গল্প || হারাণের নাতজামাই -- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় || Story || Haraner nathjamay || Manik Bandopadhyay


 



মাঝরাতে পুলিশ গাঁয়ে হানা দিল।


সঙ্গে জোতদার চণ্ডী ঘোষের লোক কানাই ও শ্রীপতি।

 কয়েকজন লেঠেল। কনকনে শীতের রাত বিরাম বিশ্রাম

 হেঁটে ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে তিনটি দিনরাত্রি একটানা ধান

 কাটার পরিশ্রমে পুরুষেরা অচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছিলা পালা

 করে জেগে ঘরে ঘরে ঘাঁটি আগলে পাহারা দিচ্ছিল

 মেয়েরা শাঁখ আর উলুধ্বনিতে গ্রামের কাছাকাছি

 পুলিশের আকস্মিক আবির্ভাব জানাজানি হয়ে

 গিয়েছিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সমস্ত গাঁ ঘিরে ফেলবার

 আয়োজন করলে হারাণের ঘর থেকে ভুবন মণ্ডল সরে

 পড়তে পারত, উধাও হয়ে যেত। গাঁ শুদ্ধ লোক যাকে

 আড়াল করে রাখতে চায়, হঠাৎ হানা দিয়েও হয়ত পুলিশ

 সহজে তার পাত্তা পায় না। দেড়মাস চেষ্টা করে পারেনি,

 ভুবন এ-গাঁ ও-গাঁ করে বেড়াচ্ছে যখন খুশি।




কিন্তু গ্রাম ঘেরবার, আঁটঘাট বেঁধে বসবার কোন চেষ্টাই

 পুলিশ আজ করল না। সটান গিয়ে ঘিরে ফেলল ছোট

 হাঁসতলা পাড়াটুকুর ক-খানা ঘর, যার মধ্যে একটি ঘর

 হারাণের বোঝা গেল আঁটঘাট আগে থেকে বাঁধাই ছিল।



ভেতরের খবর পেয়ে এসেছে।



খবর পেয়ে এসেছে মানেই খবর দিয়েছে কেউ। আজ

 বিকালে ভুবন পা দিয়েছে গ্রামে, হঠাৎ সন্ধ্যার পরে তাকে

 অতিথি করে ঘরে নিয়ে গেছে হারাণের মেয়ে ময়নার মা,

 তার আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল না কোন পাড়ায় কার ঘরে সে

 থাকবে। খবর তবে গেছে ভুবন হারাণের ঘরে যাবার

 পরে! এমনও কি কেউ আছে তাদের এ গাঁয়ে? শীতের

 তে-ভাগা চাঁদের আবছা আলোয় চোখ জ্বলে ওঠে

 চাষীদের, জানা যাবে সাঁঝের পর কে গাঁ ছেড়ে বাইরে

 গিয়েছিল। জানা যাবেই, এ বজ্জাতি গোপন থাকবে না।



দাঁতে দাঁত ঘষে গফুর আলী বলে, দেইখা লমু কোন

 হালাপিঁপড়ার পাখা উঠছে। দেইখা লমু।



ভুবন মণ্ডলকে তারা নিয়ে যেতে দেবে না সালিগঞ্জ গাঁ

 থেকে। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরছে ভুবন এতদিন গ্রেপ্তারী

 ওয়ারেন্টকে কলা দেখিয়ে, কোনও গাঁয়ে সে ধরা পড়েনি

 সালিগঞ্জ থেকে তাকে পুলিশ নিয়ে যাবে? তাদের গাঁয়ের

 কলঙ্ক তারা সইবে না। ধান দেবে না বলে কবুল করেছে

 জান, সে জানটা দেবে এই আপনজনটার জন্যে



শীতে আর ঘুমে অবশপ্রায় দেহগুলি চাঙ্গা হয়ে ওঠো লাঠি

 সড়কি দা কুড়ল বাগিয়ে চাষীরা। দল বাঁধতে থাকে।

 সালিগঞ্জে মাঝরাতে আজ দেখা দেয় সাংঘাতিক

 সম্ভাবনা!



গোটা আষ্টেক মশাল পুলিশ সঙ্গে এনেছিল, তিন-চারটে

 টর্চা হাঁসখালি পাড়া ঘিরতে ঘিরতে দপদপ করে তারা

 মশালগুলি জ্বেলে নেয়। দেখা যায় সব সশস্ত্র পুলিশ,

 কানাই ও শ্রীপতির হাতেও দেশী বন্দুক।



পাড়াটা চিনলেও কানাই বা শ্রীপতি হারাণের বাড়ীটা ঠিক

 চিনত না সামনে রাখালের ঘর পেয়ে ঝাঁপ ভেঙে তাকে

 বাইরে আনিয়ে রেইডিং পার্টির নায়ক মন্মথকে তাই

 জিজ্ঞেস করতে হয়, হারাণ দাসের কোন বাড়ী?



