রম্য রচনা || পাদুকা-পুরাণ || সামসুজ জামান
পাদুকা-পুরাণ
২০০৪-এ ভয়ঙ্কর সুনামির বিপর্যস্ত অবস্থার পর বহু মানুষ ও সংস্থা দান-সামগ্রী পাঠিয়েছেন আন্দামানে। সরকারি শিক্ষা বিভাগের কর্মী হিসেবে মেমারির পিনাকী ভট্টাচার্যের ডিউটি ছিল সেসব বিলিবণ্টনের। একদিন খবর পেলেন কোন এক সংস্থা প্রচুর জুতা-চপ্পল এনে দিয়েছে আর লোকের কাড়াকাড়ি- মারামারি পড়ে গেছে সেসব নেবার জন্যে। পিনাকীদা ছুটলেন কাজ ফেলে নিজের জন্য এক জোড়া বাগাতে। কিন্তু গিয়ে দেখেন পছন্দমত জুতো আর পড়ে নেই। বেঁটেখাটো মানুষ তিনি কিন্তু শেষমেশ পেলেন বড় বড় এক জোড়া চপ্পল। সেই জুতো বাড়িতে এনে বঁটির সাহায্যে নিজের পায়ের সাইজের বানাতে গিয়ে সে এক বিদিকিচ্ছিরি কান্ড! সোজা করে কাটাই যাচ্ছেনা, ত্যাড়াব্যাঁকা হয়ে, যাচ্ছেতাই অবস্থা!
কিছুদিন বাদে হ্যাভলকে বদলি হয়ে পিনাকীদা সেই চপ্পল নিয়ে যেতে ভোলেন নি। দু-একদিন বাদে এক সকালে কুকুরের বেজায় চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে উঁকি দিয়ে দেখলেন বাড়িওয়ালা নিজের আদরের কুকুরটাকে বেজায় পেটাচ্ছে। পিনাকীকে দেখে উনি বলে উঠলেন - ছি-ছি-ছি, মাস্টারমশাই! কুকুরটার দাঁত উঠেছে আর বে-আক্কেলটা আপনার জুতোগুলো কি করেছে দেখুন!
পিনাকীদা লজ্জায়, বঁটি দিয়ে জুতো কাটার কথা বেমালুম হজম করে গেলেন! কিন্তু সেই প্রহারের চোটে বেচারা কুকুর মরেই গেল!
অনেক পরে আবার অন্যত্র বদলির সময় আত্ম-অনুশোচনায় পিনাকীদা বাড়িওয়ালাকে জানিয়েছিলেন- দাদা, সেদিন আমি বলতে পারিনি। জুতোটা বঁটি দিয়ে কাটতে গিয়ে আমি ওই দশা করেছিলুম, আপনার কুকুরে কিছুই করেনি কিন্তু বেচারা আমার কারণেই মরে গেল!!
বাড়িওয়ালা এরপর কথা বলতে পারেননি শুধু অবাক চোখে পিনাকীদার চপ্পলের দিকে চেয়েছিলেন! পাদুকা-পুরাণের কথা বলতে গিয়ে পিনাকীদার সেই কুকুর-কেত্তনের কথা কি আর ভোলা যায়!
Comments