্বভাবের জন্য ওর হাসবেন্ডও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ওর প্রতি।

কবি গোবিন্দ মোদক -এর একটি কবিতা

 প্রত্ন-কথা 



প্রতিটি তিন-পঙক্তি শেষে একবার অল্প-থামা,

তারপর আবার সনিষ্ঠ উচ্চারণ

গলার ওঠানামা... স্বরক্ষেপণ ...

স্বর-যুক্তি ... স্বর-মুক্তি ... আর বিষাদ ...

এভাবেই একসময় শেষ হয় ত্রিপদী কবিতা ...

ফুরায় একলব্যের কাহিনী ...

তখন জনপদ জুড়ে শুধুই অর্জুনের আস্ফালন। 

তবু ইতিহাস দাগ রেখে যায়।

পৃথিবীটা জানে --

প্রকৃত সত্য কোথায় প্রোথিত আছে !

কবি জয়তী দেওঘরিয়ার -এর একটি কবিতা

 প্রতীক্ষা



এ কোন্ বিশ্ব

দেখে জাগে সংশয়!

সারা দেহ ধূলি-ধূসরিত।

তোমার ঐ অপরূপ রূপ 

কে করিল হরণ,কালিমালিপ্ত?

কে সেই হানাদার-বর্বর!

তুমি কি করেছো তারে ক্ষমা?

নিজ শক্তি আস্ফালনে লিপ্ত সারাক্ষণ। 

'আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই বীর'--

প্রমাণ করতেই ব্যস্ত। 

এ ভাবে চলতে চলতে

একদিন লুপ্ত হবেই

তোমার বুক থেকে

আস্ফালনকারীর অস্তিত্ব। 

ভয়ঙ্করের কলোমেঘ

সরে যাবে একদিন, 

সুন্দর সুষমায় পূর্ণ হবে এ বিশ্ব,

তারই প্রতীক্ষায়।

কবি স্বপ্না বনিক -এর একটি কবিতা

 তুমি তো এলে না

           


অনেক বসন্ত কেটে গেছে

শরতের মিঠে হাওয়াই এসেছে, 

তুমি তো এলে না প্রিয়

দেখা তো দিলে না আমায়। 


দীর্ঘ প্রতিক্ষায় বয়ে যায় বেলা

আর কেন লুকোচুরি খেলা

এখনও বাজে বাঁশরী

হৃদয়ে বৃথাই খুঁজে মরি। 


শুনেছি জলে স্থলে আকাশে

সূর্যালোকে অনন্ত মহাকাশে

তোমার পরিক্রমণ দশ- দিগন্তে

দেখা দিও প্রিয় জীবনের অন্তে। 


জানি তুমি আছো জীবন তরঙ্গে

সুখে দুখে আমারই সঙ্গে, 

আমারে ছেড়ো না প্রিয় কভু

সংসারের সকল কাজে থেকো প্রভু। 

কবি সুনন্দ মন্ডল -এর একটি কবিতা

 অনুরাগের আঁচল

          


একান্ত অনুরাগ

ভালোবেসে জীবন কাটানো

প্রেমিক সত্তা

প্রেমিকার আঁচল ধরে ঘোরে।


অন্যদিকে প্রেমিকা

সুখের আশায়

নিজের পরিবার ছেড়ে

প্রেমিকের পরিবারকে আঁচলে জড়িয়ে রাখে।


কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

 বর্ষণ



প্রকৃতির মাঝে চলতে চলতে

            পাখিদের গান শুনতে শুনতে

ফসলের খেত দেখতে দেখতে

            হঠাৎ কখনো জানতে পারিনি!

আকাশের কোণে গভীর মেঘ

            ধীরে ধীরে কালো হতে লেগেছে,

চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে

মনে হয় এখনই গভীর ‌‌বর্ষণ

            আকাশ হতে নেমে আসছে।

শান্ত প্রকৃতির বুক থেকে

            ঝরতে চলেছে গভীর বর্ষণ 

ঠিক এই মূহুর্তে ভেসে আসছে 

দূরে দূরান্তের পশুদের আর্তনাদ

           শুরু হতে লাগলো গভীর বর্ষণ

থেকে থেকে বিদ্যুতের চমকানি ,

           উত্তরের জানালাটার দীর্ঘ শব্দ;

           বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি

এখনও ভেসে আসছে আর্তনাদ!

ধীরে ধীরে বর্ষণ কমতে চলেছে

একটু পরে বুঝি থেমে যাবে।

উত্তরের জানালা দিয়ে শীতল হাওয়া

          প্রবেশ করছে কপাটের ফাঁক দিয়ে।

ঠিক এই মূহুর্তে বর্ষণ পুরো কমে এসেছে

বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করেছি

চারিদিকে জল আর জল

সমস্ত চাষের খেত জলে ডুবে গেছে।

          বনের পশুরা একহাঁটু জলে

          দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর কষ্টে।

          প্রচুর ফসলের কি হয়েছে হয়েছে-

          চেয়ে আছি, কিছু করার নেই

          এটাই প্রকৃতির রীতিনীতি

যেটা চলে আসছে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই।।

কবি ক্ষুদিরাম নস্কর -এর একটি কবিতা

 শেষ বয়সের ছুটি



মায়ের পিঠে ঢুলছে খোকা 

ঝুলছে ঘুমের মজা 

পেটের জ্বালায় মায়ের মাথায় 

মস্ত ইটের বোঝা


ঘাম ঝরা সেই দিনের শেষে 

যে টুক পয়সা মেলে 

সব চলে যায় চালে-ডালে 

লঙ্কা,লবণ,তেলে।


তার থেকেও বাঁচায় কিছু 

শিখবে পড়া ছেলে 

মানুষ মতো মানুষ হবে 

হয়তো সুযোগ পেলে।


থাকবে না আর অভাব তাদের 

ফুরাবেনা রুটি 

চাকরিজীবীর মত পাবে 

শেষ বয়সে ছুটি।


স্বপ্ন সবার সত্যি হয় না 

কষ্টো আরো শেষে 

খোকার চাকরি মস্ত বড় 

ফিরতে দেয় না দেশে।

কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

রম্যগাঁথা



মন চায় আমার 

 দুহাতে ধানের শীষকে জড়িয়ে ধরতে

আবেগ যে জড়িয়ে আছে এখনো,

চারদিকে কলমীর শাকের মতো লতানো ঘ্রাণ আমাকে গ্রাস করতে চায়

আমি পিছিয়ে যাই শুধু ইচ্ছে করেই।

কেননা,ভালোবাসার ব‍্যাকরণ যে আমি বুঝিনা।

ভালোবাসা যে আমার কাছে ছেঁড়া পোষ্টারের মতো, 

যার কোনো অভিমান নেই।

শুধু বহন করে অতীতের ধূসর সাক্ষ‍্য,

কানে কানে যেন বলে দেয় অভিমানের ঝরা বকুলের রম‍্যগাঁথা।

কবি সুব্রত মিত্র -এর একটি কবিতা

 মর্ম কথা



একদিন সব কোলাহল থেমে যাবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন আবার হঠাৎ করে কোলাহল শুরু হবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন আবার সকলে নীরব হতে হতে সমবেত কণ্ঠে বলবে কারুর নাম

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন সব দেয়া-নেয়া মিটে যাবে পড়ে রবে এই আপন ভুবন

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন পৃথিবীর আকাশে কবিদের ছায়া হয়ে মায়া গুলো পড়ে রবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন স্বার্থের বিনিময়ে ভালবাসার বড় অভাব হবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

একদিন এই মায়ার পাথরগুলো ফুল হতে গিয়েও ফল হয়ে ধরা দেবে

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

একদিন হয়তো তোমরা ভুলতে গিয়েও ভুলতে পারবেনা আমায়

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না,

যদি কোনদিন কেউ করো আমায় নিয়ে সমালোচনা

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না;

পৃথিবীর গায়ে আমি খোদাই করা বিরম্বনা

আমি মরচে পড়া শব্দের ধাতু, আমায় সকলে চিনলো না।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 একটাই রাস্তা



ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি

কর জাতির বিচারে।

আমরা হলাম মানব জাতি

জন্ম মায়ের উদরে।

ভূমি, জল, বাতাস নিয়ে

একই আকাশ তলে।

শ্বাস প্রশ্বাস প্রাণে নিয়ে

বাস করি সকলে।

সাকার - নিরাকার ঈশ্বর একই

ভজন - সাধন করি।

মৃত্যুকালে শমন আসে সবার

একই পথ ধরি।

কবি সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি কবিতা

 তোমার সঙ্গে



যাব আমি যাব তোমার সঙ্গে যাব

কোথায় গিয়ে কী যে খাব আমি খাব

সেথায় যদি হয় গো দেখা ঐ বাংলার মাঠ

জলাজমি অরন্য আর নদী পুকুর ঘাট

শালিক ডাকবে কিচিরমিচির সুরে

বনলতা ঘেরা বনপলাশি নাচবে অচিন পুরে

কোকিল ডাকবে কুহু কুহু রবে

কোকিলা আসবে ছূটে আপন সগৌরবে

সেথা আমি যাব গাইবো নতুন গান

ভাদ্রের নীল আকাশের ছেঁড়া মেঘের টান। 


তবুও সোঁদা গন্ধের গন্ধ লাগবে নাকে

শরৎ আসবে শিউলি ঝরবে তাল পড়বে ঢাঁকে

এমন পুজোর শারদীয়া কেন যে আজ মনমরা

বাঙালি হৃদয় তবুও কেমন সুধারসে ভরা। 

যাব আমি যাব সেথা পুজোর সাজ পরে

আনন্দে মাতবে যেথায় মানুষ থরে থরে।।

কবি তীর্থঙ্কর সুমিত -এর দুটি কবিতা

 ভালোবাসার জলাশয়


হাতে হাত ---

উড়ে বেড়ায় স্বপ্ন

চোখ খুললেই পৃথিবী জেগে ওঠে

কিছু বাকি রয়েই যায়

বিবর্তন শুধু শরীরের ___

হাত,পা,মুখ

এবার একটা ইতি টানতে হয়


হাঁস ভেসে যায় ভালোবাসার জলাশয়।

-----------------------------------------------------------------------


স্বপ্নের ফেরিওয়ালা



কত স্বপ্ন বিক্রি হয়ে যায়

সকাল বিকেল প্রতিনিয়ত ...

ধূসর স্বপ্ন গোধূলি আঁকে ঝাঁকা ভরে

ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে চিকন হাওয়া

অনন্ত যাত্রাপথে সঙ্গীহীন নৌকা একাকী

ফিরে আসে তার গন্তব্যে 


এভাবেই কেটে যায় কত জীবনের ট্যাজেটি। 

কবি তৈমুর খান -এর একটি কবিতা

 ভবিষ্যৎ



বেলা বাড়ছে 

বেজে যাচ্ছে ধৈর্যের সংগীত 

বিপ্লবের মঞ্চ বেঁধে স্বপ্নের নীলরাষ্ট্র ছড়াচ্ছে উদ্বেগ 

সময়ের তরঙ্গ এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে 

বিকেলে আলোর চিঠি আকৃষ্ট করেছে 



এখানে অন্ধকারের পাহাড়ে 

দু একটি সুড়ঙ্গ গিরিখাতে 

ভবিষ্যৎ উঁকি মারছে :

কী সুন্দর মাজা, পুলক মাখা পলক 

ঠোঁটে ঠোঁটে নতুন চুমুর অভিঘাত 



ধৈর্যের স্বরলিপি আর দূরের দর্শক আমি 

যদিও অভিযাত্রী, যদিও বশংবদ 

সময়ের কাছে রেখেছি সমর্পণ 

নিঃস্ব ঝরনায় ধুয়ে নিয়েছি হাত মুখ

সপ্তম সংখ্যার সম্পাদকীয়






 মানসিক উত্তেজনায় বিকারগ্রস্থ মানুষের হৃদয় থেকে কবিতা বের হতে পারে। ভাববার বিষয় তার কাছে প্রেম ও আছে আবার বেকারত্বের আর্তনাদ আছে। তাই কবিতার কাঁচামাল হিসেবে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে! এক আকাশ ভাষান্তরে জর্জরিত না করে একটি গাছের পাতা গুণতে থাকার সমান শব্দ প্রয়োগে কবিতা গুচ্ছ হয়ে ওঠে আরও বেশি উজ্জ্বল এবং বেদনাদায়ক। ভালোবাসার আর অন্তর্নিহিত আর্তনাদ বলেও একটি কথা আছে। সেই নিয়ে কবি মন আরও বেশি উৎসুক। তাই লিখুন নতুন নতুন প্রেম। ভালোবাসার নরম ও বেদনাদায়ক চাদরে ভরে উঠুক আমাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা World Sahitya Adda. ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। পাশে থাকুন আমাদের।



                                           ধন্যবাদান্তে

                                 world sahitya adda



---------------------------------------------------------------------------




Saturday, August 28, 2021

সপ্তম সংখ্যার সূচিপত্র(২১ জন)

 সম্পূর্ণ সূচিপত্র




বাংলা কবিতা ও ছড়া---


তৈমুর খান, তীর্থঙ্কর সুমিত, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, মায়া বিদ, সুব্রত মিত্র, মিঠুন রায়, ক্ষুদিরাম নস্কর, অভিজিৎ হালদার, সুনন্দ মন্ডল, স্বপ্না বনিক, জয়তী দেওঘরিয়ার, গোবিন্দ মোদক।



বাংলা গল্প--


রানা জামান, অমিত পাল, ডঃ রমলা মুখার্জী




বাংলা প্রবন্ধ---


রামপ্রসাদ সরকার।




ইংরেজি কবিতা--


Soumendra Dutta Bhowmick.




Photography----


 Amit Pal, ARISHNA SARKAR.

Monday, August 23, 2021

Photography by ARISHNA SARKAR

 



Photography by Amit Pal

 



Poet ‎Sunanda Mandal's one English poem

 Blood 

                ‎ 

                ‎

My blood is the same as yours, 

Just different in humanity. 


You 

We 

The wind. 


Let's all run to reach the goal, 


You are selfish 

I try selflessly. 

Although selfish in your words. 

In fact blood speaks.

Poet Soumendra Dutta Bhowmick's one English poems

 UNDERNEATH


 


Under the ground you and I


          Try to purchase


The forbidden diabolical love.


Don’t care at all then,


Who cares for this insignificance


Than to look our ugly bluff?


 


Under the ground you and I


          Have no slightest shy!


To be sincerely unfold


We freely think and drink.


Who cares for such unaccounted meal


Than to lose our pure gold?

কথাসাহিত্যিক সুদীপ ঘোষাল -এর উপন্যাস (অন্তিম পর্ব)

 ইউরেকা ইউরেনাস



(৬)

নাটুবাবু বললেন, আমি বামুনের ছেলে। ভূত আছে বুঝলেন। শুনুন আমি বলি, শিবের অনুচর দেবযোনিবিশেষ (ভূতনাথ)। অশরীরী প্রেত বা পিশাচ জীব, প্রাণী (সর্বভূতে দয়া)। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসমূহের মূল উপাদান পঞ্চভূত।পরিণত দ্রবীভূত, বাষ্পীভূত বিদ্যমান, রয়েছে এমন ̃ .কাল বি. অতীত কাল ̃ ভূতপ্রেতের দ্বারা আক্রান্ত বা আবিষ্ট। ̃ .চতুর্দশী. কার্তিক মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথি। ভূত হলো অশরীরি পুরুষ আত্মা, আর পেত্নী অশরীরি মেয়ে আত্মা। অপঘাত, আত্মহত্যা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুর পর মানুষের অতৃপ্ত আত্মা ভূত-পেত্নী হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে। অন্যান্য জীবজন্তু বা প্রানীও তাদের মৃত্যুর পরে ভূতে পরিণত হতে পারে। বাংলায় ভূতকে মাঝে মাঝে প্রেতাত্মা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। প্রেতাত্মার নারীবাচক শব্দকে পেত্নী হিসেবে এবং পুরুষবাচক শব্দকে প্রেত বলা হয়ে থাকে। বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক ধরনের ভূতের বিশ্বাস রয়েছে; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো -----

আর হলো নারী ভূত যারা বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিতভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেত্নী শব্দ থেকে এসেছে এসব ভূত সাধারনত যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশিপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। পেত্নীদের আকৃতিতে একটিই সমস্যা রয়েছে, তা হলো তাদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো। সংস্কৃত শব্দ শাকচুন্নি থেকে এসেছে। এটা হলো অল্পবয়সী, বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্গালি শুভ্র পোষাক পরিধান করে এবং হাতে শঙ্খ বা শাঁখা পরিধান করে। শাঁখা হলো বাঙ্গালি বিবাহিত মহিলাদের প্রতীক। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে বা আক্রমন করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকগাঁথা অনুসারে জলাভূমির ধারে আম গাছে বাস করে এবং সুন্দর তরুণ দেখলে তাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলে। কখনো কখনো সে তরুণকে জলাভূমি থেকে মাছ ধরে দিতে বলে। কিন্তু সাবধান, শাকচুন্নিকে মাছ দেয়া মানে নিজের আত্মা তার হাতে সমর্পণ করা!