তার পাশের বাড়ীর হারাণ ছাড়াও যেন কয়েক গণ্ডা হারাণ

 আছে গাঁয়ে। বোকার মত রাখাল পাল্টা প্রশ্ন করে,

 আজ্ঞা, কোন হারাণ দাসের কথা কন?



গালে একটা চাপড় খেয়েই এমন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে

 রাখাল, দম আটকে আটকে এমন সে ঘন ঘন উঁকি

 তুলতে থাকে যে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করাই

 অনর্থক হয়ে যায় তখনকার মতা বোেকা হাবা চাষাগুলো

 শুধু বেপরোয়া নয়, একেবারে তুখোড় হয়ে উঠেছে

 চালাকীবাজিতে।



এদিকে হারাণ বলে, হায় ভগবান ময়নার মা বলে, তুমি

 উঠল। কেন কও দিকি? বলে কিন্তু জানে যে তার কথা

 কানে যায়নি বুড়োরা চোখেও যেমন কম দেখে, কানেও

 তেমনি কম শোনে হারাণা কি হয়েছে ভাল বুঝতেও

 বোধহয় পারেনি, শুধু বাইরে একটা গণ্ডগোল টের পেয়ে

 ভড়কে গিয়েছে। ছেলে আর মেয়েটাকে বুঝিয়ে দেওয়া

 গেছে চটপট, এই বুড়োকে বোঝাতে গেলে এত জোরে

 চেঁচাতে হবে যে, প্রত্যেকটি কথা কানে পৌঁছবে বাইরে

 যারা বেড় দিয়েছে। দু’এক দণ্ড চেঁচালেই যে বুঝবে হারাণ

 তাও নয়, তার ভোঁতা ঢিমে মাথায় অত সহজে কোন কথা

 ঢোকে না। এই বুড়োর জন্য না ফাস হয়ে যায় সবা।



ভুবনকে বলে ময়নার মা, বুড়া বাপটার তরে ভাবনা!


ভুবন বলে, মোর কিন্তু হাসি পায় ময়নার মা।


ময়নার মা গম্ভীর মুখে বলে, হাসির কথা না। গুলিও

 করতে পারে। দেখন মাত্তর। কইবো হাঙ্গামা করছিলেন!



তাড়াতাড়ি একটা কুপি জ্বালে ময়নার মা। হারাণকে তুলে

 নিয়ে ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাতের আঙ্গুলের

 ইসারায় তাকে মুখ বুজে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলে।

 তারপর কুপির আলোয় মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিদারুণ

 আপসোসে ফুঁসে ওঠে, আঃ! ভাল শাড়ীখান পরতে

 পারলি না?



বলছ নাকি?ময়না বলে।



ময়নার মা নিজেই টিনের তোরঙ্গের ডালাটা প্রায় মুচড়ে

 ভেঙ্গে তাঁতের রঙিন শাড়ীখান বার করে। ময়নার পরনের

 হেঁড়া কাপড়খানা তার গা থেকে একরকম ছিনিয়ে নিয়ে

 তাড়াতাড়ি এলোমেলো ভাবে জড়িয়ে দেয় রঙিন শাড়ীটি।



বলে, ঘোমটা দিবি। লাজ দেখাবি। জামায়ের কাছে যেমন

 দেখাস। ভুবনকে বলে, ভাল কথা শোনেন, আপনার নাম

 হইল জগমোহন, বাপের নাম সাতকড়ি। বাড়ী হাতীনাড়া,

 থানা গৌরপুর–


নতুন এক কোলাহল কানে আসে ময়নার মার। কান খাড়া

 করে সে শোনো কুপির আলোতেই টের পাওয়া যায় প্রৌঢ়

 বয়সের শুরুতেই তার মুখখানাতে দুঃখ দুর্দশার ছাপ ও

 রেখা কি রুক্ষতা ও কাঠিন্য এনে দিয়েছে। ধুতি-পরা

 বিধবার বেশ আর কদম ছাঁটা চুল চেহারায় এনে দিয়েছে।

 পুরুষালি ভাব।



গাঁ ভাইঙ্গা রুইখা আইতেছে। তাই না ভাবতেছিলাম

 ব্যাপার কি, গাঁর মাইনষের সাড়া নাই!



