গল্প || দারিদ্রের কান্না || বাহাউদ্দিন সেখ

 দারিদ্রের কান্না 




"সৃষ্টি যাহা মানবের কূলে, তব কেন গরীব ধনীর সুখ'

সহ্য করিয়া যায় তীরে তীরে নিম্ন জাতি দারিদ্র্যের দুখ"।


আজ রাহুল খুব দুশ্চিন্তায় বাড়ির ফেরার পথে। তার বাড়িতে যে তার বাবা রিক্সা চালক লোক যেখানে মাত্র দিনে তার সারা দিনে দুইশো টাকা মজুর করে। আর বাড়ির জন্য সেই টাকা দিয়ে চাল ডাল বাড়ির ফেরার পথে সন্ধ্যা বেলায় কিনে আনে। এত অনাহার আর দিন আনা দিন খাওয়া তার পরিবার, আর তার মধ্য দিয়ে প্রোজেক্টের টাকার বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক বলে ওঠে । রাহুল তার বাবা-মাকে কি ভাবে বলবে সেই বিষয়ে ভীষন দুশ্চিন্তায়। সে নদীর ধারে বসে একা একা চিন্তিত করতে থাকে। টাকা জোগাড়ের বিষয় নিয়ে, এবং নিজে নিজে মনের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। কারণ স্কুলের প্রোজেক্টের টাকার বিষয়ে তার বাবাকে কিছুই বলতে পারবে না। তার বাবার হঠাৎ অসুস্থ ও আরোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে, এবং তার মা হার্ড ও ক্যান্সারের ব্যাধি বদ্ধ রোগে আক্রান্ত।


 "চিরতরে স্বর্গ দেখিলাম ভুবনে সৃষ্টি,

তব বাঁধিলো এ দুনিয়ায় মহামারীর বৃষ্টি"।

"রুদ্ধ বদ্ধ করিল সবে লোকের কাজ,

ঘৃণ্য হয়ে রুপ দেখালি, এ মুখোশধারী সমাজ"।


অনেকদিন ধরেই স্কুল বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কারণে পড়াশোনাটাও ঠিক মতন হয়ে ওঠেনি রাহুলের। রাহুল দশম শ্রেণীর ছাত্র, লকডাউনের স্কুল খোলার পরেও রাহুল সেইরকম স্কুল যায়নি। কারণ বিগত দুই বছর স্কুল বিদ্যালয় লকডাউনে বন্ধ থাকার কারণে পড়াশোনাটাও কোথায় যেন উঠে গেছে। তার মাথায় ছিল না পড়াশোনা বলে কিছু রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন স্কুল গিয়ে দেখা যায় যে রাহুলের স্কুলের শিক্ষক মহাশয় তাদের প্রজেক্টের বিনিময় তাদেরকে রেজাল্ট দেওয়া হবে। এবং সেই প্রজেক্টের দাম রাখা হয়েছিল 'সাড়ে সাতশো' টাকা। আর এই প্রজেক্টের টাকায় রাহুলের মাথায় বড় দুশ্চিন্তায় সম্মুখীন করে তুলেছে।


"তুলিয়াছে অর্থের কাল, শিক্ষার ব্যবসার হাল,

ক্ষণে ক্ষণে অশিক্ষার এ পথ ধরেছে মহাকাল"।


অসীম যেন তার মাথায় বড্ড বোঝা পড়েছে , এই স্কুলের প্রজেক্টের আর্থিক বিষয় নিয়ে,সে নিরুপায় হয়ে চিন্তিত ও ক্লান্তি নিয়ে বসে থাকতে থাকতে উঠে পরে আর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তবুও রাহুল তার মাথা থেকে সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত দূর করতে পারে না বা হয় না। রাহুলের বাড়ির পথ হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা নেমে এলো।রাহুল বাড়িতে এসে বারান্দায় চুপ করে বসে রইল। 

ক্ষণিক ক্ষণ পর তার মা বাড়ির দরজাটি শিকল খোলে রাহুল কে জিজ্ঞাসা করে ,,

আরে বাবা তুই এসে এখানে যে বসে আছিস! 

আমাকে তো ডাক দিতে পারতিস,,,,!

তার মা জিজ্ঞাসা করল ,,,,

 কি হয়েছে ?