   কোনো চোর মারা গেলে চোরাচুন্নি হতে পারে। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। বাড়িতে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য গঙ্গাজলের ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।এ ধরনের ভূত সচরাচর দেখা যায় না। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়া ধরে শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারনত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমন করে মেরে ফেলে ও এরা শিকারের দেহ ভ্যাম্পায়ার স্টাইলে ছিড়ে ছিড়ে খায়। মনে করে মুসলমান ভূত হল এই মামদো। ব্রাহ্মণের আত্মা, সাদা ধুতি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে বিবেচিত। বলা হয়ে থাকে, কোনো ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে সে ব্রহ্মদৈত্য হয়। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেলেও ব্রহ্মদৈত্য হতে পারে। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশির্বাদ করলে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়, কিন্তু কারো প্রতি বিরাগ হলে তার সমূহ বিপদ। দেবদারু গাছ , বেল গাছ কিংবা বাড়ির খোলা চত্বরে বাস করে। মাথাবিহীন ভূত। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। কোনো দুর্ঘটনায়, যেমন রেলে কারো মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে। ভয়ংকর হলেও, মাথা না থাকার কারণে স্কন্ধকাটাকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। গ্যাসীয় ভূত। এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে, জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে। কখনো কখনো অবশ্য এরা জেলেদেরকে সমূহ বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে।খুব ভয়ংকর ভূত। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে না। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।গভীর নির্জন চরাচরে মানুষকে পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত। মানুষটি তখন পথ হারিয়ে বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে, এবং এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। অনেকটা নিশির মত এই ভূত গ্রামের পাশে জঙ্গলে বসে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। কান্নার সুর শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প বানিয়ে জঙ্গলের আরো গভীরে নিয়ে মেরে ফেলে। ছোট বাচ্চারা এর কান্নায় বেশি আকৃষ্ট হয়। হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমনে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারনত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত কারণ বাঘের অভাশ্রম হলো সুন্দরবন। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মুধ আহোরনে আগত গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের সন্নিকটে নিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে কেঁদে উঠে।এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘোরপাক খেতে থাকে। ভূতরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌচ্ছার পর তার শিকারকে মেরে ফেলে। এক্ষেতে শিকার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এধরনের ভূতদের রাতে গ্রামের মাঠের ধারে পথের মধ্যে দেখা যায়। শিকার সবসময় একাকী থাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।ডাইনি মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারনত বৃদ্ধ মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনী বিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ডাইনী বলা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে। হাঁড়ি গড়গড়া ---- রাতে নির্জন পথে, হাঁড়িকে পিছু ধাওয়া করতে দেখা যায়। শুঁয়োরা ভুত ---- মাঠে যারা মল ত্যাগ করতে যান তারা দেখতে পান।

-

তোতন বললেন, ভূত কোথায় থাকে? 


নাটুবাবু বললেন, শেওড়া, তাল, দেবদারু, বেল, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছে একটি দুটি ভূতের দেখা পেতে পারেন। কিন্তু বেশি সংখ্যায় ভূত দর্শনের অভিলাষ থাকলে, আপনাকে যেতে হবে বিজন বনে, তেপান্তরে, কিংবা ভূষণ্ডির মাঠে।


সুমন্বাবু দেখলেন দোতলার জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে পালিয়ে গেল একজন।


সুমন্ত বাবু আততুন বাবু কাউকে কিছু না বলে ছুটতে লাগলেন তার পিছন পিছন। না তবু কিছু বুঝতে পারলেন না কথা বলার থাকে ওদের চোখ যে এত তীব্রভাবে তাকে দেখতে পাবে জানতে পারেননি নাটক দেখতে পাননি কিন্তু সুমন্ত উপহার দিতে লাগলেন আর তার পিছনে পিছনে শত্রু তারা প্রায় মাইলখানেক পরে একটা পুকুরের ধারে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন।


সুমন্ত বুক রকমারি বারবার করে একটা ফাঁকা আওয়াজ করলেন সঙ্গে সঙ্গে সেই ভূতের সরদারের হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে পড়ল তোতনের পায়ের সামনে।

সেই ভূত কাল জোব্বা পরা পায়ে রণপা নিয়ে বলছে আমি দোতালার উপরে সাহায্যে হাত বাড়ায় আর লোককে ভয় দেখায় আমাদের এখানে চোরাকারবারির ব্যবসা আছে সে চোরাকারবারির ব্যবসা মানুষ থাকলে অসুবিধা হয় তাই মানুষকে ভয় পাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।


সে আরও বললো যেটা সেটা আরো আশ্চর্য ঘটনা সে বলল বাবু আমরাতো নকল ভূত কিন্তু একটা আসল ভূত কিন্তু আমরা দেখেছি এটা আপনাকে কি বার করতেই হবে আমরা নয় অপরাধী আমাদের জেলা দেবেন ঠিক আছে কিন্তু এই ভূত থাকে না বার করতে পারলে গ্রামের লোক ষষ্ঠীতে বাঁচতে পারবে না।


সেই চোখে থানায় হ্যান্ডওভার করে সুমন্ত আপাতত ফিরে এলেন নাটক আছে নাটকের সুমন্ত বললেন পরকাল নিয়ে আপনার খুব চিন্তা না তাহলে শুনুন পরকাল সম্বন্ধে আমার কাছে কিছু কথা, পরকাল হল একটি জগতের ধারণা, যে ধারণা অনুসারে ব্যক্তির শরীরের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার চেতনার অস্তিত্ব থেকে যায়। পরকালের বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া ব্যক্তির এসেন্স কোন আংশিক উপাদান অথবা পূর্ণাঙ্গ আত্মা হতে পারে। এই এসেন্স কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করতেও পারে আবার নাও পারে যেমন ভারতীয় দর্শনের কথা। পরকালের উপর বিশ্বাস দর্শন থেকে আসতে পারে অথবা অতিপ্ররাকৃত বিশ্বাস থেকে আসতে পারে।কিছু লোকায়ত মতবাদ অনুসারে, মৃত্যুর পরও অস্তিত্ববহন করা এই সত্তা কোন অতিপ্রাকৃত জগতে অবস্থান করে, আবার অন্যান্য লোকায়ত মতবাদ অনুসারে এই সত্তার নবজন্ম ঘটে এবং পুনরায় জীবনচক্র শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বের জীবন সম্পর্কে কোন স্মৃতি থাকে না। এই মতবাদ অনুসারে সত্তার একটি অন্য জগতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার জন্ম ও মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। পরকাল সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিশ্বাসেরই উৎপত্তি মন থেকে।কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশেষ করেপ্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সত্তা জীবিতাবস্থায় পৃথিবীতে তার নিয়ম অনুযায়ী বা কোন নির্ধারিত বিশেষ স্থানে গমন করে। অন্যদিকে পুনর্জন্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর কৃতকার্য অনুসারে সত্তার প্রকৃতি সরাসরি নির্ধারিত হয়ে যায়, এতে ভিন্ন কোন সত্তার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।

তোতন বললেন, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে দৃশ্য, আকার গ্রহণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। গল্প প্রায়শই শোনা যায়। এই সকল বিবরণীতে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: কখন অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় সত্ত্বায়, কখনও বা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করার বিদ্যাকে কালাজাদু বলা হয়ে থাকে।প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে ভূতের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সেযুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ভূত-তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হত মৃতের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ভূতেরা একা থাকে, তারা নির্দিষ্ট কিছু ঘুরে বেড়ায়, জীবদ্দশায় যেসকল বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলিকে বা তাদের তাড়া করে ফেরে। তবে ভূত বাহিনী, এমনকি ভৌতিক জীবজন্তুর কথাও শোনা যায়।


নাটুবাবু বললেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মা দেহত্যাগ করে। জীবাত্মা অবিনশ্বর। তবে কখনো কখনো জীবিত সামনে আকার ধারন করে। এটি পূরাণভিত্তিক একটি আধিভৌতিক বা অতিলৌকিক জনবিশ্বাস। প্রেতাত্মা বলতে মৃত ব্যক্তির প্রেরিত আত্মাকে বোঝায় ।সাধারণের বিশ্বাস কোনো ব্যক্তির যদি খুন বা অপমৃত্যু(যেমন: সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ইত্যাদি) হয় তবে মৃত্যুর পরে তার হত্যার প্রতিশোধের জন্য প্রেতাত্মা প্রেরিত হয় । বিভিন্ন ধরনের রয়েছে এ সম্পর্কে ।


সুমন্তবাবু বললেন, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না।


কিন্তু আজকের ভূত হল একটা সামান্য চোর। সে ভয় দেখাত সবাইকে। তবে ও আরেকটা ভূতের কথা বলল। তোতন বলল, আমার মনে হয় ওটা এলিয়েন। ওরা পৃথিবী দেখতে আসে আবার চলেও যায়।


নাটুবাবু বললেন, তাহলে বলছেন অন্য গ্রহেও প্রাণ আছে? 


সুমন্ত বাবুই সারাইনোডু বাবুকে চুপ করতে বললেন তারপর তিনজনই বেরিয়ে গেলেন চুপিচুপি জঙ্গলের ভেতর জঙ্গলের ভেতর তারা বসে থাকলেন মশা কামড় খেয়েও তারা প্রায় দু'ঘণ্টা বসে থাকলেন তারপর জঙ্গলে একটা ছায়ামূর্তি দেখলেন দেখলেন সেই ইউরেনাস গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন সে জিজ্ঞেস করছে তোমরা জঙ্গলে কি করছো তখন সুমন্ত অবশ করে বললেন আপনাকে দেখার জন্যই আমরা বসে আছি এলিয়েন বললেন আমরা বেশিক্ষণ পৃথিবীতে থাকি না শুধু কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেই আমাদের মহাকাশযানে চলে যায় আচ্ছা তোমরা ভালো থেকো।


এতক্ষণ নাটুবাবু কোন কথা বলেন নি। চুপ করে ছিলেন। এবার তিনি চিৎকার করলেন, ইউরেকা ইউরেকা। সুমন্তবাবু বললেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অ্যামেরিকান জোত্যির্বিজ্ঞানী পারিসভাল লোয়েল ভেবেছিলেন যে তিনি মঙ্গলের পৃষ্ঠে একটি খাল বয়ে যেতে দেখেছেন।সেখান থেকেই তিনি ধারণা করেছিলেন যে পৃথিবীর প্রতিবেশী এই গ্রহে শুধু প্রাণের অস্তিত্বই নয়, সেখানে হয়তো অগ্রসর এক সভ্যতাও থাকতে পারে।তখনই মানুষের কল্পনা আরো পাখা মেলতে শুরু করে। এইচ জি ওয়েলস লিখে ফেলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস- দ্যা ওয়ার অব দা ওয়ার্ল্ডস।এছাড়াও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে হলিউডের বহু সিনেমা।কিন্তু এই কল্পনায় জল ঢেলে দেয় মঙ্গল গ্রহ অভিমুখে পাঠানো কয়েকটি মহাকাশ যান।৬০ ও ৭০ এর দশকের এসব অভিযান থেকে ধারণা হতে থাকে থাকে যে মঙ্গলে কোনো অস্তিত্ব নেই খালের।তারপর ভাইকিং ল্যান্ডার থেকে ওই গ্রহের প্রথম ছবি পাঠানো হয় পৃথিবীতে। বিজ্ঞানীরা তখন মনে করলেন এটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা একটি গ্রহ।ওখান থেকে পাঠানো হয় মাটির নমুনা। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো প্রাণেরও নমুনা আছে ওখানে কিন্তু পরে সেটাও বাতিল হয়ে যায়।ফলে গত দুই দশক ধরে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন- এটি শুকনো, ধূলিময় লাল একটি গ্রহ।তারপর নব্বই এর দশকে এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ওই আরো বেশ কয়েকটি মিশন পরিচালিত হয়।সেখান থেকে যেসব তথ্য পাঠানো হয় সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা এটা ধারণা করতে শুরু করেন যে ওই গ্রহের কোথাও কোথাও উপরিপৃষ্ঠের নিচে হয়তো বরফ থাকতে পারে। তারপর ধারণা করা হলো সেখানে কোনো এক কালে পানির প্রবাহ ছিলো। ছিলো হ্রদ, এমনকি সমুদ্রও ছিলো।কিন্তু মঙ্গলে তখন এমন এক বিপর্যয় ঘটলো, যা বিজ্ঞানীরা আজও বের করতে পারেনি, যে ওই গ্রহটির জল ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলো।কিন্তু গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা তাদের নাটকীয় এক আবিষ্কারের খবর ঘোষণা করলেন মঙ্গলে আছে তরল পানির প্রবাহ।নাসা বলছে, “মঙ্গল গ্রহে তরলের অস্তিত্ব আছে বলে আমরা এই প্রথমবারের মতো প্রমাণ পেয়েছি। ওই গ্রহে আমরা এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যেটা থেকে স্পষ্ট যে আজকের মঙ্গল গ্রহে জল প্রবাহ আছে। বছরের পর বছর ধরে ওই গ্রহে যতো মহাকাশ যান, যতো মিশন পাঠানো হয়েছে, যেসব তথ্য ও ছবি পাওয়া গেছে, সেসব থেকে তরলের ব্যাপারে আন্দাজ করা গিয়েছিলো। তাহলে প্রাণী থাকাও আশ্চর্যকথা নয়। 


তোতন বলল, মানুষ নিজেই নিজের ক্ষতি করছে, আজ পর্যন্ত সেসবের পক্ষে কোনো প্রমাণ ছিলো না।”ব্যবহারের পর যে প্লাস্টিক আমরা ছুড়ে ফেলছি সেটা সমুদ্রে যে খাদ্যচক্র আছে তাকে বিনষ্ট করছে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিকের বোতল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রে আর সেসব প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীর জন্যে বড়ো রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।ইংল্যান্ডের প্লেমাউথ ম্যারিন ল্যাবরেটরি একটি গবেষণা করে দেখিয়েছে, প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা যখন পানির সাথে মিশে যায়, খাদ্যচক্রের একবারে তলদেশে থাকা প্রাণীরা এসব গলাধঃকরণ করে থাকে।ধারণা করা হয়, প্রতি বছর ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক দ্রব্য সাগরে ফেলা হয়।এলিয়েন বলেছিল,মানুষ তোমরা সাবধান হও। তা না হলে ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীর অস্তিত্ব। 

লেখিকা ডঃ রমলা মুখার্জী -এর একটি গল্প

 ভূতের গিফট



গরমের ছুটিতে ছেলেদুটিকে নিয়ে গেলাম কালিংপঙ। আমার স্বামী গভঃ অফিসার, বাংলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টিং হয়। এবারে পোস্টিং নর্থ বেঙ্গলে। আমি পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে ছেলেদের নিয়ে থাকি। আমি ঐখানেই একটি স্কুলে শিক্ষকতার কারণে ছুটি কাটাতেই কেবল স্বামীর কাছে ছেলেদের নিয়ে দেখা করতে আসি। দেখাও হয় আবার বেড়ানোও হয়। ছেলেদেরও খুব মজা হয়। ওরা তো বেড়াতে পেলে আর কিছু চায় না।