ভুবন বলে, তবেই সারছে। দশবিশটা খুন-জখম হইব

 নির্ঘাৎ। আমি যাই, সামলাই গিয়া।



থামেন আপনে, বসেন, ময়নার মা বলে, দ্যাখেন কি হয়।



শ’দেড়েক চাষী চাষাড়ে অস্ত্র হাতে এসে দাঁড়িয়েছে দল

 বেঁধে ওদের আওয়াজ পেয়ে মন্মথও জড়ো করেছে তার

 ফৌজ হারানের ঘরের সামনে দু’চার জন শুধু পাহারায়

 আছে বাড়ীর পাশে ও পিছনে, বেড়া ডিঙ্গিয়ে ওদিক দিয়ে

 ভুবন না পালায় দশটি বন্দুকের জোর মন্মথের, তার

 নিজের রিভলভার আছে। তবু চাষীদের মরিয়া ভাব দেখে

 সে অস্বস্তি বোধ করছে স্পষ্টই বোঝা যায়। তার সুরটা

 রীতিমত নরম শোনায়—স্রেফ হুকুমজারির বদলে সে যে

 একটু বুঝিয়ে দিতে চায় সকলকে উচিত আর অনুচিত

 কাজের পার্থক্যটা, পরিমাণটাও।


বক্তৃতার ভঙ্গিতে সে জানায় যে, হাকিমের দস্তখতী

 পরোয়ানা নিয়ে সে এসেছে হারাণের ঘর তল্লাস করতো

 তল্লাস করে আসামী না পায়, ফিরে চলে যাবে। এতে বাধা

 দেওয়া হাঙ্গামা করা উচিত নয়, তার ফল খারাপ হবে। বে-

আইনী কাজ হবে সেটা।



গফুর চেঁচিয়ে বলে, মোরা তল্লাস করতি দিমু না।



প্রায় দুশো গলা সায় দেয়, দিমু না!



এমনি যখন অবস্থা, সংঘর্ষ প্রায় শুরু হয়ে যাবে মন্মথ

 হুকুম দিতে যাচ্ছে গুলি চালাবার, ময়নার মার খ্যানখেনে

 তীক্ষ্ণ গলা শীতার্ত থমথমে রাত্রিকে ছিঁড়ে কেটে বেজে

 উঠল, রও দিকি তোমরা, হাঙ্গামা কইরো না। মোর ঘরে

 কোন আসামী নাই। চোর ডাকাইত নাকি যে ঘরে আসামী

 রাখুম? বিকালে জামাই আইছে, শোয়াইছি মাইয়া

 জামাইরে দারোগাবাবু তাল্লাস করতে চান তাল্লাস করেন।



মন্মথ বলে, ভুবন মণ্ডল আছে তোমার ঘরে?



ময়নার মা বলে, দ্যাখেন আইসা, তাল্লাস করেনা ভুবন

 মণ্ডল কেডা? নাম তো শুনি নাই বাপের কালো মাইয়ার

 বিয়া দিলাম বৈশাখে, দুই ভরি রূপা কম দিছি ক্যান,

 জামাই ফির্যা তাকায় না। দুই ভরির দাম পাঠাইয়া দিছি

 তবে আইজ জামাই পায়ের ধূলা দিছে। আপনারে কমু কি

 দারোগাবাবু, মাইয়াটা কাইন্দা মরো মাইয়া যত কান্দে,

 আমি তত কান্দি–


আচ্ছা, আচ্ছা। মন্মথ বলে, ভুবনকে না পাই, জামাই নিয়ে

 তুমি রাত কাটিও।



গৌর সাউ হেঁকে বলে, অত চুপে চুপে আসে কেন জামাই

 ময়নার মা?


গা জ্বলে যায় ময়নার মা-রা বলে, সদর দিয়া আইছে!

 তোমার একটা মাইয়ার সাতটা জামাই চুপে চুপে আসে,

 মোর জামাই সদর দিয়া আইছে।



গৌর আবার কি বলতে যাচ্ছিল, কে যেন আঘাত করে

 তার মুখে একটা আর্ত শব্দ শুধু শোনা যায়, সাপে-ধরা

 ব্যাঙের একটি মাত্র আওয়াজের মতো।



ময়নার রঙিন শাড়ী ও আলুথালু বেশ চোখে যেন ধাঁধা

 লাগিয়ে দেয় মন্মথর, পিচুটির মত চোখে এঁটে যেতে চায়

 ঘোমটা পরা ভীরু লাজুক কচি চাষী মেয়েটার আধপুষ্ট

 দেহটি। এ যেন কবিতা বি.এ. পাশ মন্মথর কাছে, যেন

 চোরাই স্কচ হুইস্কির পেগ, যেন মাটির পৃথিবীর জীর্ণক্লিষ্ট

 অফিসিয়াল জীবনে একফেঁটা টসটসে দরদ। তার

 রীতিমত আপসোস হয় যে জোয়ান মর্দ মাঝবয়সী

 চাষাড়ে লোকটা এর স্বামী, ওর আদরেই মেয়েটার এই

 আলুথালু বেশ!


