লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
এক রাতে অচেনা নম্বর থেকে একটা কল এলো। সাধারণত অচেনা নম্বরের কল ধরি না। পরপর চারবার কলটা এলে ধরলাম।
আসালামু আলাইকুম। কে বলছেন প্লিজ!
একটা ফ্যাসফ্যাস পুরুষকণ্ঠ বললো, আপনি এতো চমৎকার থৃ লাইনার লিখেন। তাই আপনাকে ফোন দিলাম।
ধন্যবাদ। কিন্তু নম্বর পেলেন কিভাবে এবং আরো কিছু কি বলবেন?
আসলে একজন অচেনা পুরুষের সাথে ঘুমুতে যাবার সময় কথা বলতে আমার ভাল্লাগছিলো না।
পুরুষকণ্ঠ বললো, আমি আপনার কাছ থেকে থৃ লাইনার লেখা শিখতে চাই।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কী আশ্চর্য! আমি আপনাকে থৃ লাইনার লেখা শিখাবো কেন?
আমি আপনার থৃ লাইনার বই প্রকাশে সাহায্য করবো।
এবার আমি দুর্বল হলাম। বিনা পয়সায় একটা বই প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া মানে বিরাট কিছু একটা পাওয়া। বললাম, বেশ। কিন্তু সেজন্য আমাদের দেখা হওয়া প্রয়োজন। কোথায় দেখা হতে পারে আপনার সাথে? কিভাবে?
ফ্যাসফ্যাস পুরুষ কণ্ঠ বললো, আপনি আগামীকাল বিকাল চারটায় হাতিরঝিল চলে আসেন।
আমি দ্বিধা নিয়ে বললাম, কিন্তু আমরা একে অপরকে চিনবো কিভাবে?
আমরা ঝিলের উত্তরপাশে থাকবো। বাকিটা সাহায্য করবে এই ফোন।
পরদিন বিকেল চারটা। ঝিলের উত্তর পাশ। অনেক মানুষ গা ছেড়ে দিয়ে আপনজন সাথে বেড়াচ্ছে। ফোনের সাহায্যে কথা বলে মুখোমুখি হয়ে আমি হতবাক। পুরুষকণ্ঠে কথা বললেও ও যথেষ্ট সুন্দরী এক কিশোরী।
আগন্তুক কিশোরী বললো, কেমন চমকে দিলাম?
আমি শুধু মাথা নেড়ে ইতিবাচক সায় দিতে পারলাম।
ও ফের বললো, চলুন পাশের বেঞ্চটায় বসি। আলাপচারিতায় দুজনের নাম দুজনের কাছে জানা হয়ে গেলো। ওর নাম অঞ্চিতা। বেশ ব্যতিক্রম নাম। পূর্বে সঞ্চিতা নামের মেয়ে বা ভদ্রমহিলা দেখেছি।
সেই থেকে অঞ্চিতার সাথে এখানে সেখানে বসা শুরু। ও শুধু আমার থৃ লাইনার শুনে বিমুগ্ধ শ্রোতার মতো।
একদিন ওকে বললাম, তুমি বলেছিলে বই প্রকাশের কথা। তোমার কি কোন প্রকাশকের সাথে পরিচয় আছে?
অঞ্চিতা বললো, আমার বাবাই প্রকাশক।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কী বলছো তুমি অঞ্চিতা!
অঞ্চিতা ফের বললো, আমার বাবাও তোমার থৃ লাইনারের বেশ ভক্ত। কিন্তু শুধু শুধু আমি তোমার বই প্রকাশের জন্য বাবাকে বলবো কেনো!
বিনিময়ে কী চাও তুমি?
অকপটে অঞ্চিতা বলে দিলো, তোমার ভালোবাসা চাই!
আমি বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম। কাশি থামিয়ে বললাম, আমাকে কতটুকু জানো তুমি?
ও বললো, ফেসবুকে প্রোফাইল থেকে যা জেনেছি, তাতেই আমার চলবে।
বললাম, তা হয় না অঞ্চিতা। আমি দুই সন্তানের বাবা।
সাথে সাথে সে দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো। আমি বোবা হয়ে ওর পাশে বসে রইলাম। একসময় সে কিছু না বলেই চলে গেলো।
আমিও ফিরে এলাম বাসায়। থৃ লাইনার লিখে পোস্ট দেই; কিন্ত অঞ্চিতার কোন লাইক বা কমেন্ট পাই না। তৃতীয় দিন ওর নম্বরে একটা পুরুষকণ্ঠ ফোন করে হাউমাউ কান্না শুরু করলো। সব শুনে আমি তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এলাম বাইরে। উবারে চলে এলাম গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। কব্জি কেটে অঞ্চিতা আত্মহত্যা করতে চেয়েছে। অনেক রক্তপাত হয়েছে। এখন আইসিইউ-তে লাইফসাপোর্টে আছে।
ঘটনা শুনে আমি বিমূঢ়। ওর জীবন কামনা করবো না মৃত্যু কামনা করবো-সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
Comments