    কালিংপঙের কালিঝোরার পিডব্লুডির বাংলোতে আমরা পৌঁছালাম বেলা এগারোটা নাগাদ। বাংলোটা পাহাড়ের ওপর, সামনে বেশ কিছুটা বাঁধানো রাস্তা। দুপাশে সুন্দর ফুলের বাগান। আমি লক্ষ্য করলাম এখানকার লজ্জাবতী গাছের পাতাগুলো সমতলের লজ্জাবতীর গাছের তুলনায় বেশ বড় আর বেশ বড় বড় বেগুনী ফুলও হয়ে আছে গাছগুলোতে। ছেলেদের দেখাবো বলে যেই পাতা ছুঁয়ে পাতার মুড়ে যাওয়া দেখাতে গেছি দেখি ফুলের মধ্যে থেকে একটা অচেনা সাপ ফনা তুলেছে। ছেলে দুটোকে নিয়ে ছুটছি সেই বাঁধানো রাস্তা ধরে বাংলোর দিকে। সাপটাও হিস হিস আওয়াজ করতে করতে ছুটছে সেই বাগান ধরে, তারপর বাগানে মিলিয়ে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে বাংলোতে এসে ঘটনাটা বলতেই বাংলোর নেপালী কুক কাম চৌকিদার বাহাদুর বলল এসব পাহাড়ী সাপ খুবই বিষাক্ত। ছোঁবল মেরে যদি বিষ ঢেলে দেয় তো মৃত্যু ছাড়া গতি নেই কারণ পাহাড়ের এই প্রত্যন্ত এলাকাতে নৈসর্গিক দৃশ্য যতই মনোরম হোক না কেন কোন চিকিৎসালয়ই এখানে নেই। একটা সামান্য দেশলাই আনতেও এখন থেকে একমাইল পথ যেতে হয়, সেখানে ডাক্তার বা ওষুধ এসব তো দূরের কথা। আমার স্বামী তো খুব বকাবকি করলেন সবসময় আমি গাছপাতায় হাত দিয়ে ছেলেদের উদ্ভিদের অনেক জিনিস বোঝাই বলে। কি করবো উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার জন্যে ছেলেদের গাছপালা দেখিয়ে প্রাকৃতিকে যতদূর সম্ভব বোঝাতে চেষ্টা করি। 

     দুপুরে বেশ ভাল রকম খাওয়াদাওয়া হল। আমার স্বামী সমস্ত রকম জিনিসপত্র কিনেই বাংলোতে ঢুকেছিলেন। বাহাদুর দারুণ রান্নাও করেছিল। খাওয়ার পর বাহাদুর ঘুরে-ঘুরে সুবিশাল বাংলোটা আমাদের দেখালো। বড় ছেলে একটা ছোট্ট ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল। বাহাদুর ছুটে এসে তার হাত ধরে টেনে বলল, “মুন্না, উধারসে মত যানা, ও ধারমে ভূত রহতা হ্যায়।” বড় ছেলে তো ভূতের ভয়ে আমাকে জাপটে ধরল। ছোট ছেলে খুব সাহসী, ও বলল, “মা ভূত দেখবো।” ওর বাবা তাড়াতাড়ি ওদের টেনে অন্যপাশে নিয়ে গেলেন। আমার কিন্তু মনে ভীষণ কৌতূহল হতে লাগল। তারপর নির্ধারিত রুমে এসে ছেলেদুটো ও স্বামী ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমার চোখে ঘুম নেই। আমি কিচেনে গিয়ে বাহাদুরকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাহাদুর, উসকে ঘরমে ঘোস্ট রহে গা, ডরো নেহি, সাচ বাতাও মুঝে।”

বাহাদুর খুব জোর দিয়ে বলে, “ঝুট নেহি, সাচ বাত হ্যায় মেমসাব, উস রুম পে এক আদমী কা ঘোস্ট থা।” তারপর ও যে ঘটনা বর্ণনা করল শুনে আমি এক্কেবারে তাজ্জব বনে গেলাম। 

      এক বটানীর তরুণ লেকচারার চার বছর আগে এই বাংলোতে এসেছিলেন তাঁর এক বন্ধুর সুপারিশে। তিনি তাঁর গবেষণার জন্যে নানান গাছ-গাছড়া রোজ সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তিনি ঐ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান এবং তারপর থেকেই ভূত হয়ে নাকি এই ঘরে রয়ে গেছেন। ঐ ঘরে তাঁর অনেক কাগজপত্র এখনও রয়েছে। আমি সব কিছু শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না, হেসেই উড়িয়ে দিলাম ওর কথা।

       রাত্রিবেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে পা টিপে টিপে ঢুকলাম সেই নিষিদ্ধ ঘরটায়। ঘরে ঢুকতেই একটা জোরালো হাওয়া গায়ে লাগল, এবার একটু ভয় পেয়ে গেলাম। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে একজন মাঝবয়সী লোক নাকি সুরে বলে উঠল, “কিঁরে আঁমায় চিঁনতে পাঁরছিস? আঁমি ইঁউনিভার্সিটিতে তোঁর ব্যাঁচ মেঁট পুঁলক রেঁ?” শুনে আমি মোটেই পুলকিত হলাম না, বরং বেশ ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, “পুলক তুই, তা এখান কি করছিস?” 

পুলকের ভূত বলল, “আঁমি এঁখানে এঁসেছিলাম এঁকটা রেঁয়ার প্রঁজাতির ফাঁর্নের খোঁজে, পেঁয়েওছিলাম, এঁই ফাঁর্নটার পাঁতার রঁস অঁনেকগুলো রোঁগের ওঁষুধ, বেঁশ কঁয়েকটা রোঁগের উঁপশম হঁবে খেঁলে, কিঁন্তু এঁই প্রঁজাতিটা এঁখনও অঁনাবিষ্কৃতই রঁয়ে গেঁছে রেঁ। কিঁন্তু আঁমার সঁব পেঁপারস এঁখানে রঁয়েছে। এঁগুলো নিঁয়ে আঁমায় মুঁক্ত কঁর প্লিঁজ রঁমু। আঁমার সঁব পেঁপারস তুঁই ইঁউনিভার্সিটিতে গিঁয়ে আঁমার গাঁইড ডঃ বিঁকাশকলি কুঁশারীর হাঁতে দিঁবি। তুঁই তোঁ চিঁনিস বিঁকাশ স্যাঁরকে। কোঁন বিঁশ্বাসযোগ্য লোঁক পাঁচ্ছিলাম নাঁ যেঁ কাঁগজগুলো তাঁর হাঁতে দেঁব। আঁমি জাঁনি তুঁই এঁই পেঁপারগুলোর কঁদর ঠিঁক বুঁঝবি, আঁর তুঁই এঁগুলো ঠিঁক জাঁয়গায় পৌঁছে দিঁবি। এঁগুলো ঠিঁক জাঁয়গায় পৌঁছে দিঁয়ে আঁমায় বাঁচা। তুঁই আঁমায় বাঁচা? এঁই নেঁ আঁমার সঁব পেঁপারস, ধঁর।”

       আমি কি করে ভূতকে বাঁচাবো বুঝতে পারলাম না, ভূত যে মরে গিয়েও বাঁচতে চায় এই প্রথম উপলব্ধি করলাম। বললাম, “ঠিক আছে, তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক পৌঁছে দেবো, কথা দিলাম।” 

-আঃঁ তুঁই আঁমায় বাঁচালি আঁমার আঁত্মাকে মুঁক্ত কঁরার কঁথা দিঁয়ে।

পুলক ভূতকে বাঁচানোর শপথ নিয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করতে করতে ঘরে এসে ওর সব কাগজপত্র সুটকেসের তলায় কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখলাম।

      কলকাতায় ছেলেদের নিয়ে ফিরে গেলাম। আমার স্বামী নর্থ বেঙ্গলে রয়ে গেলেন। ফিরেই ইউনিভার্সিটি গিয়ে বিকাশ স্যারের সঙ্গে দেখা করে পুলকের সব কাগজপত্র দিলাম। পেপারসগুলি পেয়ে স্যার ভীষণ পুলকিত হলেন। কিন্তু আমি ঘটনাটা এড়িয়ে গিয়ে বললাম যে ঐ কালিঝোরা বাংলোর একটা ঘর থেকে পেয়েছি। ওখানেই পুলকের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে সেকথা স্যার জানতেন। স্যার আমাকে বললেন, “তুমি যে কি অমূল্য সম্পদ এনে দিলে তুমি জানো না। পুলক ওর জীবনে গবেষণাকেই ধ্যান জ্ঞান করেছিল, বড় মর্মান্তিক ওর মৃত্যু। ওর নামেই আমি এই অজানা ফার্নের নাম দেবো, যাতে ওর মৃত্যুর পরেও ও অমর হয়ে থাকবে।”

      স্যারকে সব জমা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে দেখি আমার নাম ধরে কে নাকি সুরে ডাকছে, বুঝলাম পুলকের গলা। বললাম, “পুলক আমি তো স্যারকে জমা দিয়েছি, স্যার তোর নামেই ঐ অচেনা ফার্ন গাছটাকে বিশ্বের মাঝে পরিচিতি দেবেন বলেছেন।”

      পুলক বলে, “জাঁনি জাঁনি, সঁব শুঁনেছি। তোঁর সাঁথে ঐঁ পেঁপারগুলোর সঁঙ্গে আঁমার অঁশরীরী আঁত্মাও ঘুঁরে বেঁড়িয়েছে। এঁবার আঁমার মুঁক্তি। তাঁই তোঁর সঁঙ্গে শেঁষ দেঁখা কঁরতে এঁলাম। তুঁই এঁইটা নেঁ।”                    

          একটা খুব মলিন মানিব্যাগ পুলক আমার হাতের মধ্যে জোর করে গুঁজে দিল। কি ঠাণ্ডা পুলকের হাত। আমার তো হাড় হিম হয়ে গেল। ভয়ে তো কথাই বলতে পারলাম না। পুলক বলল, “মাঁনিব্যাগ যাঁ আঁছে তোঁদের ছেঁলেদের জাঁমা প্যাঁন্ট আঁর তোঁর এঁকটা ভাঁল শাঁড়ি হঁয়ে যাঁবে। তুঁই নাঁ কঁরিস নাঁ। আঁমার এঁত বঁড় উঁপকারের এঁই গিঁফটটা তোঁকে দিঁয়ে আঁমি নিঁশ্চিন্তে আঁমার আঁত্মাকে মুঁক্ত কঁরতে পাঁরব।” 

       এই বলে আমায় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পুলক হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

       আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তারপর কিন্তু সত্যিই আর পুলকের আত্মা কোনদিন আসে নি আমায় বিরক্ত করতে। ভূতের কাছ থেকে গিফট পাওয়ার মত স্মরণীয় ঘটনা আমার মনে চিরজীবনের মত গাঁথা হয়ে থাকল। 

প্রাবন্ধিক রামপ্রসাদ সরকার -এর একটি প্রবন্ধ




রমাপদ চৌধুরী 

(জন্ম ১৯২২, প্রয়াণ ২০১৮)

(বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক প্রয়াত রামপাদ চৌধুরী গত মাসের ২৯ জুলাই, ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ করেছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছি একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে) 




প্রথম উপন্যাস পড়ার অনুভূতি





রেলওয়ে শহর খড়গপুরে স্কুল-জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটেছে তাঁর। পিতার কর্মসূত্রে খড়গপুরে থাকা। আমারও জন্ম, শিক্ষাদীক্ষা সবই সেই রেলওয়ে শহরে। রেলওয়ে কলোনিতে যে বাংলোয় (তখন ওঁদের বাংলোটিই একমাত্র দোতলা ছিল) ওঁরা থাকতেন তার ক’টা বাড়ির পরেই ছিল আমাদের রেলওয়ে কোয়ার্টার। উনি যে রেলওয়ে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন— আমার অগ্রজ, আমিও সেই স্কুলে পড়াশোনা করেছি।

তখন আমাদের যৌবনের সন্ধিক্ষণ। হাতে এলো তাঁর প্রথম উপন‌্যাস ‘প্রথম প্রহর’। বইটি পেয়ে সে কী উন্মাদনা। পাতা উল্টে দেখি এ যে আমাদেরই নিয়ে লেখা— রেলওয়ে শহর খড়গপুরের একটা ছোটখাটো ইতিহাস। তারপর সে বই পড়ে দু’-তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। আনন্দ-বেদনার আতিশয‌্যে ছটফট করেছি। এক অনন‌্য অনুভূতিতে মন ভরে উঠেছে।


।।দুই।।

রমাপদ চৌধুরী তাঁর প্রথম উপন‌্যাস “প্রথম প্রহর” লেখেন ১৯৫৪ সালে। সেটি আমি পড়ার সুযোগ পাই ১৯৫৮ সালে, সবে স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছি। সেই আমার উপন‌্যাস পড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা যার অনুভূতির রেশ আজও আমার মণিকোঠায় জাজ্বল‌্যমান। তার কিছু স্মৃতিচারণ করব। সেদিন বইটা হাতে পেয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে রোমাঞ্চিত, শিহরিত হয়েছিলাম। এক অনাস্বাদিত প্রাপ্তিতে মনটা ভরে উঠছিল। উপন‌্যাসটির শুরু সেদিন আমার কিশোর মনে দোলা এনে দিয়েছিল।

লেখকের কথায়— “আলো-ঝলমল স্টেশনে এসে ট্রেন থামলো। পানিপাঁড়েটা বোধহ চিৎকার করে স্টেশনের নাম ঘোষণা করলো। সেই অনেক-চেনা নাম।”

সুদীর্ঘ একটি যুগ পার হয়ে গেছে, এ নাম শুনিনি বহুদিন, এ বাতাসে নিঃশ্বাস নিইনি কতকাল। জানালায় মুখ বাড়িয়ে যেন শৈশবের, প্রথম যৌবনের স্পর্শ নিতে চাইলো মন। তন্ন তন্ন করে কি যেন খুঁজলাম। না, সব বদলে গেছে। পুরোনো দিনের স্মৃতিকে বিদায় দিয়ে যেন নতুন ফুল ফোটাতে উন্মুখ হয়ে উঠেছে সেই ছোট্ট শহর। সেই ছোট্ট শহরটির নাম খড়গপুর—লেখকের জন্মভূমি, আমারও। আবাল‌্যের স্মৃতি জড়িয়ে আছে যে শহরের অলিতিগলিতে। স্টেশনে ট্রেনের কামরায় লেখকের সঙ্গে, এক সুবেশা সৌন্দর্যময়ীর দেখা। তাকে তিনি চিনেও চিনতে পারেন নি। অথচ নারীটি অনায়াসে লেখকের ডাক নাম ধরে ডেকে বলল, “তিমুদা না?” হঠাৎ দেখা নারীটি লেখকের কাছে অপরিচিতাই রয়ে গেলেন, বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা সেদিন আমার কিশোর মনে ঔৎসুক‌্যের ছায়া ফেলেছিল।


।।তিন।।

লেখকের ব‌্যর্থ প্রেম সেদিন আমার কিশোর মনে জ্বালা ধরিয়েছিল। লেখক পান্নাকে ভালবেসেছিলেন। তার প্রকাশ ঘটলো লেখকের কথায়—“পূজোর সময় রাত জেগে যাত্রা দেখছিলাম। হঠাৎ লক্ষ‌্য করলাম, পান্না ডাকছে। কাছে যেতেই বললে, আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে?

—চলো।

নির্জন রাস্তায় বেরিয়ে চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে চলেছিল.....