তবু মন্মথ জেরা করে, সংশয় মেটাতে গাঁয়ের দু’জন

 বুড়োকে এনে সনাক্ত করায়। তার পরেও যেন তার বিশ্বাস

 হতে চায় না! ভুবন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে গায়ে চাদর

 জড়িয়ে যতটা সম্ভব নিরীহ গোবেচারী সেজে। কিন্তু খোঁচা

 খোঁচা গোঁপদাড়ি ভরা মুখ, রুক্ষ এলোমেলো একমাথা

 চুল, মোটেই তাকে দেখায় না নতুন জামায়ের মত মন্মথ

 গর্জন করে হারাণকে প্রশ্ন করে, এ তোমার নাতনীর বর?



হারাণ বলে, হায় ভগবান!



ময়নার মা বলে, জিগান মিছা, কানে শোনে না, বদ্ধ


 কালা।


আ! মন্মথ বলে।


ভুবন ভাবে এবার তার কিছু বলা বা করা উচিত।



 এমন হাঙ্গামা জানলে আইতাম না কর্তা মিছা কইয়া

 আনছে আমারো সড়াইলের হাটে আইছি, ঠাইরেণ


 পোলারে দিয়া খপর দিলেন, মাইয়া নাকি মর মর, তখন

 যায় এখন যায়।


তুমি অমনি ছুটে এলে?


আসুম না? রতিভরি সোনা-রূপা যা দিব কইছিল, তাও

 ঠেকায় নাই বিয়াতে। মইরা গেলে গাও থেইকা খুইলা

 নিলে আর পামু?


ওঃ! তাই ছুটে এসেছ? তুমি হিসেবী লোক বটে। মন্মথ বলে


 ব্যঙ্গ করে।


আর কিছু করার নেই, বাড়ীগুলি তাল্লাস ও তছনছ করে

 নিয়ম রক্ষা করা ছাড়া। জামাইটাকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া

 চলে সন্দেহের যুক্তিতে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু হাঙ্গামা হবে।

 দু’পা পিছু হটে এখনো চাষীর দল দাঁড়িয়ে আছে, ছত্রভঙ্গ

 হয়ে চলে যায় নি। গাঁয়ে গাঁয়ে চাষাগুলোর কেমন যেন

 উগ্র মরিয়া ভাব, ভয় ডর নেই। ঘরে ঘরে তল্লাস চলতে

 থাকে একটা বিড়াল লুকানোর মতো আড়ালও যে ঘরে

 নেই, সে ঘরেও কাঁথা বালিস হাঁড়িপাতিল জিনিসপত্র

 ছত্রখান করে খোঁজা হয় মানুষকে।



মন্মথ থাকে হারাণের বাড়ীতেই। অল্প নেশায় রঙিন চোখা

 এ সব কাজে বেরোতে হলে মন্মথ। অল্প নেশা করে, মাল

 সঙ্গে থাকে কর্তব্য সমাপ্তির পর টানবার জন্য,—চোখ

 তার রঙিন শাড়ীজড়ানো মেয়েটাকে ছাড়তে চায় না।

 কুরিয়ে কুরিয়ে তাকায় ময়নার দিকে ময়নার কুড়ি বাইশ

 বছরের জোয়ান ভাইটা উসখুস করে ক্রমাগত ভুবনের

 চোখ জ্বলে ওঠে থেকে থেকে। ময়নার মা টের পায়,

 একটু যদি বাড়াবাড়ি করে মন্মথ, আর রক্ষা থাকবে না!



মেয়েটাকে বলে ময়নার মা, শীতে কাঁপুনি ধরেছে, শো’ না

 গিয়া বাছা? তুমিও শুইয়া পড় বাবা। আপনে অনুমতি

 দ্যান দারোগাবাবু, জামাই শুইয়া পড়ুক। কত মানত

 কইরা, মাথা কপাল কুইটা আনছি জামাইরে,—ময়নার

 মা’র গলা ধরে যায়। আপনারে কি কমু দারোগাবাবু–


ময়না ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ভুবন যায় না।


আরও দু’বার ময়নার মা সস্নেহে সাদর অনুরোধ জানায়

 তাকে, তবু ভুবনকে ইতস্তত করতে দেখে বিরক্ত হয়ে

 জোর দিয়ে বলে, গুরুজনের কথা শোন, শোও গিয়া।

 খাড়াইয়া কি করবা? ঝাঁপ বন্ধ কইরা শোও!