 হঠাৎ এই ভাবে বসে অন্ধকার বারান্দায়, সে কিছু না বলে চুপ করে রইলো,কারণ সে জানে তার মাকে স্কুলের প্রজেক্টের ব্যাপারে বলতে পারবে না।


"ভালো-মন্দ সুখ- দুখ খুঁজি অন্ধকারে আলো,

মনে মনে দুঃখ বিষাদে সহি মা-কে দেখাই ভালো"।

"অর্থ খুঁজি বেদনা ভুলাই,করি রিক্সা চালক কাজ,

মনে মনে ভাবি চল রিক্সা চালাই আজ"।


ঘরের বারান্দা থেকে উটে গিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো, আর তার মা কিছু খাবারের জন্য ডাক দিয়ে তাকে আহারের প্রস্তুত করলো। রাহুল ও তার মা আহারের শেষে তাকে জিজ্ঞাসা করলো।

 আজ কেনো সে নিশ্চুপ রয়েছে !

কিন্তু কোনো কথার তার মাকে উত্তর না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল রাহুল।

তার পারেন দিন রাহুল স্কুলের জন্য প্রস্তুত হয়ে,কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরে কিন্তু তার মা যাতে বুঝতে না পারে তাই স্কুলের ড্রেসেয় বেরিয়ে পড়েছিল। 

রাহুল কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেও কোনো কাজ পায়নি,

তাই সে মনে মনে ভাবল,,,,,,!

তার বাবার যে রিক্সা রয়েছে সেটি নিয়ে বেরিয়ে পড়বে, সেটি তার মায়ের চোখের আড়ালে। রাহুল বাড়িতে গিয়ে তার মাকে দেখতে না পেয়ে রিক্সাটি বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। আর প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায় রয়ে থাকে। এই ভাবে রিক্সাটি নিয়ে বসে রইল, কিন্তু কোন প্যাসেঞ্জার পেল না। দুপুর হয়ে ঘনিয়ে আসে দুর দুর করে। এই ভাবে তার সারাটা দিন দুশ্চিন্তায় আরো কেটে যায়। ক্ষণিক খন পর সে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার পথে কিন্তু তার মা অদূর থেকেই দেখে ফেলে।

রাহুলের মা চিন্তিত হয়ে পড়ে! 

আর মনে মনে ভাবে,এমন কোন বিষয় রয়েছে যেখানে রাহুলকে রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে তবুও স্কুলের নাম করে ফাঁকি দিয়ে এই বিষয়ে তার মা চিন্তিত হয়ে পড়ে।

 

"সুখ খুঁজতে গিয়ে পেলাম ভিক্ষার ঝুলি,

 সন্ধ্যা বেলায় রিক্সা নিয়ে কেঁদে কেঁদে গান বলি"।


কিছুক্ষণ পর রাহুল ঘরে এলো আর তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করল।

 বলতো বাবা তোর কি হচ্ছে!

হঠাৎ তোকে অদূর থেকে আমি দেখেছি তোর বাবার রিক্সা নিয়ে কোথায় যেন গিয়েছিলিস।

একথা শুনে রাহুল ভয় পেয়ে গেল, সে কি বলে তার মাকে উত্তর দেবে কোন সাহস পায় না।

রাহুল কোন কিছু উত্তর খুঁজে না পেয়ে তার মাকে স্কুলের প্রোজেক্টের টাকার বিষয়ে বলে ফেলল, তার স্কুলের প্রোজেক্টের সাড়ে সাতশো টাকা লাগবে, তাই রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম টাকার সন্ধানে কিন্তু অবশেষে কোনো কাজ হয়নি। 

একথা বলে তার মাকে কাঁদতে কাঁদতে বলল……

সে যদি স্কুলের প্রোজেক্টের টাকা যদি না দিতে পারে তবে হয়ত সে পরীক্ষাটি দিতে পারবে না বা সে মাধ্যমিকে পাশও হতে পারবে না।

তার মা কোন কথা না বলে চুপ করে বসে রইল, কারণ তার মার কাছেও কোন উত্তর ছিল না, সে কি বলে জবাব দেবে ।

হঠাৎ তার মা একটা প্রশ্ন করে,,,, রাহুলকে 

প্রোজেক্টটা আবার কোন বিষয়, রাহুল বলে উঠল-এটা মধ্যবিত্ত পরিবারকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়। যেটি আমাদের মত মানুষ কে চিন্তিত করে ফেলে আর শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা হরণ করে ব্যবসা চলাচল করে। আর বর্তমান সমাজে প্রজেক্ট বিষয়ের শিক্ষার নামে অশিক্ষার প্রভাব ঘটাতে থাকে ।


   "দারিদ্র্যের ধোঁয়া উঠিয়াছে সমুদ্রের সৈকত,

অর্থের অভাব জালে সৃষ্টিকারী মোরা নিম্ন জাত"।        

    "ব্যবসা করি এ শিক্ষা কুশিক্ষা ভদ্রতার তাজ,

কে শুনিয়াছে ধোঁয়াশা বুকে দারিদ্রের কান্নার আওয়াজ"।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024