দেওদার গাছের নির্জন অন্ধকারটুকু পার হয়েই পান্নাদের বাড়ি, প্রায় পৌঁছে গেছি তখন।

তারপর হঠাৎ ফিরে দাঁড়ালো।

সমস্ত শরীরে কি এক উষ্ণতা বোধ করলাম।

কি এক অদৃশ‌্য প্রবৃত্তি। উন্মাদের মতো কাছে টেনে নিলাম, বুকে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। —ছাড়ো তিমুদা, ছেড়ে দাও। ফিসফিস করে পান্না বললে। তবু সে কথা যেন স্পর্শ করলো না আমাকে।

চুম্বনের মধ‌্যে যে এমন এক অদ্ভুত আনন্দ, এমন এক বিচিত্র অনুভূতি, কে জানতো। কে জানতো নারীবক্ষের কোমল স্পর্শে এমন বিচিত্র উন্মাদনা জাগে।

আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পেয়েই ছুটে পালালো পান্না।’

লেখকের শীতের রাতে ভীরু অভিসারের কথা পড়ে আমার কিশোর মনে এক অজানা অনুভূতির ছোঁয়া লেগেছিল। লেখকের বর্ণনায়—

“একে একে সব আলো নিভে যেতো। কাঠের সিঁড়িতে শব্দ হতো। তারপর একসময় টের পেতাম, মা, বাবা, সেজদি সকলে শুয়ে পড়েছে। চারদিক নিঃশব্দ আর অন্ধকার।

প্রচণ্ড শীতে গরম চাদরটা গায়ে জড়িয়ে এসে অপেক্ষা করতাম বাগানের এক কোণে, শিউলি গাছটার তলায়।

সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আর ঠান্ডা হাওয়ার দাপট। 

প্রতীক্ষার কাল গুণে গুণে হয়তো অধৈর্য হয়ে উঠেছিলাম। পায়চারি করতে করতে কেবলই তাকাচ্ছিলাম পান্নাদের বাড়িটার দিকে।

হঠাৎ নিঃশব্দে কপাট খুললো। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো পান্না।

কাছে আসতেই বিস্মিত হলাম।

—এ কি? গরম জামা গায়ে দাওনি? চাদর নাওনি কেন?

পান্না শীতে কাঁপতে কাঁপতে বললে, গরম জামা চাদর সব মা-র ঘরে। আনতে গেলেই ঘুম ভেঙে যাবে।

বললাম, তবে চলো আমার ঘরে।

না, না। প্রতিবাদ করে উঠলো পান্না।

হাসলাম—এত অবিশ্বাস?

কৌতুকের চোখ তুলে তাকালো ও মৃদু হেসে বললে, অবিশ্বাস তোমাকে নয়।

বলেই আমার চাদরের আধখানা টেনে নিয়ে গায়ে জড়ালে।

বুকের আরো কাছে পেলাম। এত কাছে বোধহয় আর কোনদিন পাইনি।

অথচ কতো স্বপ্নই না বুনতাম ওকে ঘিরে। কল্পনার রঙ ওরও মনে কম ছিল না।

তারপর হঠাৎ একদিন কান্নায় ভেঙে পড়লো। কোনো কথা বললে না, কোনো কারণ জানালো না, শুধু কাঁদলো আর কাঁদলো।”

অনুসন্ধান করে লেখক জানতে পারলেন, পান্নার বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে উপাধ‌্যায়ের ছেলে অজয়ের সঙ্গে। লেখকদের বাগানেই বিয়ের মেরাপ বাঁধা হবে। লেখক কোনো কথা বলতে পারেননি। তাঁর সমস্ত বুক যেন ব‌্যথায় ভেঙে পড়েছিল।

বিয়ের দিন আলো ঝলমল করে উঠেছিল চারিদিক। লাল সামিয়ানার গায়ে যেন সলমা-চুমকির চমক। সমস্ত পৃথিবী যেন খুশিতে উছলে উঠেছিল। লেখকের চোখে শুধু কান্না আর কান্না।

লেখকের ভাষায়—

“আর আমার চোখে শুধু কান্না। এ এক অবাধ‌্য ব‌্যথা। ব‌্যর্থতার বেদনা, অভিমানের পাথর যেন চেপে বসেছিল বুকের ওপর।” লেখকের পান্নাকে না পাবার বেদনা, ব‌্যর্থতার গ্লানি, অভিমানের বোঝা সেদিন আমার কিশোর মনেও বিষাদের ছায়া ফেলেছিল।


।।চার।।

সেই বয়সে লেখকের চুরি করে বিলাইতির স্নানের দৃশ‌্য দেখার যে বর্ণনা বইটিতে তুলে ধরেছেন তা পড়ে আমার কিশোর মন রোমাঞ্চিত হয়েছিল।

তাহলে লেখকের কথায় আসি—

“— শালাই আছে বাবুজী?

কথাটা স্পষ্ট মনে আছে আজও। দেশলাই চেয়েছিল বিলাইতি, আর ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলাম।

ভোর বেলায় ঘুম ভাঙতেই নীচে নেমে এসে উঠোনের কলে মুখে-চোখে জল দিচ্ছিলাম।

পাশে কে বাসন মাজছে লক্ষ‌্য‌ করিনি।

......পুরোনো রাউতানিটা যে চলে গেছে, নতুন কেউ এসেছে, তা জানতাম না।

উনোন ধরাবার জন‌্যেই হয়তো দেশলাই চেয়েছিল সে।

বাবার পকেট থেকে দেশলাইটা এনে দিলাম।

দেশলাইটা হাত পেতে নেবার সময় কেমন এক রহস‌্যের চোখে তাকালো বিলাইতি। তারপর ঠোঁটের হাসি চেপে রেখে উনোন ধরাতে চলে গেল। 

নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেল আমার মনে।

স্বপ্ন বুনতাম মনে মনে কখনো পান্নাকে ঘিরে, কখনো বিলাইতিকে ঘিরে।

মনে আছে, সকালের কাজ শেষ করে চলে যাবার আগে উঠোনের কলে স্নান করতো বিলাইতি। আর সেই সময়টুকুর জন‌্যে দোতলার জাফরির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি।

লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম বিলাইতির যৌবন জোয়ারের ছন্দ। নিটোল দুটি স্তনের মধ‌্যে পৃথিবীর রহস‌্য অনুভব করতাম।

যৌবনে এমন এক নির্বোধ মুহূর্ত আসে, যখন নিজের হাত রুচির বশ‌্যতা স্বীকার করে না।

তেমনি এক নির্বোধ মুহূর্তের অসংযমকে খিলখিল করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল বিলাইতি।

এ যেন অতি তুচ্ছ নগণ‌্য এক পাগলামি। হেসে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করবার নয়, এমনি ভাবেই খিলখিল করে হেসে উঠেছিল বিলাইতি।

লজ্জায় আত্মধিক্কারে পালিয়ে এসেছিলাম।

লেখকের এই স্বীকারোক্তি পড়ে সদ‌্য যৌবনের চৌকাঠে পা দেওয়া আমি সেদিন রাতে ঘুমুতে পারিনি।


।।পাঁচ।।

আজ বয়সের প্রান্ত-সীমায় এসে ভাবি, যৌবনের সেই উন্মাদনা আজ আর নেই ঠিকই, তবু আজও তাঁর লেখা “প্রথম প্রহর” পড়লে বাতাসটা বড্ড ভারি ভারি লাগে, বুকের ভেতরটা ব‌্যথায় চিনচিন করে ওঠে, হয়তো বা পান্নার কথা ভেবে, নতুবা যেসব চরিত্রের কথা আমি এ লেখায় তুলে ধরিনি তাদের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে বলে। লেখক যেসব চরিত্র চিত্রিত করেছেন, বাস্তবে তাঁরা ছিলেন ঠিকই,লেখক তাঁর কলমের জাদুতে তাঁদের গ্রহণীয় ও বরণীয় করে তুলছেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। আমার কাকা খড়গপুরে গোলবাজারে বাঙালি দুর্গা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গোড়াপত্তনের দিন থেকে। কোনো এক বছর দুর্গা মন্দিরে ইলেকট্রিক আলো লাগাতে গিয়ে তড়িতাহত হন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরো দু-তিনজন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কেউ একজন এসে সুইচ বন্ধ করে দেয়। কাকারা প্রাণে বেঁচে যান, কিন্তু কাকার ডান হাতটা চিরতরে অকেজো হয়ে যায়। এই ঘটনা লেখক “নিমাইদা”র চরিত্রের মাধ‌্যমে তুলে ধরেছেন। এই রকম আরও উদাহরণ আছে যা লিখে বোঝা ভারি করতে চাই না।

লেখক বয়োপ্রান্তে এসে স্মৃতিচারণ মূলক রচনা “হারানো খাতা” ধারাবাহিক ভেবে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। লেখাটি আবার আমায় খড়গপুরে ফেলে আসা দিনগুলোয় নিয়ে যায়। তাঁর এই লেখাটি পড়ে এতো বেশি সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ি যে ওঁর সঙ্গে ফোনে কথা না বলে পারিনি। ফোন করার আগে মনে দ্বিধা ও সংকোচ ছিল, অত বড় মাপের মানুষ ফোনে যদি কথা না বলেন। উনিই ফোনটা ধরেছিলেন। পরিচয় দিতে খড়গপুরের কতো কথাই না জিজ্ঞেস করলেন। আমার কাকার খবরও নিলেন। বুঝলাম তাঁর হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে খড়গপুরের স্মৃতি এখনও জাজ্বল‌্যমান।


।।ছয়।।

দীর্ঘ দিন আমি খড়গপুর ছাড়া হলেও আমার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি এখনও মানসপটে ভেসে ওঠে। কার্যকারণে খড়গপুরে গেলে স্মৃতির সরণি বেয়ে হারানো দিনগুলোকে খুঁজে ফিরি।

গোলাবাজারে বাঙালি দুর্গা মন্দিরে এসে কি যেন তন্ন তন্ন করে খুঁজি। পেছন দিকের কুয়োর পাড়ে যখন আসি, তখনই মনে হয় সদাশিব জ‌্যাঠা তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে তুলসীদাস রামায়ণ থেকে পাঠ করছেন—

পহেলা প্রহরমে সবকোই জাগে

দোসরা প্রহরমে ভোগী।

তিসরা প্রহরমে তস্কর জাগে

চৌঠা প্রহরমে যোগী।।

লেখক সুমন সাহা -এর একটি মুক্ত গদ্য

 গোপন ঢেউ


আধোঘুমে বিশ্রামে তুমি উদাসীন হবার পরেত্তে বা'পকেটে কৌতূহল নিয়া তোমাদের বাসার বাউন্ডারি দেয়াল পেরিয়ে অনেক ভাবনার খসড়া করা গ্যাছে।...


গ্রাম্য সোঁদা মাটির গন্ধ কিছু শব্দ ভাবে। লিখে না। সেই শব্দগুলা তোমার অনুমতি চোখ ডাকলেই যায়। গিয়ে― থরোথরো প্রেমে আর জ্বরে ভুগে কিছুদিন বিছানা লয়ে―তোমারেই ভাবে।



লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প

 গরীবের ভূত

                              


একদা একটা গ্রামের ঘটনার কথা আজ বলব৷

ঘটনাটি শুনেছিলাম অবশ্য ঐ গ্রামের কিছু বয়স্কদের কাছ থেকে৷ গ্রামটির নাম লাভপুর৷

বীরভূম জেলার অন্তর্গত এই গ্রামটি খুব একটা বড়োও নয়, আবার খুব একটা ছোটও নয়৷ মোটামুটি একটা বটে৷ এই গ্রামে কিছু ধনী পরিবার, কিছু মাঝারি পরিবার এবং কিছু দরিদ্র পরিবারও ছিল৷ প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী গ্রামের ধনী ব্যক্তিরা সর্বদায় পদতলে অবদমন করে রাখত, অত্যাচার করত গরীবদের উপর৷ এমনকি তখন জমিদারী প্রথাও প্রচলন ছিল৷ ফলে ধনীরা আরও ধনী ও গরীবরা আরও গরীব হতে লাগল৷


      এই গ্রামেই বাস করত এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ৷

তার নাম কানু চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণ৷ তার কোনো বউ, ছেলে-মেয়ে ছিল না৷ ফলে সে একা অতি দারিদ্রতার সঙ্গে জীবন যাপন করত৷ ঐ গ্রামে একটা বড় এবং পুরাতন কালী মন্দির ছিল৷ সেখানেই সে নিত্য কালীপূজায় রত থাকত৷ আর সঙ্গে কিছু যজমানগিরি করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করত৷


   ব্রাহ্মণটি অবশ্য সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করত৷ সবার সাথে সৎ আচরণও করত৷ অবশ্য অন্যান্য সবাই ব্রাহ্মণটির সাথে ভালো আচরণ করত, ব্রাহ্মণটিকে শ্রদ্ধাও করত৷ এমনকি ব্রাহ্মণের অধিকাংশ কথা গ্রামের মানুষ জন মেনে চলত৷ ব্রাহ্মণটিও মনে মনে ভাবত গ্রামের লোকজন তাকে এই ভাবেই সহযোগীতা করে যাবে সারাজীবন৷ কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল? থাক সে কথা, পরে আসছি৷


                       হঠাৎ ঐ গ্রামে একটা ঘটনা ঘটে গেল৷ ঘটনাটি হল এই, ঐ গ্রামের এক জমীদার, নাম তার বীররাম চৌধুরি৷ সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে খুশি মনে বাড়ি ফিরছিল৷

সঙ্গে ছিল তার লোকজন তথা নায়েব, পনেরো জন লেঠেল, পনেরো জন অশ্বারোহী ইত্যাদি৷

এখানে বলে রাখি এই গ্রামের সাথে অন্য গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটি ছিল বাঁশ বনে ঘেরা এক বন্য পথ৷ এখানে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার আগেই যেন সন্ধ্যা নেমে আসে৷ বীররাম চৌধুরি আজ কুড়ি দিন পর নিজের গ্রামে ফিরছে৷ মন তার বড়ই আনন্দে আপ্লুত, এটা যে শুধু বাড়ি ফেরার তাগিদেই নয়, বরং সে বাণিজ্যে ভালো মুনাফা অর্জন করেছে৷

     

   সে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ সে যখন গ্রামের বড় রাস্তার মুখে এল, তখন সে দেখল রাস্তার একধারে তাদের থেকে পঞ্চাশ - ষাট হাত দূরে ডানদিকে বাঁশ ঝোপের আড়ালে সাদা কাপড় পরাহিত একটা কী দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সবার মধ্যে এক ভীতির সঞ্চার ঘটল৷ বীররাম চৌধুরি নামে বীর হলে কী হবে? সে ভূতকে খুব ভয় পেত৷ তারা অবশ্য এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সেখানে দাঁড়িয়ে পরেছিল৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ মুর্তিটি তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল৷

তাকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে সবাই দে-দার

ছুট দিল৷ বীররামের লোকজন সমস্ত বাণিজ্যের জিনিস ফেলে পালিয়ে গেল যে যেখানে খুশি৷

           

                          পরদিন সকালে গ্রামের এই খবর প্রচার হয়ে গেল৷ জমিদার বীররাম চৌধুরি সকাল বেলাতেই ঐ দু'দিক বাঁশবন ঘেরা পথে তার ফেলে আসা বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলি আনার জন্য লোক পাঠাল৷ কিন্তু তার লোকজন সেখানে গিয়ে কোন জিনিসের হদিশ পেল না৷ ফলে ঐ জমিদার খুব চিন্তায় পরে গেল৷

   

   এই ভাবে কেটে গেল কয়েকদিন৷ ঐ রাস্তা ধরে অবশ্য গ্রামের লোকেরা সন্ধ্যার পর কোথাও যায় না৷ তবে কিছুদিন পরই আবার ঐ একই ঘটনা ঘটল৷ ঐ গ্রামেরই আর এক জমীদার

তার নাম ঘনশ্যাম মিত্র, সেও বীররামের মত অন্য এক গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে ফিরছিল তিরিশ দিন পর৷ তখনও ছিল সন্ধ্যার সময়, আর একই ঘটনায় ঘটল৷ কি একটা সাদা কাপড় পড়া জিনিস দেখে তারা ভয়ে পালিয়ে এসেছে নিজেদের বাণিজ্যের জিনিস পত্রও হারিয়েছে বীররামের মতোই৷

         এই ঘটনাটি পুনরাবৃত্তি হওয়ার জন্য গ্রামে একটা হই হই উত্তেজনার সৃষ্টি হল৷ গ্রামবাসীরা সকলেই ভয় পেল এবং সকলের মনে একটা কৌতুহল বাসা বাঁধল৷ সবাই ঐ ব্রাহ্মণ টির কাছে পরামর্শ নিতে গেল৷

       গ্রামের একজন লোক বলে উঠল, আচ্ছা পন্ডিত মশাই ঐ জিনিস টা আসলে কি বলুন তো?