তখন তাই করে ভুবনা যতই তাকে জামাই মনে না হোক,

 এরপর না মেনে আর কি চলে যে সে জামাই?মন্মথ আস্তে

 আস্তে বাইরে পা বাড়ায়। পকেট থেকে চ্যাপ্টা শিশি বার

 করে ঢেলে দেয় গলায়।



পরদিন মুখে মুখে এ গল্প ছড়িয়ে যায় দিগদিগন্তে, দুপুরের

 আগে হাতীপাড়ার জগমোহন আর জোতদার চণ্ডী ঘোষ

 আর বড় থানার বড় দারোগার কাছে পর্যন্ত গিয়ে


 পৌঁছায়। গাঁয়ে গাঁয়ে লোকে বলাবলি করে ব্যাপারটাা

 আর হাসিতে ফেটে পড়ে, বাহবা দেয় ময়নার মাকে! এমন

 তামাশা কেউ কখনো করেনি পুলিশের সঙ্গে, এমন জব্দ

 করেনি পুলিশকে। ক’দিন আগে দুপুরবেলা পুরুষশূন্য

 গাঁয়ে পুলিশ এলে ঝাঁটা বঁটি হাতে মেয়ের দল নিয়ে

 ময়নার মা তাদের তাড়া করে পার করে দিয়েছিল গাঁয়ের

 সীমানা! সে যে এমন রসিকতাও জানে, কে তা ভাবতে

 পেরেছিল?


গাঁয়ের মেয়েরা আসে দলে দলে, অনিশ্চিত আশঙ্কা ও

 সম্ভাবনায় ভরা এমন যে ভয়ঙ্কর সময় চলেছে এখন, তার

 মধ্যেও তারা আজ ভাবনা-চিন্তা ভুলে হাসিখুশিতে উচ্ছল।



মোক্ষদার মা বলে একগাল হেসে গালে হাত দিয়ে, মাগো

 মা, ময়নার মা, তোর মদ্যি এত?



ক্ষেন্তি বলে ময়নাকে, কিলো ময়না, জামাই কি কইলো?

 দিছে কি?


লাজে ময়না হাসে।


বেলা পড়ে এলে, কাল যে সময় ভুবন মণ্ডল গাঁয়ে পা

 দিয়েছিল প্রায় সেই সময় আবির্ভাব ঘটে জগমোহনের।

 বয়স তার ছাব্বিশ-সাতাশ, বেঁটে খাটো জোয়ান চেহারা,

 দাড়ি কামানো, চুল আঁচড়ানো। গায়ে ঘরকাচা শার্ট, কাঁধে

 মোটা সুতির সাদা চাদর গাঁয়ে ঢুকে গটগট করে সে চলতে

 থাকে হারাণের বাড়ীর দিকে, এপাশ ওপাশ না তাকিয়ে,

 গম্ভীর মুখে।



রসিক ডাকে দাওয়া থেকে, জগমোহন নাকি? কখন

 আইলা?


নন্দ বলে, আরে শোন শোন, তামুক খাইয়া যাও।


জগমোহন ফিরেও তাকায় না।


রসিক ভড়কে গিয়ে নন্দকে শুধোয়, এই কাণ্ড বুঝলা নি?


কেমনে কমু?


অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দু’জনন।


পথে মথুরের ঘর। তার সঙ্গে একটু ঘনিষ্ঠতা আছে

 জগমোহনের নাম ধরে হাঁক দিতে ভেতর থেকে সাড়া

 আসে না, বাইরের লোক জবাব দেয়। ঘরের কাছেই

 পথের ওপাশে একটা তালের গুড়িতে দু’জন মানুষ বসে

 ছিল নির্লিপ্তভাবে, একজনের হাতে খোঁটা সুদ্ধ গরু-বাঁধা

 দড়ি


তাদের একজন বলে, বাড়ীতে নাই। তুমি কেডা,

 হারামজাদারে খোঁজ ক্যান?


জগমোহন পরিচয় দিতেই দুজন তারা অন্তরঙ্গ হয়ে যায়

 সঙ্গে সঙ্গে।


অ! তুমিও আইছ ব্যাটারে দুই ঘা দিতে?


তা ভয় নেই জগমোহনের, তারা আশ্বাস দেয়, হাতের সুখ

 তার ফসকাবে না। কাল সন্ধ্যায় গেছে গাঁ থেকে, এখনো

 ফেরেনি মথুর, কখন ফিরে আসে ঠিকও নাই, তার

 অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না জগমোহনকে। মথুর

 ফিরলে তাকে যখন বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে বিচারের

 জন্য, সে খবর পাবো সবাই মিলে ছিঁড়ে কুটি কুটি করে

 ফেলার আগে তাকেই নয় সুযোগ দেওয়া হবে মথুরের

 নাক কানটা কেটে নেবার, সে ময়নার মা’র জামাই, তার


 দাবি সবার আগে।


শাউড়ী পাইছিলা দাদা একখানা!


