গল্প || প্রাক্তন || বর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়
প্রাক্তন
বছর সাতেক পর
মুখোমুখি আবারো নীলা আর সায়ন | এই সাত বছরে দু'জনের মধ্যে বিশেষ কিছু পরিবর্তন না হলেও; নীলার সঙ্গে রয়েছে একটি ওই বছর ছয়েকের বাচ্চা আর সায়ন বাইক ছেড়ে এখন চার চাকার মালিক...
আজ এতদিন পর প্রাক্তন কে সামনে পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে না গিয়ে ;এক প্রকার যেচে সায়ন বলে উঠলো -কেমন আছো নীলা?
-ভালো আর তুমি?
-ভালো ; প্রায় সাত বছর পর আজ দেশে ফিরলাম; আমি এখন USA থাকি
-বাহ ! বিয়ে করেছো নাকি?
-না এখনো করা হয়নি ; দেশ এই কারণেই আশা!তাই এটা কি তোমার মেয়ে?
-হ্যাঁ
-খুব মিষ্টি দেখতে!! বয়স কত হলো?
-পাঁচ বছর(একটু থেমে)
কিন্তু একরত্তি পাকা মেয়েটি বলে উঠলো - "না আমি ছয় বছর মা মিথ্যা বলো না !!আমি এখন বড় হয়ে গেছি"
নীলা ধমক দিয়ে মেয়েকে চুপ করিয়ে দিল...
তারপরই একে অপরকে কিছু না বলেই দুজন দুজনের রাস্তায় চলে গেল ঠিক সাত বছর আগের মত নিঃশব্দে ....
নিলা বাজার থেকে ফিরে যথারীতি সংসারের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সায়ন এর কোন কথাই তার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি...
আজ নীলার বাড়িতে আত্মীয় সমাগম ,তার শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে অনেকেই আসবে আজ অনেক বছর পর সবাই একসাথে একটা আনন্দের আড্ডা ...সন্ধ্যে নামতেই একের পর এক আত্মিয়ের আগমন; আবারও সায়ন নিলা মুখোমুখি
- আমি'ত ভাবতেই পারছি না নীলা তোমাকে আমি এইভাবে এইরূপে দেখবো! এটা কি করে পসিবল?
- কোন'টা ভাবতে পারছো না সায়ন আমি তোমার দাদার স্ত্রী এটা?
- শেষমেস তুমি কি আর কোনো ছেলে পেলে না ?আমার দাদাকেই এভাবে ফাঁসাতে হলো, ঠকাতে হলো তোমায়!
- ভুল করছো তুমি ।ছেলে তো প্রচুর ছিলো তোমার দাদার মতো উচ্চ মানসিকতার আর কাউকে যে পেলাম না।
আর রইলো পড়ে তোমার দাদাকে ফাঁসানোর কথা, আমার অমন অভিরুচি থাকলে তুমি আজ আমার মাসতুতো দেওর না, বাধ্য হয়ে আমার বর হতে সায়ন |
আর ঠকানোর কথা বলছোতো! সেতো তোমার দাদা তার ভাইয়ের থেকে চরমভাবে ঠকে যাওয়া এই আমিকে ব্যাপকভাবে জিতিয়ে দিলেন স্বেচ্ছায় আমার কপালে সিঁদুর দান করে।
-হ্যাঁ সায়ন আমি ঠকতেও জিতে গেছি।
- উফ্ফ্! দাদা সবটা জেনেও যে কি করে এটা করতে পারলো! আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।
- ওই যে বললাম উন্নত মানসিকতার জোরে। তোমার মতো ছেলেরা শুধু প্রেম করতে পারে ;কিন্তু দায়িত্ব নিতে পারে না। অথচ দেখ তোমারই দাদা নিজের ভাই এর প্রেমিকা ও তার অনাগত সন্তানের দায়িত্ব কিভাবে নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন। জান সায়ন আমার সন্তানের পরম সৌভাগ্য যে ও তোমার দাদার মতো একজন উদার ও নির্মল মানসিকতার মানুষকে বাবা হিসেবে পাবে। ওঁর পরিচয়ে বাঁচবে।
এই সবকিছুর জন্য অবশ্য তোমার অবদান আমি কখনোই অস্বিকার করতে পারবো না |
তাই একটা ধন্যবাদ তোমারও প্রাপ্য। তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম সায়ন |আর তুমি হলে আমার সেই প্রাক্তন যে জীবনে আসে ছেড়ে চলে যাবার জন্য |
যা'ই হোক এবার তুমি আসতে পারো, আশা করি তোমার সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর তুমি পেয়ে গেছো।
-কি বলছ নীলা ,সানা আমার মেয়ে ??
-থাক ওসব কথা
তারপর কাউকে কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে নীলা ও সায়ন যথারীতি আবার সকলের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত ;যেন দেওর আর বৌদির মধ্যে আগে কোনো সম্পর্কই ছিল না| এই প্রথম দেখা আর সম্পর্ক বেশ ভালই জমে উঠেছে...
কিন্তু আজ নীলার সেই সাত বছর আগের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে
সায়ন আর নীলা কলেজের একসাথে পড়তো
সম্পর্কটা শুধুমাত্র বন্ধুত্বে আটকে না থাকে প্রেম পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই গিয়েছিল যার ফলস্বরুপ নীলার সন্তান সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছিল|
বেশ কিছুদিন ধরে মাথা ঘোরা , আর বমি ভাব নিয়ে যখন এক প্রকার ফল কি হবে তা জেনে এই পরীক্ষা করেছিল ;সেই আনন্দের খবর টা সায়ন কেই প্রথম দেবার জন্য ফোন করেছিল নীলা
-সায়ন একটা সুখবর আছে, তুমি আজ আর আমার শুধুমাত্র প্রেমিক নও তুমি আমার সন্তানের বাবা সায়ন!! আমরা বাবা মা হতে চলেছি..
-এসব কি বলছ নীলা ?আমি তো বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই! তুমি এক্ষুনি আমার হাত পা জড়িয়ে বাবা বানিয়ে দিতে চাইছ!!??
-মানে কি বলতে চাইছ ? এটা তো আমার একার দায়িত্ব কিছু হয়নি|
-দেখো নীলা , যত তাড়াতাড়ি পারো বাচ্চাটা নষ্ট করে দাও; আর আজকের পর থেকে আমাকে ফোন করো না !!সে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত যা যা লাগে আমি দেবো..
-নীলা ফোন কেটে দেয় এক প্রকার তার কথা সম্মতি না দিয়ে সম্পর্ক শেষ করছে সেটা বুঝিয়ে দেয়
আজ সাত বছর সংসার করার পর ; নীলার আক্ষেপ কিছুই নেই |সে মনে করে সাত বছর আগে তার নেওয়ার দুটো ডিসিশান সম্পূর্ণ সঠিক ছিল|
Comments