ব্রাহ্মণটিও বলল, হতে পারে কোন ভৌতিক লীলার খেলা!

আবার একজন লোক বলল, যদি ভৌতিক লীলার খেলা হয় তাহলে বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলো নিল কে? ভূতেরা তো আর টাকা-পয়সা নেয় না!

কি জানি? ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল,

যদি অলৌকিক কিছু থেকে থাকে, তাহলে ঐ রাস্তায় দিকে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

     গ্রামের দুজন সাহসী জোয়ান ছেলে নাম হল 

তাদের এক জগন্নাথ ডোম আর একজন হল রঘুনাথ ডোম, এদের সাহসীকতার নজির সর্বত্র৷

সমাজের বিভিন্ন কাজে এরা সকলকে সাহায্যও করেছে৷ এককালীন এই গ্রামে জগা ডাকাত নামে এক নৃশংস ডাকাতের উপদ্রব ছিল৷ এরা এই ডাকাতকে মেরে গ্রামের কাছ প্রচুর সম্মানও অর্জন করেছিল৷ তারপর থেকে এরা দুজন গ্রামের চৌকিদারের পদ অর্জন করল৷

                           এই ঘটনার বাড়বাড়ন্ত দেখে 

উভয়'ই একটু উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল, আচ্ছা

চাটুজ্যে মশাই আমরা দুজনে যদি একবার দেখে আসি জিনিসটা কি? তাহলে কেমন হয়?

            

                       ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ অলৌকিক শক্তির কাছে লৌকিক শক্তির সর্বদায় হারই হয়৷ তাই সেখানে তোমাদের নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিতে যাওয়াটা মূর্খামির সামিল৷

কি জানি কি থেকে কি হয়ে যাবে? তাই তোমাদের সেখানে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

   

                    কিন্তু এইভাবে কি চলতে দেওয়া যায় বলুন তো, রঘুনাথ ডোম বলে উঠল৷

না না আপনি যায় বলেন না কেন আমরা একবার জিনিসটা দেখতে চায়!

                তখন ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ সেখানে যাওয়া মানে জীবন নিয়ে টানাটানি৷

এবার তোমরা দুজনে যখন সাহস নিয়ে যেতে চাইছ তখন যেতে পার৷ কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে তোমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু গ্রাম বাসীরা তোমাদের জন্য দায়ী থাকবে না৷


     ব্রাহ্মণটির বাড়ন সত্ত্বেও তারা দুজনে ঠিক করে নিল তারা যাবেই৷ তাতে তাদের যা হয় হোক৷ এই বলে তারা মন্দির থেকে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল৷ বিকেলের দিকে দু'জন মিলে যুক্তি করল সেখানে সন্ধ্যায় যাওয়ার জন্য তারা কি কি করবে এই বিষয়ে৷


                             পড়ন্ত সন্ধ্যায় তারা দু'জনে

হাতে মোটা মোটা দুটি লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পরল এবং দু'জনেই এগিয়ে চলল বড়ো রাস্তার দিকে৷

সেই রাস্তায় তারা পৌঁছে কোথাও কিছু দেখতে পেল না৷

       আষাঢ় মাস, দুপুর থেকেই আকাশে মেঘ জমেছে৷ এই সন্ধ্যার দিকে হাল্কাভাবে একটু ঝড়ও দিতে লেগেছে৷ কোথাও কিছু নেই দেখে তারা দুজনে মনে মনে ভাবল সবাই মিথ্যা গুজব রটিয়েছে এবং সেই সময় বৃষ্টি নামার আশঙ্কা বুঝতে পেরে নিজের গ্রামের দিকে ফিরতে চাইল৷ ঠিক তখনই তারা একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরল৷


         আরে ওটা কি? জগন্নাথ বলে উঠল৷

তারা দুজনই দেখল একটা সাদা কাপড় পরাহিত মুর্তি তাদের সামনে কুড়ি - পঁচিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷


             তারা একটু ভয়ও পেল অবশ্য৷ কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটা দমকা হাওয়া দিল আর ঐ মূর্তিটির গা থেকে সাদা কাপড়টি উড়ে গেল, তারপর সব পর্দা ফাঁস৷

                   মূর্তির ভিতর থেকে যে স্বরূপটি বেরিয়ে এল সে আর কেউ নয়, তাঁদেরই গ্রামের ব্রাহ্মণ কানু চাটুজ্যে৷

           তখন তারা রেগে গিয়ে ব্রাহ্মণটিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে করাঘাত করল৷ আর বলল এগুলি তাহলে আপনারই কারসাজি?

        

                     আজ্ঞে হ্যাঁ, ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল, দেখ আমি তো খুব গরীব মানুষ তোমরা তো সবই জান? কি করব বলো এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায়ও ছিল না৷ জীবিকা অর্জনের জন্য আমাকে এটা করতেই হত৷ তাছাড়া আমি জানতাম মানুষ ভূতকে ভয় পাই, তাই যদি ঐ নিষ্ঠুর জমিদার গুলিকে ভয় দেখিয়ে যদি তাদের মালপত্র লুট করা যায় তাহলে সেটাকে পাপ কাজ বলা যায় না৷ তাই আমি এই পথ ধরেছি৷


আমাকে ক্ষমা করে দাও, ব্রাহ্মণ আবার বলে উঠল৷ তোমরা যেন আমার এই স্বরূপের কথা গ্রামের কাউকে বলো না৷ আমি আর এই কাজ কোনদিনও করব না৷ আমাকে ছেড়ে দাও৷

    

                   তখন জগন্নাথ ডোম বলল, দেখুন আপনি যেই কাজটা করেছেন সেটি অন্যায়ের কাজ৷ এর জন্য আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে৷

এই বলে তারা দুজন ব্রাহ্মণটিকে ধরে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল এবং মন্দিরের একটি থামে বেঁধে রাখল৷

       সারা রাত তারা আর বাড়ি না ফিরে ব্রাহ্মণটিকে পাহারা দিতে লাগল৷ পরের দিন সকালে ব্রাহ্মণটির এই ঘটনার কথা সকলেই জানল৷ আর ব্রাহ্মণটির সাজাও হল৷

তবু আজও ঐ রাস্তায় সন্ধ্যার পর কেউ যায় না৷

লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প

 স্বার্থপর পৃথিবী


বাবাকে দাহ করে শশ্মান থেকে ফেরার পথে মিতালী ভাবলো এবার সে কি করবে? বাবার পেনসনের টাকা কটাতেই ওদের সংসার চলতো। মিতালীও দুটো বাচ্চাকে পড়াতো। ওর হাতখরচটা উঠে আসতো। একা নিঃসঙ্গ তরুণী মেয়ে বাড়িতে কি করে থাকবে? এবার বাবাও চলে গেল, Family Pension তো আরও কমে যাবে। মিতালী আর ভাবতে পারছেনা।

পাশের বাড়ির কাকিমা-জেঠিমারা ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু রাত হলেই তো যে যার বাড়ি চলে যাবে। রাত্রিতে কি করে থাকবে মিতালী? দু’চোখ ভরে নেমে আসে অশ্রুর বন‌্যা। সবাই মিলে মিতালীর বাবার শ্রাদ্ধ সমাধা করে দিলো। মিতালীর এক মামা বর্ধমান থাকে। ছোটবেলায় মিতালীকে খুব ভালবাসতো। এই দুঃসময়ে মামার কথা মনে পড়লো, অনেক চেষ্টা করে মামার ফোন নং জোগাড় করে মামাকে ফোন করলো। কিন্তু মামা কোন আগ্রহ দেখাল না। দশ দিনের মাথা মিতালী মামার কাছ থেকে ৫০০ টাকার Money Order অর্ডার পেলো।

অনেক ভেবে মিতালী বর্ধমান যাওয়া ঠিক করলো কিন্তু সেখানে পৌঁছে মিতালী অবাক হয়ে গেল। মামী ওকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। মামাতো বোন রিন্ধি ওর বাবাকে বললো— ‘কাজের এই মেয়েটাকে কোথা থেকে আনলে বাবা? ভালোই হয়েছে, মায়ের খাটুনী কিছুটা কমবে।’ মিতালীর বাবা আজ নেই বলে ওকে এখানে আসতে হলো। মামা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো— ‘ও তো মিনিদির মেয়ে। ওর বাবা মারা গেছে, তাই এখানে থাকতে এসেছে।’ মিতালীর চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এলো। মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে একটা পাথরের ওপর বসে পড়লো। এখন মিতালী কি করবে? কোথায় যাবে? ও কি আত্মহননের পথ বেছে নেবে? কে দেবে এর উত্তর?

কবি সম্রাট দে -এর একটি কবিতা

 গুটিয়ে রাখা নদী



একটা আস্ত নদী গুটিয়ে রেখেছি বুকপকেটের ভেতর। ভাঁজ ক'রে রাখিনি পরতে পরতে ক্ষয়ে যাওয়ার ভয়, কেটে যাওয়ার ভয় পিছু ছাড়েনি ব'লে। ধীর বহতা সেই নদীর উচ্ছ্বলতা বড়ই ম্লান, নিস্তরঙ্গ প্রায়। তবে যে সম্পদ নদীর গভীরতা বিদীর্ণ করেছে তাতেও তো কম নয় তার সম্মৃদ্ধি। তাই আজও মাঝেমাঝে গুটিয়ে রাখা নদী খুলে টানাটান ক'রে চোখজুড়নো স্বাদ নিয়ে মোহিত হই দীর্ঘদিনের অভ্যেসবশে। গুটিয়ে রাখা নদী খুললেই তার স্বভসবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্যে ভিজিয়ে দেয় বুকপকেট, ভিজে যায় অন্তহীন সময়ের প্রবেশদ্বার। কোনও এক কৃষ্ণগহ্বরের গ্রাস হবার ভয়ে গুটিয়ে রাখি নদী, সামলে রাখি বুকপকেটের উন্মুক্ত মুখ এবং পকেটের সীমাহীন জঠর...


কবি স্বপ্না বনিক -এর একটি কবিতা

 দোসর হতে পারিনি



সূর্য তোমায় উত্তপ্ত করলেও রাতের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় আপ্লুত ছিলে্ তুমি মৌন মুগ্ধতায়। 

আমার ভালবাসা যেন ছুঁয়ে থাকে তোমায় চাঁদের আলোর মতো নিবিড় স্নিগ্ধতায়। 

তোমার দোসর হতে পারিনি তবুও রয়েছে স্মরণে মননে ব্যস্ত দিবসের নিভৃত ক্ষণে ব্যর্থ প্রেমের অব্যক্ত যন্ত্রনায়। 


কবি সুনন্দ মন্ডল -এর একটি কবিতা

 পূর্ণিমায় রাখি 

            ‎ 


আমি হিন্দু, তুমি মুসলিম

তাতে নেই কোনো ক্ষতি।

সম্পর্ক যদি ভাইবোনের হয়

স্বয়ং বিধাতা দেবেন মতি।


রাখির সুতোয় জীবন বাঁধবো

তোমার মতো ভাইয়ের।

সে জাতিতে হোক না মুসলিম!

ভাই বলে ডেকেছি তাদের।


সহোদর ভাই থাকবে পাশে

তুমিও থেকো আদরে।

প্রীতির রাখি জড়াবো হাতে

পূর্ণিমার দিন সাদরে।

কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

 কি দোষ ছিল



আকাশে ঘন মেঘ

চারিদিকে ঘন অন্ধকার

বাতাসের ঘনঘটা বয়ছে,

মেঘের নীচে চাঁদ ঢাকা

ধীরে ধীরে বৃষ্টি নামছে,

মেঘেদের আনাগোনা বাড়ছে

থেমে থেমে শীতল হাওয়া বয়ছে।

উত্তরের জানালার কপাট টা নড়ছে

ঠিক এই মূহুর্তে একটা বিশাল শব্দ!

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।

বাহিরের নিম্ গাছটা নিত্তেজ 

বাজ পড়ে গাছটি শেষ?

বেঁধে ছিল একটা পাখি বাসা

মরে পড়ে আছে পাখিটি

গাছের তলায়!

এলোমেলো খড় ছিটিয়ে আছে

মনে হচ্ছে পাখিটি কাঁদছে।

গাছের তলায় তাকিয়ে দেখি

সবে ফোটা সদ্য বাচ্চা দুটি

মরে শক্ত কাঠ হয়ে গেছে।

কি কারণে জানিনা তাদের দোষ?

বিধির বিচার চেয়ে।

নীরব‌ সেই ভোরের সকালটা-

ভোর হলে যে পাখিটা

রোজ এসে বসতো আমার

এই নিম গাছের ডালে।

হঠাৎ একদিন বেঁধে ছিল সে

আমারই গাছেতে বাসা;

জানিনা কি কারণে এমন হলো!

প্রতিদিন ভোর আসে

আজও খালি আছে

সেই জায়গা!


কবি সুমিতা ঘোষ -এর একটি কবিতা

   স্বামী



জীবন পথের সাথী তুমি

অগ্নি সাক্ষী রেখে করেছ স্বীকার

স্ত্রীর গৌরব, সন্মান তুমি

করেছ সাথে থাকার অঙ্গীকার। 

তুমি শক্তি,, তুমি মুক্তি

গভীর অন্ধকারে আলোর কিরণ। 

তুমি অলংকার, তুমি অহংকার, 

সঙ্গীত মুখর রঙিন জীবন। 

তুমি আশা, ভালবাসা

জন্মান্তরের সাথ। 

হৃদয় সাম্রাজ্যের সম্রাট তুমি

আমরণ ধরে রেখো হাত। 

স্বামী হলো স্ত্রীর অর্ধাঙ্গ

সপরিবারেই নারী সম্পূর্ণ

যেমন রাধিকা বিহীন কৃষ্ণ

কৃষ্ণ বিহীন রাধা অসম্পূর্ণ। 


কবি সব্যসাচী মজুমদার -এর একটি কবিতা

 কুয়াশা



কিছুই জানি না রেণুটির

মনে নেই উড়ে যায় মানুষের

লিবিডোর কাছে



 ইঁদুরের দেহ 

বিবিধ ঋতুর জল চায়



আদিত্য বর্ণের কাক 

ওড়ে রমণী ঘাতক কুয়াশায়

কবি সুজিত রেজ -এর একটি কবিতা

 পুরুলিয়া



ঝালদা-হাঁড়িতে দু'টাকা কিলো চাল ফুটছে

অন্নপূর্ণা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে

গড় পঞ্চকোটের ভগ্ন স্তম্ভ চোঁয়া লাল জলে

আদিবাসী নৃত্যের তালে তালে


মহুয়া মাতালের পদক্ষেপে

দুর্গা ফলস্ ঝরে পড়ছে অস্ট্রিক শব্দমালায়


গরম পিচচুমায়

বান্দোয়ানের দলছুট হাতির পায়ে ফোস্কা-জ্বালা


রাঁচি-হাতিয়া এক্সপ্রেস থেকে

পিলপিল করে নেমে আসছে

শালপ্রাংশু দেশোয়ালি


অযোধ্যা পাহাড়ের পদচাতালে ঝুঁকে পড়া রোদ

শুষে নিচ্ছে রামের ছৌমুখোশ

কবি রানা জামান -এর একটি কবিতা

 ভালোবাসার অন্তর্নিহিত উত্তাপ

 


ভালোবাসায় অন্তর্নিহিত একটা উত্তাপ আছে

সেই অমোঘ উত্তাপে আবালবৃদ্ধবণিতা

হতে চায় উত্তপ্ত; নিষিদ্ধ গন্ধমের চেয়েও অপ্রতিরোধ্য

আকর্ষণ তাতে; আভাষ পেলেই শত শত লালপরী

নীলপরী চোখের পাতায়; রংধনুর সকল রং

তুলিতে কলমে রাবিন্দ্রিক জীবনানন্দীয় ছন্দ

আর কল্পনায় বৃন্দাবন

আপন গায়ের রক্তে লিখে ফেলা যায় অনায়াসে

শত শত প্রেমপত্র; ভেবে ভেবে মজনু, বা অষ্টম

এডওয়ার্ড হওয়া মামুলি ব্যাপার; তুড়িতে পাহাড়

কেটে রাজপ্রাসাদে দুধের গঙ্গা বইয়ে

দেয়া যায়; কয়েনের এপিট ওপিট পার্থক্যটা

বুঝে না কাব্যিক মন; ভালোমন্দের ব্যালান্সসিট

মগজে পায় না ঠাঁই; একমাত্র ইচ্ছে

বুনো ষাঁড়ের মতন ধায় সামনে; মরা গাছে

পুস্প ফুটলে মধুরেণ সমাপায়েত এবং শান্ত জলে

কোনো ঢেউ এলে ইতিহাসের সেলিম।

কবি রফিকুল রবি -এর একটি কবিতা

 দাঁড় কাক 



হঠাৎ যদি চলে যাই তোমার খোলা চোখের সীমানার বাহিরে, যদি আর না এসে হাটি তোমার শহরে ; তবে কি অদেখা শহরে আমার বিচরণে কাঁপবে তোমার শহর? লণ্ডভণ্ড হবে শহরের স্থাপনা ?