নিজের হইলে বুঝতা জগমোহন জবাব দেয় ঝাঁঝের সঙ্গে।

 চলতে আরম্ভ করে। শুনে দুজনে তারা মুখ চাওয়া-চাওয়ি

 করে অবাক হয়ে!


আচমকা জামাই এল, মুখে তার ঘন মেঘ দেখেই ময়নার

 মা বিপদ গণে। ব্যস্ত-সমস্ত না হয়ে হাসি মুখে ধীরে

 শান্তভাবে অভ্যর্থনা জানায়, তার যেন আশা ছিল, জানা

 ছিল, এ সময় এমনিভাবে জামাই আসবে, এটা অঘটন

 নয়। বলে, আস বাবা আস। ও ময়না, পিঁড়া দো ভাল নি

 আছে বেবাকে? বিয়াই বিয়ান পোলামাইয়া?



আছে!


আরেকটুকু ভড়কে যায় ময়নার মা। কত গোঁসা না জমা

 আছে জামাই-এর কাটা-ছাঁটা এই কথার জবাবে। ময়নার

 দিকে তার না-তাকাবার ভঙ্গিটাও ভাল ঠেকে না পড়ন্ত

 রোদে লাউমাচার সাদা ফুলের শোভা ছাড়া আর কিছুই

 যেন চোখ চেয়ে দেখবে না শ্বশুরবাড়ির, পণ করেছে জগমোহন! লক্ষণ খারাপ।


ঘর থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় হারাণ হাঁকে, আসে নাই?

 হারামজাদা আসে নাই?হায় ভগবান! নাতিরে খোঁজে,

 ময়নার মা জগমোহনকে জানায়, বিয়ান থেইকা দ্যাখে

 না, উতলা হইছে।


ময়নার মা প্রত্যাশা করে যে, নাতিকে হারাণ সকাল থেকে কেন দ্যাকে না, কি হয়েছে হারাণের নাতির, ময়নার ভায়ের, জানতে চাইবে জগমোহন, কিন্তু কোন খবর জানতেই এতটুকু কৌতূহল দেখা যায় না তারা


খাড়াইয়া রইলা ক্যান? বসো বাবা, বসো।


জগমোহন বসে ময়নার পাতা পিঁড়ি সে ছোঁয় না, দাওয়ার খুঁটিতে ঠেস দিয়ে উবু হয়ে বসে।


মুখ হাত ধুইয়া নিলে পারতা।


না, যামু গিয়া অখনি।


অখনি যাইবা?


হ। একটা কথা শুইনা আইলাম। মিছা না খাঁটি জিগাইয়া

 যামু গিয়া। মাইয়া নাকি কার লগে শুইছিল কাইল রাতে?


শুইছিল? ময়নার মার চমক লাগে, মোর লগে শোয়

 মাইয়া, মোর লগে শুইছিল, আর কার লগে শুইব?


ব্রহ্মাণ্ডের মাইনষে জানছে কার লাগে শুইছিল। চোখে

 দেইখা গেছে দুয়ারে ঝাঁপ দিয়া কার লগে শুইছিল।


তারপর বেধে যায় শাশুড়ী-জামাইয়ে। প্রথমে ময়নার মা

 ঠাণ্ডা মাথায় নরম কথায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা

 করে, কিন্তু জগমোহনের ওই এক গোঁ! ময়নার মাও শেষে

 গরম হয়ে ওঠো বলে, তুমি নিজে মন্দ, অন্যেরে তাই মন্দ

 ভাবো। উঠানে মাইনষের গাদা, আমি খাড়া সামনে,

 একদণ্ড ঝাঁপটা দিছে কি না দিছে, তুমি দোষ ধরলা!

 অন্যে তো কয় না?


