শিকারী
স্কুল জীবনের শেষ বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সাল ।পড়ি মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে । পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ এ মার্চ মাসে শুরু হবে হায়ার সেকেন্ডারির শেষ ব্যাচের পরীক্ষা । যদিও ওই বছরই শুরু হয় চলতি মাধ্যমিক পরীক্ষা । তো তখন এত সাইকেলের ব্যবস্থা ছিলো না । এতদূর আমরা হেঁটে হেঁটেই স্কুলে যেতাম ।
কোন একদিন স্কুলে যাচ্ছি, একটু দেরি হয়ে গেছে । প্রার্থনা শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেলো । স্কুলের পিয়ন বড় গেট বন্ধ করে ছোট গেট খুলে রেখেছেন । কেউ কেউ ফাঁক গোলে ঢুকে পড়েছে এবং মাস্টার মশাইদের চোখ এড়িয়ে নিজের ক্লাসের লাইনে পেছনে দাড়িয়ে পড়েছে । আমার আসতে এত দেরি হয়েছে যে সেই সুযোগও পেলাম না । সব ক্লাসের লাইন শেষ, শেষ লাইনের লেজটা এবার ক্লাসে ঢুকবে । আমিও বড় গেটের ছোটো গেটে মাথা গলিয়ে ঢুকেছি । সামনেই পড়ে গেলাম হেড মাস্টার মশাই শ্রী জগদীশ চন্দ্র দাসের সামনে । মাথা নিচু করে সামনে দিয়ে যেতেই ডাকলেন । এদিকে এসো । গেলাম । বললেন হাত পাতো । পাতলাম । সপাং করে চাবুকের বাড়ি । বললেন যাও । শোনো, আমি জানি তোমার বাড়ি জেলখানার ওপাশে । এখন থেকে বহুদূর । তবু কাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরোবে ঘর থেকে । তোমাকে আমি মারতাম না । তুমি বড় ছেলে । আমি মারবো দেখো গেটের সামনে ওই ফাইভ না সিক্সে পড়ে ওই ছেলেটাকে । মহা শয়তান, বাড়ি স্কুল বাজারে । সাড়ে নটায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ায়, তারপর এখানে । ওকে আজ পেটানো । ওকে দেখাবার জন্য তোমায় মারলাম ।
আমি গিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকলাম । আর দরকার ফাঁক দিয়ে চেয়ে রইলাম । শুরু হল বাঁদর নাচ । যত না বেত, তার চেয়ে নাচনই বেশি ।
সে সব দিন গেছে । আজকাল বেত হীন মাস্টার মশাই বোধহয় মানায় । মাস্টার মশাই কি শিকারী যে হাতে বেত থাকবে !
No comments:
Post a Comment