তখন, যদি একটা দাঁড় কাক পাখা ঝাপটে এক পাক ঘুরে যায় তোমাকে ঘিরে.... 

তুমি কি বুঝবে- এটা আমি!

কবি মিলি দাস -এর একটি কবিতা

 বিশ্বাস



ছন্দপতন হবে না কখনো

এমন কি আর সবসময় তে হয়?

শোকের ছায়া পড়বে না জীবনে

এমনটা সুখ কজনার বা সয়?


জীবনটা যে ভাঙা গড়ার খেলা

ভালো মন্দ সবটা মিলে মিশে,

খারাপ যদি কেউ বলে কখনো

ভোরের আলো অন্ধকারের শেষে।


বহু ক্ষত অন্তরেতে জমে

জোয়ার ভাটার মত ছন্দমিলে

রাত্রিবেলা হয়তো ধূসর লাগে

স্পষ্ট হয় ভোরের শুকনো বিলে।


দুঃখ পোষা মুখ কি লাগে ভালো?

একটুখানি সুখের ছোঁয়া নাও

রঙিন হবে রুক্ষ্ম মধুর জীবন

ক্ষত মুছে শিশিরে পা দাও।


ছন্দপতন হবে না কখনো

শুন্য তুমি পুণ্য হবে গুনে

সম্পর্কে বেঁধে আছি দুজন

শুনতে পাচ্ছ শব্দ করছে ভ্রূণে।


কবি মিঠুন রায় -এর একটি কবিতা

 তটভূমি 




জো‍ৎস্নায় জেগে ওঠে

উন্মুক্ত বধ্য তটভূমি, 

হৃদয়-বিভূতি জুড়ে লেগে আছে

অমৃতের অম্লান ঘ্রাণ।


প্রাণহীন দেহ থেকে নেমে আসে

স্তব্দতার তরঙ্গরাশি,

সেই সকল অনুপম ঐশ্বর্যের সাক্ষী হয়ে থাকুক এই উপল ভূমিখন্ড। 


বিদায় মুহূর্তের শুকনো পাতার মতো খসখসে শব্দের বাতাবরণ নিয়ে,

অপেক্ষার শব্দ ঘনিয়ে আসে কালপুরুষের মায়াবী বীণা থেকে।


জীবন দ্রুত অতীত হয়ে থাকে 

মায়াবী স্বপ্নের মতো,

শ্মশানের পোঁড়াকাঠে লেগে থাকে বৈরাগ‍্যের অনুভূতি।

কবি আবদুস সালাম -এর একটি কবিতা

 সংবিধান ও আমরা



সভ্যতার প্রতি রাতে ক্ষরণ হয় রক্ত

অস্তিত্ব ক্ষয়ের পতাকা ওড়ে

মিথ্যে পরিচয় দিয়ে ধার্মিক সাজি

নামাবলী দিয়ে ঢেঁকে নিই সংবিধানের পাতা

রাত গভীর হলে মানুষ পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী হয়

মরা মাঠে জেগে ওঠে ধার্মিক ভূগোল আর নষ্ট সময়ের কলঙ্কিত দলিল


কবি স্বাগতা দাশগুপ্ত -এর একটি কবিতা

 ওগো মাছ



ইলিশের আঁচলেতে সর্ষে ফেলেছে ছায়া

তেলে আর পাতুড়িতে জড়ানো সে কত মায়া।


মুখ ভার কাতলার;তার নাকি নেই দম..

দই দিয়ে রাঁধলে সে যে স্বাদে হয় উত্তম।


ডিম ভরা ট্যাংরা-ভীষণ গুমোর তার

ঝাল ঝোল যাই করো, তাইই হবে চমৎকার।


বাঙালী কাঙালী আজ,

পারে না সে কিনতে-

গলদার হেঁড়ে মাথা চিতলের চিলতে।


তোপসে ফ্যাকাসে পড়ে,

পাবদার জুলুসে ..

পাতেতে আসে না সেতো 

দাম যে আকাশে!


পাতে-তে ভাতে-তে মেখে

নাও যদি পারি খেতে-

ওগো মাছ এসো তবু বাঙালীর স্বপ্নেতে।

কবি সুব্রত মিত্র -এর একটি কবিতা

 অহরহ দর্শন



পৃথিবীর বুক চিরে যখন কোন নদী এগিয়ে যায়

তার ভাঙ্গা কান্না কেউ শুনতে নাহি পায়,

পৃথিবীর জনকৌশল মাখা রৌদ্র দ্বারে;

মানবের কুল রাখিয়াছে তারে,

তার ভাঙ্গা সেতারের বিহঙ্গী সুর-মায়া ভুলাইবে তাহারে। 


পরশের মায়া খেলার স্বাদ হইবে বাদ

আজি অগ্রজ পথিক হইয়া মিলিবে অবসাদ

অপছন্দের কারুকার্যে কেন আজ এত সাজ

ভুল পথে ধাবিছে প্রজন্ম পথ ভাঙ্গা পথে হেঁটে চলে নতুন সমাজ

দখলদারির মনোভাব ভারী,

আগ্রাসী ভূমিকায় তেজিয়া আসিতেছে ঐ কান্ডারী। 


কার হাত ধরিয়া জাগিবে পৃথিবী?

তেজ আর লোভে মোড়া ঐ কান্ডারীর মুখে--

কলম ছুঁড়িয়া মারিবে কোন কবি? 


বিদ্বেষী মনোভাব নিবে কাড়ি সংযম

বিনোদনের হাটে যাবে ভাসি আমার মা-বোনের শাশ্বত সম্ভ্রম।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 শুভ রাখী পূর্ণিমা



সবারে করি আহ্বান,

এসো,

           আজ শ্রাবণী পূর্ণিমাতে এসো

              সবার হাতে, পরাই রাখী ।

            বোন বাঁধবে ভাইয়ের হাতে

              যতন করে মঙ্গল রাখী ।


জাতি - ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে

  রাখী বাঁধেন কবিগুরু ।

রাখী বাঁধে আজ ও মিলেমিশে

রাম, শ্যাম, যদু, রহিম, নুরু ।

কবি সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি কবিতা

 দান করো যত খুশি

প্রতিদান আশা কোরোনা



তুমি তো বিখ্যাত

তুমি তো মানবিক

মানবিকতা তোমার উজ্জ্বল

যারা যা বলছে বলুক--


স্রষ্টা আগেই এরকম ফরম্যাট তৈরি রেখেছিলেন

এটা ঘটেছে স্রষ্টার নির্দেশে নয়

এটা নাটকের একটা অঙ্গ


প্রত্যাশা, প্রতিদান চাইলেই

দুঃখ বাড়বে--

স্রষ্টা যেন বলছেন স্ব আছে

অধীনতা নেই! 

মানুষ আছে মানুষের জবাবি মানবিকতায় । 


না না--

জল আলো বাতাস সবই তো

 গ্রহন করেছো তুমি। 

প্রতি দানে ফেরত দিতে পারোনি কিছুই


তাতে কী? 

সবকিছুই মেনে নিতে শেখো। 


এটা ঘটছে স্রষ্টার নির্দেশেই। 

তুমি কর্মী মাত্র। 

কাজে করো--

 প্রতি দান আশা কোরোনা। 


দিনও তোমার জন্য আলাদা

কিছু ভেবে রেখেছে। 


তাকে সময় দাও। 

যত পারো দান করো

প্রতিদান আশা কোরোনা।।


কবি তীর্থঙ্কর সুমিত -এর একটি কবিতা

 ঘর দখল



ভুলিয়ে দেয় সব

চোখের জল বিন্দু হতে হতে

আবার,

নতুন ভালোবাসার জন্ম হয়

মুখ ঘোরালেই

অপেক্ষা করে ...

এক দুইয়ের নামতা

ভালোবাসার লড়াইয়ে

তুমি জয়ী

দীর্ঘপথ ----

পথিক ঘরে ফেরে

আমরা অবাক

ঘুড়ি উড়ছে

সুতোরা যে যার লাঠাইয়ে

কেউ জানেনা কার ঘুড়ি

কার ঘর দখল করবে

তবুও উচ্চস্বরে

ভোকাট্টা ____





কবি তৈমুর খান -এর একটি কবিতা

 মা


 সারারাত সেলাই করছে কাঁথা

 টুকরো-টুকরো ছেঁড়ামেঘ জুড়ে

 একটি আকাশ শুধু মমতার সুতো দিয়ে গাঁথা

 আমাদের আকাশটুকু জ্যোৎস্না ভরে থাক

 নক্ষত্রফুল ফোটাক আমাদের সর্বংসহা মা ।

Sunday, August 22, 2021

ষষ্ঠ সংখ্যার সম্পাদকীয়

 








                    সম্পাদকীয়


শুভক্ষণ রাখি পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা World Sahitya Adda। নিন্দুকেরা নিন্দা করবেন। ভাবুকেরা আরও ভাববে নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে। সমালোচনা হবে, পর্যালোচনা হবে। কিন্তু লেখা নেওয়া, লেখা ছাপা এবং লেখা পড়া তথা সাহিত্য চর্চার মধ্যে একটা অটুট বন্ধন চিরকাল থাকবে। লেখার প্রতি যদি ভালোবাসা সঠিক হয় তবেই পাঠকের মন জয় করা যায়। তাই শুধু ভালো লিখলেই হবে না সেই প্রকাশিত লেখা গুলি পৌঁছে দিতে হবে সমস্ত পাঠক বন্ধুদের কাছে। পত্রিকা কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পত্রিকা নিজস্ব লেখার লিংক সমস্ত পাঠক বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। লিখুন। পড়ুন। এগিয়ে চলুক আমাদের সকলের যাত্রা।


  


  

                                           ধন্যবাদান্তে

            ‌‌ World Sahitya Adda Team

Saturday, August 21, 2021

ষষ্ঠ সংখ্যার সূচিপত্র(২৬ জন)

 সম্পূর্ণ সূচিপত্র



বাংলা কবিতা ও ছড়া---


তৈমুর খান, তীর্থঙ্কর সুমিত, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, মায়া বিদ, সুব্রত মিত্র, স্বাগতা দাশগুপ্ত, আবদুস সালাম, মিঠুন রায়, মিলি দাস, রফিকুল রবি, রানা জামান, সুজিত রেজ, সব্যসাচী মজুমদার, সুমিতা ঘোষ, অভিজিৎ হালদার,  সুনন্দ মন্ডল

স্বপ্না বনিক, সম্রাট দে।


বাংলা গল্প--


স্বপ্না বনিক, অমিত পাল, ডঃ রমলা মুখার্জী


বাংলা গদ্য-


সুমন সাহা




বাংলা প্রবন্ধ---


রামপ্রসাদ সরকার।


বাংলা উপন্যাস---


 সুদীপ ঘোষাল।



ইংরেজি কবিতা---


Soumendra Dutta Bhowmick, Sunanda mondal.




Photography----


 Amit Pal, ARISHNA  SARKAR.

Monday, August 16, 2021

Photography by Amlan Lahiri

 


Photography by Arpan Chowdhury



 

Photography by Somnath Ghosh



 

Photography by Amit pal




 

Poet ‎Sunanda Mandal's one English poem

 Unhappy 

                 


The stone of pride 

Has accumulated in the chest. 

Long years have passed 

The wait is over. 


Night comes 

Pride leads to depth 

At least you would be relieved 

Life is a dream come true. 


In this life his hopes are in vain 

One sky difference between the two. 

You are on the verge of death, 

I am dying.

Poet Soumendra Dutta Bhowmick's one English poems

 UNMANLY APPETITE



Unbelievable frenzy roused hunger in front of

                                 An unknown nubile beauty.

No ban on such agitation,

No feeling for becoming guilty

Put any required caution.

Enchanting the internal sphere vigorously

All snakes of all types began to envenom,

No want of food, cloth or shelter

Now prepared that intruder of awful eyes

To reign brutally in the mind.

Sole appetite for bloody soft flesh

Made him cruel and also blind.


 

That way of special effects

That way of unfurnished sets

Turned him nothing but a weakest child!

কথাসাহিত্যিক সুদীপ ঘোষাল -এর উপন্যাস (পঞ্চম পর্ব)

   ইউরেকা ইউরেনাস




বারান্দায় তিনি ছিলেন। তখন তোতন বলল, ঠিক আছে আসুন ভদ্রলোককে তোতন বললেন, কী অসুবিধা?তোতন ভদ্রলোককে অনেক্ষণ আটকে রেখে তার গ্রাম এবং পরিবেশ সম্পর্কে জেনে নিল। ভদ্রলোক বললেন, আমার নাম নাটুবাবু। এই নামেই সকলে চেনে। 


 লোকগুলো আমাদের ওখানে একটা ভূতের উপদ্রবের গুজবে ভয় পাচ্ছে। লোকজন খুব ভয় পাচ্ছে। এটা তো আমি মানি না,কোনও মতেই। তাই আপনার সাহায্য নিতে চাই সুমন্ত বাবু আর আপনি গেলে এই রহস্যের সমাধান নিশ্চয়ই হবে তোতনন খুব উৎসাহিত হয়ে সুমন্তবাবুকে বললেন এবং ডাকলেন। তিনি এলেন। তিনি আরো বললেন ঠিক আছে আমরা যাব আগামীকাল। সন্ধ্যার মধ্যেই আমরা আপনার বাড়ি পৌঁছে যাব। আপনি ঠিকানা আর এখানে সবকিছু আপনার পরিচিতি দিয়ে যান। সুমন্তবাবু ও তোতন পরের বিকেলে ট্রেনে চাপলেন। কলকাতা থেক দূরে এক অজ পাড়াগাঁয়ে তাদের যেতে হবে। তোতন বলছে সুমন্তবাবুকে আমি গ্রামের ছেলে। ট্রেনে যেতাম স্কুলে। তারপর পায়ে হাঁটা।তোতন বলে চলেছে তার কথা, ট্রেনে যাওয়া আসা করার সময় কিছু লোক দেখতাম ট্রেনের মেঝেতে বসে থাকতেন স্বছন্দে।তাদের মত আমারও সিটে না বসে মেঝেতে বসার ইচ্ছে হতো।কিন্তু পারতাম না লোকলজ্জার ভয়ে।কি সুন্দর ওরা মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে ঘুগনি খায়।ট্রেনে হরেক রকম খাবার বিক্রি হয়।ওরা দেখতাম টুকটাক মুখ চালিয়ে যেতো।আমি জিভে জল নিয়ে বসে থাকতাম ভদ্র বাবুদের সিটে।তারা হাসতেন না।অপ্রয়োজনে কিছু খেতেন না বা কোনো কথা বলতেন না। ওদের মাঝে গোমড়া মুখে বসে মুখে দুর্গন্ধ হতো।তারপর গানের এৃক বিকেলে আমি বেপরোয়া হয়ে ট্রেনের মেঝেতে ওদের মাঝে বসলাম। লুঙ্গি পরা লোকটা গায়ে মাটির গন্ধ।বেশ হাল্কা হয়ে গেলো মনটা। লোকটা বললো,ভালো করে বসেন। কত আন্তরিক তার ব্যবহার।তারপর ট্রেনের খাবার খেতে শুরু করলাম।প্রথমেই ঝালমুড়ি।পাশের লোকটাও ঝালমুড়ি কিনলেন।খেতে লাগলাম মজা করে। তারপর এলো ঘুগনি,পেয়ারা,গজা,পাঁপড়,লজেন্স ও আরও কত কি। মনে হলো এ যেন কোনো ভোজবাড়ি।খাওয়ার শেষ নাই।যত পারো খাও। মেঝেতে বসার অনেক সুবিধা আছে।আমাদের দেশে গরীবের সংখ্যা বেশি।তাই গরীব লোকের বন্ধুও হয় অনেক।পথেঘাটে ওরা পরস্পরকে চিনে নেয় চোখের পানে চেয়ে।তাই ওদের মাঝে গরীবের দলে নাম লিখিয়ে আমি ভালো থাকি,জ্যোৎস্নায় ভিজি...