অন্যের কি? অন্যের বৌ হইলে কইতো।


ড় ছোট মন তোমারা আইজ মণ্ডলের নামে এমন কথা

 কইলা, কাইল কইবা জুয়ান ভায়ের লগে ক্যান কথা কয়।


কওন উচিত। ও মাইয়া সব পারে।


তখন আর শুধু গরম কথা নয়, ময়নার মা গলা ছেড়ে

 উদ্ধার করতে আরম্ভ করে জগমোহনের চোদ্দপুরুষ

 হারাণ কাঁপা গলায় চেঁচায়, আইছে নাকি? আইছে

 হারামজাদা? হায় ভগবান আইছে? ময়না কাঁদে ফুঁপিয়ে

 ফুঁপিয়ে ছুটে আসে পাড়াবেড়ানি নিন্দাছড়ানি নিতাই

 পালের বৌ আর প্রতিবেশী কয়েকজন স্ত্রীলোক।


কি হইছে গো ময়নার মা? নিতাই পালের বৌ শুধায়, মাইয়া কাঁদে ক্যান?


তাদের দেখে সম্বিৎ ফিরে পায় ময়নার মা, ফোঁস করে ওঠে,কাঁদে ক্যান? ভাইটারে ধইরা নিছে, কাঁদব না?


জামাই বুঝি আইছে খবর পাইয়া?


শুনবা বাছা, শুনবা। বইতে দাও, জিরাইতে দাও।


ময়নার মার বিরক্তি দেখে ধীরে ধীরে অনিচ্ছুক পদে

 মেয়েরা ফিরে যায়। তাকে ঘাঁটাবার সাহস কারো নেই।

 ময়নার মা মেয়েকে ধমক দেয়, কাঁদিস না। বাপেরে নিয়া

 ঘরে গেছিলি, বেশ করিছিলি, কাঁদনের কি?


বাপ নাকি? জগমোহন বলে ব্যঙ্গ করে। বাপ না? মণ্ডল

 দশটা গাঁয়ের বাপা খালি জম্মো দিলেই বাপ হয় না, অন্ন

 দিলেও হয়। মণ্ডল আমাগো অন্ন দিছে। আমাগো

 বুঝাইছে, সাহস দিছে, একসাথ করছে, ধান কাটাইছে।

 না তো চণ্ডী ঘোষ নিত বেবাক ধানা তোমারে কই জগু,

 হাতে ধইরা কই, বুইঝা দ্যাখো, মিছা গোসা কইরো না।



বুইঝা কাম নাই। অখন যাই।


রাইতটা থাইকা যাও। জামাই আইলা, গেল। গিয়া,

 মাইনষে কি কইব?


জামাইয়ের অভাব কি। মাইয়া আছে, কত জামাই জুটবো।


বেলা শেষ হতে না হতে ঘনিয়ে এসেছে শীতের সন্ধ্যা অল্প

 অল্প কুয়াশা নেমেছে। খুঁটের ধোঁয়া ও গন্ধে নিশ্চল বাতাস

 ভারি। যাই বলেই যে গা তোলে জগমোহন তা নয়। ময়নার

 মারও তা জানা আছে যে শুধু শাশুড়ীর সঙ্গে ঝগড়া করে

 যাই বলেই জামাই গট গট করে বেরিয়ে যাবে না। ময়নার

 সাথে বোঝাপড়া, ময়নাকে কাঁদানো, এখনো বাকি

 আছে। যদি যায় জামাই, মেয়েটাকে নাকের জলে

 চোখের জলে এক করিয়ে তারপর যাবে। আর কথা বলে

 না ময়নার মা, আস্তে আস্তে উঠে বেরিয়ে যায় বাড়ী

 থেকে। ঘরে কিছু নেই, মোয়ামুড়ি কিছু যোগাড় করতে

 হবে। খাক বা না খাক সামনে ধরে দিতেই হবে

 জামাইয়ের।


চোখ মুছে নাক ঝেড়ে ময়না বলে ভয়ে ভয়ে, ঘরে আস।


খাসা আছি। শুইছিলা তো?


না, মা কালীর কিরা, শুই নাই। মার কওনে খালি ঝাঁপটি দিছিলাম, বাঁশটাও লাগাই নাই।


ঝাঁপ দিছিলা, শোও নাই। বেউলা সতী!


ময়না তখন কাঁদে।


তোমার লগে আইজ থেইকা শেষ।


ময়না আরও কাঁদে।


ঘর থেকে হারাণ কাঁপা গলায় হাঁকে, আসে নাই? ছোঁড়া

 আসে নাই? হায় ভগবান! থেমে থেমে এক একটা কথা

 বলে যায় জগমোহন, না থেমে অবিরাম কেঁদে চলে

 ময়না, যতক্ষণ না কান্নাটা একঘেয়ে লাগে জগমোহনের।

 তখন কিছুক্ষণ সে চুপ করে থাকে। মুড়িমোয়া যোগাড়

 করে পাড়া ঘুরে ময়নার মা যখন ফিরে আসে, ময়না তখন

 চাপা সুরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। বেড়ার বাইরে সুপারি

 গাছটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে ময়নার মা সারাদিন পরে এখন

 তার দু’চোখ জলে ভরে যায়। জোতদারের সাথে, দারোগা

 পুলিশের সাথে লড়াই করা চলে, অবুঝ পাষণ্ড

 জামাইয়ের সাথে লড়াই নেই!


