রম্যরচনা || স্বামী ধন || অরবিন্দ সরকার

 স্বামী ধন


                   

শীতের রোদে তালাই পেতে সোহাগী তার স্বামী নিমাইকে পিঠে তেল মর্দন করছে। এ দৃশ্য নদীয়ার বার্ণিয়া নামক গ্রামের।তপশীলি জাতির বাস অধিকাংশ। গ্রামের জীবিকা এখন শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহ করা ও গুড় তৈরি করা। 

সোহাগীর একটিই মেয়ে ,তার বিয়ে হয়ে গেছে।ওরা দুজনে দুপুরের রোদ গায়ে মেখে চান ও খাওয়া দাওয়া করবে আবার পড়ন্ত রোদে গা গড়া দেবে। ছেঁড়া কাঁথা বালিশ সব রোদে দেওয়া আছে। ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডা কাঁথা গায়ে দেওয়া মুস্কিল। গরীবদের শীতে খুব কঠিন। সোহাগী তার স্বামীকে তেল মাখিয়ে দিয়ে বললো - ওগো দেখোতো আমার মাথাটা। চুলকে মরে গেলাম।এবার নিমাই মাথায় হাত দিয়েই বললো কতো উকুন তোমার মাথায়। আমারও এবার মাথা চুলকাচ্ছে।মনে হয় আমারও উকুন হয়েছে।এই বলে সোহাগীর মাথার উকুন মারতে লাগলো। উকুন মেরে শেষ হয়না।তখন নিমাই বললো যে তোমার সারাবছর উকুন মেরেও শেষ হবেনা।ওরা তো প্রতিদিন ডিম পাড়ে আর বাচ্চা হয়।যতো মারবো আজ তার দ্বিগুণ তোমার মাথায় জন্মাবে। বরং আমার অল্প চুলে অল্প উকুন আছে। ওগুলো বেছে দাও। তারপর তোমার ব্যবস্থা করছি।

সোহাগী বললো- কি ব্যবস্থা করবে গো! তাড়াতাড়ি করো।

নিমাই- আজ আর হবেনা।কাল দুপুরে তোমার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেবো। নাহলে এর বংশ শেষ করা যাবে না।

সোহাগী- তুমি কি মরেছো ,যে আমি ন্যাড়া হবো।সধবাদের ন্যাড়া হতে হয় না।

নিমাই- তাহলে তো আমাদের উপোষ থাকতে হবে। খেজুরের রস ও গুড় করা যাবে না। তোমার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উকুন বারোমাস তুলতে হবে।

তাহলে এক কাজ করি, আমি রাতের বেলায় গলায় দড়ি দিই তাহলে তোমার উকুন মরবে।

সোহাগী- অমন অলুক্ষণে কথা বোলো না গো? আমার কষ্ট হচ্ছে।কে দেখবে আমাকে? আমার লোকের মতো পাঁচ দশটা স্বামী না ! আমার একটাই স্বামী। তুমি যত্ন না করলে কে করবে? তুমি যদি সত্যিই মরো তবুও ন্যাড়া হবো না।চুল স্ত্রীলোকের শোভা।এই চুল দেখেই তুমি আমাকে এনেছো ! এখন চুল তোমার কাছে ভারী। আমি ছাড়া তোমার গতি নাই ,আর তুমি ছাড়া আমার গতি আছে।কতো লোক তোমার মরামুখ দেখবে আর আমাকেও দেখবে। আমার চুলেরও সময় আছে পাক ধরেনি।আর বয়সও তেমন নয় যে কেউ নেবে না। ভগবানের যা ইচ্ছা তাই হোক। আমি ন্যাড়া হবো না,হবো না,হবো না!

নিমাই- সে তো আমি জানি? তুমি আজকাল কেতকীর সাথে মেলামেশা করছো? কেতকীর শাড়ি গয়না ভর্তি। স্বামীর কাজ নাই, অসুখে জরাজীর্ণ, তবুও খাওয়া দাওয়া পোশাক সব রাজকীয়।গায়ের গতর দেখো।

সোহাগী- আমারও গতর হবে,শরীরে জৌলুস বাড়বে।পয়সা সুখ থাকলে জরা ব্যাধি সব পালাবে। আমার মাথার উকুন,সেও পালাবে শ্যাম্পুর গন্ধে। ন্যাড়া করে আমাকে বিধবা করে রাখবে বলো।অমন স্বামীর মুখে ঝাঁটার বাড়ি। দুটো উকুন তুলতে পারবে না? আমার মাথার উকুন তোলার জন্য কতো লোক চেয়ে আছে। মিলে মিশে করি কাজ - হারি জিতি নাহি লাজ। তোমার মুখ না চেয়ে পাঁচ জনের মুখ দেখাই ভালো। পাঁচজন মিলে পাঁচ দিনে উকুনের বংশ শেষ।আর তুমি সারা জীবনে পারবে না।ওরা তাড়াতাড়ি করে সব উকুন মেরে শ্যাম্পু মাথায় দিয়ে পরিস্কার করে রাখবে। সোহাগীকে সোহাগ করার লোকের অভাব নাই। তুমি চোখ থাকতেও কানা? উকুন তুলতে পারো না। তোমার উকুন তোলার লোক তুমি দেখো আর আমি দেখি আমার। দুজনেই দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।এমন সময় কেতকী হাজির!

কেতকী- সোহাগী তোর মনে এতো হিংসা? আমার ভালো খাওয়া তুই দেখতে পারিস না? আমার একটাই স্বামী, পাঁচটা না, তার সেবা আমি না পরে করবে? তাই তার মুখে আহার ও চিকিৎসার দায়িত্ব আমার। তোদের মতো না? আমার মানসম্মান আছে,মাথায় সিঁদুর আছে। স্বামী আমার একটাই আর পরগাছা পাঁচটা! এই গাছের লেগে পরগাছা আছে। ওদের শখ আহ্লাদ আছে বলেই আমার স্বামী বেঁচে আছে। সধবার মানসম্মান ঢাকা থাকে।আর তুই বেধবা হয়ে জাতকুল নষ্ট করবি? নিমাইকে গলায় দড়ি দিতে ইন্ধন দিচ্ছিস্ ,দেখবি ভূত হয়ে তোর পিছন ছাড়বে না। অপমৃত্যু ভয়ানক! দোষ যদি পায় তাহলে তো তোর বাড়িটাও বেচতে হবে।পুরুতমশাই, তারপর ওঝারা ভূত তাড়াতে তোকেও তাড়াবে।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024