সুমন্তবাবু বললেন, তোর এই গুণের জন্যই তোকে ভালবাসি। তোতন বলল,হাওড়া থেকে কাটোয়া। তারপর শিবলুন স্টেশন থেকে টৌটো তে আধঘণ্টা যেতে হবে। কিংবা বড় বাস স্টপেজে নেমে ঢালাই রাস্তা ধরে নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস পেরিয়ে, সর্দার পাড়া পেরিয়ে চলে এলাম ভট্টাচার্য পাড়ায়।পুরোনো মন্দির আর মসজিদ,গির্জা আমার মন টানে। কালের প্রবাহে সেগুলো অক্ষত না থাকলেও পুরোনো শ্যাওলা ধরা কোনো নির্মাণ দেখলেই আমি তার প্রেমে পড়ে যাই।অমরবাবু ছিলেন ষষ্টি তলায়। তিনি মা মঙ্গল চন্ডীর মন্দিরে নিয়ে গেলেন আমাকে।নবগ্রাম অজয় নদীর ধারে অবস্থিত। সবুজে ঘেরা এই গ্রাম।  


সুমন্তবাবু জানেন তোতন যার কাছে নিয়ে যায় তার সব খবর জেনে নেয়। তার যোগ্য সহায়ক। নাটুবাবু সময়মত টোটো নিয়ে এসে ওদের গ্রামে নিয়ে এলেন। পরেরদিন সকালে ভ্রমণবিলাসি সুমন্তবাবু বললেন, আপনার এলাকায় আজ শুধু ঘুরব। চলুন আপনি আমাদের সব চিনিয়ে দেবেন পায়ে হেঁটে। নাটুবাবু বলতে শুরু করলেন কবি এবং গাইডের মত গ্রামের পরিচয়। ইনি ভট্টাচার্য পাড়ার রঘুনাথ ব্যানার্জী। তিনি বললেন,মা মঙ্গল চন্ডীর মন্দির অতি প্রাচীন।মায়ের পুজোর পালা পাড়ার সকলের একমাস করে পড়ে।মা দুর্গার পুজোর পালা তিন বছর পর এক একটি পরিবারের দায়ীত্বে আসে।সকলে মিলে পাড়ার পুজো চালায় বছরের পর বছর।হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বাজারে পাড়ায়।এখানে,ঘোষ,পাল,মুখার্জী পরিবারের বাস। মুখার্জী পাড়ার ধ্রুবনারায়ণ বললেন,আগে মুখুজ্জে পুকুরের পাড়ে শিবপুজো হতো।মন্দির প্রায় দুশো বছরেরে পুরোনো হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছিলো।কৃষিকাজের সময় জল না হলে আমাদের বাবা, কাকারা শিবলিঙ্গ বাঁধ দিয়ে জলে ডুবিয়ে দিতেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘ হতো ও বৃষ্টি হতো।মানুষের বিশ্বাসে সবকিছু।



নাটুবাবু বললেন, তারপর গোস্বামী পাড়ায় এলাম। সেখানে বদরী নারায়ণ গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করি চলুন।


বদরীবাবু বললেন,আমরা নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর বংশধর। মেয়ের বংশধর,দৌহিত্র বুঝলেন।আমার কাছে বংশলতিকা আছে। আমি বললাম,বলুন, আমি শুনি।তিনি শুরু করলেন,গঙ্গামাতা, তার স্বামী ছিলেন মাধব চট্টোপাধ্যায়, তার ভিটে এটা।তারপর প্রেমানন্দ,অনন্তহরি,পীতাম্বর,গৌরচন্দ্র,লালমোহন,শ্যামসুন্দর,নিকুঞ্জবিহারী,রামরঞ্জন, বংশগোপাল, বদরীনারায়ণ,বিনোদগোপাল।তারপর তিনি মন্দিরের গাত্রে লেখা বংশলতিকা দেখালেন।আমি ছবি তুলে নিলাম।পড়া যাবে নিশ্চয়।

রাধা মাধবের মন্দিরে বারোমাস কানাই, বলাই থাকেন।অগ্রহায়ণ মাসে এই মন্দিরে রাধামাধব আসেন।তখন সারা গ্রামের লোক প্রসাদ পান।



তোতন বলছেন, আমার মনে হচ্ছে এ যেন আমার জন্মস্থান। আমার গ্রাম। স্বপ্নের সুন্দর গ্রামের রাস্তা বাস থেকে নেমেই লাল মোড়াম দিয়ে শুরু ।দুদিকে বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস রাস্তায় পরম আদরে ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে । কত রকমের পাখি স্বাগত জানাচ্ছে পথিককে । রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত বেজি , শেয়াল আরও অনেক রকমের জীবজন্তু।.চেনা আত্মীয় র মতো অতিথির কাছাকাছি তাদের আনাগোনা । হাঁটতে হাঁটতে এসে যাবে কদতলার মাঠ। তারপর গোকুল পুকুরের জমি, চাঁপপুকুর, সর্দার পাড়া,বেনেপুকুর । ক্রমশ চলে আসবে নতুন পুকুর, ডেঙাপাড়া ,পুজোবাড়ি, দরজা ঘাট, কালী তলা । এখানেই আমার চোদ্দপুরুষের ভিটে । তারপর ষষ্টিতলা ,মঙ্গল চন্ডীর উঠোন , দুর্গা তলার নাটমন্দির । এদিকে গোপালের মন্দির, মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, তামালের দোকান, সুব্রতর দোকান পেরিয়ে ষষ্ঠী গোরে, রাধা মাধবতলা । গোস্বামী বাড়ি পেরিয়ে মন্ডপতলা । এই মন্ডপতলায় ছোটোবেলায় গাজনের সময় রাক্ষস দেখে ভয় পেয়েছিলাম । সেইসব হারিয়ে যাওয়া রাক্ষস আর ফিরে আসবে না ।কেঁয়াপুকুর,কেষ্টপুকুরের পাড় । তারপর বাজারে পাড়া ,শিব তলা,পেরিয়ে নাপিত পাড়া । এখন নাপিত পাড়াগুলো সেলুনে চলে গেছে । সাতন জেঠু দুপায়ের ফাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতেন মাথা ,তারপর চুল বাটি ছাঁটে ফাঁকা । কত আদর আর আব্দারে ভরা থাকতো চুল কাটার বেলা ।এখন সব কিছুই যান্ত্রিক । মাঝে মাঝে কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়েকে রোবোট মনে হয় । মুখে হাসি নেই । বেশ জেঠু জেঠু ভাব ।সর্বশেষে বড়পুকুর পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে ভুলকুড়ি । আর মন্ডপতলার পর রাস্তা চলে গেছে খাঁ পাড়া , কাঁদরের ধার ধরে রায়পাড়া । সেখানেও আছে চন্ডীমন্ডপতলা , কলা বা গান, দুর্গা তলার নাটমন্দির সব কিছুই । পুজোবাড়িতে গোলা পায়রা দেখতে গেলে হাততালি দিই ।শয়ে শয়ে দেশি পায়রার দল উড়ে এসে উৎসব লাগিয়ে দেয়। পুরোনো দিনের বাড়িগুলি এই গ্রামের প্রাণ 


   


সুমন্তবাবু বললেন, বাংলার সব গ্রামের রূপ এক। আমরা একতার সূত্রে বাঁধা। 


নাটুবাবু বললেন, তারপর চলে এলাম গ্রামের মন্ডপতলায়। এই গ্রামে আমার জন্ম। লেখিকা সুজাতা ব্যানার্জী এই গ্রামের কন্যা।তার দাদু ছিলেন ডাঃ বিজয় বাবু।এখনও এই বাড়িগুলো গ্রামের সম্পদ।ডানদিকের রাস্তা ধরে হাঁটলেই খাঁ পাড়া। গ্রামের মাঝে গোপাল ঠাকুরের মন্দির,কৃষ্ঞ মন্দির। তারপরেই রক্ষাকালীতলা। কত ধর্মপ্রাণ মানুষের বাস এই গ্রামে। গোপাল মন্দিরের পুজো হয় বাড়ুজ্জে পাড়ায়।গ্রামের গাছ, পাথর,আমার গান আমার প্রাণ।


            এবার নাটুবাবু টোটো ডাকলেন। সেখান থেকে অম্বলগ্রাম পাশে রেখে দু কিলোমিটার টোটো রিক্সায় এই গ্রাম। একদম অজ পাড়াগাঁ। মাটির রাস্তা ধরে বাবলার বন পেরিয়ে স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করতে হবে।তন্ময়বাবু গবেষক।এন জি ও সসংস্থার প্রধান কারিগর বনের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখালেন। তার জগৎ।পশু,প্রাণীদের উন্মুক্ত অঞ্চল।বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে, সেখানে।মা কালীর মূর্তি আছে। কাঁচের ঘরে ইকো সিষ্টেমের জগৎ।কেউটে সাপ, ব্যাঙ থেকে শুরু করে নানারকমের পতঙ্গ যা একটা গ্রামের জমিতে থাকে। বিরাট এক ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তন্ময় হয়ে।আমি ঘুরে দেখলাম প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বানানো রিসর্ট।ওপেন টয়লেট কাম বাথরুম।পাশেই ঈশানী নদী।এই নদীপথে একান্ন সতীপীঠের অন্যতম সতীপীঠ অট্টহাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চায় এন জি ও, নৌকায়। তন্ময়বাবু হাতে সাপ ধরে দেখালেন। শিয়াল,বেজি,সাপ,ভ্যাম আছে। তাছাড়া পাখির প্রজাতি শ খানেক।একটা পুকুর আছে। তার তলায় তৈরি হচ্ছে গ্রন্হাগার।শীতকালে বহু বিদেশী পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। তন্ময়বাবু বললেন,স্নেক বাইটের কথা ভেবে সমস্ত ব্যবস্থা এখানে করা আছে। ঔষধপত্র সবসময় মজুত থাকে।বর্ষাকালে ঈশানী নদী কিশোরী হয়ে উঠেছে।এই নদীকে মাঝখানে রেখে বেলুনের চাষিরা চাষ করছেন আনন্দে।এখানকার চাষিরা জৈব সার ব্যবহার করেন। কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না। এক চাষি বললেন,আমরা সকলে একত্রে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জৈব সার প্রয়োগ করেই আমরা চাষ করবো।তাতে বন্ধু পোকারা মরবে না। ফলনও হয় বেশি। এক এন জি ও সংস্থার পরামর্শে তাদের এই সঠিক সিদ্ধান্ত অন্য চাষিদের অনুকরণযোগ্য।এই এন জি ও সংস্থার যুবকরা গ্রামের ভিতর কুকুরদের নির্বিজকরণ কাজে লেগেছে।একটা লম্বা লাঠির ডগায় সূচ বেঁধে তাতে ওষুধভরে চলছে কাজ।কোনো প্রাণী আহত হলে তার সেবাশুশ্রূষা করেন যুবকবৃন্দ।সাপ ধরতে জানেন এই যুবকবৃন্দ।কোনো গ্রামে কোনো সাপ দেখা গেলে এই যুবকেরা সেটি ধরে নিয়ে এসে তাদের সংরক্ষিত বনে ছেড়ে দেন।এখনও এই যুবকবৃন্দ কাজ করে চলেছেন মানুষ ও প্রাণীজগতকে ভালোবেসে।বর্ষাকালে প্রচুর বিষধর সাপের আনাগোনা এই অঞ্চলে।এখানে পা দিলেই সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন এখানকার কর্মিবৃন্দ।ঘুরে দেখার জন্য গামবুট দেওয়া হয় পর্যটকদের। প্রচুর দেশি বিদেশি গাছ গাছালিতে ভরা এই প্রাঙ্গন। একটি কৃত্রিম জলাধার আছে।তার নিচে লাইব্রেরী রুম তৈরির কাজ চলছে।ওপরে জল নিচে ঘর। কিছুটা তৈরি হয়েছে। শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি এসে হাজির হয়। সেই পাখিদের নিয়েও চলে গবেষণা। তাদের জন্য সব রকমের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হয়।আর একটি জলাধারে বিভিন্ন ধরণের মাছ রাখা হয়। পা ডুবিয়ে জলে দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের চামড়ার মৃত কোষ খায় এইসব বিদেশি মাছেরা। ওপেন বাথরুমে ঈশানীর জল উপলব্ধ।এই রিসর্টগুলিতে সর্বসুখের ব্যবস্থা আছে।শীতকালে অনেক বিদেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। রাতে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থাও খুব সুন্দর।বেলুন গ্রামে ঢুকতে গেলে বাবলার বন পেরিয়ে মাটির আদরে হেঁটে যেতে হবে। এখন অবশ্য শিবলুন হল্ট থেকে নেমে বেলুন যাওয়ার পাকা রাস্তা হয়েছে।টোটো,মোটর ভ্যান চলে এই রাস্তা ধরে।চারিদিকে সবুজ ধানক্ষেতে হারিয়ে যায় মন এক অদ্ভূত অনাবিল আনন্দে।বেলুন ইকো ভিলেজ কাটোয়া মহুকুমার গর্ব।