আপন মনে আবার হাঁকে হারাণ, আসে নাই? মোর মরণটা আসে নাই? হায় ভগবান!


জগমোহন চুপ করে ছিল, এতক্ষণ পরে হঠাৎ সে

 জিজ্ঞাসা করে শালার খবর। —উয়ারে ধরছে ক্যান?


ময়নার কান্না থিতিয়ে এসেছিল, সে বলে, মণ্ডলখুড়ার

 লগে গোঁদল পাড়া গেছিল, ফিরতি পথে একা পাইয়া ধরছে।


ক্যান ধরছে?


কাইল জব্দ হইছে, সেই রাগে বুঝি।


বসে বসে কি ভাবে জগমোহন, আর কাঁদায় না ময়নাকো

 ময়নার মা ভেতরে আসে, কাঁসিতে মুড়ি আর মোয়া খেতে

 দেয় জামাইকে, বলে, মাথা খাও, মুখে দাও।


আবার বলে, রাইত কইরা ক্যান যাইবা বাবা? থাইকা যাও।


থাকনের বোনাই। মা দিব্যি দিছে।


তবে খাইয়া যাও? আখা ধরাই? পোলাটারে ধইরে নিছে, পরাণ পোড়ায়। তোমারে রাইখা জুড়ামু ভাবছিলাম।


না, রাইত বাড়ে।


আবার কবে আইবা?


দেখি।



উঠি-উঠি করেও দেরি হয়। তারপর আজ সন্ধ্যারাতেই

 পুলিশ হানার সেইরকম সোর ওঠে কাল মাঝরাত্রির মতো।

 সদলবলে মন্মথ আবার আচমকা হানা দিয়েছে। আজ তার সঙ্গের শক্তি কালের চেয়ে অনেক বেশী। তার চোখ সাদা।


সোজাসুজি প্রথমেই হারাণের বাড়ী।


 কি গো মণ্ডলের শাশুড়ী, মন্মথ বলে ময়নার মাকে, জামাই কোথা?


ময়নার মা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।


এটা আবার কে?


জামাই ময়নার মা বলে।


বাঃ, তোর তো মাগী ভাগ্যি ভাল, রোজ নতুন নতুন জামাই জোটে। আর তুই ছুঁড়ি এই বয়সে–


হাতটা বাড়িয়েছিল মন্মথ রসিকতার সঙ্গে ময়নার থুতনি ধরে আদর করে একটু নেড়ে দিতো। তাকে পর্যন্ত চমকে দিয়ে জগমোহন লাফিয়ে এসে ময়নাকে আড়াল করে গর্জে ওঠে, মুখ সামলাইয়া কথা কইবেন!


বাড়ীর সকলকে, বুড়ো হারাণকে পর্যন্ত, গ্রেফতার করে

 আসামী নিয়ে রওনা দেবার সময় মন্মথ দেখতে পায়

 কালকের মতো না হলেও লোক মন্দ জমেনি। দলে দলে

 লোক ছুটে আসছে চারিদিক থেকে, জমায়েত মিনিটে

 মিনিটে বড় হচ্ছে। মথুরার ঘর পার হয়ে পানা পুকুরটা

 পর্যন্ত গিয়ে আর এগোনো যায় না। কালের চেয়ে সাত-

আটগুণ বেশী লোক পথ আটকায়। রাত বেশী হয়নি, শুধু

 এগাঁয়ের নয়, আশেপাশের গাঁয়ের লোক ছুটে এসেছে।

 এটা ভাবতে পারেনি মন্মথ। মণ্ডলের জন্য হলে মানে

 বোঝা যেত, হারাণের বাড়ীর লোকের জন্য চারদিকের গাঁ

 ভেঙে মানুষ এসেছে! মানুষের সমুদ্র, ঝড়ের উত্তাল


 সমুদ্রের সঙ্গে লড়া যায় না। ময়না তাড়াতাড়ি আঁচল

 দিয়েই রক্ত মুছিয়ে দিতে আরম্ভ করে জগমোহনের।

 নব্বই বছরের বুড়ো হারাণ সেইখানে মাটিতে মেয়ের

 কোলে এলিয়ে নাতির জন্য উতলা হয়ে কাঁপা গলায়

 বলে, ছোঁড়া গেল কই? কই গেল? হায় ভগবান!


_________________________________________________




গল্প টি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন---


https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/haimanti-rabindranath-tagore-story.html



Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024