আবার ফিরে এলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার অন্তর্গত কাটোয়া মহুৃুকুমার পুরুলিয়া গ্রামে অবস্থিত মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুলে প্রায় চার শতাধিক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে। এই স্কুল গৃহটির পূর্ব মালিক ছিলেন মহেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পুত্র শ্রী অতুলবাবু এই গৃহটি পিতার নামে দান করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।তারপর শুরু হয় কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে পড়াশোনা। আজ সেই বিদ্যালয় পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক বিপুল পাল। সে পেয়েছে মোট ৬৪৬নম্বর।বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুরস্কৃত করেছে স্বাধীনতা দিবসের দিনে। এক অখ্যাত গ্রামে এই বিদ্যালয় অবস্থিত হলেও এখানে পঠন পাঠন হয় খুব সুন্দরভাবে। প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষিকা মহাশয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রত্যেকবার মাধ্যমিকে ভালো ফল হয়। স্কুল বিল্ডিং অনেক পুরোনো। নবসাজে সজ্জিত হওয়ার প্রয়োজন আছে।কন্যাশ্রী ক্লাব,কম্পিউটার রুম, মেয়েদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ,পিরামিড গঠন প্রভৃতি অনেক কিছুই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শেখানো হয়। নানারকম অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা প্রভাত ফেরি করে।নাচগান, কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করে তারা। কন্যাশ্রী ক্লাব মেম্বারের মেয়েরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাল্য বিবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। মেয়েদের কোনো শারীরীক সমস্যা হলে বাড়িতে সাইকেলে চাপিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসে।এখন এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত মিড ডে মিল খাওয়ানো হয় ঠিফিনে।আয়রন ট্যাবলেট ও স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলি করা হয় নিয়মিত। প্রধান শিক্ষক মহাশয় শ্রী ভক্তি ভূষণ পাল। কম্পিউটার শিক্ষক শ্রী মেঘনাদ সাঁই মহাশয় ছাত্র ছাত্রীদের অতি যত্ন সহকারে পঞ্চম শ্রেণী থেকে কম্পিউটারে দক্ষ করে তোলেন। এই গ্রামে এ এক অতি পাওয়া বরের মত। যে বরে, ছাত্র ছাত্রীরা আধুনিকতার আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে।খেলার দিদিমণি মৌ মজুমদার মহাশয়া ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে হিউম্যান পিরামিড,ক্লাপিং ডান্স,হিল পিরামিড প্রভৃতি অভ্যাস করান। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এগুলির প্রদর্শন করানো হয়। সকল শিক্ষক,শিক্ষিকা মহাশয়ের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে স্কুলের সুন্দর পরিবেশ।শ্রী রাজীব নন্দী মহাশয় ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন করলেন মহা সমারোহে।এছাড়া শ্রী বিশ্বরঞ্জন রানো,সুবীর কুমার ঘোষ,শারদশ্রী মন্ডল,সুবীর ঘোষ,শমীক ব্রষ্মচারী,মৌসুমী বিশ্বাস,মৌমিতা বৈরাগ্য, দেবযানী বিশ্বাস,সুদীপ ঘোষাল নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন স্কুলের স্বার্থে।অনিমা পাল,সম্পদ ভাই,নন্দিতাদি নন টিচিং স্টাফের মধ্যে আছেন। বিভাসদা ও আছেন। তারা সকলেই স্কুলের স্বার্থে কাজ করেন।স্বাধীনতা দিবসে ছাত্র ছাত্রীরা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পিরামিড প্রদর্শন করলো।তাদের পিরামিড খুব সুন্দর দর্শনীয় এক ব্যালান্সের খেলা।স্কুল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগ ঁহেমন্ত ঘোষাল,ঁশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,অলোকময় বন্দ্যোপাধ্যায়,শ্রী বিজয় চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন ঁধ্রুবনারায়ণ চট্ট্যোপাধ্যায়।অন্যান্য শিক্ষক মহাশয়রা ছিলেন কাশীনাথ ঘোষ,পন্ডিত মহাশয়,হরেরামবাবু,সত্যনারায়ণববু,নারায়ণবাবু,অধীরবাবু

,চন্ডীবাবু দীপকবাবু,সুকুমারবাবু,মৌসুমী ভট্টাচার্য্য মহাশয়া,কাকলি ম্যাডাম প্রমুখ।সিদ্ধেশ্বরবাবু, গীতা থান্দার,বৃন্দাবনবাবু ছিলেন অশিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ।স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির আজীবন সদস্য হলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শ্রী প্রকাশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়।ঠিক সাড়ে দশটায় স্কুলের প্রার্থনা সভা শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই সভায় নিয়মিত পিটির মাধ্যমে একটু শরীরচর্চা করে। তারপর, জনগণ মন অধিনয়ক,এই জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। তারপর যথারীতী ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস প্রত্যেকদিন একদম শুরু থেকে শেষ অবধি হয়। সুবীর ঘোষ মহাশয়ের নিজস্ব উদ্যোগে স্কুলের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে।শ্রী বিশ্বরঞ্জন রানো মহাশয়ের অবদান অপরিসীম। এক কথায় তা প্রকাশ করা অসম্ভব।পুরুলিয়া গ্রামের আমাদের এই স্কুলটি গৌরবের শ্রেষ্ঠ চূড়ায় পৌঁছবে এই আশা রাখেন অভিভাবকবৃন্দ।


সুমন্তবাবু নাটুবাবুকে অনেক ধন্যবাদ জানালেন। তারপর রাতের খাবার খেয়ে শোওয়ার ঘরে গেলেন। 

এবার তোতন বললেন, আপনার সমস্যার কথা বলুন।


নাটুবাবু বলতে শুরু করলেন, পাড়ার এক ছেলে, নাম তার মদন।মদনের মাথা ঠিক ছিল না সে পাগল ছিল কিন্তু বাড়িতেই থাকতো তাকে পাগলা গারদে যায়নি তার মা আর ছেলে থাকে আর কেউ নেই যার সংসার একদিন কি হলো ওই পাগল ছেলে একটা লাঠি নিয়ে মায়ের মাথায় মেরে দিল একবার জোরে ঘা। তখন রাত্রিবেলা কেউ কোথাও নেই আর মা তখন নিজেই পড়ে ছটফট করছে মাকে নিয়ে আমরা চারজন গেলাম হাসপাতালে সেখানে ভর্তি থাকলে দুদিন তারপরে মারা গেল। মারা যাওয়ার পর যেহেতু মার্ডার কেস এজন্য পোস্টমর্টেম হল। পোস্টমর্টেম হওয়ার পর থেকে লাশ বের করার কেউ নেই সবাই চলে গেছে যে যার নিজের জায়গায় আমি আর আমার পিসির ছেলে ছিলাম দুজনে বের করলাম বের করে কোন রকমে ভ্যানে চাপিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল। শ্মশানে গিয়ে একটা পুরোহিত ডেকে তার পিন্ডি দান করে একদম করতে নিতে দুটো বেজে গেল।রাত দুটো তাওবা অমাবস্যার রাত্রি এবার ফিরতে হবে একটা ছোট নদী পার দিয়ে ছোট নদী গুলোকে আমরা গ্রামে বলি কদর এই কাদোরে পারে বোন আছে বনে থাকে সাপ বেজি শেয়াল এইসব ছোট ছোট প্রাণী তার পাশ দিয়ে আমাদের লন্ঠন নিয়ে যেতে হবে । পিসির বাড়ি আগে তাই পিসির ছেলে চলে গেল বাড়ি আমাকে একটা লন্ঠন ধরিয়ে দিল বললো তুমি চলে যাও এখানে সাবধানে যাবে আর পারলে আমাদের বাড়িতে থাকতে পারো কিন্তু আমি থাকতে পারলাম না কারণ বাড়িতে বলে আসা হয়নি মা হতে চিন্তা করবে তার লন্ঠন হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কান ধরে ধরে যেতে যেতে গা ছমছম করছে ভয় ভয় লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই যেতেই হবে রাত আড়াইটা হয়ে গেল এখনও পারে কেউ নেই হঠাৎ দেখা গেল দূরে সাদা ঘুম থেকে একজন দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাকে ডাকছে।কোন আওয়াজ নাই শুধু ইশারায় হাত দেখিয়ে ডাকছে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম এই রাত্রিবেলা এখানে সাদা কাপড় পড়ে মেয়েদের সাজেকে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই ভয় দেখাবে উদ্দেশ্যে।কিন্তু যখন কাছে গেলাম তখন দেখলাম না এটা ভয় দেখানো নয় সে হঠাত উঠে গেল একটা গাছের উপরে গাছের উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হি হি করে হাসছে আবার লাভ মেরে জলে পড়লে বলল ঝাপাং করে। ঝপাং করে জলে পড়ে হাতে একটা সাদা মাছ নিয়ে উঠে পড়ল গাছে যে কর্ম করে কাঁচা মাছ দিয়ে খেতে লাগলো আমার খুব ভয় পেয়ে গেলাম আমি আমি সঙ্গে সঙ্গে লন্ঠন নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম যখন লাগলাম তখন সেই সাদা কাপড় ওয়ালা বলল কিনে খুব ভয় পেয়েছিস মনে হচ্ছে বাড়ি যেতে পারবি তো।


আমিওখুব ভয় পেয়ে গেলাম ঠকঠক করে কাঁপছি তখন পাঠাও মাটিতে থাকছে না কোন রকমে টেনে চলতে চলতে অনেক দূর আসার পর হঠাৎ একজন বলল কি গো কোথায় যাচ্ছ ।


মানুষের গলার আওয়াজ পেয়ে আমার একটু সাহস হলো আমি বললাম তুমি কে বলছো আমি ভোলা আমাকে চিনতে পারছ না অন্ধকারে আমি তোমার মুখ দেখতে পাইনি জানো এই বটগাছে কাদের ধরে একটা বুড়ি মাছ খেতে লাগল কাকা বলল ওই গাছের পেত্নী থাকে তুমি খুব জোর বেঁচে গিয়েছে ওই গাছের তলা দিয়ে রাত্রিবেলায় টানে বাঁচেনা চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।


আমি বললাম এত রাতে তুমি কাঁদোর ধরে কি করছিলে ভোলা বলল আমরা তো গরিব মানুষ বাড়িতে পায়খানা বাথরুম কিছু নাই এই তাই মানে কাঁদর ধারে বসে কম্ম সারি। তাই রাত দুপুরে উঠে এখানে এসেছি বট গাছের কাছে ভুলেও যাই। না আমরা।


ভোলা বলল তা তোমার এত রাত হল কেন আমি তখন সবিস্তারে আমার ঘটনা বললাম যে শ্মশান থেকে ফিরছিল।

 শ্মশান থেকে ফিরছ তাহলে এখনো গঙ্গা চান করো নাই।

  আমি বললাম না গঙ্গা চান করা হয়নি বাড়িতে গিয়ে স্নান করে পরিষ্কার হয়ে গেছে তারপর ঢুকবো। 


 আমি ভাবলাম মানুষের বিশ্বাস মানুষের কাছেই থাক হয়তো তাই মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া যায় না। কিন্তু আমি ওসব বিশ্বাস করিনা আজকে অন্তত বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু নিজের চোখে দেখার পর আর আমার কিছু বলার থাকল না। সেই মেছো বাড়ি এসেও জ্বালাচ্ছে।

তোতন বললেন, আমরা আজই রাতে ধরব ব্যাটাকে।


নাটুবাবু বললেন ভয়ে ভয়ে আছি খুব।

সুমন্তবাবু বললেন, যখন ভয়ের অনুভূতি প্রথম টের পাচ্ছেন, মনে হচ্ছে বুক ধড়ফড় বেড়ে গেছে, অস্থির লাগছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, দেরি না করে দ্রুত ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন, বুকের ভেতর সমস্ত খালি জায়গা বাতাসে ভরে ফেলুন, দমটা অল্পক্ষণ আটকে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে পর পর তিনবার করুন।ভূতের ভয় থেকে বেড়িয়ে আসতে ভূত এবং ভয় নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যি ভূত বলে কিছু রয়েছে কি না? 


তোতন বললেন, না কি আপনি অজানা কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন? আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ কখনো ভূত দেখেছে কি না? ক্ষতি হলে তার কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে? উত্তরগুলো খুঁজে নিয়ে ভাবুন আদৌ ভয় পাওয়ার কোনো কারণ রয়েছে কি না।সিনেমায় ভূত, আত্মা এই বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়। ভয়ের সিনেমা, নাটক আমাদের মধ্যে ভূত ও আত্মা সম্পর্কে ভয় তৈরির সাহায্য করে। তাই যদি এ ধরনের সিনেমা, নাটক দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে এই ধরনের নাটক, সিনেমা, গল্পের বই এড়িয়ে চলুনভয়কে জয় করতে ভয়ের বিষয়টি সরাসরি মোকাবিলা করতে হয়। আপনি হয়তো ভূতের ভয়ে রাতে একা থাকতে ভয় পান, ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখেন- এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে রাতে একা থাকা শুরু করুন। ভাবুন, পৃথিবীতে কত মানুষ একা থাকে। ভূত তাদের আক্রমণ না করলে আপনাকে করবে কেন? আপনার সঙ্গে তো ভূতের বিশেষ কোনো শত্রুতা নেই। প্রথমে আলো জ্বালিয়ে একা ঘরে থাকার অভ্যাস করুন। প্রথমে কষ্ট হবে তারপরও চেষ্টা করুন। প্রথমদিন পারলে নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দিন, ছোট পুরস্কার দিন। এভাবে একা থাকায় অভ্যস্ত হলে একা ঘরে আলো নিভিয়ে থাকার পদক্ষেপ নিন। এভাবে ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।ভয় থেকে মনটাকে অন্য দিকে সরিয়ে দিতে গান শোনা, টিভি দেখা, গল্পের বই পড়ার মতো নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করুন। জানালার দিকে তাকালে ভয় হলে জানালা খুলে রাখুন। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখুন। জানালার দিকে চোখ পড়লে চোখ বন্ধ না করে তাকান। কিন্তু বার বার তাকিয়ে কিছু রয়েছে কি না সেটি চেক করা থেকে বিরত থাকুন।নিজেকে বলুন যতবার শব্দ শুনে বা আওয়াজে ভয় পেয়েছি, বা বাইরে যা দেখেছি তাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছি।ভূত নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা মনে হলে ভাবুন যা ভাবছেন তা যদি সত্যি হয় তবে কি হবে? সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে? এমন হবার আশঙ্কা কতটুকু?যখন ভয় পাচ্ছেন তখন যা ভেবে ভয় পাচ্ছেন তা কাগজে লিখে ফেলুন, লেখা শেষে কাগজ কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলুন বা পুড়িয়ে ফেলুন।ভাবুন ভূত বা আত্মা আপনার মতোই। তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোনো প্রমাণ নেই যে ভূত কারো কখনো ক্ষতি করেছে।অনেক সময় ছোটবেলা থেকে ভূত সম্পর্কে শোনা গল্প আমাদের মনে ভূত সম্পর্কে একটি ভয়ঙ্কর ছবি তৈরি করে। এতে আমাদের মাঝে ভয় তৈরি হয়। অনেক সময় বড় হওয়ার পরও তা থেকে যায়। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে এ ধরনের গল্প না করার চেষ্টা করুন।ভয় থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য নিজেকে যথেষ্ট সময় দিন।নিজের আগের সফলতার কথা চিন্তা করুন। মনে করুন আগে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, কীভাবে বের হয়ে এসেছিলেন। এটা আপনার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।নিজেকে বলুন, ‘ভয়ের কাছে পরাজিত হবো না। ভয় আসতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। আমি জানি ভয়টা অমূলক। তাই ভয় পাবার কিছু নেই। বরং ভয় দূর করতে যা যা করা দরকার করব।’ভূত নিয়ে যেসব কমেডি সিনেমা রয়েছে সেগুলো দেখুন। ভয়ের সময় মনে করার চেষ্টা করুন ভয়ের সিনেমাগুলোতে ভূত কী কী করার চেষ্টা করে এবং প্রাণ খুলে হাসুন।কোনো বিষয় নিয়ে মজা করলে সে বিষয়ে ভয় দূর করা সম্ভব। ভূত বিষয়ে অন্যের সঙ্গে বেশি বেশি গল্প বলুন, মজা করুন।অনেক সময় ভূতের ভয়ের সঙ্গে মানসিক অসুস্থতাও যুক্ত থাকতে পারে। সেখানে ছোটখাট পরামর্শ মেনে চললেই তা দূর করা সম্ভব হবে না। তাই নিজে নিজে ভূতের ভয় দূর করতে না পারলে মনো-চিকিৎসক, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিন।ভূতের ভয়টা যেহেতু রাতেই হয়, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে শিথিল থাকতে পারেন এমন কিছু করুন। ঘুমের সময় অল্প আলো জ্বালিয়ে ঘুমান।সিলিং বা জানালায় ঝুলন্ত কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন, যাতে রাতের বেলা এগুলো থেকে ভয় না তৈরি হয়‘ভূত আসলে কী হবে?’- এ ধরনের ভাবনা ব্যক্তির মধ্যে মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে। তাই ভবিষ্যতে যা ঘটার আশঙ্কা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত নন তা ভাবা থেকে বিরত থাকুন।

ভূতের ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই লুকায়িত রয়েছে। তাই ভূতের ভয়কে জয় করুন।




ক্রমশ...